Monday, January 28, 2019

রূপালী ও তার ভাইয়েরা

এক ছিল এক পরিবার। সেই পরিবারে ছিল মা, বাবা, বড় দুই যমজ ভাই এবং ছোট এক বোন। তারা কিন্তু ছোট ছিল না। মা-বাবা একটু বৃদ্ধ ছিল। মানে ৪০/৫০ বছর। ছেলেগুলোর ১৮ বছর। এবং মেয়েটির ১৫ বছর। বড় ভাইগুলো অলস ছিল। ছোট মেয়েটি কাজ করতে পছন্দ করত। বড় দুই ভাইয়ের নাম ছিল জসিম এবং করিম। মেয়েটির নাম ছিল রূপালী। তাদের মা-বাবার একদিন কোন কারণ নিয়ে অনেক ঝগড়া হলো। ঝগড়া দিনে দিনে বাড়তেই থাকল। শেষে মা বলল, "থাকব না আর এই সংসারে। তুমি থাক তোমার বাচ্চাদের নিয়ে। আমি বাপের বাড়ি গিয়ে মা-বাবার সাথে সময় কাটাবো।" এই বলে মা সত্যি সত্যি তার বাড়ি চলে গেল। আর আসছে না। শেষে বাবাও বুঝে নিল, ও আর আসবে না। এবার আদালতে বাচ্চাদের জিজ্ঞেস করা হলো, "তোমরা কার সাথে থাকবে?" বড় দুই ভাই বাপের দলে ছিল। তাই তারা বাপের সাথেই থাকবে। মেয়েটি দু'জনকেই একেবারে সমান পছন্দ করতো। কিন্তু সে দেখল, তার বাবা ঠিকমতো কাজ করতে পারে না, উল্টোপাল্টা করে। মা তো সব ঠিকভাবেই করতে পারে। আর তার বড় দুই ভাই উল্টোপাল্টাও না, একেবারে কিছুই করতে পারে না। তাই সে বাবা এবং তার ভাইদের পরিবারেই গেল। এভাবে দু'জন আলাদা হয়ে গেল। বড় হয়ে তাদের বাবা মারা গেল। এখন বড় ভাইগুলো তো কোন কাজই করতে চায় না। ছোট বোন রূপালী একদিন জসিম ও করিমকে বলল, "এই! তোমরা এমন কেন? টাকাও তো আয় করতে পার কোনভাবে। এত অলস কেন তোমরা? পড়ালেখা ভালোমতো কর না কেন? পড়ালেখা না করলে আমাকে সাহায্য করার জন্য মেয়েদের মত বাড়ির কাজও তো শিখতে পারতে। কি করবে? বাড়িতে কাজ করবে, নাকি পড়ালেখা করে চাকরি করবে? যেকোন একটা করতেই হবে।" জসিম বলল, "এই, আমরা তোর বড় না? এমন করে কথা বলছিস কেন? আচ্ছা, যা। আমি ও করিম চাকরি করতে পারব না। আমি শুনেছি, চাকরি করা খুব কঠিন। ভাত একটু দেরিতে খাওয়া হলে তেমন কিছু হবে না। কিন্তু অফিসের কাজ করতে একটু দেরি হলে অনেক কিছু হতে পারে। তাই আমি আর করিম বাড়িতেই বাড়ির কাজ করব।" রূপালী বলল, "এ আবার কেমন কথা? উল্টা হয়ে গেল না? উপার্জন তাহলে আমি করব? ঠিক আছে! তোমরা যখন চেয়েছ, তাই হবে। এমনিতেও পড়াশোনা আমার ভালো লাগে। তাই আমি চাকুরি করব। কিন্তু তোমরা যদি ঠিকমতো খাবার না দিয়েছ না, খবর আছে! এমনিতে কিন্তু এই দায়িত্ব নিয়েছ। যাই হোক, এই কথাই রইল।" করিম বলল, "ঠিক আছে! কোন সমস্যা না, তুই চাকরি করিস। আমরা তোর খাবার রেডি করে দেব। এরপর থেকে রূপালী পড়াশোনায় সব বোর্ডের পরীক্ষায় বৃত্তি পেতে লাগল। কিন্তু সে যে বৃত্তি পেয়েছে, সেটা সে কাউকে জানালো না। বরং এক জায়গায় লুকিয়ে রাখল। এরপর সে খুব ভালো রেজাল্ট করল। এবার চাকরির পালা। রূপালী সব সার্টিফিকেট দেখিয়ে অনেক বেতনের চাকরি পেল। কিন্তু তার নিয়ম হলো সাড়ে সাতটার ভিতরে অফিসে গিয়ে গোছগাছ করে বসে থাকতে হবে। টানেমানে হলেও অনুপস্থিতি ধরা হবে। এবং অনুপস্থিতি মানে একদিনের বেতন কাটা যাবে। তার বাড়ি থেকে অফিসে আসতে ২০ মিনিট সময় লাগে। তার মানে ৭:০০ টার আগেই বাড়ি থেকে বের হতে হবে। ঠিকঠাক মতো গোছগাছ করতে পারার জন্য ১০ থেকে ১৫ মিনিট তো লাগবেই। আবার দুপুর বেলা বাড়ি আসতে হবে। এসে ঐ জিনিসপত্রগুলো রেখে অন্য জিনিস নিয়ে আসতে হবে। কি মনে হচ্ছে? সব জিনিস একবারে এনে হোটেলে খেলেই তো হয়। কিন্তু জিনিসগুলোর পরিমাণ এত বেশি, এক ধরনের জিনিস নিতেই হাত ব্যথা হয়ে যায়। আবার বিকাল বেলা বাড়ি আসতে হবে। এসে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত ফ্রি। কিন্তু আবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার সময় অফিসে অতিরিক্ত সময় অর্থাৎ ওভারটাইম করার ব্যবস্থা আছে। তবে সেটা করলেই ভালো। সে তার ভাইদেরকে গিয়ে পুরোটা খুলে বলল। এবং বলল, "সাড়ে ছয়টার মধ্যে খাবার যেন রেডি হয়। নইলে চাকরির দায়িত্ব কিন্তু তোমাদের দেব।" ভাইয়েরা বলল, "ঠিক আছে।" এই বলে তারা একটা বুদ্ধি বের করল। যাতে তাদের আর অত সকালে উঠতে না হয়। তারা সন্ধ্যা বেলায় আরামে-বিরামে ভাত রান্না করল। তাও আবার একজনের। কারণ, তারা বাসি ভাত খেতে চায় না। তারা ঐ ভাত পাশের বাড়ির ভালো ফ্রিজে রেখে আসল। এবং ঠিক করল, পরের দিন সকালে ঐ খাবার তারা টেবিলের উপর বোনের জন্য রেখে দেবে, আর সকাল দশটার সময় নিজেরা টাটকা ভাত রান্না করে খাবে। বোন যখন একটু পরেই উঠবে, তখন ভাই দুটো গিয়ে ভাতটা নিয়ে এসে টেবিলের উপর রাখল। এবং ঘুমিয়ে পড়ল। বোন সকাল বেলা উঠলো। এবং ভাইদেরকে ডেকে জিজ্ঞেস করল, "কিরে, খাবার কি তৈরি করেছিস? নাকি এমনি এমনি ঘুমোচ্ছিস?" করিম বলল, "বড় ভাইকে কেউ তুই বলে? তুই এমন করিস কেন? যা, দেখ, তোর খাবার টেবিলের উপর রাখা আছে।" এই বলে করিম আবার ঘুমিয়ে পড়লো। রূপালী ভাতটুকু মুখে দিল। এবং মনে মনে বলল, "ছি! খাবারটা এমন লাগছে কেন? টাটকা ভাত তো এমন লাগে না! আরো সুস্বাদু হওয়ার কথা। দাঁড়া, দেখাচ্ছি মজা! আমি তো আজকে শুধু প্রাকটিসের জন্য অফিসের কথা বলেছি। আসলে অফিস তো আগামী কালকে থেকে। দেখাই মজা।" এই বলে বোনটি ভালোমতোন ভাত রান্না করল। এবং নিজে ভালো ভাতটা খেয়ে নিল। এবং বাসি ভাত ভাইদের জন্য রেখে দিল। সে একটা কাগজের ভিতর লিখল, "জসিম এবং করিম ভাইকে রূপালী। এই ভাতটুকু তোমাদের জন্য উপহার। সময় বেঁচে গিয়েছিল তো, তাই।" এই লিখে সে কাগজটা প্লেটের পাশে রেখে অফিসের ব্যাগ আলমারির ভেতর ঢুকিয়ে রাখল। এবং গল্প করার জন্য তার বন্ধুর বাসায় বেড়াতে গেল। এবার জসিম ও করিমের শিক্ষা হবার পালা। তারা বোনের উপহার দেখে দারুন খুশি হলো। কিন্তু তারা দেখল, গরম ভাতের মত ধোঁয়া উড়ছে না। তাও তারা খেয়ে দেখবে বলে ঠিক করল। তাই তারা একটা লোকমা মুখে দিল। এবং বলল, "থু! এ আবার কেমন খাবার?" রান্নাঘরে শুধু একদিনের খাবারই রাখা ছিল। তাদের অফিসে আবার প্রথম দিন ওয়েলকাম ফি দেয়া হতো। মানে এমনি এমনি স্বাগতম জানানোর জন্য টাকা। বোন ভাবল, এই টাকা দিয়ে কয়েকদিন খাওয়া যাবে। তাই রান্নাঘরে অল্প খাবার ছিল। সবটুকুই রান্না শেষ। বোন ভালোটুকু রেঁধে খেয়ে চলে গেছে। আর বাসি ভাতটুকু তারা আগেই রেঁধেছে। এবার তাদের বাসি ভাত খাওয়া ছাড়া আর কোন উপায়ই নেই। তারা আরেকটু বাসি ভাত খেল। এরপর ঠিক করল, তারা আর খাবেই না। এভাবে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলো। তারা না খেয়ে আছে। তারা ভাবল, এর চেয়ে সকালে সবার জন্য টাটকা ভাত রাঁধলেই ভালো হতো। বিকেল বেলাই বোন চলে আসল। ভাইয়েরা বলল, "কিরে? তুই আমাদের জন্য ভুয়া উপহার রেখে গেছিস? এ আবার কেমন কথা? তোকে কিন্তু মেরে ভর্তা করে দেব। আমাদের সাথে মশকরা হচ্ছে, না?" মেয়েটি বলল, "তোমরা কেন আমার জন্য বাসি ভাত রেখে গিয়েছিলে? আমি আমার বন্ধুর বাড়ি গিয়েছিলাম আসলে। তোমাদেরকে শিক্ষা দেবার জন্য। আমি আমার বান্ধবীকে কিছু টাকা ধার দিয়েছিলাম। সে আজ ফেরত দিয়েছে টাকা। তা দিয়ে চাল কিনে এনেছি। শিক্ষা হয়েছে তোমাদের? কথা দাও, আর কোনদিন এমন স্বার্থপরের মত কাজ করবে না। নইলে আমি কিন্তু যেই চাল এনেছি, তা থেকে তোমাদের দেব না।" এই কথা শুনে ভাইয়েরা কথা দিল। এবং বোনও তার চাকরি ভালোভাবে চালিয়ে যেতে লাগল। এখানে গল্প শেষ।

Thursday, January 10, 2019

** গোলাপীর মায়ের স্বপ্ন **

এক ছিল দুইজনের একটি গরীব পরিবার। মা ও মেয়ে। তারা খুব বেশি গরীব ছিল না। কিন্তু এই জীবনও ৮০% মানুষের কাছেই খারাপ লাগে। মেয়েটির নাম ছিল গোলাপী। গোলাপীর মা একদিন স্বপ্নে দেখল, একটা পরীর ডানা ছিঁড়ে গেছে। আর সে ছিল অন্য রকম এক জগতে। আর সেখানে গোলাপীর মাও আছে। পরীটি বলছিল, "বাঁচাও, আমি তো ডানা ছাড়া ভালো করে দাঁড়াতেই পারি না। ডানার উপর ভর করেই আমি দাঁড়াই। আর উড়তে তো পারবই না।" তখন গোলাপীর মা কাছে এগিয়ে গিয়ে বলল, "আমি সাহায্য করতে পারি। কিন্তু কিভাবে আমি তোমাকে সাহায্য করব?" পরী বলল, "আমার তো মনে হচ্ছে তুমি পৃথিবী থেকেই এসেছ। ঘুমের মাধ্যমেই পৃথিবীর মানুষেরা এই দেশে আসতে পারে। শুধুমাত্র পৃথিবীর সুপার গ্লু দিয়েই আমার ডানা লাগানো যাবে। তুমি কি আবার ঘুম ভেঙ্গে তোমার দেশে গিয়ে একটা সুপার গ্লু কিনতে পারবে? যদি তুমি সেটা তোমার পাশে রেখে দুইদিন ঘুমাও, যেকোন একদিন তুমি আবার আমার কাছে আসতে পারবে। তখন আমাকে সুপার গ্লু টা দিও। তাহলে তোমাকেও আমি পুরষ্কার দেব।" গোলাপীর মা "ঠিক আছে" বলে তার স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল। সকাল বেলা সে ঘুম থেকে উঠল। তার স্বপ্নের কথা মনেই আছে। সুপার গ্লু না কিনলে যেন তার অন্য কাজে মনই বসছে না। তার কাছে যা টাকা ছিল, তা দিয়ে সে ছোট এক বোতল সুপার গ্লু কিনতে পারল। এবং সে অন্য কাজে মন দিতে পারল। এবার সে যখন সেইদিন রাতে ঘুমালো, সেদিন সে কিছুই দেখতে পেল না। পরের দিন রাতে যখন সে ঘুমালো, সে আবার ঐ পরীর সাথে দেখা করতে পারল। সেই পরী বললো, "তোমার হাতেই তো সুপার গ্লু। আমাকে দাও, আমি আমার ডানায় লাগিয়ে আবার ঠিক হয়ে যেতে পারব। কালকে আমি আসতে পারিনি। আজ আমি এসেছি। এবার আমাকে সুপার গ্লুটা দাও।" গোলাপীর মা পরীকে সুপারগ্লুটা দিল। পরী সুপারগ্লু দিয়ে ডানা লাগাতেই পরীকে আরো বেশি ঝলমলে দেখাতে লাগলো। কারণ, সে এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। সে গোলাপীর মাকে বলল, "তোমাকে আমি পাঁচটা অপশন দেব। সেখান থেকে যেকোন একটা বেছে নেবে। এবং সেটাই হবে তোমার পুরস্কার। কিন্তু অনেকেই কিন্তু এটা ওটা প্রশ্ন করবে। তুমি যেটাই বেছে নাও না কেন, তোমার মেয়ে ছাড়া আর কাউকেই তুমি আমি যে এটা দিয়েছি সেটা বলতে পারবে না। যদি বল, তাহলে কিন্তু আমি উপহার ফিরিয়ে নেবো। আর তোমার মেয়েও যেন কাউকে কিছু না বলে। প্রথমটা হলো, তোমরা জমিদারের মত ধনী হবে, কিন্তু কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে এটা ওটা বলে সামলে নিতে হবে। দ্বিতীয়টা হলো, তোমাদের ঘর যেমন আছে তেমই থাকবে, কিন্তু তোমাদের ঘরের পাশে যেই বাগান আছে সেই বাগানে অনেক স্বর্ণমুদ্রা তুমি পাবে। এক কোটির মত স্বর্ণমুদ্রা পাবে, কিন্তু সবগুলো থাকবে মাটির নিচে। নিজে খুঁড়ে খুঁড়ে সেই মুদ্রা বের করতে হবে, কারো সাহায্য নেয়া যাবে না, এমনকি তোমার মেয়েরও না। তৃতীয় হলো, তোমরা যেমন আছ তেমনই থাকবে, কিন্তু সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে টেবিলের উপর অনেক খাবার ও সেই দিনের জন্য প্রয়োজনীয় টাকা-পয়সা পাবে। কিন্তু এটার একটা শর্ত আছে যে, দিনের টাকা দিনেই খরচ করতে হবে। আর যদি কিছু বেঁচে যায়, সৎভাবে তুমি প্রয়োজনের বেশি টাকা খরচ না কর, তাহলে তা টেবিলের উপর রেখে দেবে। সেটা উধাও হয়ে গিয়ে পরের দিনেরটা আবার আসবে। তিন নম্বর অপশনটির কিন্তু একটু এদিক ওদিক হলেই হারিয়ে ফেলবে তুমি তোমার পুরস্কার। চতুর্থটি হলো, তুমি যে কাজ করতে চাও, তা হাত দিয়ে ইশারা করলেই হয়ে যাবে। কিন্তু কাজই শুধু করে দেয়া হবে। আর এই ক্ষমতা তুমি চুরি-ডাকাতি বা কোন অন্যায় কাজে ব্যবহার করতে পারবে না। আর কাজ করার জিনিস কিন্তু থাকতে হবে। শুধু বললেই হবে না যে, আমার বাড়িটা সোনার করে দাও, যত সোনা প্রয়োজন তত সোনা থাকতে হবে। এতে শুধু তোমার পরিশ্রমটা বাঁচবে। আর পঞ্চমটা হলো, তুমি এবং তোমার মেয়ের কখনো কোন অসুখ-বিসুখ হবে না। কিন্তু যদি কেউ জিজ্ঞেস করে, কেন অসুখ হয় না, তাহলে যদি তুমি আমার কথা বল, তাহলে এই সময়টাতে যত রোগ-ব্যাধি হওয়ার কথা ছিল, সব একবারে হওয়া শুরু হবে। অতএব, সাবধান। এবার তুমি বল, তুমি কোনটা নেবে? যেটা নেবে, ভেবেচিন্তে নিও।" গোলাপীর মা বলল, "আমি তো চিন্তায় পড়ে গেলাম। প্রথমটা নিলে জমিদার হব, কিন্তু কেউ প্রশ্ন করলে তার উত্তর বানাবো কি করে? দ্বিতীয়টা নিলে পরিশ্রম করতে করতে অসুস্থই হয়ে যাব। তৃতীয়টা নিলে আমার মতে ভালো হবে। চতুর্থটা নিলে জিনিসপত্র যোগাড় করা কঠিন হবে। পঞ্চমটা নিলে যদি কেউ মুখ ফসকে কিছু বলে ফেলি, তো সর্বনাশ! আমি তৃতীয়টাই নেব।"
একটু পর গোলাপীর মায়ের ঘুম ভাঙলো। গোলাপীকে সে কানে কানে সব বললো। গোলাপী বলল, "ধূত্তুরি! স্বপ্ন সত্যি হবে নাকি? কিযে বলো!" গোলাপীর মা বলল, "তাহলে সুপার গ্লুটা গেল কোথায়?" এরপর গোলাপী কিছুটা বিশ্বাস করল। আর তারা দু'জন রাত্রেবেলা ঘুমাতে গেল। সকাল বেলা উঠে দেখল, টেবিলের উপর রেডিমেড খাবার এবং কিছু টাকা রাখা আছে। তাও আবার ২০ স্বর্ণমুদ্রা। তারা ১০ স্বর্ণমুদ্রা দিয়ে যত ভালো জিনিস পারল, কিনল আর আনন্দ করল। কিন্তু যা বেঁচে গেল, গোলাপী লুকিয়ে লুকিয়ে তা নিজের কাছে রেখে দিল। সে ভাবল, হয়তো মা নিজেই কোনভাবে এসব জিনিস টেবিলে রেখে দিয়েছে, আর আমাকে বোকা বানাচ্ছে। এবার দেখি, মা কি বলে। পরী তো খুব রেগে গেল। সেদিন রাতে গোলাপীর মা স্বপ্নে দেখল, সেই পরী আবার এসেছে। সে বলল, "আমি দু:খিত। তুমি তোমার জিনিস সামলে রাখতে পারনি। তাই আমি উপহার ফিরিয়ে নিচ্ছি। তুমি তোমার মেয়েকে জিজ্ঞেস কর, কেন? বিদায়।" এই বলে পরী চলে গেল এবং স্বপ্নও শেষ হয়ে গেল। গোলাপীর মা উঠে দেখল, টেবিল খালি। এবং গোলাপী মুচকি মুচকি হাসছে। সে তো ভীষণ রেগে গেল। মেয়েকে বলল, "এই! সত্যি করে বল, তুই কি করেছিস? আর বাকি ১০টি মুদ্রা কোথায় গেল? এক্ষুণি বল।" গোলাপী বলল, "কী যে বল না মা, আমি কি করে জানব?" এই বলে গোলাপী ভুলে মুচকি হেসে ফেলল। মা তো ভীষণ রেগে গেল। রেগে গিয়ে বলল, "সত্যি করে বল্, নাহলে জীবনেও তোকে আর কোন কিছু জানাবো না। তুই কিছু চাইলেও কিছু দেব না। বল্ তাড়াতাড়ি!" গোলাপী মায়ের চোখ রাঙানো মুখ দেখে সত্যিটা বলে দিল। গোলাপীর মা তো গোলাপীর গালে ঠাস করে একটা চড় মারলো। আর তাকে অনেক বকাবকি করল। এবং রাগ হয়ে তার সাথে সেদিন আর কথাই বলল না। রাতে যখন গোলাপীর মা ঘুমোলো, সে বারবার চেষ্টা করছিল পরীর সাথে আলাপ করতে। শেষমেষ সে দেখা পেল পরীর। সে পরীকে বলল, "আমি খুবই দু:খিত। আমার এই মেয়ের দুষ্টুমি বুদ্ধির কারণেই আজ এতবড় ক্ষতি হলো। যাই হোক, আমি তো একটু বাড়িয়ে বলতে গেলে তোমার প্রাণই বাঁচিয়ে দিয়েছি। নাহলে তো তুমি আধামরা হয়েই পড়ে থাকতে। আমাকে কি আরেকটা সুযোগ দেয়া যাবে?" পরী বলল, "ঠিক আছে। এবার তুমি তৃতীয় অপশন বাদে বাকিগুলো থেকে যেকোন একটা বেছে নাও। এবং তোমার মেয়েকে আরো বেশি সাবধান হতে বল। আর তুমি নিজেও সাবধান থেকো।" গোলাপীর মা বলল, "এবার বরং আমি দ্বিতীয়টাই বেছে নেই। যাই হোক, পরিশ্রমের অভ্যাস তো তাহলে থাকবে। খারাপ কি? আমি এটাই বেছে নিলাম। আর পরী! তোমাকে অনেক ধন্যবাদ।" সকাল বেলা উঠে গোলাপীর মা সোজা বাগানে গেল। এবং মাটি খুঁড়তে শুরু করল। তিন সেকেন্ডেই সে একটা মুদ্রা পেল। এবং সেটা সে একটা ঝুড়ির মধ্যে রাখল। খুঁড়তে খুঁড়তে ১০০টা সে খুঁড়ল। এবং খুঁড়ে ঝুড়িটা বাড়িতে নিয়ে গিয়ে মোহরগুলো রেখে আসল। সে আবার এসে ২০০টা পেল। এভাবে ৩০০ টা পেল। এবার সে এত হাঁপিয়ে গিয়েছে, সে ভুলে তার মেয়েকে ডেকে নিয়ে এসে বলল, "তুইও একটু খুঁড়ে দে না, মা! হাতটা ব্যথা হয়ে গেছে। একটু খুঁড়ে দাও।" মেয়েটা রাজি হয়ে খুঁড়তে থাকল। কিন্তু মেয়েটা যত খুঁড়ল, আর পেল না। সে রেগে গিয়ে কুড়ালটা হাত থেকে মাটিতে ফেলে দিল। সে মাকে বলল, "তুমি এমন কর কেন? পাগলামির মত কর! আমাকে আবার বোকা বানানো হচ্ছে! একেকদিন একেক গল্প শোনাও! রাখ তো।" এই বলে মেয়ে ঘরে চলে গেল। মায়ের এত ক্লান্তি লাগছিল, সে ঘুমিয়ে পড়ল। ঘুমিয়ে স্বপ্নে দেখল, পরী এসে বলছে, "দু:খিত। তুমি আবার ভুল করেছ। এবং এবার তোমার নিজের ভুল। অতএব, আর তোমাকে সুযোগ দেয়া যাবে না। তুমি এত বড় ভুল কি করে করলে? ঠিক আছে, এবার তুমি তোমার শাস্তি ভোগ কর।" এই বলে পরী চলে গেল।
গোলাপীর মায়ের যখন ঘুম ভাঙলো, তখন সে নিজেকে দোষী ভাবতে লাগল। এবং আবার পরীর দেখা পেতে চাইল। এই আশায় সে আবার ঘুমালো, কিন্তু পরীর দেখা পেল না। সে রাত্রেবেলা যখন ঘুমালো, তখন সে ঝাপসা ঝাপসা পরীর মুখ দেখতে পেল। এবং পরী তার দিকে রাগের চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে। গোলাপীর মা বলল, "দয়া কর। আমাকে আরেকটা সুযোগ দাও। আর সুযোগ চাইব না। বাকি তিনটা থেকে কি আমি আর বেছে নিতে পারি? বল না!" পরী রাগ হয়ে বলল, "তোমার আচরণগুলো কিন্তু আমার অসহ্য লাগছে। স্বপ্নে যে তুমি আমার সাথে দেখা করতে পেরেছ এবং স্বপ্নের উপহার বাস্তবে পাচ্ছ, এটা তো কত বড় সৌভাগ্য! আর তুমি প্রথম সুযোগ হাতছাড়া করে দ্বিতীয় সুযোগও হাতছাড়া করলে? আমি জানি, এরপর তুমি যেটাই বাছবে, সেটাও হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। অতএব, আমি নিজেই তোমার জন্য একটা বেছে দিচ্ছি। তুমি জমিদার হওয়ারটাই বেছে নাও। আর তুমি গোলাপীকেও আসল কথাটা জানিও না। তুমি তাকে বলো, এবার তুমি স্বপ্নে দেখেছ যে, তুমি অনেক বড়লোক হয়েছো, কারণ, তোমার মেয়ে জীবনে অনেক ভালো কাজ করেছে। কী সুন্দর, কত সত্য কথা বলেছে! অনেক কিছু করেছে। তুমি আবার ব্যঙ্গ করার স্বরে এসব বলো না। নাহলে আরেকটু চাপা মারার চেষ্টা করো। তোমার মেয়ে যা আমি তো জানতাম না। এবার না বুঝেছি, তোমার মেয়ে কেমন। ঠিক আছে? আসি। এবার স্বপ্নে আমাকে ডাকলেও আমি আর সাড়া দেব না। কিন্তু যদি তুমি শুধু ধন্যবাদ দেওয়ার জন্য ডাক, তাহলে আমি শুধু এসে দেখা করে চলে যাব, আর জীবনেও আসব না। কারণ, তোমাদের আচরণ আমার ভালো লাগেনি।" এবার মা পরীর কথা অনুযায়ী সব কাজ করল। এবার মেয়েও যদি কাউকে কিছু বলে দেয়, তাহলেও পরী আর এই উপহার ফিরিয়ে নেবে না। কারণ, সে তো মিথ্যা কথাই মানুষকে বলবে। এরপর থেকে তারা জমিদারের জীবন কাটিয়েই সুখে-শান্তিতে বাস করতে লাগল। তবে এটা কিন্তু কাল্পনিক।