Friday, August 31, 2018

পঙ্ক্ষীরাজ গরু ও জোনাকির মালা

এক ছিল এক সুখী পরিবার। সেই পরিবারে থাকত মা, বাবা ও ভাই-বোন। কিন্তু একদিন একটা বড় ঝড় এল। এমন ঝড় এল, যে বাড়িও উড়াল না, মা-বাবাকেও উড়াল না। কিন্তু শুধু ভাই-বোনকে উড়িয়ে নিয়ে গেল। ভাইয়ের নাম ছিল রবি, আর বোনের নাম ছিল ছবি। রবি আর ছবি গিয়ে পড়ল এক আজব জায়গায়। তারা সবকিছু ভুলেও গেল, কিন্তু একে অপরকে চিনত। সেই জায়গায় শুধুমাত্র ছিল একটি কলাগাছ, একটি গরু ও একটি নদী। নদীর পানি ছিল খুব পরিস্কার। খাওয়ার উপযোগী। তাদের মাথায় বুদ্ধি ছিল খুব। তারা ঠিক করল, কলা, দুধ এবং পানি খাবে। এবার এসব খেতে খেতে এক মাস পেরিয়ে গেল। আরো এক মাস পেরিয়ে গেল। এরকম করতে করতে খাবারগুলো তাদের কাছে বোরিং (একঘেয়ে) হয়ে গেল। তাদের আর শুধু এরকম খেতে ভাল লাগে না। তারা কি খাবে? কিন্তু তাদের মাথায় বুদ্ধি ছিল আগেই বলেছি। তাই তারা লাকড়ি যোগাড় করল। মাটি দিয়ে একটি পাত্রও বানালো। পাথরের সাথে পাথর ঘষে এবার আগুন জ্বালালো। তারপর পাত্র আগুনের উপর বসালো। আর পাত্রের মধ্যে দিল কলার থোড়। তৈরি হল সুস্বাদু সবজি। আরো এক মাস এই সবজি খেয়েই কেটে গেল। তারপর তাদের মনে হলো, স্বাদটা ভালো লাগছে না। রবি ছবিকে বলল, "শোন! তোমার কি এটা খেতে ভাল লাগছে? আমার তো আর ভালই লাগছে না।" ছবি বলল, "নতুন একটা রেসিপি তৈরি করা যাক। দুধ আর কলার ভর্তা বানালে কেমন হয়?" রবি বলল, "তাহলে তো দারুনই হয়। খেয়ে দেখে যদি মজা লাগে, তাহলেই তো হয়।" এরপর তারা শুরু করল এবং কলা ও দুধের ভর্তা বানালো। কলা ও দুধের ভর্তা বানিয়ে তারা খেল। এভাবে বদল করে করে অনেকদিন কেটে গেল। একদিন তাদের মনে পড়ে গেল তাদের বাড়ির কথা। ছবি বলল, "এই রবি! তোমার মনে আছে, একটা ঝড় আসল, আর কি জানি একটা হলো? তারপর থেকেই দেখি আমরা এখানে।" তখন রবি বলল, "তাই তো? কি হবে এখন? ভুলেই তো গিয়েছিলাম। এতদিন কিছুই মনে পড়েনি। ভেবেছিলাম, এখানেই জন্ম আমাদের।" এরপর হঠাৎ আকাশ থেকে একটি সুতা পড়ল। আর সুতার সাথে একটা কাগজ বাঁধা। সেই কাগজে লেখা: "এই সুতো দিয়ে কলাপাতা গরুর গায়ে বেঁধে দাও। গরুটা তখন উড়তে পারবে, পঙ্ক্ষীরাজের মতই কাজ করবে। কিন্তু মনে রেখো, সেটা হলো, সেই গরু এমন পথ দিয়ে যাবে, যেই পথ মন্ত্রপুত এবং সেই পথে গেলেই খিদে পায়। সেজন্য খাবার নিয়ে যেতে হবে। আর তখন এমন কিছু নিয়ে যেতে হবে, যেটা কোনদিন খাওয়া হয়নি। সব পরিচিত খাবারই যদি কেউ খায়, তাহলে গরু ওড়া বন্ধ করে দেবে। গরুটা যদি নদীর উপর দিয়েও যেতে থাকে, তাহলেও গরুটা নদীর মধ্যে গিয়েই পড়বে। সবগুলো ধাপ ঠিকমত মেনে চললে তবেই তোমরা বাড়ি পৌঁছাতে পারবে এবং মা-বাবাকে দেখতে পাবে। যত তাড়াতাড়ি চাও, তত তাড়াতাড়ি গোছগাছ শুরু করে দাও।" রবি ও ছবি দুজনেই কাগজটা ভাল করে পড়ল। একে অপরের দিকে তাকালো। তারপর রবি বলল, "প্রথম কাজটা তো খুবই সহজ, সুতো দিয়ে কলাপাতা গরুর গায়ে বেঁধে দিতে হবে। কিন্তু নতুন খাবার আর কি আছে। আসলে আমরা খাবার বদলে বদলে ভুল করে ফেলেছি। এখন তাহলে কি করা যায়?" তখন ছবির মাথায় একটা বুদ্ধি আসল। সে বলল, "এত তাড়াতাড়ি হাল ছেড়ে দিচ্ছ কেন? নিশ্চয়ই আশেপাশে কিছু একটা আছে।" তারপর হাঁটতে হাঁটতে দেখল, দূরে অনেক মাছি ওড়াওড়ি করছে। ছবি দেখতে গেল। গিয়ে দেখল, একটা ছোট্ট গাছ। সেই গাছে আঙ্গুরের মত দেখতে কিন্তু বাদামের মত শক্ত একটা ফল। আর কয়েকটা নিচে পড়ে গেছে, আর গন্ধটাও খুব সুস্বাদু। আর ওগুলোর চারপাশ দিয়েই মাছি শুধু ঘোরাঘুরি করছে। ছবি কিছু কিছু ফল নিয়ে নিল। রবিকে সব ঘটনা বলল। রবিও গিয়ে কিছু ফল তুলে আনল। কলাপাতা বাঁধার পর দু'জনেই গরুর পিঠে উঠে বসল। আর গরুটি উড়তে শুরু করল। তারা উড়তে থাকল, কিন্তু তাদের খিদেই পাচ্ছিল না। এক জায়গায় এসে হুট করে অনেক খিদে পেয়ে গেল। তারা ফলগুলো খেতে শুরু করল। কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি তা শেষ হয়ে গেল। এখন তাদের তরল কিছু খেতে ইচ্ছে করছে। কি খাবে? ভেবেই পাচ্ছে না? এমন সময় তারা দেখতে পেল, একটা মৌচাক। মৌচাক থেকে টুপ টুপ মধু পড়ছে। অমনি তারা গরুটি নিচে নামিয়ে মৌচাকের কাছে হা করে বসল। আর কয়েকটা ফোঁটা তাদের মুখে পড়তে না পড়তেই গরুর কলাপাতাগুলো ছিড়ে গেল। এরপর তারা নিচেই বসে রইল। তাও ভাল, একটু নিচে এসে পড়ল। নাহলে তো মরেই যেত। এখন একে অপরকে বলাবলি করল, "ইস! কেন যে মধুটা খেতে গেলাম? তুমি আমাকে মনে করিয়ে দিলে না?" "আরে, আমি কি মনে করাব, তুমিই তো মনে করালে!" এরকম করে ঝগড়াই করতে লাগল। অবশেষে ঝগড়া থামল। এখন তারা কি করবে? ভেবেই পাচ্ছিল না। হঠাৎ তাদের মাথায় একটা বুদ্ধি এল। সামনেই এক নদী। আর নদী পেরোনো যাবে চারপাশের কাঠ দিয়ে নৌকা বানালে। তারা তাই করল। নদী পার হয়ে গেল। তারপর তারা আবার একটা গুহা দেখল। সেই গুহার মধ্যে তারা ঢোকার চেষ্টা করল, কিন্তু পারল না। গুহা পুরো খোলা, তাও ঢুকতে পারছে না। বোধহয় কোন অদৃশ্য দরজা। হঠাৎ টাকাটাকি করতে করতে ভিতর থেকে আওয়াজ আসল। কে যেন বলে উঠল, "কে রে আমার গুহায় ঢুকতে চাচ্ছে? কে আমার গুহায় ঢুকতে চাচ্ছে, নামটা বল শুনি? ভয় পেয়ো না, কিছু বলব না। কিন্তু নামটা বল। টাকাটাকি করছ কেন? শুধু নামটা বল, টাকাটাকি করো না।" ওরা জবাব দিল, "আমরা দু'জন রবি আর ছবি। কিন্তু তুমি কে?" অদৃশ্য দরজা খুলে গেল। রাক্ষসের মত একজন মানুষ এসে দাঁড়ালো। সে বলল, "আমায় দেখে ভয় পেয়ো না কিন্তু। কি হয়েছে, আমাকে বল। আর দাসী, তুমি বাইরে চলে এসো। এরা কি করতে এসেছে, তা জিজ্ঞাসা কর।" একটু পর একটা পরী আসল। সে বলল, "কি গো? কিছু বুঝতে পারলে তোমরা দুজন রবি আর ছবি? আমার চুল দেখেও কিছু বুঝতে পারলে না? আসলে এই দৈত্যই তো আমাকে পাঠিয়েছিল তোমাদেরকে সাহায্য করার জন্য। কিন্তু তোমরা এটাও চিনতে পারলে না? যে রশিটা কাগজের সাধে বেঁধেছিলাম, সেটা আমারই চুল। কিন্তু তোমরা ভুল কাজ করেছ। মধুটা খেলে কেন? এবার আমি কি করব? চলে যাও এখান থেকে। বিরক্ত করো না। আর এদিকে এসো না। যেখানে খুশী যাও। সাহায্য করতে চেয়েছি, সবকিছূ তো মানলেও না।" এই বলে আর অদৃশ্য দরজা নয়, বরং দৃশ্যমান দরজাই পরী বন্ধ করে দিল। রবি আর ছবি কি করবে? এমন সময় একটা জোনাকি পোকা আসল। জোনাকি পোকা এই রূপকথার রাজ্য ছেড়ে মর্ডার্ন রাজ্যে গিয়েছিল। অর্থাৎ, আমাদের এই সমাজে। সেখানে গিয়ে সে বিজ্ঞানীদের কাছ থেকে একটা Animal Talking Converter নিয়ে আসল। এরপর রবি ও ছবির সাথে কথা বলা শুরু করল। সে বলল, "শোন রবি ও ছবি! আমি তোমাদের সাহায্য করতে চাই। কি চাও তোমরা, বল? কিন্তু সেজন্য আমার একটা কাজ করে দিতে হবে। করবে নাকি আগে বল।" তখন রবি বলল, "ঠিক আছে! যদি আমরা কাজটা করতে পারি, আমাদের বাড়ির পথ দেখিয়ে দিও।" জোনাকি পোকা বলল, "শোন তবে। আমার অনেকদিনের শখ, গলায় একটা মালা পরব, কিন্তু আমার সাইজের মালা কোথাও নেই। তাই তা তোমাদের বানিয়ে দিতে হবে। তাহলে আমি তোমাদের বাড়ির পথ দেখাব।" রবি ও ছবি হেসে ফেলল। জোনাকি বলল, "হাসার কি হলো? আমার কি শখ-আহলাদ থাকতে নেই? এই তো ছবি একটা মালা পরে আছে। কী সুন্দর! আর আমার সাইজের মালা কেউ বানায় না! একদম হাসবে না। হাসলে কিন্তু পথই দেখাবো না। দাও, আমায় আমার সাইজের মালা দাও।" ছবি রবিকে বলল, "এ তো আমার বাম হাতের কাজ। আমি এক্ষণি বানিয়ে দিচ্ছি। তুমি দেখ, জোনাকি পোকা কোথাও হারিয়ে না যায়।" এই বলে ছবি একটা শিউলি ফুল নিল। পাঁপড়িগুলোকেও ছোট ছোট ভাগ করল। এরপর একটু একটু করে মালাটা গেঁথে শেষ করল। জোনাকি পোকাকে বলল, "এই নাও, তোমার মালা। তুমি এখন সেজেগুজে আমাদের পথ দেখিয়ে দাও। নাহলে কিন্তু আবার তোমার ঐ মালা ছিড়ে দেব, আর বানিয়ে দেব।" জোনাকি পোকা বলল, "আমি কি কথার খেলাপ করি নাকি? চল, আমার পিছ পিছ আস। কিন্তু অন্য কোথাও মনোযোগ দিও না। আমি কিন্তু খুব দ্রুত উড়ি। একটুতেই কিন্তু হারিয়ে যেতে পারি। না দৌড়ালে আমার সাথে তাল মেলাতে পারবে না। তাহলে দৌড় দাও।" এই বলে জোনাকি ওড়া শুরু করল। ছবি ও রবি পিছ পিছ দৌড়াতে শুরু করল। এরপর তারা খুবই সাবধান ছিল। আগে যেমন ঠিক ঠাক কাজ করেনি, এবার তা করলে চলবে না। অবশেষে তারা বাড়িতে পৌঁছালো। মা-বাবা তাদের পেয়ে বলল, "কোথায় ছিলি এতদিন? কোথায় গিয়েছিলি? কেন গিয়েছিলি? রাতে তো ঝড় এল। তার পরদিন থেকেই তোরা নিখোঁজ। তোদের পাওয়াই যায় না। কত খুঁজেছি তোদের? কোথায় গিয়েছিলি তোরা?" রবি ও ছবি একটু বিশ্রাম নিয়ে পুরো ঘটনাটা মা-বাবাকে বলল। এরপর মা-বাবা বলল, "ভাগ্য ভাল তোরা ফিরে আসতে পেরেছিস। তাও ভাল জোনাকির কথা মেনেছিস। কিন্তু জোনাকির মালার কথাটা কিন্তু খুব মজার ছিল। তোরা ফিরে এসেছিস, এটাই আমাদের সান্ত্বনা।"

Saturday, August 11, 2018

কলমি শাক আবিস্কার

এক ছিল এক গ্রাম। সেই গ্রামে জলাশয়ের কোন অভাব ছিল না। কিন্তু সেই দেশের লোকেরা একটা জিনিসে বিরক্ত হতো। কারণ বেশির ভাগ জলাশয়েই জঙ্গল হতো। আসলে সেগুলো কলমি শাক ছিল। সেই দেশের মানুষ তাকে খাদ্যই মনে করত না। এটা নিয়ে তারা কখনো ভাবেইনি। তারা ভেবেছে এসব হয়তো জঙ্গলী গাছ। পাশের দেশে আবার খাদ্যের খুব আভাব। অনেকে না খেয়ে মরে যাচ্ছে। তাদের খাবার খোঁজারও শক্তি ছিল না। না খেয়ে অনেক কাহিল ছিল। সবারই অসুখ খাবারের অভাবে।একজন ছিল খুব শক্তিশালী। সে ভাবল, আমার ভাই বোনদের আর মরতে দেয়া চলে না। এই ভেবে সে সবার বাড়ি গেল। বলল,"তোমাদের চার ভাগ খাবারের এক ভাগ কি আমায় দেয়া যায়।ভায়েরা, তোমাদেরই লাভ। আমার শক্তি হলে তোমাদের সবার জন্যই খাবার আনব। তখন পেট ভরে খেয়ো।চার দানা ভাতের এক দানা আমায় দাও।" সবাই তাকে চার ভাগের এক ভাগ খাবার দিল। কেউ খুশি হয়ে দুই ভাগও দিল। লোকটি সব খাবার খেয়ে একটু তরতাজা হলো। তারপর সে পাশের দেশে খবর নিতে গেল। সে এত্‌তো জলাশয় দেখে খুব খুশি হল। তবে আসল খুশি হলো কলমি শাক দেখে। কিন্তু সে ভাবতে লাগল, ইস! এরা কি এসব নেয়ার অনুমতি দেবে? টাকা ছাড়া? এটা ভাবতে ভাবতেই একজন লোক আসল। হয়ে গেল মেঘ না চাইতেই জল। সে বলল, "ভাই! দেখুন তো, আমার তিনটে জলাশয়। তিনটে জলাশয়ের মধ্যেই এসব জঙ্গল বেরিয়েছে। আপনি মেহেরবানি করে আমার এ জলাশয় তিনটি একটু পরিস্কার করে দিতে পারেন? আমি আপনাকে এর জন্য টাকাও দেব।" লোকটি খুশীর চোটে আত্মহারা হয়ে গেল। কিন্তু সে ভালো লোকও ছিল। তবে চালাকও ছিল। সে আগে বলল, "ঠিক আছে।" এই বলে সে সব জঙ্গল সাফ করল। সে তো খুশীই হলো যে, কলমি শাক খেয়ে না জানি কত্‌তো খুশি হবে সবাই! আর বাকি যে টাকা, তা দিয়ে চাল কিনব। ভাত দিয়ে কলমি শাক খাবে সবাই। বেশ মজা হবে।" সে জঙ্গল পরিস্কার করার পর টাকা নিয়ে মনের আনন্দে নিজের দেশে ফিরে গেল। সবাইকে খাবার খাওয়ালো। সবাই খুব খুশি হলো। কিন্তু লোকটি ভালো লোক হওয়াতে সে আবার ঐ দেশে গেল। সে বলল, "ভাইসব! তোমরা একটা কথা শুনবে? এমন কোন পুকুর কি তোমাদের কাছে আছে, যাতে সবসময় তোমরা যেটাকে জঙ্গল বল সেটা হয়?" তখন একজন বলল, "উত্তর দিকে অনেক এরকম জলাশয় আছে।" তখন লোকটি বলল, "ঠিক আছে। এর অর্ধেক সংখ্যক জলাশয় আমার কাছে বিক্রি করে দিতে হবে। তাহলে তোমাদেরকে আমি এক নতুন খাবারের সন্ধান দেব। এতে তোমাদের জলাশয়ও পরিস্কার থাকবে, আবার পেটও ভরবে। বুঝতে পেরেছ নিশ্চয়ই? নাকি আরো সহজ ভাষায় বলে দেব?" সবাই বুঝে গেল। সেই দেশের মানুষ আবার সৎ ছিল। সে অর্ধেক সংখ্যক জলাশয় তার কাছে বিক্রি করে দিল। আর বাকি জলাশয় থেকে শাক উঠিয়ে উঠিয়ে প্রথমবারের মত রান্না করে খেল। তারপর বলল, "ভাই! তুমি একটা বড় উপকার করলে। তোমাদের দেশের মতনই মাঝেমধ্যে আমাদের দেশেও খাবারের আকাল পড়ে। আমরা আসলে ভাবতাম, জঙ্গল না হয়ে যদি কোন খাদ্য হতো! আসলে এগুলোই দেখি খাদ্য। কেন যে আগে বললে না!" তারপর লোকটি অর্ধেক সংখ্যক জলাশয় কিনে নিয়ে মনের সুখে দেশে ফিরে গেল। আর সে ঐ জলাশয় থেকেই সবাইকে একটু একটু করে সবাইকে সবসময় শাক দেয়। কারো দরকার হলেই একটুখানি দিয়ে দেয়। আর যেই দেশের লোকেরা এটা খাওয়া জানত না, তারাও এখন এসব খেতে পারে, আর খাবারের আকাল পড়লেও কলমি শাক খেয়ে বাঁচে।

Friday, August 10, 2018

মোটকা ছেলে আর শুটকি ছেলে

এক ছিল এক লোক। তার ছিল দুই ছেলে। তবে দুইজন খুবই আলাদা। একজন সুইয়ের মতন শুটকি, আবার আরেকজন ঢোলের মতন মোটকা। মোটকার তো নড়তে চড়তে সময় লাগে, এটা হলো তার সমস্যা। আর সে শুটকির গায়ের উপর পড়লে শুটকি হেরে যায়, এটা শুটকির সমস্যা। তবে শুটকি হেরে গেলে সেটা আবার মোটকা পছন্দ করে। আবার শুটকি নিজেও শুটকি, তার নখও শুটকি আর ধারালো। মোটকার সাথে যখন সে পারে না, তখন নখ দিয়ে একটা খোঁচা দিয়ে দেয়। তখন মোটকা আবার হেরে যায়। এই নিয়ে লোকটির ভীষণ সমস্যা। তার ছেলেরা ২৪ ঘন্টা মারামারি করে। খেতে বসলেও একজন আরেকজনকে গুঁতা দেয়। মোটকা তো খাওয়ার সময় শুটকিকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে চায়, আর শুটকি শুধু নখ দিয়ে মোটকাকে গুঁতাতে চায়। ঘুমাতে গেলেও শুটকি নখ দিয়ে মোটকাকে খোঁচায়, আর মোটকা শুধু শুটকিকে চেপে ধরতে চায়। সেইজন্য লোকটি সবসময় মাঝখানে শোয়। যাইহোক, ছেলেরা বাবার কাছে আবার ভদ্র। বাবার সাথে আর কিছুই করতে পারে না। তবে বাবার মাথার উপর দিয়ে মাঝেমধ্যে দু'জনেই মুখ উঠিয়ে চোখ রাঙিয়ে একে অপরের দিকে তাকায়। বাবার এই এক সমস্যা। স্কুলে পাঠালেও সবসময় স্কুল থেকে বের করে দেয়। দু'জন মিলে সবসময় গুঁতাগুঁতি করে, এটা টিচারের সহ্য হয় না। আবার মোটকা যখন শুটকির মত অন্য কাউকে দেখে, তখন সে ভুল করে তার দিকে হাত বাড়িয়ে চেপে ধরতে নেয়। আর শুটকিও মাঝে মাঝে মোটকার মত অন্যদের নখ দিয়ে অন্যদের খোঁচা দিতে নেয়। কিন্তু সত্যি সত্যি দেয় না। এজন্য টিচার শুধু তাদের বের করে দেয়। তাদের বাবা তো মহা সমস্যায় পড়ল। কী করবে? হঠাৎ সে একটা বুদ্ধি পেল। সে বলল, "যে করেই হোক, দু'জনকে সেইম সাইজের করতে হবে। কিন্তু কিভাবে করব?" এরপর সে একটা বই পেল। বইতে লেখা, "বেশি মোটা হওয়া ভাল নয়, এজন্য কেউ বেশি মোটা হয়ে গেলে খাওয়া কমাতে হবে আস্তে আস্তে। আর বেশি শুটকি হওয়াও ভাল নয়, সেজন্য বেশি বেশি খেতে হবে।" তাদের বাবা এই বইটা পেয়ে অনেক খুশি হলো। সে এক কাজ করল। দু'জনের থালা বদলে দিল। শুটকির কম খাবার দিয়ে দিল মোটকার পাতে, আর মোটকার বেশি খাবার দিয়ে দিল শুটকির পাতে। যাই হোক, তারা তাদের বাবার কথা অমান্য করতে পারবে না, কিন্তু "দু'জন ঝগড়া বা মারামারি করো না"- এই কথাটা সবসময় অমান্য করে, যেহেতু এটা তাদের অভ্যাস। তারপর মোটকা ছেলেটি বাবাকে জিজ্ঞেস করল, "এ কি? শুটকির থালা আমায় আর আমার থালা শুটকিকে, ব্যাপারটা কি? এত কম খাবার খেয়ে আমি থাকব কি করে, শুনি?" তখন তার বাবা যাতে তার ছেলেরা খায়, এজন্য একটি মিথ্যে কথা বলল। সে বলল, "কম খেলে নাকি বেশি মোটা হওয়া যায়। যাতে তুমি শুটকিকে আরো বেশি করে হারিয়ে দিতে পার। আর শুটকি যদি এখন থেকে বেশি খাবার খায়, তাহলে সে আরো বেশি শুটকি হয়ে যাবে, একেবারে মাইক্রোস্কোপ দিয়েও দেখতে পাবে না। আর অত যদি ছোট হয়, তাহলে ওর গুঁতা তুমি পাবে কি করে? খেয়ে নাও।" মোটকা ছেলেটি তো খুশি হয়ে বাবাকে বলল, "ঠিক আছে, আমার পাত থেকে আরো ক'টা খাবার নিয়ে শুটকিকে দিয়ে দাও।" বাবা খুশি হয়ে তাই করল। শুটকি আবার বলল, "এহ! কী বল? আমি নাকি মাইক্রোস্কোপ দিয়েও দেখার যোগ্য হব না, না? আমার পাত থেকে ওকে উঠিয়ে দাও।" তখন বাবা বলল, "আচ্ছা, ঠিক আছে।" এই বলে বাবা সবাইকে সমান দিল। তবে শুটকির থালায় ২% বেশি আর মোটকার থালায় ২% কম। তবে বাবা দুইজনের কানে কানে গিয়েই এখন থেকে বলে যে, "বেশি খেলে শক্তিশালী হবে, আবার কম খেলেও শক্তিশালী হবে।" দুইজনকে দুই রকম কথা বলে। এরকম করতে করতে তার ছেলেরা এক পর্যায়ে সমান হয়ে গেল। এখন তারা আর ঝগড়াঝাটি করতে পারে না। একজন আরেকজনকে গুঁতালে আরেকজন একই শক্তিতে গুঁতায়। কেউ চ্যাপ্টাও হয় না, আবার কেটেও যায় না।