Thursday, November 30, 2017

ঠগবাজ দোকানদার

এক ছিল অনেক পর্দাশালী একটি মহিলা, কিন্তু সে ছিল বোকা। একদিন সে বোরখা কিনতে একটা দোকানে গেল। দোকানদার তাকে একটা ক্যাটালগের বই দিল। বলল, পছন্দমত একটা বোরখা চয়েস করুন, যেটা চাইবেন সেটাই দেব। পর্দাশালী মহিলাটি এমন একটা বোরখা পছন্দ করল, যেটা এত সুন্দর যে, সবাই কিনে কিনে শেষ করে ফেলেছে। দোকানদার তো মুশকিলে পড়ে গেল। সে ভাবল, প্রথমে এত আদর করে বললাম যে, পছন্দমত যে কোনটা চয়েস করলে দিয়ে দেব। কষ্ট করে দোকানে তো ঢোকালাম। কিন্তু এখন কী করব? এখন বললে তো মহিলাটি খুব রাগ হয়ে যাবে। সে ঐ same কালারেরই আরেকটা বোরখা বের করল। মহিলাটি ঐ বোরখাটি চেয়েছিল, কারণ ঐ বোরখাটির সঙ্গে একটি হিজাব ফ্রি। কিন্তু দোকানদারও ছিল ঠগবাজ। সে same কালারের আরেকটি বোরখা শুধু প্যাকেটটাই দেখাল, একটুুও খুলে দেখালো না। আর বোরখার রঙেরই আরেকটা হিজাবও দিয়ে দিল, কিন্তু খুলে একটাও দেখায়নি। আর এমন ভাব আর এমন পটানো কথা বলতে লাগল যে, মহিলাটি কথার ছলে ভুলেই গেল। সে আর খুলেও দেখতে চাইল না, আর ভাবল যদি খুলে দেখাতে বলি, তাহলে বেচারী ভাববে, আমি তাকে সন্দেহ করেছি, তাই দেখতে চেয়েছি। সে খুলে না দেখেই প্যাকেট করে দিতে বলল ভাল করে। তারপর সে ঐ বোরখা নিয়ে বাড়ি ফিরল। এত মিষ্টি ব্যবহারে দোকানদার যে ঠকাতে পারে কাউকে, সেটা ঐ মহিলা বুঝতেই পারল না। সে বাড়ি গিয়ে বোরখাটি খুলে দেখবে এখন। যেই না সে প্যাকেটটি খুলল; সে দেখল, উপরের ডিজাইনটা একটু অন্যরকম। এরপর সে পুরো ভাঁজটা খুলে হা হয়ে গেল। সেই বোরখার হাতা মশারীর। আর বোরখার নিচের পার্টে এমন কাপড় দেয়া, যে কাপড়ে নিচ দিয়ে সব দেখা যায়। কিন্তু মাঝখানেরটুক ছিল গর্জিয়াস। এরপর হিজাবটি খুলে দেখার পালা। দেখল, হিজাবটির ডিজাইনগুলো শুধু সুতির। হিজাবটা এমন কাপড়ের, যে কাপড়ের নিচ দিয়ে সব দেখা যায়। আর মাঝখানে মাঝখানে একটু মশারীর ফুল। মহিলাটি একদম রাগ হয়ে গেল। এটা কি বোরখা, নাকি বিদেশী ফ্যাশনিস্ট মেয়েদের ড্রেস? বুঝেছি, ঐ দোকানদার আসলে মিষ্টি কথা দিয়েই লোক পটায়। আর এমন এমন বোরখা-হিজাব দিয়ে লোক ঠকায়। তাই তো বলি, তাও একেবারে নরমাল বোরখার দাম। সে কিনুক বা বানাক, সে নিশ্চয়ই দামের দশগুণ কম খরচ করেছে। যাদের যাদের এমন বোরখা ও এমন হিজাব দিয়েছে, তারা ঠিক করল, পরের দিন ঐ দোকানে যাবে। আর ঐ মহিলাটিও তাই সিদ্ধান্ত নিল। তখন ঐ মার্কেটে সবাই জিনিসের সঙ্গে দোকানের অবশ্যই সিল মেরে দিত, কিন্তু ঐ দোকানদার দেয়নি। আর কোন চিহ্নও দেয়নি। এমনকি প্যাকেটেও না। সবাই ঐ জামা নিয়ে পরের দিন ঐ দোকানে গেল। সেই দোকানের সামনে এত ভিড় হয়ে গেল যে, সব লোকজন কৌতুহলী হয়ে অন্য দোকান ছেড়ে ঐ দোকানেই দেখতে যাচ্ছে। অন্য দোকানের সবাই তো রাগ করছে। এখন দোকানদাররাও ঐ দোকানে ভিড় দেখে উৎসুক হয়ে গেল। তারপর গিয়ে একজন ক্রেতা চিৎকার করছে, "এই আপনার বোরখা? আর এই আপনার হিজাব? মনে হচ্ছে just ফ্যাশন। এগুলো কি পর্দা করার জিনিস? ইচ্ছা করে আপনাকে পড়িয়ে দেই। এ তো ছোট বাচ্চাদের পার্টি ড্রেসের থেকেও লেংটু-পেংটু পোশাক। এটা কোন বোরখা হলো? ঠগবাজ কোথাকার! বলতে দ্বিধা করি না।" এরপর দোকানদার বলল, "কোন্‌ দোকান থেকে কিনেছেন, তার ঠিক আছে? এসে আমাকে ঝাড়ি মারছেন! কোথায়, আমার কোন চিহ্ন আছে এখানে? আমার দোকানেরও তো কোন চিহ্ন নেই।" একজনকে দোকানদার কার্ড দিয়েছিল। সে বলল, "এই যে আপনার কার্ড!" দোকানদার বলল, "কার্ড মানেই কি এই জামা কিনেছেন? আপনি হয়তো অন্য কিছু কিনেছেন। বললেই হলো?" তখন সবাই বলতে লাগল, "এই ঠগবাজ দোকানদার! আপনি নিজেই তো কোন চিহ্ন দেননি। প্রমাণ কি যে, আপনি এটা দেননি?" তখন দোকানদার আবার উঁচু গলায় বলল, "আর প্রমাণ কি যে, আমি এটা দিয়েছি?" সবাই পড়ল ভারি মুশকিলে। এরপর অমুক অমুক গালি দিয়ে দোকানদারকে বলল, "কই, খুঁজে দেখা যাক তাহলে, আপনার দোকানে আর এরকম কোন বোরখা আছে কিনা।" তখন দোকানদার বলল, "সব জায়গায় খুঁজে দেখুন, পাবেন না। কিন্তু এই ড্রয়ারে আমি টাকা জমিয়ে রেখেছি, এই ড্রয়ার খুলবেন না। বলা তো যায় না, কার মনে কি আছে! কে আমার টাকা নেবে, তার ঠিক আছে?" তখন একজন সাহসী মহিলা বলল, "তাহলে আপনি যে জমিয়েছেন, সেগুলো গেলেই আপনার এত সমস্যা! আর বাকিগুলোতে আপনার কত জামা আছে, সেগুলো নিয়ে গেলে তো আর জমাতেই পারবেন না। এতে কোন সমস্যা নেই? সবার আগে আমরা ঐ ড্রয়ারটাই খুলব।" দোকানদার আর সামলাতে পারল না। অনেক মহিলা ঠেলে ঠেলে ঐ ড্রয়ার খুলে সব প্যাকেট বের করল। একজন বলল, "টাকা বুঝি এরকম পোশাকের প্যাকেটে থাকে? আর আপনার দোকানের উপরেই তো লেখা আছে, দু' বছর আগে দোকান খুলেছেন। আর এই দু'বছরে সবকিছুর খরচ করে আর কত টাকা জমিয়েছেন? এত বড় বড় প্যাকেটে টাকা থাকে? ডাকাত জানলে এক্ষণি চলে আসবে।" তখন আরেকজন বলল, "কথা না বাড়িয়ে একটু খুলে দেখুন তো। টাকা আছে না কি আছে? আমি নিশ্চিত, এর মধ্যেই ওসব বোরখা আছে। আর নাহলে দোকানদার এত ঘুরিয়ে ফিরিয়ে এরকম কথা বলে?" দোকানদারের মুখ হা হয়ে গেল। সবাই খুলে দেখল, সবাই যে বোরখা আর হিজাব নিয়েছে, সেরকম লেংটু-পেংটু পোশাকই ঐ প্যাকেটগুলোতে রাখা। বাকি দোকানদাররা বলল, "এই ভাই, তোমার লজ্জা করে না নাকি? প্রথমে বোঝনি, ধরা পড়ে গেলে কি হবে? এসব তো তুমি বাচ্চাদের পোশাক বলে চালিয়ে দিলেই হতো। আবার বোরখা বলার কি দরকার? আর হিজাবটা বাচ্চাদের ফ্যাশনিস্ট ওড়না বলে দিয়ে দিলেই তো হতো। পর্দার হিজাব কেন?'' এরপর একজন মহিলা আরেকজন মহিলাকে বলল, "চলুন তো, পুলিশ ডেকে আনি। এত বড় ঠগবাজকে পুলিশকে না ধরিয়ে এত কথা বলার দরকারটা কি? আর পুলিশকে প্রমাণ দেব এই দোকানের পোশাকগুলো আর আমাদের হাতের পোশাকগুলো দেখিয়ে।" এরপর দু'জন মিলে পুলিশ ডেকে আনল। তারপর পুলিশ সব প্রমাণ-ট্রমান দেখে অন্য দোকানদাররা যে কথা বলেছে, সে কথাই বলল। পুলিশ বলল, "এই অপরাধের একটাই উপযুক্ত শাস্তি হবে। আর যে দুই মহিলা আমাকে ডেকে এনেছে, তারাই এই শাস্তির কথা বলেছে। শাস্তিটা হলো, তুমি যেই পোশাককে বোরখার নামে চালিয়েছ, আর যেই হিজাব চালিয়েছ, সেইটা তোমাকে নিজেই পরতে হবে। ছেলে হলেও মেয়েদের এই পোশাকটাই পরতে হবে। ্তারপর সারা মার্কেট ঘুরতে হবে। আর তার পিঠে "আমি ঠগবাজ" লেখা একটি কাগজ টানিয়ে দিতে হবে।" তাই করা হলো। এরপর দোকানদার সব নকল বোরখা ও হিজাবগুলো পুলিশের কাছে দিয়ে দিল। পুলিশ ওগুলো বস্তির মানুষদের দান করে দিল। এরপর দোকানদারের উচিত শিক্ষা হলো। আর কখনো এসব করার চিন্তাও তার মাথায় ঢুকল না। আর সব মহিলারা তাদের ঘরে ফিরে গেল।

Friday, November 17, 2017

সোনা ও রূপা

এক ছিল এক কৃষক। তার ছিল দুই মেয়ে। বড় বোনের বয়স ১৫ ও ছোট বোনের বয়স ১০। বড় বোনের নাম রূপা, আর ছোট বোনের নাম সোনা। বড় বোন ছিল অলস। সে ছোট বোনকে দিয়েই কাজ করাত। ছোট বোনও কাজ করত। বড় বোন রান্না ভাল করতে পারত না। সে সবসময় নিজেকে একটু বড় দেখাতে চাইত। এবং সবার কাছ থেকে প্রশংসা পেতে চাইত। একদিন সেই দেশের রাজা ঠিক করল, এক মাস সব প্রজার বাড়ি গিয়ে সব মেয়েদের হাতের রান্না খাবে। একেক বেলায় একেক জনেরটা। যেই মেয়ের রান্না তার ভাল লাগবে, সে তার আরো কিছু রকম পরীক্ষা নেবে। তারপর যদি সে সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়, তাহলে রাজপুত্রের সাথে রাজা তার বিয়ে দেবে। সেই খবর ঘোষণা করে দেয়া হল। বড় বোন ভাবল, রাজাকে জোড়াতালি দিয়ে রোস্ট-পোলাও খাওয়াবে। কিন্তু ছোট বোন ঠিক করল, জোড়াতালি দিয়ে রোস্ট-পোলাও বানানোর থেকে সুস্বাদু ইলিশ মাছ ও খিচুড়ি অনেক ভাল। এরপর প্রথম পনের দিন রাজা অনেক মেয়ের বাড়িতে গেলেন ও প্রত্যেক বেলায় একেক জনের বানানো খাবার খেলেন। কিন্তু রাজার কোনটাই বেশি একটা ভাল লাগল না। ১৬তম দিনে রাজা এলেন সোনা-রূপার বাড়িতে। তিনি বললেন, "দুপুরে খাব রূপার হাতের রান্না, আর রাতে খাব সোনার হাতের রান্না।" রূপার কাছে বেশি টাকা ছিল না। সে একটু চাল কিনল ও একটা ছোট মুরগী কিনল। তখন কাচা টমেটোর সিজন। সে বেশি করে মরিচ দিলো টমেটোটাকে লাল রং করার জন্য। আর চালগুলো সে অনেক আগেই কিনেছিল ও প্রত্যেকদিন চাল পোলাওয়ের চালের shape করে কাটতে লাগল। এরপর সে তৈরি করল জোড়াতালি দিয়ে বানানো রোস্ট-পোলাও। আর ছোট বোন ঠিকমত নূন-মরিচ দিয়ে মজা করে খিচুড়ি এবং ইলিশ মাছ রান্না করল। রূপা একটা কাঠের টেবিল রঙ করিয়ে সুন্দর প্লাস্টিকের মত দেখতে হয় এরকম তৈরি করল। আর সোনা সাধারণ একটা কার্পেট মেঝেতে বিছিয়ে দিল। এরপর পাটিতে খাবার সাজালো। আর রূপা চেয়ার হিসেবে কাঠের টুকরোর উপরে পর্দা বিছিয়ে দিল (মঞ্চের মত)। এরপর রাজা এলেন ওদের বাড়িতে খাওয়ার জন্য। প্রথমে রূপারটা খাবে। সে ঢুকলো রূপার ঘরে। রূপা বললো, "মহারাজ! দেখুন, কী সুন্দর রান্না করেছি! আপনি বসে খাবেন বলে কথা। দেখুন, একদম বিয়েবাড়ির টেবিল-চেয়ারের মতন বানিয়েছি। বসুন একটাতে।" এরপর রাজা ওখানে বসলেন। রাজার অভ্যাস ছিল পা দুলিয়ে দুলিয়ে খাওয়া। এরপর রাজা তার অভ্যাস মত পা দোলাতে শুরু করলেন। এবং হঠাৎ এক সময় চেয়ার ভেঙ্গে রাজা মাটিতে পড়ে গেলেন। রাজা চিৎকার দিয়ে বললেন, "অপদার্থ মেয়ে! এই তোমার বিয়েবাড়ির চেয়ার? এর থেকে ছেড়া পাটিতে বসে খাওয়া ভাল।" রাজা উঠলেন। এরপর আরেকটা সাধারণ চেয়ার পাশের দোকান থেকে কিনে নিয়ে এলেন। তারপর সেই কাঠের চেয়ারে বসেই তিনি রোস্ট আর পোলাও খেতে বসলেন। তিনি পোলাওটা মুখে দিয়ে বললেন, "এ কী! এ তো দেখছি একদম ভাতের মতন। এ কি পোলাওয়ের চাল দিয়ে ভাত রেঁধেছ? পোলাওয়ের তো একটুও চিহ্ন নেই । শুধু পোলাউয়ের shape টাই একটু।" তখন রূপা বলল, "এটাও খেতে ভালই লাগে। এটাও তো পোলাওই। এটা হলো একধরনের বিদেশী পোলাও। এবার রোস্টটুকু তো নিন।" রাজা রোস্টটুকু প্লেটে নিলেন। খাওয়ার আগে এসে বললেন, "মরিচের খুব কড়া গন্ধ আসছে। হয়তো মরিচ ভাজছে এ বাড়িতে। ও কিছু না।" সে রোস্টটুকু মুখে দিলেন। চিৎকার দিয়ে বললেন, "এটা কি রোস্ট রান্না, না মরিচ রান্না? একটা অপদার্থ মেয়ে! এটা রোস্ট হলো? রোস্টের থেকে দশগুণ বেশি মরিচ। আর টমেটোর যে স্বাদ, একেবারে টক! বিচ্ছিরি হয়েছে, বলতে দ্বিধা করছি না। মুখটাই একেবারে নষ্ট করে দিল। প্রথম দিকে তো মাজাটাই ভেঙ্গে বসছিলাম। এখন ঝালের চোটে কান ধেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। রোস্ট তো একদম মিষ্টি হয়। আর একটু অন্যরকম খাবার দেবে না? রাজ্যে তো প্রায়ই এসব খাবার খাই। বুঝেছি, এ হলো জোড়াতালি দিয়ে করানো। আর থাকব না।"- এই বলে রাজা রূপার বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলেন। এরপর রাত্রেবেলা সোনার হাতের রান্না খাওয়ার জন্য আসলেন। সোনা বলল, "স্বাগতম, মহারাজ! দয়া করে এ গরীবখানায় আসন গ্রহণ করুন। রাজা মনে মনে বললেন, "আগেরজন তো একেবারেই অপদার্থ ছিল। প্রথমে একটু আদর করে বসতে দেবে না? তা নয়, প্রথমে নিজের প্রশংসা নিজে করা শুরু করেছে। শুরুতেই একেবারে বলেছে, দেখুন, কত সুন্দর রান্না করেছি! এখন এরটা খেয়ে দেখি কেমন।" রাজা কার্পেটটাতেই বসলেন। রাজা পাতে খাবার নিতে গেলেন। সোনা রাজাকে নিজে নিজে খাবার নিতে দিলেন না। সে খুব সুন্দর করে রাজার পাতে খাবার বেড়ে দিল। রাজা প্রথমে খিচুড়ি একটু মুখে দিয়ে দেখল। বলল, "বাহ! এ তো খুব অপূর্ব খিচুড়ি। এত সুন্দর খিচুড়ি কোনদিন খাইনি। তাছাড়া একটু অন্যরকম তো খেতেই হয়। আর এই মেয়ে তাই খেতে দিয়েছে।" সোনা বলল, "এবার এই অধমের রান্না করা মাছটি একটু চেখে দেখুন।"- এই বলে সে রাজার প্লেটে মাছ দিল। রাজা মাছটি মুখে দিয়ে বললেন, "বাহ! অপূর্ব ইলিশ মাছ। দোকানে যতই মাছ কিনি, খাই; এত ভাল লাগে না। তুমি কোন দোকান থেকে ইলিশ মাছটি কিনলে?" সে বলল, "বাজারের শেষ মাথায় অমুক দোকান থেকে কিনেছি।" রাজা বলল, "ঐ দোকানে তো একেবারে সাধারণ মাছ পাওয়া যায়। তুমি এমন মাছ পেলে কি করে? আর এমন মাছের দাম তো নিশ্চয়ই অনেক হবে। তুমি অত টাকা পেলে কোথায়?" মেয়েটা বলল, "আমি তো সাধারণটাই কিনেছি। শুধু রান্নাটাই একটু ভালো হয়েছে। মহারাজ! চেখে তো দেখলেন। এবার খেয়ে নিন।" রাজা পেট ভরে খেলেন। এরপর মেয়েটাকে বললেন, "সোনা! তুমি খুব ভাল রেঁধেছ। সকালে তোমার আরো একটু ইন্টারভিউ নিব।" রাজাকে সোনা বলল, "অবশ্যই। আপনি আমাকে যেকোন কিছু জিজ্ঞাসা করতে পারেন।" 
সকাল বেলা রাজা সোনার ঘরের কাছে এলেন। তিনি ভেবেছিলেন, সোনা হয়তো ঘুমোচ্ছে। কিন্তু তিনি দেখলেন, সোনা ঐ ঘরে নেই। সোনা রান্নাঘরে রান্না করছে। মহারাজকে দেখে সোনা উঠে দাঁড়ালো। বলল, "স্বাগতম, মহারাজ! আপনি বসে ধীরে সুস্থে আমাকে প্রশ্ন করতে পারেন।" রাজা চকিতে বসলেন। রাজা বললেন, "আমি প্রশ্ন শুরু করছি। ধরে নাও, একটা রাক্ষস এসে তোমাকে নিয়ে গেল। সে বলল, আমার তিনটা ছেলে আছে। তারা ঝগড়া করছে। তাদের একজন একটা জিনিসকে বলছে 'গাছ', আরেকজন বলছে 'পাছ', আরেকজন বলছে 'ডাছ'। ওরা ঝগড়া করছে, কোন্‌টা সঠিক? তুমি ওদের কাছে গিয়ে কথা বলে দেখ, আর ওদের ঝগড়া মেটাও। আর নাহলে আমি তোমায় খেয়ে ফেলব। তখন তুমি কি করবে?" মেয়েটা বলল, "আমি সবগুলো রাক্ষসের ছেলেকে বলব, তোমরা সকলেই সঠিক। একজন বলছ ফরাসি ভাষায়, একজন বাংলা ভাষায়, একজন ইংরেজি ভাষায়। তখন কোন রাক্ষসই আর আমাকে মারবে না।" তখন রাজা বলল, "তোমার তো অনেক বুদ্ধি! তোমাকে আমি আমার প্রাসাদে নিয়ে যেতে চাই। এসো আমার সঙ্গে। তুমি একটা ভালো পোশাক পরে আমার সাথে চল।" তখন মেয়েটা বলল, "ঠিক আছে। কিন্তু আপনার কাছে কোন্‌টা ভাল লাগবে, সেটা আমি বুঝব কি করে?" তখন রাজা বলল, "ঠিক আছে, আমি পছন্দ করে দিচ্ছি।" রাজা দেখল, "সবগুলোই গরীবের পোশাক।" রাজা বললেন, "তুমি একটু দাঁড়াও, আমি আসছি।" রাজা পাশে একটা পোশাকের দোকানে গেলেন। সেখানেও সব গরীবেরই পোশাক। রাজা দোকানদারকে বললেন, "সবথেকে সুন্দর আর দামি পোশাকগুলো দেখাও তো!" দোকানদার দামি পোশাকগুলো দেখালো। রাজা একটা রাজকন্যাদের মত পোশাক কিনল। আরেকটা পার্টি ড্রেসের মতন সুন্দর পোশাক (বিয়ের পোশাক) কিনল। এরপর মেয়েটিকে রাজকন্যাদের মত ঐ পোশাকটি দিল। মেয়েটা বলল, "এই অধম এই পোশাক নিয়ে কি করবে, মহারাজ!" তখন রাজা বলল, "এটা আমার পছন্দের একটি পোশাক। তুমি এটা পরে নাও।" মেয়েটা বলল, "অসংখ্য ধন্যবাদ। আমি এটাই পরে নিচ্ছি।" পরে রাজা এই মেয়েকে নিয়ে প্রাসাদে গেলেন। রাজপুত্রকে এই মেয়েকে দেখিয়ে বললেন, "এই মেয়েটা কেমন লাগে তোমার কাছে?" রাজপুত্র বলল, "এ তো অনেক সুন্দরী। আমার বানানো ঐ কঠিন ধাঁধার উত্তর কি কেউ দিতে পেরেছে? আর তোমার কি কারো রান্না ভাল লেগেছে?" তখন রাজা বলল, "এই মেয়েই আমাকে অসাধারণ রান্না খাইয়েছে এবং খুব ভাল যত্ন করেছে। সে ঐ অসম্ভব কঠিন ধাঁধার উত্তরও দিয়ে দিয়েছে। এই মেয়েটাকে কি তোমার পছন্দ হয়?" তখন রাজপুত্র এক কথায় বলে দিল, "হ্যাঁ, একেই আমার সাথে তুমি বিয়ে দিয়ে দাও।" এরপর ওদের ধূমধামের সাথে বিয়ে হয়ে গেল। আর রূপা মনে মনে খুব হিংসা করতে লাগল। আর ভাবল, কেন যে জোড়াতালি দিয়ে বড়লোকদের খাবার বানাতে গেলাম!

শিক্ষা: জোড়াতালি দিয়ে অসাধারণ কিছু করতে চাওয়ার চেয়ে সাধ্যের মধ্যে সাধারণ জিনিস করাই ভালো।