Thursday, April 7, 2016

গরীব মানুষের বিয়ের সমস্যা

এক দেশে বাস করত একটি গরীব লোক। বিয়ে হবে। এখন দু'জনেই গরীব। কিন্তু ওরা এতই গরীব যে, তাদের ৫০০/৬০০ টাকাও নেই। ২০০/১০০-এর মত হবে। আর বিয়ের নিয়ম তো বরেরা বউদেরকে সাজগোজের জিনিস দেয়। কিন্তু বরও তো গরীব। সে এখন গয়নাগাটি কি করে কিনবে? গয়নাগাটি অন্তত কিছু কিছু কিনতে পারবে; কিন্তু জামাকাপড়? সেগুলো কেনার টাকাও তো থাকবে না। তাই সকলেই ভাবতে লাগল, এই বিয়েটা কি হবে? দুজনেই দুজনকে পছন্দ করে। দুজনেই দুজনের আচরণ দেখে খুশী হয়েছে। কিন্তু কিছুই যে নেই টাকা-পয়সা। তার জন্য দুজন খুব চিন্তায় পড়ে গেছে। দু'জনই চাচ্ছে যে, এই বিয়েটা সুসম্পন্ন হোক। কিন্তু তা কি হবে? এই ভেবে ভেবে তারা সারাদিন কাটাতে লাগল। বউয়ের ছিল মা এবং বরের ছিল একটি বাবা। এমনকি তাদের একজনের মা এবং একজনের বাবাও কোথায় ছুটে চলে হারিয়ে গেছে। পড়ে গেল বিয়ের সমস্যায়। বউয়ের মা বরের মাথায় হাত দিয়ে বলল, "বাবা, দেখতো, কী যে সমস্যায় পড়েছি। এবার তুমি কি করে আমার মেয়েকে গয়নাগাটি কিনে দেবে? বল বাবা। কিছু টাকা-পয়সা তো দরকার। কিন্তু তুমি আবার ভিক্ষে করতে যেও না যেন। যা আছে তা দিয়ে বেশ ভাল কিছু তৈরি করে বিক্রি কর। তবেই দেখবে, তোমার টাকা কিছুটা বেড়েছে। অথচ এমন কিছু তৈরি করতে যেও না, যাতে তোমার যা আছে তার চেয়েও কম টাকা হয়ে যায়। বরং এমন জিনিস বিক্রি করবে, যা মানুষের প্রয়োজন হয়, মানুষ বেশি কেনাকাটা করতে আসে। আজকাল মা-বাবা বাচ্চাদেরকে একটু বেশি মারামারি করতে চায়। বাচ্চারা একদমই জানে না, এটা করতে হয় না। তারপরও মা-বাবারা বুঝায় না, শুধু বকে-মারে। তোমাকে বুদ্ধি বের করতে হবে, প্রমাণ করতে হবে যে, বাচ্চাদের মারতে হয় না। সেগুলোর উপায় খুঁজে বের করে তোমাকে একটা খাতায় লিখতে হবে। তারপর সেগুলোই বিক্রি করে তুমি অনেক টাকা পাবে। আর আজকাল তো মানুষ বেশির ভাগ উপরের তলায় বাস করে। তাই ধুলো-ময়লা বেশি ওড়ে বাতাসে। ঘর বেশি নোংরা হয়। আমার মেয়ের বাড়িতে কিছু পোয়াল আছে, আর একটা লাঠি আছে। পোয়ালগুলো লাঠির সাথে গেঁথে ঝাড়ু বানিয়ে সেগুলো বিক্রি করতে পারে। অনেক টাকা পেয়ে যাবে। তাহলে গয়না-গাটি, কাপড়চোপড় সব কিছুর ব্যবস্থা হয়ে যাবে।" এবার ছেলের বাবা মেয়ের মাথায় হাত দিয়ে বলল, "মা, দেখ না, আমার ছেলে এবার কী করবে? তুমি কিছু উপায় কি বলতে পার আমাদের? তুমি কি তোমার বাড়ি থেকে দয়া করে কিছু লাঠি ও কিছু পোয়াল দিতে পারবে? তোমার বাড়িতে নাকি পোয়াল আছে, যেগুলো গরু খায়? একটু দেবে? নাহলে যে আমরা খুব বিপদে আছি। দুজনেই দেখতে খুব সুন্দর, দুজনেরই আচরণ খুব ভাল, দুজনেই বিয়ে করতে চেয়েছে একসাথে, অতএব যদি বিয়েটা না হয়, তাহলে তো দুজনের মনের শখটা মিটবে না, সবসময় মন খারাপ করে থাকবে। আর মানুষকে অমন অসুখী দেখতে আমাদের মন চায় না। মা, তুমিও চেষ্টা কর কিছু একটা করার।" মেয়ে বলল, "শুধু রূপ ও গুণই নয়, নামও তো সকলের সুন্দর। কিন্তু বিয়েটাই যদি না হয়, তাহলে কী যে হবে? আমারও তো ইচ্ছে করছে, যেন আমার টাকা-পয়সাগুলোও আপনার ছেলেকে দিয়ে দেই, তাতে আপনার ছেলে আমাকে অনেক গয়নাগাটি ও কাপড়চোপড় কিনে দিতে পারবে। তখন মেয়ের মা বলল, "না। তা করবে কেন? আমি তো তোমার শ্বশুরের ছেলেকে সবই বুদ্ধি দিয়ে দিয়েছি।" তখন ছেলে বলল, "না, শুধু তাই করলেই কি হবে? মারতে হয় না তার বুদ্ধিটাও তো আগে বের করি। কি উপায়ে বোঝানো যায় যে, বাচ্চাদের মারতে হয় না, সেই বই বিক্রি করব। বইয়ের নাম হবে, "বাচ্চাদের মারতে হয় না"। পেয়েছি! কি লিখব উপায় পেয়েছি আমি। আমি লিখব ১ নম্বর পৃষ্ঠায়: বাচ্চাদের মারতে হয় না কারণ, বাচ্চাদেরকে যদি আপনারা মারেন, তারাও তাদের বাচ্চাকে একবারে ছোট থাকতেই মারা শুরু করবে। বেশি ছোটকাল থেকে মারা শুরু করলে তার ছেলেমেয়েদেরকেও সে অনেক ছোটকাল থেকে মারা-বকা শুরু করবে। অতএব, আপনারা দয়া করে বাচ্চাদেরকে মারবেন না। এমন করতে করতে তো পৃথিবীর অনেক মানুষই বাচ্চাদেরকে মারবে, অথচ এত মারা-মারি, বকা-বকি এসব তো ভাল কাজ নয়, তাই না? আর তাতে বাচ্চাদেরও কষ্ট হয়। এত ছোট বয়সী বাচ্চাদের বকা ও মারা উচিত না। ২ নম্বর পৃষ্ঠায় লিখব: মনে করুন, আপনার একটি শিশুর জন্ম হবে। এটা ভাববেন না যে, জন্মের সাথে সাথেই সে মাকে যদি কোন জ্বালা দেয়, তাহলে এক মাসও হয়নি এমন বাচ্চাকে আপনি মারবেন? তা করবেন না। আর দুই বছর বয়সীর নিচেও মারা উচিত না। আর ছয় মাসের আগে বকাও উচিত না। আর ছয় মাসের পরে বাচ্চাদের বকতে পারেন, কিন্তু মারবেন না। বকাটা কম কষ্টের, কিন্তু মারবেন না। তিন নম্বর পৃষ্ঠায় লিখব একটি গল্প। গল্পের নাম হচ্ছে, 'শিশুদের মারলে কেমন হয়?' গল্পটি হচ্ছে: এক দেশে বাস করত এক কন্যা। তার একটি বাচ্চার জন্ম হল। তাকে তার মা বেশি ছোটবেলা থেকেই মারা-বকা শুরু করেছিল। অতএব, বাচ্চার জন্মের সাথে সাথেই যদি বাচ্চা মায়ের কোন মারার মত ভাব করে, তাহলে কি তার বাচ্চাকে মারা উচিত হবে? কিন্তু সে সেজন্যই বাচ্চাকে বকল। বাচ্চা ভয় পেয়ে বাচ্চার মনটা কেমন কেমন কেমন হয়ে গেল। তা থেকে শুরু হল তার মেজাজ খারাপ। বড় হয়েই সবাইকে গালাগালি করত। কারো সাথে মিশত না। এবং সকলকেই মারা শুরু করল। অতএব, আপনারা বাচ্চাদেরকে মারবেন না। ৪ নম্বর পৃষ্ঠায় লিখব কিছু কিছু দরকারি কথা। (১) বেশি ছোটবেলা থেকে শিশুদের মারতে হয় না। (২) বাচ্চাদেরকে মারলে তারাও তাদের শিশুকে মারে। শিশুদেরকে মারা উচিত না। (৩) যদি আস্তে আস্তে সকলেই বকাবকি শোনে, তাহলে আস্তে আস্তে পৃথিবীর সব মানুষই বাচ্চাদের মারা শুরু করেছে। (৪) আপনারা কি দেখেছেন যে, আপনাদের শিশুর মনের ভেতরটা? বাচ্চাদের খুব নরম মন থাকে। (৫) বাচ্চাদের বকাবকি করলে বাচ্চাদের সেই মন বিগড়ে যায়। (৬) বাচ্চাদের যত্ন নিতে হয়। (৭) অতএব, কোনদিন আপনার বাচ্চা ছোটকাল থেকে যেন বকাবকি না শোনে। অন্য পৃষ্ঠাগুলোতে একটি করে গল্প লিখব আমি শিশুদেরকে মারতে হয় না নিয়ে। এই তো ঠিকঠাক হয়ে গেল। তখন বউ বলল, "ভালোই তো বলেছ। নামগুলোও সুন্দর আমাদের, নাম হচ্ছে আমার নাম গোলাপী, আর তোমার নাম মামুন। সকলের পরিচয় খুব সুন্দর। তবে কাজ শুরু হোক।" বরপক্ষ থেকে সব কাজ শেষ করার জন্য অপেক্ষা করতে লাগল। কাজ করা শুরু করল। তা দিয়ে হল ১২০০ টাকা। এক মাস পর হয়ে গেল ৫০০০ টাকা। তা দিয়ে কিনল অনেক রকমের গয়না ও একটি সুন্দর শাড়ি। গোলাপী বলল, "মামুন, তুমি এত সুন্দর সুন্দর জিনিস কিনলে কোথা থেকে? জান, আমার একটা সুন্দর টিয়ে পাখি আছে। দু'দিন পরই তো বিয়ে। আমাদের মধ্যে তো তেমন কোন আত্মীয় নেই। কাদের দাওয়াত দেব বলতো? ও হ্যাঁ, মামুন, তোমাকে বলাই হয়নি, আমার দুটো বন্ধু ছিল আর দুটো বান্ধবী ছিল। তাদের আছে মা-বাবা দু'জনই। আর তার মধ্যে একটি বান্ধবীর তো মা-বাবা তো আছেই, তার সঙ্গে দাদা-দাদুও আছে। তাদের দাওয়াত দেয়া যায়।" তখন মামুন বলল, "হ্যাঁ। তা তো যাবেই। কেন যাবে না? মানুষ মাত্র দাওয়াত দেয়ার এইটুকু যখন পেয়েছ, তখন তো দাওয়াত দেবেই। আর আগামীকালকে আরো মানুষ পাব দাওয়াতের জন্য। আমার একটি ফুপাতো বোন আছে। তার আবার দুটি বান্ধবী আছে। আর আমার নিজেরও একটি বন্ধু আছে।" সবাই সবকিছু জানাজানি করল। কিন্তু বিয়েতে কি খাওয়াবে? তখন বাবা বলল, "তার কোন চিন্তে নেই। আমার বাড়িতে খিচুড়ি আছে। সেটাও তো খেতে দিতে পারি।" তখন বিয়ের জন্য সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে গেল। বিয়ের দিন সব ঠিকঠাক মত হল। তারপর থেকে তারা বই ও ঝাড়ু বিক্রি করা বন্ধ করল না, তখনো সেই ব্যবসা চালাতে লাগল, যেন এখনো তাদের টাকা বাড়তে থাকে। এরপর তারা সুখ-শান্তিতে বাস করতে লাগল। অর্ধেক ধনীর মতই পরিবার হয়ে গেল। গল্প শেষ।

No comments:

Post a Comment