Monday, June 1, 2015

গল্প বলার বিশ্বকবি হতে চায় ঝুমি

এক ছিল এক মেয়ে। তার নাম ঝুমি। সবাই তাকে ঝুম বলে ডাকে। হ্রস্ব-ইকারটা মুখে বলত না। একদিন ঝুমি বলল, "মা, আমি অনেক গল্প চিন্তা করেছি। আমি গল্প বলার হিরো হতে চাই। সেটা হতে হলে তো আমি গল্পের বিশ্বকবি হতে চাই।" "না মা, এটা কি করে তুই হবি? তোর তো সেরকম বয়স হয়নি। তোর কয় বছর? সেটা তো তুই ভুলে যাস না। তোর বয়স মাত্র এখন সাড়ে পাঁচ। ছয় বছর কেবল হবে। তোর এখন সাড়ে পাঁচ বছর, তাই তো তোর জন্মদিন এসে ছয় বছর হবে। তুই কি করে এমন হবি, বল, মা!" "না, মা। আমি কি করে হব সেটা তুমিই তো বলবে। তাছাড়া তুমি তো অনেক কিছু করতে পার। গাছে উঠতে পার, চুল কাটতে পার, সবজি কাটতে পার। তারপর আরো কত কি করতে পার! জুস বানাতেও পার। অনেক কঠিন রান্না যে তরকারিতে করে সেইটাও করতে তুমি পার।" "ওরে আমার সোনা রে! এত কিছু আমি করব কি করে? আমি তো হাতের কাজ করতে পারি, মুখের বলাবলি করতে পারি, লেখালেখি করতে পারি, শব্দার্থ বলতে পারি- যেমন টিচার মানে শিক্ষক। কিন্তু এরকমগুলো করতে পারি, তবু এমন সিনেমার হিরো, বিশ্বকবির হিরো, গল্প বলার বিশ্বকবি এসব কাজ তো করতে পারি না। তুমি কেন বোঝ না? কেন বুঝিস না তুই, মা?" "আরে অত কিছু আর বলতে হবে না মা। যাই কর, আমাকে তুমি গল্প বলার বিশ্বকবি হতে দাও। এখন থেকে কী আর করবে? বাপের কাছে গিয়ে বল।" "এখন কি করব? তোমার মেয়ে গল্প বলার বিশ্বকবি হতে চায়। সেটা করতে হলে তো তাকে গল্প বলার যোগ্য হতে হবে। তুমি কিছু কর। তোমার মেয়ের বায়না থামাও। কেমন বাপ হয়েছ, বায়নাও থামাতেই পার না মেয়ের? এমন বাপ জীবনেও দেখিনি। তাড়াতাড়ি যাও। মেয়ের বায়নাটা থামাতে বললাম, কিচ্ছু করছে না। দেখ যে কত বোকা! এত বোকা হলে কি চলে? তাড়াতাড়ি যাও। এমন মানুষ দেখতে পাইনি, কেবল তোমাকেই দেখলাম।" বউয়ের কথা শুনে জামাই বলল, "ঠিকই তো! তুমি তো ঠিকই বলেছ। যাওয়ার যখন যাব তো। মেয়ে আবার এই বায়না ধরল কখন?" "ওরে, আর বলো না। মেয়ের কাণ্ড দেখ দেখি। আর বলতে হবে না যে ঠিকই বলেছ। এগুলো বলে সময় নষ্ট করো না। তাড়াতাড়ি যাও।" তখন সে আবার বলে, "আরে তাড়াতাড়ি যাও বলার দরকার কি? এই আমি যাচ্ছি।" গিয়ে মেয়ের কাছে গিয়ে বলে, "ও মেয়ে! এমন আবার করছ কেন ঝুম? তুই তো আমার সোনার ঝুম। এমন বায়না কখনো দেখিনি। তুই এখন একটু থামতো। তুমি এ বায়না কার থেকে শিখলে? কবিতার হিরো হলে না এক কথা, তাও আবার গল্প বলার হিরো! ওহ! কি কর তোমরা!" "বাবা, আমাকে বিশ্বকবি হতে দাও গল্প বলার। তাড়াতাড়ি নিয়ে চল হিরো হতে।" "ওরে মেয়ে, এটা তো বিশ্বকবি হতে হলে কোথায় যেতে হবে, কিসে করে যেতে হবে; এটা কি পয়সা দিয়ে করে, নাকি আইডি কার্ড বা ফরম বা অন্য কোন কার্ড-টার্ড এসব তো আমি কিছুই জানি না। তবে জানার উপায় আছে। এটা আমি জানি, তবে সেটা বলতে পারে শুধু তোর মামা।" "তাই নাকি? তাহলে আমি নানা বাড়িতে আজই যাব।" "ও মা, আজকে যাবে সেই কতদূর রাজশাহীতে! এই ঢাকা থেকে। স্কুল তো কালকে থেকেই শুরু। বলতে ছুটি শেষ হয়ে গেছে। আগে বললেই তো পারতে রাজশাহী যাওয়ার বায়না।" মা বলে, "একি! এসব বাল বাল কথা বলে? এমন বালের কথা কোন মানুষের মুখে দেখিনি, শুধু তোমার মুখেই দেখছি। এমন জামাইকে যদি আমি জানতাম আগে থেকে, তাহলে বিয়ে করতাম না। দেখ, মেয়ের কাণ্ড! ঝুমু, তুই এত বায়না কোথায় পেলি ঝুমু? তোর বাবা তোকে আরো চেতিয়ে দেল দেখ দেখি! আস, তোমার জন্য চকলেট নিয়ে এসেছি, খাবে?" বলে, "দাও তাহলে।" মা চকলেট দিয়ে বায়না থামাতে চাইল। চকলেট খেয়েও বলে, "এবার আমাকে হিরো বানাও না।" বলে, "আচ্ছা, তোমার জন্য আরেকটা জিনিস কিনে আনব ভেবেছিলাম। এখন কিনে আনি।"- বলে মা গেল একটা বই কিনতে, যাতে আছে অনেক রকমের বায়না থামানোর উপায়। সেই জিনিস কিনে আনল মা। সেইটা দেখে বাবু বলে, "কি সুন্দর বই এনেছে। আমি পড়ে দেখি।" সেই বইতে আসলে লেখার মধ্যে অনেক কিছু ছিল। কোন্‌ কোন্‌ বায়না কি দিয়ে ভাঙ্গানো যায়। সেই বই পড়লে সেই বায়না থেমে যাবে। মা বলে, "এই চাপ্টারটা বেশি মজার।" বলে পৃষ্ঠা উল্টাতে উল্টাতে সেটা বের করল। এক পৃষ্ঠায় লিখেছে সিনেমা বানানোর বায়না। তার পরে লিখেছে রান্না করতে যাওয়ার বায়না। তার পর লিখেছে চকলেট খাওয়ার বায়না। তারপরই লিখেছে গল্প বলার বিশ্বকবির বায়না। হেডিংয়ের নাম: "কি করলে গল্প বলার বিশ্বকবি হওয়া যায়।" আসলে তো যেটা করলে বিশ্বকবি হওয়া যায় না, সেটা লেখা আছে। বাবু মনে করল, এটা করলে বুঝি বিশ্বকবি হওয়া যায়। সেখানে লেখা:- "বেশি বেশি লেখাপড়া করা ও স্কুলে যাওয়া ও সবার প্রতি ভালবাসা রাখা ও জেদ করা যে, আমি বিশ্বকবি কোন কিছুরই হতে যাব না। এই গুলো করলেই এই গল্প বলার বিশ্বকবি হওয়া যায়। কোন কোন মানুষ এমন আছে, যে বলতেই চায় না, আমি বিশ্বকবি হব। সেরকম আচরণ করা ভাল। এমন করলেই তো বিশ্বকবি হওয়া যাবে।" বাচ্চাটা তো কিছুই বুঝল না। ভাবল, এটা করলেই বুঝি বিশ্বকবি হওয়া যায় গল্প বলার। এই ভেবে লেখাপড়া করল, নিয়মিত স্কুলে গেল। তারপর তখন থেকে বাচ্চাটা অনেক ভালমত কাজকর্ম করত। তারপর দেখল, এতে আরো সে ভুলে গেল বিশ্বকবি হওয়ার কথা। সে এখন মন দেয় লেখাপড়ায়। ভালবাসা রাখে সবার উপর। বেশি বেশি স্কুলে যায়। লেখাপড়া করে। স্কুলের নতুন বাচ্চাদের বুঝিয়ে দেয়, এটা ওটা কি, কোনটা 'ক' কোনটা 'খ'। এসব বুঝিয়ে দেয়। অনেক কষ্ট করে তাদের তার জেদটা থামাল। এরপর তার একটা ছোট বোন হল মারহা। তার বড় হওয়ার পর তারও একটা অভ্যাস হল পেন্সিলের পিছনে কামড়ানো। কামড়িয়ে চোষা। আগে কামড়ায় যাতে রসটা বের হয়। তারপর সেই রস চুষে চুষে খায়। এখন মা একদিন বলল, "আমি একটু রান্না করে আসি। তুই 'ক' থেকে 'চন্দ্রবিন্দু' পর্যন্ত লিখে নে। নতুন স্কুলের পড়া।" তার নাম ছিল রুপোলাবতী। কিন্তু তারপরও সে পেন্সিল চাবাতে পারছিল না। কারণ, তার বাবাকে ডেকে দিয়ে গেল মা। বাবা বলে, "একি! তুই এমন করে আছিস কেন, মা? আমার রুপোলাবতী। পেন্সিল চাবানোর ধান্ধা করছ বুঝি? কর, অনেক ধান্ধা কর। তুমি তো পেন্সিল চাবাতে আর পারবে না, যত খুশী ভাব। এটা করার আবার বায়না করো না যেন। আগেরবার তোমার বোন কিসবের বায়না করেছিল জান? তুমি তো জান না, জানেলে তুমিও করতে। সেজন্য আমরা বলিনি। এখন তুমি যত খুশী পেন্সিল চাবাও, পরে নিজেই নিজেকে বকা খাওয়াবে। আমরা তোমায় বকা দেব, তুমি নিজে পেন্সিল চিবিয়ে বকা খাওয়াবে নিজেকে নিজে।" রুপোলাবতী বলে, "বাবা, চুপ কর তুমি। এসব ভাল লাগে না। আমি চেয়েছি এমন বাবা, যে অনেক আদর করবে, এবং মেয়ের বায়না করতে দেবে, মেয়ে যা করতে চায় তাই করতে দেবে। এমন বাবা চেয়েছি। তোমাকে তো আমি চাইনি বাবা। তুমি এখন একটু যাও। আমি একটু পেন্সিল চাবাবো।" বাবা বলে, "পেন্সিল তো এখন চাবানো যাবে না। তোমার মা ডিউটি দিয়েছে আমাকে এখানে থাকার।" "না, এক মিনিটের জন্য শুধু যাও।" বলে, "এক মিনিটও অনুপস্থিত থাকব না। আমি এবার যাব সেটা হবে না। যত খুশী চাবাতে চাও, পারবে না।" তখনই পেন্সিল দিয়ে একটু নাড়া দিয়ে বলে, আমার লেখা শেষ। তখনই বাবা মনে করে, লেখা শেষ। তখন বলে, "দাড়াও, আমি একটু তোমার বড় বোনের কাছে যাই। তুমি বরং এগুলো দেখ ঠিকঠাক মত আছে কিনা। দেখ, আবার পেন্সিল চাবিও না যেন। যদি আমি এসে দেখি, পেন্সিলের পিছন দিকটা থেকে রস বের হচ্ছে, বুঝব যে তুমি পেন্সিল খেয়েছ।" বলে, "আচ্ছা বাবা, তুমি দেখে আস।"-বলে সে ঝটপট করে লিখে পেন্সিলটা খেয়ে কালো কাপড় গ্লু স্টিক দিয়ে লাগিয়ে রাখল, যাতে যত রস পড়ে শুধু ঐ কাপড়ের উপরেই পড়ে। সেই কাপড়ের উপর পড়লে তো আর বোঝা যাবে না যে, রস পড়ছে। আগে ভালমত খেয়ে নিয়ে গেল। তারপর কাল কাপড় গ্লুস্টিক দিয়ে লাগিয়েছিল। আর সেই মেয়েটা অনেক দ্রুত কাজ করে ফেলত। সেটা পরিবারের কেউ জানে না। সে তো ছোট বোন। তাই তাকে অনেক সময় দেয়া হয়েছে। তাই সে হেলেদুলে কাজ করত। সে চেক করল, খাতার লেখা ঠিক আছে কিনা। তখন বাবাকে ডাক দিয়ে বলল, "বাবা, সব ঠিক আছে।" তখন বলে, "ঠিক আছে? তোমার মাকে ডাকি এখন তোমার খাতা দেখতে।" মা এসে বলে, "এই তো! সুন্দর হয়েছে। এবার 'অ' থেকে 'ও' পর্যন্ত লিখে ফেল তো দেখি।" তখন বাবা আবার তার বোনের (ঝুমির) লেখা দেখতে গেল। ঝুমি ছিল প্রশ্নউত্তর। পাতার রং কি? পাতার রং সবুজ। কোন্‌ ফুলের সুবাস বেশি? সাদা ফুলের সুবাস বেশি। এসব ছিল ওর। তার কাছে গিয়ে দেখল, সে ঠিকমত লিখছে কিনা। এই ফাকে সুপোলা সেই কাল কাপড়টি খুলে আরো একটু রস খেয়ে নিল কালো কাপড়টি খুলে। 

No comments:

Post a Comment