Wednesday, April 13, 2016

গরমের দিন

গরমের দিনে রিতার দাদা রিতার ভাইকে নিয়ে ঠাণ্ডা পানিতে সাঁতার কাটছে।

রিতা: দাদা! ভাই! তোমরা সাঁতার কাটছ কেন?
দাদা: গরমের দিনে ঠাণ্ডা পানির মধ্যে থাকতে খুবই আরাম লাগে। তুমি তো ছোট। তুমি সাঁতার কাটতে পারবে না।
রিতা: তাই নাকি? অনেক ঠাণ্ডা বুঝি? তাই তো। গরমের দিনে ঠাণ্ডা জিনিসই তো ভালো লাগে। আমি সাঁতার কাটব।
ভাই: না, রিতা। দাদা বলার পরেও কেন তুমি শুনছ না? তুমি গোসল করতে পারবে না। ঠিক আছে, তবে তুমি বালতি নিয়ে এসে পুকুর থেকে পানি উঠিয়ে উঠিয়ে গোসল কর।
দাদা: খুবই ভালো হবে। তুমি মাকে বল একটি বালতি এনে দেবে। মগ দিয়ে পানি উঠিয়ে উঠিয়ে গোসল কর। দেখ খুব আরাম লাগবে।
ভাই: দাঁড়িয়ে আছ কেন গো? জলদি করে নিয়ে আস।

রিতা মায়ের কাছ থেকে বালতি ও মগ নিয়ে এল। গোসল করা শুরু করে দিল। প্রথমে এক মগ দিয়েই ভাইকে বলল, "ভাই! তোমরা এতক্ষণ ধরে এত আরাম করলে? আমার মনে হচ্ছে আমি কেন বড় একটি বালতির মধ্যে এইরূপ পানি নিয়ে সেই পানির মধ্যে বসে যাই। তোমরা কত আরমা করছ! তোমরা সেই কখন থেকে এক সেকেন্ডও পানি ছাড়া থাকলে না। আর আমি এক মগ দিয়ে আবার পানি নিতে যতটুকু সময় লাগে তার মধ্যে আমি গায়ে পানি ঢালতে পারি না। আর দাদা ভাই তো শুধু পানির মধ্যে ডুবই দিতে থাকে। আমি যদি দাদা ভাই আর তোমার মত সাতার শিখতে পারতাম, তাহলে আমিও সারাক্ষণ ডুব দিয়ে থাকতাম।

দাদা: ওরে মেয়ে! অনেকক্ষণ কি? এক সেকেন্ডও তুই ডুব দিয়ে থাকতে পারবি না। তুই কি পারবি নাকি? শ্বাস নেয়া লাগে না? আমি তো তাও শ্বাস বন্ধ করে ডুব দিতে পারি। তুই তো তাও কত ছোট। ডুব দিতেই পারবি না।
রিতা: দাদা! তুমি আমায় তুই বলে কথা বলছ কেন? 'তুমি' বলতে পার না?
দাদা: একটু রাগ হয়েছে, তাই বললাম।
রিতা: এই দাদা! আমি যদি তুমি হতাম, তাহলে খুবই ভাল হতো। কাল আমি সাঁতার শিখে পানির মধ্যে খেলব।

তখন দাদা ও ভাই দু'জনেই: রিতা! তুমি সাঁতার শিখবে। সাঁতার শেখার কোর্স আছে না, তুমি শেখানে ভর্তি হয়ে যাবে। আজকেই কোর্স করে আসবে বিকালে। এখন তো খুব সকাল। ৯টা মাত্র বাজে। জলদি জলদি গোসল করে ফেলব। ভাটি আসার আগেই জোয়ার যখন আছে, তাড়াতাড়ি করে ফেলি।

রিতা: ঠিক আছে। আমি এখনই কোর্স করব।
দাদা: ভর্তি হয়ে নাও আগে। এই তো তোমার ভাই দিয়ে আসবে কোর্সে ভর্তি করে।
ভাই: উমঁ! তুমি নিজে কেন কাজ করছ না? আমাকে দিয়ে কেন কাজ করাচ্ছ? আমি করতে পারব না। আমার আরাম লাগছে। তুমি যাও।
দাদা: এই, আমাকে বকাবকি করছ কেন? আমি কিন্তু তোমার চেয়ে বড়, ভুলে যেও না। বড়র চেয়েও বড় তোমাদের। মানে তোমাদের বাবার বাবা। এবার বুঝেছ?
রিতা: ঝগড়া করো না। দু'জন মিলেই আমাকে ভর্তি করে দেবে এখনই।
ভাই, দাদা: তুমি চুপ কর। আমাদের গোসল শেষ হয়ে নিক, তারপরে। বকা দিচ্ছি বলে আবার কান্না শুরু করে দিও না। আমাদের খুব আরাম লাগছে। আমরা একটু পরে তোমাকে ভর্তি করে দিয়ে আসব। তুমি তাড়াতাড়ি গোসল শেষ কর।
রিতা রাগ হয়ে উল্টো বকে: এই! তোমরা আমায় বকছ কেন? এত আরাম দরকার নেই।

পরের দিন সাঁতার শিখে সে পানির মধ্যে খেলল বল। পানির মধ্যে বল খেলে। সেই বলটি পুকুরের গভীরে তলিয়ে যায়। দাদা আবার ডুব দিয়ে সেটা খুঁজে বের করে আনে।

(দু'দিন পর)
রিতার আবার মিষ্টি খাওয়া নিষেধ ছিল। সে দেখল, দাদা ও তার ভাই আইসক্রিম খাচ্ছে। 
রিতা: তোমরা লুকিয়ে লুকিয়ে কি খাচ্ছ?
দাদা: আইসক্রিম খাচ্ছি। তোমার খাওয়া নিষেধ। তুমি খাবে না। আইসক্রিম তো মিষ্টি।
রিতা: আইসক্রিম কি খুব মজা নাকি এমন হাউমাউ করে খাচ্ছ যে?
ভাই: খুবই মজা।
দাদা ভাইকে মাইর দিয়ে: তুমি বললে কেন, খুব মজা? ও তো এখন খেতে চাইবেই। ওর নিষেধ তুমি জান না? ভাই হয়েছ কেন তাহলে?
ভাই: আমাকে বকছ কেন? আমাকে মারছ কেন? আমি তোমাকে বলেছি যে, আমাকে মার? ওর তো খাওয়াই নিষেধ। ও তো খেতেই পারবে না। অযথা বলেছি তো কী হয়েছে? একটু কথা বলে মুখটা একটু চালু হয়। আরো বড় হয়ে মুখ দিয়ে পটর পটর কথা বলব।

তারপর রিতা একা একা বাবার পকেট থেকে টাকা নিয়ে ডাক্তারের কাছে চলে গেল। ওষুধ খেয়ে ফেলল। টাকা দিয়ে এল। তখন তার মিষ্টি খাওয়ার অনুমতি পেয়ে গেল। এখন সে মিষ্টি খেতে পারবে। সে এবার বাবা, মা, দাদা, ভাইকে রিপোর্ট দেখালো। আর বাবার পকেটটি খুলে বাবাকেও দেখাল যে, দেখ, তোমার পকেটের সব টাকা চুরি করেছে তোমার মেয়ে। চুরি করে সে ভালই করেছে। ডাক্তারের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে এসেছে মিষ্টি খাওয়ার। দেখ তোমার মেয়ের রিপোর্ট।
এবার সে আইসক্রিম খাওয়া শুরু করল। তারপর ললিপপও ফ্রিজে রাখা ছিল। সেইটা বের করল। কোন গরম দেয়া নাই। বরফ হয়ে রয়েছিল, তাই একটু ধুয়ে ধুয়ে ছুটিয়ে ছুটিয়ে খেয়েছে। গরমের দিন শেষ। গল্পও শেষ।

No comments:

Post a Comment