Saturday, April 30, 2016

রাক্ষসের গল্প

এক ছিল এক রাক্ষস। কিন্তু সে ছিল অলস। সবাই পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠে পড়ত। কিন্তু দশটা বাজার পর উঠত সেই রাক্ষসটি। তাই সে ভাল খাবার খুঁজে পেত না। এমনকি তার পরিবারের সবাইও তাকে ডাকতও না। নিজেরা নিজেরা সব খেয়ে নিত। সবসময় ঐ রাক্ষসটির ভাগে পড়ত বুড়ো মানুষ। অন্য সবাই কচি কচি ছোট্ট বাচ্চাদের খেয়ে ফেলত। রাক্ষসটি পড়ল বেকায়দায়। সে সবাইকে বলল, "আমাকে তোমরা কেন কেউ ডাক না?" সবাই বলল, "আমরা কেন তোমাকে ডাকতে যাব গো? নিজের থেকে ঘুম থেকে উঠতে পার না, এই নাকি তুমি আমাদের মত রাক্ষস? তারপর নিজে উঠে নিজের জন্য খাবারও তৈরি করতে পার না। মানুষ না খাও, অন্য অনেক খাবারও তো আছে।" তারপর থেকে পরের দিন সবাই মিলে রাক্ষসটাকে বুঝিয়ে বুঝিয়ে বলল যে, তুমি সকালে ঘুম থেকে উঠবে। কিন্তু এবার অন্য রাক্ষসরা রাত ১২টা থাকতেই কচি কচি সব জিনিস নিয়ে তাদের কোন গুপ্ত জায়গায় লুকিয়ে রাখত, সকাল হলে সেগুলো খাবে। শুধু মানুষই নয়, মানুষের বাগান থেকে ফলমূল সব চুরি করে এনে রাখল, কিন্তু কচি কচি। রাক্ষস গিয়ে দেখল, সব বুড়ো-বুড়ি। রাক্ষসের আবার দু:খিনী মানুষদেরকে পছন্দ না। তাই খেতেও ভাল লাগে না। এমনিতেই তো বুড়ো-বুড়ি, তারা আবার কান্না করছিল, কারণ অন্য রাক্ষসরা সব তাদের নাতি-পুতি নিয়ে গেছে। এখন সেই রাক্ষসটা চিন্তায় পড়ল। "সবাই কেন আমাকে এমন করে?" তখন রাক্ষস ভাবল, "না, না। এভাবে না খেয়ে থাকলে চলবে না। ফল-মূল পাকা খেলে একটু ভাল লাগতে পারে। কিন্তু মানুষ একদমই না। আমি বরং ক্ষেতের সব ফসল নিয়ে নেই। প্রতিদিনই খাব ফসল। কিন্তু প্রতিদিনই তো আর মানুষ আমার জন্য ফসল লাগাবে না। রাক্ষস হয়ে কী লাভ হলো আমার? কোন যাদুশক্তি নেই। খালি ১১০ তলা বিল্ডিংয়ের মত বড়। আর আমি খাবই বা কী? সব পিচ্চি পিচ্চি। পিচ্চি পিচ্চি মানুষ, পিচ্চি পিচ্চি ফল। খেতে ভাল লাগে? আমি যদি ছোট হতাম, তাহলে এগুলোই ভাল লাগত। মানুষ হলেই ভাল ছিল। মানুষরা কত ভালো? মানুষরা এত সকালে উঠতেই পারে না। সবার এত শক্তি আছে কেন অন্য রাক্ষসদের? আর আমারই বা কেন কম শক্তি? আমি কি কোন পাপ কাজ করেছি?" একটি পিচ্চি বুড়ো মানুষ রাক্ষসটিকে দেখে ফেলল। রাক্ষসের ভাব দেখে বুঝল যে, মনে মনে কী ভাবছে সে। সেই বুড়ো মানুষটি বুঝতে পারল যে, রাক্ষসটিকে আমি যাই বলি না কেন, রাক্ষসটি আমাকে খাবে না। কারণ, আমাকে খেয়ে ফেললে তার তো কোন মজাই লাগবে না। তাই সে রাক্ষসকে বলল, "রাজা! রাজামশাই!" রাজামশাই কেন বলল জান? কারণ, রাক্ষসটিকে যদি রাক্ষস ভাই বলে, তাহলে যদি তাকে খেয়ে ফেলে! একটু পরে আবার বলল, "মহারাজ! আপনি এমন করে বসে আছেন কেন? বলুন না মহারাজ! আমি আপনার বন্ধু হয়ে যাব। ও মহারাজ! চুপ করে থাকবেন না মহারাজ! ও রাজামশাই! বলতে বলেছি। কিছু শুনছেন, রাজামশাই?" আস্তে করে বলল বুড়োমানুষটি। আস্তে করে বলায় রাক্ষসটি শুনতে পেল না। বুড়ো মানুষটি আবার জোরে করে বলল। তারপর শুনতে পেল। রাক্ষসটি বলল, "কে তুই? পিচ্চি একখানা মানুষ। তুই নাকি আমার বন্ধু রে! কী বলছিস? তুই কিসের বন্ধুর মত কাজ করেছিস? আমাকে কিছু খেতে দিয়েছিস, না আমার গায়ে ছোঁয়া দিয়েছিস? আমাকে শুধু আপনি বলা, এইটাকে কি বন্ধু বলে নাকি?" "রাজামশাই! বন্ধু এখনো পুরোপুরি হইনি। আপনাকে খাবার খেতে দেব কচি দেখে।" বুড়ো মানুষটি কি করল জান? বুড়ো মানুষটি যা দেবে, সেটাও রাক্ষস সুন্দর মজা করে খাবে। রাক্ষসটিও বোকা ছিল। বেশি ক্ষুধার বেলায় জামাও সে চিবিয়ে খেতে পারত। বুড়ো মানুষটি মানুষের মত দেখতে একটি পুতুল তৈরি করে এনে দিল রাক্ষসটিকে। কিন্তু রাক্ষস তো সেটা বুঝতে পারল না। আর ক্ষুধার বেলায় যা খায় তাই তো ভাল লাগে। পুতুলটিই চিবিয়ে চিবিয়ে সুন্দর খেয়ে ফেল। আর বুড়ো মানুষটিকে বলল, "ধন্যবাদ। তুই দেখছি খুব ভালো। তবে আমাকে আরো কিছু এনে দিতে হবে। খালি এই মানুষখানা খেলে আমার পেট ভরে না। অনেকদিন তো খাইনি।" এবার কি করল জান বুড়ো মানুষটি? বুড়ো মানুষটি তার বাগান থেকে কিছু আলু নিয়ে আলু ছিলে সব আলুগুলো মাখিয়ে মাখিয়ে পানি দিয়ে জুসের মত করল। আর সেগুলো অনেক বড় বোতলে ভরে রাক্ষসকে বলল, "এটা খেয়ে নিন মহারাজ!" "এটা কী?" "এইটা মানুষের চামড়া আমি বেটে জুস বানিয়ে এনেছি।" "আচ্ছা। তবে মানুষের চামড়াটি এত শক্ত লাগছে কেন?" "হা হা! রাজামশাই! আপনি এটা খেয়ে দেখুন। এই মানুষটি খুব শক্তিশালী ছিল। তার গায়ের জোর অনেক বেশি ছিল তো, তাই চামড়াটাও শক্ত ছিল। সে যুদ্ধ করতে গিয়ে তলোয়ার দিয়ে আঘাত লেগে অনেক চামড়াখানি যুদ্ধের জায়গায় পড়েছিল। সেগুলো এনে আমি বেটে আপনাকে খেতে দিয়েছি। খেয়ে নিন মহারাজ।" "তুই আমায় মহারাজ বলছিস কেন গো!" "মহারাজ বলব না তো কি বলব? আপনি তো মহারাজই। রাজামশাইও বলছি। কারণ, আপনি যত শক্তিশালী, আপনাকে দেখে তো রাজামশাই বা মহারাজই মনে হচ্ছে। আপনি এখন কথা না বাড়িয়ে খেয়ে নিন। রাজামশাই! আপনার আরো কিছু প্রয়োজন হলে আমি আরো এনে দেব। আর আমি তো পুরোপুরি বন্ধু হইনি, তাই আমি বেশি দিতেও পারছি না। কারণ, আমি আর বেশি যোগাড় করতে পারছি না, রাজামশাই! দয়া করে এটুকু অন্তত খেয়ে নিন। কালকের দিনটা আমি এখানে থাকতে পারব না। কালকে আমার খুব জরুরী কাজ আছে বিদেশে। বিদেশে একদিন গিয়েছিলাম। একজন লোক বলেছে, একদিন পরপর যেতে হবে বিদেশে। তাহলে যেতে আসতে একদিন, আর থাকতে একদিন দরকার। তাহলে দুইদিন পরপর আমি এখানে থাকব। আপনাকেও খেতে দেব।" দুই দিন পর পর কেন দিল জান? যাতে সবসময় ক্ষুধা থাকে। যাতে সবসময় ধোঁকা দিতে পারে। কারণ, বুড়ো মানুষটি কখনো মানুষ মেরে পাপ কাজ করতে চায় না। রাক্ষসটি বলল, "ঠিক আছে, খেয়ে নিচ্ছি। বাহ! এ যে দেখছি খুব দারুন হয়েছে। খেয়ে নিন পুরোটা। বেশি মজা হয়েছে।" "বাহ! খাওয়া তো শেষ করেছি। কিন্তু তোকে এত সুন্দর খাবার দিল কে?" "মহারাজ! দিল আবার কে? আমি নিজেই তো নিলাম যুদ্ধের জায়গা থেকে। এবার আমি বিদেশে যাই, রাজামশাই! যদি আপনি অনুমতি দেন, আমার খুব জরুরী কাজ আছে।" "ঠিক আছে, যা।" বিদেশে যাওয়ার পর বিদেশ থেকে যখন ফিরে এল, সাথে সাথেই রাক্ষসটি বলল, "কী মজা, কী মজা! আমার বন্ধু এসে গেছে। এসে গেছিস তুই? দে না একটু খাবার আমায়। তোর কাছে এত খাবার থাকে কেমনে গো, যা আমার পছন্দ? তুই তো একটি মানুষ।" "ঠিক আছে, আজকে আপনাকে দুটো কচি বাচ্চা খেতে দেব।"- বলে সে আবার পুতুল বানিয়ে বানিয়ে খেতে দিল রাক্ষসটিকে। তবে রাক্ষসটির ক্ষুধা আছেই তো। কারণ দুই দিন না খেয়ে আছে না? রাক্ষসরা তো সারাদিন শুধু খেতেই থাকে। দুটো মানুষ পেয়েই সাথে সাথে গবগব করে খেয়ে ফেলল। বলল, "তুই খুব ভাল রে! আমায় কত ভাল ভাল খাবার দিস! কালকে তুই আবার যাবি?" "হ্যাঁ, কারণ আমার খুব জরুরী কাজ।" "কী এত জরুরী কাজ তোর, বল্‌ না।" "ইয়ে মানে, আমার বাড়িটি না শুধু এক মাস থাকার জন্যে। তার জন্য প্রতিদিন ওখানে গিয়ে একটি করে কাপড় দেয়া লাগছে। কাপড় দিলেই তারা থাকতে দেয় আমার বাড়িতে।" এখন থেকে নিয়মিত রাক্ষসটিকে খাবার দেয়, কিন্তু দুই দিন পর পর। আমার গল্পটি শেষ, কিন্তু এটা বাস্তব নয়। এটি রূপকথা।

No comments:

Post a Comment