Saturday, May 30, 2015

রাজপ্রাসাদ

এক ছিল রাজপ্রাসাদ। রাজা, রাণী, মন্ত্রী, সেনাপতি, প্রহরীরা আর সব প্রজারা আর রাজকন্যা ও রাজপুত্র সেই রাজপ্রাসাদে থাকত। সেই পরিবারে অনেক ঝামেলা ছিল। একটু সুযোগ পেলেও তারা ঝামেলা বন্ধ করতে পারত না। সুযোগ পেলেও না। সেই রাজপুত্র ও রাজকন্যা মিলে একদিন বুদ্ধি করল, শিশুপার্ক তো বহু দূরে। একদম ঢাকার ইউনিভার্সিটির দিকে। আমরা তো আছি দক্ষিণ ফুলার রোডে। তাই তারা বুদ্ধি করল, নিজেরা নিজেরা স্প্রিং বানাবে। অনেক লাঠি নিয়ে এল রাজপুত্র। রাজকন্যা অনেক বড় একটা কাপড় সেলাই করে আনল। রুমালের মত অনেক বড়। চারকোনায় চারটা লাঠি দিলে আর মাঝখানে কাপড় ঝুলিয়ে দিল। কাপড় তো আর এমনি এমনি ঝোলানো যাবে না। তাই তার নিচে কিছু একটা জিনিস নিয়ে দিল। রাজকন্যা দড়ি নিয়ে এল। রাজপুত্র মায়ের কাছ থেকে দড়ি বাধা শিখে এল। দড়ি দিয়ে বাঁধল। তারপর ছোট ছোট টুল একটার উপর আরেকটা দিয়ে দিয়ে সিঁড়ির মত বানালো। সেই স্প্রিংয়ের লাফানোর জন্য যে তারা বানিয়েছে, সেটাই কেউ জানত না। সবাই এটাও জানে না, স্প্রিং কোথা থেকে এল এবং এটা  যে রাজপুত্র ও রাজকন্যা বানিয়েছে। একদিন রাজা ও রানী রাজকন্যাকে বলে, আমার প্রশ্নের একটা উত্তর তুমি দিতে পারবে? তুমি তো খুব বুদ্ধিমতী। "হ্যাঁ, কেন পারব না? বল কি।" "আচ্ছা, তুই বলতে পারিস যে, স্প্রিং কোথা থেকে এসেছিল আর কেই বা বানিয়েছিল।" "আরে, সেটাই তো তোমাকে বলা হয়নি মা। তুমি এটা যে আমার কাছে প্রশ্ন করছ। সেটার উত্তরটি হল, এগুলো আমরা লাঠি নিয়ে এসেছিলাম। আমরা কাপড় নিয়ে বানিয়েছিলাম। রাজপুত্র মিলে। রাজপুত্র তোমার কাছে দড়ি বাঁধা শিখতে চেয়েছিল কেন, এটা তাহলে বুঝলে?" "ও, আমার সোনা! তুই তো দেখছি এত কিছু বানাতে পারিস। আমার প্রশ্নের কত উত্তর দিয়ে দিতে পারিস তুই। এবার রাজপুত্রকে একটা প্রশ্ন করব। রাজপুত্র তো খুব বুদ্ধিমান ছেলে। সেও তো তোর মত খুবই বুদ্ধিমান। আমি ডেকে আনছি রাজপুত্রকে। রাজপুত্র তো অনেক ভাল। তোকে আমি আইসক্রিম দেব, আর রাজপুত্রকে খেলনা কিনে দেব। বল কিনে দেব। কিনে দেব হল বল আর পুতুল। আর তোকে তো চকলেট কিনে দেব। রাজপুত্র তো ভাল, তাই তাকে একটা প্রশ্ন তো করা দরকার প্রমাণ করার জন্য। এখন আমি যাই, তুই এবার তোর কাজ করতে যা।" বলে রানী রাজপত্রকে ডেকে বলল, "এই যে, বলতো দেখি বাবা, উত্তর দিতে পারবে তো?" "কিসের উত্তর দিতে হবে বল।" "আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে তোকে, বাবা।" "পারব না কেন? আমি তো নিশ্চয়ই পারব। বল, কিসের উত্তর দিতে হবে?" "আচ্ছা, তুই কি বলতে পারিস যে, ঘর বাড়িতে যত গাছপালা থাকে, আমাদের ঘরের পাশে, সেই গাছে যেই গাছগুলোতে ফল হয় না সেই গাছগুলো দেখিয়ে দিতে পারবি? এই উত্তরটা তো তোকে দিতে হবেই।" "এটা তো অনেক সহজ প্রশ্ন, মা। আমি এক্ষুণি দেখিয়ে দিচ্ছি। চল আমার সাথে।" বলে সে দেখিয়ে দিল, "ঐ গাছটা, মা। ঠিক আছে?" "ওরে বাবা! আচ্ছা, তুই তো দেখি অনেক পারিস। তবে আরেকটা দেখাতে পারিস?" "পারব না কেন? আমি তোমায় তিনটা গাছ দেখাব।" "ওরে সোনা! তুই তিনটা গাছ দেখাতে পারবি? কত ভাল তুই! রাজকন্যা অনেক ভাল। তুইও অনেক ভাল। কি সুন্দর স্প্রিং বানিয়েছিস তোরা দুজনে মিলে। এখন বাকি দু'টা দেখা তো দেখি।" এই বলে মা দেখাতে বলল। রাজপুত্র বলে, "মা! চল আমার সঙ্গে। ঐ গাছটা দেখ, আর ঐ গাছটার দিকেও তাকাও। কোন ফল আছে?" "না তো। তুই কত বুদ্ধিমান! যা, এবার তোর কাজে যা। এবার তোরা তো বেশি কাঠাল খেতে পছন্দ করিস। দেখি, তুই আর তোর বোন রাজকন্যা আমাকে কতটা ভালবাসিস। আমার কাজের জন্য কতটা কষ্ট করে আমি আগে পরীক্ষা করি। তাহলে বুঝব, তোরা দুজনই খুব বুদ্ধিমতী আর বুদ্ধিমান। তুই তো অনেকগুলো দেখিয়েছিস, এবার তাহলে রাজকন্যাকেও আরো দুটো প্রশ্ন করি।" বলে রাজকন্যার কাছে গিয়ে বলল, "আরো দুটো ছোট প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে? বল তো দেখি, সাদা ফুলের সুবাস বেশি, নাকি লাল ফুলের সুবাস বেশি।" এই প্রশ্নের উত্তর দিল হল, "সাদা ফুলের।" মা ভাবল, এত ছোট মেয়ে কি করে বুঝল এসব। "আচ্ছা, তাহলে এর পরের প্রশ্নটার উত্তর দে দেখি। তুই কি জানিস, এই বল রাজপুত্রের জন্য যে এনেছি, সেটা কি ভাল হল নাকি হল না।" বলল, "এটা কেন হতে যাবে ভাল না? ভালই তো। রাজপুত্রকে দিয়েছ ভাল না? খারাপ হতে যাবে কিজন্য?" "এখন তোমার উপর আমি পরীক্ষা নেব, তুই আমাকে কতটা ভালবাসিস এবং আমার কথামত কতটা কষ্ট করে কাজ করিস।" রাজপুত্রকেও এ পরীক্ষা দিতে হচ্ছে। তোরা তো কাঠাল পছন্দ করিস না। খেতে তোদের খারাপ লাগে। তাই এখন আমি একটা কাঠাল এনে দিচ্ছি, সেটা খাও। তখন রাজপুত্র ও রাজকন্যা খেতে পারল। মা বলে, "এই তো, কত ভাল! এবার আরেকটা পরীক্ষা। দুই নম্বর পরীক্ষা। তিন নম্বর পরীক্ষাটা পারা দরকার। না পারলে কিন্তু কিছু হবে না।" এখন তুই বাগান থেকে ফুল এনে তো তোরা মালা গাঁথতে পারিস না। মালা গেথে দেখা। তখনও তারা মালা গাঁথতে পারল। "এ বাবা, কি সুন্দর পারে। স্প্রিং যখন বানিয়েছিস, এই উত্তর দিতে পারলে সেই স্প্রিংয়ে লাফাতে পারবি।" এখন বলে, "এই তিন নম্বর পরীক্ষাটা অনেক কঠিন। বলতে পার? ঘোড়ার যে কয়টা পা থাকে, পায়ের একটু ক্ষুর থাকে, সেই ক্ষুরটা ছাগলেরও থাকে। এটার সত্য মিথ্যা বলতে পার? একবারের বেশি বলা যাবে না। একবার না বুঝতে পারলে হবে না। তোরা তো অনেক কঠিন কথা বড় বাক্য একসাথে বলতে পারিস না। এটা অনেক বড় বাক্য। বলতে পার?" বলল, "এটা সত্য।" "ওরে, তিন নম্বরটা তো পেরেই গেছিস। এখন স্প্রিংয়ে ওঠ। আর এখন আমি তোদের বাবাকে আনছি। আমি লাল রঙের লাইট, বাবা নীল রঙের লাইট স্প্রিংয়ের মধ্যে নাড়াতে থাকবে, দাড়াবে বাইরে, কিন্তু লাইটটা পড়বে ঐ স্প্রিংয়ের মধ্যে। আর আমি সেই একই ভাবে লাইট স্প্রিংয়ের মধ্যে ফেলব। আর নাড়াতে থাকব লাইট। লাইট যেদিকে যাবে, সেদিকে তোরা যাবি। রাজপুত্র যাবে নীল লাইটের সাথে, আর রাজকন্যা যাবে লাল লাইটের সাথে। লাফিয়ে লাফিয়ে নাচতে হবে। প্রহরীদেরকে আসতে বলব। লাইট বন্ধ করে দেবে। প্রহরীরা ক্যামেরা নিয়ে আসবে। ফিট করবে টিভিওয়ালারা। তারপর টিভিতে রাজ্যের রাজপুত্র ও রাজকন্যার নাচ দেখাবে। এবার সেই স্প্রিংয়ের চারপাশ দিয়ে প্রহরীরা এল। বাবা-বা লাল লাইট নীল লাইট নিয়ে এল। রাজকন্যা ও রাজপুত্র উঠে গেল স্প্রিংয়ে। রাজকন্যা গেল লাল লাইটের দিকে, আর রাজপুত্র গেল নীল লাইটের দিকে। আর মন্ত্রী আর সেনাপতি মিলে ক্যাসেটে গান বাজিয়ে দিল, মিউজিক দিল। একটাতে মিউজিক, আরেকটাতে গান। গানের তালে তালে ওরা লাইট ই করতে থাকল। আর রাজকন্যারা লাইট দেখে নাচল। আর মন্ত্রী আর সেনাপতি তাল দিতে লাগল। রাজা বলে, "এই, তোরা তাল দিস কেন? তোদেরটা ক্যামেরায় উঠলে তো হবে না। তাও আবার স্প্রিংয়ের একদম কাছে। আমরা রাজা-রানী, আমাদেরকেই তো তুলতে দিচ্ছি না। শুধুই নাচের দিকটা ক্যামেরায় রেকর্ড হচ্ছে। আমরা যে লাইট মারছি, এটা তো আর ক্যামেরায় পড়ছে না। তোরা এসে এখানে তাল দিস না। সেনাপতি আর মন্ত্রিী এসে তাল দিতে বসেছে। দেখ, কেমন লাগে!" সেটা টিভিতে দেখে মানুষ হাসতে লাগল। "কী সুন্দর নাচতে পারে। আর রাজামশাইর কাছে যখন সেনাপতি আর মন্ত্রীর কাণ্ডটা দেখল, তখন সবাই অনেক হাসাহাসি করল।

No comments:

Post a Comment