Saturday, December 16, 2017

পুষ্পিতার গুণের কাহিনী!

এক ছিল একটি ছোট্ট মেয়ে। তার নাম ছিল পুষ্পিতা। তার ছিল এক ছোট্ট বোন। তার বোনের নাম লুজাইমা। পুষ্পিতা একদিন তার বাবাকে জিজ্ঞেস করল, "আমার কয়টি দোষ এবং কয়টি গুণ আছে?" বাবা ভাবল, ওর দোষগুলো ওর সামনে বললে কেমন দেখাবে? গুণগুলোই বলি। বাবা বলল, "তোমার কোন দোষ নেই। তোমার শুধু অনেক গুণ আছে। এত গুণ আছে যে, তোমাকে আমি বলে বোঝাতে পারব না। এখন আমার কাজ আছে, অত গুণ বলার সময় নেই।" পুষ্পিতা তো খুবই খুশি। এরপর তার বাবার কথা ঠিক কিনা সেটা জানতে সে তার মাকে জিজ্ঞেস করল, "মা, আমার কয়টি গুণ আছে এবং কয়টি দোষ আছে?" মা বলল, "তোমার কোন গুণই নেই। তোমার শুধু দোষই আছে। এত দোষ আছে যে, বলেও বোঝাতে পারব না।" পুষ্পিতা বলল, "বলে যখন বোঝাবে না, তখন খাতায় লিখেই না বোঝাও।" মা বলল, "ধুর! ভাল্লাগে না। লেখার থেকে বলাই তো অনেক সহজ। যেমন ধর, তুমি দিনে এক বেলা কফি খাও। একদিন পরপরই চা খাও। তোমার বোনকে তুমি মাঝে মাঝে বকা দাও। আর বলতে পারব না।" পুষ্পিতা বলল, "এক বেলা কফি খেলে কি হয়? পাশের বাসার লিলিকে দেখেছ? প্রত্যেক বেলায় খাওয়ার আগে এবং পরে এক কাপ কফি খায়। আর আমি এক বেলা কফি খাই বলেই দোষ? পাশের বাড়ির লিলির ছোট বোন রুমাকে দেখেছ? সে তো প্রত্যেক বেলায় বেলায় চা খায়। আর আমার স্কুলের নিমা আপু আছে। সে তার বোনকে ক'দিন আছাড়ও দিয়েছে। আর তুমি যে আমাকে কত বকা দাও! তার বেলা কি, বল?" মা বলল, "ছোটদের অত কথা বুঝতে নেই। জিজ্ঞেস করেছ, উত্তর দিয়েছি। যাও তো এখন। আরো অনেক দোষ আছে তোমার। সেগুলো পরে বলব।" এই বলে মা তার কাজে চলে গেল। হঠাৎ লুজাইমা এসে পুষ্পিতাকে বলল, "কী পুষ্পিতা আপু! মার সাথে কি বলছিলে? আর মা তোমাকে কি যেন দোষ বলল! আরেকটু আগে বাবা তো তোমাকে অনেক গুণের কথা বলল। দোষ মানে কি, আর গুণ মানে কি? বল না!" পুষ্পিতা বলল, "বড়দের কথা শুনতে নেই।" তখন লুজাইমা বলল, "তুমি কি বড় নাকি? ক্লাস টুতে পড়, আমি প্লেতে পড়ি বলেই এত ছোট হয়ে গেলাম? আমি যদি লেদু হই, তাহলে তুমি তো বাবু। বল না, রে! এটুক বোঝালে কি হয়?" পুষ্পিতা বলল, "কী রে লুজাইমা, তুমি থাম তো! আচ্ছা বোঝাচ্ছি। দোষ মানে খারাপ কোন বৈশিষ্ট্য এবং গুণ মানে হচ্ছে ভাল বৈশিষ্ট্য। এবার বুঝলে?" তখন লুজাইমা বলল, "আরে পুষ্পিতা আপু! বৈশিষ্ট্য মানে কি?" পুষ্পিতা বলল, "উফ! তোকে নিয়ে আর পারলাম না রে।" তখন লুজাইমা চিৎকার করতে লাগল যে, "আম্মু! পুষ্পিতা আপু আমাকে ধমক দিয়েছে। একটা কথা জিজ্ঞেস করেছি, তাতে আরো কঠিন ভাষা দিয়ে বুঝিয়েছে। সেটার অর্থ জানতে চেয়েছি, আর রেগে গেছে। ভাল লাগে না। মা! তুমি পুষ্পিতা আপুকে বকে দাও। তাহলে আমি লক্ষ্মী হয়ে ভাত খাব।" তখন মা বলল, "সত্যি বলছিস তো? আচ্ছা শোন, তুমি যদি ভাল করে ভাত খেয়ে নাও, তাহলে আমি এক্ষনি বকে দিচ্ছি। এই পুষ্পিতা! শোন না কেন? একটা কথার অর্থ বোঝাতে পার না? বড় বোন হয়েছ কি করতে? আজকে তোমার আর খাওয়াই লাগবে না।" পুষ্পিতা তো আরো খুশি। সে বলল, "Thank You. তুমি একটা ঠিক কথা বলেছ। খেতে আর ভাল লাগে না। কি মজা! আজকে আর আমার খাওয়া লাগবে না।" মা তো আরো রেগে গেল। ধমক দিয়ে পুষ্পিতাকে বলল, "আজকে তোমাকে পাঁচ প্লেট খাইয়ে দেব। Sorry, খাইয়ে দেব না, বরং খেতে দেব।" তখন লুজাইমা হেসে বলল, "এবার বোঝ মজা!" পুষ্পিতা বলল, "ঠিক আছে, পাঁচ প্লেট আর খাব না। দেখি, আমার বইতে 'বৈশিষ্ট্য' শব্দের অর্থ আছে কিনা। বোঝাতেই তো পারব না।" অবশেষে সে খুঁজে পেল। এরপর সে লুজাইমাকে বলল, "বৈশিষ্ট্য শব্দের অর্থ চরিত্র, স্বভাব বা প্রকৃতি, যা দিয়ে কারো আচরণ বা মানসিকতা প্রকাশ পায়।" লুজাইমা বলল, "মানে? প্রকৃতি মানে তো চারিদিকের সব গাছপালা এবং নদী!" এরপর পুষ্পিতা বলল, "আচ্ছা! ঠিক আছে, শোন বাবু। একটা অর্থ না বুঝলে অন্য সবগুলো দিয়েই বৈশিষ্ট্য শব্দের অর্থটা বোঝ। আমি আর বোঝাতে পারব না, sorry।" এরপর লুজাইমা বলল, "ঠিক আছে। কিন্তু আমি শুনেছি, মা তোমাকে কিসের কথা বলেছে। কিন্তু বাবা তো উদাহরণ দেয়নি। যাও, উদাহরণ শুনে এসো।" বাবার কাছে উদাহরণ জানতে চাইল পুষ্পিতা। বাবা বলল, "তোমার অনেক গুণ আছে। যেমন ধর, না খেয়ে আমাদের খাবার বাঁচিয়ে দাও। এরপরেরটা কানে কানে বলি। তুমি বিছানায় রং করে রং লাগাও আর মা ক'দিনের মধ্যেই বিছানাটা ধুতে দেয়। এতে আমার প্রত্যেকদিনই পরিস্কার বিছানায় শোয়া হয়।" পুষ্পিতা বলল, "কই, মার উপকার করি এরকম কোন গুণ তো বললে না।" বাবা বলল, "আরে বলছি বলছি। যেমন- তুমি কোন বিশেষ খাবার পছন্দ কর না বলে মার আর অতিরিক্ত কষ্ট করতে হয় না। আরেকটা গুণ আছে, তবে এরপর আর বলতে পারব না। গুণটি হলো, তুমি প্রত্যেকদিন যে চা-কফি খাও, এতে তুমি রাতে ঘুমাও না। তারপর তুমি বসে বসে খেল। এতে বিছানায় জায়গা বেড়ে যায়, একদম তোমার মা ও আমি দুজনেই বিছানায় আরাম করে শুতে পারি।" পুষ্পিতা বলল, "কই! লুজাইমা খাটে শুলে তোমাদের অসুবিধা হয় না, আর আমি শুলেই অসুবিধা হয়?" বাবা একটুখানি ভেবে বলল, "তুমি তো চা-কফি খাওয়ার সময় মজার চোটে ওকেও এক ঢোক খাইয়ে দাও। আর খেলার সময় তো ওকে ঠিকই ডাক। এতে জায়গা কমে যায় না?" পুষ্পিতা বলল, "উহ! ওকে মাত্র দুইদিন একটু টেস্ট করিয়েছি বলে তুমি এমন বানিয়ে দিলে? এত গুণই তো আর ভাল লাগে না। এর থেকে মায়ের বলা দোষগুলোই ভাল।"

Saturday, December 9, 2017

গরীব লোক

এক ছিল এক গরীব লোক। তার প্রথম থেকে এক পয়সাও ছিল না, টাকা তো দূরের কথা। সে এখন কী করবে? কিন্তু সে বুদ্ধিতে খুব পাকা ছিল। সে শহরে এল। সে দেখল, একটা দোকানে অনেক কাঠাল। সে জায়গায় খুব কম দামেই বিক্রি হতো। কিন্তু ঐ কাঠাল কিনতে যতটুকু টাকা লাগবে, সেটুকুই তো তার ছিল না। সে দেখল, কিছু দোকানে খুব নোংরা জমেছে। সে একটা দোকানের দোকানদারকে বলল, "ভাই! তোমার দোকানটা খুব নোংরা হয়ে গেছে। আমি যদি পরিস্কার করে দেই, তাহলে কি কিছু টাকা পাওয়া যাবে?" দোকানদার বলল, "ঠিক আছে। দেখি, কেমন পরিস্কার করতে পার। যত গ্রাম ময়লা বের হবে, ততটা ৫ টাকার নোট দেব। রাজি তো? আর যদি একটাও ময়লা না বের হয়, তাহলে এখনই আমাকে ১০ টাকা দেবে।" তখন গরীব লোকটি ভাবল, কী রে! আমি কি এত বোকা নাকি? ময়লা না দেখে কি আর এসব প্রশ্ন জিজ্ঞেস করি? সে বলে দিল, "আমি রাজি। আমি এক্ষণি পরিস্কার করে দিচ্ছি।" পরিস্কার করার পর এক কেজি ময়লা বের হলো। দোকানদার তো হা হয়ে গেল। সে ভাবল, সকাল বেলা ৫ হাজার টাকা দিয়ে দিতে হবে এই গরীব লোকটাকে? হায়রে কপাল! কেন যে এমন করে বলতে গেলাম! আগে দেখে নেয়া উচিত ছিল, কতটা ময়লা জমেছে। ধুত, এখন টাকাগুলো ঢালতে হচ্ছে। সে ৫ হাজার টাকা মুখ গোমরা করে গরীব লোকটাকে দিয়ে দিল। গরীব লোকটা ১০০ টাকা দিয়ে একটা বড় কাঠাল কিনল। ধনী লোক হলে এক বেলায় শেষ করে দিত। কিন্তু সে ঐ একটা কাঠাল এক সপ্তাহ ধরে খেয়ে ফেলল। আর বিচিগুলো জমিয়ে রাখতে লাগল। তারপর সে ঐ টাকা থেকে কিছু টাকা সঙ্গে নিয়ে এল। সে একটা খালি মাঠ দেখতে পেল। সে একজনকে জিজ্ঞেস করল, "এই মাঠটা কার, ভাই?" লোকটা বলল, "কি যে বল না, এই মাঠটা তো আমারই। বিক্রি হবে। ১,০০০ টাকা পড়বে। নেবে নাকি?'' সেই লোকটি আসলে তর্ক করে বলেছিল।  ভেবেছিল, অত টাকা দেয়া তো দূরের কথা, নাম শুনেই পালিয়ে যাবে। কিন্তু গরীব লোকটি এক কথায় 'হ্যাঁ' বলে দিল। সে এক হাজার টাকা সঙ্গে সঙ্গে দিয়ে দিল, আর সঙ্গে সঙ্গে যার মাঠ সেই নামওয়ালা সাইনবোর্ডটি তুলে ফেলল। আর নিজের নাম লেখা একটি সাইনবোর্ড গড়ে তুলে ওখানে লাগিয়ে দিল। একটু পর সে ঐ বীচিগুলো নিয়ে এল। সে একজনের কাছ থেকে একটা কুঠার কিনে ফেলল। পাশেই একটি কল ছিল। সেটা যে কেউ ব্যবহার করতে পারে। সে একটি পানির পটও কিনেছিল। এরপর সে কুঠার দিয়ে মাটি খুঁড়ে তাতে কাঁঠালের বীজগুলো পুতে দিল। আর ঐ পানির পটে পানি ভরে রোজ ওখানে পানি দিতে লাগল। একটা কাঠালের অনেক বীচি। সে তিনটি গাছ পুতেছিল। গাছগুলো বড় হতে না হতেই দেখা গেল, কাঠাল ফলতে শুরু করেছে। এ কয়দিন সে তার রয়ে যাওয়া টাকাগুলো দিয়েই খাওয়া-দাওয়া ও সবকিছু সেরেছে। তার টাকাও প্রায় শেষ। কিন্তু গাছে কাঠাল এখনো একটুও পাকেনি। এই কাঠাল কেউ কিনবেও না। তাই সে আবার আরেকটা দোকানে গিয়ে ময়লা পরিস্কার করে কিছু টাকা নিয়ে এল। তা দিয়ে আরো দুই সপ্তাহ চালালো। আস্তে আস্তে দেখা গেল, কাঠাল পেকে যাচ্ছে। সে একটা ঝুড়ি নিয়ে তাতে অনেক কাঠাল পেড়ে ভরে ফেলল। তারপর সেই ঝুড়িটা মাথায় নিয়ে বাজারে গেল। সে বাজারে এমন একটা জায়গায় গেল, যেখানে মানুষ অনেক বেশি হাঁটাচলা করে। একদিনের মধ্যে প্রায় ১৫টা কাঠাল বিক্রি হল। সে একেকটার দাম ১০০ টাকা করে রাখল। ছোটগুলো ৭০ টাকা। সে আয় করল একদিনেই ১৪০০ টাকা। এমন করেই তার দিন চলতে লাগল এবং সে একটি বাড়িও কিনে ফেলল আর ভাল পোশাক-আশাকসহ বিয়েও করে ফেলল। এবং এভাবেই তাদের সুখে-শান্তিতে দিন কাটতে লাগল।