Saturday, May 30, 2015

রাজপ্রাসাদ

এক ছিল রাজপ্রাসাদ। রাজা, রাণী, মন্ত্রী, সেনাপতি, প্রহরীরা আর সব প্রজারা আর রাজকন্যা ও রাজপুত্র সেই রাজপ্রাসাদে থাকত। সেই পরিবারে অনেক ঝামেলা ছিল। একটু সুযোগ পেলেও তারা ঝামেলা বন্ধ করতে পারত না। সুযোগ পেলেও না। সেই রাজপুত্র ও রাজকন্যা মিলে একদিন বুদ্ধি করল, শিশুপার্ক তো বহু দূরে। একদম ঢাকার ইউনিভার্সিটির দিকে। আমরা তো আছি দক্ষিণ ফুলার রোডে। তাই তারা বুদ্ধি করল, নিজেরা নিজেরা স্প্রিং বানাবে। অনেক লাঠি নিয়ে এল রাজপুত্র। রাজকন্যা অনেক বড় একটা কাপড় সেলাই করে আনল। রুমালের মত অনেক বড়। চারকোনায় চারটা লাঠি দিলে আর মাঝখানে কাপড় ঝুলিয়ে দিল। কাপড় তো আর এমনি এমনি ঝোলানো যাবে না। তাই তার নিচে কিছু একটা জিনিস নিয়ে দিল। রাজকন্যা দড়ি নিয়ে এল। রাজপুত্র মায়ের কাছ থেকে দড়ি বাধা শিখে এল। দড়ি দিয়ে বাঁধল। তারপর ছোট ছোট টুল একটার উপর আরেকটা দিয়ে দিয়ে সিঁড়ির মত বানালো। সেই স্প্রিংয়ের লাফানোর জন্য যে তারা বানিয়েছে, সেটাই কেউ জানত না। সবাই এটাও জানে না, স্প্রিং কোথা থেকে এল এবং এটা  যে রাজপুত্র ও রাজকন্যা বানিয়েছে। একদিন রাজা ও রানী রাজকন্যাকে বলে, আমার প্রশ্নের একটা উত্তর তুমি দিতে পারবে? তুমি তো খুব বুদ্ধিমতী। "হ্যাঁ, কেন পারব না? বল কি।" "আচ্ছা, তুই বলতে পারিস যে, স্প্রিং কোথা থেকে এসেছিল আর কেই বা বানিয়েছিল।" "আরে, সেটাই তো তোমাকে বলা হয়নি মা। তুমি এটা যে আমার কাছে প্রশ্ন করছ। সেটার উত্তরটি হল, এগুলো আমরা লাঠি নিয়ে এসেছিলাম। আমরা কাপড় নিয়ে বানিয়েছিলাম। রাজপুত্র মিলে। রাজপুত্র তোমার কাছে দড়ি বাঁধা শিখতে চেয়েছিল কেন, এটা তাহলে বুঝলে?" "ও, আমার সোনা! তুই তো দেখছি এত কিছু বানাতে পারিস। আমার প্রশ্নের কত উত্তর দিয়ে দিতে পারিস তুই। এবার রাজপুত্রকে একটা প্রশ্ন করব। রাজপুত্র তো খুব বুদ্ধিমান ছেলে। সেও তো তোর মত খুবই বুদ্ধিমান। আমি ডেকে আনছি রাজপুত্রকে। রাজপুত্র তো অনেক ভাল। তোকে আমি আইসক্রিম দেব, আর রাজপুত্রকে খেলনা কিনে দেব। বল কিনে দেব। কিনে দেব হল বল আর পুতুল। আর তোকে তো চকলেট কিনে দেব। রাজপুত্র তো ভাল, তাই তাকে একটা প্রশ্ন তো করা দরকার প্রমাণ করার জন্য। এখন আমি যাই, তুই এবার তোর কাজ করতে যা।" বলে রানী রাজপত্রকে ডেকে বলল, "এই যে, বলতো দেখি বাবা, উত্তর দিতে পারবে তো?" "কিসের উত্তর দিতে হবে বল।" "আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে তোকে, বাবা।" "পারব না কেন? আমি তো নিশ্চয়ই পারব। বল, কিসের উত্তর দিতে হবে?" "আচ্ছা, তুই কি বলতে পারিস যে, ঘর বাড়িতে যত গাছপালা থাকে, আমাদের ঘরের পাশে, সেই গাছে যেই গাছগুলোতে ফল হয় না সেই গাছগুলো দেখিয়ে দিতে পারবি? এই উত্তরটা তো তোকে দিতে হবেই।" "এটা তো অনেক সহজ প্রশ্ন, মা। আমি এক্ষুণি দেখিয়ে দিচ্ছি। চল আমার সাথে।" বলে সে দেখিয়ে দিল, "ঐ গাছটা, মা। ঠিক আছে?" "ওরে বাবা! আচ্ছা, তুই তো দেখি অনেক পারিস। তবে আরেকটা দেখাতে পারিস?" "পারব না কেন? আমি তোমায় তিনটা গাছ দেখাব।" "ওরে সোনা! তুই তিনটা গাছ দেখাতে পারবি? কত ভাল তুই! রাজকন্যা অনেক ভাল। তুইও অনেক ভাল। কি সুন্দর স্প্রিং বানিয়েছিস তোরা দুজনে মিলে। এখন বাকি দু'টা দেখা তো দেখি।" এই বলে মা দেখাতে বলল। রাজপুত্র বলে, "মা! চল আমার সঙ্গে। ঐ গাছটা দেখ, আর ঐ গাছটার দিকেও তাকাও। কোন ফল আছে?" "না তো। তুই কত বুদ্ধিমান! যা, এবার তোর কাজে যা। এবার তোরা তো বেশি কাঠাল খেতে পছন্দ করিস। দেখি, তুই আর তোর বোন রাজকন্যা আমাকে কতটা ভালবাসিস। আমার কাজের জন্য কতটা কষ্ট করে আমি আগে পরীক্ষা করি। তাহলে বুঝব, তোরা দুজনই খুব বুদ্ধিমতী আর বুদ্ধিমান। তুই তো অনেকগুলো দেখিয়েছিস, এবার তাহলে রাজকন্যাকেও আরো দুটো প্রশ্ন করি।" বলে রাজকন্যার কাছে গিয়ে বলল, "আরো দুটো ছোট প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে? বল তো দেখি, সাদা ফুলের সুবাস বেশি, নাকি লাল ফুলের সুবাস বেশি।" এই প্রশ্নের উত্তর দিল হল, "সাদা ফুলের।" মা ভাবল, এত ছোট মেয়ে কি করে বুঝল এসব। "আচ্ছা, তাহলে এর পরের প্রশ্নটার উত্তর দে দেখি। তুই কি জানিস, এই বল রাজপুত্রের জন্য যে এনেছি, সেটা কি ভাল হল নাকি হল না।" বলল, "এটা কেন হতে যাবে ভাল না? ভালই তো। রাজপুত্রকে দিয়েছ ভাল না? খারাপ হতে যাবে কিজন্য?" "এখন তোমার উপর আমি পরীক্ষা নেব, তুই আমাকে কতটা ভালবাসিস এবং আমার কথামত কতটা কষ্ট করে কাজ করিস।" রাজপুত্রকেও এ পরীক্ষা দিতে হচ্ছে। তোরা তো কাঠাল পছন্দ করিস না। খেতে তোদের খারাপ লাগে। তাই এখন আমি একটা কাঠাল এনে দিচ্ছি, সেটা খাও। তখন রাজপুত্র ও রাজকন্যা খেতে পারল। মা বলে, "এই তো, কত ভাল! এবার আরেকটা পরীক্ষা। দুই নম্বর পরীক্ষা। তিন নম্বর পরীক্ষাটা পারা দরকার। না পারলে কিন্তু কিছু হবে না।" এখন তুই বাগান থেকে ফুল এনে তো তোরা মালা গাঁথতে পারিস না। মালা গেথে দেখা। তখনও তারা মালা গাঁথতে পারল। "এ বাবা, কি সুন্দর পারে। স্প্রিং যখন বানিয়েছিস, এই উত্তর দিতে পারলে সেই স্প্রিংয়ে লাফাতে পারবি।" এখন বলে, "এই তিন নম্বর পরীক্ষাটা অনেক কঠিন। বলতে পার? ঘোড়ার যে কয়টা পা থাকে, পায়ের একটু ক্ষুর থাকে, সেই ক্ষুরটা ছাগলেরও থাকে। এটার সত্য মিথ্যা বলতে পার? একবারের বেশি বলা যাবে না। একবার না বুঝতে পারলে হবে না। তোরা তো অনেক কঠিন কথা বড় বাক্য একসাথে বলতে পারিস না। এটা অনেক বড় বাক্য। বলতে পার?" বলল, "এটা সত্য।" "ওরে, তিন নম্বরটা তো পেরেই গেছিস। এখন স্প্রিংয়ে ওঠ। আর এখন আমি তোদের বাবাকে আনছি। আমি লাল রঙের লাইট, বাবা নীল রঙের লাইট স্প্রিংয়ের মধ্যে নাড়াতে থাকবে, দাড়াবে বাইরে, কিন্তু লাইটটা পড়বে ঐ স্প্রিংয়ের মধ্যে। আর আমি সেই একই ভাবে লাইট স্প্রিংয়ের মধ্যে ফেলব। আর নাড়াতে থাকব লাইট। লাইট যেদিকে যাবে, সেদিকে তোরা যাবি। রাজপুত্র যাবে নীল লাইটের সাথে, আর রাজকন্যা যাবে লাল লাইটের সাথে। লাফিয়ে লাফিয়ে নাচতে হবে। প্রহরীদেরকে আসতে বলব। লাইট বন্ধ করে দেবে। প্রহরীরা ক্যামেরা নিয়ে আসবে। ফিট করবে টিভিওয়ালারা। তারপর টিভিতে রাজ্যের রাজপুত্র ও রাজকন্যার নাচ দেখাবে। এবার সেই স্প্রিংয়ের চারপাশ দিয়ে প্রহরীরা এল। বাবা-বা লাল লাইট নীল লাইট নিয়ে এল। রাজকন্যা ও রাজপুত্র উঠে গেল স্প্রিংয়ে। রাজকন্যা গেল লাল লাইটের দিকে, আর রাজপুত্র গেল নীল লাইটের দিকে। আর মন্ত্রী আর সেনাপতি মিলে ক্যাসেটে গান বাজিয়ে দিল, মিউজিক দিল। একটাতে মিউজিক, আরেকটাতে গান। গানের তালে তালে ওরা লাইট ই করতে থাকল। আর রাজকন্যারা লাইট দেখে নাচল। আর মন্ত্রী আর সেনাপতি তাল দিতে লাগল। রাজা বলে, "এই, তোরা তাল দিস কেন? তোদেরটা ক্যামেরায় উঠলে তো হবে না। তাও আবার স্প্রিংয়ের একদম কাছে। আমরা রাজা-রানী, আমাদেরকেই তো তুলতে দিচ্ছি না। শুধুই নাচের দিকটা ক্যামেরায় রেকর্ড হচ্ছে। আমরা যে লাইট মারছি, এটা তো আর ক্যামেরায় পড়ছে না। তোরা এসে এখানে তাল দিস না। সেনাপতি আর মন্ত্রিী এসে তাল দিতে বসেছে। দেখ, কেমন লাগে!" সেটা টিভিতে দেখে মানুষ হাসতে লাগল। "কী সুন্দর নাচতে পারে। আর রাজামশাইর কাছে যখন সেনাপতি আর মন্ত্রীর কাণ্ডটা দেখল, তখন সবাই অনেক হাসাহাসি করল।

Thursday, May 28, 2015

সোনার ঘর

এক ছিল এক রাজা। রাজার বাড়ির দু'পাশে দুটি ঘর। একটি হল তাঁবু। আরেকটি ছিল সোনার ঘর। মন্ত্রী ছিল খুব লোভী। চাইত মহারাজকে বেশি ভালটা দিতে। সে চাইত যে, তাঁবুটাকে সরিয়ে সোনাটাকেই শুধু পাশে রাখবে। কিন্তু না। কিভাবে হল জান? একদিন রাজা কাপড় নিয়ে রানীদেরকে বাচ্চাকে পড়ানোর জন্য দিতে যাচ্ছিল। এমন সময় মন্ত্রী এসে বলল, "রাজা মশাই! কাপড়? আপনিই আজকে আবার প্রতিদিনের মত বাচ্চার জন্য আপনিই কাপড় নিয়ে যাচ্ছেন? রানীদের কাছে দেবেন কি করে? রানী তো বাগানের মধ্যে গাছের ফল খাওয়ার জন্য নিয়ে আসতে গেছে। আর বাচ্চা তো বাগানের মধ্যে প্রজাপতি দেখে খেলতে গেছে। কাপড় না পরে কততো বরফ পড়ছিল। সোয়েটার গা দিতে হয়। কিন্তু সে তার গেঞ্জি পরেই গিয়েছিল।" মন্ত্রীর কথা শুনে তো রাজা ভয়ে ঘাবড়িয়ে গেলেন। বললেন, "মন্ত্রী, এ কি বলছ তুমি! তুই বলছিস টা কি? আমার মেয়ে গেঞ্জি পরে বাহিরে গেছে? সকালেই তো বরফ পড়েছিল। বরফ গলে গিয়েছিল। তাতে সেটা অনেক ঠাণ্ডা পানি ছিল। তার উপর দিয়ে খালি পায়ে গেলে তো সর্বনাশ! শত্রুরা বাচ্চার চিতকার শুনেই তো ভাববে যে, ও একা। ভেবেই তো ওরা ওকে নিয়ে যাবে। তাড়াতাড়ি ওকে উদ্ধার করে নিয়ে এসো। দেখ, বাগানের কোথায় গেছে। আরেকটা সোয়েটার নিয়ে যেও। পেলে ওকে পরিয়ে দিও।" বাচ্চাটা ভারি বুদ্ধিমান ছিল। তাই সে স্যান্ডেল পরেই গিয়েছিল। রাজপ্রাসাদে সবাই রাজার কথা শুনে আর মন্ত্রীর কথা শুনে জলদি করে সকলে মিলে গেল। আর ওদিকে রাজা তো একা হয়ে পড়ছিলেন। আর পিছন দিক দিয়ে আসছিল শত্রুরা। রাজামশাই নিজে মরতে ভয় পেত না। কিন্তু তার বাচ্চাকে নিয়েই তার মহাচিন্তা। এমন সময় শত্রুদের কথা আগে যুদ্ধ হয়েছিল যে, সেই কথা তার মনে হল। তখন যে সে আমার দু' রাণী ছিল, এক রাণীকে হত্যা করেছিল। তা থেকেই আমার এক রাণী। এখন তার মনে বড় ভয় হল। আর শত্রুরা আসছে পায়ের শব্দ শুনেই রাজামশাই ভয়ে চিন্তায় পড়ল। এখনই যদি বাচ্চা এখানে এসে পড়ে কাজের লোকদের সাথে, তবে তো তারা আমাকে পরে নিয়ে আগে আমার বাচ্চাটাকেই হত্যা করে ফেলবে। এখন কি করি! এই ভেবে তো রাজা বড় চিন্তায় পড়ে আছে। এবার শত্রুদেরকে ভয় দেখানোর জন্য রাজা খেলনা সাপ জানালার বাইরে এরকম একটু বের করে সাপের মত ছি ছি করে আওয়াজ করল, আর শত্রুরা তো সাপের ভয়ে পালিয়ে গেল। তারপরই এল তার ছোট্ট বাচ্চা। বাচ্চাটাকে পেয়ে তো খুশী হলেন এবং কোলে নিলেন। কিন্তু বাচ্চাটা খুশী ছিল না। বাচ্চাটা বলছিল, "মা, মা, মা!" তার মা তো ছিল বাগানের মধ্যে গাছের ফল ছিঁড়তে। ফল ছিড়ে ফিরে আসছে না দেখে সে কান্না শুরু করে দিল। রাজ্যের সবাই বলে, "তোমার মা এসে পড়বেই। তোমার মা তো এসে পড়বে। তুমি তো রাজকন্যা। রাজকন্যারা অমনভাবে কাঁদলে কি হয়? আধা বয়সের বাচ্চারা না কাদে, তোমার তো আধা বছর পার হয়েছে, দেড় বছর তো হয়েছে। এক হলে না এক কথা, তাও আবার দেড় বছর হয়ে গেছে। তুমি এমন কাঁদলে হবে?" আর ওগুলো বলতে বলতেই মা ফলের ঝুড়িতে ফল নিয়ে এসে পড়ল। রাজার কোল থেকে বাচ্চা নেমে এসে মায়ের কোলে এসে পড়ল। আর মাও খুশী হয়ে বলল, "এত ভালবাসা লাগবে না। শেষে এত ভালবাসা দিতে দিতে দেখবি নিজেই বিপদে পড়ে গিয়েছিস। এই দেখ, কত রকমের ফল এনেছি। এনেছি আম, আর এনেছি আপেল, আর কমলা। তোর তো একদম পছন্দের ফল এগুলো। খাবি না? তাড়াতাড়ি চল বেসিনে হাত ধুতে।" বাচ্চাকে নিয়ে হাত ধুইয়ে নিয়ে এল, ছোলা ছিলিয়ে দিল মা। বাচ্চাটি খেতে লাগল। এই ঘটনা নিয়ে নিয়েই মন্ত্রীর ভাবনা গেল সোনার ঘর। সেই সোনার ঘরে থাকার লোভ আর মেটাতে পারছিল না। সেই ঘরটা ছিল গরীবদের জন্য, তবুও সে ভোর বেলা কোথায় গেল জান? সেই সোনার ঘরে। কিছুক্ষণ থাকার পর তার সাধ মিটছিল না। সাধ মেটাতে গিয়ে মন্ত্রী একটা খবর দেওয়ার কথা ছিল, সরাই খানায় খাবার দেওয়া এবং সেখানে লোক আসবে- এই লোক আসার কথাটি রাজাকে দেয়া আর খাবার দিতে হবে এই কথাটা দেয়া; কিন্তু তার সাধ মেটাতে গিয়ে সেগুলো আর বলা হলো না, লোক এসে বসে থাকল। কিন্তু কোন কোন খাবার পাচ্ছিল না খাওয়ার জন্য। প্রহরীরা খবর দিতে এল, তবু মন্ত্রী এল না। একদিন এক গরীব লোক এল, তাকে ঐ সোনার ঘরে থাকতে দিল। কিন্তু সে গিয়ে দেখে মন্ত্রী মশাই বসে আছে। "মন্ত্রী মশাই! আপনি এখানে কি করছেন?" "আমি মানে, আমি মানে, আমি.. এখানে একটু রাজা মশাই বলেছিল যে, পরিষ্কার করে রাখতে, এখানে লোক আসছে, তাই এখানে বসে একটু পরিস্কার করছিলাম।" "ঠিক আছে, আর দরকার নেই, আমাকে থাকতে দিয়েছি। এখন আমি ঢুকি?" "উঠাবে না কেন, ঢোক"- এই বলে সে আবার রাজপ্রাসাদে গেল। রাজা মন্ত্রীকে দেখে বলল, "মন্ত্রী! তুমি এতক্ষণ কোথায় ছিলে?" মন্ত্রী বলে, "এই মানে, আমি একটু ছোট বাচ্চার কাপড় পরিস্কার করে এলাম।" তখন রাজা বলে, "এখন দেখি তো, কেমন পরিস্কার করেছ?" তখন বলে, "আমি নিজেই ভুলে গিয়েছি, কোথায় রেখেছি। একটু খুঁজে আনি। খুঁজে আনতে একটু সময় লাগবে।"- এই বলে সে কাপড় ধুতে গেল। ধরা না খাওয়ার জন্য এমন করল। রাজা মশাই ভাল ছিলেন। মন্ত্রী যদি বলত যে, সোনার ঘরে একটু থাকি, তাহলে রাজা মশাই থাকতে দিত। কিন্তু সেই লোভ গোপনে গোপনে করছিল। মন্ত্রী এবার কাপড় খোঁজার নাম দিয়ে বাসায় গেল এবং ধুয়ে টুয়ে নিয়ে এল। সোনার ঘরে আবার গেল। তারপর গরীব লোকটি গোসলের জন্য পুকুরের পাড়ে গেল। আর অমনি সোনার ঘরে ঢুকে পড়ল। তখন আবার লোকটি এসে বলে, "আবার কি করছ মন্ত্রী?" বলে, "রাজা আমায় প্রতিদিনের কাজ/দায়িত্ব দিয়েছে এই ঘর পরিস্কার করার। আপনি চলে গেলে আর ঘর পরিস্কার করব না।" বলে, "ঠিক আছে, এখন যাও।"- বলে সে সোনার ঘরে ঢুকল। আর ওদিকে তাঁবুর কথা তো বলাই হচ্ছে না। ওদিকে তাঁবুতে এক ধনী জ্ঞানী মানুষ রাজাকে দাওয়াত দিতে এসেছিল। বলে, "কবে দাওয়াত দিবে?" বলে, "আর বইলেন না, এই তো। ৫ দিন পরে। এই বিয়ের কার্ডটা দেখুন। বুঝতে পারবেন সব। নাখালপাড়ার কুলফি গার্ডেন সেন্টারেই বিয়েটা হচ্ছে। আর সেই বিয়েতেই আপনার দাওয়াত।" এখন বলে, "ঠিক আছে, তবে তুমি তাঁবুতে থাক।" আর মন্ত্রী এমন করে করেই সোনার ঘরে থাকছে। কিন্তু সাধ মিটছিল না। কারণ, খুব কম সময়।

Wednesday, May 20, 2015

মুনতারার বই

একদিন একটি মেয়ে নাম মুনতারা, সে তার ছোট বোন আলিয়াকে নিয়ে বাইরে ঘুরতে যাচ্ছিল। সিঁড়ি দিয়ে যাচ্ছিল এক মুরুব্বী মানুষ। তাকে জিজ্ঞেস করে, "আচ্ছা, আন্টি! আপনি কি জানেন, ঐ যে একটা ছোট্ট মেয়ে ব্যান্ড পড়া ঝুটিওয়ালা, হাতে নখ বড় বড়, হাতে মেহেন্দি পড়া, হাতে চুড়ি পড়ে বাইরে খেলে সেই মেয়েটির নাম কি?" "কোন্‌ মেয়ে? প্রতিদিন যে লাল কাপড় পড়ে আসে সেই মেয়েটি?" "হ্যা, সেই মেয়েটি।" "ওর নাম কি, ও তোমার কি হয় বন্ধু?" "হ্যা, বন্ধু। কিন্তু নিজের নামটাই বলে দিতে পারে না।" "সেটাই তুমি জান না? তার নাম রূপালী। কিন্তু তুমি জানতে চাচ্ছ কেন, কি কারণে?" সে কি আর গোপন কথা বলা যাবে? "কেন, গোপন কথা আমাকে বল। আমি সবচেয়ে বেশি মুরুব্বী এই ৫ তলার। তোমরা দোতলায় থাক। আমার সাথে যখন দেখা হল, বল।" "না, না না না। গোপন কথা আমি কাউকে কখখোনো বলবো না। এটা মায়ের গোপন কথা।" "মায়ের কোন্‌ গোপন কথা? মায়ের কথা মা এটা গোপন রাখতে বলেছে, নাকি মায়ের বিরুদ্ধে কথা?" "কেন, এটা জেনে তোমার লাভ কি?" "না, না, না। কিন্তু আমার যে জানা দরকারি। তুমি বল, গোপন কথাটা তো আর জানতে চাইনি।" "আচ্ছা, এটা না জানলে তুমি আমার কাছ থেকে জেনে নিতে পার। কিন্তু তুমি আগে তোমার  আগে তুমি বল, তুমি কোথায় যাচ্ছ? এটা যদি না বলতে পার, তবে আমি কি করে বলব মায়ের গোপন কথা?" "ঠিক আছে, আমার জানার দরকার নেই। তোমরা যাও। তবু আমি আমার গোপন কথা তোমাকে বলব না। আমারও একটা তোমার মত গোপন কথা আছে। সেটা আমার বাবার কথা। তোমার যেরকম মায়ের কথা, এটা আমার বাবা সবাইকে বলতে নিষেধ করেছে। তুমি যাও। এখন আর এরকম করে লাভ নেই।" এখন দু'জন দুজনের পথে চলে গেল। বলতে বলতে সিড়ি শেষ হয়ে গেল, তারা নিচে নেমে গেল। রূপালীকে দেখে বলে, "রূপালী, রূপালী, তুমি সেদিন তোমার নাম বলরিন কেন?" "নাম তো বলিনি, কিন্তু তোমি না বলা অবস্থাতেই জানলে কেমনে, আমার নাম রুপালী?" "সেটা তোমার জেনে লাভ কি? বল, তোমার বাসা কোনটা?" "ওমা, আমাকে দেখনি বুঝি কোন বাড়িতে যেতে? আজকে রাতেই আমি আমার বাড়িতে যাব।" আসলে আসল কথাটা কি আর বোঝ? দেখ এবার রূপালী কি করে। রূপালী তাকে ধোকা দিতে চেয়েছিল। অন্য বাড়িতে ঢোকার ভান করতে চেয়েছিল। সে এবার অন্য বাড়িতেই ঢুকতে যাবে। তার আগে দেখ খেলার খবরটা কি? খেলতে খেলতে একটা খেলনা সাপ ব্যাটারী দিয়ে চলে আকাবাকা আকাবাকা করে ডোরাকাটা রং মাখা। সেটা এক মেয়ে কিনেছিল। সেটা চালাতে চালাতে সেটা খেলার মাঠে এসে পড়ল। সিড়ি দিয়ে চালাতে চালাতে। সেটার রিমোট ছিল সেই মেয়েটির হাতে। এখন অলিয়া, রূপালী আর মুনতারা সেই সাপটি দেখে ভয় পেল। কিন্তু অলিয়া তো বেশি ছোট। তাই সে বেশি ভয় পেল। কিন্তু এবার দেখ। সে একটুও ভয় পায়নি। তা দেখে তো রূপালী অবাকের মাথায় কি বলে। রূপালী বলে, "এই মেয়ে এরকম ভয় পেল কি করে। আমরা তো ভয়ে ঘাবড়িয়ে যাচ্ছি।" একদিন মুনতারা বই পড়ছে। জাতীয় পতাকা উড়ছে। পড়ছিল যে, জাতীয় পতাকার রং লাল ও সবুজ, হাতলের রং হলুদ। আর পড়ছিল, জাতীয় ফুল শাপলা। এই অনুচ্ছেদগুলো পড়ছিল। অলিয়া তো এসে বলে, তুমি কি পড়ছ? আমি নাসরারীতে পড়ি, আর তুমি ওয়ানে পড়। এখন আমার বই কোথায়? আর তার সেই খেলার পর কোন্‌ বাসায় গেল সেটা তো  তোমরা আগে থেকেই জান। এখন ছোট বোন বলে, আমার বই কোথায়, আমার বই কোথায়? তখন মা এসে বলল, "চুপ কর তো, অলিয়া। তোমার বোন বই পড়ছে। কেন ডিস্টার্ব খরছ? এদিকে আস। নয়তো বকা দেব। আস।" "কেন মা, আমি আমা রবই নিয়ে পড়ব। আমার বই দাও। আমি এখন বাক্য লিখতে পারি না তো কি? আমি এখন শব্দ লেখা শিখেছি তো। এখন আমার খাতাটা দাও। হোম ওয়ার্কটা করব। আমি পড়ব বোনের সাথে। আমি মুনতারার সাথে পড়ব।" "না, না। এদিকে এসো।" বলে মা জোর করে নিয়ে গেল। মুনতারা বলল, "না, মা। ও যখন পড়তে চাচ্ছে, ওর হোমওয়ার্ক খাতাটা দিয়ে ওকে শান্ত কর না। তুমি যদি ওকে শান্ত না কর হোম ওয়ার্ক খাতা না দিলে, আমি অনুচ্ছেদও পড়ব কি করে?" "না না না, ওকে আমি শান্ত করব। কিন্তু বই-খাতা দিয়ে নয়। গল্প শুনিয়ে, ছড়া শুনিয়ে।" "আস, অলিয়া। মুনতারা, তুমি অনুচ্ছেদ পড়। এই অলিয়া, ডিস্টার্ব করো না, আস।" অলিয়াকে আবার জোর করে টেনে নিয়ে গেল। বলেঃ এক দেশে ছিল একটা সিংহ। একটা মানুষ সিংহের কাছে গেল। মানুষটা বলে, আমি তোমাকে মারব। ধরে একেবারে মারব। সিংহটা বলে, "জানিস আমি কে? আমি এই বনের রাজা। সব কথা আমার কথা শুনবে। আর না হলে আমিই তোর ঘাড় মটকাব। আমি তোর মাংস খাব।" বাঘ এসে বলে, না না সিংহ। ওকে মেরো না। ঐ নদীর কাছে গিয়ে পানি খেতে বল। পানি খেলেই ও চলে যাবে। সিংহ বলে, "না বন্ধু। ও আমাকে কি বলে জান? ও আমাকে বলে নাকি আমাকে মারবে।" "কেন, ওকে ছেড়ে দাও।"- বাঘ বলে। আর সেই একটু গল্প শুনাতে শুনাতেও বাচ্চাটার কান্না থামল না। সিংহ বলল, "না বন্ধু, তুমি জান না, তোমাকে যদি বলা হতো যে, আমি তোমায় মারব, তবে কি তোমার ভাল লাগত, যদি আমি বলতাম ওকে ছেড়ে দাও? সেরকম ওকে ছেড়ে দিতে বলো না আমাকে।" এবার সিংহ বলল, "কি, বাঘ মামা? তোমাকে যদি একথা বলা হতো তোমার তো খারাপ লাগতো তাই না?" এখন বাঘ বলে, "শোন বন্ধু! ওকে ছেড়ে দাও। যা বলেছি তাই কর।" এমন সময় সিংহ মাথা খারাপ করে তাকে সত্যি সত্যি ছেড়ে দিল। বাঘ বলে, "আমি তো শুধু মশকরা করতেছিলাম। সত্যি সত্যি ছাড়তে বলেছি নাকি?" বলে, "চুপ কর বাঘ! তুমি তো বললে, ছেড়ে দিতে। এখন কেন আবার আমাকে বলছ, ছেড়ে দিয়েছ কেন।" এখন সিংহ আরেকটি মানুষকে ধরে তার দলে নিল। বলল, "তুমি বাঘ মশাইর কাছে গিয়ে বলবে, আমি তোমায় মেরে ফেলব।" মানুষটা ভেবেছিল আগে সিংহের কথামত কাজ করে তারপর সিংহটাকে মারব। এখন সেই লোকটিকে পাঠালো বাঘের কাছে। লোকটি বলল, "কি বাঘ মশাই! তোমাকে আমি মেরে ফেলব।" তখন বাঘটি বলে, "এততো বড় সাহস! আমি কে জানিস? আমি হলাম এই বনের রাজার বন্ধু।" এখন সিংহ এসে বলল, "ওকে তুমি মেরো না। তুমি ওকে ছেড়ে দাও। ও নদীর জলে গিয়ে পানি খাক।" এখন বাঘ বলে, "না না না না, ওকে  ছাড়াই যাবে না।" এখন বাঘ সিংহের মত মাথা খারাপ করে সিংহের মতনই সত্যি সত্যি ছেড়ে দিল না। ভাবল, আমি যখন সিংহের সাথে মশকরা করেছিলাম, ও নিশ্চয়ই মশকরা করছে। সিংহও বুঝে গেল, মশকরা করছি বলে ভাবছে বুঝি বাঘ। সিংহ বলল, "আমি মোটেও মশকরা করিনি। আমি একটা হরিণ এনেছিলাম। হরিণটা তোমাকে খেতে দেব না, তোমাকে ফেলে রেখে খাব। তখন বুঝবে মজা। বনের রাজার বন্ধু বনের রাজাকে কি করে বকা দেয়। বনের রাজা তো সিংহ। বনের রাজার শাস্তি না মানলে কেমন হয়।" হরিণের মাংস সে একাই খেল। তারপর বাঘকে বলল, "ভালই তো মশকরা করছি না বলে বলেছিলাম। এখন তোমারই দোষ। তুমিই খেতে পারছ না। এখন বোঝ।"
এই গল্পটা শুনে অলিয়া কান্না থামাল। তারপর অলিয়া কান্না থামাল দেখে মা বলল, এই তো কি সুন্দর কান্না থামাতে পারে। কান্না যখন থামিয়েছ, তুমি মুনতারার সাথে পড়। কিন্তু মুনতারার কাছে গিয়ে নয়। হোমওয়ার্ক খাতা এখানে নিয়ে এসে তারপর লেখ। অনুচ্ছেদ তো পড়ার পর দুজনেই খেলতে চাইল। হোমওয়ার্ক করা বাদ দিয়ে অলিয়া মুনতারার সাথে খেলতে গেল। যাওয়ার আগেই মা বলল, "এই মুনতারার সাথে খেলতে যাচ্ছ কেন? বলেছিলে না, হোমওয়ার্ক পুরোটা শেষ কর। কেবলমাত্র শুরু করেছ হোমওয়ার্ক করা।" অলিয়া বলল, "না, হোমওয়ার্ক করব না।" "এত কষ্ট করে গল্প শোনালাম, আর তুমি যে এখন লেখাপড়া করবেই না।" এখন জোর করে মুনতারাকে লুকাতে বলল। অনেক ভাল একটা জায়গায় লুকাতে বলল মুনতারাকে। মুনতারা লুকিয়ে গেল সোফার নিচে। তাও আবার পায়ের উপর, মুখের উপর, গায়ের উপর কাল কাপড় দিয়ে। আর তখনই অলিয়া মুনতারা বলে ডাকে। খাটের তলায় খোজে, লুকানোর জায়গায় খোজে। দরজার কোনায় খোজে। টেবিলের নিচে খোজে। রান্না ঘরে খোজে, বারান্দায় খোজে। পর্দার নিচে খোজে, কোনাকুনিতে খোজে৭। পায় না অলিয়া। মুনতারা লুকিয়েই থাকে। এখন মুনতারাকে না নিয়ে মুনতারার শব্দ না শুনে মুনতারাকে না পেয়ে অলিয়া মুনতারার কথাই ভুলে যায়। তখন আবার সে হোমওয়ার্ক করতে বসে। এমন সময় রুপালী এসে হাজির। বলে, "মুনতারা! চিতকার করে ওঠে। অলিয়া, মুনতারা কোথায়? ও মুনতারা, তুমি কোথায়?" এখন মুনতারাও কানের উপর যে দিয়েছে কাপড়, তাতে আর অলিয়ার কোন সাড়া শব্দ শুনতে পায়নি। তাই মুনতারা আবার বের হয়ে আসল। এসে নাচতে নাচতে মায়ের ঘরে এসে দেখে, রূপালি ও অলিয়া বসে আছে। মুনতারাকে পেয়ে দুজনেই ছুটল। অলিয়ার হোমওয়ার্ক করা দুটো রয়ে গেল। দুটো হোমওয়ার্ক করেই দিয়েছিল দৌড় অলিয়া। তারপর অলিয়া, রুপালী, মুনতারা তিনজন একসাথে হয়ে বসল। আবার কলিং বেল দিয়ে দেখে, ফুপাতো ভাই এসে গেছে। এখন চার জন একসাতে হল। তারা হল- তামীম, মুনতারা, অলিয়া ও রুপালী। চারজন হয়েছে। একটু পর দরজায় কে যেন টাকাচ্ছিল। এসে দেখে, তার চাচাতো বোন এসে গেছে। এখন দেখ, পাঁচজন হয়েছে। মাইশা, তামীম, মুনতারা, অলিয়া ও রুপালী। এরকম করতে করতে ছয়জন হয়ে েগছ। তখন তারা একসাথে খেলল। রুপালীও চলে গেল। মুনতারা আবার কি করতে যেন গেল। তখন অলিয়া হোমওয়ার্ক করে আবার আসল। তখন ওরা মাত্র দুজন আবার হয়ে গেলো। 

Monday, May 18, 2015

বোকা লোকের ভালো দাঁত

এক ছিল এক লোক। লোকটির বড়ই শখ ছিল অনেক সুন্দর দাঁত নিজের মুখে আনার। তাহলে ও বেশি সুন্দর মেয়েকে এবং ভাল মেয়েকে বিয়ে করতে পারবে। আর তার দাঁত মাজতে মোটেই পছন্দ না। রাত্রেবেলা ঘুমের চোখ নিয়ে দাঁত মেজে তারপর ঘুমোতে যেতে হয়। আর সে লোকটি বড্ড বোকা ছিল। তার যে অনেক আগে দাঁত পড়েছে এটা তার মনেই নেই। আর তার বয়স কত বেশি। এত কয় বছরের কথা মনে থাকে বল? ৮/৯/৭ এই বছরগুলোতে না দাঁত পড়েছে। সেই কথা কি আর মনে থাকে বল? তার বয়স কত হয়েছে? তাই সে আর মনে ছিল না। সে ভাবল, আচ্ছা, দাঁত না মেজে যদি এটা পরিস্কার রাখতে চাই, তবে এই দাঁতগুলো ফেলে দেই, তবে আরো নতুন সুন্দর দাঁত গজাবে। আর বড্ড বোকা ছিল। আর তার এতটুকুও মাথায় ছিল না যে, নতুন দাঁত গজালেও সেটাও মাজতে হবে। আর তার একটা খরগোশ বন্ধু ছিল। খরগোশ বন্ধু তাকে অনেকবার বোকা বুদ্ধি সরিয়ে ভাল বুদ্ধি কিছু শেখাতে চেয়েছিল কিন্তু সে শোনে না। সে শুধু নিজের ইচ্ছামত কাজ করত। তাই খরগোশ বন্ধু রাগ করে তাকে আর কোনদিনই বুদ্ধি দেয় না। সমস্যায় পড়লেও দেয় না। এখন সে তো দাঁত না নড়তে নতুন দাঁত, তবুও সে আরেকটা নতুন দাঁত গজাবে- সেটা সে চায়। এখন সে দাঁত নাড়াতে শুরু করে। একদিন ওদিকের দাঁত, আরেকদিন ওপাশের দাঁত, আরেকদিন এপাশের দাঁত নাড়ায়। দাঁত পড়ার পর আর কোন নতুন দাঁত গজায় না। তারপর একদিন তার খরগোশ বন্ধুটির কাছে গিয়ে বলল, "বাড়িতে আছ? নতুন দাঁত গজিয়ে দাও না।" এমন সময় খরগোশ বেরিয়ে এসে বলে, "তুমি তো আমার একটুও বুদ্ধির কথা শুনছিলে না। এখন দেখ কি হল।" লোকটি বলে, "আমি তোমায় পারলে ৭০টা গাজর মূলা দিতে পারি, আর অনেক ধরনের সবজি দিতে পারি, তুমি নতুন দাঁত গজিয়ে দাও।" "না, না, না। আমি গজিয়ে দিতে পারব না। আমার আগে আমার বোধশক্তি, কথা, বুদ্ধির কথা তুমি জেনে নিলে ভাল হতো। আর নাহলে তোমার এ অবস্থা হতো না। তুমি কেন আমার কথা শুনছিলে না? এখন দেখ, তুমি আমাকে যতই সবজি, গাজর এগুলো দাও না কেন, আমি পারব না। পারলে তুমি নকল দাঁত লাগিয়ে নাও। নকল দাঁত লাগালে দাঁত অনেক ময়লা হয়ে থাকবে। তোমার আগের দাঁত না মাজলেও যতটুকু ময়লা থাকত তার থেকেও অনেক বেশি ময়লা থাকবে। আর দাঁত বেশি মাজতে গেলে নকল দাঁতও পড়ে যেতে পারে। তুমি কেন আমার কথা শুনলে না? বোঝ এবার ঠেলা। তুমি যাও।" এখন সে কি আর করে। দাঁত ময়লা করে, আর একদম অনেক একটি খারাপ বউকে বিয়ে করে। চোর বউ। চুরি করে। একদিন সে লোকটি তো দাঁত সুন্দর নেই। তাই সে ঘরে অনেক পয়সা ছিল, পয়সা দিয়ে নকল সোনা বানিয়ে রাখল। আর সেই নকল সোনা দেখে সবাই মনে করবে যে, আসল সোনা। ভেবে তারা তাকে ঐ সোনা দেখে তাকে বুদ্ধিমান বলবে। আর সেই নকল সোনায় হলুদ রং একটু গাঢ় হালকা বেড়ে কমে গেল। সোনার রং যেটুকু হল সেটুকু হলুদ পেল না। সোনালী রঙের টা পেল না। এমনি কমে-বেড়ে গেল হলুদ রং। অতএব মানুষেরা বলে, "ছি ছি ছি। লজ্জা শরম কিচ্ছু নেই। নকল সোনা বানিয়ে ঘরে রাখে। আবার দাঁত নোংরা করে বসে আছে। এ তো দেখি পরিস্কার খাবারও খায় না, নাকি? এ মনে হচ্ছে একদম ভুতুড়ে কালো কাকের মাংস কাঁচা খায়। তাও আবার রান্না না করে।" এরকম বলে মানুষেরা তো লজ্জায় মরে, "ছি! আমরা একে কতো দেখেছি। এনার সাথে অনেক বন্ধু হয়েছিলাম। সে দাঁত মাজতে কষ্ট হতো, তাই আমরা তাকে ব্রাশ কিনে দিয়েছিলাম। অনেক উপহার দিয়েছিলাম। এখন তো দেখছি, এর কি হল।" এই বলে তো লজ্জায় মরে, আর সেই বেটা তো সবার থেকে, যেরকম লেংটু হলে যেরকম লজ্জা লাগে, তার থেকেও অনেক বেশি লজ্জায় মরে। আর একদিন সে একটা আসল সোনার গলার হার কিনল। আর পায়ের নুপুর। আর একটি রুপোর কানের দুল আর রুপোর হাতের চুরি। সেগুলো সে মেয়ে সাজবে বলে ভাবল। মেয়ে সেজে থাকবে আর মানুষেরা ভাববে, সেই লোকটি নিশ্চয়ই লজ্জায় বিদেশে চলে গেছে। আর ভাববে, নিশ্চয়ই এমন কোন বিদেশে গেছে জায়গা নেই। আর এই মেয়েটি বিদেশ থেকে এসেছে। এটা ভাববে, তাই এগুলো কিনে রেখেছে। আর এই ফাকে বউটা তো চোর ছিল, সেই গয়না সব চুরি করে নিল। আর সেই লোকটির একটি দাঁত ঢাকার কাপড়ও চুরি করে নিল। সেইগুলো নিয়ে সেগুলো অনেক পরিস্কার করে সেই গয়নাগুলো নিজের গায়ে দিল আর সেই কাপড় অনেক ঘষে ঘষে বেশি পরিস্কার করে সেইগুলো দিয়ে নিজের গা মুছল। সেই লোকটি এখন তো মাথা খারাপ! বলে, "হায় হায় রে, কেন যে খরগোশের কথা শুনলাম না রে? খরগোশ উপায় বলে দিল না কেন? আমি তো তাকে অনেক সবজি আর গাজর আর মূলা দিতাম। ইস, কেন যে শুনিনি!" এখন সেই লোকটি যেই জিনিস কিনে ঐ দাঁতের আটকানোর চেষ্টা করে, সেই সব জিনিসই ঐ বউ চুরি করে পরিস্কার করে রাখে নিজের ব্যবহারের জন্য। আর ঐ খরগোশ বলে, "ব্যাটা আমার কথা শোনেনি, এখন বোঝে ঠেলা।" এখন ঐ লোকটি ঘরে লুকোতেও পারে না। বেশি মোটা। লুকোলেও দেখা যায়। এখন কী আর করে? খরগোশের কাছে গিয়ে মাফ চায়। খরগোশ রোজ রাতে ঘুমায়। আর লোকটা তখন টেবিলে অনেক রকমের সবজি রেখে যায়। তারপরও খামাখা তার সবজি নষ্ট হয়, কিন্তু তার সুন্দর দাঁত কোনদিনও আসে না।

শিক্ষা: বেশি ভাল করতে গেলে এই লোকটির মতই অবস্থা হয়। অর্থাত, বেশি খারাপ হয়ে যায়।

Sunday, May 3, 2015

সেই ভালো মেয়ে

আমাদের ঢাকা শহর থেকে অনেক দূরে একটি জেলা। সেই জেলার সবচেয়ে কিনারে উত্তর দিকটায় সব ঘরের থেকে একটু ছোট ঘর। সেই ঘরে একটি মেয়ে থাকত। পরিবারে যারা যারা আছে তারা হল মা, বাবা, মেয়ে, ভাই, দাদা, দাদী ও এক কাজের মহিলা; কিন্তু সে পরিবারে বাস করে না। তার আগে যা আছে তারাই শুধু বাস করে। একদিন কাজের মহিলা শসা কাটতে গিয়ে শসা কাটতে কাটতে ভাল শসাটুকু ময়লার ভাণ্ডে রেখে দিল। সকলে মিলে কাজের মহিলাকে বলে, "কিগো! ছোলা কুড়ালে শসার মধ্যে এতটুকু কেন কাটা? তুমি নিজেই খেয়েছ নাকি?" "না, না। আমি খাব কেন আপনাদের খাবার? যা হয়েছে হয়েছে। আপনি আমাকে অন্য কাজের দায়িত্ব দিন। যা কেটেছি তা খান। আমি খাব কেন আপনাদের খাবারটা?" "কি গো মেয়ে, খাসনি তো? আমরা কিন্তু বুদ্ধি বের করে প্রমাণ একটা করবই। আসলে ঘটনাটা কি হয়েছে। আচ্ছা, আমরা কিছু বলব নাতো। ফ্রিজ থেকে এই শসাটুকু নিজে খাও না। অন্য শসা বের করে আমাদেরকে দাও। কারণটা তো আমাদেরকে বলবে।" তখন কাজের মহিলা বলে, "আপনারা রাগ করবেন না তো? খাবারের প্রতি মায়া রাখতে গিয়ে আমাকে ধ্বংস করবেন না তো? ঐ খাবারের মায়া রাখলে হবে না। আমি কারণটা বলতে পারছি না। নিজেই ভুলে গিয়েছি। এখন আমি আপনাদের কথামত এই শসা খাব, আপনাদের অন্য শসা দেব। তবু কারণ আমি কোনদিনও বলব না।" "কিন্তু কেন, শসী (মহিলাটির নাম)! তুমি আরেকটু চুপ কর। কেন তুমি বলছ না? বললে কিছু হবে না, তুমি বল।" "আচ্ছা আমি বলব, কিন্তু যে কাজ করেছি ভুলই করেছি। ভুলের জন্য কোন সাজা দিতে দেবেন না তো? এটা আমি নিজের ভুল নিজেই মেনে নিচ্ছি, এটা ভুল। তবুও আমি বলব না। আমি শুধু এতটুকু বলব যে, আমার কাজটা খুব ভুলে হয়েছে। আমি তবু আসল কথাটা খুলে বলব না।" "কেন, শসী! একটাও কথা বলবি না। এখন আমার কথামত কাজ কর দেখি। কাজ করলে তোকে সব দিনের খাবারের থেকে একটু বেশি দেব। তাড়াতাড়ি আমার কথামত কাজ করে আন। আর আমাদের শসা ছিলিয়ে দেবার পর তেলের শিশুগলো আর ঐ মধুর শিশিগুলো ধুয়ে বাইরে শুকো দিয়ে আসবি। এখন যা, ফ্রিস থেকে শেসা বের কর।"- এই বলে গেল ঘরের মালিক। "ঠিক আছে, আমি যাই"- বলে সে রওয়ানা দিল। ফ্রিজের কাছে গিয়ে বের করে ভাবল, ইস! বেচে গিয়েছি। আরেকটু হলে আমাকে ধরত। আমাকে একেবারে ঝগড়া করে আমার থেকে কারণটা কেড়ে নিত (বের করে আনত)। কারণ কেড়ে নিয়ে কারণের কথা বুঝে কি যে করত আমি জানি না। ভাগ্যিস, বেচে গিয়েছি। এখন শসা বের করে কেটে নেই।"- বলে সে শসা কেটে নিল। কেটে তেলের শিশি আর মধুর শিশি সাবান দিয়ে কাচতে গেল। ধুয়ে মেজে পরিস্কার করে সেগুলো শুকোতে বাইরে দিয়ে এল। নতুন পাটির উপর করে। যেতে যেতে একজন নতুন মানুষের সাথে দেখা  হল কাজের মহিলার। সে বলল, "কি গো! কাউকেই তো চিনতে পারছি না তোমাদের। আমিও তো সবাইকে চিনি, তোমায় চিনতে পারছি না।" কাজের মহিলা বলচে এগুলো। কিন্তু আগের বাক্যটি বলেনি। এই বার সেই ছোট্ট মেয়ের কাহিনী শুরু হল। ছোট্ট মেয়েটির কাহিনী হল- সেই মেয়েটি খুব ভাল ছিল। তবুও সে ছোট। তার বয়স চার বছর। সে নিজে বিল্ডিং থেকে ওঠানামা করত। বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে বন্ধুর বাড়ির বিছানায় শুতো, বন্ধুর বাড়িতে ঢুকে খেলত, মাঠে এসে খেলত, কিন্তু সে একা একা। বের হয়ে কোন বন্ধুই দেখা করত না, সে সোজহা বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে দেখা করত। খুব সাহস, খুব বুদ্ধিমান, কুকুর দেখলে হাত নিচে ছোয়। প্রতিদিন একটা লাঠি পকেটে করে নিয়ে আসে। হাসনাহেনার পাশ দিয়ে রাত্রেবেলা ঘরে যায় তো, তাই। আর সে এটুকুও জানে যে, তিনবার চলে যেতে বলতে হয় সাপকে মারার সময়। মেয়েটির এত বুদ্ধি কেউই  জানত না। সেই মেয়ের মাত্র চার বছর। কি করে এত কিছু জানে? এগুলো কি সম্ভব হয়? সব ছেলেপেলেরা দুষ্টু। এমনকি একদিন নাচতে নাচতে ঘুরতে গেল। সেদিন সেই মেয়েটি লাঠি নিতে যে ভুলে গেল। সেদিন হাসনাহেনা ফুলের একটু ঘ্রাণ নাকে গিয়েই মনে পড়ল, লাঠি কোথায়। সে আবার দৌড়ে তাড়াহুড়ো করে লাঠি নিয়ে এল। লাঠি নিয়ে সে মারামারি বিদ্যালয়ে পড়ে। আবার এমনি লেখাপড়ার বিদ্যালয়ে পড়ে। সে বিদ্যালয় তার কাছে খুব ভাল লাগত। এমনকি সে সাপ মারাও  জানত। মেয়েটির এত বুদ্ধি। তবুও কত ছোট মেয়ে বল দেখি চার বছরের মেয়ের এরকম বুদ্ধি হয় না। এখন তবে মেয়েটির আসল গল্পটা শুরু করি। সেই মেয়ের কথা জান তো? মেয়েটি কোরআন  শরীফ পারে ভাল, আল্লাহর কথা পারে ভাল, নবীর কথা জানে ভাল। কোন কাজকর্মে সাহায্য করে, সেটাও জানে সে। কিভাবে কি করতে হবে, সব জানে। সেই মেয়েটির বছর কত চার বয়স। মেয়েটি লাঠি নিয়ে এসে দেখল, "হায়! আমার কষ্ট করে উপরে যাওয়াটাই ফাও (বৃথা) গেল। কোন একটা সাপের বিষও তো দেখছি না। যাই, বন্ধু অপেক্ষা করছে। লঠি পকেটে ভরে যাই।" এ বলে সে গেল। বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে দেখে, বন্ধু ঘুমুচ্ছে। সে এটাও জানত, ঘুমের মানুষকে ডাকা উচিত নয়। সে তার মাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করল, "আচ্ছা, সে কি গভীর ঘুমে?" "তুমি কে? তুমি আমার মেয়ের কথা কি করে জানলে?" "আমি তোমার মেয়ের বন্ধু। এমনি তো তুমি জান না, কিভাবে বন্ধুদের পরিচয় জানে। এমনিতেই তুমি পরিচয় জান না। তাই তুমি আমায় চিনতে পারছ না। আমার নাম পলাশী।" "আচ্ছা পলাশী, তুমি কোন ক্লাসে পড়? মানে কোন শ্রেণীতে?" "আমি পড়ি ক্লাস প্লেতে। এই তো প্লের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ। দু'দিন পর নার্সারীতে উঠব।" "ও, তার মানে তুমি নার্সারীতে পড়ছ?" "হ্যা, তবে নার্সারীর ক্লাস করছি না। এমনিতে আমাকে ছুটি দিয়েছে আট দিন। এখন ঘুমের কথা বল, সে কি গভীর ঘুমে?" "না, না, না। বেশি গভীর ঘুমে নয়।" "কেন, সে অসুস্থ কি নয়? সে ভাল? তাকে কি ডাকা যাবে?" "ও, ডাকা তো যেতে পারে, কিন্তু ১৫ সেকেন্ড অপেক্ষা কর। তাতে যেই মিনিট হয়, সেই মিনিটই তুমি অপেক্ষা করো, কিন্তু তুমি এখন এলে কিভাবে? আমাদের বাসা চেন? আমি বিকালেও ঘুমিয়ে থাকি।" "সেই তো, সেজন্যই তো তুমি আমাকে দেখ না। আমি বিকালে এসে আমার বন্ধুকে নিয়ে যাই। আর তুমি দেখ, তোমার মেয়ে আফসানা বাড়িতে নেই?" "হ্যাঁ, আমি তাই দেখি।" "আচ্ছা, ওর জন্য অপেক্ষা যে করতে হবে।" "আমি তো ড্রইং রুম চিনি না। শুধু  আফসানার ঘর চিনি। আমি ওকে দিয়ে খেলতে যাব। আমি সোফায় অপেক্ষা করব। কিন্তু কিছু একটা কাজ দাও।" "আচ্ছা, কাজ দিচ্ছি। তুমি বই পড় বাসায়?" "না, ছুটি পড়েছে। ক্লাস ওয়ার্ক তিন দিন আগে থেকে পড়া শুরু করব। এখন ছুটিতে হুড়োহুড়ি করি।" "কেন, ও তো তোমার ক্লাসে পড়ে। ওর বই আর তোমার বই এক না?" "আমার অংক বইয়ের নাম এসো সবাই অংক শিখি।" "ও, এই বইয়ের নাম তোমাদের? আমারও তো বইয়ের নাম সেই। এখানে ৩৪ পেজে লেখতে হবে বলেছিল মিস। তুমি দেখেছ?" "হ্যা, আমি তো সেটাই দেখিছি।" "তাহলে এই বই পড়। ১ম পৃষ্ঠার লেখা জান?" "হ্যা, জানি। ১ থেকে ২০ পর্যন্ত অনুশীলনী আছে।" "ও, তুমি তো জানি দেখি, এই বইটা একই। তাহলে তুমি এটাই পড়।" বই হাতে নিতে নিতেই ১৫ সেকেন্ড শেষ হয়ে গেল। তবুও তার কথা মনে নই। সে পড়তে থাকল। পড়ার শব্দে সে উঠে গেল সেই আফসানা। "কি বন্ধু! তুমি এসে গেছ? চল খেলতে যাই। দেরী হয়ে যাচ্ছে। যাই ঘড়িটা দেখি।" "ওমা, ৫টা ২০ বেজে গেছে। চল তাড়াতাড়ি খেলা শেষ করি। মা মারবে। বলবে এত দেরি কেন? এত খেলছ কেন? নিশ্চয়ই তুমি ঐ ছুটির তিনদিন আগেও পড়বে না। এরকম খেলবে। তাই মা মারবে। তুমি এখন জলদি একটা রিংগা রিংগা রোজেস খেলে আসি।" দুজনই দৌড় দিল। আরেকজন মানুষ আফসানার বই ফেলে রাখে নিচে। আফসানার মায়ের তো রাগ মনে উঠেই আছে। এই পলাশী মেয়েটা তো খুব পাজি। বই গুছিয়ে রাখে না। তাও আমার অন্য মানুষের । নিজের বংশের না্। এ বই কেন ফেলে রেখে গেল। আমি ওর বন্ধুকে দিয়ে আসতে যখন আসবে, তখনই আমি ওকে অর্ধেক পিটিয়ে দেব। তখন আবার আল্লাহ বুদ্ধি দিল তাকে, "না, সে চার বছরের মানুষ। তুমি যখনই বাথরুমে যাবে, তখনই সে এসে বইটি গুছিয়ে রেখে দিয়ে যাবে।" এই কথাটা মনের মধ্যে দিল আল্লাহ। তখনই সে চুপ হয়ে গেল, মারার কথা মন থেকে দূর হয়ে গেল। তখন সে চুপ হয়ে এক জায়গায় বসে রইল। মাথায় ঠাণ্ডা জল মানে পানি ঢালল। মাথা ভিজে গেল। মাথা মুছল। ক্লিপ লাগালো। ব্যান্ড বাধল। সুন্দর শাড়ি পড়ল। কানে ফুল দিল। কানের গয়নাও দিল। নাকে দুল দিল। হাতে চুড়ি দিল। মাথায় টিপ দিল। পায়ে নুপুর দিল। সেন্ট দিল। মেকাপ দিল। মালা দিল। সে ফ্যানের আশেপাশে একধরনের গ্যাসবেলুন ফুলের মত ডিজাইন সেটা ফ্যান বন্ধ করে চারপাশে দিল। ফ্যান তার স্বামীকে ফ্যান ছাড়তে বলল আর ফ্যানের চারপাশে ফুলের মত দিল। সে ফ্যানের নিচে দাড়াল। ফ্যান ছাড়ার পরই ফটাফট ফেটে গেল। সেগুলো হাত দিয়ে আকাবাকা এদিক ওদিক দূরে ছুড়ল। নিজের গায়ে। এরকম ফুলের । ফেটে ফেটে পড়ল। ঠিক যেরকম বিয়ের সময়। যেরকম সাজে, যেরকম নাচে। যেন কোন অনুষ্ঠান। তখন মায়ের রাগ থামল। তখনই এসে দিয়ে গিয়ে বইটা গুছিয়ে সব জায়গা পরিস্কার হয়ে গেল। সে একটা ছোট বাচ্চা চার বছরের, তবুও সে কত ভাল, দেখলে! আর এদিকে কাজের মহিলা তো বোতল শুকো দিয়ে আসল। আর ঐ অচেনা মেয়েটার কথা শুনে বলল, "এই বোকা! সন্ধ্যা গড়িয়ে এল। বোতলগুলো উঠিয়ে আনবে না? এতক্ষণে শুকিয়ে গেছে। মানুষেরা এখন বেশি শুকো দেয় এই দিন। বুঝতে পারবি না কোনটা কার। মানুষেরটা তুই নিবি, মানুষেরা তোরটা নেবে। শেষে অন্য মানুষের লালাওয়ালা বোতল দিয়ে আমাদের পানি খেতে হবে। যা মেয়ে যা, হাসিস না।" এরকম বলে কেন আমাকে? একথা কাজের মহিলা বলল। "কেন আমাকে এরকম বলে। আমি তো ওদের কথামতই কাজ করি। তবু কেন তুই করে বলে? আমি আর থাকবই না"-বলে সে রওনা দিল। সকলে তাকে ধরে টনে রশি দিয়ে বলল, "এক্ষুণি তোকে আমি বেধে রাখব তাড়াতাড়ি পালানোর কথা মাথা থেকে দূর কর। ন্য় কিন্তু দিলাম বেধে। হাতপা বেধে কেমন কষ্ট বুঝবি। তাড়াতাড়ি ওগুলো মাথা থেকে বের কর।" তখন সে জ্বালায় মাথা থেকে বের কর। আর বলল, "আমাকে আর তুই তুই করে বলা চলল না, মালিক মশাই।" দাদা-দাদাী নানা নানী সকেল বল, বাবাও বলল, "কেন, কেন আমরা বলি তোকে? তুই আমাদের বলতে পারিস না, আমাদের পরিবারে কাজ করতে চাস না তুই? তাহলে এখনই তুই বাধনের মধ্যে আটকা পড়। এখন তাড়াতাড়ি তুই মাছ রান্না করে আমার ছেলের বউ আসছে, তার জন্য ইলিশ মাছ রান্না কর। তারা এটা খেতে খুব ভালবাসে। পায়েস খাইয়ে দে। আর বিশুদ্ধ জল ফিল্টার থেকে এনে দে। যেন ঠাণ্ডা হয়, গরম না হয়।" "আবার আপনি আমায় তুই, দিবি, যাবি এরকম বলছেন। আমি তো আপনাকে বলতেছ, যাইতেছ এরকম ভাষায়ও বলি না, আপনি আপনি বলি। তো আপনারা তো আমাকে তোমার, তুমি এরকম করেও বলেন না। দেখেছেন মশাই! আমি আপনাকে এখন থেকে তুই করেই বলব। এখন আর আপনি আপনার বলবই না। একবার যদি মুখে তুলেছি, আমার নামটা আর এই নামে থাকবে না। আমার নামেটা পাল্টে আরো সুন্দর নাম দতে হবে, যেন বোঝা যায় না, যেন মনে করবে এক রাজ্যের রাজকনস্যার নাম। নাম দিতে হবে সুমকন্যা। যুদি একদিনও বলেছি।" "আর বলতে হবে না, এখনই তোমার নাম সুমকন্যা হয়ে যাবে। এখন খুশি? সোনার গয়নাও দিয়ে দেব। সেজন্য তুই, দিলি কেন এসব বলবই বলব। এখন আমি তোমাকে স্বর্ণমুদ্রা দিচ্ছি, স্বর্ণমুদ্রা জামা দেব, একটুও ছেড়াছাড়া জকামা দেব না, সুন্দর কোরআন শরীফ দেব, সুন্দর আলমারি দেব, সুন্দর চশমা দেব ও সুন্দর টুল দেব বসার টুল। এবার আমি তোমাকে তুই, দিবি বলব। এখন তুই যা। এখন তুই গিয়ে সব ঝাড়ু দিয়ে ঐ ইলিশ মাছ পায়েস রান্না কর গিয়ে। আর একদম পরিস্কার থালায়/বাটিতি দিবি খেতে। পোলাও, রোস্ট রান্না করবি। একদম টেস্টিং সল্ট আর সস দিয়ে। একটুও যেন মশলা না পাই সেটা না দেখি। মশলা কিন্তু অনেক বেশি করে দিবি।" শেষ মেষ সে বলল, "মরিচ, আদা এগুলোও তো মশলার মধ্যেই পড়ে।" সে সেটা বুঝে* বেশি ঝাল দিয়ে দিল। ইলিশ মাছ, রোস্‌টঠ। মেহমান এসে সেগুলে াখেয়ে খুক্কুর খুক্কুর কাশি শুরু করল। "কি  গো মশাই, আপনি কি এই বাড়ির মালিক? নাকি আপনি একটা গাধা? কাজের মহিলাকে এত কড়া ঝাল দিতে বলেছেন কেন রে? তাড়াতাড়ি কোরমা দে, মিষ্টি ভাত খেতে দে। আর এইসবঝাল খাবার খেতে পারি না। খুক্কুর খুক্কুর কাশি বানিয়েছে মেহমানের। আমরা কি তোদের অতিথি নাকি? আমরা তোদের শত্রুপক্ষের সৈন্য। কেন আপনি আমাদেরকে এমন খাওয়ালেন? এখন কিন্তু দাঁত ফুটো করে দিব। এখনই কোরমা রান্না করে দে।" কাজের মহিলাকে বলল, "এই দেখছিস না কি হচ্ছে? কাজের মহিলাকে বলল সেই মালিক। দেখিছিস না কিচ্ছু? এখন তাড়াতাড়ি কোরমা নিয়ে আয়। ফ্রিজে রেখেছি, গরম করে দে তাড়াতাড়ি।" সে খাবার গরম খেতে ভালবাসে, কিন্তু পানি ঠাণ্ডা খেতে ভালবাসে। আর এখন কিন্তু কোরমা রান্না কর তে হবে, নয় ফ্রিজ থেকে বের করে গরম করতে হবে। থখন ফ্রিস থেকে বের করে খেতে দিল। তখন প্রাণটা মিষিট হয়ে গেল। তারপর সারাদিন শুধু মিষ্টি কথাই ভাবে। এখন মেহমানের গেছে মাথা খারাপ হয়ে। শুধু মিষ্টি কথাই মনে আষে। মিষ্টি, মিষ্টি আর মিষ্টি। সারা মনেই এই সব কথা থকে। ধুত, আমি আর আসবই না। বলে সে চলে গেল। আর বুদ্ধিমথী মেয়ে সারাক্ষণ শুধু খুশী হয়ে থাকল।