Tuesday, May 24, 2016

কৃপণের ধন পিঁপড়ায় খায়

এক ছিল এক খুব ধনী লোক। কিন্তু সে সৎ ছিল না। তার অনেক সোনা-দানাও ছিল। কিন্তু সে কাউকে কিছু দিত না। এমনকি নিজের স্ত্রী-পুত্রকেও না। তার মেয়ের নাম ছিল সুমিত্রা। তার পুত্রের নাম ছিল সুজন। একদিন সুমিত্রা কিছুই পাচ্ছিল না খেতে। তার স্ত্রী বলল, "যা তো সুমিত্রা। তোমার বাবাকে বল না কিছু টাকা দিতে। আমার না তোমার বাবার কাছে যেতে খুব ভয় করে। তোমার বাবা আমার সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করে। তুমি তো ছোট তাই ভাল করে বলবে।" "সে কি মা, তুমি তো জান যে, সে সবার সাথে খারাপ ব্যবহার করে। কিন্তু মা! তোমার কথা অমান্য করতে পারব না।এইতো! অামি যাচ্ছি। কিন্তু সে যদি কোন টাকা না দেয় তাহলে কিন্তু আমাকে বকবে না।" সুজন বলল, "ওহ মা! ভাল লাগছে না। আমার বাবার সোনা দানা আছে। কি সুন্দর রাজার মত পোশাক পরে। আর আমরা ছোট খাট গেঞ্জি ও আমার মায়ের আছে একটা বেগুনি শাড়ি। আজকে কিছু খেতে পারছি না।"  সুমিত্রা চলে গেল বাবার কাছে। সুমিত্রা বলল, " বাবা কিছু টাকা দাও না গো। আমরা কিছু কিনতে চাই। খাবার পাচ্ছি না তো্।" বাবা বলল, "সরে দাঁড়া, এখানে তোর কি চাই? টাকা অামি দিতে পারব না। যদি আমি টাকা দিই তাহলে, সকালে আমি রুটির সাথে হালুয়া, ডিম, মাংস এবং সবজি খাব কি করে? তার পর দুপরের স্নানের আগে আপেল, আঙ্গুর ও কমলা খাব কি করে? খাওয়ার পর দই আর মিষ্টি খাব কি করে? রাতে খাওয়ার সময় জদ্দা খাব কি করে? টাকা না থাকলে কোন খাবার পাব না। আর আমি সুন্দর টোপর কিনব কি করে?" সুমিত্রা ভাল করে উচিত কথা বলতে পারত। তাই সে বাবাকে বলল, "এই! তুমি এত সুন্দর জিনিস-পত্র, কাপড়-চোপড়, খাবার-দাবার সব কি সুন্দর সুন্দর করে খেতে পার! আর আমরা একটা চালের দানা খেয়ে থাকি, আর ছেঁড়া ছেঁড়া কাপড় পরে থাকি। তাই তো হবে না? পরে কিন্তু এর ফল ভাল হবে না। দিতেই হবে। তোমার টোপর কেনার দরকার নেই। আমরা দিনে একটা শসাও খেতে পারি না, আর তুমি পোলাউ, রোস্ট, তেহারি কত কিছু খাও! আজ আমাকে অন্তত ৫০ টাকা দাও। এই ভাল যে, ১০০ চাইনি।" বাবা আবার বলল, "এই মেয়ে! আমি তোকে শুধু ১০ টাকা দিতে পারি।" "না, তা হবে না। তোমার লক্ষ লক্ষ টাকা, লক্ষ লক্ষ সোনাদানা। তুমি আমাদের একটা সোনাও দাওনি। সোনা কি? এক পয়সাও দাওনি। আমরা নিজেরা নিজেরা অনেক কষ্টে খাবার যোগাড় করেছি। ৫০ টাকাই দিতে হবে। এর বেশি দিতে চাইলে দাও, কিন্তু এর কম দেয়াই যাবে না।" বাবা আর কী করবে? দেখল যে, সুমিত্রা খুব ভাল ভাল বুদ্ধিমান কথা জানে। দিয়ে দিল ৫০ টাকা। অনেকক্ষণ পরে এক বেলা না খেয়ে ছিল, দুপুর বেলা টাকা নিয়ে এল। কিনতে কিনতে বিকাল হয়ে গেল। বিকেল বেলা একটু অন্তত খেতে পারল। সুমিত্রা একটা শসা, সুজন একটা রুটি আর মা দুটো আপেল। এরপর যখন ধনী লোকটি বাজারে গেল তার সেই টোপর কিনতে, তখন সুজন তাড়াতাড়ি গিয়ে ২০ টাকার দুটি নোট নিয়ে এল। তারপর সেই টাকা ভাগাভাগি করে আবার খাবার কিনে নিয়ে এল। তারপর সেই খাবারগুলো খেয়ে তারা ঘুমিয়ে পড়ল। বাবা এসে বলল, "ওঠ্‌, ওঠ্‌, সুমিত্রা। ওঠ্‌ সুজন। আমার দুইটা বিশ টাকার নোট দেখেছিস?" স্ত্রী বলল, "আমি ঘুমের মধ্যে পায়ের ধুমধাম শব্দ শুনতে পেয়েছিলাম। কিন্তু আমার খুব গভীর ঘুম ছিল, তাই আমি উঠতেও পারিনি। নিশ্চয়ই কোন চোর-ডাকাতের কাজ। তুমি খুঁজে দেখ কোন চোর-ডাকাত আছে কিনা। আমরা আজ রাতে ভাল করে ঘুমাতে পারিনি। কাল রাতে তুমি আবার দায়িত্ব দিয়েছিলে যে, বাড়িটাকে পাহারা দিতে। আমিও শর্ত দিয়েছিলাম যে, কাল দুপুরে অনেক ঘুমোতে দিতে হবে। তুমি সেই শর্ততে রাজি হয়েছিলে। এখন ঘুমোতে দাও।" তারপর একদিন সত্যি সত্যিই ডাকাত এসে ঐ ধনী লোকের সব টাকা-পয়সা নিয়ে গেল। সোনা-দানাও নিয়ে গেল। মা আর দুই সন্তানদের তো খাবারের সন্ধান করার অভ্যাস আছে। কিন্তু ধনী লোক তো কিছুই বোঝে না। তাই সে কিছুই খেতে পারল না। আর অন্য বাকি তিনজন অভ্যাসমত আগের মতই কোনমতে খেয়েদেয়ে চলতে লাগল।

শিক্ষা: খারাপ কাজ করলে খারাপ ফলই পাওয়া যায়। যেমন কর্ম তেমনি ফল।

No comments:

Post a Comment