Thursday, October 11, 2018

Re-Use

এক ছিল একটি মেয়ে। তার বাবা বিদেশে ব্যবসা করত। তার মা আর সে একটি ছোট বাড়িতে থাকত। বাবা বছরের শেষে অনেক টাকা নিয়ে আসত। কিন্তু পুরোটা দিত না। কারণ, একবার দিয়ে সে দেখেছে, পুরো টাকাই উধাও হয়ে গিয়েছে আজেবাজে খরচে। সেজন্য এখন আর পুরোটা দেয় না। এই বছরে বাবা ফিরে এল। টাকা দিয়ে খাবার-দাবার কিনে ভালমতই খাওয়া-দাওয়া করল। মেয়ের পড়াশুনার জন্য বাবা কিছু টাকা দিয়ে গেল। প্রতি মাসের বেতন আলাদা ভাগে আর বই-খাতা কেনার খরচ আরেক ভাগে করে দুই ভাগে টাকা ভাগ করল। আর সেগুলো ধরিয়ে দিয়ে গেল। তার সাথে খাওয়ার খরচও দিয়ে গেল। এবার বাবা তাদের বিদায় জানিয়ে বিদেশে আবার ব্যবসায় ফিরে গেল। কিন্তু বই-খাতা কেনার টাকা যথেষ্ট ছিল না। বাবাকে আরও টাকা দিতে বলায় সে খাতাগুলো reuse করতে বলল। মেয়েটি স্কুলে যাওয়া পরের বছর থেকে শুরু করল। ছয় মাস যাওয়ার পর সব খাতায় লেখা শেষ হয়ে গেল। কেউ ওর মত চিপিয়ে না লিখলে এক মাসেই সব খাতা শেষ হয়ে যেত। কিন্তু বছরের তো আরো ছয় মাস বাকি আছে। তাতে কিভাবে লেখা হবে? সে বুঝতেই পারছিল না। সে এক কাজ করল। সবথেকে পুরনো খাতার পৃষ্ঠাগুলো ছিঁড়ল। ছিঁড়ে কভার ছাড়া সেগুলো স্টাপলার করল। সেই যে কভার পেয়েছিল, অন্য বন্ধুর কাছ থেকে কিছু পৃষ্ঠা নিয়ে ঐ কভারের সাথে স্টাপলার করে দিল। এইভাবে আরো পাঁচ মাস চলে গেল। সব খাতাই এভাবে সে পুন:ব্যবহার করতে লাগল। কিন্তু সবথেকে শেষের মাসে পরীক্ষা। স্কুল থেকে খাতা দেবে না ছাই! স্কুল থেকে বলল, খাতা কিনে সেটাতে পরীক্ষা দিতে হবে। মেয়েটি তো মনে মনে শুধু বলে, "ধূত ছাই, আর ভাল লাগে না। শুধু নতুন নতুন খাতা কিনতে বলে।" সে এখন কি করবে? টিচার বলল, বাংলা লাইনের খাতায় পরীক্ষা দিতে হবে, কিন্তু দোকানে শুধু ইংলিশ লাইনের পরীক্ষার খাতাই পাওয়া যাচ্ছে। তার বন্ধুরা তাকে বলল, "তোমাকে আমরা অনেক পৃষ্ঠা দিয়েছি। এবার তুমি আমাদের খাতাগুলো বানিয়ে দাও। আমার অত পরিশ্রম করতে ভাল লাগে না বাপু! তোমার পাঁচ টাকা দিয়ে দেব। ইংলিশ পৃষ্ঠাগুলো ছিঁড়ে এই যে আমরা বাংলা পৃষ্ঠা দিচ্ছি, সেগুলো এটার সাথে স্টাপলার করে দিও। প্রত্যেকে পাঁচ টাকা করে দিয়ে দেব।" মেয়েটি পরিশ্রম করতে ভালই বাসত। সে সবার খাতা নিয়ে ভাল করে তৈরি করে দিল। ওরা সবাই খুশি হয়ে গেল। তার বন্ধুরা বলল, "কিন্তু এখান থেকে যে ইংরেজি পৃষ্ঠাগুলো ছিঁড়েছ, সেগুলো আর দিতে হবে না। অত পৃষ্ঠা দিয়ে আমি কি করব? আমার তো টাকার অভাব নই। বাবা প্রতি মাসে মাসেই বিদেশ থেকে আসে। আর তোমার তো বছরের শেষেই কেবল একবার আসে। তুমি ইংলিশ পৃষ্ঠাগুলো রেখে দাও। স্টাপলার করে কভার লাগিয়ে নিজের খাতা বানিও। আর পাঁচ টাকা নিয়ে নাও।" কিন্তু এখন তো বছরের শেষ। এখনো পৃষ্ঠা দিয়ে কি করবে? কিন্তু তাও সে পৃষ্ঠাগুলো কভার সহ স্টাপলার করে রাখল। পরের বছর বাবার টাকা দিয়ে চালানোর অপেক্ষায় থাকল না। পরের বছর যাতে ইংরেজি খাতা কেনার টাকা খরচ করতে না হয়, সেই বুদ্ধি বের করে সে আগে থেকেই খাতাগুলো বানিয়ে নিল। শেষে বাবা বিদেশ থেকে ফিরল। বাবা বলল, "মা ফোন দিয়ে বলেছে, তোমার পড়াশোনার খাতা নাকি তুমি বারবার রি-ইউজ করছ।" "হ্যাঁ, করছি।" "এটা ভাল বুদ্ধি, তবে এতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। তাই আজ থেকে ঠিক করেছি, প্রতি বছর বেশি করে টাকা তোমাদের হাতে তুলে দিয়ে যাব, কিন্তু তোমরা সাবধানে ব্যবহার করো।" মেয়েটি বলল, "দেখ বাবা, আমার অনেক বন্ধু আছে। সবাই অলস। আমাকে দিয়ে ওদের খাতা বানিয়ে নিয়েছে। তার সাথে আমায় যে ৫ টাকা করে করে দিয়েছে, তাতে ১০০ টাকা আমি নিজেই আয় করে নিয়েছি, দেখো।" বাবা বলল, "বাহ! ভালোই করেছ। এই ১০০ টাকা তোমার যা ইচ্ছা তা কিনতে পার। তবে এখন থেকে আমি বেশি টাকাই দিয়ে যাব। যেগুলো রি-ইউজ করার জন্য তুমি বানিয়ে রেখেছ, সেগুলো শেষ হয়ে গেলে এই টাকাগুলো দিয়ে নতুন নতুন খাতাপত্র, কলম-টলম সব কিনবে।" এরপর থেকে মেয়েটির লেখাপড়ার পুরোপুরি ঝামেলা মিটে গেল। কিন্তু অনেকের এরকম ঝামেলা মেটে না। তাই তাদের উপায় হলো রি-ইউজ করা।