Sunday, November 1, 2015

খাটুনির মন্ত্রী

এক ছিল এক দেশ। সেই দেশের রাজা ছিল খুব শান্ত। তবে কিছুটা খারাপ, কিছুটা ভাল। সে একদিন তার মন্ত্রীকে বলল, "যাও, সব রাস্তায় টানিয়ে রাখ যে, কাল থেকে গাড়ি-ঘোড়া আসা-যাওয়া বন্ধ। আমি আমার হাতি নিয়ে সারা রাস্তা ঘুরে বেড়াব। আর হাতির নিচে একটা গাড়িও যদি পড়ে, সেই গাড়ি ভেঙ্গে প্যাট্রলের গন্ধ বের হবে, আর গাড়িটা্ও নষ্ট হবে। অতএব, গাড়ি-ঘোড়া বন্ধ রাখবে।" মন্ত্রী বলল, "যা বলবেন রাজামশাই, আমি ঠিক এই কাজ করব।" মন্ত্রী কাগজে সেইসব লিখে টানিয়ে দিল। তার পরেরদিন এই কথা পড়ে সবাই সকাল ৯ টার মধ্যে সব গাড়ি-ঘোড়া বন্ধ করে দিল। কিন্তু রাজা তা জানতেও পারল না। শুধু শুধু দেরি করল। মন্ত্রীকে ডেকে বলল, "কী মন্ত্রী! আমি কখন হাতি নিয়ে বের হব? রাজ্যের লোকেরা কি গাড়ি-ঘোড়া চলা বন্ধ করেছে নাকি? একটু খবর নিয়ে আস তো।" মন্ত্রী বলল, "আর লাগবে না। আমি তো আগেই দেখেছি যে, সবাই ৯ টার মধ্যেই সব গাড়ি বন্ধ করে ফেলেছে।" রাজা বলল, "বলিস কি রে? আমাকে তুমি বলবে না? এক্ষুণি আমার হাতি প্রস্তুত কর।  ২০ মুহূর্তের মধ্যে যদি আমার হাতি প্রস্তুত না হয়, এক চোটে তোর গলা কেটে দেব।" মন্ত্রী বলল, "ঠিক আছে।"- বলে মন্ত্রী এক দৌড়ে হাতির ঘরের কাছে গিয়ে হাজির হল। তারপর ভাবল, ইস! চাবিটাই আনলাম না। এখন কী হবে? এখন আমি কী করব? আবার যাই। আবার মন্ত্রী এক দৌড়ে চাবি আনতে গেল। গিয়ে দেখল, চাবিটা হারিয়ে গেছে। খুঁজতে খুঁজতে আরো অনেক দেরী হল। তারপর মন্ত্রী অনেক কষ্টে সে সেটা খুঁজে পেল। তারপর আরো এক দৌড় দিয়ে হাতিকে আনতে গেল। তারপর হাতির কাছে গিয়ে দেখল, হাতিটা ঘুমাচ্ছে। তারপর হাতির উঠতে আরো অনেক সময় লাগল। তারপর হাতি ওঠার পরও অনেক ঝিমুচ্ছে। তারপর অনেক কষ্টে হাতিকে উঠালো। যেতে যেতে দেখল, রাস্তা বন্ধ। আরো অনেক সময় দেরি হল। তারপর রাস্তা খুলে গেল। রাস্তা বন্ধ কেন ছিল জান? কারণ, ওখান দিয়ে অনেক ভিখারীরা আসা-যাওয়া করতে পারে। ভিখারীর জন্য রাস্তার মানুষদের অসুবিধা হয়। এইজন্য রাস্তা বন্ধ ছিল কিছুক্ষণের জন্য। আর তার পরের দিন ছিল বিজয় দিবস। বাংলাদেশের মতনই ঐ দেশ যেদিন বিজয় হয়েছে সেই দিন। আর এই জন্যই রাজা হাতি নিয়ে বেড়াতে চাইছিলেন। অনেক দেরী হয়ে গেল। এইবার রাজা বলল, "এত দেরী করলে কেন?" তারপর রাজা দেখে যে, একদম সন্ধ্যা ঘনিয়ে এল। তারপর রাজা তো বলল, "আজ আর যাওয়া হবে না। হাতিটাকে আবার গিয়ে রেখে আস।" মন্ত্রীটা কী যে করবে! মন্ত্রীটা মনে মনে ভাবে, "আমার এত খাটনি খাটছে কেন? আমি এমনই বা কি করলাম? রাজামশাই যা করে না। রাজামশাই এইটাও দেখতে পায় না যে, গাড়ি-ঘোড়া বন্ধ হল কিনা।"- এই ভাবতে ভাবতে হাতিটাকে নিয়ে যাবার সময় দেখে এক ভিক্ষুক। ভিক্ষুকটা বলল, "আমি তোমাকে চিনি। তুমি মন্ত্রী। মন্ত্রীদের কাছে টাকা-পয়সা বেশি থাকে। আমায় কিছূ না কিছূ পয়সা দিতেই হবে।" মন্ত্রী কী আর করবে! আবার টাকা বের করতে গিয়ে দেরি হয়ে গেল। তারপর ভিক্ষুককে সেটা দিয়ে আবার হাতিকে নিয়ে রওয়ানা দিল। তারপর হঠাৎ আবার হাতিটা ঘুমিয়ে পড়ল। হাতিটা উঠল আবার সেই রাত তিনটায়। তারপর হাতিটাকে নিয়ে যাওয়া-আসা করতেই ভোর হয়ে গেল। তারপর রাজা বলল যে, "আবার হাতিটাকে নিয়ে এসো।" এখন মন্ত্রী শুধু ভাবে, "কী হচ্ছে? রাজামশাই এরকম করছে কেন? শুধু হাতি নিয়ে যাও, হাতি নিয়ে আস।" মন্ত্রী আবার গেল ঐ হাতি আনতে। তারপর হাতিটা নিয়ে ফেরার পথে দেখে, একটা প্রজাপতি। মন্ত্রীটা ভাবল যে, রাজামশাই তো প্রজাপতি পছন্দ করে। আমি বরং পথের এই গাছগুলো দিয়ে খাঁচা বানাই। আর হাতিটাকে ঐখানে বেঁধে রাখি। সে ঠিকই বুঝল যে, বেঁধে রাখতে হবে। কিন্তু সে বেধে রাখার বুদ্ধি বের করতে গিয়েই আর বেধে রাখতে পারল না, ভুলে গেল। তারপর হাতিটা দেখে যে, একটা গাছ। গাছে অনেক বড় বড় ফল। হাতিটা ভাবল যে, এই ফলগুলো নিয়ে আমি পালিয়ে আমার বাচ্চাদের কাছে যাই। বাচ্চাদের সাথে কতদিন দেখা হয় না! আর বাচ্চারা হবার পর আমাকে রাজা ধরে নিয়ে পোষা প্রাণী বানাতে গেল আবার। এই ভেবে তার সন্তানদের জন্য ফল নিয়ে হাতিটা দৌড়ে পালালো। আর ওদিকে মন্ত্রী খাঁচা বানিয়ে দেখল, প্রজাপতিটা নেই। তখন বলল, "আমার এত খাটনি হচ্ছে কেন? যাই বাবা, প্রজাপতি রেখে কাজ নেই। হাতিটাকে নিয়ে এবার ঘরে যাই।" এখন দেখল, হাতিটা নেই। তারপর আবার খুঁজতে বের হল। খুঁজতে খুঁজতে আবার রাত হয়ে গেল যখন, তখন আবার পেল। তারপর রাজা বলল, "হাতিটাকে আবর নিয়ে রেখে আস।" তারপর আবার রেখে আসল। আবার ভোর হল। আবার হাতিটাকে আনতে বলল। তারপর হাতিটাকে গিয়ে নিয়ে আসল। তারপর রাজা বলল, "থাক। বিজয় দিবস তো পারই হয়ে গেছে। আবার হাতিটাকে রেখে আস। হাতিটা আমার এখন আর কোন কাজে আসবে না। পরে অন্য কোন দিবস আসলে তখন দেখা যাবে। আর শোন মন্ত্রী! আগে তো এক বেলাই খেতে দিতে। আজ আমরা তিন বেলা খাই, আর এই তিন বেলা মিলে ঐ হাতিকে তিন বেলার খাবার দিবি। কারণ, এই তিনদিন ধরে হাতিটার যা খাট হচ্ছে!" মন্ত্রী বলল, "শুধু হাতিটারই কি? আমার কি কোন খাটই হচ্ছে না? আমারও তো খাট হচ্ছে।" তখন রাজা বর্ণনা দিল-
তুমি তো সাধারণ মানুষ ছিলে। তুমি আমার মন্ত্রী হতে অনেক জেদ ধরেছিলে। তাই আমি তোমাকে বললাম যে, তুমি তাহলে আমাকে কথা দাও যে, তুমি আমার সব কাজ করতে পারবে। কোন ক্লান্ত হবে না। এই বলে আমি তোমায় মন্ত্রী বানিয়েছিলাম। আর মন্ত্রী বানানোর পরদিনই আমার মনে এসেছিল যে, তুমি এরকমই করবে। এই আগের ঘটনাগুলো এবার মনে পড়ল তো? যদি মন্ত্রী থাকতে চাও, তাহলে আর খাটুনির কথা বলো না। আর আরেকটা আগের কথা, ভাতও তো কম দেব কিন্তু। এইটা আমি বলেছিলাম। তাই খাটুনির কথা আর একটুও বলবে না।
তারপর থেকে মন্ত্রী আর খাটনির কথা বলে না, আর মন্ত্রী বেশি কম কাজ করার বায়নাও ধরে না।