Thursday, September 20, 2018

গরীবের মেয়ের জেদ

এক ছিল গরীব মা ও মেয়ে। তারা খুবই গরীব ছিল। থাকত ছোট্ট একটি কুঁড়েঘরে। মা এতেই শুকরিয়া আদায় করত। কিন্তু তার মেয়ে এতে খুশি ছিল না। সে সবসময় ধনী হতে চাইতো। একদিন তার আশা পূর্ণ হয়ে গেল। সে ঘুমোচ্ছিল। সকালে উঠে দেখল, সে একটি সুন্দর বিছানায় শুয়ে আছে এবং তাদের বাড়িটি দোতলা সুন্দর জমিদারের বাড়ির মত হয়ে গেছে। মেয়েটি তো খুব খুশী। খুশীতে আর বাঁচেই না। কিন্তু এখন তার কাজ করে খেতে ভাল লাগে না। মা-ই তার জন্য খাবার যোগাড় করে, আর মেয়ে বসে বসে খায়। সবসময় বাড়ির ভিতর আরাম-আয়েশেই থাকে। এমন সময় বর্ষাকাল এল। মেয়েটি তখন সকাল বেলা বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। হঠাৎ নামল বৃষ্টি। মেয়েটি একটি দোলনায় বসেছিল। সে দোলনা থামাতে থামাতেই মুষলধারে বৃষ্টি নেমে গেল। সে বৃষ্টিকে ধমক দিয়ে বলল, "কেমন বৃষ্টি তুই? দেখছিস, দোলনায় বসে আছি, একটু আরাম করছি; মধ্যে এসে নামলি মুষলধারে?" মেয়েটির বাড়ি পর্যন্ত ঢুকতে ঢুকতেই সে ভিজে জবজবা হয়ে গেল। মা তাকে বলল, "বৃষ্টিতে ভিজে গেছিস? আচ্ছা, ঠিক আছে। জামাকাপড় বদলে আয়।" মেয়ে বলল, "আশ্চর্য তো! আমরা এখন ধনী। ধনী মায়েরা কি বলে, তা জান না? বৃষ্টি হলো, আর তোমার মেয়ে তাতে ভিজে গেল। তুমি কোথায় বকে শেষ পাবে না, অথচ তুমি ঠিক আছে বলে উড়িয়ে দিচ্ছ। আমরা এখন ধনী এটা তুমি বুঝতেই পারছ না। ধুত!" এই বলে মেয়েটি কাপড় বদলে এল। দুপুরের খাবার পর মেয়েটির প্রচণ্ড জ্বর এল। মা এসে বলল, "কিরে, জ্বর হলো নাকি? বৃষ্টিতে ভিজলে তো তোর জ্বর হয় না।" জ্বরের মধ্যেও মেয়েটি মাকে ধমক দিয়ে বলল, "উহ, মা! আমরা এখন ধনী। বৃষ্টিতে ভিজলে তো জ্বর হবেই।" মা বলল, "ঠিক আছে, ঠিক আছে। এই নাও।" এই বলে মা একটা ভেজা মোজা ওর মেয়ের মাথার উপর দিয়ে দিল।" মেয়েটি রাগ হয়ে মোজাটি ছুঁড়ে ফেলে দিল। বলল, "উহ, মা! আমরা ধনী কয় হাজারবার বলতে হবে তোমাকে?  কেমন মাথায় মোজা দিয়ে চলে যাচ্ছ?  আমরা কি গরীব? যাও, ওষুধ, সাপোজিটরি, থার্মোমিটার সবকিছু কিনে নিয়ে আস।" মা বলল, "এ মা! তুমি মোজাটা ছুঁড়ে ফেলে দিলে? আচ্ছা, ঠিক আছে। এই নাও তোমার ডিক্টুরে জিনিসপত্র।" মেয়েটি ধমক দিয়ে বলল, "উহ, মা! আমরা গরীব নই। একটু ইংরেজিও তো জানতে হবে। তুমি কি বললে, ওটা তো আসলে ডাক্তারী। ওহ! আর পারি না।" এভাবে সাতদিন পর জ্বর থামল। এবার আবার শুরু হল খরা। মেয়েটি বাইরে বের হল। তার দামী খেলনা দিয়ে খেলতে। হঠাৎ এমন রোদ বের হল, যে তার মাথাই ফেটে যায়। সে রোদকে ধমক দিয়ে বলল, ইস! কেমন রোদ? একটু খেলতে বসেছি, এখন মাথা ফাটিয়ে দিচ্ছে। যা! কিন্তু রোদ গেল না। মেয়েটি ভীষণ রেগে গিয়ে খেলনা নিয়ে বাড়িতে চলে গেল। মাকে বলল, "শোন মা, রোদ না খুব বাজে। মাথাই পুড়িয়ে দিল।" এ বলে মেয়েটি দামী বাথটবের মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়ল। আর কল ছেড়ে দিল। মা বলল, "করিস কি, করিস কি? ওভাবে ঘেমে এসে কেউ গোসল করতে যায়?" কিন্তু মেয়েটি কথা শুনল না। এরপর তার ঠাণ্ডা লাগল। সেটাও বেশ কিছুদিন পরে থামল। এরকমই আরো নানারকম অসুবিধা হতে লাগল। এরপর সে মাকে বলল, "উহ! মা! ধনী হয়েও শান্তি পাচ্ছি না। একটু খেলতে বেরোলেই রোদ আসে। বৃষ্টি নামে। একদম ভাল লাগে না।" মা মুচকি হেসে বলল, "কিরে, মা! এখন তুমিই বলছ যে, ধনী হলে সমস্যা? তাহলে কি আবার গরীব হতে চাও? রোদ-বৃষ্টি এগুলো তো আসবেই। ঋতু পরিবর্তন কি হবে না? সব কি তোমার কথা শুনবে? তুমি 'যা' বললে রোদ-বৃষ্টি যাবে, আর 'আয়' বললে আসবে; রোদ-বৃষ্টি কি তোমার চাকর নাকি? শুধু গরীব হলে এগুলোতে তোমার কষ্ট হয় না। ধনী হয়েছ, তাই এগুলোতে তোমার কষ্ট হচ্ছে।" মেয়ে মায়ের এত বকবকানি শুনে অস্থির হয়ে গেল। সে মাকে বলল, "উফ, মা! এত জ্ঞান দিও না তো! এত্থেকে গরীব হলেই বেশি ভাল।" এরপর থেকে মেয়েটি গরীব হতেই চায়। একদিন ঘুম থেকে উঠে দেখল, তারা আবার গরীব হয়ে গেছে। প্রথমে তো মেয়েটি বলল, "বাহ! বাঁচা গেল।" এবার সে কয়েকদিন রোদ-বৃষ্টির মধ্যে খেলল, কিন্তু কিছু হলো না। কিন্তু তার আবার গরীবদের খাবার খেতে ভাল লাগে না। নোংরা কুঁড়েঘরে থাকতেও আর ভাল লাগে না। সে আবার ধনী হতে চাইল। ধনী হবার পর আবার গরীব হতে চাইল। এরকম করে কাহিল হয়ে গেল। তার মা বলল, "এমন করছ কেন? সবকিছুতেই কিছু না কিছু সমস্যা আছে। বারবার ধনী-গরীব করে আমাকে আর ক্লান্ত করো না। নিজে তো ক্লান্ত হচ্ছই, আমাকেও ক্লান্ত করছ। চুপচাপ ধনী হবে নাকি গরীব হবে বেছে নাও। নয়তো মানুষকে শুধু জ্বালাতনই করে যাও। যত্তসব!"

Sunday, September 9, 2018

লোভ ও অলসতার ফল

এক ছিল একটি মেয়ে। আর গল্পটি খুব আজব। মেয়েটি একটি বাড়িতে থাকত। তার বাড়ির কাছে একটি পরীর বাড়ি ছিল। পরীকে কিছু দিলে তার বিনিময়ে পরী কিছু একটা দেয়। সবসময় দেয় না। যদি প্রাণ বাঁচানোর মত বড় কোন উপকার কেউ করে, তবেই তাকে পরী সাহায্য করে। কিন্তু মেয়েটি তার বন্ধু হওয়ায় মেয়েটি তার জন্য অল্প উপকার করলেও সে মেয়েটিকে সাহায্য করে। মেয়েটির নাম ছিল নেলী। নেলী ছিল খুব গরীব। সবসময় পান্তা ভাতই তার কলাপাতার (প্লেট) মধ্যে থাকত। সে একদিন পরীর বাড়ি গেল। গিয়ে বলল, "আমার আর গরীব থাকতে ভালো লাগছে না। সবসময় পান্তা ভাতই জোটে। মাঝেমধ্যে কিছুই জোটে না। কেন গো? আচ্ছা, তোমার কি কোন সাহায্য লাগবে? তাহলে কিন্তু আমায় পান্তা ভাত খাইয়ে আর রাখা যাবে না।" পরী বলল, "ঠিক আছে। অনেকদিন হয়ে গেল আমি কোথাও বেড়াতে যাই না। ইচ্ছে করছে এক্ষণি অদৃশ্য হয়ে আধুনিক মানুষের শহরে চলে যাই। গিয়ে দেখি, অনেক দিন আগে গিয়ে যে দেখেছিলাম হাতে ধরা মোবাইল না কি জানি তৈরি করা হয়েছে। না জানি কত কি তৈরি হয়ে গেল। আমার এসব দেখতে খুবই ভালো লাগে। কিন্তু আমার যে একটা ছোট ছাগলের বাচ্চা আছে। ওকে তো নিয়মিত খাবার খাওয়াতে হয়। ওকে মাঠে ছেড়ে দিতে হয়, খাবার নিয়েও আসতে হয়। নদীতেও নিয়ে যেতে হয় গোসল করার জন্য। এসব করবে কে? তুমি যদি এসব কাজ করে দাও এক সপ্তাহের জন্য, তাহলে আমি তোমার ইচ্ছা পূরণ করব।" পরী এরপর শহরে গেল। গিয়ে ঘরে ঘরে কম্পিউটার, স্মার্টফোন এবং ইন্টারনেট দেখতে পেল। আনন্দের সাথেই ৭ দিন কেটে গেল। ওদিকে নেলীও ছাগলের বাচ্চার খেয়াল রাখল। পরী তার সুন্দর ছাগলের বাচ্চাকে দেখতে পেয়ে খুব খুশী হয়ে গেল। সে বলল, "অনেক ধন্যবাদ। আমার ছাগলের বাচ্চাটাকে তুমি অনেক্ষণ দেখে রেখেছ। এবার বলতো, তুমি কি চেয়েছিলে? আগে আগে বললে আমার শুনতে অসুবিধা হয়। এখন তুমি যা বলবে, তাই শুনব।" নেলী বলল, "শোন পরী, আমি খুব গরীব। প্রতিদিন পান্তা ভাত জোটে। সেটা বন্ধ করতে হবে। অন্তত একটু ভালো খাবার তো দাও।" পরী বলল, "শুধু খাবারই কি চাই? তুমি আমার বন্ধু। তাই গিয়ে দেখো, তুমি যা চাচ্ছ তা পেয়ে গেছ।" নেলী ঘরে গেল। গিয়ে দেখল, "তার ঘর ভাঙ্গা কুঁড়েঘর নেই। যত ভাঙ্গা ছিল, সব ঠিক হয়ে গেছে। ঘরের চাল টিনের চাল হয়ে গেছে। আর পুরনো জিনিসপত্র সব নতুন হয়ে গেছে। সে যে পান্তা ভাত রেখে এসেছিল, সেটা ভাত, মাছ-মাংস এবং ডিম হয়ে গেছে।" নেলী সেদিন খুব খুশী হলো। কিন্তু এক সপ্তাহ পেরোনোর পর সে আবার গেল পরীর কাছে। বলল, "আমার না এরকম ভালো লাগছে না। শুধু ভাত, মাছ, মাংস বোরিং হয়ে গেছে। আর তোমার মত ভালো পরীর বন্ধু আমি। আমি গরীব থাকলে কেমন দেখায়? দাও না আমায় আরেকটু ধনী করে।" পরী বলল, "ঠিক আছে, তাহলে আমাকে কিছু পিঠে ভেজে দাও। কারণ, খুব বেশী দূরে নয় সেখানে আমার এক অসুস্থ বন্ধু আছে। সুস্থদের কাছ থেকে আমি কোনকিছুর বিনিময়ে সাহায্য করি। কিন্তু অসুস্থদের তো এমনি এমনিই সাহায্য করতে হবে, তাই না? পিঠেগুলো আমি আমার অসুস্থ বন্ধুর কাছে নিয়ে যাব।" নেলী পিঠেগুলো ভেজে দিল। এবার বাড়ি গিয়ে সে দেখল, তার একটা দোতলা বিল্ডিং হয়েছে। টাইলস দিয়ে বানানো। অনেক সুন্দর বড় বড় বারান্দা। সুন্দর বেডরুম। বিছানাও আছে। আর খাবারের জায়গায় গিয়ে দেখল, রোস্ট আর পোলাও রাখা আছে। সাথে দুধও রাখা আছে। সে খুবই খুশী হয়ে গেল। এভাবে দু'সপ্তাহ কাটল। এবার নেলীর আবার এরকম থাকতে বোরিং লাগা শুরু হলো। সে আবার পরীর কাছে গেল। বলল, "আমার এমনি এমনি ভালো লাগছে না। আমার জন্য একটা কথা বলার টিয়ে পাখি দিতে পারবে? আরেকটা বাগানও দিয়ে দাও। তবেই আমার খুব ভালো লাগবে। জীবনটাই সুন্দর হয়ে যাবে। দাও না গো! কিন্তু তার বদলে কি চাও?" পরী বলল, "ঠিক আছে, আমার বেশি একটা ভালো লাগছে না। তুমি এক কাজ কর। আমার ছাগলটিকে একটু দুধ খাওয়াও। আর আমার বাগানে একটু পানি দিয়ে আস। দেখবে, তুমিও পোষা প্রাণী এবং বাগান পেয়েছ।" সব ঠিকমতই হলো। নেলী বাড়ি গিয়ে দেখল, সুন্দর একটা ফুলেরর বাগান এবং কথা বলা একটা টিয়া পাখি তার বাড়ির সামনেই আছে। কথা বলা টিয়ে পাখি বলল, "তুমি কি আমার নতুন মালিক? তোমার নাম কি নেলী? আমায় কোন শিখাতে হবে না, এমনিতেই সব পারি।" নেলী খুব খুশী হলো। বাগান এবং কথা বলা তোতাপাখি নিয়ে সে আনন্দেই চলল। কিন্তু একদিন তার তাও খারাপ লাগতে শুরু করল। সে আবার পরীর কাছে গেল। গিয়ে বলল, "আমার বাগানের ফুল দিয়ে দুটো মালা বানিয়ে এনেছি। একটা তুমি পর, একটা তোমার ছাগলকে পরাও। কিন্তু আমাকে আরো কিছু দাও, দয়া কর।" পরী বলল, "এতেও মন ভরল না? আচ্ছা ঠিক আছে, গিয়ে দেখ তুমি প্রাসাদ পেয়েছ।" সে প্রাসাদই পেল। অনেক রকম ফুল পেল। এটা তার খুবই ভালো লেগেছিল। তাও এক মাস পর তার এটা আর ভালো লাগে না। সে আবার গেল পরীর কাছে। বলল, "আমাকে আরো অনেক ধনী করে দাও, যাতে আমি বাড়ির মধ্যেও পালকিতে চড়ে ঘুরতে পারি। আমায় এত এত সুখী করে দাও, যাতে আর আমার কোন কাজই করার দরকার পড়ে না। অনেক অনেক সুখী করে দাও।" পরী বলল, "তোমার জেদ তো কম নয়। বন্ধু বলে এত জেদ তো রাখা যায় না। শোন না, তুমি আমার কাছে আর এসো না তো! এসে কেমন আছ, কি করছ- গল্প-টল্প না করে শুধু বলছ, ধনী করে দাও। এসব আর ভাল লাগছে না। আচ্ছা ঠিক আছে, শোন তবে। তুমি তো অনেক কঠিন কঠিন জিনিস চাচ্ছ। কিন্তু বিনিময়ে তো সহজ সহজ জিনিসই তুমি দিচ্ছ। এবার একটু কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে। যদি তুমি আমার কথা শোন, আমি বিনিময়ে যা চাইব তা দিতে পার, তাহলে তোমাকে আমি তুমি যা চাও তা দেব। আর যদি তা না পার, তাহলে কি হবে তা পরেই দেখতে পাবে। শোন তবে। পরীক্ষাটা কি, সেটাই তো বললাম না। পরীক্ষাটা হলো, আমার ছাগলের দুটো পাখা গজিয়ে দাও, যাতে সেও আমার সাথে বেড়াতে পারে। আমার এই জেদটা তোমাকে পূরণ করতে হবে।" এরপর নেলী বলল, "আমি তো আর তোমার মত পরী নই। এটা তো আর আমি করতে পারব না। অন্য কিছু করতে বল।" এবার পরী বলল, "ঠিক আছে, তুমি তো ধনী হতে চাও। আমি তোমায় ধনী করে দেই। কিন্তু তুমি যে বললে, তোমার কোন কাজ করার দরকার হবে না এরকম ধনী করে দেই, তাহলে আমিও বলতে পারি, আমাকে এমন ধনী করে দাও, যাতে আমার পোশাকটুকু পর্যন্ত সোনার হয়। দাও ধনী করে। মানুষের পক্ষে তো কাজটা সম্ভব, কিন্তু টাকায় কুলাতে হবে।" তখন নেলী বলল, "না না না, এটাও যে পারব না। আমি করতে পারব এরকম কিছু দাও।" পরী বলল, "ঠিক আছে, আমি তোমায় আরেকটা কাজ দেব। কিন্তু কাজটা দেব তুমি যা চাইছ তা আমি দেয়ার এক মাস পরে।" তাই হলো। কাজ না করে করে নেলী খুবই অলস হয়ে পড়েছিল। কোন কাজই সে আর করতে চায় না। এবার পরী এসে হাজির হলো। বলল, "আমার কাজের কথা মনে আছে? কাজটা হলো, এই পুরো বাড়িটা একনাগাড়ে দৌড়ে আমাকে দেখাও। থামবে না কিন্তু। তুমি যখন আগে অনেক গরীব ছিলে, তখন এটা তো তোমার কাছে পানির মত সোজা লাগত। এখন দেখাও আমাকে এ কাজটা করে।" নেলী বলল, "ঠিক আছে, আগে তো এ আমার বাম হাতের কাজ ছিল। কিন্তু এখন কেন পারব না? এক্ষুণি দেখাচ্ছি।" সে তখন শুয়ে ছিল। সে দুই হাত জাগিয়ে আড়মোড়া দিয়ে উঠল। সে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়াতে দাঁড়াতেই সে বলল, "পরী! আমি যদি পালকিতে উঠি, আর দাসীরা যদি আমায় দৌড়ে পালকিটা চালিয়ে চক্কর দিয়ে আনে, তাহলে হবে তো?" পরী বলল, "সে কী! আমি যা বলছি, তা করতে হবে। এক-দুই-তিন বলার সাথে সাথে দৌড় দেয়া শুরু করতে হবে। খেয়ে খেয়ে মোটাও তো কম হওনি। এবার দৌড়াও- এক, দুই, তিন।" কিন্তু নেলী দৌড়ানো শুরু করতে পারছিল না। সে দৌড়ানোর জন্য এক ধাপ দিল, কিন্তু তার শরীর ঘুমে ঢলতে থাকল। চোখে শুধু ঘুম আর ঘুম। মোটা হওয়ার কারণে একটু বেশি চেষ্টা করাতে সে মাটিতে পড়ে গেল। তখন পরী বলল, "শোন নেলী! তোমার সব খাবার আমি বন্ধ করে দিলাম, যতক্ষণ না তুমি দৌড়ে দৌড়ে চিকন হয়ে যাচ্ছ। শুধু পানিটুকুই আমি দিয়ে যাচ্ছি।" এই বলে পরী উড়াল দিয়ে চলে গেল। নেলী বলল, "দাঁড়াও।" কিন্তু পরী দাঁড়ালো না। অমনি নেলীর খিদে পেয়ে গেল। সে দাসীকে ডাকল। "দাসী! যাও তো! এক বাটি ফল নিয়ে এসো।" দাসী বলল, "বাটিতে যা ফল ছিল, তা তো এক্ষণি দেখছিলাম। হঠাৎ দেখি ফলগুলো নেই। ফ্রিজও খালি। শুধু পানির বোতলগুলিই রয়ে গেছে।" নেলী বুঝতে পারল, সে কত ভুল করেছে। সে আবার পরীকে ডাকল। "পরী! আমি তোমার বন্ধু। একবার এসো। শুনে যাও। আর কিছু চাইব না। শুধু শুনে যাও।" পরী বুঝল যে, নেলী কি বলতে পারে। পরী উড়াল দিয়ে নেলীর ঘরে গেল। সে বলল, "কি হলো, নেলী? আমায় ডাকছ কেন? এখনো তো দৌড় শুরুই করলে না! তাড়াতাড়ি দৌড় শুরু কর।" নেলী বলল, "না গো না, আর এ অবস্থায় দৌড়াতে পারব না। তোমার বন্ধু হয়ে চাচ্ছি যে, আমাকে চিকন করে দাও।" পরী বলল, "উহ! আর কত কি চাইবে? ঠিক আছে।" পরী রেগে গিয়ে আগে যেরকম পান্তা ভাত খেয়ে কাটাতে হতো, চিকন ছিল, সেরকম নেলীকে করে দিল। সব দাস-দাসী উধাও হয়ে গেল। সে খুবই চিকন হয়ে গেছে। ঘর-বাড়িও ভাঙ্গা চোরা সেই আগের মত হয়ে গেছে। আর কলাপাতার উপর পান্তাভাতই রাখা আছে। নেলী এখন পরীকে বলল, "আমি তোমার কাছে আর কিছু চাইব না। তোমার প্রাসাদ তো তুমি নিয়েই নিলে। তোমার পাখি এবং বাগান- তাও তো নিয়ে নিলে। কিন্তু এবার আমাকে এরকমও করে দিলে। ভালোই করেছ! বন্ধু হয়েও এখন আমাকে আবার গরীব করে দিলে? কি করলে?" পরী বলল, "তোমার সাথে আমার আর কোন বন্ধুত্ব নেই এখন। তুমি দ্বিতীয়বার যেরকম বাড়িতে ছিলে, টিনের চাল আর ভাত-মাছ-মাংস, সেরকমই হয়ে যাও। আর বেশি চাইবে না। তোমার সাথে আমার বন্ধুত্বও শেষ, পুরোপুরি গরীব বা পুরোপুরি ধনী হওয়াও শেষ।" এই বলে পরী নেলীকে দ্বিতীয়বার যেরকম ছিল সেরকম করে দিল। আর পরী উড়াল দিয়ে চলে গেল। তবে এটা নেলীর জীবনে বড় একটা শিক্ষাও ছিল।