Saturday, April 30, 2016

চোর ও কৃষক

এক ছিল একটি কৃষক। সে বেশি গরীব ছিল না। ঐদিকে একটি চোর একটি জিনিস চুরি করতে গিয়ে তার বাড়িটি হারিয়ে ফেলেছে। কিভাবে জান? চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে গিয়েছে, তারপর পুলিশেরা তার বাড়িটিকে ভেঙ্গে দিয়েছে। তখন সে কৃষকটির বাড়ির কাছে গিয়ে বলল, "ভাই, আমাকে একটু আশ্রয় দেবে?" লোকটি বলল, "হ্যাঁ, কিন্তু চুরি করবে না।" চোরটি ভাবল, "ইস! ভাল কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। আমি তো চুরি করার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। আজ আমি চুরি করব। দেখি, তার কত জিনিস আছে। চুরি করে রাতের বেলা আমি পালিয়ে যাব, হা-হা-হা!" পরের দিন লোকটি দেখল, তার দেখি অনেক কিছু আছে। সে তাড়াতাড়ি করে তার ধানক্ষেতের সব ধান নিয়ে পালিয়ে গেল। কৃষকটি উঠে দেখল, কিছুই নেই।

শিক্ষা: দুষ্ট লোক যদি দুষ্টের মত কাজ করতে ভুলে যায়, তাহলে বলতে হয় না যে, দুষ্টামি করো না। শুধু খেয়াল রাখতে হয়। তাহলে তাদের খারাপ কাজ করার কথা মনে পড়ে যায়, তখন তারা খারাপ কাজ করে।

রাক্ষসের গল্প

এক ছিল এক রাক্ষস। কিন্তু সে ছিল অলস। সবাই পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠে পড়ত। কিন্তু দশটা বাজার পর উঠত সেই রাক্ষসটি। তাই সে ভাল খাবার খুঁজে পেত না। এমনকি তার পরিবারের সবাইও তাকে ডাকতও না। নিজেরা নিজেরা সব খেয়ে নিত। সবসময় ঐ রাক্ষসটির ভাগে পড়ত বুড়ো মানুষ। অন্য সবাই কচি কচি ছোট্ট বাচ্চাদের খেয়ে ফেলত। রাক্ষসটি পড়ল বেকায়দায়। সে সবাইকে বলল, "আমাকে তোমরা কেন কেউ ডাক না?" সবাই বলল, "আমরা কেন তোমাকে ডাকতে যাব গো? নিজের থেকে ঘুম থেকে উঠতে পার না, এই নাকি তুমি আমাদের মত রাক্ষস? তারপর নিজে উঠে নিজের জন্য খাবারও তৈরি করতে পার না। মানুষ না খাও, অন্য অনেক খাবারও তো আছে।" তারপর থেকে পরের দিন সবাই মিলে রাক্ষসটাকে বুঝিয়ে বুঝিয়ে বলল যে, তুমি সকালে ঘুম থেকে উঠবে। কিন্তু এবার অন্য রাক্ষসরা রাত ১২টা থাকতেই কচি কচি সব জিনিস নিয়ে তাদের কোন গুপ্ত জায়গায় লুকিয়ে রাখত, সকাল হলে সেগুলো খাবে। শুধু মানুষই নয়, মানুষের বাগান থেকে ফলমূল সব চুরি করে এনে রাখল, কিন্তু কচি কচি। রাক্ষস গিয়ে দেখল, সব বুড়ো-বুড়ি। রাক্ষসের আবার দু:খিনী মানুষদেরকে পছন্দ না। তাই খেতেও ভাল লাগে না। এমনিতেই তো বুড়ো-বুড়ি, তারা আবার কান্না করছিল, কারণ অন্য রাক্ষসরা সব তাদের নাতি-পুতি নিয়ে গেছে। এখন সেই রাক্ষসটা চিন্তায় পড়ল। "সবাই কেন আমাকে এমন করে?" তখন রাক্ষস ভাবল, "না, না। এভাবে না খেয়ে থাকলে চলবে না। ফল-মূল পাকা খেলে একটু ভাল লাগতে পারে। কিন্তু মানুষ একদমই না। আমি বরং ক্ষেতের সব ফসল নিয়ে নেই। প্রতিদিনই খাব ফসল। কিন্তু প্রতিদিনই তো আর মানুষ আমার জন্য ফসল লাগাবে না। রাক্ষস হয়ে কী লাভ হলো আমার? কোন যাদুশক্তি নেই। খালি ১১০ তলা বিল্ডিংয়ের মত বড়। আর আমি খাবই বা কী? সব পিচ্চি পিচ্চি। পিচ্চি পিচ্চি মানুষ, পিচ্চি পিচ্চি ফল। খেতে ভাল লাগে? আমি যদি ছোট হতাম, তাহলে এগুলোই ভাল লাগত। মানুষ হলেই ভাল ছিল। মানুষরা কত ভালো? মানুষরা এত সকালে উঠতেই পারে না। সবার এত শক্তি আছে কেন অন্য রাক্ষসদের? আর আমারই বা কেন কম শক্তি? আমি কি কোন পাপ কাজ করেছি?" একটি পিচ্চি বুড়ো মানুষ রাক্ষসটিকে দেখে ফেলল। রাক্ষসের ভাব দেখে বুঝল যে, মনে মনে কী ভাবছে সে। সেই বুড়ো মানুষটি বুঝতে পারল যে, রাক্ষসটিকে আমি যাই বলি না কেন, রাক্ষসটি আমাকে খাবে না। কারণ, আমাকে খেয়ে ফেললে তার তো কোন মজাই লাগবে না। তাই সে রাক্ষসকে বলল, "রাজা! রাজামশাই!" রাজামশাই কেন বলল জান? কারণ, রাক্ষসটিকে যদি রাক্ষস ভাই বলে, তাহলে যদি তাকে খেয়ে ফেলে! একটু পরে আবার বলল, "মহারাজ! আপনি এমন করে বসে আছেন কেন? বলুন না মহারাজ! আমি আপনার বন্ধু হয়ে যাব। ও মহারাজ! চুপ করে থাকবেন না মহারাজ! ও রাজামশাই! বলতে বলেছি। কিছু শুনছেন, রাজামশাই?" আস্তে করে বলল বুড়োমানুষটি। আস্তে করে বলায় রাক্ষসটি শুনতে পেল না। বুড়ো মানুষটি আবার জোরে করে বলল। তারপর শুনতে পেল। রাক্ষসটি বলল, "কে তুই? পিচ্চি একখানা মানুষ। তুই নাকি আমার বন্ধু রে! কী বলছিস? তুই কিসের বন্ধুর মত কাজ করেছিস? আমাকে কিছু খেতে দিয়েছিস, না আমার গায়ে ছোঁয়া দিয়েছিস? আমাকে শুধু আপনি বলা, এইটাকে কি বন্ধু বলে নাকি?" "রাজামশাই! বন্ধু এখনো পুরোপুরি হইনি। আপনাকে খাবার খেতে দেব কচি দেখে।" বুড়ো মানুষটি কি করল জান? বুড়ো মানুষটি যা দেবে, সেটাও রাক্ষস সুন্দর মজা করে খাবে। রাক্ষসটিও বোকা ছিল। বেশি ক্ষুধার বেলায় জামাও সে চিবিয়ে খেতে পারত। বুড়ো মানুষটি মানুষের মত দেখতে একটি পুতুল তৈরি করে এনে দিল রাক্ষসটিকে। কিন্তু রাক্ষস তো সেটা বুঝতে পারল না। আর ক্ষুধার বেলায় যা খায় তাই তো ভাল লাগে। পুতুলটিই চিবিয়ে চিবিয়ে সুন্দর খেয়ে ফেল। আর বুড়ো মানুষটিকে বলল, "ধন্যবাদ। তুই দেখছি খুব ভালো। তবে আমাকে আরো কিছু এনে দিতে হবে। খালি এই মানুষখানা খেলে আমার পেট ভরে না। অনেকদিন তো খাইনি।" এবার কি করল জান বুড়ো মানুষটি? বুড়ো মানুষটি তার বাগান থেকে কিছু আলু নিয়ে আলু ছিলে সব আলুগুলো মাখিয়ে মাখিয়ে পানি দিয়ে জুসের মত করল। আর সেগুলো অনেক বড় বোতলে ভরে রাক্ষসকে বলল, "এটা খেয়ে নিন মহারাজ!" "এটা কী?" "এইটা মানুষের চামড়া আমি বেটে জুস বানিয়ে এনেছি।" "আচ্ছা। তবে মানুষের চামড়াটি এত শক্ত লাগছে কেন?" "হা হা! রাজামশাই! আপনি এটা খেয়ে দেখুন। এই মানুষটি খুব শক্তিশালী ছিল। তার গায়ের জোর অনেক বেশি ছিল তো, তাই চামড়াটাও শক্ত ছিল। সে যুদ্ধ করতে গিয়ে তলোয়ার দিয়ে আঘাত লেগে অনেক চামড়াখানি যুদ্ধের জায়গায় পড়েছিল। সেগুলো এনে আমি বেটে আপনাকে খেতে দিয়েছি। খেয়ে নিন মহারাজ।" "তুই আমায় মহারাজ বলছিস কেন গো!" "মহারাজ বলব না তো কি বলব? আপনি তো মহারাজই। রাজামশাইও বলছি। কারণ, আপনি যত শক্তিশালী, আপনাকে দেখে তো রাজামশাই বা মহারাজই মনে হচ্ছে। আপনি এখন কথা না বাড়িয়ে খেয়ে নিন। রাজামশাই! আপনার আরো কিছু প্রয়োজন হলে আমি আরো এনে দেব। আর আমি তো পুরোপুরি বন্ধু হইনি, তাই আমি বেশি দিতেও পারছি না। কারণ, আমি আর বেশি যোগাড় করতে পারছি না, রাজামশাই! দয়া করে এটুকু অন্তত খেয়ে নিন। কালকের দিনটা আমি এখানে থাকতে পারব না। কালকে আমার খুব জরুরী কাজ আছে বিদেশে। বিদেশে একদিন গিয়েছিলাম। একজন লোক বলেছে, একদিন পরপর যেতে হবে বিদেশে। তাহলে যেতে আসতে একদিন, আর থাকতে একদিন দরকার। তাহলে দুইদিন পরপর আমি এখানে থাকব। আপনাকেও খেতে দেব।" দুই দিন পর পর কেন দিল জান? যাতে সবসময় ক্ষুধা থাকে। যাতে সবসময় ধোঁকা দিতে পারে। কারণ, বুড়ো মানুষটি কখনো মানুষ মেরে পাপ কাজ করতে চায় না। রাক্ষসটি বলল, "ঠিক আছে, খেয়ে নিচ্ছি। বাহ! এ যে দেখছি খুব দারুন হয়েছে। খেয়ে নিন পুরোটা। বেশি মজা হয়েছে।" "বাহ! খাওয়া তো শেষ করেছি। কিন্তু তোকে এত সুন্দর খাবার দিল কে?" "মহারাজ! দিল আবার কে? আমি নিজেই তো নিলাম যুদ্ধের জায়গা থেকে। এবার আমি বিদেশে যাই, রাজামশাই! যদি আপনি অনুমতি দেন, আমার খুব জরুরী কাজ আছে।" "ঠিক আছে, যা।" বিদেশে যাওয়ার পর বিদেশ থেকে যখন ফিরে এল, সাথে সাথেই রাক্ষসটি বলল, "কী মজা, কী মজা! আমার বন্ধু এসে গেছে। এসে গেছিস তুই? দে না একটু খাবার আমায়। তোর কাছে এত খাবার থাকে কেমনে গো, যা আমার পছন্দ? তুই তো একটি মানুষ।" "ঠিক আছে, আজকে আপনাকে দুটো কচি বাচ্চা খেতে দেব।"- বলে সে আবার পুতুল বানিয়ে বানিয়ে খেতে দিল রাক্ষসটিকে। তবে রাক্ষসটির ক্ষুধা আছেই তো। কারণ দুই দিন না খেয়ে আছে না? রাক্ষসরা তো সারাদিন শুধু খেতেই থাকে। দুটো মানুষ পেয়েই সাথে সাথে গবগব করে খেয়ে ফেলল। বলল, "তুই খুব ভাল রে! আমায় কত ভাল ভাল খাবার দিস! কালকে তুই আবার যাবি?" "হ্যাঁ, কারণ আমার খুব জরুরী কাজ।" "কী এত জরুরী কাজ তোর, বল্‌ না।" "ইয়ে মানে, আমার বাড়িটি না শুধু এক মাস থাকার জন্যে। তার জন্য প্রতিদিন ওখানে গিয়ে একটি করে কাপড় দেয়া লাগছে। কাপড় দিলেই তারা থাকতে দেয় আমার বাড়িতে।" এখন থেকে নিয়মিত রাক্ষসটিকে খাবার দেয়, কিন্তু দুই দিন পর পর। আমার গল্পটি শেষ, কিন্তু এটা বাস্তব নয়। এটি রূপকথা।

Tuesday, April 19, 2016

ভাল ছেলে

এমন একটি দেশ যেখানে শুধু বিপদ আর বিপদ দিয়ে ভরা। সেই দেশের দু'জন লোক ছিল। একটি মেয়ে এবং একটি ছেলে। তাদের একটি বাচ্চা হবে। আর মায়ের মন বলছিল, তার বারবার মনে হচ্ছিল যে, তার সন্তান নবীরা ছাড়া অন্যদের মধ্যে সবচেয়ে ভাল হবে। শুধু তার মায়ের মনে হচ্চিল, কিন্তু সে ভাবল যে, এটা হচ্ছে শুধু মনের ভাব, এটা সত্যি হতে পারে না। আমার সন্তান কী করে এমন হবে? না, না। আমার সন্তান নিশ্চয়ই সাধারণ সন্তান হবে। মায়ের নাম ছিল রুশতী। বাবা বলল, "রুশতী! তুমি কি ভাবছ? আমি তোমার মনের কথা বুঝতে পারছি। তুমি নিশ্চয়ই তোমার সন্তানকে নিয়ে চিন্তাই করছ। কিন্ত এটা বুঝতে পারছি না, সন্তানের ব্যাপারে তুমি কি ভাবছ? নিশ্চয়ই এটা ভাবছ যে, বাচ্চার জন্ম কখন হবে?" তখন রুশতী বলল, "না, আমি তা নিয়ে তো চিন্তা করছি, তার সাথে আমার আরো একটি চিন্তা হচ্ছে। কেন এ চিন্তাগুলো আমার মনের মধ্যে ঢুকছে, আমি বুঝতে পারছি না। কারণ, এটা সত্যি হওয়া সম্ভবনা থাকতে পারে। নাহলে আল্লাহ আমার মনের মধ্যে এমন ভাবনা দেবে কেন?" বাবা বলল, "আরে! কি ভাবছ তা তো আগে বল। সত্যি হবে কি না হবে তা আগেই ভেবো না।" রুশপী বলল, "কি ভাবনা জান? আমার মনে হচ্ছে, আমার সন্তান নবীদের ছাড়া অন্য সব মানুষের চেয়ে সবচেয়ে ভাল হবে।" বাবা বলল, "আরে, না। আমাদের সন্তান এমন কি করে হবে গো? তুমি কেমন যেন ভুল ভাবছ।" বাচ্চা হবে পরের দিন। তার পরের দিন আসতে শুরু করছে। মাঝরাত্রি। কিছুক্ষণ পরই বাচ্চা হবে। বাবা বলল, "রুশপী! তুমি শুয়ে থাক। পাতলা পাতলা খাবার খাও। আমি তোমার জন্য এনে দেই।" হয়ে গেল সেই দিন। সেই দিন হয়ে তার পরের দিন হয়ে গেল। বাচ্চা হয়ে গেল। এটি হচ্ছে পুত্র সন্তান। বাচ্চাটিকে নিয়ে তার মা-বাবা খুবই চিন্তিত। ঐ দেশটি তো বিপদের দেশ। তাই তারা খুবই চিন্তিত হলো। তারা ভাবছে, তাদের বাচ্চার যেন কোন ক্ষতি না হয়। তারা বাচ্চাকে বাড়িয়ে বাড়িয়ে তুলে বাচ্চার ৫ বছর করল। এমন সময় বিপদ আসবে। এবার শুরু হল বন্যা। ঘরের চাল ডুবে যায় ডুবে যায়। কেমন যেন তারা বাচ্চাকে নিয়ে জলদি চালের উপর উঠল। চালের উপর বসে বসে পানিতে পা ভিজিয়ে বাচ্চাকে আদর করতে লাগল। বাচ্চাটি বলল, "একটু পানি দেবে মা?" তারপর মা বলল, "ইস! এখন নিচে গেলে শ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে।" "বাবা, তুমি অন্তত আমাকে দাও পানি।" বাবা বলল, "এই! নিচে যাওয়ার দরকারটা কি, অ্যাঁ? এই বন্যায়ই তো পানি আছে। আর বাইরে কত পাথর ভাসছে না? পাথরগুলো দিয়ে তো পানি পরিস্কার করা যায়। কিন্তু তা করার জন্য তো মেশিন দরকার। ঠিক আছে, ওদিকটার পানিটা একটু পরিস্কার লাগছে। আমি একটু সাঁতার কেটে গিয়ে দেখি। হাতে একটু নিয়ে দেখি, পরিস্কার কিনা।" ছেলেটি বলল, "বাবা! আমিও সাঁতার কেটে যাব ওখানে।" বাবা বলে, "ধূর বাবা। না, ন, তুমি যেও না।" "ঠিক আছে, তাই হোক।" বাবা সাঁতার কেটে গিয়ে দেখল, সেখানকার পানিটা একটু ভাল আছে। সেখান থেকে হাতে করে একটু নিয়ে আসল। খেতে দিল। এইবার পরের মাস। এক সপ্তাহ পরে কি হলো জান? তখন ছিল ২০১৫ সাল। জানুয়ারী মাসেই এটা হয়েছে। কি জান? এক বড় রকমের ভূমিকম্প। বাড়ি সব ভেঙ্গে গেল। কিন্তু তারা খুবই অবাক হলো। কারণ দেখল, সব বাড়ি ভেঙ্গেছে, কিন্তু তাদের বাড়িটা ভাঙ্গেনি। একটু সিমেন্টও ভেঙ্গে পড়েনি। তাহলে মা বলল, আমি যা ভাবছিলাম তাই। কারণ, আমি ভাবছিলাম তো, আমার ছেলে নবীদের ছাড়া অন্য সবার চেয়ে খুব ভাল মানুষ হবে। নাহলে আল্লাহ কেন তাকে বাঁচিয়ে রাখবেন? অন্যদের সবার অনেকের মৃত্যু হয়েছে, একটা বাড়িও আস্ত নেই। গ্রামে কোন মানুষ নেই। তাহলে আমার ধারণাই ঠিক। এটা আমি কী দেখছি? এটা কি সত্যি হতে পারে? গরীব লোকের ছেলে কি আবার সবচেয়ে ভালো? না, না, ওকে সবসময় বাঁচিয়ে রাখতে হবে আমাদের। ওকে সবসময় নিরাপদে রাখতে হবে। কারণ, ওর যদি কোন ক্ষতি হয়, তাহলে তো সবাই আস্তে আস্তে খারাপ হতে চলবে। ও ছাড়া কে সব খারাপদেরকে ভালো করবে? আরেক বছর পর কি হলো জান? ভালো ছেলেটি জঙ্গলে গিয়ে দেখল, শিকারীরা একটি নিরীহ ময়ুরকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। ময়ুরটির মুখ শিকারীরা বেঁধে রেখেছে। যাতে সে কোন চিৎকার করতে না পারে, আর চিৎকার শুনে যেন সবাই উদ্ধার করতে না চলে আসে। শিকারী বলল, "সবাই শোন! এই ময়ুরটিকে বেচে আমাদের অনেক টাকা হবে। আর এই ময়ুরটি যারা পালবে, তারা তো অনেক কিছু পাবে। এই ময়ুরটি নিশ্চয়ই প্রতিদিন খুব মিষ্টি সুরে ডাকবে। সবাইকে আনন্দ দেবে। আর তাই সবাই আমাদেরকে আরো অনেক বেশি টাকা দেবে। এটা যে কিনবে তার মনে অনেক বেশি আনন্দ থাকবে। তাই সে অনেক অনেক টাকা দেবে। আমরা সবাই সেই টাকাগুলো ভাগ করে নেব। আমার ভাগেরটা অনেক বেশি থাকবে। সেই টাকা দিয়ে আমরা সবাই নানা রকম ফল ও নানা রকম সবজি কিনে খাব।" সবাই বলল, "না, না, না না, আপনি কেন বেশি খাবেন? আপনি দলের নেতা হলেই কি? আমাদেরকে একটু অন্তত বেশি দেন।" ভালো ছেলেটি ভাবল, "হায় হায়! একটি নিরীহ ময়ুরকে এভাবে কেউ বুঝি মারে? তাও আবার খুব ছোট্ট একটা শিশু ময়ুর। এই ময়ুরটি যদি তার জঙ্গলেই বাস করতে পারত, তাহলে তো ময়ুরটিরও কোন ক্ষতি হতো না। ময়ুরটি এবার এইদিকে আসলে ময়ুরটিকে যদি কেউ মারে? কেন এত খারাপ এই শিকারীরা? না, না। আমাকে সবকিছু ঠিক করে ফেলতেই হবে। ঐ ময়ুরটিকে আমাদের বাঁচাতেই হবে। কিন্তু আমার যে মাত্র ৮ বছর। বন্যার সময় তো আমার ৫ বছর ছিল। কিন্তু কিছুটা বড় হওয়াতেই কি আমি অনেক বড় হয়ে গেছি? কিন্তু এ কাজ আমি কিভাবে করব? বেচারা ময়ুর। আর এ ময়ুরটি খুবই ভালো নিশ্চয়ই। তার আচার-আচরণ তো আমি দেখিনি, কিন্তু তাকে দেখে আমি বুঝতে পারছি, সে নিশ্চয়ই খুবই ভালো হবে। কিন্তু শিকারীরা এত খারাপ কেন? আমাকে যে ঐ ময়ুরটাকে রক্ষা করতেই হবে। নাহলে বেচারা ময়ুরটি তো আর কোনদিনই তার মা-বাবাকে দেখতে পাবে না। তাকে যদি শিকারীরা বিক্রি করে দেয়। কিছু একটা আমাকে করতেই হবে। কিন্তু আমি কী করব? দেখি, শিকারীরা ময়ুরটাকে একা রেখে কোথাও যায় কিনা। তারপরে আমি ময়ুরটির বাঁধন খুলে দেব। শিকারীদের কাউকে মারার দরকার নেই। কারণ, আমি পৃথিবীর কারো কোন ক্ষতি হতে দিতে চাই না।" ভালো ছেলেটি বসে থাকল। শিকারী বলল, "সবাই শোন। এখন ময়ুরটিকে আরো শক্ত বাঁধন দিয়ে বেঁধে চল আমরা অন্য কোন প্রাণীকে খুঁজতে যাই। তাহলে আমরা নিশ্চয়ই আরো অনেক টাকা পাব।" সবাই অন্যদিকে চলে গেল। ভাল ছেলেটি ভাবল, ও বাবা! এরা দেখি চলে যাচ্ছে। এখনই যাই। বাঁধনমুক্ত করি ময়ুরটিকে। সে ময়ুরটির কাছে গেল। ময়ুরটি ভয় পেয়ে গেল। এ কি শিকারীদের মধ্যে একজন নাকি? তখন ভালো ছেলেটি বলল, "আমি বুঝতে পারছি, তুমি ভয় পেয়ে যাচ্ছ, তাই না ময়ুর?" সে বাঁধনটা খুলে দিল। কিন্তু পায়ের বাঁধনটা অনেক শক্ত ছিল। সে অনেক চেষ্টা করল। অনেক কঠিন ছিল সেই বাঁধনটি খোলা। তখন ময়ুরেরও তো মুখের বাঁধন খোলা হয়েছে। ময়ুরও ঠোঁট দিয়ে খোলার চেষ্টা করল। কিন্তু তারা খুলতে পারল না। আরো অনেক চেষ্টা করল। অবশেষে খুলতে পারল। কিন্তু ময়ুরটি তো মানুষের ভাষা জানে না। কিভাবে মানুষদেরকে ধন্যবাদ জানাবে? সে একটু তার ডানা দিয়ে ভালো ছেলেটিকে আদর করে দিল। তারপর তার মা-বাবার কাছে সে ছুটে চলে গেল। ভালো ছেলেটিও বাড়ি ফিরে গেল। মা বলল, "তুই কোথায় গিয়েছিলি? আমাকে বল। বলো না, চুপ করে আছ কেন? কোথাও দুষ্টামি করতে যাওনি তো?" ভালো ছেলে বলল, "দুষ্টামি আর কি? কি করেছি জান? জান, আমি জঙ্গলের দিকে গিয়েছিলাম।" মা বলল, "হায় হায়! তুই জঙ্গলের দিকে গিয়েছিস কেন? তুই ঠিক আছিস তো? জঙ্গলে গিয়ে কি ঘটেছিল সেটা বল তো?" "জান? সেখানে আমি দেখেছি, একটা ময়ুরকে শিকারীরা বন্দী করে রেখেছে। শিকারীরা ময়ুরটিকে বিক্রি করে দিতে চেয়েছিল। শিকারীরা যখন অন্য শিকারের খোঁজে গিয়েছিল, তখন ময়ুরটার পায়ে অনেক শক্ত বাঁধন দিয়ে ময়ুরটিকে একদম একা ফেলে রেখে তারা অন্য শিকারের খোজে গেল। আমি তখন ময়ুরটির গায়ের সব বাঁধন খুলে দিলাম। পায়েরটা তো অনেক শক্ত ছিল। পায়েরটা আমি অনেক কষ্ট করেও খুলতে পারলাম না। ময়ুর নিজেও আমাকে সাহায্য করল। অবশেষে আমি খুলতে পারলাম। তখন ময়ুরটি আমাকে ধন্যবাদ জানাতে পারছিল না। আমি বুঝতে পেরেছি, সে আমাকে ধন্যবাদ জানাতে চাচ্ছে। সে তার ডানা দিয়ে আমাকে আদর করে দেয়ার পরই আমি বুঝে গিয়েছি।" বাবা বলল, "কি বলছিস তুই? তোর কি মাথা খারাপ? তুই একা একা জঙ্গলে গিয়ে অন্যদের বাঁচাতে গিয়েছিস কেন?" ভালো ছেলেটি আবার বলল, "ও বাবা! তুমি কেন বুঝতে পারছ না? অন্যের উপকার করলে নেকী হয়। অন্যদের উপকার করলে তো তারাও মুক্তি পায়, আর আমারও একটি ভালো কাজ করা হয়। তুমি কেন এমন কথা বলছ? এমন কথা বলো না। আর ময়ুরটি আমায় ধন্যবাদও জানাতে চাচ্ছিল। আমি যদি ময়ুরটিকে না বাঁচাতাম, শিকারীরা তো ময়ুরটিকে বিক্রিই করে দিত। তখন জঙ্গলে ময়ুরের কান্না কি শুনতে পেতে চাও? ময়ুরের মা-বাবার কান্না? কেন তুমি বুঝতে পারছ না? আমি একটু আরেকজনের উপকার করেছি। তাতে তোমার কি গো?" মা বলল, "হ্যাঁ রে। খুবই ভালো কাজ করেছিস তুই। কিন্তু তুই না বুঝে শিকারীদের উপস্থিত সময়ে তুই যেন আবার যাস না।" মা বাবাকে চুপি চুপি করে বলল, "আমি যা ভাবছিলাম, তার প্রমাণ আরো একটা হয়ে গেছে। কারণ দেখেছ, ৮ বছর বয়সেই কত ভালো ভালো কাজ করছে। তাহলে আমার ভাবনাটাই কি সত্যি? আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। বিশ্বাস তো হবেই না। এটা কী করে সম্ভব? আমি বার বার ভাবছি এটা নিয়ে। দেখি, বড় হয়ে সে কী হয়। তাহলেই আমি বুঝব।" বাবা বলল, "আমারও তো তাই মনে হচ্ছে। প্রথমে তো আমি তোমার কথা শুনে একটুও বিশ্বাস করতে পারিনি। তারপরে একটা প্রমাণ আসল, একটু একটু মনের মধ্যে ঢুকল। আরও একটি ভালো কাজ করে আমার এটা সত্যিই মনে হয়ে যাচ্ছে। আমার মনের চিন্তা যে কত!" ভালো ছেলে বলল, "লুকিয়ে রেখো না মা, বাবা। কি কথা বলছ আমাকে বল না! আমি কোন রাগ করব না। কিসের কথা বল?" তখন মা বলল, "আমার যা মনে হচ্ছে, তুই শুনলে বলবি, এটা কেমন করে হয়? কি বলছি জান? আমার মনে হয়, তুমি সবচেয়ে ভালো লোক পৃথিবীর।" তখন ভালো ছেলে বলল, "ঠিক আছে। তোমার এমন চিন্তার কী আছে? এটা হবে কি করে? এটা হতে পারবে না। ধূর বাবা, এ নিয়ে কোন চিন্তা করো না তুমি।" একদিন ভালো ছেলেটি একটি পথ দিয়ে যাচ্ছিল। সেই পথের পাশে দেখল, একটি বুড়ো লোক তার ভর দিয়ে হাঁটার লাঠিটি খুঁজে পাচ্ছে না। সে বসে বসে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। দাঁড়াতেও পারে না। অনেক বৃদ্ধ তো।" তখন ভালো ছেলেটি বলল, "কে আপনি? আপনার বাড়ি কোথায়? আপনি কি কোন বিপদে পড়েছেন?" বৃদ্ধ লোকটি বলল, "তুমি কে বাবা? আমি ঐ গ্রামে বাস করি। বিপদে তো পড়েছি। কারণ, আমি আমার লাঠি ভর করে হাঁটার জন্য যে লাঠিটি ব্যবহার করতাম, সেটা হারিয়ে গেছে। আর লাঠি ছাড়া তো আমি দাঁড়াতেও পারি না। আমার লাঠিটা যে কই গেল?" ভালো ছেলেটি বলল, "আমার নাম রুহুল আমীন। আমি অনেক দূরের একটা জায়গায় বাস করি। এখানে একটু ঘুরতে এসেছি। আপনার লাঠিটা বুঝি আপনি খুজে পাচ্ছেন না? দাঁড়ান, আমি আপনার লাঠিটি খুঁজে দেখছি। আমি পথে হাঁটতে হাঁটতে একটা লাঠি পেয়েছিলাম। দেখতো এটা কি তোমার?" বৃদ্ধ লোকটি বললো, "না, না। এটা তো আমার নয়। তুমি দেখতো, আমার লাঠিটি লোহার। তাতে একটু রং করা আছে। রংটি হচ্ছে সবুজ। একটু খুঁজে দিবে? আর এই লাঠিটা তুমি যে পেয়েছ, এটা তুমি তোমার কাছে রেখে দিও।" রুহুল আমীন বলল, "খুঁজে দেব না কেন? আপনি একটু অপেক্ষা করুন। আমি তাড়াতাড়ি করে এনে দিচ্ছি। আপনার লাঠিটা কি লম্বা না খাটো?" "আমার লাঠিটি খুবই লম্বা। আর অনেক শক্ত।" "ঠিক আছে, আমি এনে দিচ্ছি।" সে ঠিকমতই লাঠিটি খুঁজে পেল। সে বৃদ্ধ লোকটিকে এটা দিয়ে বলল, "এটা কি তোমার?" "হ্যাঁ, হ্যাঁ। এটাই তো আমার। আমাকে একটু ধরে তুলবে? লাঠিটা হাতে ধরিয়ে দেয়ার জন্যেও তো একটু ধরা প্রয়োজন। দাঁড়িয়েই তো ধরতে হবে লাঠি।" "কেন তুলব না আপনাকে? এই যে আমার হাতটা ধরে উঠে পড়ুন। আস্তে আস্তে। এই নিন।" বৃদ্ধ লোকটি রুহুল আমীনের মাথায় হাত রেখে বলল, "বাবা! তুমি কত ভালো! তোমার উপর আল্লাহর শান্তি বর্ষিত হোক। তুমি সুখে থেকো। তুমি আমার খুব উপকার করলে। আমি এই পথেই বেশির ভাগ চলাফেরা করি। তুমি এদিকে এসে একবার আমার খোঁজ নিও। ঐ গ্রামেই তো আমার বাড়ি। আমার বাড়িতে যেও, ঠিক আছে? এবার তুমি যাও। খুবই ভালো তুমি।" রুহুল আমীন বাড়ি ফিরে গেল। মাকে বলল, "জান মা? আমি কোথায় গিয়েছিলাম? আমি অনেক দূরে একটি পথ দিয়ে হাঁটছিলাম বেড়ানোর জন্য। পথে এক বৃদ্ধ লোক তার লাঠি হারিয়ে ফেলেছিলেন, যেটা দিয়ে তিনি ভর করে হাঁটেন। আমি সেই লাঠিটি তাকে খুঁজে দিয়েছি। তাকে আমার হাত ধরে দাঁড় করিয়ে তার হাতে সেই লাঠিটি তুলে দিয়েছি। তখন তিনি খুব খুশী হয়েছেন আমার উপর। আমাকে বলেছেন তাঁর বাড়িতে যেতে। আমিও যেতে চাই।" মা বলল, "তাই নাকি গো? খুবই ভালো কাজ করেছ তুমি।" বাবা বলল, "ও বাবা! এ তো অনেক ভালো কাজ করেছ তুমি। বেশ। তুমি এবার খাওয়া-দাওয়া কর।" মা আবার লুকিয়ে লুকিয়ে বাবাকে বলল, "তিনটি প্রমাণ পেলাম। আসলে কি যা ভাবছি তাই? বল না তুমি আমাকে। এটা কি সত্যি হতে পারে? আমার ছেলে কি করে এমন হবে?" বাবা বলল, "সত্য হতে পারে, কিন্তু আমারও তো তাই মনে হচ্ছে। তিন তিনটে প্রমাণ পেয়েছি। দুটো ভালো কাজ করেছে, আর একটি ঘটনায় আল্লাহ তাকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন।" সে বড় হয়ে কি হলো জান? সে হলো বাচ্চাদেরকে আরবী ও ধর্ম শিক্ষা শেখানোর এক শিক্ষক ও মসজিদের ইমাম। আর সে সবসময় বাচ্চাদের নামায পড়তে শেখাতো। আর কেউ বিপদে পড়লে তাদের বাঁচানোর চেষ্টা করতো। তোমরাও কিন্তু এমন হওয়ার চেষ্টা করবে। ছোটবেলা থেকেই।

Wednesday, April 13, 2016

এলিয়েনের গল্প

তোমরা কি জান, এলিয়েন কাকে বলে? যারা পৃথিবীতে থাকে না, পৃথিবীরও বাইরে, অন্য গ্রহে বাস করে, তাদেরকে বলা হয় এলিয়েন। এলিয়েনের একটা পরিবার ছিল অন্য গ্রহে। তার মধ্যে তাদেরও একটি ধর্ম ছিল। তাদের প্রভুকে সবসময় দেখা যেত না, কিন্তু মাঝেমধ্যে দেখা যেত। তাদের সেই প্রভুটি কেমন দেখতে জান? তাতো বলা যায় না। অন্য গ্রহের মানুষ, আমরা কী করে বলব? সেই এলিয়েনদেরও স্কুল আছে। স্কুলে ছুটি দিল। সবাই ভাবল, কাল আমরা পৃথিবীতে  ঘুরতে যাব। এলিয়েনের মা বলল, "হ্যাঁ, আমাদের তো জাদুমন্ত্র আছে। আমরা তা দিয়ে যানবাহন তৈরি করতে পারব। আর বাবা তো উড়তে পারে। ছোট যানবাহন হলেই হবে। তুমি উড়ে উড়েই তো যেতে পারবে। নাহলে আমাদের পিঠে করে নিয়ে যাবে।" বাবা বলল, "উহ! আমি কেন তোমাদের নিয়ে যাব? আমি একা একা উড়ে যাব। তোমরা যানবাহন তৈরি কর।" বাবা আগে আগে চলে গেল। আর অন্যরা যানবাহনে করে পৃথিবীতে প্রবেশ করল। এলিয়েনদের গ্রহ ছিল খুব ছোট্ট। পৃথিবীতে এসে বলল, "হায়! এ তো আমাদের ১০০টি গ্রহের সমান। কোন জায়গায় আমরা থাকব গো?" মা হেসে বলল, "হা হা হা। তোমদের জন্মের আগে আমি যখন ছোট ছিলাম, তখন আমিও পৃথিবীতে গিয়েছিলাম। বাচ্চারা তো এলিয়েন পছন্দ করবেই। বাচ্চারা ডেকে ডেকে তাদের ঘরে বসাবে। এখন আমরা নিরূপায়। কারণ, এক বাচ্চার ঘরে গেলে আরেক বাচ্চারা কাঁদবে। অথচ একেকজন একেকটাতে থাকতে পারবে। কিন্তু ছোট্ট এলিয়েন যার বাড়িতে থাকবে, তারা তো আরো বেশি মজা করবে। থাক, আমরাও ছোটদের সাথে মজা করব। তাহলেই হবে। এবার তারা একটি বাচ্চার বাড়িতে ছোট্ট এলিয়েন থাকল, আরেকটি বাচ্চার বাড়িতে মা এলিয়েন, আরেকটি বাচ্চার বাড়িতে বাবা এলিয়েন, আরেকটি বাচ্চার বাড়িতে দাদা এলিয়েন, আরেকটি বাচ্চার বাড়িতে দাদু এলিয়েন, আরেকটি বাচ্চার ঘরে নানা এলিয়েন, আরেকটি বাচ্চার ঘরে নানু এলিয়েন। এলিয়েন বাচ্চা কি করল জান? এলিয়েন বাচ্চা সূর্য দেখে বলল, "তোমাদের প্রভু হয়তো সব বানিয়েছে। কিন্তু সূর্যটা খুবই সুন্দর। সূর্যটা তোমাদের প্রভু বানায়নি নিশ্চয়ই। এমন সুন্দর বানাতেই পারবে না।" তখন আরেকটি মানুষ বাচ্চা বলল, "আহা! তুমি বুঝতে পারছ না। তোমরাও কি প্রভু চেন নাকি?" তখন বাচ্চা এলিয়েন বলল, "প্রভু থাকবে না কেন? আমাদেরও প্রভু আছে। তোমাদের প্রভুকে একবার দেখব।" সবাই বলল, "না, আমাদের প্রভুকে দেখবেই বা কিভাবে? আমাদের প্রভুকে দেখাই যায় না।" তখন এলিয়েন বলল, "তাহলে তোমার প্রভুর নাম কি বলতো?" সবাই বলল, "প্রভুর আর নাম কি হবে আমাদের, আল্লাহ।" তখন এলিয়েন আবার বলল, "আমাদের প্রভুর কোন নামই নেই।" এবার স্কুলের ছুটি আবার শেষ হয়ে গেল। তারা ফিরে যেতে নিল। আর বাচ্চারা ওদের ধরে রাখল, "না, না। আর যেতে পারবে না।" কিন্তু এলিয়েনরা যাদু দিয়ে বাচ্চাদেরকে সরিয়ে দিয়ে ফুরুত করে সরে গেল। কেউ বুঝতে পারল না। তারপর তাকিয়ে দেখল সবাই, এলিয়েন নেই। বাচ্চারা এবার সবকিছুতেই খুব অমনোযোগী। গল্প শেষ।

গরমের দিন

গরমের দিনে রিতার দাদা রিতার ভাইকে নিয়ে ঠাণ্ডা পানিতে সাঁতার কাটছে।

রিতা: দাদা! ভাই! তোমরা সাঁতার কাটছ কেন?
দাদা: গরমের দিনে ঠাণ্ডা পানির মধ্যে থাকতে খুবই আরাম লাগে। তুমি তো ছোট। তুমি সাঁতার কাটতে পারবে না।
রিতা: তাই নাকি? অনেক ঠাণ্ডা বুঝি? তাই তো। গরমের দিনে ঠাণ্ডা জিনিসই তো ভালো লাগে। আমি সাঁতার কাটব।
ভাই: না, রিতা। দাদা বলার পরেও কেন তুমি শুনছ না? তুমি গোসল করতে পারবে না। ঠিক আছে, তবে তুমি বালতি নিয়ে এসে পুকুর থেকে পানি উঠিয়ে উঠিয়ে গোসল কর।
দাদা: খুবই ভালো হবে। তুমি মাকে বল একটি বালতি এনে দেবে। মগ দিয়ে পানি উঠিয়ে উঠিয়ে গোসল কর। দেখ খুব আরাম লাগবে।
ভাই: দাঁড়িয়ে আছ কেন গো? জলদি করে নিয়ে আস।

রিতা মায়ের কাছ থেকে বালতি ও মগ নিয়ে এল। গোসল করা শুরু করে দিল। প্রথমে এক মগ দিয়েই ভাইকে বলল, "ভাই! তোমরা এতক্ষণ ধরে এত আরাম করলে? আমার মনে হচ্ছে আমি কেন বড় একটি বালতির মধ্যে এইরূপ পানি নিয়ে সেই পানির মধ্যে বসে যাই। তোমরা কত আরমা করছ! তোমরা সেই কখন থেকে এক সেকেন্ডও পানি ছাড়া থাকলে না। আর আমি এক মগ দিয়ে আবার পানি নিতে যতটুকু সময় লাগে তার মধ্যে আমি গায়ে পানি ঢালতে পারি না। আর দাদা ভাই তো শুধু পানির মধ্যে ডুবই দিতে থাকে। আমি যদি দাদা ভাই আর তোমার মত সাতার শিখতে পারতাম, তাহলে আমিও সারাক্ষণ ডুব দিয়ে থাকতাম।

দাদা: ওরে মেয়ে! অনেকক্ষণ কি? এক সেকেন্ডও তুই ডুব দিয়ে থাকতে পারবি না। তুই কি পারবি নাকি? শ্বাস নেয়া লাগে না? আমি তো তাও শ্বাস বন্ধ করে ডুব দিতে পারি। তুই তো তাও কত ছোট। ডুব দিতেই পারবি না।
রিতা: দাদা! তুমি আমায় তুই বলে কথা বলছ কেন? 'তুমি' বলতে পার না?
দাদা: একটু রাগ হয়েছে, তাই বললাম।
রিতা: এই দাদা! আমি যদি তুমি হতাম, তাহলে খুবই ভাল হতো। কাল আমি সাঁতার শিখে পানির মধ্যে খেলব।

তখন দাদা ও ভাই দু'জনেই: রিতা! তুমি সাঁতার শিখবে। সাঁতার শেখার কোর্স আছে না, তুমি শেখানে ভর্তি হয়ে যাবে। আজকেই কোর্স করে আসবে বিকালে। এখন তো খুব সকাল। ৯টা মাত্র বাজে। জলদি জলদি গোসল করে ফেলব। ভাটি আসার আগেই জোয়ার যখন আছে, তাড়াতাড়ি করে ফেলি।

রিতা: ঠিক আছে। আমি এখনই কোর্স করব।
দাদা: ভর্তি হয়ে নাও আগে। এই তো তোমার ভাই দিয়ে আসবে কোর্সে ভর্তি করে।
ভাই: উমঁ! তুমি নিজে কেন কাজ করছ না? আমাকে দিয়ে কেন কাজ করাচ্ছ? আমি করতে পারব না। আমার আরাম লাগছে। তুমি যাও।
দাদা: এই, আমাকে বকাবকি করছ কেন? আমি কিন্তু তোমার চেয়ে বড়, ভুলে যেও না। বড়র চেয়েও বড় তোমাদের। মানে তোমাদের বাবার বাবা। এবার বুঝেছ?
রিতা: ঝগড়া করো না। দু'জন মিলেই আমাকে ভর্তি করে দেবে এখনই।
ভাই, দাদা: তুমি চুপ কর। আমাদের গোসল শেষ হয়ে নিক, তারপরে। বকা দিচ্ছি বলে আবার কান্না শুরু করে দিও না। আমাদের খুব আরাম লাগছে। আমরা একটু পরে তোমাকে ভর্তি করে দিয়ে আসব। তুমি তাড়াতাড়ি গোসল শেষ কর।
রিতা রাগ হয়ে উল্টো বকে: এই! তোমরা আমায় বকছ কেন? এত আরাম দরকার নেই।

পরের দিন সাঁতার শিখে সে পানির মধ্যে খেলল বল। পানির মধ্যে বল খেলে। সেই বলটি পুকুরের গভীরে তলিয়ে যায়। দাদা আবার ডুব দিয়ে সেটা খুঁজে বের করে আনে।

(দু'দিন পর)
রিতার আবার মিষ্টি খাওয়া নিষেধ ছিল। সে দেখল, দাদা ও তার ভাই আইসক্রিম খাচ্ছে। 
রিতা: তোমরা লুকিয়ে লুকিয়ে কি খাচ্ছ?
দাদা: আইসক্রিম খাচ্ছি। তোমার খাওয়া নিষেধ। তুমি খাবে না। আইসক্রিম তো মিষ্টি।
রিতা: আইসক্রিম কি খুব মজা নাকি এমন হাউমাউ করে খাচ্ছ যে?
ভাই: খুবই মজা।
দাদা ভাইকে মাইর দিয়ে: তুমি বললে কেন, খুব মজা? ও তো এখন খেতে চাইবেই। ওর নিষেধ তুমি জান না? ভাই হয়েছ কেন তাহলে?
ভাই: আমাকে বকছ কেন? আমাকে মারছ কেন? আমি তোমাকে বলেছি যে, আমাকে মার? ওর তো খাওয়াই নিষেধ। ও তো খেতেই পারবে না। অযথা বলেছি তো কী হয়েছে? একটু কথা বলে মুখটা একটু চালু হয়। আরো বড় হয়ে মুখ দিয়ে পটর পটর কথা বলব।

তারপর রিতা একা একা বাবার পকেট থেকে টাকা নিয়ে ডাক্তারের কাছে চলে গেল। ওষুধ খেয়ে ফেলল। টাকা দিয়ে এল। তখন তার মিষ্টি খাওয়ার অনুমতি পেয়ে গেল। এখন সে মিষ্টি খেতে পারবে। সে এবার বাবা, মা, দাদা, ভাইকে রিপোর্ট দেখালো। আর বাবার পকেটটি খুলে বাবাকেও দেখাল যে, দেখ, তোমার পকেটের সব টাকা চুরি করেছে তোমার মেয়ে। চুরি করে সে ভালই করেছে। ডাক্তারের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে এসেছে মিষ্টি খাওয়ার। দেখ তোমার মেয়ের রিপোর্ট।
এবার সে আইসক্রিম খাওয়া শুরু করল। তারপর ললিপপও ফ্রিজে রাখা ছিল। সেইটা বের করল। কোন গরম দেয়া নাই। বরফ হয়ে রয়েছিল, তাই একটু ধুয়ে ধুয়ে ছুটিয়ে ছুটিয়ে খেয়েছে। গরমের দিন শেষ। গল্পও শেষ।

Tuesday, April 12, 2016

মজার পিঠা

দাদীর হাতের মজার পিঠার স্বাদ,
মজার পিঠা খেতে খেতে হয়ে গেল রাত।

কী সুন্দর মজার পিঠা!
খাবে আমার মাতাপিতা।

এই পিঠাগুলো আমরা
ভাগ করে খাই।
কারণ হল মজার পিঠা
আমরা খাই তাই।

Monday, April 11, 2016

বোকা মা

এক ছিল এক মহিলা। তার শখ ছিল তার ভাইবোনদের বাচ্চাদের মধ্যে তার বাচ্চাই যেন সবার বড় বোন হয়। তাই সে ভাবল যে, ইস! এখনই যদি হাসপাতালে গিয়ে পেট কেটে একটি বাচ্চা বের করে নিতাম! বোকা না মা টা? পেটে বাচ্চাই আসেনি। অথচ শুধু শুধু হাসপাতালে গিয়ে পেট কেটে যন্ত্রণা ভোগ করল। এখন সে সেইটা ভাবতে শুরু করল। তার কিন্তু বিয়েই হয়নি। সে তাড়াতাড়ি বিয়ে করার ..

শিক্ষা: সবকিছুতে প্রতিযোগিতা ও তাড়াহুড়া করতে নেই।

Sunday, April 10, 2016

Shining Star

Shine shine star
In the sky.
I can't count all
Because it is high.

Its look very shining
Day and night.
We can see the stat
At the night.

Days are also
It can't seen.
You know that color is
Yellow or green.


Q/A.
1. What is the color? Yellow, or green?
2. What about this poem we read?

Write in another copy

Saturday, April 9, 2016

ভালো লোক

এক ছিল এক গরীব কিন্তু খুব ভালো লোক। সে আল্লাহর কথা খুব ভালো করে মানতো। এমনকি তার কাছে এক চিমটিও টাকা ছিল না। তার যা আছে তা দিয়েই সে টুপি আর দিক গণনা করার কম্পাস কিনল। যা দিয়ে সে বুঝতে পারবে নামায কোথায় পড়তে পারব আর নামায কোথায় পড়তে পারব না। আল্লাহ তার পরীক্ষা নিচ্ছিলেন যে, সে কি এতটাই সৎ লোক? কি দিয়ে জান? সে তো জায়নামাযও কিনেছিল তার যা আছে তা দিয়ে, ছো্ট্ট একটি জায়নামায। সে দেশে-বিদেশে হেঁটে হেঁটে বেড়াতো। দেখতো, তার মতো কোন সৎ লোক আছে কিনা, যে গরীব মানুষদেরকে তার কিছু অংশ দান করে। আর সে নামাযের সময় হলেই কোন না কোন জায়গা থেকে আযান শোনার চেষ্টা করে। আর জায়নামায, দিক গণনা করার কম্পাস আর টুপিটি সে সবসময় সঙ্গে রাখে; যাতে সে নামাযটা ভালো করে পড়তে পারে। খাবার-দাবার সেগুলো তার কাছে তেমন মূল্যবান নয়। তার কাছে আল্লাহকে মানা এবং আল্লাহর কথামতো চলা এগুলোই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন মোনাজাত করতো। প্রত্যেক নামাযের পর। এখন আল্লাহ তার পরীক্ষা নিচ্ছিলেন কিভাবে, সেটার বর্ণনা দিচ্ছি। যে দেশে অনেক ঝড় হয়, অনেক জোরে বৃষ্টি হয়, অনেক জোরে বাতাস ওঠে- এমন জায়গা গেল সৎ লোকের খোঁজে। আল্লাহ পরীক্ষা নিচ্ছিলেন, সে এখন নামায কি করে পড়ে। আল্লাহ অনেক জোরে ঝড় উঠিয়ে দিলেন। কম্পাস ও জায়নামায দুটিই উড়ে গেল। সে এখন আল্লাহর কাছে জিজ্ঞেস করল যে, "আল্লাহ জায়নামাযটা তো গেলই, জায়নামায না থাকলেও এমনি মাটিতে বসে পড়তে পারতাম, কিন্তু কম্পাসটা যে উড়ে গেল, আমি দিক কিভাবে বুঝব? নামায কোন দিকে ঘুরে পড়তে হবে, সেটাই তো বুঝতে পারছি না। আল্লাহ, তুমি আমাকে বুঝিয়ে দাও, কিভাবে আমি কোন্‌ দিকে নামায পড়ব।" এইটাই হচ্ছে তার এক নম্বর পরীক্ষা। সে পরীক্ষায় পাস করতে পারল। কারণ সে নামাযের জন্য আল্লাহর কাছে খুবই কাকুতি মিনতি করল। আল্লাহ খুশী হয়ে উল্টো দিকে ঝড় উঠিয়ে কম্পাস ও জায়নামায দুটিই ফিরিয়ে দিলেন। সৎ লোকটি খুব খুশী হলো। সে বলল, "আলহামদুলিল্লাহ।" সে জায়নামায ও কম্পাস পেয়েই নামায পড়া শুরু করে দিল। সে অন্য সময় তো সময় পায় না সব রাকাত পড়ার, শুধু ফরযটুকু পড়তে পারে। এখন সে সুন্নত, বেতের সব পড়ল। পড়ে সে আবার পথে চলতে লাগল। আল্লাহ তার দ্বিতীয় পরীক্ষাটা নিতে চাচ্ছিলেন। কি দিয়ে জান? তখন আল্লাহ সব নদীর পানি শুকিয়ে দিলেন। তখন বর্ষাকাল ছিল। তাও কোন বৃষ্টি আল্লাহ দিচ্ছিলেন না। এখন নামাযের সময় হয়ে এসেছে। নামাযের সময় সেই লোকটি ওযুর পানি পাচ্ছিল না। সে আল্লাহর কাছে জিজ্ঞেস করল যে, "আল্লাহ! তুমি কেন আমার সাথে এরকম করছ? আল্লাহ তুমি আমার আশেপাশের নদী কেন বন্ধ করে দিয়েছ, আল্লাহ? একটুখানি পানি তো আমাকে দাও।" এখন আল্লাহ তার মনের মধ্যে বুদ্ধি দিয়ে দিলেন যে, অনেক অনেক মাটি খুঁড়ে অনেক নিচে পাবে পানি। সেই পানি উঠিয়ে ওযু করতে হবে। এই বুদ্ধিটি দিলেন তাকে আল্লাহ। সে বুদ্ধি পেয়ে বলল, "আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ, তুমি আমাকে এই বুদ্ধিটা দিয়েছ। খুবই ভালো বুদ্ধি দিয়েছ।" এই বলে সে অতি কষ্টে মাটি খুঁড়তে খুঁড়তে খুঁড়তে খুঁড়তে তাও মাটির নিচে পানি পেল না। তখন তার মনে হলো যে, এমনি মাটি যেখানে ছিল সেটা খুঁড়লে তো পানি পাওয়া যাবে না। যেখানে নদী ছিল সেই জায়গাটা খুঁজে আমাকে বের করতে হবে। সে খুব কষ্টে হাঁটতে হাঁটতে হাঁটতে হাঁটতে সে মনে করতে চাচ্ছিলো যে, কোন্‌ জায়গায় নদীটি ছিল। অনেক খুঁজে তার মনে হলো, যেদিকে নামায পড়েছি আজ, তার সামনেই তো একটা নদী ছিল। আমি তো এদিকে নামায পড়তাম। তাহলে তার সামনে একটু খুঁড়ে দেখি তো। অনেক কষ্টে সে মাটি খুঁড়তে খুঁড়তে শেষে একটু পানি পেলো। সেই পানিতে সে খুব কষ্টে হাত গর্তের ভিতর ঢুকিয়ে একটু একটু করে পানি বের করলো। সে দেখল, নামাযের সময় তো চলে যাচ্ছে। তাড়াতাড়ি করতে হবে আমাকে। সে তাড়াতাড়ি করে ওযু করে ফেলল। আল্লাহ দেখছিলেন যে, সে এইটা করে কিনা, আমি আবার পড়ে যাব নাতো গর্তের মধ্যে? মাটি বন্ধ করতে গিয়ে নামাযের সময় পার করে ফেলে কিনা। কিন্তু সে ভাবল যে, আমি অত ভয় পাব না। একটু পিছিয়ে পড়লেই তো হয়। সে ওযু করে নামাযে বসলো। নামায শেষ করে সে গর্ত ভরাট করে দিল। সে দ্বিতীয় পরীক্ষায় পাস করল। আল্লাহ চাচ্ছিলেন তাকে তিনটা পরীক্ষা নিতে। কি পরীক্ষা নিতে চাইছিলেন জান? একদিন সে নামাযে দাঁড়ালো। নামায শেষ করে পিছনে তাকিয়ে দেখল, এক ঝুড়ি পেয়ারা। সে ভাবল, ওমা! নামাযে দাঁড়ানোর আগে তো এই পেয়ারাগুলো ছিল না। আর আমি তো কোন মানুষের শব্দও পাইনি নামাযের সময়। আর আশেপাশে মানুষের কোন কিছু দেখতেও পাইনি। তবে এটা আসলো কোথা থেকে? আল্লাহ সব করতে পারেন। আল্লাহ নিশ্চয়ই এই ফলগুলো দিয়েছেন। একটু খেয়ে দেখি। আর ওখান থেকে হঠাৎ এক গরীব লোক এসে হাজির হলো। তার কিছুই নেই। শুধু একটি ছেড়া গেঞ্জি আর একটি লুঙ্গি। তার তেমন কিছুই ছিল না। সে অনেক দিন ধরে না খেয়ে কোন জায়গায় আশ্রয় নিয়েছিল। যেখানে পারে সেখানেই থেকেছিল। সে ঐ লোকটিকে বলল, "আমাকে কিছু পেয়ারা খেতে দেবে? আমি অনেক দিন ধরে কিছুই খাইনি। শুধু একটি পুকুরের থেকে একটু পানি খেয়েছি। কিছু পেয়ারা খেতে দাও না।" তখন ভালো লোকটি তার পেয়ারা থেকে বেশির ভাগ পেয়ারাই সেই লোকটিকে খেতে দিয়ে দিল। তখন ঐ লোকটি সেই পেয়ারাগুলো নিয়ে চলে গেল। আর এই ভালো লোকটি যতটুকু পেয়ারা তার কাছে এখন আছে সেটুকু খেয়েই চলল। আল্লাহ তা দেখে খুশী হলেন। আল্লাহ এবার তাকে কিছু পুরস্কার দেবেন। কী পুরস্কার জান? তাকে একটা বড় বাড়ি, দুইটি আম গাছ, একটি নদী ও একটি ধানের ক্ষেত তাকে উপহার দিলেন। আর বাড়ির পিছনেই দিলেন একটি মসজিদ। সে গভীর বনের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়েছিল। কিন্তু সে হাঁটতে হাঁটতে একটু সামনে আগানোর চেষ্টা করল। সে ভাবল, সামনে কি যেন দেখছি খুব সুন্দর। একটু গিয়ে দেখি তো। গিয়ে দেখলো, কী সুন্দর নদী, আম গাছ, বাড়ি, ধানের ক্ষেত। তারপর গিয়ে দেখল অনেক সুন্দর। সে বলল, "এ তো অনেক সুন্দর। এটা কার বাড়ি। নিশ্চয়ই অন্য কোন লোকের বাড়ি। কার বাড়ি তা নিয়ে ভাবতে হবে না। আমি দূরে কোথাও চলে যাই।" কিন্তু সে তো সেটা তার উপহারই বুঝল না। এখন কী হবে? তখন আল্লাহ তার মনের মধ্যে ঢুকিয়ে দিলেন যে, এটা তারই বাড়ি। তার জন্য এটি তৈরি করা হয়েছে। তখন তার মনের মধ্যে সেটি ঢুকে গেল। সে ভাবল, "একি! আমার বাড়ি নাকি? আমার মনের মধ্যে কেমন যেন মনে হচ্ছে। আমি এতগুলো ভালো কাজ করেছি আজ। তবে আল্লাহ তো আমাকে কোন পুরস্কার দিলেন না। এটা কি সেই পুরস্কার? আমি তো বুঝতে পারছি না। কিছুই তো বুঝতে পারছি না। সত্যিই কি তাই? এটা কি আমার বাড়ি। একদিন অপেক্ষা করে দেখতে হবে। এই বাড়ির ভিতরে কেউ আসে কিনা। আর জানালা দিয়েও উঁকি দিয়ে দেখতে হবে, ভিতরে এখন কেউ আছে কিনা। জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে সে দেখল, কেউ নেই। আর ভাবল, কিছুদিন আগে তো ঝড় হয়েছিল ঠিক এই জায়গাটাতেই। তবে তখন তো এটি ছিল না। আর যদি বাড়িটি ঝড়েও উড়ে যেত, তাহলে শুধু বাড়িটিই যেত, ফসল কি ঝড়ে উড়ে যেত। আর তখন ফসল-টসল কিছুই ছিল না। আর ফসল যদি থেকেও থাকে এবং নষ্ট হয়েও থাকে, তাহলে এত জলদি আবার তা ফিরে আসবে কি করে? আর ঘরও যদি উড়েও যায়, তাহলে সেটা ফিরে আসেই বা কি করে? আমাকে বুঝতে হবে। একদিন অপেক্ষা করি, এখানে কেউ আসে কিনা। তারপর সে দুই দিন অপেক্ষা করে দেখল, বাড়িতে কেউ নেই। তারপর দুই সপ্তাহ অপেক্ষা করল দেখার জন্য। কিন্তু সে ভাবল যে, এতদিন তো কারো বেড়াতে যাওয়া সম্ভব নয়। এতদিন কেন বেড়াবে মানুষ? মানুষের কি কোন কাজই থাকে না, সব কাজ ছেড়ে এ কাজ করবে? অবশেষে সে বুঝতে পারল, এটাই তার উপহার। তখন সে বলল, "আলহামদুলিল্লাহ। সে তার জায়নামাজটি ও টুপিটি ও কম্পাসটি নিয়ে গেল ঘরের ভিতরে। দেখতে চাইল, ঘরের ভিতরটা কেমন সব? দেখল, ওমা! এটা আবার কেমন ঘর? ঘরের ভিতরেই বিছানা আছে, চেয়ার, টেবিল, তারপর খাবার-দাবার টেবিলের উপরে, আলমারি, আলমারির ভিতরে অনেক কোরআন, বই, তসবীহ, সুন্দর জায়নামাজ, সুন্দর সুন্দর টুপি, চিরুনি এমনকি বাথরুমের ভিতর বালতিও যে রাখা আছে। সে খুব খুশী হলো। তারপর সে দেখল যে, ওমা! এখানে আবার সিড়ি কিসের? বেয়ে দেখি তো। সিড়ি দিয়ে উঠে দেখল, ওমা! ছাদ। কী সুন্দর! ছাদের উপর পানির ট্যাংকও দেখি আছে। আবার ছাদে বসে বাতাস খাওয়ার জন্য বা কোন কাজ করার জন্য বসার টুল ও চেয়ারও রাখা আছে। একটি ছোট্ট টেবিলও রাখা আছে। মেহমানদের বাতাস খাওয়ানোর আর ভালো ভালো খাবার খাওয়ানোর জন্য সেই টেবিলগুলি। সে আরও খুশী হয়ে পড়ল। ২৪ ঘন্টা আলো, বাতাস সব ফ্রি। আর ইচ্ছে করলে বাতাস খাওয়ার জন্য সেই বাড়িটির ছাদের ভিতর ঘুমানোও যাবে। একটি ছোট্ট বিছানাও আছে। বসে বসে বাতাস খাব, আর ঘুমোবো। বাড়ির এখানে দেখছি একটি দোকানও আছে। আর এই মানুষটিকে তো আমি কোনদিনও দেখিনি। এ তো সেই দোকানদার। আর এইটার মধ্যে আরো অনেক কিছু আছে। খাবার, বই অনেক কিছু। আমার তো খুবই ভালো হয়েছে। আমার জীবনে এত বড় ভালো জিনিস থাকবে, আমি ভাবতেও পারিনি। আমি এ খুশীর কথায় একটা শব্দও মনে আনতে পারিনি। আল্লাহর শুকরিয়া। আল্লাহ যা চান তাই হয়। এটা কিসের উপহার? আল্লাহর কাছে সে জিজ্ঞাসা করল। তার মনের মধ্যে আল্লাহ বুঝিয়ে দিলেন, "আল্লাহ তোমার পরীক্ষা নিচ্ছিলেন তিনটি। এক নম্বর ঐ ঝড়ের ঘটনাটি, দুই নম্বর ওজুর পানির ঘটনা, তিন নম্বর গরীবকে তুমি পেয়ারা দান কর কিনা। নামায পড়ার জন্য নামাযের জিনিস হারিয়ে গেলে সেগুলো খোঁজা, তারপর ওযু করার পানি না পেলে সেটা কষ্ট করে খুঁজে বের করা, তারপর অনেক গরীব যারা কোন খাবার পায় না তাদেরকে খাবার দেয়া- এ সবগুলোই তো খুব ভালো কাজ। আমি এই ভালো কাজগুলো করেছি। তাই আল্লাহ খুশী হয়ে আমাকে এই উপহারগুলো দিয়েছেন।

লোভী কন্যা

এক দেশে বাস করত এক লোভী কন্যা। তার ছিল একটি ধনী বন্ধু। সে তার বন্ধুকে বলল, "বন্ধু! তুমি আমাকে অনেক টাকা দেবে। আমি তোমার বন্ধু না? আমাকে তো টাকা দেয়া দরকার। বন্ধু কি বন্ধুর উপকার করে না?" তখন বন্ধু বলল, "তবে তোমার কি উপকারে টাকা লাগবে।" তখন সেই লোভী কন্যাটি বলল, "ঐ তো টুকটাক সব কাজের জন্যই তো টাকা লাগে। অনেক সব কাজের জন্যই তো টাকা লাগে। দেশে-বিদেশে যেখানেই যাই।" সেই দেশের এক কোণায় বাস করত এক খুবই খারাপ হিজড়া। সবার কাছে যেত আর বলত, তোমার সব টাকাই আমাকে দিয়ে দাও। একটুখানি দিলে তো হতোই না। লোভী কন্যাটির কাছে কিন্তু খুব কম টাকা ছিল। কিন্তু তখন বন্ধু বলল যে, "ঠিক আছে, ক'দিন পরে তোমাকে দেব টাকা। দেব অনেক অনেক টাকা।" তখন লোভী কন্যাটি বলল, "না, বন্ধু। কালই আমাকে সব টাকা দেবে তুমি।" তখন বন্ধুটি বলল, "ঠিক আছে যা বল তুমি, তাই হবে।" তার বন্ধু তাকে তার পরেরদিন খুব সকালবেলা ভোরে উঠেই টাকা নিয়ে রওয়ানা দিল লোভী কন্যাটির বাড়ির দিকে। সকাল বেলা সকাল ১০ টায় সে গিয়ে পৌঁছুলো। গিয়ে দেখল, লোভী কন্যাটি এখনো ঘুমাচ্ছে। সে বলল, "এই বন্ধু! তুমি এখনো ঘুমাচ্ছো কেন? ওঠ, ওঠ, দেখ তোমার জন্য কি এনেছি।" তখন লোভী কন্যাটি উঠে বলল, "দাও দাও দাও দাও দাও, দাও না টাকা।" দেখেছ তার কেমন আচরণ? এভাবে মানুষ মানুষের কাছে তাড়াতাড়ি করে কাড়াকাড়ি করে চেয়ে নেয়? এমনিতেই তো তাকে দিত। লোভী কন্যাটি আবারো বলল, "দাও না কেন? জলদি দাও।" বন্ধু দেখল, "ইস! আমার বন্ধুর এমন আচরণ তো আমি দেখিনি। আমার বন্ধু এমন হয়ে গেল কেন? মানুষ একটা বাসায় আসলে বসতে দেয়, খেতে দেয়। এর তো তাও না। এ যে দেখছি আসার সাথে সাথেই চায়। কেমন আমার বন্ধু?" তখন বন্ধু বলল, "নাও, নাও, নাও। তোমার টাকা।" তখন লোভী কন্যাটি বলল, "হ্যাঁ, হ্যাঁ, বন্ধু, দাও।" লোভী কন্যাটি টাকা নিল। তারপরে বলল যে, "নাও, এবার তুমি চলে যাও। আর কি কাজে থাকবে? যাও, তোমার বাড়ি।" তখন বন্ধু ভাবল যে, "ইস! এত খারাপ আমার বন্ধু?" তারপর কি হলো জান? লোভী কন্যাটি বলল যে, "যাও এ সিড়ির কাছে। তুমি তো বাসায় অনেক এসেছ। তুমি তো চিনবেই, যাও। আমি বসে বসে টাকাগুলো গুনি। বাবা! কত টাকা! চলে যাও তুমি, বসে বসে কী দেখছ? পরে আবার আরেকদিন আসবে।" তখন বন্ধু ভাবল, "ছি ছি ছি ছি! এ আবার কেমন? মানুষ মেহমান আসলে একটু আগিয়ে দেয়, বলে, আবার এসো, বিদায়! কিন্তু এর তো দেখছি কিছুই নেই। এমন করছে কেন?"- বলে বন্ধু মনের দু:খে বাড়ি ফিরে গেল। আর ভাবল, আর কোনদিনও ওর বাড়িতে আমি যাবই না। দেখা হলে আমিও বলব যে, "টাকা দাও আমায়।" আমি তো সবসময়ই ওকে দাওয়াত দিই, ও আসে, ওকে আদর করে ঘরে নিয়ে যাই, বসতে দেই, নাস্তা সাজিয়ে দেই সামনে, বাতাস করি, তাড়াতাড়ি চলে যেতে দেই না। বসে বসে একসাথে কথা বলি। তারপর ফিরে যাওয়ার সময় "বিদায় বন্ধু, আবার আসবে আমার বাড়িতে" এসব বলি। কিন্তু আমার সাথে বন্ধু এমন করল কেন? এবারে ঐ হিজড়ার কথা। সেই হিজড়াটি এল ঐ লোভী কন্যাটির কাছে। বলল যে, "এই! আমায় টাকা দাও। আমি কিন্তু অমন সাধারণ নই। আমি কিন্তু একটুখানি ইচ্ছা করে দিলেই হয় না। তোমার কাছে যা টাকা আছে আমায় সব টাকা দাও। নইলে কিন্তু এমন গালাগালি করব।" তখন লোভী কন্যাটি কী আর করার! সব দিয়ে দিল ঐ লোভী হিজড়াটিকে। তখন সে ভাবতে লাগল, "ইস! আমি যদি আরেকটু পরে এই টাকাগুলো নিতাম, তাহলে আমার টাকাগুলো থেকে যেত। এখন তো আমায় আর কেউ টাকা দেবে না। আর আমি এত বোকা কেন? সবসময় ঘরের বাইরে বসে বাতাস খাই? তাও আবার যা টাকা আছে সব সঙ্গে নিয়ে ঘুরে বেড়াই কেন? আর বাসায় রেখে আসলে তো লাভ নেই। (হিজড়াটা) বলবে, এত কম কোন মানুষের টাকা হয় না, আরো দাও।" আর ঐদিকে বন্ধু বলল, "তাও আবার আমার কাছে টাকা চায়, ছি! আর ঘরে ঢোকার সাথে সাথে একটু আদর করে বসাবে, তাই না? শুধু টাকা দাও টাকা দাও শুরু করেছে। আর একটু ধৈর্য্যও ধরে না। যা আছে আমার ঘরে সব দিয়ে দিয়েছি। আমার এখন আবার ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে হবে। আমার তো সময়ই থাকে না। ওর তবু অনেক সময় থাকে। কত কাজ আমার! একটি মহিলা মানুষ আমার পরিবারে। তাও আবার বুড়ি। আর অন্য সব ছেলে মানুষ। তারাও বুড়ো। আর আমার পরিবারে তো পাঁচজন আছে। একজন তো ঐ বুড়ি, মানে আমার মা, আরেকজন আমার বাবা, আর তার ভাই থাকে, আর বাকি থাকে কিছু বাচ্চা, মানে আমার ভাতিজা-ভাতিজী। তাদের সবার জন্য রান্না করতে হয়ও আমার। ছেলে মানুষ কি রান্না করে? আবার ঘরের বউমারা যেমন কাজ করে, আমাকে সেই সব কাজগুলো করতে হয়। বাচ্চারা সারাদিন খেলে, একটু সাহায্য করবে তা না। আর আমার ঐ বন্ধুর অবস্থা দেখে আমার একটুও ভাল লাগে না। খুবই অশান্তি লাগে। উহ! আর ভাল্লাগে না। ওর সাথে দেখাই করব না। দেখা করতে গেলেই কিছু না কিছু দায়িত্ব দিয়ে দেয়।" আর ঐদিকে লোভী কন্যাটি এখন থেকে গরীব হয়ে পড়ল।

পরের বার: 
কিছুক্ষণ আগে খারাপ কর্ম করলে খারাপ ফল হতো। আর এখন ভালো কর্ম করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে। ভালো মানুষ তো বন্ধুটি। এবার বন্ধুর কথা বেশি থাকবে। পাঁচ বছর ধরে সেই বন্ধুটি তার পরিবারের জন্য অনেক রান্না করেছে। অনেক যত্ন করেছে। বাচ্চারা তো খেতে চায় না। বাচ্চাদের মন ভুলিয়ে রেখে খাইয়েছে। আর বাচ্চারা চেয়ার-টেবিলে শান্তশিস্টভাবে খায় না। তাদেরকে বলেছে, "যদি টেবিলে বস, তাহলে তোমাদেরকে আরো অনেক কিছু দেব।" আর তখন তার সেই কম টাকা দিয়েই বাচ্চাদের জন্য জিনিস কিনেছে। বাচ্চারাও মজা করত যে, মামার হাতে খাবার খাওয়া মজা। সে তো অনেক কষ্ট করেছে। একদিন সে বাজারে গেল। বাড়ি তালা দিয়ে। তার ভাগ্নিরা সব স্কুলে। আর বুড়ো-বুড়িরা আবার কি যেন কাজে গেছে। এখন সবাই বাড়ি ফিরে দেখল, তাদের বাড়িটি নেই। সবাই বলল, "আমাদের বাড়িটি কোথায় গেল?" সবাই মিলে অন্য দিকে খুঁজতে গেল। সবাই এসে দেখল যে, ওমা! একি? তাদের বাড়িটি নেই, তাদের ঐ আগের পুরানো বাড়িটা নেই আর। সেই বাড়িটি রেখে অন্য একটি দোতলা সুন্দর বাড়ি, প্রত্যেকটা রুমের সাথে বারান্দা, কী সুন্দর ছাদ, খোলামেলা জায়গা। তার মানে হচ্ছে, ভাল কাজ করলে ভাল ফল পাওয়া যায়, খারাপ কাজ করলে খারাপ ফল পাওয়া যায়। শিক্ষাটি পড়ে দেখ।

শিক্ষা: যেমন কর্ম তেমনি ফল।

Thursday, April 7, 2016

গরীব মানুষের বিয়ের সমস্যা

এক দেশে বাস করত একটি গরীব লোক। বিয়ে হবে। এখন দু'জনেই গরীব। কিন্তু ওরা এতই গরীব যে, তাদের ৫০০/৬০০ টাকাও নেই। ২০০/১০০-এর মত হবে। আর বিয়ের নিয়ম তো বরেরা বউদেরকে সাজগোজের জিনিস দেয়। কিন্তু বরও তো গরীব। সে এখন গয়নাগাটি কি করে কিনবে? গয়নাগাটি অন্তত কিছু কিছু কিনতে পারবে; কিন্তু জামাকাপড়? সেগুলো কেনার টাকাও তো থাকবে না। তাই সকলেই ভাবতে লাগল, এই বিয়েটা কি হবে? দুজনেই দুজনকে পছন্দ করে। দুজনেই দুজনের আচরণ দেখে খুশী হয়েছে। কিন্তু কিছুই যে নেই টাকা-পয়সা। তার জন্য দুজন খুব চিন্তায় পড়ে গেছে। দু'জনই চাচ্ছে যে, এই বিয়েটা সুসম্পন্ন হোক। কিন্তু তা কি হবে? এই ভেবে ভেবে তারা সারাদিন কাটাতে লাগল। বউয়ের ছিল মা এবং বরের ছিল একটি বাবা। এমনকি তাদের একজনের মা এবং একজনের বাবাও কোথায় ছুটে চলে হারিয়ে গেছে। পড়ে গেল বিয়ের সমস্যায়। বউয়ের মা বরের মাথায় হাত দিয়ে বলল, "বাবা, দেখতো, কী যে সমস্যায় পড়েছি। এবার তুমি কি করে আমার মেয়েকে গয়নাগাটি কিনে দেবে? বল বাবা। কিছু টাকা-পয়সা তো দরকার। কিন্তু তুমি আবার ভিক্ষে করতে যেও না যেন। যা আছে তা দিয়ে বেশ ভাল কিছু তৈরি করে বিক্রি কর। তবেই দেখবে, তোমার টাকা কিছুটা বেড়েছে। অথচ এমন কিছু তৈরি করতে যেও না, যাতে তোমার যা আছে তার চেয়েও কম টাকা হয়ে যায়। বরং এমন জিনিস বিক্রি করবে, যা মানুষের প্রয়োজন হয়, মানুষ বেশি কেনাকাটা করতে আসে। আজকাল মা-বাবা বাচ্চাদেরকে একটু বেশি মারামারি করতে চায়। বাচ্চারা একদমই জানে না, এটা করতে হয় না। তারপরও মা-বাবারা বুঝায় না, শুধু বকে-মারে। তোমাকে বুদ্ধি বের করতে হবে, প্রমাণ করতে হবে যে, বাচ্চাদের মারতে হয় না। সেগুলোর উপায় খুঁজে বের করে তোমাকে একটা খাতায় লিখতে হবে। তারপর সেগুলোই বিক্রি করে তুমি অনেক টাকা পাবে। আর আজকাল তো মানুষ বেশির ভাগ উপরের তলায় বাস করে। তাই ধুলো-ময়লা বেশি ওড়ে বাতাসে। ঘর বেশি নোংরা হয়। আমার মেয়ের বাড়িতে কিছু পোয়াল আছে, আর একটা লাঠি আছে। পোয়ালগুলো লাঠির সাথে গেঁথে ঝাড়ু বানিয়ে সেগুলো বিক্রি করতে পারে। অনেক টাকা পেয়ে যাবে। তাহলে গয়না-গাটি, কাপড়চোপড় সব কিছুর ব্যবস্থা হয়ে যাবে।" এবার ছেলের বাবা মেয়ের মাথায় হাত দিয়ে বলল, "মা, দেখ না, আমার ছেলে এবার কী করবে? তুমি কিছু উপায় কি বলতে পার আমাদের? তুমি কি তোমার বাড়ি থেকে দয়া করে কিছু লাঠি ও কিছু পোয়াল দিতে পারবে? তোমার বাড়িতে নাকি পোয়াল আছে, যেগুলো গরু খায়? একটু দেবে? নাহলে যে আমরা খুব বিপদে আছি। দুজনেই দেখতে খুব সুন্দর, দুজনেরই আচরণ খুব ভাল, দুজনেই বিয়ে করতে চেয়েছে একসাথে, অতএব যদি বিয়েটা না হয়, তাহলে তো দুজনের মনের শখটা মিটবে না, সবসময় মন খারাপ করে থাকবে। আর মানুষকে অমন অসুখী দেখতে আমাদের মন চায় না। মা, তুমিও চেষ্টা কর কিছু একটা করার।" মেয়ে বলল, "শুধু রূপ ও গুণই নয়, নামও তো সকলের সুন্দর। কিন্তু বিয়েটাই যদি না হয়, তাহলে কী যে হবে? আমারও তো ইচ্ছে করছে, যেন আমার টাকা-পয়সাগুলোও আপনার ছেলেকে দিয়ে দেই, তাতে আপনার ছেলে আমাকে অনেক গয়নাগাটি ও কাপড়চোপড় কিনে দিতে পারবে। তখন মেয়ের মা বলল, "না। তা করবে কেন? আমি তো তোমার শ্বশুরের ছেলেকে সবই বুদ্ধি দিয়ে দিয়েছি।" তখন ছেলে বলল, "না, শুধু তাই করলেই কি হবে? মারতে হয় না তার বুদ্ধিটাও তো আগে বের করি। কি উপায়ে বোঝানো যায় যে, বাচ্চাদের মারতে হয় না, সেই বই বিক্রি করব। বইয়ের নাম হবে, "বাচ্চাদের মারতে হয় না"। পেয়েছি! কি লিখব উপায় পেয়েছি আমি। আমি লিখব ১ নম্বর পৃষ্ঠায়: বাচ্চাদের মারতে হয় না কারণ, বাচ্চাদেরকে যদি আপনারা মারেন, তারাও তাদের বাচ্চাকে একবারে ছোট থাকতেই মারা শুরু করবে। বেশি ছোটকাল থেকে মারা শুরু করলে তার ছেলেমেয়েদেরকেও সে অনেক ছোটকাল থেকে মারা-বকা শুরু করবে। অতএব, আপনারা দয়া করে বাচ্চাদেরকে মারবেন না। এমন করতে করতে তো পৃথিবীর অনেক মানুষই বাচ্চাদেরকে মারবে, অথচ এত মারা-মারি, বকা-বকি এসব তো ভাল কাজ নয়, তাই না? আর তাতে বাচ্চাদেরও কষ্ট হয়। এত ছোট বয়সী বাচ্চাদের বকা ও মারা উচিত না। ২ নম্বর পৃষ্ঠায় লিখব: মনে করুন, আপনার একটি শিশুর জন্ম হবে। এটা ভাববেন না যে, জন্মের সাথে সাথেই সে মাকে যদি কোন জ্বালা দেয়, তাহলে এক মাসও হয়নি এমন বাচ্চাকে আপনি মারবেন? তা করবেন না। আর দুই বছর বয়সীর নিচেও মারা উচিত না। আর ছয় মাসের আগে বকাও উচিত না। আর ছয় মাসের পরে বাচ্চাদের বকতে পারেন, কিন্তু মারবেন না। বকাটা কম কষ্টের, কিন্তু মারবেন না। তিন নম্বর পৃষ্ঠায় লিখব একটি গল্প। গল্পের নাম হচ্ছে, 'শিশুদের মারলে কেমন হয়?' গল্পটি হচ্ছে: এক দেশে বাস করত এক কন্যা। তার একটি বাচ্চার জন্ম হল। তাকে তার মা বেশি ছোটবেলা থেকেই মারা-বকা শুরু করেছিল। অতএব, বাচ্চার জন্মের সাথে সাথেই যদি বাচ্চা মায়ের কোন মারার মত ভাব করে, তাহলে কি তার বাচ্চাকে মারা উচিত হবে? কিন্তু সে সেজন্যই বাচ্চাকে বকল। বাচ্চা ভয় পেয়ে বাচ্চার মনটা কেমন কেমন কেমন হয়ে গেল। তা থেকে শুরু হল তার মেজাজ খারাপ। বড় হয়েই সবাইকে গালাগালি করত। কারো সাথে মিশত না। এবং সকলকেই মারা শুরু করল। অতএব, আপনারা বাচ্চাদেরকে মারবেন না। ৪ নম্বর পৃষ্ঠায় লিখব কিছু কিছু দরকারি কথা। (১) বেশি ছোটবেলা থেকে শিশুদের মারতে হয় না। (২) বাচ্চাদেরকে মারলে তারাও তাদের শিশুকে মারে। শিশুদেরকে মারা উচিত না। (৩) যদি আস্তে আস্তে সকলেই বকাবকি শোনে, তাহলে আস্তে আস্তে পৃথিবীর সব মানুষই বাচ্চাদের মারা শুরু করেছে। (৪) আপনারা কি দেখেছেন যে, আপনাদের শিশুর মনের ভেতরটা? বাচ্চাদের খুব নরম মন থাকে। (৫) বাচ্চাদের বকাবকি করলে বাচ্চাদের সেই মন বিগড়ে যায়। (৬) বাচ্চাদের যত্ন নিতে হয়। (৭) অতএব, কোনদিন আপনার বাচ্চা ছোটকাল থেকে যেন বকাবকি না শোনে। অন্য পৃষ্ঠাগুলোতে একটি করে গল্প লিখব আমি শিশুদেরকে মারতে হয় না নিয়ে। এই তো ঠিকঠাক হয়ে গেল। তখন বউ বলল, "ভালোই তো বলেছ। নামগুলোও সুন্দর আমাদের, নাম হচ্ছে আমার নাম গোলাপী, আর তোমার নাম মামুন। সকলের পরিচয় খুব সুন্দর। তবে কাজ শুরু হোক।" বরপক্ষ থেকে সব কাজ শেষ করার জন্য অপেক্ষা করতে লাগল। কাজ করা শুরু করল। তা দিয়ে হল ১২০০ টাকা। এক মাস পর হয়ে গেল ৫০০০ টাকা। তা দিয়ে কিনল অনেক রকমের গয়না ও একটি সুন্দর শাড়ি। গোলাপী বলল, "মামুন, তুমি এত সুন্দর সুন্দর জিনিস কিনলে কোথা থেকে? জান, আমার একটা সুন্দর টিয়ে পাখি আছে। দু'দিন পরই তো বিয়ে। আমাদের মধ্যে তো তেমন কোন আত্মীয় নেই। কাদের দাওয়াত দেব বলতো? ও হ্যাঁ, মামুন, তোমাকে বলাই হয়নি, আমার দুটো বন্ধু ছিল আর দুটো বান্ধবী ছিল। তাদের আছে মা-বাবা দু'জনই। আর তার মধ্যে একটি বান্ধবীর তো মা-বাবা তো আছেই, তার সঙ্গে দাদা-দাদুও আছে। তাদের দাওয়াত দেয়া যায়।" তখন মামুন বলল, "হ্যাঁ। তা তো যাবেই। কেন যাবে না? মানুষ মাত্র দাওয়াত দেয়ার এইটুকু যখন পেয়েছ, তখন তো দাওয়াত দেবেই। আর আগামীকালকে আরো মানুষ পাব দাওয়াতের জন্য। আমার একটি ফুপাতো বোন আছে। তার আবার দুটি বান্ধবী আছে। আর আমার নিজেরও একটি বন্ধু আছে।" সবাই সবকিছু জানাজানি করল। কিন্তু বিয়েতে কি খাওয়াবে? তখন বাবা বলল, "তার কোন চিন্তে নেই। আমার বাড়িতে খিচুড়ি আছে। সেটাও তো খেতে দিতে পারি।" তখন বিয়ের জন্য সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে গেল। বিয়ের দিন সব ঠিকঠাক মত হল। তারপর থেকে তারা বই ও ঝাড়ু বিক্রি করা বন্ধ করল না, তখনো সেই ব্যবসা চালাতে লাগল, যেন এখনো তাদের টাকা বাড়তে থাকে। এরপর তারা সুখ-শান্তিতে বাস করতে লাগল। অর্ধেক ধনীর মতই পরিবার হয়ে গেল। গল্প শেষ।

Monday, April 4, 2016

চামেলির শখ

এক গ্রামে বাস করত একটি মেয়ে। তার বয়স ৮ বছর। তার নাম চামেলি। সকলে বলে, "ওহ! চামেলির পিছনে থাকতেই সারা দিন চলে যায়। কোন কাজ করতে দেয় না। ওহ! আর ভাল্লাগে না।" চামেলীর অনেক অদ্ভুত অদ্ভুত শখ। মা একদিন চামেলিকে বলে, "তুই কি রাণী না কী? পৃথিবীটা সুখের নয়। আমরা কি তোর দাসী?"
চামেলি: মানে? তোমরা দাসী নও। কিন্তু বাচ্চার জন্য কি মায়ের কোন কাজ থাকে না?
বাবা: এই তো আমার লক্ষ্মী চামেলি। তোমার জন্য কী এনেছি।
মা: না, খবরদার কিছু দেবে না।
বাবা: কেন?
মা: অফিস থেকে এক সপ্তাহ ছুটি নাও। দেখ, চামেলি কি করে?

বাবা ছুটি নিল। রবিবার চামেলি বলল, "আমাকে প্রতিদিন প্লেনে চড়াবে।" সোমবার আবদার করল, "আমাকে তোমাদের মত বড় বানিয়ে দেবে।" মঙ্গলবার বলল, "আমাকে কখনো বিয়ে দেবে না।" বুধবার বলল, "আমাকে ক্লাস প্লেতে ভর্তি করে দাও।" বৃহস্পতিবার চামেলি বলল, "আমি সারাদিন রুটি বানাবো।" শুক্রবার বায়না ধরল, "প্রতিদিন যেন আমার জন্মদিন হয়।" আর শনিবার বলল, "প্রত্যেক সোমবার পাকিস্তানে যাব।"

মা: চামেলির বাবা! এবার বোঝ চামেলি কী করে?

এবার বাবা ইচ্ছা একটাও পূরণ করতে পারল না। এভাবেই চামেলি সবসময় বাবা-মাকে জ্বালাতন করে।

মেহমান খেতে চায় না

এক ছিল একটি মহিলা। তার নাম মেরিনা। মেরিনার ফোন বাজল। মেরিনা বলল, "হ্যালো! কে?" "তুমি আমাকে চিনলে না?" "ও, মেরিনা! সুন্দর বাড়ি পেয়ে আমাকেই ভুলে গেলে? খুব কম মাস আগেই তো আমার সাথে দেখা হলো।" "ও! হ্যাঁ। আমি ভুলেই গিয়েছিলাম। রাগ করিস না বোন। তাহলে কী বলবি?" বোন বলল, "এখন ফোন রেখে দাও। এখুনি আবার কল দিব। তখন কিন্তু কেমন আছ বলতে হবে। সালাম দিবে।" মেরিনা ফোন রেখে দিল। বোন আবার ফোন দিল। মেরিনা বলল, "আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছিস? কি বলবি?" বোন বলল, "ওয়াআলাইকুম আসসালাম। মেরিনা! আমি ভালো আছি। কতবার ফোন দিই ভালো আছি কথাটাই তো বলিস। জিজ্ঞেস করার কী আছে? বলছি যে কাল আমি তোর বাড়িতে যাব। বিকাল বেলায়।" "সে তো ভালো খবর।" পরের দিন বোন বাসায় বসে ভাত খেল। রোস্ট খেল। মুলা খেল। শসা, টমেটো, বিস্কুট খেল। খেয়ে দেয়ে গেল মেরিনার বাড়িতে। মেরিনা পোলাও, রোস্ট, পাকা পাকা মিষ্টি আম, শসা, পায়েস, চা খেতে দিল বোনকে। বোন বলল, "আমি খাব না। আমি বাসা থেকে খেয়ে এসেছি।" "মানে? তুই বাড়ি থেকে কেন খেয়ে এসছিস? তুই কি জানিস না যে মেহমানদের কী করা দরকার? মেহমানরা একদম না খেয়ে বেড়াতে যায়। মেহমানরা এমন করে কারণ আরেক বাড়িতে গেলে অবশ্যই খেতে দেয় অনেক কিছু। আচ্ছা। যা করেছিস।"
এবার তারা শুধু গল্প করল।
কি গল্প?
বোন: আমি ভেবেছিলাম তুই আমাকে খেতে দিবি না। ভেবেছি, আমি তো মেরিনার প্রিয় বোন। ও আমাকে চিনতে পারেনি দেখে রাগ করেছে। সবাই বলবে মেরিনা খারাপ। খেতে দেয় না।
মেরিনা: তুই এসব কথা রাখ। তুই এতগুলো খাবার নষ্ট করলি কেন? আমার খুব দু:খ হচ্ছে। কারণ পোলাউ, রোস্ট, পায়েস ও চা আমি নিজের হাতে সুস্বাদু রেধেছি। আম ও শসা আমার গাছের। তুই খেলি না কেন?
বোন: খাব না কেন? পেট ভরা তাই তো খেতে পারি না। তুই আমায় ক্ষমা করে দে। আমি আরেক দিন খাব।

আমাদের দেশটা কত সুন্দর!

আমাদের দেশটা কত সুন্দর!
রাত কখনো অন্ধকার
কখনো ঝলমলে।
দুপুরবেলা রোদ ওঠে
প্রচুর ফসল ফলে।

খেজুর গাছের তলায় বসে
খেজুর রস খাই-
খেতে অনেক মজা লাগে
কী আনন্দ পাই।

শীতের দিনে সকাল বেলা
শিশির পড়তে থাকে,
শীতের কাপড় পড়ে মোদের
কী যে ভাল লাগে।

শীতের বেলা কুয়াশায়
মাঝি এসে নৌকা বায়।
শীতকালে পিঠাপুলি
মজার পিঠা হলো কুলি।

গরমকালে রোদের তাপে
ঘুরে বেড়াই মাঠে মাঠে।
বৃষ্টি পড়লে মেঘ ডাকে
কৈ মাছ লাফিয়ে ওঠে।

বসন্তকালে পাখি ডাকে
নতুন নতুন ফুল ফোটে।
রঙিন রঙে ভরে ওঠে।