Monday, February 29, 2016

রিমার গল্প

‌এক শহরে বাস করত এক মেয়ে। তার নাম রিমা। তার কিসের সাধ জান? খুবই জটিল। এই সাধ আমরা পূরণ করব কিভাবে? এত ছোট বাচ্চা কিভাবে এই কাজ করতে পারে? রিমা তার বড় বোন সিমাকে বলল, "সিমা আপু! শোন। আমার না একটা শখ। আমি মহাকাশের গবেষণা করতে চাই। আমি সেটার বিজ্ঞানী হতে চাই। এটা একটু পূরণ করে দেবে? শুধু তুমি একা। বড়দেরকে বলো না। বড়রা বলবে, এই পাগল! কি করছ? এটা সম্ভব কিভাবে?- বলে বকবে। বড়দের বলো না। শুধু তুমিই আমার এ ইচ্ছাটা পূরণ করে ফেল।" সিমা বলল, "উহ! আমিও তো ছোট। আমি কি করে তোমার ইচ্ছা পূরণ করব, বল দেখি? আমারও তো বার বছর বয়স। তুমি বরং বড়দেরকেই বল। তার আগে বলো যে, আমাকে কথা দাও যে, আমাকে বকবে না। আমাকে বোকা বা পাগল এই টাইপের কিছু বলবে না। আমি একটা কথা বলছি।- বলে তোমার ইচ্ছে পূরণের কথা সবাইকে বলবে, যদি তারা বলে যে, কথা রাখবে।" "কিন্তু আমি বড়দেরকে বলব? আমার না খুব ভয় করে। যদি বকা দেয়। যদি কথা না রাখে। আমি যদি কাঁদি, তখন আবার বলবে, এত বড় মেয়ে কাঁদে নাকি। বলে আবার বকবে। আমার না ভয় করে খুব। কতবার বলব যে ভয়ের কথা। তুমি বরং বল যে, আমি বিজ্ঞানী হতে চাই।" তখন বড় বোন বলল, "আ-হা-হা-হাহা। সামান্য একটু বকাকে ভয় পেলে চলবে? আ.হা.হা.হা (হাসি)। আমার কাছে তো কোন ব্যাপারই না। আমার ভয়, যদি কোন শাস্তি দেয়। বকা বা মার কোন শাস্তি নাকি? হা..হা..হা...। কতবারে তো হাসতে হবে? আমার অনেক হাসি আসে। আমি চট করে বলব। বকা দেয়ার আগেই সরে যাব। আমার সাথে তোমাকে থাকতে হবে। এততো ভয় পেলে আমি কিন্তু বলে দেব, তুমিই আমাকে বলতে বলেছ, তুমি বকা ভয় পাও। তখন কিন্তু মানুষে হাসবে যে, বড় হয়ে গেল, এত ভয় পেলে চলবে বকাকে?- এই বলে হাসবে। তোমাকে যেতে হবে কিন্তু। আমার আবার পরীক্ষা আছে। আমি একটু দেখি, কি আছে। তারপরই বলছি। হা..হা..হা। এত হাসাচ্ছ কেন?"- এই বলে বড় বোন খাতা দেখে একটু পড়ে ফেলল। তারপর আসল। বলল, "রিমা! কথা মনে আছে? চল, মা-বাবা কোথায়?" তখন রিমা বলল, "চল, যাই। মা রান্নাঘরে। বাবা পাশের রুমে পেপার পড়ছে।" ওরা দু'জন আগে বাবার কাছে গেল। কারণ, মাকে বললে মা বেশি বকা দেবে। মা একটু রাগী। মা এরকম বলবে, "ও..মঁ! উনি নাকি বিজ্ঞানী হবে? কী শখ! লেখা নাই, পড়া নাই, কিছু নাই, এত ছুটু মানুষ! যাহ! এত রাগাস না। একশ বছর হলে বিজ্ঞানী হবি। এত ছোটবেলায় হওয়ার দরকার নেই। যা তো।"- এই বলত মা। তাই তারা বাবার কাছে গেল। বাবাকে বলল, "বাবা! আগে আমাকে কথা দাও, তুমি আমাকে বকবে না, পাগল বা বোকা টাইপের কিছু বলবে না। একটুও বকা যাবে না, একটুও মারা যাবে না। মানা করলে বুঝিয়ে বলবে। কিন্তু একটু যদি বকা দাও, আমি কিন্তু তোমার সব কাজের জিনিস ময়লার ঝুড়িতে ফেলে দেব। কথা দিতে পারবে? আমি একটা কথা বলব। সেই কথার জন্য তুমি কথা দাও।" বাবা ভাবল, কথা দিয়েই দেই। বলল, "আচ্ছা, কথা রাখব। তুমি বল।" তখন রিমা বলল, "আমার বিজ্ঞানী হওয়ার শখ। আমি মহাকাশ গবেষণা করতে চাই। এবার যদি বক, তবে কিন্তু তোমার সব জিনিস ময়লার ঝুড়িতে ফেলবই ফেলব।" তখন বাবা বলল, "এটা আবার কি বলছ? অংকে সবসময় কম নম্বর পাও। অংক না জানলে তো বিজ্ঞানী হতে পারবে না। বিজ্ঞান ক্লাসেও তো কিচ্ছু পড়তে পার না। পরীক্ষায় কিছু পারও না। বিজ্ঞান, অংক এ দুটোই তো বিজ্ঞানী হওয়ার আসল জিনিস। এগুলো ভাল করে পড়বে। অংক পড়লে কিন্তু ডাক্তারও হওয়া যাবে। অনেক বড় হও। তারপরে বিজ্ঞানী হবে। তুমি বড় হয়ে বিজ্ঞানী হতে চাও? আচ্ছা, বিজ্ঞানী বানিয়ে দেব। মহাকাশ বিজ্ঞানী? আচ্ছা, বানিয়ে দেব। এবার যেন বিজ্ঞানে আর অংকে ফুল নম্বর পাও।" তারপর রিমা এখন থেকে প্রতিবারই অংকে এবং বিজ্ঞানে ভাল করে। বড় হয়ে সে বিজ্ঞানী হওয়ার কথাটা মনে করল। বাবাকে বলল, "মনে আছে নাকি বিজ্ঞানী হওয়ার কথাটা? আমার সব ক্লাসের রেজাল্ট দেখ।" বাবা অবাক হয়ে গেল। বলল, "আমার একটা চেনা গবেষণাগার আছে। অনেক দূরে। ঐখানে নাকি দুই সপ্তাহ পর বিজ্ঞানী হওয়ার পরীক্ষা হবে। পরীক্ষায় পাস করতে পারলে বিজ্ঞানী হয়ে যাবে। আজ থেকে পড়া শুরু কর।" তখন রিমা পড়া শুরু করল। পরীক্ষায় ভাল নম্বর পেল। পাশ করল। সত্যি একজন বিজ্ঞানী হয়ে গেল। এখন প্রতিদিন সে গবেষণাগারে যায় এবং গবেষণা করে। কিছু কিছু মানুষ আছে, যারা অনেক কিছু শিখতে চায়। বাড়ি বাড়ি গিয়ে শুধু খোঁজে, কোন কোর্স হয় কিনা। আর বিজ্ঞানীদের কাছে প্রায়ই আসে, আর জানতে চায়, কিছু শেখাতে পারবে কিনা। রিমার কাছেও আসে, শিখে যায়।

Saturday, February 27, 2016

সুবাতের নানুবাড়ি

এক গ্রামে বাস করত এক ছো্ট্ট মেয়ে। সে তো গ্রামে থাকে। তাই শহরে গেলে খুব ভয় পায়। তার বয়স ৫ বছর। সে ক্লাস কেজিতে পড়ে। সেই ক্লাসে সবচেয়ে ছোট। ছোট হলেই ভাল। কেন জান? কারণ, তাহলে তুমি খুব তাড়াতাড়ি ক্লাস কেজিতে উঠে গেছ, বড় ক্লাসে উঠেছ। অন্যদের তো হয় সাড়ে পাঁচ, নয়তো ছয় বছর, নয়তো ছয় বছর দুই মাস। তার নানু বাড়ি ছিল আবার শহরে। ঢাকাতে। ধানমণ্ডি এলাকায় ধানমণ্ডি লেকের পাশে। সেখানে সে বেশি ভয় পাবে না, কারণ লেকে তো পানি, আর গ্রামে তো কত নদী-পুকুর দেখেছে। তাই হয়তো ভয় পাবে না। কিন্তু ভয় পাবে কেন জান? গ্রামে তো ছোট ছোট একতলা ঘর। কিন্তু শহরে তো ১০/১২ তলা, ১৫/১৬ তলা, ৫/৬ তলা, বড় বড় তলা অনেক। তাই হয়তো সেগুলো দেখলে ভয় পাবে। তার নানু জানত যে, বাচ্চাদের বেড়ানো পছন্দ। তাই নানু মেয়েটির মাকে ফোন করল। বলল, "আমার সোনামনি কি করে? তাকে একটু নিয়ে আসবে আমার এখানে? খুব সুন্দর জায়গা। অনেক কিছু দেখাব তোমায়। তুমি একটু আস। এক-আধদিন মাদ্রাসায় না গেলে কিছু হবে না।" এখন মা বলল, "উহ! ও তো দেড়টায় ভাত খেয়ে দুইটা থেকে তিনটা পর্যন্ত ঘুমোয়, তিনটা থেকে চারটা পর্যন্ত হুজুরের কাছে আরবী পড়তে যায়, আর চারটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত খেলতে যায়, আর অন্য সময় বাসায় মাদ্রাসার পড়া পড়ে। তাহলে এক-আধদিন তোমার বাড়িতে গিয়ে থাকলে তো ঘুম আর পড়াশুনা সব বাদ দিয়ে ছোটাছুটি করবে, দেখাদেখি করবে সবাই কেমন। আর মাদ্রাসা আর আরবী পড়া দুইটা শিখতে পিছিয়ে যাবে।" তখন নানু বলল, "ও! আমি তো ভুলেই গিয়েছি। সময় তো ঠিকই করে রেখেছি। এখন কি মাস? ফেব্রুয়ারী না? ওর তো শুক্রবার ছুটি, তাই না? শুধু শুক্রবার। আমাদের শহরে না শনিবারও ছুটি। এখন ২০১৬ সাল, তাই তো? এখন ২২ তারিখ মাঘী পূর্ণিমা। আর ২১শে ফেব্রুয়ারী তো ভাষা দিবস। আর শুক্রবার তো এমনিতেই ছুটি। তাই শনিবার শুধু একদিন বাদ গেলে কি সমস্যা? পরে আবার অন্য সময় স্যারদের কাছে গিয়ে জেনে নেবে। ছুটির সময় স্যারকে বলে রাখবে, একটু দাঁড়ান, সেদিন কি কি পড়ালো একটু বলে দেন, নাহয় অন্য বাচ্চাদের কাছেও জেনে নিতে পারে, কি পড়ালো। তুমি নিয়ে আস। আজ কয় তারিখ, অ্যাঁ?" মা বলল, "তুমি ভুলেই গেছ। আজ ১৫ তারিখ। তাহলে এখন রাখি। আসার চেষ্টা করব। আসার জন্য চিন্তা-টিন্তা হয়ে গেলে যদি ঠিক করি, আসতে পারব, তাহলে জানাব।" এইবার ফোনে কথা বলা শেষ। মেয়েটির নাম ছিল সুবাত। মা বাবাকে বলল, "দেখেছ? আমার মা কি বলছে? আমরা নাকি শহরে যাব। তা আবার সুবাতকে নিয়ে। মানে ওর নানুবাড়ি যেতে হবে।" তখন বাবা বলল, "ও! এ তো ভাল কথা। তবে কবে যাবে?" মা বলল, "তুমি জান না, ফেব্রুয়ারী মাসে কি? আজ ১৫ তারিখ। শোন, কিছু তারিখ বলি, এগুলো কি বন্ধ, তুমি ঠিক করে বুঝে নাও। ১৯, ২১, ২২ এগুলো কি বন্ধ?" তখন বাবা বলল, "ও, হ্যাঁ....! তুমি ঠিকই বলেছ। কিন্তু তা তো শনিবার।" মা বলল, "তোমার চাকরিতে তো ছুটি নেয়া যাবে। আর আমার তো শুধু সংসারের কাজ। আর সুবাতের তো একদিন বন্ধ হলে কিছু হবে না। স্যার-ম্যাডাম বা অন্য বন্ধু-বান্ধবের খাতা দেখে সে বুঝে নেবে যে, কি করালো। তাহলেই তো হয়ে গেল। দেখি, তুমি চাকরি করে এসে টিকেট করে নেবে। আমি সবসময় কেয়া গাড়িতে যাই, যেখানেই যাই। কেয়া গাড়িটা আমার কাছে ভাল লাগে।" বাবা বলল, "কিন্তু কেয়া তো শুধু একসিডেন্টের গাড়ি।" তখন মা বলল, "আচ্ছা, পছন্দ হওয়া না হওয়ায় কি, ভালটাতেই চড়। তাহলে সবচেয়ে ভাল কি, বলতে পার তুমি?" বাবা বলে, "মানে ভাল গাড়ি হচ্ছে দেশ ট্রাভেলস। আর ওখানে করলেই ভাল হয়। বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে যাচ্ছি।" মা বলে, "তবে এ গাড়িটা খারাপ না হোক, অন্যদিক থেকে আবার এক্সিডেন্টের গাড়ি যেন না আসে। ড্রাইভারকে সাবধান থাকতে বললেই হবে। যদি দেখ, এক্সিডেন্ট যেই গাড়ি করে, সেই গাড়ি সামনে এসে যাচ্ছে, তখনই পিছনে পিছিয়ে সরে যেতে বলবে। আর তুমি সামনের সিটে থাকবে। তাহলেই সাবধান হতে বলতে পারবে। আর আমরা একটু পিছনের দিকে বসব, কারণ সামনের দিকে বেশি হর্নের শব্দ থাকে, আবার সামনে পেট্রোল-টেট্রোলের গন্ধ। সামনের সিটে ঝাঁকিও বেশি লাগে।" তখন আলোচনা হল। বাবা ১৭ তারিখে টিকেট কেটে ফেলল। আর বলল, "বাস থেকে নেমে সিএনজিতে যাবে। তবেই ভাল হবে।" তখন মেয়েটি গাড়ি-ঘোড়ার কথা শুনে ফেলল। তখন ও বলল, "গাড়ি-ঘোড়ার কথা কেন? গাড়ি-ঘোড়ায় চড়ে তো কোথাও যায়। আবার কোথায় যাবে?" তখন মা বলল, "তুমি যদি লক্ষ্মী মেয়ের মত খাও, লক্ষী মেয়ের মত পড়াশোনা কর, ক্লাসে ভালভাবে থাকতে পার, সুন্দর করে ঘুমাতে পার আর যদি মা-বাবার কথা শুনতে পার, তবে তোমাকে একটা জায়গায় নিয়ে যাব।"- এই বলল মা। এই শুনে মেয়েটি লক্ষ্মী হয়ে থাকল। মা যা যা বলেছে, যা যা করলে নিয়ে যাবে বেড়াতে, সেই সেই জিনিসই করতে থাকল। আর মা এসব বলল কেন জান? বাচ্চা বেড়ানোর কথা শুনলেই যা যা করতে বলব তা তাই করবে। তাই মা বলল যদি এমন কর, তাহলে এমন হবে। আসলে তো সেটা না করলেও নিয়ে যাবে। তখন বাবা ছুটি নিয়ে নিল ২০ তারিখ। এরপর ১৯ তারিখ হতে চলল। বাচ্চাকে টিভি দেখতে দিয়ে বা লিখতে-পড়তে দিয়ে অন্য জায়গায় গিয়ে তবেই ব্যাগ গুছাতে শুরু করল। এরপর সকাল হল ১৯ তারিখে। সুবাত ঘুমোচ্ছিল। সুবাতকে ডাকল। সুবাতকে বলল, "সুবাত, সুবাত! তুমি তো লক্ষ্মী হয়ে থাকতে পেরেছ। বললাম না, কোথায় যেন বেড়াতে নেব? চল, বেড়াতে নিয়ে যাই। ঘুম থেকে উঠে পড়। এই যে সুন্দর জামা পড়ে যাবে। ওঠ সুবাত, তাড়াতাড়ি ওঠ। নাহলে কিন্তু আর যাওয়া যাবে না। উঠে জলদি করে কিছু খেয়ে নাও। আমি তোমার পছন্দের নুডুলস রান্না করেছি। বাসে বসে সেটা খাবে। উঠে পড় সুবাত, উঠে পড়। জলদি করে উঠ। না উঠলে কি করে যাবে? তাড়াতাড়ি উঠ। সুবাতের বেড়ানোর কথা মনে পড়ে গেল। সে 'ইয়ে..' বলে লাফ দিয়ে উঠে পড়ল। দৌড় দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলল। সে তো প্রতিদিন সকালে মধু খায়। মুখ ধুয়ে তাড়াতাড়ি খেয়ে ফেলল মধু। সে জলদি করে ভাত খেয়ে রেডি হয়ে পড়ল। দৌড়ে দিয়ে ঘরের বাইরে বের হয়ে গেল। মা-বাবারাই তো ঘর থেকে নিয়ে আনবে, উল্টো সুবাতই নিচে গিয়ে ডাকল, "মা, বাবা, নিচে নেমে আস। এতক্ষণ বাড়ির ভিতর থাকা যাবে না। বাস চলে যাবে, জলদি। আমি যাবই যাব, নিয়ে চল না, নিয়ে চল না। তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আস।" সুবাতই উল্টে ামা-বাবাকে ডাকল। মা-বাবারা ভাবল, "ওমা! আমরাই তো ওকে ডাকব। এখন ওই দেখি উল্টা আমাদেরকে ডাকছে। তাড়াতাড়ি রেডি হও।" মা-বাবা রেডি হয়ে আসল। সুবাত মা-বাবাকে নিয়ে মা-বাবার হাত ধরে দৌড় দিয়ে যেতে চাইল। কিন্তু মা-বাবা কি আর ছো্‌ট্ট বাচ্চাদের মত দৌড়াদৌড়ি করতে পারে? তারা সুবাতকে বলল, "এই, দাড়াও, দাড়াও, রিকশায় করে যাই, চল।" রিকশায় করে বাসস্ট্যান্ডে চলে গেল ওরা। সুবাত কোনদিন বাসস্ট্যান্ড তো দেখেনি। তাই সে ভয় পেয়ে গেল। বলল, "মা, এটা কি? এত বড় বড় যানবাহন কোনদিন দেখিনি। আমি শুধু ছোট ছোট গাড়ি-ঘোড়া দেখেছি। এটা আবার কি গো?এটাতে দেখি সিড়িও আছে? আমরা কোনটাতে যাব? এই যানবাহনের নাম কি?" তখন মা বলল, "হা-হা-হা! আরে বোকা! এই যানবাহনের নাম বাস।" সুবাত বলল, "কি বললে? এটা বাজ? তার মানে এখানে বাজপাখিরা চড়ে? তাহলে তুমি আমাকে বাজপাখি দেখাতে এনেছ? এ তো খুবই পুরান।" তখন মা বলল, "হা-হা-হা-হা------। মা হাহাহা করে হাসতেই লাগল।" বাবা বলল, "উহ! কিচ্ছু বোঝে না। লিখে দেখাব? বর্গীয় জ না, দন্ত স। ব-এ আকারে বা, দন্ত স। বাস। এবার বুঝেছ? বাসে মানুষরা চড়ে। এখনো আসল জায়গায় যাওইনি। এইখানে আমরা যে গাড়িতে যাব সেই গাড়ি এখনই চলে আসবে। চলে এলেই উঠিয়ে দেব তোমাকে।" দেশ ট্রাভেলসের গাড়ি চলে এল। সুবাত দেখে ভয় পেয়ে গেল। বলল যে, "গাড়িতে আবার বিভিন্ন রকমের ডিজাইন! এইটা কি লেখা, পড়ে দেখি তো। DESH Travels। ও, তার মানে দেশ ট্রাভেলস? দেশ ট্রাভেলসে আমরা চড়ব? চল মা, চড়ি। এবার বাবা, মা ও সুবাত গাড়িতে উঠল। সুবাত ভাবল, "ওহ! এইটা যে চলছে, তাতে খুব বাতাস লাগছে। কী সুন্দর বাতাস! কিন্তু ভয়ও করছে। এত উঁচু যানবাহন থেকে যদি পড়ে যাই।" সুবাত পড়ে যাওয়ার কথাটা মাকে বলল। মা বলল, "ওহ! এর মধ্যে থেকে পড়বে কি করে? জানালা দিয়ে তো আর পড়বে না। সামনে তো আর আমরা বসিনি। আমরা তো কিছু সিট পিছনেই বসেছি। সামনে বসলে তো আরো ভয় পেতে, যদি দরজা দিয়ে পড়ে যাও। পড়ে যাবে না। কত বেড়া দেয়া আছে। এর থেকে কি পড়ে যাওয়ার কোন ভয়?" তখন সুবাত বলল, "আচ্ছা, ভয় পাব না।" তারপর শহরে আসল। নেমে সে খুব ভয় পেয়ে গেল। সে বলল, "মা, দেখ! কততো বড় বড় বাড়ি! এত বড় বাড়ি আমি কোনদিন দেখিনি।" তার নানুর বাসা ছিল দশ তলা বিল্ডিংএর পাঁচ তলায়। নানুর বাড়িটা দেখে সে ভয় পেয়ে গেল। সে বলল, "মা! এটা কি রাক্ষসের বাড়ি?" বাবু মনে করল, পুরো বাসাটাই একজনের। সে খুব ভয় পেয়ে গেল। তারপর মা বলল, "চল, ভিতরে ঢুকি। বাড়ির ভিতরে ঢুকবে না?" তখন বাবু বলল, "না, মা। আমার খুব ভয় করছে। এটা কাদের বাড়ি? তুমি চিনতে ভুল করনি তো? এখানে দেখছি সবই রাক্ষসের বাড়ির মত।" মা বলল, "আহ-হা হা হা! রাক্ষস নয়, খোক্কস নয়, কার বাড়ি, তা আগে ভিতরে ঢুকে দেখ না!" তখন সুবাত বলল, "মা, আমার কিন্তু ভয় করছে। রাক্ষস থাকলে কিন্তু তোমারই দোষ।" তখন মা বলল, "তাহলে রাক্ষস না থাকলে কিন্তু তোমার দোষ হবে।" তখন বাবু বলল, "না, না।  তা হবে না।" তখন বাবা বলল, "এত কথা না বলে ভিতরে ঢোক তো।" তখন সবাই ভিতরে ঢুকল। বাবু বলল, "এ বাড়িটা অনেক বড় ছিল না? ভিতরে এত ছোট্ট কেন?" তখন মা বলল, "উহ! চুপ কর।"- বলে মা কলিং বেল টিপ দিল। বাবু কলিং বেল শুনে ভয় পেল। বাবু বলল, "এটা কি? এটা কি কোন রেডিও? এটায় কি গান শোনে? কি সুন্দর একটু আগে গান হল। টিপ দিলে গান বেজে উঠল।" তখন নানু দরজা খুলল। তখন সুবাত বলল, "নানু! তুমি এখানে কি করে এলে? এটা তুমি কোনখানে এলে? এটা অনেক বড় তো, ভিতরে এত ছোট কি করে হল?"-বাইরে বসেই বলল। তখন নানু বলল, "উহ! সোনা। আমার সোনার সুবাত! বাইরে বসে কেন কথা বলছ? ভিতরে ঢোক। দেখ, কি।" তখন সুবাত বলল, "এত শক্ত মাটি তোমাদের! আমাদের জান, ল্যাদভ্যাদা মাটি।" আর এখানে তো অনেক কিছু অনেক রকম পার্থক্য আছে আমাদের বাড়ির সাথে। আমাদের বাড়িতে অনেক ছোট ছোট চুলা। তোমাদের অন্য রকম চুলা। আমাদের তো নিচে, তাও আবার ল্যাদভ্যাদা যেমন মাটি তেমন। তোমাদের চুলাটা না অনেক সুন্দর। ও বাবা! তোমাদের রুমগুলোই তো দেখিনি। আমরা কোন রুমে থাকব তোমাদের বাড়িতে এসে?" তখন নানু বলল, "তোমার যেই রুমটা পছন্দ হয় তুমি সেই রুমেই থাকবে।" সুবাত বলল, "আমার যেই রুমটা পছন্দ সেই রুমে কি ঘুমানো যায়? আমার পছন্দ যেই রুমে অনেক সোফা-টোফা, টেবিল, যেই ঘরে মেহমানদের বসতে দেয়া হয়, সেই রকম।" তখন নানু বলল, "ও! এই রুম? এই রুমের নাম তো ড্রইং রুম।" তখন সুবাত বলল, "তাহলে তো এই রুমে ছবি আকা যাবে। আমি তো আমাদের রং,

Friday, February 19, 2016

ছোট্ট ছেলের বুদ্ধি

এক গ্রামে বাস করত এক ছেলে। ছোট্ট ছেলে। তারা খুব গরীব ছিল। সে তার বাবা ও মাকে নিয়ে থাকত একটি ছোট্ট ঘরে। তিনটি মাত্র রুম। একটি মাত্র বেডরুম। একটি রান্নাঘর। একটি খাওয়ার ঘর। বেশি টাকা-পয়সাও ছিল না। তার বাবা মাঠে বাঁশি বাজানোর চাকরি করতেন। তিনি একবারে বাঁশি বাজানোর রাজার মত। এমন সুন্দর বাঁশি বাজায় না, তাই মানুষ তাকে অনেক টাকা দেয়। আর তার মা এমন নাচ জানে যে, নাচের চাকরি করতে পারে। তাই সে নাচের চাকরিই করত। প্রতিদিন একের পর এক মানুষ এসে এসে বলত, আমাদের গ্রামে বা আমাদের শহরে একটি উতসব হবে বা অনুষ্ঠান হবে। সেখানে একটু নাচ-গান হবে তো, তাই আপনাকে একটু দরকার। প্রতিদিনই এমন করত একজন না একজন। ছেলে আর কী করবে? ঘরে বসে থাকত। ছোট্ট ছেলে কি আর কাজ করতে পারে? তবে তার মা ও তার বাবা একটু বাঁশি বাজানো আর একটু নাচ শিখিয়েছিলেন। তখন ছেলেটি দেখল, একদিন কোন উৎসব নেই, আর কোন জায়গাতেই উতসব নেই। তার বাবাও উতসবের বাঁশি বাজাতো। এখন ছেলে ভাবল যে, ইস! এখন তো মা-বাবার কোন কাজ নেই। এই ভাবল সে। সে মা-বাবাকে বলল, "বাবা! তুমি আমাকে বাঁশি বাজানো শিখিও। মা! তুমি আমাকে নাচ শিখিও।"  আর তার চাচী গানের ব্যবসা করত। চাচীর কাছে গিয়ে বলল, "আমায় একটু গান শিখিয়ে দিও।" তারপর সবাই শিখিয়ে দিল। তখন সে একটি সরকারী উতসবে নাচ, গান, বাঁশি বাজানো এসব করতে গেল। কারণ, "অন্য উতসবের চেয়ে সরকারী উতসবে বেশি পয়সা দেবে। আর আমি তো এখন তিনটাই একসাথে করছি। তাহলে আমাকে নিশ্চয়ই আরো বেশি পয়সা দেবে।" - এই ভেবে সে সরকারী উতসবে ঢুকল। সেখানে মনে কর অনেক রকম ধর্ম, অনেক রকম মানুষ এসেছে। ছেলেটি নাচল, গাইল, বাঁশি বাজালো, এমনকি সুন্দর ভাল ভাল গানও গাইল। টাকা পেল কত জান? দুই লাখ। এরপর দুই লাখ টাকা দিয়ে সে এক বস্তা চাউল, এক বস্তা সবজিও কিনল। আর সে তা দিয়ে একটি গরুও কিনল। কারণ, দুধ তো প্রতিদিন কিনলে বেশি টাকা লাগে, আর গরু তো একমাত্র কিনলেই প্রতিদিন দুধ পাওয়া যাবে। আর যেদিন কোন খাবার থাকবে না, সেদিন গরুটির মাংসও তো খাওয়া যাবে। আর এমন টাকা যে পাওয়া গেল, তা দিয়ে আরেকটি গরুও তো কেনা যাবে। তার চাচীর জন্যও একটি গরু কিনল। দিল চাচীকে। চাচীও ছিল খুব গরীব। তার আবার চাউল-টাউল কিছুই ছিল না। গান গেয়ে যা টাকা হতো একশ বা দুইশ তা দিয়ে সে একটু ডিম-টিম খেতে পেত। চাচীকে গরুটা সে উপহার দিল। আর চাচীকে বলল, "চাচী, তুমি প্রতিদিন এমন কর কেন? প্রতিদিনই টাকা খরচ কর কেন? তোমার একদিন একটু টাকা খরচ করলেই তো অনেক কিছু পাবে। এই দেখ তোমার জন্য কি এনেছি! দুধ খেতে যদি চাও, একটা মাত্র গরু কিনলেই প্রতিদিন পাবে। ডিম খেতে যদি চাও, একটা মাত্র মুরগী কিনলেই প্রতিদিন পাবে। শুধু তাদের একটু খেতে দিলেই হয়। এবার তাহলে আমি আসি!" এরপরে মা-বাবা ও ছোট ছেলে এবং তার চাচী সুখে দিন কাটাতে লাগল। দুই লাখ টাকা দিয়ে সারা গ্রামে যত গরীব মানুষ আছে সবাই একটু না একটু কিছু পেল। দশ বছর চলল সেই দুই লাখ টাকা দিয়ে। এরপর আবার সেই সরকারী অনুষ্ঠান খুঁজতে লাগল। কিন্তু এবার সরকারী অনুষ্ঠান নয়। এবার খোঁজ পেল বিদেশী একটি সরকারী অনুষ্ঠান। এবার তো নাচ-গান করে সে পাঁচ লাখ টাকা পেয়ে গেল। তা দিয়ে সে ১২ বছর কাটালো। এরপর সবসময়ই কোন না কোন দেশের সরকারী অনুষ্ঠান খুঁজে খুঁজে লাখ লাখ টাকা পেতে লাগল আর সুখে জীবন কাটাতে লাগল। টাকা দিয়ে জিনিস কিনে সেই সব জিনিস সে গরীব মানুষকেও দান করল। আর সরাসরি (নগদ) টাকাও কিছু গরীবদের দান করল। 

Tuesday, February 16, 2016

রাজার যুদ্ধ


দিঘি নগরীর রাজা ্ওসমান। মুক্তা নগরীর রাজা সিপাইনুন। সিপাইনুন ছিলেন খুব খারাপ ্ও অত্যাচারী রাজা।ওসমান ছিল সবচেয়ে ভাল ও দয়ালু রাজা। সিপাইনুন ভাবল, "আমরা তো অনেক যুদ্ধের শখ। আমি বরং ওসমানের সাথে যুদ্ধ করি।" ঘোষণা, "পরশুদিন রাজা সিপাইনুনের সাখে রাজা ওসমানের যুদ্ধ হবে।" ওসমান শুনে ভয় পেয়ে গেল যে, "ও বাবা! আগে থেকে জানাবে না? আমি নাকি যুদ্ধ করব। সবাইকে জানানো দরকার। রাণী! রাণী! শুনে যাও।" রাণী জবাব দিল, "কী? আমি এখন যেতে পারব না। তোমার ছেলে পোলাও, রোস্ট, পায়েস জর্দ্দা এসব খাওয়ার বায়না করেছে।" "কিছুক্ষণ এসব বাদ দাও রাণী। জরুরী কথাটা শোন।" রাণী এলো। বলল, "কী হলো?" "আরে এবার যে রাজা সিপাইনুনের সাথে যুদ্ধ করতে হবে।" রাণীর জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পড়ে গেল।যুদ্ধ হলো। সকলে দেখতে এলো । কেউ কেউ বাচ্চাও নিয়ে গেল দেখতে। জিতল----দিঘি নগরীর রাজা।
সবাই রাজা ওসমানের জন্য গান গাইতে শুরু করল-
"জিতেছে দিঘি নগরীর রাজা-
তার নাম ওসমান রে--
যুদ্ধে গিয়েছিল,
জিতেছে রে----
পুরষ্কার কি করে দিব!
মানুষ জিতলে রাজা পুরস্কার দিবে।
কিন্তু রাজাই যদি জিতে যায়-
কি করে হবে...?
যুদ্ধ গিয়ে জিতেছে দীঘি নগরীর রাজা-
তার নাম ওসমান রে.....।"

Monday, February 8, 2016

টুপির গল্প

এক মেয়ের ছিল এক অদ্ভুত টুপি। টুপিটি দেখতে খুবই সুন্দর। যখন কোন বিপদে পড়বে, ভেবে ভেবে বিপদটি নিয়েই একটি ছন্দ বলবে আর টুপিটি পড়বে। তাহলেই টুপিটি বিপদে সাহায্য করবে। কারণ, তার ছন্দ শুনতে খুব ভাল লাগে। ছন্দ শোনা তার অনেক প্রিয়। এই টুপি দোকানদারের কাছেই ছন্দ শুনতো। এরপর তো মেয়েটি কিনে নিল টুপিকে। একদিন মেয়েটি বড় হয়ে গেল। অনেক বড়। তার বয়স হল ২৫। তাকে বিয়ে দেয়ার সময় হয়ে গেল। সেখানে একটা অদ্ভুত কাণ্ড ঘটেছে। সেখানে বিয়ে করার জন্য বর কম ছিল, আর কনে বেশি ছিল। সবাই আগে আগে বিয়ে করে ফেলেছে। আর একটা লোক ছিল বিয়ে করার জন্য। কিন্তু সে মেয়েটিকে পছন্দ করছিল না, আর মেয়েটিও ছেলেটিকে পছন্দ করছিল না। কারণ, ছেলেটি খুব কালো। ঘরে তেমন ভাল কিছুও নেই। তাকে বিয়ে করে শ্বশুর বাড়িতে গেলে তার বাড়িতে তো কিছু নেই, তাই তারও তো কষ্টে থাকতে হবে। তাই দু'জনের কেউই দু'জনকে পছন্দ করল না। এখন তো একটা বড় বিপদে পড়েছে। তার দাদী তাকে বলে গিয়েছিল, বিয়ে করতে বেশি দেরি করলে আমি কিন্তু রাগ করব। আর তোমায় বকাও দেব। মহাবিপদ কেন জান? মেয়েটি তার দাদীর সব কথা শুনত। একটি কথা না শুনলে সবার কাছেই সেই কাজটা খুব অপমানের হবে। তখন তার একটুও ভাল লাগবে না। তার না ভাল লাগাটা একটুও পছন্দ না। সুন্দর টুপিটিকে হাতে নিয়ে ভেবে ভেবে ছন্দ খুঁজছিল। 
"বিয়ে করতে পারছি না-
বর এনে দাও না।
ছন্দ শোনাবো ছন্দ শোনাবো-
একটু খুঁজে দেখ গো।"
এই বলার সাথে সাথে টুপি খুশী হয়ে বলল, "এক মিনিটের মধ্যেই আমি বর খুঁজে আনছি।" টুপি তো আর তেমনভাবে বলতে পারে না। টুপি যতটুকু পারে ততটুকুই একটু বলল। পরে সে সন্ধান পেল এমন সুন্দর একটি ছেলেকে, যাকে দেখে ছবি না তুলে তার (টুপিটার) একটুও ভাল লাগছিল না। টুপি আবার গিয়েছিল একা। টুপি কি করে গিয়েছে জান? তখন আবার একটু ঝড় ঝড় ছিল। ঝড়ে একটু বাতাসে আর নিজের একটু শক্তি দিয়ে সে আমেরিকায় গিয়ে একটি খুঁজে পেয়েছিল। সে কেমন দেখতে জান? কাল কাল চুল, গায়ের রং দুধের মতন, রাজকুমারের মত পোশাক-আশাক, প্রতিদিন মেকাপ-টেকাপ, ক্রিম-ট্রিম লাগিয়ে অনেক সুন্দরভাবে সাজে, আর তাড়াতাড়ি যাতে তাকে সুন্দর দেখায় তাই সে সাড়ে এগারটার দিকেই গোসল করে। গোসল আবার করে ভাল সাবান ও শ্যাম্পু দিয়ে। হাত-পায়ে তেল মাখে, কী সুন্দর সুন্দর শার্ট-প্যান্ট! মেয়েটির নাম ছিল জোছনা। টুপিটি ভাবল, "এটাকে যদি আমি জোছনাকে উপহার দেই, সে খুব খুশী হয়ে আমাকে অনেক ছন্দ শোনাবে। এটা আমি ওকে সরাসরি দেব না। এটাকে আমি উপহার দেব। কি করে দেব, তা তো ভেবেই রেখেছি।" টুপিটি গেল ছেলেটির কাছে। ছেলেটির নাম ছিল মধু। মধুকে ডেকে বলল, "একটা কথা শোন ভাই। আমাকে তোমার ঘরে নিয়ে চল। তারপর কিছু কথা বলব।" মধু তো টুপিকে দেখেই চমকে গেল। সে বলল, "ও রে বাবা! টুপি আবার কথা বলে। এটা আবার কি গো! টুপির মধ্যে আবার প্রাণ দিল কে?" টুপি বলল, "ভয় পেয়ো না। আমি একটি অদ্ভুত টুপি। আমাকে এত ভয় করছ কেন? আমাকে ভয় না পেয়ে একটু ঘরে নিয়ে চল। কতবার বলছি, ঘরে নিয়ে চলছ না কেন? আমায় নিয়ে যাও তোমার ঘরে। তোমার ঘরটা আমি একটু দেখব আর কথা বলব। তোমার মা-বাবার ঘরটাও দেখব, কিন্তু পরে। তখন ছেলেটি কিছু বুঝল না। সে যা বলল, তাই করল। ঘরে নিয়ে গেল টুপিকে। টুপি বলল, "কি সুন্দর তোমার ঘর! তোমার ঘরে দেখি আবার তোমার ছবিও টানানো আছে। তোমার বিছানার চাদরটি তো সুন্দর খুব! দেখি দেখি। চাদরটি কি সুন্দর টকটকে লাল! তোমার টেবিলটাও তো সুন্দর, চেয়ারটাও তো সুন্দর, আর তোমার ব্যাগটা তো সবচেয়ে সুন্দর! কী সুন্দর ফুল রাখা আছে টবে! টবটাও তো কত সুন্দর! তুমিও খুব সুন্দর। তুমি যে খুব সুন্দর, এই কথাটা আমার মনে হলেই কেমন লাগে জান? আমার মনে হয়, এটা তো স্বাভাবিক, ও তো সুন্দরই, এ তো আবার বলার কী আছে? তাই আমার মনে হয়। কারণ, তোমাকে আমি একনজর দেখেছি। একনজর দেখাতেই তুমি যে সুন্দর এটা আমি টের পেয়েছি। এবার কথাগুলো তো বলি। তোমার কয় বছর?" "কেন, আমার বয়স দিয়ে তুমি কি করবে?" এমনি একটু জানতে চেয়েছি। একটা জরুরী কাজের জন্য। একটু পরে বলছি সে কথা। মধু বলল, "আমার বয়স তো ৩০ হয়ে যাচ্ছে প্রায়। এই তো কয়দিন পর ৩০ বছর পূর্ণ হয়ে যাবে।" তখন টুপি ভাবল, "এরও তো বিয়ে করার সময় হয়েছে। তবে এরা বিয়ের কোন খোঁজ-খবরই রাখছে না।" তখন সে (টুপি) বলল, "এবার একটা কথা শোন! ভেবেচিন্তে অন্যদের বলো। কথা শুনে আবার তেমন কিছু মনে করো না। আমাদের ঘরে না একটা সুন্দর মেয়ে আছে। আমার কাছে তার একটা ছবিও আছে। দেখ তো সুন্দর কিনা ও!" তখন মধু দেখে বলল, "আমি তো দেখছিলাম যে, এইসব নিয়েই কোন কথা ভাবা যায় কিনা। অনেক মেয়েকে আমি দেখেছি। সব মেয়ের চেয়ে এই মেয়েটাই তো বেশি সুন্দর। মেয়েটার কাছে আমি একটু যেতে চাই। ছবি দেখে তো হবে না, বাস্তবেই মেয়েটাকে দেখলে আমি বুঝব।" তখন টুপি বলল, "মেয়েটা তো অনেক দূরে। বাংলাদেশে ঠিক। তবে যেতে পারবে আমার সাথে। আচ্ছা আরেকটা কথা বলি। কিছু মনেও করো না। বলতে পারি?" তখন মধু বলল, "আমি কেন মনে করতে যাব? আর আমি রাগই বা হব কেন? বল, সামান্য একটু কথায় কি রাগ হলে চলবে? সত্যি সত্যি যদি খারাপ কিছু করে তাহলে না হয় রাগ হওয়ার কারণ থাকে। বল।" তখন টুপি একটু ভয় ভয় ভাবে বলল, "সেই মেয়েটির নাম তো জোছনা। তুমি কি ওকে বিয়ে করতে পারবে?" তখন মধু বলল, "তোমাকে তো বলেছি যে, এই কথা নিয়েই তো আমি ভাবছিলাম। তুমি আমার একটা ইচ্ছে তো পূরণ করেই দিয়েছ। খুব ভাল করেছ। ধন্যবাদ। তাহলে নিয়ে চল দেখি, মেয়েটা কেমন। এ বিষয়ে তুমি আমার কাছে এভাবে বলছ কেন? আমার মা-বাবার কাছে বল।" তখন টুপি বলল, "কি বলছ? আমি বলতে পারব না, বাবা। যদি আবার কিছু বলে। তুমি বল। তোমাকে বরং কিছু বলবে না। তুমি তাদের ছেলে তো, তাই।" তখন মধুই বলতে গেল। বলল, "মা! তুমি আমার একটা কথা শুনবে? কিছু বলো না আবার, হ্যাঁ। আমার বিয়ে করার বয়স হয়ে গেছে। আমি একটি মেয়ের সন্ধান পেয়েছি। মেয়েটি খুব সুন্দর ছিল। আমি তার ছবি দেখেছি।" মা বলল, "কে দেখালো আবার ছবি? কেই বা সন্ধানটা দিল? আর কার কাছে তুমি মেয়ের কথা জেনেছ? মেয়েটির নাম কি, বলতে পার?" মধু বলল, "মেয়েটির নাম তো জোছনা। জান একটা অদ্ভুত দৃশ্য দেখেছি। আগে বল, বিশ্বাস করবে তো? কিছু বলবে না তো আবার? বললে কিন্তু হবে না। আমাকে আগে কথা দাও। কথা যদি না রাখতে পার, আমি কিন্তু কোন দিনও বিয়ে করব না।" তখন মা ভাবল, ছেলেটিকে বিয়ে না দিয়ে আমি করব? বিয়ে না দিলে মানুষে কি বলবে? ওর ছেলেমেয়েই বা হবে কেমনে? তখন সে রাজি হয়ে গেল। বলল, "ঠিক আছে আমি কথা রাখব। কথা দিয়ে দিলাম তোমায়। ভয়ংকর কিছু হলে একটু ভাবতে দিও।" তখন বলল, "আমি একটি টুপি দেখেছি। ওই টুপিতে না কথা বলে। টুপিটা একদম মানুষের মত। আমাদের কথা বোঝে। সেই টুপি আমাকে এই মেয়ের কথা বলেছে। আমি তার ছবি দেখেছি। সে কিন্তু খুবই সুন্দর, মা। আমি তার সাথে বিয়ে করব। এবার কিন্তু কথা রাখতে হবে! না রাখলে কিন্তু সত্যি সত্যি যা বলেছিলাম, তাই হবে।" তখন মা বলল, "আচ্ছা আচ্ছা, অত ভয় করব না। বিয়ে করবে, করবে। একটু শান্ত হও, বাবা। আমায় একটু ভাবতে দাও। বলেছিলাম না, ভাবতে দেবে?" তখন ভেবেশুনে মা বলল, "ঠিক আছে, ছবিটা আমায় একটু দেখাও তো! আর টুপিকে আমার সামনে এনে দাও।" টুপিটি আসল। মা দেখে বলল, "কি সুন্দর তুমি! তুমি কি টুপি, নাকি মানুষ?" "আমি হচ্ছি আজব টুপি। দেখ আমার হাত-পাও আছে।" তখন মা বলল, "আচ্ছা! তোমাকে দেখে কেমন যেন লাগছে। তুমি কে? কার সাথে থাক?" "আমি একটি মেয়ের সাথে থাকি, যেই মেয়ের নাম জোছনা। যেই মেয়েটির সাথে আপনার ছেলেকে বিয়ে দিতে চাচ্ছিলাম।" তখন বলল যে, "আচ্ছা, তোমার সবচেয়ে ভাল লাগে কি?" বলল, "আমার সবচেয়ে ভাল লাগে ছন্দ শুনতে।" তখন মা বাবাকে সব কথা বলল। বাবাও বিয়ে দিতে রাজি হয়ে গেল। তখন শুধু ছেলেটিকে নিয়ে যেতে হবে মেয়েটির কাছে। তখন সে (টুপি) মধুকে নিয়ে দেশে ফিরে আসল। বাড়ির সামনে গিয়ে দরজায় টোকা দিল। মধুকে এক জায়গায় লুকিয়ে থাকতে বলল। দরজা খোলার সাথে সাথেই বলল, "একটা জিনিস, একটা জিনিস... বলে লাফিয়ে উঠল।" তখন মধু চলে আসল, আর টুপি বলল, "সারপ্রাইজ!" তখন মেয়েটি দেখে অবাক হয়ে গেল, "ওমা! কী সুন্দর গো! এক্ষুণি আমি বিয়ে করব।" তখন টুপি বলল, "এখন তো আর করা যাবে না, পরশু করব।" তার পরের দিন বউভাত আর তার আগের দিন হলুদ হবে। তারপর ঘর-টর সাজানো হল, আলাপ আলোচনা করা হল, সবার নাম-ধাম জানা হলো। হলুদের জন্য মার্কেটে গেল, হলুদ কিনল, হলুদের বাটি কিনল। "হলুদ" লেখা একটি কাগজ কিনল। সুন্দর সুন্দর ফিতা কিনল। বেলুনও কিনল। ফুল কিনল। পোলাওয়ের চাল কিনল। একটি মোরগ কিনল। মিষ্টি কিনল, দই কিনল। বিয়ে হল। টুপিকে ছন্দ শোনালো।