Friday, February 19, 2016

ছোট্ট ছেলের বুদ্ধি

এক গ্রামে বাস করত এক ছেলে। ছোট্ট ছেলে। তারা খুব গরীব ছিল। সে তার বাবা ও মাকে নিয়ে থাকত একটি ছোট্ট ঘরে। তিনটি মাত্র রুম। একটি মাত্র বেডরুম। একটি রান্নাঘর। একটি খাওয়ার ঘর। বেশি টাকা-পয়সাও ছিল না। তার বাবা মাঠে বাঁশি বাজানোর চাকরি করতেন। তিনি একবারে বাঁশি বাজানোর রাজার মত। এমন সুন্দর বাঁশি বাজায় না, তাই মানুষ তাকে অনেক টাকা দেয়। আর তার মা এমন নাচ জানে যে, নাচের চাকরি করতে পারে। তাই সে নাচের চাকরিই করত। প্রতিদিন একের পর এক মানুষ এসে এসে বলত, আমাদের গ্রামে বা আমাদের শহরে একটি উতসব হবে বা অনুষ্ঠান হবে। সেখানে একটু নাচ-গান হবে তো, তাই আপনাকে একটু দরকার। প্রতিদিনই এমন করত একজন না একজন। ছেলে আর কী করবে? ঘরে বসে থাকত। ছোট্ট ছেলে কি আর কাজ করতে পারে? তবে তার মা ও তার বাবা একটু বাঁশি বাজানো আর একটু নাচ শিখিয়েছিলেন। তখন ছেলেটি দেখল, একদিন কোন উৎসব নেই, আর কোন জায়গাতেই উতসব নেই। তার বাবাও উতসবের বাঁশি বাজাতো। এখন ছেলে ভাবল যে, ইস! এখন তো মা-বাবার কোন কাজ নেই। এই ভাবল সে। সে মা-বাবাকে বলল, "বাবা! তুমি আমাকে বাঁশি বাজানো শিখিও। মা! তুমি আমাকে নাচ শিখিও।"  আর তার চাচী গানের ব্যবসা করত। চাচীর কাছে গিয়ে বলল, "আমায় একটু গান শিখিয়ে দিও।" তারপর সবাই শিখিয়ে দিল। তখন সে একটি সরকারী উতসবে নাচ, গান, বাঁশি বাজানো এসব করতে গেল। কারণ, "অন্য উতসবের চেয়ে সরকারী উতসবে বেশি পয়সা দেবে। আর আমি তো এখন তিনটাই একসাথে করছি। তাহলে আমাকে নিশ্চয়ই আরো বেশি পয়সা দেবে।" - এই ভেবে সে সরকারী উতসবে ঢুকল। সেখানে মনে কর অনেক রকম ধর্ম, অনেক রকম মানুষ এসেছে। ছেলেটি নাচল, গাইল, বাঁশি বাজালো, এমনকি সুন্দর ভাল ভাল গানও গাইল। টাকা পেল কত জান? দুই লাখ। এরপর দুই লাখ টাকা দিয়ে সে এক বস্তা চাউল, এক বস্তা সবজিও কিনল। আর সে তা দিয়ে একটি গরুও কিনল। কারণ, দুধ তো প্রতিদিন কিনলে বেশি টাকা লাগে, আর গরু তো একমাত্র কিনলেই প্রতিদিন দুধ পাওয়া যাবে। আর যেদিন কোন খাবার থাকবে না, সেদিন গরুটির মাংসও তো খাওয়া যাবে। আর এমন টাকা যে পাওয়া গেল, তা দিয়ে আরেকটি গরুও তো কেনা যাবে। তার চাচীর জন্যও একটি গরু কিনল। দিল চাচীকে। চাচীও ছিল খুব গরীব। তার আবার চাউল-টাউল কিছুই ছিল না। গান গেয়ে যা টাকা হতো একশ বা দুইশ তা দিয়ে সে একটু ডিম-টিম খেতে পেত। চাচীকে গরুটা সে উপহার দিল। আর চাচীকে বলল, "চাচী, তুমি প্রতিদিন এমন কর কেন? প্রতিদিনই টাকা খরচ কর কেন? তোমার একদিন একটু টাকা খরচ করলেই তো অনেক কিছু পাবে। এই দেখ তোমার জন্য কি এনেছি! দুধ খেতে যদি চাও, একটা মাত্র গরু কিনলেই প্রতিদিন পাবে। ডিম খেতে যদি চাও, একটা মাত্র মুরগী কিনলেই প্রতিদিন পাবে। শুধু তাদের একটু খেতে দিলেই হয়। এবার তাহলে আমি আসি!" এরপরে মা-বাবা ও ছোট ছেলে এবং তার চাচী সুখে দিন কাটাতে লাগল। দুই লাখ টাকা দিয়ে সারা গ্রামে যত গরীব মানুষ আছে সবাই একটু না একটু কিছু পেল। দশ বছর চলল সেই দুই লাখ টাকা দিয়ে। এরপর আবার সেই সরকারী অনুষ্ঠান খুঁজতে লাগল। কিন্তু এবার সরকারী অনুষ্ঠান নয়। এবার খোঁজ পেল বিদেশী একটি সরকারী অনুষ্ঠান। এবার তো নাচ-গান করে সে পাঁচ লাখ টাকা পেয়ে গেল। তা দিয়ে সে ১২ বছর কাটালো। এরপর সবসময়ই কোন না কোন দেশের সরকারী অনুষ্ঠান খুঁজে খুঁজে লাখ লাখ টাকা পেতে লাগল আর সুখে জীবন কাটাতে লাগল। টাকা দিয়ে জিনিস কিনে সেই সব জিনিস সে গরীব মানুষকেও দান করল। আর সরাসরি (নগদ) টাকাও কিছু গরীবদের দান করল। 

No comments:

Post a Comment