Tuesday, May 29, 2018

মজার ক্লাস

এক ছিল এক স্কুল। সে স্কুলে একদিন এক মজার শিক্ষিকা এলো। সে আবার বাচ্চাদের ৩০% পড়িয়ে ৬০% মজা দিত। আর ১০% তাদেরকে ইচ্ছামত কথা বলা ও খেলার সুযোগ দিত। এতে বাচ্চারা তার ভক্ত হয়ে যেত, আর পরীক্ষার আগে ৪০% পড়িয়ে ৬০% মজা দিত, আর ইচ্ছেমত কথা বলা ও খেলার সুযোগ টিফিন টাইমে উপভোগ করতে বলত। একদিন ক্লাসে সে পড়ানো শেষ করে বাচ্চাদের সাথে মজা করার পালা। আজকে একটু অন্যরকম হবে মজার জিনিসটা। শিক্ষিকাটি বলল, "বাচ্চারা! আজকে আমি তোমাদেরকে একটা ধাঁধা বলব। আমার নিজের বানানো ধাঁধা। বলতো, এমন কি জিনিস আছে, যা ধনী মানুষেরাও মজা দিয়ে খায় আবার গরীব মানুষদেরও পিপাসা মেটানো আর মজার খাবার খাওয়ার অসুবিধা মিটে যায়?" বাবুরা একেকজন একেক জিনিস বলতে থাকল। কারোটাই সঠিক হলো না। কারণ, সেদিন সবথেকে বুদ্ধিমান বাবুটি অনুপস্থিত ছিল। তবে তার বেস্ট ফ্রেন্ড তার কাছ থেকে বুদ্ধিমান হওয়ার চেষ্টা করেছিল। তার কাছে প্রত্যেকদিন বুদ্ধির ক্লাস করত। কিন্তু তাতে কি আর ১০০% বুদ্ধি পাওয়া যায়? ৩০%ই না হয় পাওয়া গেল। বুদ্ধিমান বাবুটির বেস্ট ফ্রেন্ড হাত জাগিয়ে বলল, "নারকেল হতে পারে?" শিক্ষিকা বললো, "কিছুটা হলেও পুরোটা হয়নি। কারণ, নারকেল তো শক্ত থাকে। শুধু পানিটাই খুব মজা দিয়ে খাওয়া যায়। বাকিটা তো সবার কাছে মজা নাও লাগতে পারে। আমার উত্তরের থেকে এটার দাম কিন্তু বেশি হয়ে যাচ্ছে।" স্কুলটির পাশের বিল্ডিংয়েই ছিল সবথেকে বুদ্ধিমান বাবুর বাড়ি। তাদের বারান্দা থেকে তার স্কুল দেখা যেত। বাবুটি তখন বারান্দায় বসে ছিল। সে বেখেয়াল হয়েছিল, কিন্তু হঠাৎ সে দেখল, সবাই খুব চেঁচামেচি করছে ক্লাসে। সে তার বেস্ট ফ্রেন্ডকে জোরে ডাক দিয়ে বলল, "তানিশা! শোন্ না। সকাল বেলা মাথাব্যথা করছিল, তাই আজ স্কুলে আসিনি। এত চিৎকার চেচামেচি করছিস কেন তোরা?" তানিশা বলল, "তোর মাথা ব্যথা ছিল? আমরা চেচামেচি করছি; কারণ মিস আমাদেরকে একটি ধাঁধা দিয়েছে। আমার উত্তরটা না সঠিক হয়নি।" বুদ্ধিমান বাবুটি বলল, "হ্যাঁ, হ্যাঁ! কি বললি? ধাঁধা? I Love ধাঁধা! বল্ না রে, কি ধাঁধা? আমিও তোদের সাথে একটু মজা করি। তুই তো আমার বেস্ট ফ্রেন্ড, হিংসা করবি না যে, আমরা পড়ার পর মজা করছি, আর তুই না পড়েই মজা করছিস।" তানিশা বলল, "শোন, ধাঁধাটা হচ্ছে, এমন কি জিনিস আছে, যা ধনী মানুষেরাও মজা দিয়ে খায় আবার গরীব মানুষদেরও পিপাসা মেটানো আর মজার খাবার খাওয়ার অসুবিধা মিটে যায়? এই ধাঁধাটির উত্তর আমি নারকেল বলেছিলাম, কিন্তু হয়নি; কারণ, দাম নাকি খুব বেশি, আর নারকেল নাকি খুব শক্ত। সবার পছন্দ নাও হতে পারে। তুই নিশ্চয়ই পারবি। বল্ না রে।" বুদ্ধিমান বাবুটি বলল, "এটাও এখনো পারলি না? এটা তো পানিতাল!" বুদ্ধিমান বাবুটি খুব জোরে চিৎকার দিয়ে ডাকল, "ম্যাম! আমি নিশা। উত্তরটা পানিতাল। ঠিক হলে পরের ক্লাসে জানিয়ে দিবেন। এখন আমার মা ডাকছে, বাই!" এই বলে সে দৌড়ে মা'র কাছে চলে গেল। শিক্ষিকা তানিশাকে বলল, "এ কি তানিশা? নিশাকে তো জ্বলজ্যান্ত দেখছি। ও আজকে আসল না কেন?" তানিশা বলল, "ম্যাম, ওর নাকি মাথাব্যথা। উত্তরটা কি ঠিক হয়েছে?" ম্যাম বলল, "১০০% ঠিক। ওকে আমি কালকে একটা লজেন্স দেব। মাথাব্যথা দিয়ে ধাঁধার উত্তর এত সহজেই দিয়ে দিল? ঠিক আছে। আমি যাচ্ছি। বাই, বাই, স্টুডেন্ট! তোমরা যা ইচ্ছা তাই কর। আমি একটু বেলুন নিয়ে আসছি। বেলুন নিয়ে এসে আজকে আমরা সবাই মিলে মজা করব। ফাটাবো, আজকে প্রত্যেকের জন্য দুটা দুটা করে বেলুন এনেছি। আসলে তিনটা করে দেব। কিন্তু দুটো ক্লাসে মজা করবে, আর একটা বাড়িতে নিয়ে যাবে। আর যাদের ভাই-বোন আছে, আর বেশি দরদী, তারা যাদের কোন ভাই-বোন নেই আর বাসায় খেলতেও চায় না, তাদের থেকে শেয়ার করতে পারবে। চল, আমরা মজা করি।" তারা অনেক মজা করল। পাশে যে একটা বিল্ডিং আছে, আর অসংখ্য বুড়ো-বুড়ি আছে, তা তারা মনেই রাখল না। এমন সময় প্রিন্সিপাল মিস ক্লাস ভিজিট করার জন্য আসলেন। ক্লাসে এসে তো তিনি রেগে গেলেন। কারণ, একজন দরজার দিকে একটা বেলুন ছুঁড়ে মারছিল, আর সেই মুহুর্তে প্রিন্সিপাল মিস এসে প্রিন্সিপালের মাথায় বেলুনটা লাগল। প্রিন্সিপাল তো রেগে গড়গড় করা শুরু করল। বলল, "সেলিনা! এইসব কি? এসবের জন্য কি তোমাকে নিয়োগ দিয়েছি? এটা কি ক্লাস পার্টি নাকি? কি হচ্ছে এইসব? আরেকদিন ক্লাস ভিজিট করতে এসেছিলাম, তখন দেখেছি সবাই মিলে দাবা খেলছে। যাদের দাবা পছন্দ নয়, লুডু খেলছে। আর যাদের কোনটাই পছন্দ নয়, তারা প্লেন উড়াচ্ছে। সেদিনও একটা প্লেন এসে আমার মাথায় পড়েছিল, আর এখন আবার একটা বেলুন এসে পড়ল। তোমায় আমি আজকেই বরখাস্ত করব।" শিক্ষিকা বলল, "আরে আর আপা! কি সব বলছেন? কিসের সাথে কি, পান্তা ভাতে ঘি! আজকে সব স্টুডেন্টরা আমার দেয়া ছোট্ট টেস্টে সক্কলে এমনকি বোকা স্টুডেন্টরাও ১০০ তে ১০০ পেয়েছে, আর যারা একদম ভাল করেছে, ১০০-এর ও ভাল, তাদেরকে আমি আর কিছু করতে পারিনি, ১০১ দিতে বাধ্য হলাম।" তখন আবার বুদ্ধিমান বাবুটি এসব শুনছিল। তার আবার তিন সেকেন্ডে পাঁচ পৃষ্ঠা লিখে ফেলার অভ্যাস ছিল। সে তাড়াতাড়ি একই প্রশ্ন বারবার অনেক ভালোমত সাজিয়ে ঝটপট করে এক মিনিটের মধ্যে ৬০টি কাগজ বানিয়ে ফেলল। সাথে ১০০ তে ১০০ নম্বরও লিখে দিল। আর একজনেরটা খুব ভালো দিল। আরো দু'জন বন্ধুকেও খুব ভালো করে লিখে দিল। আর তাদের ১০০ তে ১০০ না দিয়ে ১০০ তে ১০১ দিয়ে দিল। এরপর তাড়াতাড়ি পৃষ্ঠাগুলো ভাঁজ করে তানিশার দিকে নিক্ষেপ করল। দু'জনই আবার ভালো thrower ও catcher ছিল। নিশা আস্তে আস্তে তানিশাকে বলল, "শোন! আমি তো জানি যে, তোরা খুব তাড়াতাড়ি অনেক কিছু মুখস্থ করে ফেলতে পারিস। এমনকি ১০ সেকেন্ডের মধ্যেও করে পারিস আশপাশে ঢাকঢোলের শব্দ থাকলেও। তাড়াতাড়ি এগুলো সবাইকে একজন একজন করে পাস করে দে। তাড়াতাড়ি কর। খুউব তাড়াতাড়ি। এই নে তাড়াতাড়ি।" তানিশা বলল, "ধন্যবাদ, নিশা। অনেক ধন্যবাদ।" এই বলে তানিশা খুব তাড়াতাড়ি সবাইকে পাস করে দিল, আর কিছু করতে হবে না, শুধু মুখস্থ কর। আর প্রিন্সিপাল মিস খাতা দেখতে চাইলে এই কাগজটা উপরে জাগিয়ে তুলবে। আর আমি খুব তাড়াতাড়ি চোখ টিপ মারতে পারি। আমি মিসকে চোখ টিপ মারব। তুই এটা তাড়াতাড়ি তোর সামনের জনকে পাস করে দে, আর তাকেও বল সামনের জনকে পাস করে দিতে। এমন করতে করতে চলতে থাক, আর একদম সামনের বেঞ্চে চলে গেলে খুব জলদি করে পাশের বেঞ্চে পাস করে দিবি। এরকম করতে করতে এক মিনিটের মধ্যে যেন খুব তাড়াতড়ি সব ঠিকমত হয়। আর এই এক মিনিট কি করতে হবে, তা আমার জানাই আছে।" এই বলে তানিশা হাত তুলল। তানিশা প্রিন্সিপাল মিসকে বলল, "ম্যাম! আপনার তো সোনালী রং খুব পছন্দ। ঐ দেখুন, সোনালী গ্লিটারস সহ এই বেলুনটা আপনার জন্য। ঐ হার্ড বেলুনগুলোও আপনার জন্য। দেখুন, আমরা তো আপনার স্কুলের সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্যই ক্লাসরুমটাকে কততো সুন্দর করে সাজিয়েছি! আরো সাজাবো ভেবে বেলুন নিয়ে এসেছি। বেলুনগুলো দিয়ে প্রথমে না হয় বাচ্চারা একটু খেলতেই পারে। একটু পর এসে আপনি দেখবেন, আপনার ক্লাসটা একদম রাজপ্রাসাদ হয়ে গেছে। আপনার স্কুলের নাম হোক, এটা কি আপনি চান না? তাহলে এই বেলুনটা নিয়ে গিয়ে বাইরে জাগিয়ে তুলে বলুন, আমার স্কুলের মত সুন্দর স্কুল আর হয় না, দেখুন বাচ্চাগুলোও কি ভালো, নিজেদের বেলুনও আমার জন্য উৎসর্গ করছে! এই কথা বলুন আপনি, আর দেখুন আপনার স্কুলের খুব নামও হতে পারে। এ কাজটা আপনি করে দেখুন না! আপনার কি মনে হয়, এটা একটা ফালতু আইডিয়া? তাই যদি মনে হয়, তাহলে আপনার স্কুলের নাম তো জীবনেও হবে না। আপনি এক্ষুণি ওদিকে গিয়ে কাজটা সেরে ফেলুন।" এই বলে তানিশা চুপ করে বসে পড়ল। প্রিন্সিপাল বলল, "ওহ! Brilliant Student! তুমি খুব বুদ্ধিমতী। শোন, তুমি এখন চুপটি করে বসে থাক, আমি এক্ষুণি এটা জাগিয়ে তুলে কাজটা সেরে আসছি।" এই বলে প্রিন্সিপাল মিস চলে গেল গ্লিটারের বেলুনটা নিয়ে। তারপর তানিশা দৌড়ে গিয়ে মিসের কাছে গেল। "ম্যাম! বুদ্ধিটা নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন! আর চলবে না। প্রিন্সিপাল মিস নিশ্চয়ই অনেক সময় ধরে এ কাজ করবেন। তিনি চান, তার স্কুলের নাম হোক। আপনি এই ফাঁকে আপনার signature গুলো করে ফেলুন। তবে আপনার সিগনেচার যা সহজ, আপনি একজনকে করে দিন, আমরা ঝটপট করে কপি করে ফেলি। শুধু আরিয়ান আর সামিয়াকে রিয়ালটা দিতে হবে। তারা আবার কপি করায় খুব একটা পারদর্শী নয়।" মিস বলল, "আরে পাগল নাকি? দাও, তাড়াতাড়ি করে ফেলি।" Signature করা শেষ হতে না হতেই প্রিন্সিপাল মিস এসে হাজির। বলল, "তা তো আমি করেছি। এখন দেখি স্কুলের নাম হয় কিনা। তোমরা যে বলছ, তোমাদের টেস্ট হয়েছে, তার প্রমাণ কি?" সবাই তাদের শিট জাগিয়ে তুলল। কারোটাই ৯৯.৯৯ ই পেল না। সবাই ১০০। কেউ কেউ ১০১। প্রিন্সিপাল বলল, "বাহ! কিন্তু ১০১ যে কি করে তোমরা পেয়েছ, তা তো দেখতে হবে। আর নকল করেছ নাকি, তা তো দেখতেই হবে।" সে বেশির ভাগ স্টুডেন্টেরই পড়া নিল। সবাই খুব জলদি উত্তর দিয়ে দিল। এরপর প্রিন্সিপাল মিস চলে গেল। এরপর মিস 'নিশা' বলে জোরে ডাক দিল জানালার কাছে। "নিশা! এদিক এসো। তুমি আমাকে বাঁচালে। তোমার এত বুদ্ধি আমি আগে ভাবতে পারিনি। তবে এখন বুদ্ধি নয়, গুণও লেগেছে। আর শুধু তোমার বুদ্ধি আর গুণই নয়, তোমাদের সবার গুণ। আর তানিশার বুদ্ধি। সবাই খুব ভালো কাজ করেছ। নিশা, তোমাকে আগামীকাল আমি পাঁচটা লজেন্স এনে দেব। আর তোমার এক মাসের বেতন আমিই দিয়ে দেব। তুমি শুধু Fees Book টা আমার কাছে দিয়ে দিও। আর তোমাদের সবাইকে একটা করে ছোট চকলেট দেব। কিছু মনে করো না, যে নিশা absent থেকেই এত কিছু করে ফেলল। তবে শুধু নিশা থাকলে কিন্তু কিছুতেই আমায় উদ্ধার করতে পারত না। আর নিশা যদি present থাকত, তাহলেও তো হতো না। ঘটনাটা কি সুন্দর একের পর এক সিরিয়ালি ঘটে গেল!" এইভাবেই তারা বুদ্ধির জোরে মিসকে বাঁচিয়ে দিল।

No comments:

Post a Comment