Thursday, September 8, 2016

আপদা কেরানী

এক ছিল এক প্রাইমারি স্কুল। সেই স্কুলে নিয়োগ পরীক্ষা হলো। সেই পরীক্ষায় প্রধান শিক্ষকের পরিচিত এক লোক ছিল। সে পরীক্ষায় ফেল করল। আর আরেকজন এক মিনিটে পরীক্ষা দেয়া শেষ করে উঠে গেল। পাশ তো করলই, কিন্তু যে ভাল করেছে তাকেই নেয়া হলো না। প্রধান শিক্ষক তার পরিচিত লোককেই নিল। প্রথম দিন এক টিচার এসে তাকে বলল, "আমার এই নোটিশটা একটু টাইপ করে দেবেন?"- বলে কাগজটা দিল, আর চলে গেল। এবার সে কী করবে? কী-বোর্ডে ছিল না বাংলা অক্ষর। সে না দেখে কিছুতেই টাইপ করতে পারত না। তারপর সে নোটিশ কথাটি লেখবে। 'ন' খুঁজতে শুরু করল। বলল, দেখি তো, Q-তে কি হয়? দিয়ে দেখল, 'ঙ'। এমন একটা একটা করে দেখতে দেখতে তিন ঘন্টা লাগিয়ে ফেলল। শেষে টাইপ করতে পারল পাঁচ ঘন্টায়। এখন প্রিন্ট করবে কিভাবে, তাই জানে না। Shift+P দিল, Alt+P, Enter+P, Caps Lock+P ও Tab+P দিল। সে শুধু জানে, P দিলে প্রিন্ট হয়। কিন্তু P-এর আগে কোন্‌ কী-বোর্ডটা টিপ দেবে, তাই জানে না। শেষে Ctrl+P দিল। এবার দেখে, প্রিন্টারে আবার সমস্যা। আরেকজনকে যে বলবে, তাতেও লজ্জা করে। প্রধান শিক্ষক এসে বলল, "কি হয়েছে? প্রিন্টারে সমস্যা? এই প্রিন্টারটা একটু এমনই। দাড়াও, আমি ওকে বলছি।"- বলে পাশের জনকে বলল, "এই, তুমি ওঠ। ওকে প্রিন্ট করতে দাও।" তখন প্রধান শিক্ষকের পরিচিত লোকটি বলল, "আবার টাইপ করব?" তখন প্রধান শিক্ষক বলল, "কেন? পেন-ড্রাইভ নেই? পেন ড্রাইভ আছে তো! ঐ যে পেন ড্রাইভ।" তখন পরিচিত লোকটি বলল, "পেন ড্রাইভে কী করব? পেন ড্রাইভ ঢুকায় কিভাবে?" তখন প্রধান শিক্ষক বলল, "আরে! কানা নাকি, দেখনি? ঐ তো পেন ড্রাইভ ঢুকানোর জায়গা।" তারপর পরিচিত লোকটি বলল, "পেন ড্রাইভ ঢুকালে কী হবে?" তখন প্রধান শিক্ষক বলল, "উহ! তুমি যা সমস্যা চেয়েছে, তার সমাধান হবে।" "ওহ! তাহলে ঐ কম্পিউটারেও এই লেখাটা ম্যাজিক করে হয়ে যাবে? নাকি আমারই আবার লিখতে হবে?" প্রধান শিক্ষক রাগের মাথায় চিৎকার দিয়ে বলল, "কপি হবে, আর কী হবে, এটাও জানিস না?" "তার মানে ফুলকপি হবে? ফুলকপি প্রিন্ট করে খাব? কি মজা, ফুলকপি অনেক মজা লাগে! কিন্তু তাহলে আমার লেখাটা আসবে কি করে?" প্রধান শিক্ষক মহা মহা মহা জ্বালায় পড়ল। মনে মনে রাগ হয়ে বলল, "এই চেংড়িরে নিয়ে আর পারলাম না! অসহ্য! একেবারে গাধা! আমি ভেবেছিলাম, পরীক্ষায় যা আসছে, সেগুলো কঠিন, এগুলো নিশ্চয়ই অনেক সহজ লাগবে। তাই আমি নিয়োগ দিলাম। আর এখন! আমি যে কী করি! এই মেয়েটা একেবারে বিশ্রী। আমার মান-সম্মান সব জলে ডুবিয়ে দিল। সবাই এখন বলবে, প্রধান শিক্ষকের লোক এমন! উহ!" এবার সে মুখে বলল, "ফুলকপি না হে, কপি। ফুল না। কপি মানে হল একটা জিনিস আরেক জায়গায়ও চলে আসা। তোমায় বুঝাতে এত সময় লাগে!" ঐখানে আবার একটা মিটিং ছিল। সবাই তাড়াতাড়ি করে এসে পড়ল। এসে দেখল, প্রধান শিক্ষক একজনের সাথে কথা বলছে, সে কিছুই পারছে না। সবাই বলতে লাগল, "প্রধান শিক্ষক স্যার! আপনার পরিচিত লোক কোথায়? দেখি তো তাকে। আমি নিশ্চিত, সে খুবই ভাল কাজ পারে। তাই আপনি তাকে নিয়োগ দিয়েছেন।দেখি তো! আর যে বোকা বোকা কাজ করছে, তাকে নিশ্চয়ই সে ভাল করে দিতে পারবে। তাকে নিশ্চয়ই শিখাবে।" প্রধান শিক্ষক মনে মনে বলল, "এ কী জ্বালায় পড়লাম আমি! আমারই কেন সব জ্বালা? তার মেয়ে কত সুন্দর কম্পিউটার চালায়, ভিডিও দেখে, তাই আমি ভাবলাম, ও মায়ের কাছ থেকেই শিখেছে, ওর মা নিশ্চয়ই খুব ভাল পারে। এখন দেখি, একেবারেই কিছু পারে না।" এরপর প্রধান শিক্ষকের কাছে প্রতিদিন একটা না একটা জিনিস চাওয়া শুরু করল। প্রথম দিন বলল, "আমার কী-বোর্ডে একটু বাংলা দরকার।" পরেরদিন বলল, "ফুলকপির কথা বলেছিলেন না? সেটা কিনে দিয়েন।" পরের দিন বলল, "আমাকে এত বেশি কাজ দিয়েন না।" শেষে দেখা গেল, একদিন ক্লাস টু-তে বাংলা, ইংরেজি ও অংক তিনজন টিচারই ছুটিতে গেল। সেই তিনটা ক্লাস ওনাকে করতে দেয়া হল। বাংলায় বাক্য রচনা- শিখিয়ে দিল ক, খ। অংকে ৮ এর ঘরের নামতা- শিখিয়ে দিল ১, ২। ইংরেজিতে প্যারাগ্রাফ- শিখিয়ে দিল A, B। শুধু অক্ষর শিখাতে লাগল। সবাই এক মিনিটে লেখা শেষ করে খেলতে লাগল আপন মনে। সে আবার খাতা চেক করেই বলল, "যাদের যাদের লেখা শেষ, ক্লাসে দৌড়াও, ইচ্ছামত ক্লাস নোংরা কর, ইচ্ছামত যা ইচ্ছা তাই কর, ক্লাস ধুলায় ভর্তি কর খেলে খেলে- এবার আমি যাই।" পরে ড্রইং ক্লাসের মিস এসে বলল, "কী অবস্থা তোমাদের? তোমরা সব নোংরা করেছ। কেন করেছ?" বাচ্চারা সবাই টিচারকে বলল, "বাংলা, ইংরেজি, অংক আজকে যে মিসটা নিল না, সেই মিসটা আমাদেরকে বলছে খেলতে, ক্লাস নোংরা করতে, ধুলা উড়াতে, আর ইচ্ছেমত ক্লাসে দৌড়াতে। আমরা খেলেছি। টিচার বললে আমরা তো একটা চান্স পাই, আর সেই চান্সটা আমরা হাতছাড়া করব কেন? টিচার বলেছে, তাহলে তো করতেই হবে। আর এটা তো অনেক মজা। নিচের ক্যান্টিন থেকে ক্রিমি কেক নিয়ে আসব, খাব, প্যাকেটের খোসাগুলো ক্লাসে ফেলে দিব, দৌড়াব।" টিচার বলল, "কী! তোমরা ক্লাস টু-য়ের। এখন আমি তোমাদেরকে ড্রইং করাব, আর ক্লাসে ঢুকতেই আমার নাক ধুলায় ভরে গেল। আমি এখনই বলব সেই টিচারকে? সেই টিচারটা কোন টিচার? তার নাম কি?" সবাই বলল, "নাম তো জানি না। তবে সেই মিসটাকে জীবনেও দেখিনি আমরা। অনেক অফিসে গিয়েছি। সব টিচারকে দেখেছি। এই টিচারটাকে কোনদিনও দেখিনি। এই টিচারটা মনে হয় নতুন। আমরা সব ক্লাস দেখেছি সবসময়। সব টিচার্স রুমও দেখেছি। অফিসেও আমরা গিয়েছি। এই মিসটাকে আগে কখনো দেখিনি।" লিনা দাড়িয়ে বলল, "মিস! কালকে আমি ছুটির সময় অফিসে গিয়েছিলাম। তখন দেখেছি ঐ মিসটা শুধু একটা অক্ষর লিখছে আর মুছছে। তখন আমি ঐ মিসটাকে দেখেছিলাম। তার মানে, একটা নিয়োগ ছিল, সেই নিয়োগেই মনে হয় এসেছে। আমার মা-বাবাকে পেপার পড়তে দেখেছিলাম। হঠাৎ করে সেই খবরটি আমরা দেখে  ফেলি। সেই খবরে একটা গল্প ছিল, সেই গল্পটা পড়তে পড়তে আমি এটা দেখে ফেলেছি।" টিচার বলল, "অ্যাঁ! সেদিন তো প্রধান শিক্ষক স্যারের একটা পরিচিত টিচার নিয়োগে এসেছিল। তাড়াতাড়ি দেখতে হচ্ছে তো!" এই বলে টিচার তাড়াতাড়ি অফিসে গেল। অফিসে গিয়ে জিজ্ঞেস করল, "আচ্ছা্, আপনি কি আজকে ক্লাস টু-য়ে ক্লাস নিয়েছিলেন?" লোকটি বলল, "হ্যাঁ, নিয়েছিলাম। ওরা খেলতে মজা পায়, তাই আমি ওদেরকে খেলতে বলেছি, ধুলা উড়িয়ে মজা করতে বলেছি, ক্লাস নোংরা করে সেই নোংরা ক্লাসে নাচতে বলেছি। তারা মজা করেছে।" তখন ড্রইং টিচার বলল, "এটা আপনি কী করলেন? ক্লাসে ঢুকতে না ঢুকতেই নাক বন্ধ হয়ে গেছে। এত ধুলা উড়াতে বলেছেন কেন? বাচ্চাদের যদি কোন ক্ষতি হয়ে যেত?"
পরের দিন প্রধান শিক্ষক মাথায় হাত দিয়ে বলতে লাগল, "এ আমি কাকে আনলাম! এর চেয়ে ঐ ভাল যে পারে ঐ লোকটিকে নিলেই পারতাম। কেন যে একে নিলাম?"- বলে আফসোস করতে লাগল।

শিক্ষা: পরিচয় দেখো না, গুণ দেখ।