Tuesday, April 19, 2016

ভাল ছেলে

এমন একটি দেশ যেখানে শুধু বিপদ আর বিপদ দিয়ে ভরা। সেই দেশের দু'জন লোক ছিল। একটি মেয়ে এবং একটি ছেলে। তাদের একটি বাচ্চা হবে। আর মায়ের মন বলছিল, তার বারবার মনে হচ্ছিল যে, তার সন্তান নবীরা ছাড়া অন্যদের মধ্যে সবচেয়ে ভাল হবে। শুধু তার মায়ের মনে হচ্চিল, কিন্তু সে ভাবল যে, এটা হচ্ছে শুধু মনের ভাব, এটা সত্যি হতে পারে না। আমার সন্তান কী করে এমন হবে? না, না। আমার সন্তান নিশ্চয়ই সাধারণ সন্তান হবে। মায়ের নাম ছিল রুশতী। বাবা বলল, "রুশতী! তুমি কি ভাবছ? আমি তোমার মনের কথা বুঝতে পারছি। তুমি নিশ্চয়ই তোমার সন্তানকে নিয়ে চিন্তাই করছ। কিন্ত এটা বুঝতে পারছি না, সন্তানের ব্যাপারে তুমি কি ভাবছ? নিশ্চয়ই এটা ভাবছ যে, বাচ্চার জন্ম কখন হবে?" তখন রুশতী বলল, "না, আমি তা নিয়ে তো চিন্তা করছি, তার সাথে আমার আরো একটি চিন্তা হচ্ছে। কেন এ চিন্তাগুলো আমার মনের মধ্যে ঢুকছে, আমি বুঝতে পারছি না। কারণ, এটা সত্যি হওয়া সম্ভবনা থাকতে পারে। নাহলে আল্লাহ আমার মনের মধ্যে এমন ভাবনা দেবে কেন?" বাবা বলল, "আরে! কি ভাবছ তা তো আগে বল। সত্যি হবে কি না হবে তা আগেই ভেবো না।" রুশপী বলল, "কি ভাবনা জান? আমার মনে হচ্ছে, আমার সন্তান নবীদের ছাড়া অন্য সব মানুষের চেয়ে সবচেয়ে ভাল হবে।" বাবা বলল, "আরে, না। আমাদের সন্তান এমন কি করে হবে গো? তুমি কেমন যেন ভুল ভাবছ।" বাচ্চা হবে পরের দিন। তার পরের দিন আসতে শুরু করছে। মাঝরাত্রি। কিছুক্ষণ পরই বাচ্চা হবে। বাবা বলল, "রুশপী! তুমি শুয়ে থাক। পাতলা পাতলা খাবার খাও। আমি তোমার জন্য এনে দেই।" হয়ে গেল সেই দিন। সেই দিন হয়ে তার পরের দিন হয়ে গেল। বাচ্চা হয়ে গেল। এটি হচ্ছে পুত্র সন্তান। বাচ্চাটিকে নিয়ে তার মা-বাবা খুবই চিন্তিত। ঐ দেশটি তো বিপদের দেশ। তাই তারা খুবই চিন্তিত হলো। তারা ভাবছে, তাদের বাচ্চার যেন কোন ক্ষতি না হয়। তারা বাচ্চাকে বাড়িয়ে বাড়িয়ে তুলে বাচ্চার ৫ বছর করল। এমন সময় বিপদ আসবে। এবার শুরু হল বন্যা। ঘরের চাল ডুবে যায় ডুবে যায়। কেমন যেন তারা বাচ্চাকে নিয়ে জলদি চালের উপর উঠল। চালের উপর বসে বসে পানিতে পা ভিজিয়ে বাচ্চাকে আদর করতে লাগল। বাচ্চাটি বলল, "একটু পানি দেবে মা?" তারপর মা বলল, "ইস! এখন নিচে গেলে শ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে।" "বাবা, তুমি অন্তত আমাকে দাও পানি।" বাবা বলল, "এই! নিচে যাওয়ার দরকারটা কি, অ্যাঁ? এই বন্যায়ই তো পানি আছে। আর বাইরে কত পাথর ভাসছে না? পাথরগুলো দিয়ে তো পানি পরিস্কার করা যায়। কিন্তু তা করার জন্য তো মেশিন দরকার। ঠিক আছে, ওদিকটার পানিটা একটু পরিস্কার লাগছে। আমি একটু সাঁতার কেটে গিয়ে দেখি। হাতে একটু নিয়ে দেখি, পরিস্কার কিনা।" ছেলেটি বলল, "বাবা! আমিও সাঁতার কেটে যাব ওখানে।" বাবা বলে, "ধূর বাবা। না, ন, তুমি যেও না।" "ঠিক আছে, তাই হোক।" বাবা সাঁতার কেটে গিয়ে দেখল, সেখানকার পানিটা একটু ভাল আছে। সেখান থেকে হাতে করে একটু নিয়ে আসল। খেতে দিল। এইবার পরের মাস। এক সপ্তাহ পরে কি হলো জান? তখন ছিল ২০১৫ সাল। জানুয়ারী মাসেই এটা হয়েছে। কি জান? এক বড় রকমের ভূমিকম্প। বাড়ি সব ভেঙ্গে গেল। কিন্তু তারা খুবই অবাক হলো। কারণ দেখল, সব বাড়ি ভেঙ্গেছে, কিন্তু তাদের বাড়িটা ভাঙ্গেনি। একটু সিমেন্টও ভেঙ্গে পড়েনি। তাহলে মা বলল, আমি যা ভাবছিলাম তাই। কারণ, আমি ভাবছিলাম তো, আমার ছেলে নবীদের ছাড়া অন্য সবার চেয়ে খুব ভাল মানুষ হবে। নাহলে আল্লাহ কেন তাকে বাঁচিয়ে রাখবেন? অন্যদের সবার অনেকের মৃত্যু হয়েছে, একটা বাড়িও আস্ত নেই। গ্রামে কোন মানুষ নেই। তাহলে আমার ধারণাই ঠিক। এটা আমি কী দেখছি? এটা কি সত্যি হতে পারে? গরীব লোকের ছেলে কি আবার সবচেয়ে ভালো? না, না, ওকে সবসময় বাঁচিয়ে রাখতে হবে আমাদের। ওকে সবসময় নিরাপদে রাখতে হবে। কারণ, ওর যদি কোন ক্ষতি হয়, তাহলে তো সবাই আস্তে আস্তে খারাপ হতে চলবে। ও ছাড়া কে সব খারাপদেরকে ভালো করবে? আরেক বছর পর কি হলো জান? ভালো ছেলেটি জঙ্গলে গিয়ে দেখল, শিকারীরা একটি নিরীহ ময়ুরকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। ময়ুরটির মুখ শিকারীরা বেঁধে রেখেছে। যাতে সে কোন চিৎকার করতে না পারে, আর চিৎকার শুনে যেন সবাই উদ্ধার করতে না চলে আসে। শিকারী বলল, "সবাই শোন! এই ময়ুরটিকে বেচে আমাদের অনেক টাকা হবে। আর এই ময়ুরটি যারা পালবে, তারা তো অনেক কিছু পাবে। এই ময়ুরটি নিশ্চয়ই প্রতিদিন খুব মিষ্টি সুরে ডাকবে। সবাইকে আনন্দ দেবে। আর তাই সবাই আমাদেরকে আরো অনেক বেশি টাকা দেবে। এটা যে কিনবে তার মনে অনেক বেশি আনন্দ থাকবে। তাই সে অনেক অনেক টাকা দেবে। আমরা সবাই সেই টাকাগুলো ভাগ করে নেব। আমার ভাগেরটা অনেক বেশি থাকবে। সেই টাকা দিয়ে আমরা সবাই নানা রকম ফল ও নানা রকম সবজি কিনে খাব।" সবাই বলল, "না, না, না না, আপনি কেন বেশি খাবেন? আপনি দলের নেতা হলেই কি? আমাদেরকে একটু অন্তত বেশি দেন।" ভালো ছেলেটি ভাবল, "হায় হায়! একটি নিরীহ ময়ুরকে এভাবে কেউ বুঝি মারে? তাও আবার খুব ছোট্ট একটা শিশু ময়ুর। এই ময়ুরটি যদি তার জঙ্গলেই বাস করতে পারত, তাহলে তো ময়ুরটিরও কোন ক্ষতি হতো না। ময়ুরটি এবার এইদিকে আসলে ময়ুরটিকে যদি কেউ মারে? কেন এত খারাপ এই শিকারীরা? না, না। আমাকে সবকিছু ঠিক করে ফেলতেই হবে। ঐ ময়ুরটিকে আমাদের বাঁচাতেই হবে। কিন্তু আমার যে মাত্র ৮ বছর। বন্যার সময় তো আমার ৫ বছর ছিল। কিন্তু কিছুটা বড় হওয়াতেই কি আমি অনেক বড় হয়ে গেছি? কিন্তু এ কাজ আমি কিভাবে করব? বেচারা ময়ুর। আর এ ময়ুরটি খুবই ভালো নিশ্চয়ই। তার আচার-আচরণ তো আমি দেখিনি, কিন্তু তাকে দেখে আমি বুঝতে পারছি, সে নিশ্চয়ই খুবই ভালো হবে। কিন্তু শিকারীরা এত খারাপ কেন? আমাকে যে ঐ ময়ুরটাকে রক্ষা করতেই হবে। নাহলে বেচারা ময়ুরটি তো আর কোনদিনই তার মা-বাবাকে দেখতে পাবে না। তাকে যদি শিকারীরা বিক্রি করে দেয়। কিছু একটা আমাকে করতেই হবে। কিন্তু আমি কী করব? দেখি, শিকারীরা ময়ুরটাকে একা রেখে কোথাও যায় কিনা। তারপরে আমি ময়ুরটির বাঁধন খুলে দেব। শিকারীদের কাউকে মারার দরকার নেই। কারণ, আমি পৃথিবীর কারো কোন ক্ষতি হতে দিতে চাই না।" ভালো ছেলেটি বসে থাকল। শিকারী বলল, "সবাই শোন। এখন ময়ুরটিকে আরো শক্ত বাঁধন দিয়ে বেঁধে চল আমরা অন্য কোন প্রাণীকে খুঁজতে যাই। তাহলে আমরা নিশ্চয়ই আরো অনেক টাকা পাব।" সবাই অন্যদিকে চলে গেল। ভাল ছেলেটি ভাবল, ও বাবা! এরা দেখি চলে যাচ্ছে। এখনই যাই। বাঁধনমুক্ত করি ময়ুরটিকে। সে ময়ুরটির কাছে গেল। ময়ুরটি ভয় পেয়ে গেল। এ কি শিকারীদের মধ্যে একজন নাকি? তখন ভালো ছেলেটি বলল, "আমি বুঝতে পারছি, তুমি ভয় পেয়ে যাচ্ছ, তাই না ময়ুর?" সে বাঁধনটা খুলে দিল। কিন্তু পায়ের বাঁধনটা অনেক শক্ত ছিল। সে অনেক চেষ্টা করল। অনেক কঠিন ছিল সেই বাঁধনটি খোলা। তখন ময়ুরেরও তো মুখের বাঁধন খোলা হয়েছে। ময়ুরও ঠোঁট দিয়ে খোলার চেষ্টা করল। কিন্তু তারা খুলতে পারল না। আরো অনেক চেষ্টা করল। অবশেষে খুলতে পারল। কিন্তু ময়ুরটি তো মানুষের ভাষা জানে না। কিভাবে মানুষদেরকে ধন্যবাদ জানাবে? সে একটু তার ডানা দিয়ে ভালো ছেলেটিকে আদর করে দিল। তারপর তার মা-বাবার কাছে সে ছুটে চলে গেল। ভালো ছেলেটিও বাড়ি ফিরে গেল। মা বলল, "তুই কোথায় গিয়েছিলি? আমাকে বল। বলো না, চুপ করে আছ কেন? কোথাও দুষ্টামি করতে যাওনি তো?" ভালো ছেলে বলল, "দুষ্টামি আর কি? কি করেছি জান? জান, আমি জঙ্গলের দিকে গিয়েছিলাম।" মা বলল, "হায় হায়! তুই জঙ্গলের দিকে গিয়েছিস কেন? তুই ঠিক আছিস তো? জঙ্গলে গিয়ে কি ঘটেছিল সেটা বল তো?" "জান? সেখানে আমি দেখেছি, একটা ময়ুরকে শিকারীরা বন্দী করে রেখেছে। শিকারীরা ময়ুরটিকে বিক্রি করে দিতে চেয়েছিল। শিকারীরা যখন অন্য শিকারের খোঁজে গিয়েছিল, তখন ময়ুরটার পায়ে অনেক শক্ত বাঁধন দিয়ে ময়ুরটিকে একদম একা ফেলে রেখে তারা অন্য শিকারের খোজে গেল। আমি তখন ময়ুরটির গায়ের সব বাঁধন খুলে দিলাম। পায়েরটা তো অনেক শক্ত ছিল। পায়েরটা আমি অনেক কষ্ট করেও খুলতে পারলাম না। ময়ুর নিজেও আমাকে সাহায্য করল। অবশেষে আমি খুলতে পারলাম। তখন ময়ুরটি আমাকে ধন্যবাদ জানাতে পারছিল না। আমি বুঝতে পেরেছি, সে আমাকে ধন্যবাদ জানাতে চাচ্ছে। সে তার ডানা দিয়ে আমাকে আদর করে দেয়ার পরই আমি বুঝে গিয়েছি।" বাবা বলল, "কি বলছিস তুই? তোর কি মাথা খারাপ? তুই একা একা জঙ্গলে গিয়ে অন্যদের বাঁচাতে গিয়েছিস কেন?" ভালো ছেলেটি আবার বলল, "ও বাবা! তুমি কেন বুঝতে পারছ না? অন্যের উপকার করলে নেকী হয়। অন্যদের উপকার করলে তো তারাও মুক্তি পায়, আর আমারও একটি ভালো কাজ করা হয়। তুমি কেন এমন কথা বলছ? এমন কথা বলো না। আর ময়ুরটি আমায় ধন্যবাদও জানাতে চাচ্ছিল। আমি যদি ময়ুরটিকে না বাঁচাতাম, শিকারীরা তো ময়ুরটিকে বিক্রিই করে দিত। তখন জঙ্গলে ময়ুরের কান্না কি শুনতে পেতে চাও? ময়ুরের মা-বাবার কান্না? কেন তুমি বুঝতে পারছ না? আমি একটু আরেকজনের উপকার করেছি। তাতে তোমার কি গো?" মা বলল, "হ্যাঁ রে। খুবই ভালো কাজ করেছিস তুই। কিন্তু তুই না বুঝে শিকারীদের উপস্থিত সময়ে তুই যেন আবার যাস না।" মা বাবাকে চুপি চুপি করে বলল, "আমি যা ভাবছিলাম, তার প্রমাণ আরো একটা হয়ে গেছে। কারণ দেখেছ, ৮ বছর বয়সেই কত ভালো ভালো কাজ করছে। তাহলে আমার ভাবনাটাই কি সত্যি? আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। বিশ্বাস তো হবেই না। এটা কী করে সম্ভব? আমি বার বার ভাবছি এটা নিয়ে। দেখি, বড় হয়ে সে কী হয়। তাহলেই আমি বুঝব।" বাবা বলল, "আমারও তো তাই মনে হচ্ছে। প্রথমে তো আমি তোমার কথা শুনে একটুও বিশ্বাস করতে পারিনি। তারপরে একটা প্রমাণ আসল, একটু একটু মনের মধ্যে ঢুকল। আরও একটি ভালো কাজ করে আমার এটা সত্যিই মনে হয়ে যাচ্ছে। আমার মনের চিন্তা যে কত!" ভালো ছেলে বলল, "লুকিয়ে রেখো না মা, বাবা। কি কথা বলছ আমাকে বল না! আমি কোন রাগ করব না। কিসের কথা বল?" তখন মা বলল, "আমার যা মনে হচ্ছে, তুই শুনলে বলবি, এটা কেমন করে হয়? কি বলছি জান? আমার মনে হয়, তুমি সবচেয়ে ভালো লোক পৃথিবীর।" তখন ভালো ছেলে বলল, "ঠিক আছে। তোমার এমন চিন্তার কী আছে? এটা হবে কি করে? এটা হতে পারবে না। ধূর বাবা, এ নিয়ে কোন চিন্তা করো না তুমি।" একদিন ভালো ছেলেটি একটি পথ দিয়ে যাচ্ছিল। সেই পথের পাশে দেখল, একটি বুড়ো লোক তার ভর দিয়ে হাঁটার লাঠিটি খুঁজে পাচ্ছে না। সে বসে বসে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। দাঁড়াতেও পারে না। অনেক বৃদ্ধ তো।" তখন ভালো ছেলেটি বলল, "কে আপনি? আপনার বাড়ি কোথায়? আপনি কি কোন বিপদে পড়েছেন?" বৃদ্ধ লোকটি বলল, "তুমি কে বাবা? আমি ঐ গ্রামে বাস করি। বিপদে তো পড়েছি। কারণ, আমি আমার লাঠি ভর করে হাঁটার জন্য যে লাঠিটি ব্যবহার করতাম, সেটা হারিয়ে গেছে। আর লাঠি ছাড়া তো আমি দাঁড়াতেও পারি না। আমার লাঠিটা যে কই গেল?" ভালো ছেলেটি বলল, "আমার নাম রুহুল আমীন। আমি অনেক দূরের একটা জায়গায় বাস করি। এখানে একটু ঘুরতে এসেছি। আপনার লাঠিটা বুঝি আপনি খুজে পাচ্ছেন না? দাঁড়ান, আমি আপনার লাঠিটি খুঁজে দেখছি। আমি পথে হাঁটতে হাঁটতে একটা লাঠি পেয়েছিলাম। দেখতো এটা কি তোমার?" বৃদ্ধ লোকটি বললো, "না, না। এটা তো আমার নয়। তুমি দেখতো, আমার লাঠিটি লোহার। তাতে একটু রং করা আছে। রংটি হচ্ছে সবুজ। একটু খুঁজে দিবে? আর এই লাঠিটা তুমি যে পেয়েছ, এটা তুমি তোমার কাছে রেখে দিও।" রুহুল আমীন বলল, "খুঁজে দেব না কেন? আপনি একটু অপেক্ষা করুন। আমি তাড়াতাড়ি করে এনে দিচ্ছি। আপনার লাঠিটা কি লম্বা না খাটো?" "আমার লাঠিটি খুবই লম্বা। আর অনেক শক্ত।" "ঠিক আছে, আমি এনে দিচ্ছি।" সে ঠিকমতই লাঠিটি খুঁজে পেল। সে বৃদ্ধ লোকটিকে এটা দিয়ে বলল, "এটা কি তোমার?" "হ্যাঁ, হ্যাঁ। এটাই তো আমার। আমাকে একটু ধরে তুলবে? লাঠিটা হাতে ধরিয়ে দেয়ার জন্যেও তো একটু ধরা প্রয়োজন। দাঁড়িয়েই তো ধরতে হবে লাঠি।" "কেন তুলব না আপনাকে? এই যে আমার হাতটা ধরে উঠে পড়ুন। আস্তে আস্তে। এই নিন।" বৃদ্ধ লোকটি রুহুল আমীনের মাথায় হাত রেখে বলল, "বাবা! তুমি কত ভালো! তোমার উপর আল্লাহর শান্তি বর্ষিত হোক। তুমি সুখে থেকো। তুমি আমার খুব উপকার করলে। আমি এই পথেই বেশির ভাগ চলাফেরা করি। তুমি এদিকে এসে একবার আমার খোঁজ নিও। ঐ গ্রামেই তো আমার বাড়ি। আমার বাড়িতে যেও, ঠিক আছে? এবার তুমি যাও। খুবই ভালো তুমি।" রুহুল আমীন বাড়ি ফিরে গেল। মাকে বলল, "জান মা? আমি কোথায় গিয়েছিলাম? আমি অনেক দূরে একটি পথ দিয়ে হাঁটছিলাম বেড়ানোর জন্য। পথে এক বৃদ্ধ লোক তার লাঠি হারিয়ে ফেলেছিলেন, যেটা দিয়ে তিনি ভর করে হাঁটেন। আমি সেই লাঠিটি তাকে খুঁজে দিয়েছি। তাকে আমার হাত ধরে দাঁড় করিয়ে তার হাতে সেই লাঠিটি তুলে দিয়েছি। তখন তিনি খুব খুশী হয়েছেন আমার উপর। আমাকে বলেছেন তাঁর বাড়িতে যেতে। আমিও যেতে চাই।" মা বলল, "তাই নাকি গো? খুবই ভালো কাজ করেছ তুমি।" বাবা বলল, "ও বাবা! এ তো অনেক ভালো কাজ করেছ তুমি। বেশ। তুমি এবার খাওয়া-দাওয়া কর।" মা আবার লুকিয়ে লুকিয়ে বাবাকে বলল, "তিনটি প্রমাণ পেলাম। আসলে কি যা ভাবছি তাই? বল না তুমি আমাকে। এটা কি সত্যি হতে পারে? আমার ছেলে কি করে এমন হবে?" বাবা বলল, "সত্য হতে পারে, কিন্তু আমারও তো তাই মনে হচ্ছে। তিন তিনটে প্রমাণ পেয়েছি। দুটো ভালো কাজ করেছে, আর একটি ঘটনায় আল্লাহ তাকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন।" সে বড় হয়ে কি হলো জান? সে হলো বাচ্চাদেরকে আরবী ও ধর্ম শিক্ষা শেখানোর এক শিক্ষক ও মসজিদের ইমাম। আর সে সবসময় বাচ্চাদের নামায পড়তে শেখাতো। আর কেউ বিপদে পড়লে তাদের বাঁচানোর চেষ্টা করতো। তোমরাও কিন্তু এমন হওয়ার চেষ্টা করবে। ছোটবেলা থেকেই।

No comments:

Post a Comment