Friday, July 13, 2018

রাজকন্যার সুমতি

এক ছিল এক রাজার প্রাসাদ। সেই প্রাসাদে রাজা, রানী ও রাজকন্যা থাকত। একসময় ঝড়ে উড়িয়ে নিয়ে গেল তাদের প্রাসাদ। শুধু মানুষগুলোই রয়ে গেল। কারণ, মানুষগুলো জানালা দিয়ে আকাশটা দেখছিল এত মেঘলা হয়ে উঠেছে কেন। তাদের জানালা আবার নিচু ছিল। তাই যেই তারা ঝড়ের আভাস দেখছিল, অমনি জানালা দিয়ে লাফ দিল। মা-বাবা আবার স্বার্থপর ছিল। বিপদে পড়লে রাজা-রাণী সত্যিই খুব স্বার্থপর ছিল। তারা বাচ্চাকে ফেলে রেখে দৌড়ে পালিয়ে গেল। এখন রাজকন্যা তো একা। তবে রাজকন্যারও আবার বদভ্যাস ছিল। যা চাইত, তাই পেত। তাই সে জেদীও ছিল। যা চাবে, তা তো চাবেই। নাহলে আর কিছুই করবে না। খাবে না, ঘুমোবে না ইত্যাদি। আর দুষ্টুমি করবে। তখন সবাই জেদ পূরণ করতে বাধ্য হয়ে যাবে। এ সময়ও সে জেদ করতে শুরু করল। ঝড় থামার পর তাও মা-বাবা ভয়ে আর ফিরে এল না। অন্য কোথাও আশ্রয় নিল। রাজকন্যা দৌড়ে এদিক ওদিক কোন আশ্রয়ের খোঁজ করতে শুরু করল। সে এক বৃদ্ধ মহিলার বাড়িতে গিয়ে পৌঁছল। তবে সেই বৃদ্ধ মহিলা খুবই গরীব। সে গিয়ে বৃদ্ধ মহিলার দরজায় গিয়ে বলল, "বুড়ি মা! দরজাটা একটু খুলুন তো।" বৃদ্ধ মহিলা বলল, "কে তুমি? কি চাই?" এরপর মেয়েটি বলল, "আশ্রয় ও খাবার চাই একটু। দেয়া যাবে? আশ্রয় না হয় নাই দিলেন, একটু খাবার কি দেবেন? কারণ, আমি কুঁড়েঘরে থাকতে অভ্যস্ত নই। তাই আমি এখানে থাকতে পারব না। এর থেকে মাঝে মাঝে যেই অ্যাডভেঞ্চার করি, সেগুলোর মতই গাছের কোটরে থাকব। এখানে একটা অ্যাডভেঞ্চারের মত একটা ভাব আসে, কিন্তু কুঁড়েঘরে থাকলে সবসময়ই গরীব গরীব লাগে।" বৃদ্ধ মহিলাটি ভাবল, রাজপরিবারের মেয়েই হবে, আমি নিশ্চিত। নইলে কুঁড়েঘরে থাকার কথা উঠত না। কিন্তু যদি কুঁড়েঘরে না থাকতে পারে, তাহলে খাবার কি করে খাবে? বৃদ্ধ মহিলা দরজা খুলে বলল, "দাঁড়াও, আমার কাছে যা আছে, সেই সব খাবারই তোমাকে দেব। সবটুকুই দেব। তুমি খেলে খাও।" বৃদ্ধ মহিলা একটু তেনানো মুড়ি আর ক'টা বাসি ভাত এনে দিল। বলল, "আমার কাছে এই ছিল। খাবে নাকি? দেখে তো মনে হচ্ছে না, তুমি এগুলো খেতে পারবে। খাবে? খাও তো দেখি।" মেয়েটি বলল, "একদম নয়, এগুলো কি? পচা মুড়ি, পচা ভাত, এগুলো মানুষে খায়? এমনিতেই আমি মুড়ি আর ভাত পছন্দ করি না। তাও আবার বাসি? ছি-ছি-ছি! জীবনেও খাব না।" বুড়ি বলল, "তুমি যদি এটা না খাও, তোমার জীবন কি থাকবে? জীবনে আর খাবে কিভাবে?" তখন মেয়েটি বলল, "দরকার নেই। আমি উপোষ করেই থাকব, আর গাছের কোটরেই থাকব।" এই বলে মেয়েটি গাছের কোটরেই থাকতে শুরু করল। এরপর পরের দিন সে আবার বুড়ির কাছে এসে বলল, "বুড়ি মা, কিছু খাবার দেবে?" একই খাবার বুড়ি নিয়ে আসল। মেয়েটি নাক ঘুঁচিয়ে আবার কোটরে ফিরে গেল। দুই দিন এমন হওয়ার পর তৃতীয় দিন মেয়েটি গেল। গিয়ে কাতর কণ্ঠে বলল, "বুড়ি মা, কিছু খাবার দেবে?" বুড়ি বলল, "এই নাও। সেই তিন দিন আগের একই বাসি ভাত আর মুড়ি। তুমি কি এগুলো খাবে? খাওয়ার তো প্রয়োজন নেই। প্রশ্নই ওঠে না, তুমি নাকি এগুলো জীবনেও খাবে না। তাহলে আমি দরজাটা আটকে দেই, আর তুমি ঐ দু'দিনের মত একই কাজ কর।" মেয়েটি বলল, "না, না। আমি এগুলোই খাব। এইটাই আমি খাব। নাহলে তো আমি মরেই যাব।" এই বলে মেয়েটি মুখ বুজে ঐ খাবারই খেয়ে নিল। আর সেই খাবারই সে খেয়ে বলল, "কী মজা! কতদিন পর অনেক মজার খাবার খেলাম। বুড়ি মা, তুমি গরীব হলেও তোমার ভাগ্যটা খুবই ভাল, তুমি কী সুন্দর সুন্দর মজার খাবার খেতে পার। এইবার আমাকে একটু পানি দাও দেখি। রোদের খুব তাপ।" তখন বুড়ি মা নদীর পানি এনে দিল। এটা দেখে মেয়েটি বলল, "এটা কি ফুটানো? না না, ফুটানো হলেও হবে না। এটা কি ফিল্টার করা তো?" বুড়ি বলল, "গরীব মানুষ কি আর ফিল্টার করা পানি খেতে পারে? নদীর পানি খেয়েই জীবন কাটাই। তাই আমার কাছে যা ছিল, তাই দিয়েছি। খেতে হলে খাও, নাহলে যাও।" মেয়েটি নাক ঘুঁচিয়ে আবার চলে গেল। কিন্তু দু'তিন ঘন্টা পর আবার ফিরে এল। বলল, "বুড়ি মা, যাই হোক, তোমার ঐ পানিই আমাকে দাও।" তখন বুড়ি ঐ নদীর পানিই এনে দিল। আর সেটাই সে আপন মনে ঢক ঢক করে খেয়ে ফেলল। বলল, "বুড়ি মা, সত্যিই তোমার ভাগ্যটা ভাল। এমন মজার পানিও তুমি খাও। বাহ! অপূর্ব!" এরপর মেয়েটি আবার গাছের কোটরে গিয়ে ঢুকল। দুই সপ্তাহ পর মেয়েটি আবার অস্থির হয়ে পড়ল। সে বুড়ি মায়ের কাছে গিয়ে বলল, "বুড়ি মা, আমি আর গাছের কোটরে থাকতে পারব না। আমার ভাল লাগে না। সারাদিন শুধু গরম আর গরম। একদম ভাল লাগে না। আমি তোমার কুঁড়েঘরেই থাকব।" বুড়িমা বলল, "ঠিক আছে। পারলে এসো। মনে হয় না তো তুমি পারবে।" কিন্তু মেয়েটি বলল, "না, না, বুড়ি মা। আমি অবশ্যই পারব।" বুড়িমার বাড়িতে দুই মিনিট থাকার পর সে বলল, "বুড়ি মা, বাহ! তোমার ভাগ্যটা আসলেই দারুন। কী সুন্দর শীতল কুঁড়েঘরে তুমি থাক। কী সুন্দর ছায়া! মাটির হলে কি হবে? জানালা তো আছে। বন্ধ করাও যায়, খোলাও যায়। শীত লাগলে বন্ধ করে দেব, গরম লাগলে খুলে দেব। রোদ লাগলেও বন্ধ করে দেব। বাহ! অপূর্ব সিস্টেম। আমাদের রাজপ্রাসাদের এসি রুমের চেয়েও অপূর্ব। খুব সুন্দর।" একটু পর মেয়েটির গরম লাগতে শুরু করল। সে জানালা খুলে দিল, তাও বাতাস আসছে না। তখন বাতাস ছিল না। বুড়ি মাকে বলল, "বুড়ি মা! বলছি কি, আমার খুব গরম লাগছে। জানালা দিয়ে বাতাস আসছে না। এসি চালিয়ে দেবেন?" তখন বুড়ি মা বলল, "তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে? কুড়েঘরে কোনদিন একটা পাখাই পাওয়া যায় না, আর তুমি বলছ এসি?" মেয়েটি বলল, "ঠিক আছে, কিন্তু বাতাস খাওয়ার অন্য কোন ব্যবস্থা কি নেই?" এরপর বুড়ি মা একটা কাগজের টুকরা এনে বলল, "এটা দিয়ে বাতাস কর। দেখবে, এটাতেই তোমার আরাম লাগবে।" মেয়েটি প্রথমে ভাবল, "ইস! পাখাও নয়, একেবারে কাগজের টুকরো। এতে আর কী আরাম লাগবে?" এই বলে সে বাতাস করতে শুরু করল। এরপর সে বলল, "আহ! কী সুন্দর বাতাস! এসি রুমের চেয়েও বেশি বাতাস। সুপার এসি রুমের চেয়েও বেশি বাতাস। এমনকি বরফের দেশের চেয়েও বেশি ঠাণ্ডা। বুড়িমা, তোমার ভাগ্যটা সত্যিই খুব ভাল। ধন্যবাদ।" এরপর থেকে এরকমই চলতে লাগল। মেয়েটি আর জেদ করত না। কারণ, প্রয়োজনের সময় সেই জিনিস তুচ্ছ হলেও তা ভাল লাগে।

No comments:

Post a Comment