এক ছিল এক গ্রাম। সেই গ্রামে জলাশয়ের কোন অভাব ছিল না। কিন্তু সেই দেশের লোকেরা একটা জিনিসে বিরক্ত হতো। কারণ বেশির ভাগ জলাশয়েই জঙ্গল হতো। আসলে সেগুলো কলমি শাক ছিল। সেই দেশের মানুষ তাকে খাদ্যই মনে করত না। এটা নিয়ে তারা কখনো ভাবেইনি। তারা ভেবেছে এসব হয়তো জঙ্গলী গাছ। পাশের দেশে আবার খাদ্যের খুব আভাব। অনেকে না খেয়ে মরে যাচ্ছে। তাদের খাবার খোঁজারও শক্তি ছিল না। না খেয়ে অনেক কাহিল ছিল। সবারই অসুখ খাবারের অভাবে।একজন ছিল খুব শক্তিশালী। সে ভাবল, আমার ভাই বোনদের আর মরতে দেয়া চলে না। এই ভেবে সে সবার বাড়ি গেল। বলল,"তোমাদের চার ভাগ খাবারের এক ভাগ কি আমায় দেয়া যায়।ভায়েরা, তোমাদেরই লাভ। আমার শক্তি হলে তোমাদের সবার জন্যই খাবার আনব। তখন পেট ভরে খেয়ো।চার দানা ভাতের এক দানা আমায় দাও।" সবাই তাকে চার ভাগের এক ভাগ খাবার দিল। কেউ খুশি হয়ে দুই ভাগও দিল। লোকটি সব খাবার খেয়ে একটু তরতাজা হলো। তারপর সে পাশের দেশে খবর নিতে গেল। সে এত্তো জলাশয় দেখে খুব খুশি হল। তবে আসল খুশি হলো কলমি শাক দেখে। কিন্তু সে ভাবতে লাগল, ইস! এরা কি এসব নেয়ার অনুমতি দেবে? টাকা ছাড়া? এটা ভাবতে ভাবতেই একজন লোক আসল। হয়ে গেল মেঘ না চাইতেই জল। সে বলল, "ভাই! দেখুন তো, আমার তিনটে জলাশয়। তিনটে জলাশয়ের মধ্যেই এসব জঙ্গল বেরিয়েছে। আপনি মেহেরবানি করে আমার এ জলাশয় তিনটি একটু পরিস্কার করে দিতে পারেন? আমি আপনাকে এর জন্য টাকাও দেব।" লোকটি খুশীর চোটে আত্মহারা হয়ে গেল। কিন্তু সে ভালো লোকও ছিল। তবে চালাকও ছিল। সে আগে বলল, "ঠিক আছে।" এই বলে সে সব জঙ্গল সাফ করল। সে তো খুশীই হলো যে, কলমি শাক খেয়ে না জানি কত্তো খুশি হবে সবাই! আর বাকি যে টাকা, তা দিয়ে চাল কিনব। ভাত দিয়ে কলমি শাক খাবে সবাই। বেশ মজা হবে।" সে জঙ্গল পরিস্কার করার পর টাকা নিয়ে মনের আনন্দে নিজের দেশে ফিরে গেল। সবাইকে খাবার খাওয়ালো। সবাই খুব খুশি হলো। কিন্তু লোকটি ভালো লোক হওয়াতে সে আবার ঐ দেশে গেল। সে বলল, "ভাইসব! তোমরা একটা কথা শুনবে? এমন কোন পুকুর কি তোমাদের কাছে আছে, যাতে সবসময় তোমরা যেটাকে জঙ্গল বল সেটা হয়?" তখন একজন বলল, "উত্তর দিকে অনেক এরকম জলাশয় আছে।" তখন লোকটি বলল, "ঠিক আছে। এর অর্ধেক সংখ্যক জলাশয় আমার কাছে বিক্রি করে দিতে হবে। তাহলে তোমাদেরকে আমি এক নতুন খাবারের সন্ধান দেব। এতে তোমাদের জলাশয়ও পরিস্কার থাকবে, আবার পেটও ভরবে। বুঝতে পেরেছ নিশ্চয়ই? নাকি আরো সহজ ভাষায় বলে দেব?" সবাই বুঝে গেল। সেই দেশের মানুষ আবার সৎ ছিল। সে অর্ধেক সংখ্যক জলাশয় তার কাছে বিক্রি করে দিল। আর বাকি জলাশয় থেকে শাক উঠিয়ে উঠিয়ে প্রথমবারের মত রান্না করে খেল। তারপর বলল, "ভাই! তুমি একটা বড় উপকার করলে। তোমাদের দেশের মতনই মাঝেমধ্যে আমাদের দেশেও খাবারের আকাল পড়ে। আমরা আসলে ভাবতাম, জঙ্গল না হয়ে যদি কোন খাদ্য হতো! আসলে এগুলোই দেখি খাদ্য। কেন যে আগে বললে না!" তারপর লোকটি অর্ধেক সংখ্যক জলাশয় কিনে নিয়ে মনের সুখে দেশে ফিরে গেল। আর সে ঐ জলাশয় থেকেই সবাইকে একটু একটু করে সবাইকে সবসময় শাক দেয়। কারো দরকার হলেই একটুখানি দিয়ে দেয়। আর যেই দেশের লোকেরা এটা খাওয়া জানত না, তারাও এখন এসব খেতে পারে, আর খাবারের আকাল পড়লেও কলমি শাক খেয়ে বাঁচে।
No comments:
Post a Comment