Monday, January 28, 2019

রূপালী ও তার ভাইয়েরা

এক ছিল এক পরিবার। সেই পরিবারে ছিল মা, বাবা, বড় দুই যমজ ভাই এবং ছোট এক বোন। তারা কিন্তু ছোট ছিল না। মা-বাবা একটু বৃদ্ধ ছিল। মানে ৪০/৫০ বছর। ছেলেগুলোর ১৮ বছর। এবং মেয়েটির ১৫ বছর। বড় ভাইগুলো অলস ছিল। ছোট মেয়েটি কাজ করতে পছন্দ করত। বড় দুই ভাইয়ের নাম ছিল জসিম এবং করিম। মেয়েটির নাম ছিল রূপালী। তাদের মা-বাবার একদিন কোন কারণ নিয়ে অনেক ঝগড়া হলো। ঝগড়া দিনে দিনে বাড়তেই থাকল। শেষে মা বলল, "থাকব না আর এই সংসারে। তুমি থাক তোমার বাচ্চাদের নিয়ে। আমি বাপের বাড়ি গিয়ে মা-বাবার সাথে সময় কাটাবো।" এই বলে মা সত্যি সত্যি তার বাড়ি চলে গেল। আর আসছে না। শেষে বাবাও বুঝে নিল, ও আর আসবে না। এবার আদালতে বাচ্চাদের জিজ্ঞেস করা হলো, "তোমরা কার সাথে থাকবে?" বড় দুই ভাই বাপের দলে ছিল। তাই তারা বাপের সাথেই থাকবে। মেয়েটি দু'জনকেই একেবারে সমান পছন্দ করতো। কিন্তু সে দেখল, তার বাবা ঠিকমতো কাজ করতে পারে না, উল্টোপাল্টা করে। মা তো সব ঠিকভাবেই করতে পারে। আর তার বড় দুই ভাই উল্টোপাল্টাও না, একেবারে কিছুই করতে পারে না। তাই সে বাবা এবং তার ভাইদের পরিবারেই গেল। এভাবে দু'জন আলাদা হয়ে গেল। বড় হয়ে তাদের বাবা মারা গেল। এখন বড় ভাইগুলো তো কোন কাজই করতে চায় না। ছোট বোন রূপালী একদিন জসিম ও করিমকে বলল, "এই! তোমরা এমন কেন? টাকাও তো আয় করতে পার কোনভাবে। এত অলস কেন তোমরা? পড়ালেখা ভালোমতো কর না কেন? পড়ালেখা না করলে আমাকে সাহায্য করার জন্য মেয়েদের মত বাড়ির কাজও তো শিখতে পারতে। কি করবে? বাড়িতে কাজ করবে, নাকি পড়ালেখা করে চাকরি করবে? যেকোন একটা করতেই হবে।" জসিম বলল, "এই, আমরা তোর বড় না? এমন করে কথা বলছিস কেন? আচ্ছা, যা। আমি ও করিম চাকরি করতে পারব না। আমি শুনেছি, চাকরি করা খুব কঠিন। ভাত একটু দেরিতে খাওয়া হলে তেমন কিছু হবে না। কিন্তু অফিসের কাজ করতে একটু দেরি হলে অনেক কিছু হতে পারে। তাই আমি আর করিম বাড়িতেই বাড়ির কাজ করব।" রূপালী বলল, "এ আবার কেমন কথা? উল্টা হয়ে গেল না? উপার্জন তাহলে আমি করব? ঠিক আছে! তোমরা যখন চেয়েছ, তাই হবে। এমনিতেও পড়াশোনা আমার ভালো লাগে। তাই আমি চাকুরি করব। কিন্তু তোমরা যদি ঠিকমতো খাবার না দিয়েছ না, খবর আছে! এমনিতে কিন্তু এই দায়িত্ব নিয়েছ। যাই হোক, এই কথাই রইল।" করিম বলল, "ঠিক আছে! কোন সমস্যা না, তুই চাকরি করিস। আমরা তোর খাবার রেডি করে দেব। এরপর থেকে রূপালী পড়াশোনায় সব বোর্ডের পরীক্ষায় বৃত্তি পেতে লাগল। কিন্তু সে যে বৃত্তি পেয়েছে, সেটা সে কাউকে জানালো না। বরং এক জায়গায় লুকিয়ে রাখল। এরপর সে খুব ভালো রেজাল্ট করল। এবার চাকরির পালা। রূপালী সব সার্টিফিকেট দেখিয়ে অনেক বেতনের চাকরি পেল। কিন্তু তার নিয়ম হলো সাড়ে সাতটার ভিতরে অফিসে গিয়ে গোছগাছ করে বসে থাকতে হবে। টানেমানে হলেও অনুপস্থিতি ধরা হবে। এবং অনুপস্থিতি মানে একদিনের বেতন কাটা যাবে। তার বাড়ি থেকে অফিসে আসতে ২০ মিনিট সময় লাগে। তার মানে ৭:০০ টার আগেই বাড়ি থেকে বের হতে হবে। ঠিকঠাক মতো গোছগাছ করতে পারার জন্য ১০ থেকে ১৫ মিনিট তো লাগবেই। আবার দুপুর বেলা বাড়ি আসতে হবে। এসে ঐ জিনিসপত্রগুলো রেখে অন্য জিনিস নিয়ে আসতে হবে। কি মনে হচ্ছে? সব জিনিস একবারে এনে হোটেলে খেলেই তো হয়। কিন্তু জিনিসগুলোর পরিমাণ এত বেশি, এক ধরনের জিনিস নিতেই হাত ব্যথা হয়ে যায়। আবার বিকাল বেলা বাড়ি আসতে হবে। এসে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত ফ্রি। কিন্তু আবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার সময় অফিসে অতিরিক্ত সময় অর্থাৎ ওভারটাইম করার ব্যবস্থা আছে। তবে সেটা করলেই ভালো। সে তার ভাইদেরকে গিয়ে পুরোটা খুলে বলল। এবং বলল, "সাড়ে ছয়টার মধ্যে খাবার যেন রেডি হয়। নইলে চাকরির দায়িত্ব কিন্তু তোমাদের দেব।" ভাইয়েরা বলল, "ঠিক আছে।" এই বলে তারা একটা বুদ্ধি বের করল। যাতে তাদের আর অত সকালে উঠতে না হয়। তারা সন্ধ্যা বেলায় আরামে-বিরামে ভাত রান্না করল। তাও আবার একজনের। কারণ, তারা বাসি ভাত খেতে চায় না। তারা ঐ ভাত পাশের বাড়ির ভালো ফ্রিজে রেখে আসল। এবং ঠিক করল, পরের দিন সকালে ঐ খাবার তারা টেবিলের উপর বোনের জন্য রেখে দেবে, আর সকাল দশটার সময় নিজেরা টাটকা ভাত রান্না করে খাবে। বোন যখন একটু পরেই উঠবে, তখন ভাই দুটো গিয়ে ভাতটা নিয়ে এসে টেবিলের উপর রাখল। এবং ঘুমিয়ে পড়ল। বোন সকাল বেলা উঠলো। এবং ভাইদেরকে ডেকে জিজ্ঞেস করল, "কিরে, খাবার কি তৈরি করেছিস? নাকি এমনি এমনি ঘুমোচ্ছিস?" করিম বলল, "বড় ভাইকে কেউ তুই বলে? তুই এমন করিস কেন? যা, দেখ, তোর খাবার টেবিলের উপর রাখা আছে।" এই বলে করিম আবার ঘুমিয়ে পড়লো। রূপালী ভাতটুকু মুখে দিল। এবং মনে মনে বলল, "ছি! খাবারটা এমন লাগছে কেন? টাটকা ভাত তো এমন লাগে না! আরো সুস্বাদু হওয়ার কথা। দাঁড়া, দেখাচ্ছি মজা! আমি তো আজকে শুধু প্রাকটিসের জন্য অফিসের কথা বলেছি। আসলে অফিস তো আগামী কালকে থেকে। দেখাই মজা।" এই বলে বোনটি ভালোমতোন ভাত রান্না করল। এবং নিজে ভালো ভাতটা খেয়ে নিল। এবং বাসি ভাত ভাইদের জন্য রেখে দিল। সে একটা কাগজের ভিতর লিখল, "জসিম এবং করিম ভাইকে রূপালী। এই ভাতটুকু তোমাদের জন্য উপহার। সময় বেঁচে গিয়েছিল তো, তাই।" এই লিখে সে কাগজটা প্লেটের পাশে রেখে অফিসের ব্যাগ আলমারির ভেতর ঢুকিয়ে রাখল। এবং গল্প করার জন্য তার বন্ধুর বাসায় বেড়াতে গেল। এবার জসিম ও করিমের শিক্ষা হবার পালা। তারা বোনের উপহার দেখে দারুন খুশি হলো। কিন্তু তারা দেখল, গরম ভাতের মত ধোঁয়া উড়ছে না। তাও তারা খেয়ে দেখবে বলে ঠিক করল। তাই তারা একটা লোকমা মুখে দিল। এবং বলল, "থু! এ আবার কেমন খাবার?" রান্নাঘরে শুধু একদিনের খাবারই রাখা ছিল। তাদের অফিসে আবার প্রথম দিন ওয়েলকাম ফি দেয়া হতো। মানে এমনি এমনি স্বাগতম জানানোর জন্য টাকা। বোন ভাবল, এই টাকা দিয়ে কয়েকদিন খাওয়া যাবে। তাই রান্নাঘরে অল্প খাবার ছিল। সবটুকুই রান্না শেষ। বোন ভালোটুকু রেঁধে খেয়ে চলে গেছে। আর বাসি ভাতটুকু তারা আগেই রেঁধেছে। এবার তাদের বাসি ভাত খাওয়া ছাড়া আর কোন উপায়ই নেই। তারা আরেকটু বাসি ভাত খেল। এরপর ঠিক করল, তারা আর খাবেই না। এভাবে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলো। তারা না খেয়ে আছে। তারা ভাবল, এর চেয়ে সকালে সবার জন্য টাটকা ভাত রাঁধলেই ভালো হতো। বিকেল বেলাই বোন চলে আসল। ভাইয়েরা বলল, "কিরে? তুই আমাদের জন্য ভুয়া উপহার রেখে গেছিস? এ আবার কেমন কথা? তোকে কিন্তু মেরে ভর্তা করে দেব। আমাদের সাথে মশকরা হচ্ছে, না?" মেয়েটি বলল, "তোমরা কেন আমার জন্য বাসি ভাত রেখে গিয়েছিলে? আমি আমার বন্ধুর বাড়ি গিয়েছিলাম আসলে। তোমাদেরকে শিক্ষা দেবার জন্য। আমি আমার বান্ধবীকে কিছু টাকা ধার দিয়েছিলাম। সে আজ ফেরত দিয়েছে টাকা। তা দিয়ে চাল কিনে এনেছি। শিক্ষা হয়েছে তোমাদের? কথা দাও, আর কোনদিন এমন স্বার্থপরের মত কাজ করবে না। নইলে আমি কিন্তু যেই চাল এনেছি, তা থেকে তোমাদের দেব না।" এই কথা শুনে ভাইয়েরা কথা দিল। এবং বোনও তার চাকরি ভালোভাবে চালিয়ে যেতে লাগল। এখানে গল্প শেষ।

No comments:

Post a Comment