এক ছিল গরীব মা ও মেয়ে। তারা খুবই গরীব ছিল। থাকত ছোট্ট একটি কুঁড়েঘরে। মা এতেই শুকরিয়া আদায় করত। কিন্তু তার মেয়ে এতে খুশি ছিল না। সে সবসময় ধনী হতে চাইতো। একদিন তার আশা পূর্ণ হয়ে গেল। সে ঘুমোচ্ছিল। সকালে উঠে দেখল, সে একটি সুন্দর বিছানায় শুয়ে আছে এবং তাদের বাড়িটি দোতলা সুন্দর জমিদারের বাড়ির মত হয়ে গেছে। মেয়েটি তো খুব খুশী। খুশীতে আর বাঁচেই না। কিন্তু এখন তার কাজ করে খেতে ভাল লাগে না। মা-ই তার জন্য খাবার যোগাড় করে, আর মেয়ে বসে বসে খায়। সবসময় বাড়ির ভিতর আরাম-আয়েশেই থাকে। এমন সময় বর্ষাকাল এল। মেয়েটি তখন সকাল বেলা বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। হঠাৎ নামল বৃষ্টি। মেয়েটি একটি দোলনায় বসেছিল। সে দোলনা থামাতে থামাতেই মুষলধারে বৃষ্টি নেমে গেল। সে বৃষ্টিকে ধমক দিয়ে বলল, "কেমন বৃষ্টি তুই? দেখছিস, দোলনায় বসে আছি, একটু আরাম করছি; মধ্যে এসে নামলি মুষলধারে?" মেয়েটির বাড়ি পর্যন্ত ঢুকতে ঢুকতেই সে ভিজে জবজবা হয়ে গেল। মা তাকে বলল, "বৃষ্টিতে ভিজে গেছিস? আচ্ছা, ঠিক আছে। জামাকাপড় বদলে আয়।" মেয়ে বলল, "আশ্চর্য তো! আমরা এখন ধনী। ধনী মায়েরা কি বলে, তা জান না? বৃষ্টি হলো, আর তোমার মেয়ে তাতে ভিজে গেল। তুমি কোথায় বকে শেষ পাবে না, অথচ তুমি ঠিক আছে বলে উড়িয়ে দিচ্ছ। আমরা এখন ধনী এটা তুমি বুঝতেই পারছ না। ধুত!" এই বলে মেয়েটি কাপড় বদলে এল। দুপুরের খাবার পর মেয়েটির প্রচণ্ড জ্বর এল। মা এসে বলল, "কিরে, জ্বর হলো নাকি? বৃষ্টিতে ভিজলে তো তোর জ্বর হয় না।" জ্বরের মধ্যেও মেয়েটি মাকে ধমক দিয়ে বলল, "উহ, মা! আমরা এখন ধনী। বৃষ্টিতে ভিজলে তো জ্বর হবেই।" মা বলল, "ঠিক আছে, ঠিক আছে। এই নাও।" এই বলে মা একটা ভেজা মোজা ওর মেয়ের মাথার উপর দিয়ে দিল।" মেয়েটি রাগ হয়ে মোজাটি ছুঁড়ে ফেলে দিল। বলল, "উহ, মা! আমরা ধনী কয় হাজারবার বলতে হবে তোমাকে? কেমন মাথায় মোজা দিয়ে চলে যাচ্ছ? আমরা কি গরীব? যাও, ওষুধ, সাপোজিটরি, থার্মোমিটার সবকিছু কিনে নিয়ে আস।" মা বলল, "এ মা! তুমি মোজাটা ছুঁড়ে ফেলে দিলে? আচ্ছা, ঠিক আছে। এই নাও তোমার ডিক্টুরে জিনিসপত্র।" মেয়েটি ধমক দিয়ে বলল, "উহ, মা! আমরা গরীব নই। একটু ইংরেজিও তো জানতে হবে। তুমি কি বললে, ওটা তো আসলে ডাক্তারী। ওহ! আর পারি না।" এভাবে সাতদিন পর জ্বর থামল। এবার আবার শুরু হল খরা। মেয়েটি বাইরে বের হল। তার দামী খেলনা দিয়ে খেলতে। হঠাৎ এমন রোদ বের হল, যে তার মাথাই ফেটে যায়। সে রোদকে ধমক দিয়ে বলল, ইস! কেমন রোদ? একটু খেলতে বসেছি, এখন মাথা ফাটিয়ে দিচ্ছে। যা! কিন্তু রোদ গেল না। মেয়েটি ভীষণ রেগে গিয়ে খেলনা নিয়ে বাড়িতে চলে গেল। মাকে বলল, "শোন মা, রোদ না খুব বাজে। মাথাই পুড়িয়ে দিল।" এ বলে মেয়েটি দামী বাথটবের মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়ল। আর কল ছেড়ে দিল। মা বলল, "করিস কি, করিস কি? ওভাবে ঘেমে এসে কেউ গোসল করতে যায়?" কিন্তু মেয়েটি কথা শুনল না। এরপর তার ঠাণ্ডা লাগল। সেটাও বেশ কিছুদিন পরে থামল। এরকমই আরো নানারকম অসুবিধা হতে লাগল। এরপর সে মাকে বলল, "উহ! মা! ধনী হয়েও শান্তি পাচ্ছি না। একটু খেলতে বেরোলেই রোদ আসে। বৃষ্টি নামে। একদম ভাল লাগে না।" মা মুচকি হেসে বলল, "কিরে, মা! এখন তুমিই বলছ যে, ধনী হলে সমস্যা? তাহলে কি আবার গরীব হতে চাও? রোদ-বৃষ্টি এগুলো তো আসবেই। ঋতু পরিবর্তন কি হবে না? সব কি তোমার কথা শুনবে? তুমি 'যা' বললে রোদ-বৃষ্টি যাবে, আর 'আয়' বললে আসবে; রোদ-বৃষ্টি কি তোমার চাকর নাকি? শুধু গরীব হলে এগুলোতে তোমার কষ্ট হয় না। ধনী হয়েছ, তাই এগুলোতে তোমার কষ্ট হচ্ছে।" মেয়ে মায়ের এত বকবকানি শুনে অস্থির হয়ে গেল। সে মাকে বলল, "উফ, মা! এত জ্ঞান দিও না তো! এত্থেকে গরীব হলেই বেশি ভাল।" এরপর থেকে মেয়েটি গরীব হতেই চায়। একদিন ঘুম থেকে উঠে দেখল, তারা আবার গরীব হয়ে গেছে। প্রথমে তো মেয়েটি বলল, "বাহ! বাঁচা গেল।" এবার সে কয়েকদিন রোদ-বৃষ্টির মধ্যে খেলল, কিন্তু কিছু হলো না। কিন্তু তার আবার গরীবদের খাবার খেতে ভাল লাগে না। নোংরা কুঁড়েঘরে থাকতেও আর ভাল লাগে না। সে আবার ধনী হতে চাইল। ধনী হবার পর আবার গরীব হতে চাইল। এরকম করে কাহিল হয়ে গেল। তার মা বলল, "এমন করছ কেন? সবকিছুতেই কিছু না কিছু সমস্যা আছে। বারবার ধনী-গরীব করে আমাকে আর ক্লান্ত করো না। নিজে তো ক্লান্ত হচ্ছই, আমাকেও ক্লান্ত করছ। চুপচাপ ধনী হবে নাকি গরীব হবে বেছে নাও। নয়তো মানুষকে শুধু জ্বালাতনই করে যাও। যত্তসব!"
No comments:
Post a Comment