Thursday, November 1, 2018

কাঠুরের ছেলে ও সাধুবাবা

এক ছিল এক কাঠুরে। তার ছিল এক ছেলে। কাঠুরে রোজ রোজ ভালোমতনই কাঠ পেত। তার ছেলেকে সে অনেকবার বলেছে কাঠ কাটা শিখতে, কিন্তু তার ছেলে কাঠ কাটতে কিছুতেই চায় না। একদিন ছেলেটি বাইরে খেলছিল। হঠাৎ বৃষ্টি নামল। তার বন্ধুদের বাড়ি মাঠ থেকে খুবই কাছে ছিল। তাই তার বন্ধুরা দৌড়ে বাড়ি চলে গেল। কিন্তু ঐ ছেলেটি দৌড় দিতে না দিতেই তার দেখা হলো এক সাধুবাবার সাথে। সে বলল, "এই! আমাকে তোমার বাড়িতে এই বৃষ্টি না যাওয়া পর্যন্ত কিছুক্ষণ আশ্রয় দিলে আমি তোমায় কিছু উপকারী উপদেশ দেব।" ছেলেটি সাধুবাবাকে ঘরে নিয়ে গেল। আর সাধুবাবা বলল, "শোন! আমি যেই কথাগুলো বলব, সেগুলো খুব উপকারী। সেগুলো মেনে চললে একদিন তুমি সুখী হবে। শোন তবে। তুমি বাবার সাথে কাঠ কাটা শেখ। নইলে তুমি পরে বিপদে পড়বে।" একটু পর বৃষ্টি থামল। সাধুবাবা চলে গেল। কিন্তু ছেলেটি সাধুবাবার কথায় দামই দিল না। বাবা যতই তাকে বলে, সে কাঠ কাটতে যায় না। হঠাৎ একদিন তার বাবা মারা গেল। তার মা তাকে খুব বকল। বলল, "এখন কে কাঠ এনে দেবে? কত করে বললাম, বাবার সাথে কাঠ কাটা শেখ্, তা তো শুনলিই না। এমন করে বলে উড়িয়ে দিস না যে, কাঠ কাঠতে কে না পারে! কাঠ কাটারও কৌশল আছে। কোনমতে কাঠ কাটলে কি আর সংসার ভালমত চলে?" এভাবে মা তাকে বকতেই থাকল। ছেলেটির কান ঝালাপালা হয়ে গেলে সে মাঠে খেলতে চলে গেল। আগের বারের মতই এবারও একই ঘটনা ঘটল। বৃষ্টি নামল, সাধুবাবার সাথে দেখা হলো, সাধুবাবা ঘরে আশ্র্রয় চাইল। ছেলেটি আগের মতই সাধুবাবাকে ঘরে নিয়ে এল। সাধুবাবাকে দেখে মায়ের পকপক করা কিছুটা থামল। সাধুবাবা ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করল, "তুমি কি আমার উপদেশ মেনেছ? এখন কিন্তু বিপদে পড়বে।" ছেলেটি বলল, "না। আমি তা করিনি। কারণ, আমার তা করতে ভালো লাগে না। এখন বুঝতে পারছি যে, ভুল করেছি। কিন্তু এখন কি করব?" সাধুবাবা বলল, "শোননি তো! তাহলে এখনকার উপদেশগুলো শোন, আর কথামত কাজ কর। তুমি যেমন পার, সেভাবে কাঠ কাটতেই থাক, কাটতেই থাক। একদিন না একদিন দেখবে, ভালো কিছু একটা ঘটবেই। ছোটখাটো ভালো জিনিস নয়, দারুন জিনিস ঘটবে। ঐ তো বৃষ্টি থেমে গেছে। উপদেশগুলো শুনো কিন্তু। আমি যাচ্ছি।" এই বলে সাধুবাবা চলে গেল। কিন্তু এবার আর ছেলেটি আগের ভুল করল না। সে কাঠ কাটতেই থাকল। এক বছর হয়ে গেল কাঠ কাটতে কাটতে, কিন্তু কিছুই হলো না। ছেলেটি অধৈর্য্য হয়ে গিয়ে বলল, "কাল আমি কাঠ কাটতে যাব না। ধুত, ছাই! আমি কাঠ কাটতেই পারি না, কোনমতে কাঠ কেটে পান্তাভাত খেয়ে দিন কাটাই, ভাল্লাগে না। ভালো জিনিসটা কবে হবে? কাল আমি যাবই না।" এই বলে সে পরের দিনটা গেল না। তার পরের দিন সে খবর পেল, আর একজন লোক গাছ কাটতে গিয়ে গাছের মধ্যে এক পুটলি সোনার মোহর অর্থাৎ একশ স্বর্ণমুদ্রার একটা পুটলি পেল। ছেলেটি বলল, "হায়রে কপাল! কেন যে সেদিন গেলাম না? এখন থেকে প্রত্যেকদিনই আমি গাছ কাটব।" পরের বছর সে ভাবল, "এবার আর আগের ভুল করা যাবে না। দেখি, কিছু পাই কিনা।" কিন্তু সে কিছুই পেল না। পরের বছর সে এইজন্য আবার আগের ভুলটাই করল। আর সে সময়ও একই ভাবে আরেকজন লোক মোহর পেল। তিন বার একই ঘটনা ঘটল। বৃষ্টি হলো, ছেলেটি আর দৌড়াদৌড়ি খেলতে মাঠে যায় না। তাই তাদের ঘরেই সাধুবাবা এল। এসে সে আশ্রয় চাইল। সাধুবাবাকে তারা আশ্রয় দিল। সাধুবাবা বলল, "তুমি অনেকবার মিস করেছ। কেন এমন কর? আমার নির্দেশ মান না জন্যই তো এরকম হয়। এবার থেকে বলছি, কোন বছরই একটা দিনের জন্যও তুমি কাঠ কাটা বাদ দেবে না। আর যদি মোহর পাও, তাহলে সাথে সাথেই তা খেয়ে উড়িয়ে দেবে না। ভবিষ্যতের জন্য জমিয়ে রাখবে। তারপর একদিন দেখবে, সেই টাকা দিয়ে তুমি অনেক কিছু করতে পারছ।" এবারও বৃষ্টি থামল উপদেশ দেয়ার পরপর। সাধুবাবা চলে গেল। এখন থেকে ছেলেটি প্রত্যেকদিন কাঠ কাটে। আর প্রতি বছর একশ মোহর পায়। জমিয়ে রাখতে রাখতে একদিন সে দেখল, অনেক টাকা হয়েছে। প্রায় পাঁচশত মোহর, যা বর্তমান বাংলাদেশী মুদ্রায় পাঁচ কোটি টাকার সমান। এবার তারা বড় একটা বাড়ি বানালো। আর ছেলেটি  বড় চাকুরির পরীক্ষায় পাস করে চাকুরি পেল।যার মাসিক বেতনই ৩০ হাজার আর এক্সট্রা ডিউটির জন্য ৫ হাজার টাকা। যদিও ছেলেটি অনেক কিছু মিস করেছে, সাধুবাবার শেষ কথা মানার জন্য এখন সে সুখী।