Thursday, July 26, 2018

অহংকার ও ঢংয়ের ফল

এক ছিল একটি বালিকা বিদ্যালয়। সেই স্কুলে অনেক ছাত্রীই পড়ত। তার মধ্যে কয়েকজনের নাম হলো রেহেনা, তাশফিয়া, দিবানিশি এবং মাইশা। তাদের মধ্যে রেহেনাই ছিল বেশি ধনী। তার সাথে সে যেমন ধনী ছিল, তেমনই হিংসুটে ছিল। নিজের কিছু একটা থাকলে অন্যের সেটা না থাকলে অন্যকে সে চেতাতো (ক্ষেপাতো)। একদিন হলো কি, আজকে নতুন ক্লাসে সবার প্রথম ক্লাস। সবাই তৈরি হয়ে এসেছে। রেহেনা সবাইকে জিজ্ঞেস করল, "এই! তোরা সবাই টিফিনে কী এনেছিস? বল দেখি!" তাশফিয়া বলল, "আমার কি আর তোর মত সৌভাগ্য রে? আমরা তো গরীব। তাই কী আর আনব? তেমন কিছুই নয়। শুধু তিন টুকরো গাজর। যা পেড়েছিলাম আর কি।" এরপর দিবানিশি বলল, "তুই বুঝি খুব ভাল টিফিন এনছিস, রেহেনা? আমি তো কিছুই আনতে পারলাম না। দেখি, এখন কী করা যায়। তবে ছোট্ট একটা খেজুর আমার সাথেই আছে। এতেই আমার হয়ে যাবে।" শেষে মাইশা বলল, "আমি আর কী আনব? আমি তো কিছু আনতেই পারলাম না। শুধু একটা মাত্র মটরশুটি। যা আমাদের পাশের বাড়ির ফুপু দিয়ে গিয়েছে।" রেহেনা সবার কথা শুনে হাসতে লাগল আর তামাশা করতে লাগল। বলতে লাগল, "এ মা! তাশফিয়ার বুঝি তিন টুকরো গাজর খেয়েই পেট ভরে যাবে! ছি! তোরা আমার ধারেকাছেও নস। দিবানিশি! শোন্, তুই নাকি ঐ ছোট্ট একটা মাত্র খেজুর খেয়ে ৯ ঘন্টা থাকবি। আশ্চর্য তো? কিছু নেই, নাকি? এত গরীব জীবনে দেখিনি। আর মাইশা, তুই কী রে! পাশের বাড়ি থেকে ক'টা মটরশুটি দিল, তা থেকে মাত্র একটা কেন আনলি? আশ্চর্য তো! আমার তো ১০০ টা মটরশুটি খেলেও হবে না। ধূত! এত গরীবের বন্ধু কি করে হলাম?" তাশফিয়া বলল, "রেহেনা! এত অহংকার ভাল না। তুই কি এনেছিস, সেটা আগে শুনি দেখি। এত যখন কথা বলছিস! বল্ কি এনেছিস?" রেহেনা বলল, "কী রে বাবা! এটুক ধারণাও নেই? এনেছি তো ১০টা চিকেন রোল, ২ বাটি বিরিয়ানি, মাছের মাথা এবং মাছের ডিমসহ মাছের ভাল ভাল পিস, দুই টুকরো রোস্টও সাথে এনেছি। আরো একটা ডিম পোচ। ভাবছিস কি, মাত্র এইটুকু এনেছি? আরো কত যে বাকি রইল বলা। হোটেলের ভেজিটেবল এনেছি। তার সাথে এনেছি একটা বড় পিজা। আবার দুটো বার্গার, তিনটি হটডগ। আর এনেছি এক বোতল কোল্ড ড্রিংকস। তোদের কথা ভাবলেই আমার ঘৃণা করে। তোরা আমার সাথে পড়িস? কী একটা ছোট খেজুরের টুকরো, তা খেয়ে নাকি ৯ ঘন্টা থাকবে? আর হ্যাঁ, এক প্যাকেট মাশমেলোজও কিন্তু এনেছি।" দিবানিশি আবার গরীব হলেও একটু কথা জানত। সে বলল, "এই জন্যই তো বলি, ব্যাগ ভারি, এত বই-খাতা আনিস, তাও পরীক্ষায় বারবার ফেল করিস। ব্যাগ কেন এত ভারি, এখন বুঝলাম। তুই ব্যাগ ভরে শুধু টিফিন আনিস। আর বই-খাতা কোনরকম বটলি পাকিয়ে যত কম নেয়া যায়, তত চেষ্টা। দেখি তোর ব্যাগটা? এ মা, তোর ব্যাগে তো পাঁচটা পার্ট। চারটা পার্টই দেখি জমিয়ে খাবার ঢুকিয়েছিস। আর একটাতে কোল্ড ড্রিংস, আর পানির বোতল, আর ছোট্ট একটা খাতা, আর কুট্টি একটা পেন্সিল; আর কিছু তো না! তোর পেট সত্যি তোর পেট তো, নাকি কোন রাক্ষস এসে পেট বদলে দিয়ে গেছে?" রেহেনা রাগের চোটে বলল, "এখন আমি খাব, জ্বালাবি না। এনেছে কতটুক একটু টিফিন, আবার ঝগড়া বাধায়। বুঝিস না, আমার সাথে ঝগড়া করলে কি হতে পারে, জানিস? আমার বাবা কী, জানিস? আমার মা কি, তাও তো জানিস না। বাবা আদালতে কাজ করে, আর মাও আদালতে কাজ করে। আমার মা-বাবা কিন্তু টিপে ভর্তা করে দিতে পারে তোদের। এখন কথা বলিস না, যা, যা। আমি এখন সব টিফিন বের করব। আমার তিনটা বেঞ্চ লাগবে টিফিনগুলো রাখতে। তোরা উঠে তোদের সিট দিয়ে যা। গরীবের আবার বসে বসে খেতে হবে নাকি? এত যখন কষ্ট সহ্য করিস, এটুক করবি না? যত্তসব!" সবাই আর কী বলবে? তারাও জায়গা ছেড়ে দিল। তার খাবার ব্যাগ থেকে বের করে বেঞ্চে রাখতে রাখতেই তো আধা ঘণ্টার দশ মিনিট পেরিয়ে গেল। তো কি? সে দুই সেকেন্ডেই সব খাবার শেষ করে দিতে পারবে। তার যা চালু মুখ আর চালু পেট। সে সবার আগে মাশমেলোজের পুরো প্যাকেটটাই মুখের ভিতর ঢুকিয়ে দিল। দুই সেকেন্ড পর মুখ থেকে খালি প্যাকেট বের করে আনল। এরপর দু'মিনিটে গপাগপ করে মাছ, মাংস ও ডিম খেয়ে ফেলল। আর এক মিনিটে দুই বাটি বিরিয়ানিও শেষ করে ফেলল। তারপর গবগব করে সবগুলো চিকেন রোলই খেয়ে ফেলল। তারপর ভেজিটেবল খেল। তারপরও সে বলল, "খিদেটা তো কিছুতেই যাচ্ছে না। কি যে করি, এখনো তো অনেক খাবারই রয়ে গেছে, সে সবই খাই। সে কোল্ড ড্রিংস গবগব করে সবটা খেয়ে ফেলল। এরপর গোটা পিজাটা সে মুখের ভিতর ঢুকিয়ে দু' সেকেন্ডেই তাড়াতাড়ি চাবিয়ে গিলে ফেলল। এরপর সে আধা মিনিটে দুটো হটডগ খেয়ে ফেলল। সব খাবারই সে চেটেপুটে এরপর খেয়ে নিল। তারপর পানি খেয়ে রেখে তবেই উঠল। সে বলল, "ইস! কেন যে এত্ত কম খাবার দিল? ছিছিছিছি, মান-সম্মান আর কিছু থাকল না। আনার কথা ১০০ ভাগ। ১০০ ভাগের মাত্র দুই ভাগ দিয়েছে আজকে টিফিনে। আরো তো খেতে ইচ্ছে করছে, কী খাব? সে গেল। গিয়ে বলল, "তোদের প্রত্যেকের টিফিনের চার ভাগের তিন ভাগ আমায় দিয়ে দাও, দিয়ে দাও বলছি? নইলে আমার বাবা-মা কিন্তু আদালতে নিয়ে গিয়ে কঠিন শাস্তি দেবে। দাও, বলছি!" তখন সবাই বলল, "এহ! কি বলিস কি? তুই পেট ভরে খেতে থাকবি, আর আমরা বসে বসে দেখব? আমরা ততক্ষণে কবেও খাবার শেষ করেছি!" এরপর রেহেনা খুব রেগে গেল। বলল, "১০০ ভাগের ৫০ ভাগ অন্তত আমায় খেতে হবে। মা কত টিফিন আমায় দিতে হবে, তাও বোঝে না। কিনে তো দিয়েছে শুধু একটা লাগেজ ব্যাগ, সেই লাগেজ ব্যাগে করেই যতটুকু ভরে, ততটুকু টিফিন দেয়। উহ! এখন যে কী করি?" ভাবতে ভাবতে সে একটা বুদ্ধি পেল। টিচার তো একটা ব্যাগ তার হ্যান্ডব্যাগের সাথে পিনআপ করে রেখেছে। তার ব্যাগের মধ্যে ছিল অনেকগুলো টি-ব্যাগ। আর ছিল এক বড় প্যাকেট আইসিং সুগার। টিচার আবার একটু ঢঙ্গু ছিল। শুধু সুগার দিলে গলতে শুরু করে, এজন্য সে আইসিং সুগার ব্যবহার করে। রেহেনা গিয়ে চুপে চুপে তাড়াতাড়ি আইসিং সুগারের প্যাকেটটা নিয়ে নিল। সব আইসিং সুগার একবারে মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে নিল। তারপর বলল, "উহ, বাবা! ১০০% এর ২০% তো খাওয়া হলো। এবার বরং সিটে বই-খাতা নিয়ে বসি। অন্য বন্ধুরা তো খাওয়া শেষ করে লেখাও শেষ করে খাতা জমা দিয়ে দিয়েছে। আমি তো বোর্ডেরটাই শুরু করিনি, নিজে যেটা লিখতে হবে সেটা কখন লিখব? সে তাড়াতাড়ি করে খাতা বের করে লিখতে শুরু করল। ঘন্টা বাজল। কিন্তু লেখা শেষ হলো না রেহেনার। সে শুধু বারবার ঘুমিয়ে পড়ছিল। টিচার এসে এসে তাকে ডেকে দিচ্ছিল। সব বন্ধুরা তো রেহেনা যখন দেখছিল না, তখন তাকে দূর থেকে একটু ভেংচি কেটে চলে গিয়েছিল। রেহেনা তো লিখতেই পারছে না। অবশেষে এক ঘন্টা পর সে বোর্ডের লেখা শেষ করল। এখন নিজে বানিয়ে লেখার পালা। তখন সে টিচারকে বলল, "মিস! শোনেন, আপনি একটু দেখুন তো যে, পাশের ক্লাসে টিচার ঠিকমত ক্লাস নিচ্ছে কিনা! আমার তো মনে হচ্ছে না। কারণ, আগের ক্লাসে ছুটির পর আমি পাশের ক্লাসের বাচ্চাদের দেখেছিলাম। জিজ্ঞেস করেছিলাম পড়া, একটুকুও পারেনি। বোধহয় ঠিকমত পড়াচ্ছে না, গিয়ে দেখুন তো!" ক্লাসের মিস তা দেখতে চলে গেল। এই ফাকে রেহেনা টেবিলে গিয়ে অন্যদের রাখা খাতাগুলো দেখে নিল। সে একটা খাতা পট করে নিয়ে নিজের স্কার্টের ভিতর লুকিয়ে নিল। যখনই সে পারে না, তখনই সে স্কার্টটা একটু উঁচু করে দেখে আবার স্কার্টটা ঠিক করে দেয়। হঠাৎ তার লেখা শেষ হলো। সে নিজের খাতার নিচে আরেকজনের খাতাটা রেখে টিচার যখন খেয়াল করছিল না, তখন পট করে গিয়ে জমা দিল। টিচার তাকে ছুটি দিয়ে দিল। রেহেনা বাসায় ফিরে গেল। সেই যে সে পুরো এক প্যাকেট আইসিং সুগার খেয়েছিল, সেই জন্য হল তার ডায়াবেটিস। তার পুরো পরিবার ঢঙ্গু হবার কারণে সেই এলাকার সেরা ডাক্তার খোঁজা শুরু করল। তা খোঁজার জন্য লোক পাঠালো। সেইজন্য টাকা গেল। এই ক'টা দিনের জন্য তার মা-বাবাও কিছুটা সময় চাকরি ছেড়ে দিল বাচ্চার দেখাশুনা করার জন্য। সেরা ডাক্তার তো সাধারণ মানুষের ঘরে এসে রোগী দেখতে চাচ্ছে না। সেজন্য এক্সট্রা টাকা দিতে হলো। তার মা-বাবা ঢঙ্গু হবার কারণে অনেক টাকা খরচা গেল। মিষ্টি ওষুধ দিন, সুস্বাদু ওষুধ দিন যাতে খাওয়াতে কষ্ট না হয়, যাতে আগ্রহ করে খায়, আবার যাতে চুরি করেও না খেয়ে ফেলে। ইত্যাদি সুবিধা সব লাভ করতে গিয়ে বেশির ভাগ টাকাই গেল ফুরিয়ে। সেরা ডাক্তার যখন দেখল, মা-বাপ ঢঙ্গু, বেশি টাকা আদায় করা যাবে, তখন সেও আবার চালাকি শুরু করল। ২০০ টাকার কাজ ২০০০ টাকা চাইল। এখন সে তো একটাই ইস্যু দিতে পারব। সেটা হল সেরা ডাক্তারের সেরা চিকিৎসা দেবে, তাতে বেশি দাম দিতে হবে না? এই ইস্যু। এরপর অনেক অনেক টাকা খরচ গেল। এতদিন মা-বাবার আদর পেয়ে পেয়ে রেহেনা আবার খুব লাই পেয়ে গিয়েছিল। সে তখন খারাপ লাগার অভিনয় করতে লাগল, যদিও তার অসুখ সেরে গিয়েছিল, যাতে মা-বাবা চাকরি ছেড়ে তার কাছে সময় কাটায়। এইভাবে তারা গরীব হয়ে গেল। একই সাথে, অন্য বন্ধুরাও কাজ করে করে ধনী হয়ে গেল। আগে রেহানা ও তার বন্ধুদের সাথে যা ঘটেছে, তার পুরো উল্টোই হয়ে গেল। শুধুমাত্র এই ঢংয়ের জন্য আর রেহানার অহংকারের জন্য।

Thursday, July 19, 2018

আল্লাহর দয়া

এক ছিল একটি মেয়ে। তার নাম ছিল নিশি। নিশি তার মাকে জিজ্ঞেস করল, "মা! আল্লাহর উপর আমরা কিভাবে খাবারের জন্য ভরসা করি, বলতো?" মা তো প্রথমে ভাবল, এমনি পারে না তাই বলেছে। শেষের 'বলতো' কথাটি শুনে মা বলল, "তুমি কি আমি পারি কিনা সেটা দেখছ? নাকি জানতে চাইছ?" নিশি বলল, "মানে? বল না। বলতে বলেছি, বল।" মা বলল, "আল্লাহর উপর খাবারের ভরসা করব না তো কার উপর করব? খাবার খেয়ে যে বাঁচা যায়, এই সিস্টেমটাই তো আল্লাহ তৈরি করেছেন। একটা খাবার ভালো না লাগলে আমরা অন্য খাবার খেতে পারি। হাজার হাজার খাবার আল্লাহ বানিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহর বানানো খাবার থেকে মানুষ আরো পাঁচমিশালী করে ভিন্ন জাতের খাবার তৈরি করছে। এমন কোন খাবার কি আছে, যা প্রাণী বা গাছ থেকে আসে না? ডিম, দুধ এসবই তো প্রাণী থেকে আসে। মাংস, মাছ এগুলোও প্রাণী থেকে আমরা পাই। গাছ থেকে আমরা ফসল, ফলমূল এসব পাই, সবজিও পাই। আর মানুষে পাঁচমিশালী করে তৈরি করেছে এরকম একটি খাবার বললাম কাস্টার্ড। কাস্টার্ড বানাতে ফলমূল লাগে, দুধও লাগে। ফলমূল গাছ থেকে আসে এবং দুধ প্রাণী থেকে আসে। প্রাণী আর গাছ কে তৈরি করেছে? এ তো খুবই সোজা। কারণ, আমাদেরকেই তো তৈরি করেছেন আল্লাহ। তাহলে আমাদের জন্য সবকিছু তো তিনিই সৃষ্টি করেছেন। এভাবেই তো আমরা খাবারের জন্য আল্লাহর উপর ভরসা করি। তোমার কি মনে হয়? আল্লাহর কাছে শুধু খাবারের জন্যই ভরসা করি? বেঁচে থাকার জন্যও আল্লাহর উপরই ভরসা রাখতে হয়। কারণ, আল্লাহ চাইলে এক্ষনি সব মানুষকে ধ্বংস করে দিতে পারেন, কিন্তু আল্লাহ তা করছেন না। কারণ, তিনি পরম দয়ালু। তিনি চাইলে মৃতকেও জ্যান্ত করতে পারেন। হিংসুটে ধনীকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য তিনি তাকে ফকির করে দেন, আবার শিক্ষা পাওয়ার পর তাকে ভালো জায়গায় নিয়ে আসেন। দু:খী ফকিরকে ধনী করে দেন। এমনি এমনি ধনী করলে তো হিংসুটে হয়ে যাবে, খারাপ হয়ে যাবে। সেজন্য তিনি গরীবদের মাথায় বুদ্ধি দিয়ে দেন। উপার্জনের বুদ্ধি। মানুষ যে এত বড় বড় বিল্ডিং বানাচ্ছে। আল্লাহ তো চাইলেই অনেক জোরে ভূমিকম্প দিয়ে এসব ধ্বংস করে দিতে পারেন। কিন্তু করেন না। তিনি সবকিছুই ধ্বংস করে দিতে পারেন, কিন্তু করেন না। এটাই হচ্ছে গিয়ে আসল কথা। কারণ, তিনি পরম দয়ালু।" নিশি বলল, "আচ্ছা, আল্লাহ যতটা দয়ালু, ততটা দয়ালু কি কেউ হতে পারে? আমাদের সবার ক্লাসের টিচাররা তো একেবারেই উল্টা। সবগুলোতে A+ পেয়ে একটাতে A গ্রেড পেলে সবগুলোতেই A দিয়ে দেবে। আল্লাহ যদি এরকম করতেন, তাহলে শেষে ক'জন মানুষই বা টিকে থাকত? একজন মানুষ যদি অনেক ভালো কাজ করে একটু দোষ করে, তাহলে কি আল্লাহ তাকে জাহান্নামে দিয়ে দেন? বড় কোন দোষ হলে তিনি বাধ্য হলে তখনই একমাত্র তিনি তাকে জাহান্নামে দেন। তাহলে মানুষ একরম কেন? বুঝি না, বাপু।" মা এই প্রশ্নের কোন জবাবই দিতে পারল না। কারণ, এটাই সত্যি।

Tuesday, July 17, 2018

'দিও' এবং 'দাও' এর পার্থক্য

এক ছিল একটি মেয়ে। নাম তার সুমাত্রা। সে আবার বোকা ছিল। সে তার বন্ধু লায়লার বাড়িতে লায়লার জন্মদিনে গিয়েছিল। সে একটা গিফট নিয়ে গেল। লায়লা বলল, "ওয়াও! গিফটটা তো অনেক সুন্দর।" তখন সুমাত্রা বলল, "শোন, পরের বার তোমাকে কি গিফট দেব?" তখন লায়লা বলল, "একটা বাইসাইকেল দিও।" তারপর সুমাত্রা বাড়ি ফিরল। আরেকদিন সে এমনিতেই লায়লার বাড়িতে বেড়াতে গেল। সে বলল, "তুমি কি দিয়ে যেন তোমাকে সাহায্য করার কথা বলেছিলে? (ভুলে সাহায্য করার কথা বলেছে, আসলে বার্থডের গিফটের কথা।)" লায়লা বলল, "এখন তুমি আমাকে টিস্যু দাও।" অমনি সুমাত্রার বাবা ডাক দিল, "চলে এসো মা, আমাদের বাড়ি ফিরতে হবে। লায়লাকে বিদায় জানিয়ে চলে আস।" সুমাত্রা লায়লাকে বলল, "লায়লা, শোন! তুমি একটু আগে যা চাইলে, তোমার জন্মদিনে আমি তাই গিফট দিব। আমার মনে হয় না তুমি আগে এটা বলেছিলে। কিন্তু তাও আমি বুঝতে পারছি যে, তুমি তোমার মত বদলেছ। কারণ, তোমার যে জিনিস চাওয়ার কথা ছিল সেটা তুমি না চেয়ে বোধ হয় অন্য জিনিস চেয়েছ, কারণ তোমার সে জিনিস কম পছন্দ। ওকে, বাই, আমি আসি।" লায়লা কিছুই বুঝতে পারল না। পরে দেখা গেল, লায়লার জন্মদিনের দিন সুমাত্রা লায়লার গিফট হিসেবে একটা টিস্যু নিয়ে আসল। এরপর লায়লা বলল, "হায় হায়! তোমার না বাইসাইকেল আনার কথা ছিল। তুমি কি এনেছ? এটা কিছু গিফট দেয়ার জিনিস হলো? আর তুমি সেদিন কি বললে, আমি তো কিছু বুঝলাম না। আমি যে গিফট চাইব, সেটা বলার আগেই তুমি চলে গেলে।" তখন সুমাত্রা বলল, "ওমা! আমি জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কি চাও? তুমি বললে, টিসু। আবার বললে, জিনিসটা না দিয়েই চলে যাচ্ছ কেন? বার্থডের জিনিস মানুষ সেদিন দেয়? আশ্চর্য তো। তুমিই তো গিফটটা আমার কাছে চেয়েছ। আবার বলছ যে তুমি বাইসাইকেল চেয়েছিলে? আমি তো ভাবলাম, তুমি মত বদলে টিসু চেয়েছ।" তখন আসল জিনিসটা ধরা পড়ল যে, সুমাত্রা আসলে 'দিও' কথার অর্থ আর 'দাও' কথার অর্থ গুলিয়ে ফেলেছে। যা এই গল্পের মধ্যে বোল্ড করে দেয়া আছে। তোমরা আবার এই দুটো গুলিয়ে ফেলো না।

Sunday, July 15, 2018

মায়ের চালাকি

এক ছিল একটি মেয়ে। তার নাম নুরাইদা। নুরাইদা একদিন মাকে জিজ্ঞেস করল, "মা! আমার টিচার বলেছে মায়ের কাছে ধর্ম পড়তে। ধর্মের মূল বিষয় কি?" মা বলল, "কি রে বাবা, এটাও জানিস না?" তখন মেয়েটি বলল, "তুমি আমাকে কবে শিখিয়েছ যে, আমার মনে থাকবে? তুমি কিছু জানই না, কিভাবে বাচ্চাদের পড়াতে হয়। তুমি বুঝতেই পার না। বাচ্চাকে শুধু তুই তুই করে বলে। তানিয়ার আম্মু কেমন ওকে তুমি বলে ডাকে। চকলেট দেয়। রং করতে দেয়। খেলার সময় দেয়। তুমি কিছুই দাও না। আর তুমি কেন বলছ যে, আমি প্রশ্ন করেছি কেন? তুমি জান না বুঝি? ধর্মের ক্লাস নতুন শুরু হল এ বছর। আমাকে এটুকু বলবেও না? ঠিক আছে, আমি পরীক্ষায় ফেল করব। এক সাবজেক্টে ফেল করলে আজকাল টিচাররা সব সাবজেক্টে ফেল দেয়। দিয়ে রেজাল্টটাই ফেল করে দেয়। আশ্চর্য ব্যাপার।" মা বলল, "এসব পাকা পাকা কথা তোমাকে কে শিখায়? তানিয়া তো ভাল করে দাঁত মাজে, তাই ওর মা চকলেট দেয়। পড়া শেষ করে রং করার পর নখ পরিষ্কার করে, তাই তাকে ওসব করতে দেয়। তুমি তো কিছুই কর না, তাই বললাম আর কি। তবে এখন আসল কথায় আসা যাক। নাও, ধর্মের মূল বিষয় হচ্ছে .......। কথা শেষ হতে না হতেই মেয়েটি বলল, "মা! তুমি তো বড্ড স্বার্থপর। সেলফিশ কোথাকার! কিচ্ছু বোঝ না, নাকি? এটা কোন পড়ার সময় হলো? নিজেই বলে, যখন যেই কাজের সময়, তখন সেই কাজ করতে হয়। এখন সে আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে আমি যাতে না ডিস্টার্ব করি সেজন্য আরাম করে খেয়ে নিয়েছে। খেয়েদেয়ে পেটটা ভরিয়ে ফেরেছে একেবারে। আমাকে খাবার দিয়েছ বুঝি? কেমন মা তুমি? একদম ভাল লাগে না। জ্ঞান-ট্যান কিছু নেই নাকি? খালি পেটে পড়াতে বসেছে। ঢং দেখে আর বাঁচি না।" মা বলল, "থাপ্পড় দিয়ে গালটা কিন্তু ফাটিয়ে দেব। ভাত দাও বললেই হয়, কততো কথা! শুধু শুধু তর্ক বাড়ায়। আশ্চর্য ব্যাপার, তুই কিছু বুঝিস না? দাঁড়া, আমি ভাত আনছি।" মেয়েটি বলল, "আমি দেখেছি, আজকে তুমি মুরগীর পা রান্না করেছ। কিন্তু তুমি একটাই কেন রান্না করলে? আবার তুমি গিলাও রান্না করেছ। আমি দেখেছি। তুমি আবার বড্ড স্বার্থপর। বোঝ না কিছু। আবার ঝালও দিয়েছ এক গাদি, যাতে তোমার মজা লাগে। আমি কি করব, শুনি? আমি কি মাংস খাব না? মাংসও কত অল্প রান্না করেছ।" মা মেয়ের কথা শুনে চুপ হয়ে গেল। কারণ, আসলে হয়েছে কি, সে গিলা, পা ও সবটুকু মাংস চেটেপুটে খেয়ে নিয়েছে। এখন সে কী করবে? সে বলল, "শোন্‌ বাবা! তুই এখন মাংস খাস না। তাহলে রাতে যখন তোর অপছন্দের পেপে ভর্তা দেব, তখন তুই তা খেতে পারবি না। রাতে তুই চেটেপুটে মাংস খাস। এখন তুই পেপে ভর্তা খা।" মেয়েটা আবার ভীষণ বুদ্ধিমতী ছিল। সে বলল, "মা, তোমার মুখটা চোরের মত লাগছে কেন? কিছু লুকাচ্ছ নাকি? এই সত্যি করে বলতো, তুমি আবার মাংস খেয়ে ফেলনি তো?" মা তো তো করে বলল, "না, বাবা! আমি তোর খাবার খেতে যাব কেন? আমি মা না? নে, তোকে আমি পেপে ভর্তা দিচ্ছি, ভালোর জন্যই বলছি। রাতে তোকে মাংস দেবনে।" তখন মা  পেপেভর্তা দিয়ে ভাত মাখিয়ে আনল। বাবুটি খেয়ে ওয়াক দিল। "ছিছিছিছি, পেপেভর্তায় একটু লবণও দাওনি নাকি? কোন পেপেভর্তা হল? একদম মজা না। ছি, আমি এটা খাবই না। তুমি আমাকে মাংস দাও, নাহলে আমি পরীক্ষায় ফেল করব।" মা তো বড্ড মুশকিলে পড়ে গেল। সে এখন কী করবে? তার ইচ্ছে করছে, বমি করে সবটুকু উগড়ে দিয়ে বাচ্চাকে খাওয়াতে। কেন যে সে এই ভুলটা করল? সে তখন হোটেল থেকে কিনে নিয়ে আসল। এরপর সেইটা বাচ্চাকে খাওয়ালো। মেয়েটা বলল, "এ কি? কি বেস্বাদ! একটু নুন-মরিচ কিচ্ছু দেয়নি? তোমার রান্না কোনদিন এমন হয়? জীবনেও না। এ খাবার তো তুমি মুখেই তুলতে পার না। তাহলে তুমি এ খাবার রান্নাই করবে না। তুমি বুঝি মজা না দেখে নিজে না খেয়ে আমার উপর গচাচ্ছ? নাকি আরো কিছু! আর তুমি বাইরের পোশাক পড়লে কেন, অ্যাঁ? আমি দেখেছি, তুমি বাইরের পোশাক নিয়ে ড্রেসিং রুমে গেলে। যত্তসব।" মা তখন আবার তো তো করতে শুরু করল। বলল, "দাঁড়া, আমি একটু আসছি।" সে কটা গুড়ো মরিচের গুড়া ও সব মসলাপাতি হাতের মুঠোয় করে চুপটি করে সেটা মাখিয়ে দিল। ভাবল, এবার বুঝি মজা হবে। বাচ্চা বলল, "ঠিক আছে, আমি আরো একটু টেস্ট করে দেখি।" বাচ্চা তো এটা খেয়ে বমিই করে দিল। "ছিছিছিছি! কাঁচা সব মসলা দিয়ে এনেছে! কী সব রান্না করেছ তুমি, মা? ছি!, অখাদ্য। আমাদের যে টিচারটা মাঝেমাঝে তোমার রান্না খেতে আসে, তাকে তুমি কালকেই বলে দেব, তোমার রান্না কেমন বেস্বাদ। একটুখানি মাংস আমি কালকেই নিয়ে যাব।" এই বলে সে দৌড়ে একটা ছোট কৌটা এনে তার মধ্যে একটু মাংস ভরল। সেটা ব্যাগে ঢুকিয়ে দিল। যাতে মিস ওটা খেয়ে আর জীবনেও তার মায়ের রান্না খেতে না আসে। মা তো বড্ড ফ্যাসাদে পড়ে গেল। মেয়েটি বলল, "আমি এবার পরীক্ষায় ফেল করবই করব। তুমি তো সেটা হাড়ে হাড়েই চাও দেখছি।" মা বলল, "না, ফেল করিসনে মা! আমি তোকে চিপস, চকলেট সব এনে দেব। তুই এটাই খা। আজকে আমার মাথাটা ঘুরাচ্ছিল তো, তাই ভুলে এরকম করে রান্না করেছি।" তারপর মেয়েটি বলল, "তুমি তো এত কম রান্না কর না। বাকিটুক তুমিই খেয়েছ। আমি এটা আর খাব না। সবটুকুই তুমি খাও।" এই বলে মেয়েটি জোর করে সেটা তার মায়ের মুখে ঢুকিয়ে দিল। মা তো অজ্ঞান হয়ে গেল। এই হচ্ছে বুদ্ধিমান বাচ্চার সাথে মায়ের চালাকির ফল। তবে বাচ্চাটি কিন্তু সব বুঝেশুনেই করেছে। সে আগে সব জানত, কিন্তু সে মুখে কিছু বলছিল না। কারণ, তার কাছে কোন প্রমাণ নেই। তাই এইভাবে সে মাকে শিক্ষা দিল।

Friday, July 13, 2018

রাজকন্যার সুমতি

এক ছিল এক রাজার প্রাসাদ। সেই প্রাসাদে রাজা, রানী ও রাজকন্যা থাকত। একসময় ঝড়ে উড়িয়ে নিয়ে গেল তাদের প্রাসাদ। শুধু মানুষগুলোই রয়ে গেল। কারণ, মানুষগুলো জানালা দিয়ে আকাশটা দেখছিল এত মেঘলা হয়ে উঠেছে কেন। তাদের জানালা আবার নিচু ছিল। তাই যেই তারা ঝড়ের আভাস দেখছিল, অমনি জানালা দিয়ে লাফ দিল। মা-বাবা আবার স্বার্থপর ছিল। বিপদে পড়লে রাজা-রাণী সত্যিই খুব স্বার্থপর ছিল। তারা বাচ্চাকে ফেলে রেখে দৌড়ে পালিয়ে গেল। এখন রাজকন্যা তো একা। তবে রাজকন্যারও আবার বদভ্যাস ছিল। যা চাইত, তাই পেত। তাই সে জেদীও ছিল। যা চাবে, তা তো চাবেই। নাহলে আর কিছুই করবে না। খাবে না, ঘুমোবে না ইত্যাদি। আর দুষ্টুমি করবে। তখন সবাই জেদ পূরণ করতে বাধ্য হয়ে যাবে। এ সময়ও সে জেদ করতে শুরু করল। ঝড় থামার পর তাও মা-বাবা ভয়ে আর ফিরে এল না। অন্য কোথাও আশ্রয় নিল। রাজকন্যা দৌড়ে এদিক ওদিক কোন আশ্রয়ের খোঁজ করতে শুরু করল। সে এক বৃদ্ধ মহিলার বাড়িতে গিয়ে পৌঁছল। তবে সেই বৃদ্ধ মহিলা খুবই গরীব। সে গিয়ে বৃদ্ধ মহিলার দরজায় গিয়ে বলল, "বুড়ি মা! দরজাটা একটু খুলুন তো।" বৃদ্ধ মহিলা বলল, "কে তুমি? কি চাই?" এরপর মেয়েটি বলল, "আশ্রয় ও খাবার চাই একটু। দেয়া যাবে? আশ্রয় না হয় নাই দিলেন, একটু খাবার কি দেবেন? কারণ, আমি কুঁড়েঘরে থাকতে অভ্যস্ত নই। তাই আমি এখানে থাকতে পারব না। এর থেকে মাঝে মাঝে যেই অ্যাডভেঞ্চার করি, সেগুলোর মতই গাছের কোটরে থাকব। এখানে একটা অ্যাডভেঞ্চারের মত একটা ভাব আসে, কিন্তু কুঁড়েঘরে থাকলে সবসময়ই গরীব গরীব লাগে।" বৃদ্ধ মহিলাটি ভাবল, রাজপরিবারের মেয়েই হবে, আমি নিশ্চিত। নইলে কুঁড়েঘরে থাকার কথা উঠত না। কিন্তু যদি কুঁড়েঘরে না থাকতে পারে, তাহলে খাবার কি করে খাবে? বৃদ্ধ মহিলা দরজা খুলে বলল, "দাঁড়াও, আমার কাছে যা আছে, সেই সব খাবারই তোমাকে দেব। সবটুকুই দেব। তুমি খেলে খাও।" বৃদ্ধ মহিলা একটু তেনানো মুড়ি আর ক'টা বাসি ভাত এনে দিল। বলল, "আমার কাছে এই ছিল। খাবে নাকি? দেখে তো মনে হচ্ছে না, তুমি এগুলো খেতে পারবে। খাবে? খাও তো দেখি।" মেয়েটি বলল, "একদম নয়, এগুলো কি? পচা মুড়ি, পচা ভাত, এগুলো মানুষে খায়? এমনিতেই আমি মুড়ি আর ভাত পছন্দ করি না। তাও আবার বাসি? ছি-ছি-ছি! জীবনেও খাব না।" বুড়ি বলল, "তুমি যদি এটা না খাও, তোমার জীবন কি থাকবে? জীবনে আর খাবে কিভাবে?" তখন মেয়েটি বলল, "দরকার নেই। আমি উপোষ করেই থাকব, আর গাছের কোটরেই থাকব।" এই বলে মেয়েটি গাছের কোটরেই থাকতে শুরু করল। এরপর পরের দিন সে আবার বুড়ির কাছে এসে বলল, "বুড়ি মা, কিছু খাবার দেবে?" একই খাবার বুড়ি নিয়ে আসল। মেয়েটি নাক ঘুঁচিয়ে আবার কোটরে ফিরে গেল। দুই দিন এমন হওয়ার পর তৃতীয় দিন মেয়েটি গেল। গিয়ে কাতর কণ্ঠে বলল, "বুড়ি মা, কিছু খাবার দেবে?" বুড়ি বলল, "এই নাও। সেই তিন দিন আগের একই বাসি ভাত আর মুড়ি। তুমি কি এগুলো খাবে? খাওয়ার তো প্রয়োজন নেই। প্রশ্নই ওঠে না, তুমি নাকি এগুলো জীবনেও খাবে না। তাহলে আমি দরজাটা আটকে দেই, আর তুমি ঐ দু'দিনের মত একই কাজ কর।" মেয়েটি বলল, "না, না। আমি এগুলোই খাব। এইটাই আমি খাব। নাহলে তো আমি মরেই যাব।" এই বলে মেয়েটি মুখ বুজে ঐ খাবারই খেয়ে নিল। আর সেই খাবারই সে খেয়ে বলল, "কী মজা! কতদিন পর অনেক মজার খাবার খেলাম। বুড়ি মা, তুমি গরীব হলেও তোমার ভাগ্যটা খুবই ভাল, তুমি কী সুন্দর সুন্দর মজার খাবার খেতে পার। এইবার আমাকে একটু পানি দাও দেখি। রোদের খুব তাপ।" তখন বুড়ি মা নদীর পানি এনে দিল। এটা দেখে মেয়েটি বলল, "এটা কি ফুটানো? না না, ফুটানো হলেও হবে না। এটা কি ফিল্টার করা তো?" বুড়ি বলল, "গরীব মানুষ কি আর ফিল্টার করা পানি খেতে পারে? নদীর পানি খেয়েই জীবন কাটাই। তাই আমার কাছে যা ছিল, তাই দিয়েছি। খেতে হলে খাও, নাহলে যাও।" মেয়েটি নাক ঘুঁচিয়ে আবার চলে গেল। কিন্তু দু'তিন ঘন্টা পর আবার ফিরে এল। বলল, "বুড়ি মা, যাই হোক, তোমার ঐ পানিই আমাকে দাও।" তখন বুড়ি ঐ নদীর পানিই এনে দিল। আর সেটাই সে আপন মনে ঢক ঢক করে খেয়ে ফেলল। বলল, "বুড়ি মা, সত্যিই তোমার ভাগ্যটা ভাল। এমন মজার পানিও তুমি খাও। বাহ! অপূর্ব!" এরপর মেয়েটি আবার গাছের কোটরে গিয়ে ঢুকল। দুই সপ্তাহ পর মেয়েটি আবার অস্থির হয়ে পড়ল। সে বুড়ি মায়ের কাছে গিয়ে বলল, "বুড়ি মা, আমি আর গাছের কোটরে থাকতে পারব না। আমার ভাল লাগে না। সারাদিন শুধু গরম আর গরম। একদম ভাল লাগে না। আমি তোমার কুঁড়েঘরেই থাকব।" বুড়িমা বলল, "ঠিক আছে। পারলে এসো। মনে হয় না তো তুমি পারবে।" কিন্তু মেয়েটি বলল, "না, না, বুড়ি মা। আমি অবশ্যই পারব।" বুড়িমার বাড়িতে দুই মিনিট থাকার পর সে বলল, "বুড়ি মা, বাহ! তোমার ভাগ্যটা আসলেই দারুন। কী সুন্দর শীতল কুঁড়েঘরে তুমি থাক। কী সুন্দর ছায়া! মাটির হলে কি হবে? জানালা তো আছে। বন্ধ করাও যায়, খোলাও যায়। শীত লাগলে বন্ধ করে দেব, গরম লাগলে খুলে দেব। রোদ লাগলেও বন্ধ করে দেব। বাহ! অপূর্ব সিস্টেম। আমাদের রাজপ্রাসাদের এসি রুমের চেয়েও অপূর্ব। খুব সুন্দর।" একটু পর মেয়েটির গরম লাগতে শুরু করল। সে জানালা খুলে দিল, তাও বাতাস আসছে না। তখন বাতাস ছিল না। বুড়ি মাকে বলল, "বুড়ি মা! বলছি কি, আমার খুব গরম লাগছে। জানালা দিয়ে বাতাস আসছে না। এসি চালিয়ে দেবেন?" তখন বুড়ি মা বলল, "তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে? কুড়েঘরে কোনদিন একটা পাখাই পাওয়া যায় না, আর তুমি বলছ এসি?" মেয়েটি বলল, "ঠিক আছে, কিন্তু বাতাস খাওয়ার অন্য কোন ব্যবস্থা কি নেই?" এরপর বুড়ি মা একটা কাগজের টুকরা এনে বলল, "এটা দিয়ে বাতাস কর। দেখবে, এটাতেই তোমার আরাম লাগবে।" মেয়েটি প্রথমে ভাবল, "ইস! পাখাও নয়, একেবারে কাগজের টুকরো। এতে আর কী আরাম লাগবে?" এই বলে সে বাতাস করতে শুরু করল। এরপর সে বলল, "আহ! কী সুন্দর বাতাস! এসি রুমের চেয়েও বেশি বাতাস। সুপার এসি রুমের চেয়েও বেশি বাতাস। এমনকি বরফের দেশের চেয়েও বেশি ঠাণ্ডা। বুড়িমা, তোমার ভাগ্যটা সত্যিই খুব ভাল। ধন্যবাদ।" এরপর থেকে এরকমই চলতে লাগল। মেয়েটি আর জেদ করত না। কারণ, প্রয়োজনের সময় সেই জিনিস তুচ্ছ হলেও তা ভাল লাগে।

Tuesday, July 10, 2018

ছোট্ট শিশুর উপার্জনের বুদ্ধি (Business Idea of a Kid)

এক ছিল এক গরীব পরিবার। এমন গরীব, এক পয়সাও ছিল না। কিচ্ছুই ছিল না। আর পরিবার বলতেও কিছু ছিল না। ছিল শুধু দুই ভাই-বোন। ভাইয়ের নাম নাসির, আর বোনের নাম নাফিসা। তারা তো একদিন একটু খাবার পেলে অর্ধেকের অর্ধেকও খায় না, জমিয়ে রাখে। অন্যদিন খাবার না পেলে সেদিন সেটা খায়। একসময় দেখা গেল, কোন খাবারও পাওয়া যায়নি, জমিয়ে রাখা খাবারও শেষ। তারা অবশ্য কখনো ধার করতো না। কারণ, ধার করলে যদি তা শোধ করতে না পারে, তখন কী হবে? সেই ভয়। একদিন নাফিসার একটা বুদ্ধি এল। সে তার ভাইকে বলল, "শোন, আমার মাথায় একটা বুদ্ধি এসেছে। কিন্তু আমার মনে হয় তুমি এটা করতে চাইবে না। কারণ, এ বুদ্ধিটা হচ্ছে ধার করারই একটা বুদ্ধি, যা আমরা পরে শোধ করতে পারব।" নাসির বলল, "একদম না! কী বলছিস তুই? ধার? একদম ধার করা চলবে না। পরে যদি শোধ করতে না পারি!" বোন বলল, "তুমি সব সময়ই এমন কর। আগে তো শোন ব্যাপারটা। কিভাবে ধার করব আগে না জেনেই এমন বলছ কেন? আমরা একটা গ্লুয়ের মেশিন ধার করব। যাকে ইংরেজিতে বলে Glue Gun। কারণ, সেটা দিয়ে বন্দুকের মতই গ্লু বের হয়। সেটা আমি চাই। রঙিন গ্লু গান। আর একটা পেন্সিল চাই। আর কিছু চাই না। এতেই কাজ হয়ে যাবে।" নাসির বলল, "মানে, এগুলো দিয়ে কি হবে?" নাফিসা বলল, "ও তুমি বুঝবে না। তাও বলি, টেলিফোনের তার যেরকম আঁকাবাঁকা থাকে, সেইরকম করে গ্লু গুলো আমি পেন্সিলের উপর লাগিয়ে দেব। পুরো পেন্সিল এমন করা হয়ে গেলে শুকোতে রেখে দেব। শুকানো হয়ে গেলে পেন্সিলটা গ্লু য়ের ভিতর থেকে টান দেব। দেখব যে, গ্লুটা টেলিফোনের তারের মত হয়ে গেছে। এরপর সেটাকে গোল করে চুরির মতো করে গ্লু দিয়েই লাগিয়ে দেব। এরপর সেটা একটা রাবার ব্যান্ডের মত হবে। এরকম যদি আমরা অনেক বানাই, তাহলে সেগুলো বিক্রি করলে অনেক টাকা হবে। আজকে না খেলেও হবে। আজকে ধার টার করে নিয়ে আসি। কাল থেকে কাজ শুরু করব। আর যে কয়টা বিক্রি হবে, সে কয়টার টাকা দিয়ে খাবার কিনে খাব।" নাসির তাও বেশি কিছু বুঝল না। সে ভাবল, এইটুকু একটা মেয়ের বুদ্ধিতে কী-ই বা হবে? কিন্তু নাফিসার অনেক বুদ্ধি ছিল। পরের দিন নাফিসা খুব সকালে উঠেই একটা দোকানে গেল। আঠার দোকান। এখানে গিয়ে বলল, "ভাই, আমাকে একটা আঠার মেশিন দিন তো! ধার করতে চাই। এক সপ্তাহ পর ঠিক দাম পরিশোধ করে দেব। দুই-তিন দিন দেরি হলে কি খুব বেশি সমস্যা হবে? হবে না তো। তাহলে আমি কি ধার করতে পারি?" দোকানদারটা আবার ভাল ছিল। সে ভাবল, "ছোট্ট একটা গরীব মেয়ে। ধার করে শোধ করতে পারুক বা না পারুক, চেয়েছে যখন, দেই। শোধ করতে চাইলে ভাল, না পারলেও কোন সমস্যা নেই।" এরপর নাফিসা গ্লু গান নিয়ে একটা পেন্সিলের দোকানে গেল। দুই টাকার একটা পেন্সিলও ধার করল। সে ভাবল, "শুধু শোধ না করে পেন্সিলের দামটা তো আমি সুদে-আসলেও পরিশোধ করতে পারতে পারি। তাহলে এবার জিনিসগুলো নিয়ে আমি বাড়ি চলে যাই।" নাসির ওঠার আগেই সে সব কিনে নিয়ে আসল। সে প্রথমে একবার জিনিসটা ট্রাই করল। শুকানোর পর গ্লুটা বের করে দুই কোনা একসাথে আঠালো গ্লু দিয়ে লাগিয়ে দিল। এরপর সে দেখল, সত্যি চুলের রাবারের মত হয়েছে। এরপর সে আরো বানাতে লাগল। নাসির উঠে দেখল, তিনটা বানানো শেষ। সে জিজ্ঞেস করল, "তুই এগুলো কি করছিস? কোন কাজ হলো? এগুলো দিয়ে কি হবে?" নাফিসা বলল, "খাবার যোগাড় হবে। এগুলো বিক্রি করে আমি যা টাকা আয় করব, তা দিয়েই তো কিছু খাবার কেনা যাবে। খাবার না হয় কম দামেই খেলাম, বাকিটুকুর অর্ধেক দিয়ে এগুলোর মূল্য পরিশোধ করা যাবে, আর বাকি অর্ধেক যতটুকু থাকবে তা দিয়ে আবার কাঁচামাল কেনা যাবে।" এই ভেবে সে আরো বানাতে লাগল। বানাতে বানাতে বিকেল হয়ে গেল। তাও মেয়েটি বানানো থামাল না। ভাই তো তাও পাত্তা দিল না। বলল, "এগুলো দিয়ে আর কত টাকাই বা হবে?" কিন্তু আজকাল সবাই ঐ জিনিস পছন্দ করে কেনে। বিকেল পর্যন্ত নাফিসা শুধু এই কাজই করে গেল। ভাই তো বুঝতেই পারছিল না যে, এ দিয়ে আর কী টাকা হবে? নাফিসা বানানো শেষ করে নাসিরকে বলল, "তুমি এগুলো একটু বিক্রি করে আসবে?" নাসির বলল, "আমার আর কাজ নেই নাকি? এটা কোন কাজ হলো? আমি বাবা ওসব বিক্রি করতে পারব না।" নাফিসা ভাবল, "ভাবলাম, ভাইটা বানাতে সহায়তা না করুক, বিক্রিতে অন্তত সহায়তা করবে। কিন্তু তাও তো করল না! আমি ছোট মেয়ে হলেও আমিই বিক্রি করব এইগুলো।" সে একটা ঝুড়িতে করে সব রাবার ব্যান্ড নিয়ে নিউ মার্কেটে  চলে গেল। দেখল, সব রাবার ব্যান্ডের দোকানেই খুব ভিড়। কিছু কিছু মানুষ ভিড়ের ঠেলায় রাবার ব্যান্ড কিনতেই পারছে না। সেও গিয়ে তার পাশে বসল। দুই সেকেন্ড না যেতেই তার দোকানেও হুড়মুড় করে মানুষ বাড়তে লাগল। একজন বলল, "আমাকে দুটো দিন তো।" আরেকজন বলল, "আমাকে তিনটি দিন তো।" আবার বলল, "একটু ছোট সাইজেরটা দেখান তো।" এই করে ভিড় বাড়তে লাগল। সে তো আর ভিড়ই সামলাতে পারছে না। মেয়ে মানুষ, তাও আবার কতটুক! এত ভিড় সামলাবে কি করে? নাসির আবার তাকে খুঁজতে বেরিয়ে গেল। নিউ মার্কেটে গিয়ে দেখল, সব দোকানেই অনেক ভিড়। হঠাৎ সে তার বোনকে দেখতে পেল। সে দৌড়ে তার বোনের কাছে গেল। বলল, "তুই এখানে কি করছিস? ওসব বিক্রি করছিস নাকি? ওসব বিক্রি করে কি হবে?" তখন নাফিসা বলল, "আমার থলেটার দিক তাকাও।" এত টাকা দেখে তার ভাই তো খুব অবাক হয়ে গেল। বলল, "এত ভিড় কিসের? তোর এই রাবার ব্যান্ড কেনার জন্য এত ভিড়? এত টাকা তুই এসব বেচে পেয়েছিস? অসম্ভব!" নাফিসা বলল, "অসম্ভবই যখন, তখন কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাক। দেখবে, ভিড়ের ঠেলায় তুমিই পড়ে যাবে।" একটু পর নাফিসার কথাই সত্যি হতে চলল। সবাই হুড়মুড় করে কিনছে আর কিনছে। "ওটা দিন, এটা দিন।" ভিড় বেড়েই চলেছে। টাকাও বাড়তেই চলেছে। ছোট একটু জিনিস, কেউ দরদামও করছে না। আবার এত ভিড়ের মধ্যে দরদাম করলে নিজেদেরই বিপদ। ভিড়ের ঠেলায় পড়েই যাওয়ার মত অবস্থা। তার ভাই দেখে তো খুব অবাক হয়ে গেল। তারপর সে নাফিসাকে বলল, "তোর বুদ্ধি তো সত্যিই খুব কাজের। তাহলে আমি ভিড় সামলাতে তোকে সাহায্য করি।" এবার ভাইও তার সাথে কাজে লেগে গেল। রাত হয়ে আসল, বিক্রি থামল না। সবাই এসেই চলেছে। কিনেই চলেছে, আর এক সময় দেখা গেল শেষই হয়ে গেল রাবার ব্যান্ড। তাও অনেক লোক নিতে না পেরে আফসোস করতে লাগল। নাফিসা ভাবল, এটা দিয়েই তাহলে আমরা ব্যবসা করব। এই থেকে শুরু হলো নাফিসা আর নাসিরের ব্যবসা। টাকা দিয়ে তারা ভাল ভাল খাবার খায়, দামও দিয়ে দিল। তার সাথে কাঁচামালও কিনতে লাগল, আবার একটা নতুন বাড়িও বানিয়ে ফেলল। ধীরে ধীরে ব্যবসা বাড়তে থাকল। একটা বড় রাবার ব্যান্ডের দোকানও বানানো হলো। আর এবার যেন তেন দোকান নয়, একেবারে দামি দামি শপিং মলের ভিতরে দোকান। সেখানে আরো ভিড়। এই করে করে তাদের জীবন চলতে লগাল। এক পর্যায়ে এসে তারা রাবার ব্যান্ডের ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে পোশাকের ব্যবসা শুরু করে দিল। তারা সুন্দর সুন্দর জামা কিনে এনে কোনটা কম সুন্দর হলে তা এডিটও করত। এভাবে তাদের ব্যবসা উঠতে উঠতে একেবারে সোনার ব্যবসায় চলে গেল। শেষ পর্যায়ে এসে তারা হীরার ব্যবসা করতে শুরু করল। এরপর থেকে তাদের তো আর সুখের শেষ নেই। তবে আমার গল্পের শেষ আছে। আর তা এখানে।

শিক্ষা: ছোট বলে কাউকে অবজ্ঞা করতে নেই।

Sunday, July 1, 2018

সরলতার বিড়ম্বনা

এক ছিল একটি বাড়ি। সেই বাড়িতে একটি ছোট মেয়ে ছিল। ছোট বলতে দশ বছর বয়স। মেয়েটির নাম আয়েশা। কিন্তু সে ঐ ফ্যামিলির কেউ ছিল না। সেই বাড়িতে আবার একটি দয়ালু মহিলাও ছিল। কিন্তু এখন আর নেই। সে গরীব মেয়েটিকে দেখে বাড়িতে নিয়ে আসল। দয়ালু মহিলা ঐ ফ্যামিলির মেইন যে তার খুবই ভাল বন্ধু ছিল। সে ঐ মেয়েটিকে বাড়িতে নিয়ে এসেছিল, কিন্তু বাড়ির মালিক তাতে খুব বেশী খুশী ছিল না। কিন্তু ঐ মহিলা তার এত প্রিয় বন্ধু ছিল যে, সে তার কথা ফেলতে পারত না। আর তার কাজও নষ্ট করে দিতে পারত না। কিন্তু সেই মহিলা চলে যাওয়াতে মেয়েটিকে বাড়ি থেকে বের করে দিতে না পারলেও তাকে কাজের মেয়ের মতই রাখতে শুরু করল বাড়ির মালিক। একদিন বাড়িতে অনেক মেহমান আসল। বাড়ির মালিক আয়েশাকে হুকুম করল, "যাও, তিনজন মেহমান আসছে। তিনটা ডিম রান্না কর। তার সাথে দু'জন ছোট ছোট ছেলে-মেয়েও আসছে। তাদের জন্যও দুটো ডিম রান্না কর। আর তুমি আমার জন্যও কিন্তু রান্না করবে। আর বাড়ির বাকি সদস্যদের জন্যও তুমিই রান্না করবে। এইটুকু হেল্প যদি না কর, তাহলে আর শুধু শুধু বসে বসে খেতে দেব কেন? তার সাথে পোলাওটাও তুমিই করো। আর যদি কেউ পোলাও না খায়, তাহলে তুমি ভাত রান্না করবে। আর যদি কারো ভাতেও সমস্যা থাকে, তাহলে তুমিই তাদের জন্য রুটি বানিয়ে দেবে। আর তখনকার জন্য না ফেলে রেখে এখনি কাজগুলো করে ফেল। আর কারো যদি ডিমে সমস্যা থাকে, সেজন্য একটু রোস্টও করে দাও। মেয়ে হলে কি হবে? তোমাকেই বাজার করে আনতে হবে। যাও, অনেকগুলো ডিম কিনে নিয়ে আস, আর মুরগীও কিনে নিয়ে আস। মসলাপাতি কিছু কম পড়লে সেটাও তুমি কিনে এনো, তবে টাকা আমার কাছ থেকে নিও। টাকা যেমন লাগবে, তা আমি দেব। কিন্তু কাজ কিন্তু সব তোমাকেই করতে হবে। তারা যদি বাইরের জামাকাপড় পরে থাকতে অস্বস্তি বোধ করে, সেজন্য তুমিই তাদের জন্য ঘরের পোশাক কিনে আনবে। তাদের জন্য জুতোও নিয়ে আসবে। যদিও তারা এক বেলা খেয়েই চলে যাবে। এরপর তাদের জন্য ফলমূল এনে সালাদটাও তুমিই করে দিও। আর তার সাথে কেউ যদি এমন তেল-টেল সব খাবার না খেতে চায়, সেজন্য তেল ছাড়া সবজিটাও তুমিই রান্না করো। সামান্য এটুকু হেল্প তো তোমাকেই করতে হবে। আর সব কাজ কিন্তু দশ মিনিটের মধ্যে হওয়া চাই।
মেয়েটি তো শুনতে শুনতেই কাহিল হয়ে গেল, করবে কখন? সে বলল, "দশ মিনিটে এ কাজ আল্লাহ ছাড়া আর কেউ করতেই পারবে না। অন্তত আধা ঘন্টা তো দিন। আমি ঠিক সব করে নেব।" মেয়েটি মনে মনে ভাবল, "এ কী? ডিমের বেলায় তো সবার কথাই তো বলল। আমার কথাই তো বলল না। অথচ আমিই রান্না করব। আমার মাইন্ড করার কোন দরকার নেই। আমাকে কাজ করতে দেওয়া হয়েছে, আমি করি।" এরপর মেয়েটি একে একে কাজ করা শুরু করল। ৩০ মিনিটের বদলে ৩২ মিনিট লেগেছে বলে মালিক খুব রেগে গেল। মেয়েটিকে বলল, "এই আয়েশা! তোমার আক্কেলটা কি? মেহমান আসবে দুপুরে। তুমি দুই দুইটা মিনিট নষ্ট করলে? এত দেরি কর কেন কাজ করতে? দুই দুইটা মিনিট, কম কথা?" এরপর মেয়েটি বলল, "মেহমানরা তো এখনই এসে পড়বে। জামাগুলো কেমন হয়েছে, সেটা আপনি দেখুন। আমার পছন্দ তো আপনার পছন্দ নাও হতে পারে।" মহিলাটির আবার গাঢ় নীল খুবই পছন্দ ছিল। সে সবগুলো জামা গাঢ় নীল আনতে বলেছিল। একটা জামা একটু কম গাঢ় হবার কারণে মেয়েটিকে তাও কথা শুনালো। মেয়েটি তাও কিছু মনে করল না। মেহমান আসার পর সে কাপড়-চোপড়গুলো মেহমানদেরকে দিল। এরপর খাবার পরিবেশন করতে শুরু করল। কিন্তু মালিক তাকে বাধা দিল। "তুমি পরিবেশন করো না। আমরা কাকে কি দেব, সেটা তোমার ঠিক করার কথা নয়, তুমি বুঝবে না।" মেয়েটি মনে মনে বলল, "এত কিছুই যখন বুঝলাম, এটুকু আর বুঝব না? তাও যখন তার ইচ্ছা হচ্ছে, তখন সেই পরিবেশন করুক।" এই ভেবে মেয়েটি নিজের জায়গায় অর্থাৎ ছোট পাটিতে বসে পড়ল। সেই সবার প্লেট ধুয়ে টুয়ে গ্লাস ধুয়ে টুয়ে পানি পরিবেশন করেছিল। আর খাবারটুকু ঘরের মালিকই পরিবেশন করছিল। ঘরের মালিক বলল, "এই আয়শা, কিছু বোঝ না নাকি? আমি হলাম বাড়ির মালিক। তুমি নিজের খাবারটুকু নিলে না? ভাবো কি নিজেকে? আমি তোমার খাবারটাও কি বেড়ে দেব নাকি? তুমি এসে নিয়ে যাও। তবে আমিই বেড়ে দিচ্ছি, তুমি প্লেটটা নিয়ে এসো।" মেয়েটি বলল, "তার আবার কি দরকার?" মালিক রাগ হয়ে বলল, "আমার ইচ্ছে হয়েছে, তাই। তোমার খুব বেশি সমস্যা? আমার কথা অমান্য করছ কেন? প্লেটটা আগাও, ব্যস!" মেয়েটি প্লেট এগিয়ে দিল। আর মেয়েটিকে দেয়া হলো আধা চামচ ভাত। ভাত কিন্তু, পোলাও বা ভাতের সমস্যা হলে রুটি নয়। ভাত, তাও আবার আধা চামচ। আর এটুকু দিয়েই সে বলল, "তোমাকে তো খাবার দেয়া হয়ে গেছে। যাও, জায়গায় গিয়ে বস। আচ্ছা ঠিক আছে, যদি শুধু ভাত খেতে এতটাই সমস্যা হয়, তাহলে এক চা চামচ সবজি নাও।" এরপরও মেয়েটি মুখ বুজে এক চামচ সবজি নিয়েই জায়গায় গিয়ে বসল। অথচ সব খাবারই সে রান্না করেছে, সব কাজই সে করেছে। শুধু পরিবেশনটুকু মালিক করেছে। সবার পাতে সবার পছন্দমতো জিনিস দেওয়া হলো। মাংস দেওয়া হলো, যাদের মাংসে সমস্যা সবজি দেওয়া হলো, তার সাথে ডিম দেওয়া হলো। কিন্তু আয়েশা আবার ডিম খেতে এতটাই ভালোবাসতো যে, সে নিজের জন্য ভুলে একটা ডিম বেশি রেঁধে ফেলেছে। একটা ডিম বেশি দেখে মালিক একবার আয়েশার দিকে তাকালো, আবার চোখ সরিয়ে ওটা কেটে সবার জন্য আলাদা আলাদা ভাগ করে সবাইকে দিয়ে দিল। অথচ রান্নাই করেছে যে, তাকেই দেওয়া হলো না। এরপর সবাই খাওয়া-দাওয়া শেষ করল। এরপর সবাই আবার ম্যাংগো জুস খেতে চাইল। কিন্তু তখন তো আমের সিজনই ছিল না। ছো্ট্ট ছেলেটি বলল, "বাবা! আমি ম্যাংগো জুস খেতে চাই।" তার সাথে যে মেয়েটি এসেছিল, সেও ঐ একই বায়না জুড়ে দিল। তাদের থেকে শুনে বড়রাও ভাবল, ইস! কতদিন আমের কিছু খাই না। তারাও আবার ঐ জেদই শুরু করল। এখন মালিক কি করবে বুঝতেই পারছ। সে আবার আয়েশাকে বলল, "যাও না, গিয়ে একটু জুস কিনে নিয়ে এসো। এখন অরিজিনাল পাবে না সিওর, তাও কিনে নিয়ে এসো। এবার তুমি নিজের জন্যেও আনতে পার (অরিজিনাল নেই দেখে, কারণ আমের সিজন নয়)।" তখন আয়েশা আবার হালকা চালাকি করে বলল, "তার কোন প্রয়োজন নেই। আমি আপনাদের জন্যই এনে দিচ্ছি।"- এই বলে আয়েশা জুসটাও কিনে এনে দিল। অথচ ভাল ভাল জিনিসের বেলায় আয়েশাকে কিছুই দেয়া হলো না। সহজ-সরল হওয়া ভালো হলেও জীবনে অনেক অসুবিধা আসে।