Wednesday, May 20, 2015

মুনতারার বই

একদিন একটি মেয়ে নাম মুনতারা, সে তার ছোট বোন আলিয়াকে নিয়ে বাইরে ঘুরতে যাচ্ছিল। সিঁড়ি দিয়ে যাচ্ছিল এক মুরুব্বী মানুষ। তাকে জিজ্ঞেস করে, "আচ্ছা, আন্টি! আপনি কি জানেন, ঐ যে একটা ছোট্ট মেয়ে ব্যান্ড পড়া ঝুটিওয়ালা, হাতে নখ বড় বড়, হাতে মেহেন্দি পড়া, হাতে চুড়ি পড়ে বাইরে খেলে সেই মেয়েটির নাম কি?" "কোন্‌ মেয়ে? প্রতিদিন যে লাল কাপড় পড়ে আসে সেই মেয়েটি?" "হ্যা, সেই মেয়েটি।" "ওর নাম কি, ও তোমার কি হয় বন্ধু?" "হ্যা, বন্ধু। কিন্তু নিজের নামটাই বলে দিতে পারে না।" "সেটাই তুমি জান না? তার নাম রূপালী। কিন্তু তুমি জানতে চাচ্ছ কেন, কি কারণে?" সে কি আর গোপন কথা বলা যাবে? "কেন, গোপন কথা আমাকে বল। আমি সবচেয়ে বেশি মুরুব্বী এই ৫ তলার। তোমরা দোতলায় থাক। আমার সাথে যখন দেখা হল, বল।" "না, না না না। গোপন কথা আমি কাউকে কখখোনো বলবো না। এটা মায়ের গোপন কথা।" "মায়ের কোন্‌ গোপন কথা? মায়ের কথা মা এটা গোপন রাখতে বলেছে, নাকি মায়ের বিরুদ্ধে কথা?" "কেন, এটা জেনে তোমার লাভ কি?" "না, না, না। কিন্তু আমার যে জানা দরকারি। তুমি বল, গোপন কথাটা তো আর জানতে চাইনি।" "আচ্ছা, এটা না জানলে তুমি আমার কাছ থেকে জেনে নিতে পার। কিন্তু তুমি আগে তোমার  আগে তুমি বল, তুমি কোথায় যাচ্ছ? এটা যদি না বলতে পার, তবে আমি কি করে বলব মায়ের গোপন কথা?" "ঠিক আছে, আমার জানার দরকার নেই। তোমরা যাও। তবু আমি আমার গোপন কথা তোমাকে বলব না। আমারও একটা তোমার মত গোপন কথা আছে। সেটা আমার বাবার কথা। তোমার যেরকম মায়ের কথা, এটা আমার বাবা সবাইকে বলতে নিষেধ করেছে। তুমি যাও। এখন আর এরকম করে লাভ নেই।" এখন দু'জন দুজনের পথে চলে গেল। বলতে বলতে সিড়ি শেষ হয়ে গেল, তারা নিচে নেমে গেল। রূপালীকে দেখে বলে, "রূপালী, রূপালী, তুমি সেদিন তোমার নাম বলরিন কেন?" "নাম তো বলিনি, কিন্তু তোমি না বলা অবস্থাতেই জানলে কেমনে, আমার নাম রুপালী?" "সেটা তোমার জেনে লাভ কি? বল, তোমার বাসা কোনটা?" "ওমা, আমাকে দেখনি বুঝি কোন বাড়িতে যেতে? আজকে রাতেই আমি আমার বাড়িতে যাব।" আসলে আসল কথাটা কি আর বোঝ? দেখ এবার রূপালী কি করে। রূপালী তাকে ধোকা দিতে চেয়েছিল। অন্য বাড়িতে ঢোকার ভান করতে চেয়েছিল। সে এবার অন্য বাড়িতেই ঢুকতে যাবে। তার আগে দেখ খেলার খবরটা কি? খেলতে খেলতে একটা খেলনা সাপ ব্যাটারী দিয়ে চলে আকাবাকা আকাবাকা করে ডোরাকাটা রং মাখা। সেটা এক মেয়ে কিনেছিল। সেটা চালাতে চালাতে সেটা খেলার মাঠে এসে পড়ল। সিড়ি দিয়ে চালাতে চালাতে। সেটার রিমোট ছিল সেই মেয়েটির হাতে। এখন অলিয়া, রূপালী আর মুনতারা সেই সাপটি দেখে ভয় পেল। কিন্তু অলিয়া তো বেশি ছোট। তাই সে বেশি ভয় পেল। কিন্তু এবার দেখ। সে একটুও ভয় পায়নি। তা দেখে তো রূপালী অবাকের মাথায় কি বলে। রূপালী বলে, "এই মেয়ে এরকম ভয় পেল কি করে। আমরা তো ভয়ে ঘাবড়িয়ে যাচ্ছি।" একদিন মুনতারা বই পড়ছে। জাতীয় পতাকা উড়ছে। পড়ছিল যে, জাতীয় পতাকার রং লাল ও সবুজ, হাতলের রং হলুদ। আর পড়ছিল, জাতীয় ফুল শাপলা। এই অনুচ্ছেদগুলো পড়ছিল। অলিয়া তো এসে বলে, তুমি কি পড়ছ? আমি নাসরারীতে পড়ি, আর তুমি ওয়ানে পড়। এখন আমার বই কোথায়? আর তার সেই খেলার পর কোন্‌ বাসায় গেল সেটা তো  তোমরা আগে থেকেই জান। এখন ছোট বোন বলে, আমার বই কোথায়, আমার বই কোথায়? তখন মা এসে বলল, "চুপ কর তো, অলিয়া। তোমার বোন বই পড়ছে। কেন ডিস্টার্ব খরছ? এদিকে আস। নয়তো বকা দেব। আস।" "কেন মা, আমি আমা রবই নিয়ে পড়ব। আমার বই দাও। আমি এখন বাক্য লিখতে পারি না তো কি? আমি এখন শব্দ লেখা শিখেছি তো। এখন আমার খাতাটা দাও। হোম ওয়ার্কটা করব। আমি পড়ব বোনের সাথে। আমি মুনতারার সাথে পড়ব।" "না, না। এদিকে এসো।" বলে মা জোর করে নিয়ে গেল। মুনতারা বলল, "না, মা। ও যখন পড়তে চাচ্ছে, ওর হোমওয়ার্ক খাতাটা দিয়ে ওকে শান্ত কর না। তুমি যদি ওকে শান্ত না কর হোম ওয়ার্ক খাতা না দিলে, আমি অনুচ্ছেদও পড়ব কি করে?" "না না না, ওকে আমি শান্ত করব। কিন্তু বই-খাতা দিয়ে নয়। গল্প শুনিয়ে, ছড়া শুনিয়ে।" "আস, অলিয়া। মুনতারা, তুমি অনুচ্ছেদ পড়। এই অলিয়া, ডিস্টার্ব করো না, আস।" অলিয়াকে আবার জোর করে টেনে নিয়ে গেল। বলেঃ এক দেশে ছিল একটা সিংহ। একটা মানুষ সিংহের কাছে গেল। মানুষটা বলে, আমি তোমাকে মারব। ধরে একেবারে মারব। সিংহটা বলে, "জানিস আমি কে? আমি এই বনের রাজা। সব কথা আমার কথা শুনবে। আর না হলে আমিই তোর ঘাড় মটকাব। আমি তোর মাংস খাব।" বাঘ এসে বলে, না না সিংহ। ওকে মেরো না। ঐ নদীর কাছে গিয়ে পানি খেতে বল। পানি খেলেই ও চলে যাবে। সিংহ বলে, "না বন্ধু। ও আমাকে কি বলে জান? ও আমাকে বলে নাকি আমাকে মারবে।" "কেন, ওকে ছেড়ে দাও।"- বাঘ বলে। আর সেই একটু গল্প শুনাতে শুনাতেও বাচ্চাটার কান্না থামল না। সিংহ বলল, "না বন্ধু, তুমি জান না, তোমাকে যদি বলা হতো যে, আমি তোমায় মারব, তবে কি তোমার ভাল লাগত, যদি আমি বলতাম ওকে ছেড়ে দাও? সেরকম ওকে ছেড়ে দিতে বলো না আমাকে।" এবার সিংহ বলল, "কি, বাঘ মামা? তোমাকে যদি একথা বলা হতো তোমার তো খারাপ লাগতো তাই না?" এখন বাঘ বলে, "শোন বন্ধু! ওকে ছেড়ে দাও। যা বলেছি তাই কর।" এমন সময় সিংহ মাথা খারাপ করে তাকে সত্যি সত্যি ছেড়ে দিল। বাঘ বলে, "আমি তো শুধু মশকরা করতেছিলাম। সত্যি সত্যি ছাড়তে বলেছি নাকি?" বলে, "চুপ কর বাঘ! তুমি তো বললে, ছেড়ে দিতে। এখন কেন আবার আমাকে বলছ, ছেড়ে দিয়েছ কেন।" এখন সিংহ আরেকটি মানুষকে ধরে তার দলে নিল। বলল, "তুমি বাঘ মশাইর কাছে গিয়ে বলবে, আমি তোমায় মেরে ফেলব।" মানুষটা ভেবেছিল আগে সিংহের কথামত কাজ করে তারপর সিংহটাকে মারব। এখন সেই লোকটিকে পাঠালো বাঘের কাছে। লোকটি বলল, "কি বাঘ মশাই! তোমাকে আমি মেরে ফেলব।" তখন বাঘটি বলে, "এততো বড় সাহস! আমি কে জানিস? আমি হলাম এই বনের রাজার বন্ধু।" এখন সিংহ এসে বলল, "ওকে তুমি মেরো না। তুমি ওকে ছেড়ে দাও। ও নদীর জলে গিয়ে পানি খাক।" এখন বাঘ বলে, "না না না না, ওকে  ছাড়াই যাবে না।" এখন বাঘ সিংহের মত মাথা খারাপ করে সিংহের মতনই সত্যি সত্যি ছেড়ে দিল না। ভাবল, আমি যখন সিংহের সাথে মশকরা করেছিলাম, ও নিশ্চয়ই মশকরা করছে। সিংহও বুঝে গেল, মশকরা করছি বলে ভাবছে বুঝি বাঘ। সিংহ বলল, "আমি মোটেও মশকরা করিনি। আমি একটা হরিণ এনেছিলাম। হরিণটা তোমাকে খেতে দেব না, তোমাকে ফেলে রেখে খাব। তখন বুঝবে মজা। বনের রাজার বন্ধু বনের রাজাকে কি করে বকা দেয়। বনের রাজা তো সিংহ। বনের রাজার শাস্তি না মানলে কেমন হয়।" হরিণের মাংস সে একাই খেল। তারপর বাঘকে বলল, "ভালই তো মশকরা করছি না বলে বলেছিলাম। এখন তোমারই দোষ। তুমিই খেতে পারছ না। এখন বোঝ।"
এই গল্পটা শুনে অলিয়া কান্না থামাল। তারপর অলিয়া কান্না থামাল দেখে মা বলল, এই তো কি সুন্দর কান্না থামাতে পারে। কান্না যখন থামিয়েছ, তুমি মুনতারার সাথে পড়। কিন্তু মুনতারার কাছে গিয়ে নয়। হোমওয়ার্ক খাতা এখানে নিয়ে এসে তারপর লেখ। অনুচ্ছেদ তো পড়ার পর দুজনেই খেলতে চাইল। হোমওয়ার্ক করা বাদ দিয়ে অলিয়া মুনতারার সাথে খেলতে গেল। যাওয়ার আগেই মা বলল, "এই মুনতারার সাথে খেলতে যাচ্ছ কেন? বলেছিলে না, হোমওয়ার্ক পুরোটা শেষ কর। কেবলমাত্র শুরু করেছ হোমওয়ার্ক করা।" অলিয়া বলল, "না, হোমওয়ার্ক করব না।" "এত কষ্ট করে গল্প শোনালাম, আর তুমি যে এখন লেখাপড়া করবেই না।" এখন জোর করে মুনতারাকে লুকাতে বলল। অনেক ভাল একটা জায়গায় লুকাতে বলল মুনতারাকে। মুনতারা লুকিয়ে গেল সোফার নিচে। তাও আবার পায়ের উপর, মুখের উপর, গায়ের উপর কাল কাপড় দিয়ে। আর তখনই অলিয়া মুনতারা বলে ডাকে। খাটের তলায় খোজে, লুকানোর জায়গায় খোজে। দরজার কোনায় খোজে। টেবিলের নিচে খোজে। রান্না ঘরে খোজে, বারান্দায় খোজে। পর্দার নিচে খোজে, কোনাকুনিতে খোজে৭। পায় না অলিয়া। মুনতারা লুকিয়েই থাকে। এখন মুনতারাকে না নিয়ে মুনতারার শব্দ না শুনে মুনতারাকে না পেয়ে অলিয়া মুনতারার কথাই ভুলে যায়। তখন আবার সে হোমওয়ার্ক করতে বসে। এমন সময় রুপালী এসে হাজির। বলে, "মুনতারা! চিতকার করে ওঠে। অলিয়া, মুনতারা কোথায়? ও মুনতারা, তুমি কোথায়?" এখন মুনতারাও কানের উপর যে দিয়েছে কাপড়, তাতে আর অলিয়ার কোন সাড়া শব্দ শুনতে পায়নি। তাই মুনতারা আবার বের হয়ে আসল। এসে নাচতে নাচতে মায়ের ঘরে এসে দেখে, রূপালি ও অলিয়া বসে আছে। মুনতারাকে পেয়ে দুজনেই ছুটল। অলিয়ার হোমওয়ার্ক করা দুটো রয়ে গেল। দুটো হোমওয়ার্ক করেই দিয়েছিল দৌড় অলিয়া। তারপর অলিয়া, রুপালী, মুনতারা তিনজন একসাথে হয়ে বসল। আবার কলিং বেল দিয়ে দেখে, ফুপাতো ভাই এসে গেছে। এখন চার জন একসাতে হল। তারা হল- তামীম, মুনতারা, অলিয়া ও রুপালী। চারজন হয়েছে। একটু পর দরজায় কে যেন টাকাচ্ছিল। এসে দেখে, তার চাচাতো বোন এসে গেছে। এখন দেখ, পাঁচজন হয়েছে। মাইশা, তামীম, মুনতারা, অলিয়া ও রুপালী। এরকম করতে করতে ছয়জন হয়ে েগছ। তখন তারা একসাথে খেলল। রুপালীও চলে গেল। মুনতারা আবার কি করতে যেন গেল। তখন অলিয়া হোমওয়ার্ক করে আবার আসল। তখন ওরা মাত্র দুজন আবার হয়ে গেলো। 

No comments:

Post a Comment