Sunday, February 17, 2019

যমজ পরিবার

এক শহরে থাকত এক মহিলা। তার ছিল দুই যমজ মেয়ে। একজনের নাম রজনী ও আরেকজনের নাম রঞ্জনা ছিল। আর সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হচ্ছে রজনী ও রঞ্জনা দুইজনেরই বিয়ের পর একই দিনে দুইজনেরই দুইটি যমজ মেয়ে হয়। রজনী ছিল খুব মিশুক। সে মানুষের সাথে বন্ধুত্ব করতে খুব ভালোবাসতো। কিন্তু সে তার বন্ধুদেরকে কোন না কোন কিছু দিয়ে বন্ধুত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করত। কিন্তু সে গরীব কারো সাথে বন্ধুত্ব সহজে করত না। এককথায় বলতে গেলে সে কিছুটা স্বার্থপর ছিল। আর রঞ্জনা ছিল বেশ ঝগড়ুটে। সবার সাথে সারাদিন ঝগড়া করে কাটিয়ে দিত। তবে তার একটা কারণ আছে। সে একটা চাকরি করে। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত। সে সকাল বেলা গেলেই তার বস তার সাথে রাগী কণ্ঠে কেন যেন কথা বলে। এমনিতেই তার সাথে কেন যেন রাগ দেখায়। আর একদিন লেট হলে তো কান আর ঠিক থাকবে না। কথা শুনতে শুনতে হয়তো কানটাই ঝালাপালা হয়ে যাবে। আর সবচেয়ে দু:খজনক বিষয়, একদিন থাকে weekend, আর সেইদিনই তার বস তাকে বাসায় ডাকে। এবং বাসায় ডেকে extra কাজ করায়। আর এক্সট্রা কাজ করার সময়ও হুটহাট ঝগড়া করে। তার বসের উপর তো রঞ্জনা রাগ ঝাড়তে পারে না। সে কারণে তার সমান বা ছোট পদের মানুষদের উপর সে রাগ ঝাড়ে। রজনীর দুটি মেয়ের নাম আনিলা ও অন্বেষা। রঞ্জনার দুটি মেয়ের নাম সায়মা ও সামিয়া। তবে মায়ের থেকে মেয়েগুলো একেবারে উল্টো হয়েছে। রজনীর মেয়েগুলো খুব ঝগড়ুটে। তবে তারা এমনিতেই ঝগড়ুটে। রঞ্জনার মেয়েগুলো ছিল মিশুক। একদিন আনিলা, অন্বেষা, সায়মা এবং সামিয়া সবাই স্কুলে গেল। আনিলা আর অন্বেষা যখন বেঞ্চে বসতে যাবে, তখন তারা ব্যাগ বেঞ্চে না রেখেই খেলতে চলে গেল। তারা ব্যাগ কাঁধে নিয়েই খেলতে লাগল। খেলায় এতই মজে গিয়েছিল তারা। তারা কিন্তু অনেক আগে স্কুলে এসেছে। সবার আগে। তারা ফাস্ট বেঞ্চে হাত রেখেছিল। মানে তারা ঐ বেঞ্চেই বসবে। কিন্তু যদি তারা ব্যাগ দিয়ে জায়গাটা দখল না করে, তাহলে অন্য কেউ তো বসতেই পারে। অন্য দিকে সামিয়া আর সায়মা দু'জন মিলে তাড়াতাড়ি করে তাদের ব্যাগ ফার্স্ট বেঞ্চে রেখে দিল। আনিলা, অন্বেষা, সামিয়া এবং সায়মা সবাই অনেকক্ষণ ধরে খেলতে লাগল। এর মধ্যে অন্যান্য অনেক বাচ্চারা আসল। তারা সবাই সেকেন্ড বেঞ্চ, থার্ড বেঞ্চ করতে করতে দশম বেঞ্চ পার করে ফেলল। এগারো নম্বর বেঞ্চে একটা ফেল্টুস মারা ছেলে বসেছে। তার পাশে কেউ বসে না। একেবারে পিছনে আছে বারো নম্বর বেঞ্চ। সেটি সবচেয়ে পিছনের বেঞ্চ। সেই বেঞ্চে বাধ্যতামূলক না হলে কক্ষণো কেউ বসে না। একটু পর আনিলা অন্বেষা এবং সায়মা সামিয়ারা ক্লাসে ঢুকলো। সায়মা এবং সামিয়া তো নিজেদের ব্যাগের পাশে বসেছে। আর তক্ষনি শিক্ষিকা ক্লাসে ঢুকলো। আনিলা এবং অন্বেষা দাঁড়িয়ে রইলো। তারা গিয়ে শিক্ষিকার কাছে সায়মা ও সামিয়ার নামে নালিশ করলো। তারা বলল, "ম্যাম! দেখুন, আমরা এখানে আগে এসেছি। সবার আগে ক্লাসে ঢুকেছি। এখন আমরা ফার্স্ট বেঞ্চে বসেছিলাম। তারপর আমরা খেলতে যাই। কিন্তু সায়মা এবং সামিয়া ফার্স্ট বেঞ্চে বসে যায় আমাদের না বসতে দিয়ে। এখন ১১ নং বেঞ্চ পর্যন্ত বসা হয়ে গেছে। ১২ নং বেঞ্চে আমরা কেন বসব? যখন আমরা সবার আগে আসি, তখন কেন ১২ নং বেঞ্চে বসতে হবে?" কিন্তু তারা ব্যাগের কথা কিছুই উল্লেখ করল না। যার কারণে টিচারও তাদের দলে গেল। টিচার বলল, "এই সায়মা এবং সামিয়া! তোমরা কিন্তু বড় অন্যায় করেছ। ওরা আগে এসেছে, তোমরা কেন ফার্স্ট বেঞ্চে বসতে চাচ্ছ?" সায়মা এবং সামিয়া ম্যামকে বলল, "ম্যাম! শুনুন। ওরা ক্লাসে ব্যাগ নিয়ে এসেছিল। ওদের কি করার কথা? ব্যাগটা ফার্স্ট বেঞ্চে রেখে খেলতে যাবে না? ওরা ব্যাগ কাঁধে নিয়েই খেলতে গেছে। তাই আমরা আমাদের ব্যাগটা ফার্স্ট বেঞ্চে রেখে ফার্স্ট বেঞ্চ দখল করেছি। এখন ওদেরকে তো ১২ নং বেঞ্চেই বসতে হবে। যদি আপনি বলেন, ওরা হয়তো বা ব্যাগ এনে রেখেছিল, আমরা সরিয়েছি, তাহলে এটা পুরো মিথ্যে। তার প্রমাণ হলো ওদের কাঁধেই এখনো ব্যাগ আছে। এবার আপনিই বিচার করুন।" ম্যাম বলল, "দুই দলের কথাই আমি শুনেছি। কিন্তু বিচারের জন্য আমার একজন নিরপেক্ষ সাক্ষী চাই।" সে তার ক্যাপ্টেনকে দাঁড় করালো। ক্যাপ্টেন বলল, "ম্যাডাম! সায়মা এবং সামিয়ারাই ঠিক কথা বলেছে।" ম্যাম আরো কিছু স্টুডেন্টকে জিজ্ঞেস করল। সবাই বলল, "সায়মা এবং সামিয়ারাই ঠিক বলছে।" আগেই বলা হয়েছিল, সামিয়া এবং সায়মারা মিশুক। ওরা মানুষের সাথে মিশতে ভালোবাসে। তারা প্রায় পুরো ক্লাসের সাথেই বন্ধুত্ব করেছিল। কিন্তু ক্যাপ্টেনের সাথে ভালোভাবে বন্ধুত্ব করতে পারেনি। ক্যাপ্টেন এমনিতেই সত্যি বলেছে। আর অন্যরা বুঝুক বা না বুঝুক, তাদের বন্ধু সায়মা এবং সামিয়াদের কথাই বলেছে।