Saturday, April 9, 2016

ভালো লোক

এক ছিল এক গরীব কিন্তু খুব ভালো লোক। সে আল্লাহর কথা খুব ভালো করে মানতো। এমনকি তার কাছে এক চিমটিও টাকা ছিল না। তার যা আছে তা দিয়েই সে টুপি আর দিক গণনা করার কম্পাস কিনল। যা দিয়ে সে বুঝতে পারবে নামায কোথায় পড়তে পারব আর নামায কোথায় পড়তে পারব না। আল্লাহ তার পরীক্ষা নিচ্ছিলেন যে, সে কি এতটাই সৎ লোক? কি দিয়ে জান? সে তো জায়নামাযও কিনেছিল তার যা আছে তা দিয়ে, ছো্ট্ট একটি জায়নামায। সে দেশে-বিদেশে হেঁটে হেঁটে বেড়াতো। দেখতো, তার মতো কোন সৎ লোক আছে কিনা, যে গরীব মানুষদেরকে তার কিছু অংশ দান করে। আর সে নামাযের সময় হলেই কোন না কোন জায়গা থেকে আযান শোনার চেষ্টা করে। আর জায়নামায, দিক গণনা করার কম্পাস আর টুপিটি সে সবসময় সঙ্গে রাখে; যাতে সে নামাযটা ভালো করে পড়তে পারে। খাবার-দাবার সেগুলো তার কাছে তেমন মূল্যবান নয়। তার কাছে আল্লাহকে মানা এবং আল্লাহর কথামতো চলা এগুলোই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন মোনাজাত করতো। প্রত্যেক নামাযের পর। এখন আল্লাহ তার পরীক্ষা নিচ্ছিলেন কিভাবে, সেটার বর্ণনা দিচ্ছি। যে দেশে অনেক ঝড় হয়, অনেক জোরে বৃষ্টি হয়, অনেক জোরে বাতাস ওঠে- এমন জায়গা গেল সৎ লোকের খোঁজে। আল্লাহ পরীক্ষা নিচ্ছিলেন, সে এখন নামায কি করে পড়ে। আল্লাহ অনেক জোরে ঝড় উঠিয়ে দিলেন। কম্পাস ও জায়নামায দুটিই উড়ে গেল। সে এখন আল্লাহর কাছে জিজ্ঞেস করল যে, "আল্লাহ জায়নামাযটা তো গেলই, জায়নামায না থাকলেও এমনি মাটিতে বসে পড়তে পারতাম, কিন্তু কম্পাসটা যে উড়ে গেল, আমি দিক কিভাবে বুঝব? নামায কোন দিকে ঘুরে পড়তে হবে, সেটাই তো বুঝতে পারছি না। আল্লাহ, তুমি আমাকে বুঝিয়ে দাও, কিভাবে আমি কোন্‌ দিকে নামায পড়ব।" এইটাই হচ্ছে তার এক নম্বর পরীক্ষা। সে পরীক্ষায় পাস করতে পারল। কারণ সে নামাযের জন্য আল্লাহর কাছে খুবই কাকুতি মিনতি করল। আল্লাহ খুশী হয়ে উল্টো দিকে ঝড় উঠিয়ে কম্পাস ও জায়নামায দুটিই ফিরিয়ে দিলেন। সৎ লোকটি খুব খুশী হলো। সে বলল, "আলহামদুলিল্লাহ।" সে জায়নামায ও কম্পাস পেয়েই নামায পড়া শুরু করে দিল। সে অন্য সময় তো সময় পায় না সব রাকাত পড়ার, শুধু ফরযটুকু পড়তে পারে। এখন সে সুন্নত, বেতের সব পড়ল। পড়ে সে আবার পথে চলতে লাগল। আল্লাহ তার দ্বিতীয় পরীক্ষাটা নিতে চাচ্ছিলেন। কি দিয়ে জান? তখন আল্লাহ সব নদীর পানি শুকিয়ে দিলেন। তখন বর্ষাকাল ছিল। তাও কোন বৃষ্টি আল্লাহ দিচ্ছিলেন না। এখন নামাযের সময় হয়ে এসেছে। নামাযের সময় সেই লোকটি ওযুর পানি পাচ্ছিল না। সে আল্লাহর কাছে জিজ্ঞেস করল যে, "আল্লাহ! তুমি কেন আমার সাথে এরকম করছ? আল্লাহ তুমি আমার আশেপাশের নদী কেন বন্ধ করে দিয়েছ, আল্লাহ? একটুখানি পানি তো আমাকে দাও।" এখন আল্লাহ তার মনের মধ্যে বুদ্ধি দিয়ে দিলেন যে, অনেক অনেক মাটি খুঁড়ে অনেক নিচে পাবে পানি। সেই পানি উঠিয়ে ওযু করতে হবে। এই বুদ্ধিটি দিলেন তাকে আল্লাহ। সে বুদ্ধি পেয়ে বলল, "আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ, তুমি আমাকে এই বুদ্ধিটা দিয়েছ। খুবই ভালো বুদ্ধি দিয়েছ।" এই বলে সে অতি কষ্টে মাটি খুঁড়তে খুঁড়তে খুঁড়তে খুঁড়তে তাও মাটির নিচে পানি পেল না। তখন তার মনে হলো যে, এমনি মাটি যেখানে ছিল সেটা খুঁড়লে তো পানি পাওয়া যাবে না। যেখানে নদী ছিল সেই জায়গাটা খুঁজে আমাকে বের করতে হবে। সে খুব কষ্টে হাঁটতে হাঁটতে হাঁটতে হাঁটতে সে মনে করতে চাচ্ছিলো যে, কোন্‌ জায়গায় নদীটি ছিল। অনেক খুঁজে তার মনে হলো, যেদিকে নামায পড়েছি আজ, তার সামনেই তো একটা নদী ছিল। আমি তো এদিকে নামায পড়তাম। তাহলে তার সামনে একটু খুঁড়ে দেখি তো। অনেক কষ্টে সে মাটি খুঁড়তে খুঁড়তে শেষে একটু পানি পেলো। সেই পানিতে সে খুব কষ্টে হাত গর্তের ভিতর ঢুকিয়ে একটু একটু করে পানি বের করলো। সে দেখল, নামাযের সময় তো চলে যাচ্ছে। তাড়াতাড়ি করতে হবে আমাকে। সে তাড়াতাড়ি করে ওযু করে ফেলল। আল্লাহ দেখছিলেন যে, সে এইটা করে কিনা, আমি আবার পড়ে যাব নাতো গর্তের মধ্যে? মাটি বন্ধ করতে গিয়ে নামাযের সময় পার করে ফেলে কিনা। কিন্তু সে ভাবল যে, আমি অত ভয় পাব না। একটু পিছিয়ে পড়লেই তো হয়। সে ওযু করে নামাযে বসলো। নামায শেষ করে সে গর্ত ভরাট করে দিল। সে দ্বিতীয় পরীক্ষায় পাস করল। আল্লাহ চাচ্ছিলেন তাকে তিনটা পরীক্ষা নিতে। কি পরীক্ষা নিতে চাইছিলেন জান? একদিন সে নামাযে দাঁড়ালো। নামায শেষ করে পিছনে তাকিয়ে দেখল, এক ঝুড়ি পেয়ারা। সে ভাবল, ওমা! নামাযে দাঁড়ানোর আগে তো এই পেয়ারাগুলো ছিল না। আর আমি তো কোন মানুষের শব্দও পাইনি নামাযের সময়। আর আশেপাশে মানুষের কোন কিছু দেখতেও পাইনি। তবে এটা আসলো কোথা থেকে? আল্লাহ সব করতে পারেন। আল্লাহ নিশ্চয়ই এই ফলগুলো দিয়েছেন। একটু খেয়ে দেখি। আর ওখান থেকে হঠাৎ এক গরীব লোক এসে হাজির হলো। তার কিছুই নেই। শুধু একটি ছেড়া গেঞ্জি আর একটি লুঙ্গি। তার তেমন কিছুই ছিল না। সে অনেক দিন ধরে না খেয়ে কোন জায়গায় আশ্রয় নিয়েছিল। যেখানে পারে সেখানেই থেকেছিল। সে ঐ লোকটিকে বলল, "আমাকে কিছু পেয়ারা খেতে দেবে? আমি অনেক দিন ধরে কিছুই খাইনি। শুধু একটি পুকুরের থেকে একটু পানি খেয়েছি। কিছু পেয়ারা খেতে দাও না।" তখন ভালো লোকটি তার পেয়ারা থেকে বেশির ভাগ পেয়ারাই সেই লোকটিকে খেতে দিয়ে দিল। তখন ঐ লোকটি সেই পেয়ারাগুলো নিয়ে চলে গেল। আর এই ভালো লোকটি যতটুকু পেয়ারা তার কাছে এখন আছে সেটুকু খেয়েই চলল। আল্লাহ তা দেখে খুশী হলেন। আল্লাহ এবার তাকে কিছু পুরস্কার দেবেন। কী পুরস্কার জান? তাকে একটা বড় বাড়ি, দুইটি আম গাছ, একটি নদী ও একটি ধানের ক্ষেত তাকে উপহার দিলেন। আর বাড়ির পিছনেই দিলেন একটি মসজিদ। সে গভীর বনের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়েছিল। কিন্তু সে হাঁটতে হাঁটতে একটু সামনে আগানোর চেষ্টা করল। সে ভাবল, সামনে কি যেন দেখছি খুব সুন্দর। একটু গিয়ে দেখি তো। গিয়ে দেখলো, কী সুন্দর নদী, আম গাছ, বাড়ি, ধানের ক্ষেত। তারপর গিয়ে দেখল অনেক সুন্দর। সে বলল, "এ তো অনেক সুন্দর। এটা কার বাড়ি। নিশ্চয়ই অন্য কোন লোকের বাড়ি। কার বাড়ি তা নিয়ে ভাবতে হবে না। আমি দূরে কোথাও চলে যাই।" কিন্তু সে তো সেটা তার উপহারই বুঝল না। এখন কী হবে? তখন আল্লাহ তার মনের মধ্যে ঢুকিয়ে দিলেন যে, এটা তারই বাড়ি। তার জন্য এটি তৈরি করা হয়েছে। তখন তার মনের মধ্যে সেটি ঢুকে গেল। সে ভাবল, "একি! আমার বাড়ি নাকি? আমার মনের মধ্যে কেমন যেন মনে হচ্ছে। আমি এতগুলো ভালো কাজ করেছি আজ। তবে আল্লাহ তো আমাকে কোন পুরস্কার দিলেন না। এটা কি সেই পুরস্কার? আমি তো বুঝতে পারছি না। কিছুই তো বুঝতে পারছি না। সত্যিই কি তাই? এটা কি আমার বাড়ি। একদিন অপেক্ষা করে দেখতে হবে। এই বাড়ির ভিতরে কেউ আসে কিনা। আর জানালা দিয়েও উঁকি দিয়ে দেখতে হবে, ভিতরে এখন কেউ আছে কিনা। জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে সে দেখল, কেউ নেই। আর ভাবল, কিছুদিন আগে তো ঝড় হয়েছিল ঠিক এই জায়গাটাতেই। তবে তখন তো এটি ছিল না। আর যদি বাড়িটি ঝড়েও উড়ে যেত, তাহলে শুধু বাড়িটিই যেত, ফসল কি ঝড়ে উড়ে যেত। আর তখন ফসল-টসল কিছুই ছিল না। আর ফসল যদি থেকেও থাকে এবং নষ্ট হয়েও থাকে, তাহলে এত জলদি আবার তা ফিরে আসবে কি করে? আর ঘরও যদি উড়েও যায়, তাহলে সেটা ফিরে আসেই বা কি করে? আমাকে বুঝতে হবে। একদিন অপেক্ষা করি, এখানে কেউ আসে কিনা। তারপর সে দুই দিন অপেক্ষা করে দেখল, বাড়িতে কেউ নেই। তারপর দুই সপ্তাহ অপেক্ষা করল দেখার জন্য। কিন্তু সে ভাবল যে, এতদিন তো কারো বেড়াতে যাওয়া সম্ভব নয়। এতদিন কেন বেড়াবে মানুষ? মানুষের কি কোন কাজই থাকে না, সব কাজ ছেড়ে এ কাজ করবে? অবশেষে সে বুঝতে পারল, এটাই তার উপহার। তখন সে বলল, "আলহামদুলিল্লাহ। সে তার জায়নামাজটি ও টুপিটি ও কম্পাসটি নিয়ে গেল ঘরের ভিতরে। দেখতে চাইল, ঘরের ভিতরটা কেমন সব? দেখল, ওমা! এটা আবার কেমন ঘর? ঘরের ভিতরেই বিছানা আছে, চেয়ার, টেবিল, তারপর খাবার-দাবার টেবিলের উপরে, আলমারি, আলমারির ভিতরে অনেক কোরআন, বই, তসবীহ, সুন্দর জায়নামাজ, সুন্দর সুন্দর টুপি, চিরুনি এমনকি বাথরুমের ভিতর বালতিও যে রাখা আছে। সে খুব খুশী হলো। তারপর সে দেখল যে, ওমা! এখানে আবার সিড়ি কিসের? বেয়ে দেখি তো। সিড়ি দিয়ে উঠে দেখল, ওমা! ছাদ। কী সুন্দর! ছাদের উপর পানির ট্যাংকও দেখি আছে। আবার ছাদে বসে বাতাস খাওয়ার জন্য বা কোন কাজ করার জন্য বসার টুল ও চেয়ারও রাখা আছে। একটি ছোট্ট টেবিলও রাখা আছে। মেহমানদের বাতাস খাওয়ানোর আর ভালো ভালো খাবার খাওয়ানোর জন্য সেই টেবিলগুলি। সে আরও খুশী হয়ে পড়ল। ২৪ ঘন্টা আলো, বাতাস সব ফ্রি। আর ইচ্ছে করলে বাতাস খাওয়ার জন্য সেই বাড়িটির ছাদের ভিতর ঘুমানোও যাবে। একটি ছোট্ট বিছানাও আছে। বসে বসে বাতাস খাব, আর ঘুমোবো। বাড়ির এখানে দেখছি একটি দোকানও আছে। আর এই মানুষটিকে তো আমি কোনদিনও দেখিনি। এ তো সেই দোকানদার। আর এইটার মধ্যে আরো অনেক কিছু আছে। খাবার, বই অনেক কিছু। আমার তো খুবই ভালো হয়েছে। আমার জীবনে এত বড় ভালো জিনিস থাকবে, আমি ভাবতেও পারিনি। আমি এ খুশীর কথায় একটা শব্দও মনে আনতে পারিনি। আল্লাহর শুকরিয়া। আল্লাহ যা চান তাই হয়। এটা কিসের উপহার? আল্লাহর কাছে সে জিজ্ঞাসা করল। তার মনের মধ্যে আল্লাহ বুঝিয়ে দিলেন, "আল্লাহ তোমার পরীক্ষা নিচ্ছিলেন তিনটি। এক নম্বর ঐ ঝড়ের ঘটনাটি, দুই নম্বর ওজুর পানির ঘটনা, তিন নম্বর গরীবকে তুমি পেয়ারা দান কর কিনা। নামায পড়ার জন্য নামাযের জিনিস হারিয়ে গেলে সেগুলো খোঁজা, তারপর ওযু করার পানি না পেলে সেটা কষ্ট করে খুঁজে বের করা, তারপর অনেক গরীব যারা কোন খাবার পায় না তাদেরকে খাবার দেয়া- এ সবগুলোই তো খুব ভালো কাজ। আমি এই ভালো কাজগুলো করেছি। তাই আল্লাহ খুশী হয়ে আমাকে এই উপহারগুলো দিয়েছেন।

No comments:

Post a Comment