Thursday, July 6, 2017

রাজার খাওয়া

অনেক অনেক দিন আগে ছিল খুব ধনী এক রাজা। তবে তার স্বাস্থ্য সবসময় ভাল থাকত। কারণ, সে সবসময় অতি সাধারণ শাক-সবজি ও ফলমূল খেত। সে কখনো রোস্ট-পোলাও খেত না। তবে সে একথা কাউকে বলতও না। একদিন এক লোক রাজাকে নেমন্তন্ন করল। এক বিবাহ উতসবে। যে দাওয়াত করেছিল, সে রাজার খুব কাছের বন্ধু ছিল। তাই সে যেতে বাধ্য হল। সে তাড়াতাড়ি করে উপহার নিয়ে রওয়ানা হল। ওখানে গেল সে। উপস্থিত হওয়ার পর তার বন্ধু তাকে জড়িয়ে ধরে বলল, "কেমন আছ, বন্ধু? দুপুরে আবার খেয়ে আসনি তো?" রাজা বলল, "আরে, না। দুপুরে বিবাহ, আর আমি দুপুরের খাবার বাড়িতে খেয়ে আসব কেন?" তার বন্ধু আবার বলল, "তাহলে তাড়াতাড়ি আগে খেয়ে নাও।"- বলে বিরিয়ানি আর রোস্ট খেতে দিল। রাজা ভাবল, প্রত্যেকদিন শাক-সবজি খাই। আজ একটুখানি ভাল-মন্দ খেলে কি হবে! তখন সে এটাই ভাবল না যে, তার বন্ধু তাকে বেশি করে খাইয়ে দেবে। কারণ, তার বন্ধুর অনেকদিনের শখ ছিল, নিজের কাছের বন্ধুকে কাছে টেনে এনে অনেক আদর করে অনেক কিছু খাওয়ানো। রাজা খেতে বসল। খেয়েদেয়ে সে ওঠার পাঁচ মিনিট পরই তার শুরু হল পেট ব্যথা। সে কিন্তু খুব বেশি করেই খেয়ে ফেলেছিল। বন্ধু বলল, "কি হয়েছে রে? আবার পেটে ব্যথা কোত্থেকে আসল?" তখন রাজা বলল, "তোমার জন্যই তো। তুমি আমাকে এত বেশি করে খাইয়ে দিলে কেন? এত খাবার কেউ খায়? আমাকে তুমি দুই প্লেট ভর্তি করে খাইয়ে দিয়েছ। আর তুমি নিজে তো আধা প্লেটই অল্প করে নিয়ে খেয়েছ। এখন আর কি করব, বলতো? তাড়াতাড়ি বাড়ি যাই। তোমার বর-বউ দেখা আর হলোই না। তুমি পরে ছবি তুলে নিয়ে এসো, আমি যাই।" সে বাড়ি ফিরে গেল। সে কি কি খেত, তার শুধুমাত্র রাণীই জানত। কারণ, সে এতই ধনী ছিল যে, তার সাধারণ শাকসবজি খাওয়া মানায় না। তাই সে কাউকে বলেনি। সে বাড়িতে গিয়ে রাণীকে সব বলল। সে বলল, ভেবেছিলাম একটু ভাল-মন্দ খাব বিয়েতে গিয়ে। কিন্তু এ কী? আমার বন্ধু আমাকে এততো দু' প্লেট ভর্তি করে খাইয়ে দিয়েছে যে, আমার পেটেই ব্যথা শুরু হয়ে গেল। আবার অপুষ্টিকর খাবার। যত্তসব! রাণী বলল, "সে কী মহারাজ? আমি তো মানা করেছিলাম আপনাকে। আপনি বলেছিলেন, খুব কাছের বন্ধু, না গিয়ে কি করা যায়? তাই আমি ভাবলাম, আপনার যখন এত ইচ্ছে, তাহলে যান। এবার দেখুন, কি হয়। এখন বৈদ্যকে ডাকতে যেতেও নিশ্চয়ই হবে আমাকে। যাই, বাবা।"- বলে রাণী বৈদ্যকে ডেকে আনল। রাজবৈদ্য বলল, "কেন, কি হয়েছে? কিভাবে হল? সেটা আমাকে একটু বলুন। পেটে ব্যথা দুপুর সময়, ব্যাপারটা কি? দুপুরে কি বিশেষ কোন কিছু করেছে, যা অন্যান্য দিন করেনি?" রাণী লজ্জায় বলতেই পারছিল না। কিন্তু রাজা ইশারা করে বলল যে, বলেই দাও। সে বলল, "চিকিতসকের কাছে কিছু লুকিয়ে কি আর চিকিতসা পাওয়া যায়?" তখন রাণী বলল, "হ্যাঁ, বৈদ্যমশাই। একটু আলাদা কাজ করেছে বটে। প্রতিদিন যা খায়, তার ব্যতিক্রম করেছে।" "মানে? কি বলছেন? আজকে শুনেছিলাম, একটা বিবাহ অনুষ্ঠানে যাবেন মহারাজ। তো প্রত্যেকদিনের খাবারই তো নিশ্চয়ই খেয়েছেন।" তখন রাণী বলল, "আর বলবেন না। মহারাজ প্রত্যেকদিন কোন রোস্ট-পোলাও বা বিরিয়ানি খানই না। তিনি সাধারণ ফলমূল ও শাকসবজি খেয়ে থাকেন।" তখন রাজবৈদ্য বলল, "ঠিক কথা। এবার বুঝেছি যে, কেন বেশির ভাগ রাজারই অসুখ হয়। আর তার বেশিরভাগেরই পেটে ব্যথা। এত ঘন ঘন কি কারো রোগ হয়? আর আমাদের রাজামশাই কখখনো অসুস্থ হন না, আর কোন বিবাহ উতসবেই যান না। আজ হয়তো কাছের বন্ধু বলে গিয়েছে। কিন্তু তাই বলে এত অপুষ্টিকর খাবার খেয়েছে, তা তো বুঝিনি। এইজন্যই আমাদের মহারাজ সবসময় সুস্থ। এই তো চাই! সুস্থ হয়ে খুব সুন্দরভাবে জীবনযাপন করেন। এবার অন্য রাজাদের চিকিতসার সময় বলে দেব, যেন সাধারণ শাকসবজি খান।" এই বলে রাজবৈদ্য পেটে ব্যথার একটি ওষুধ দিল, আর বলল, "যেই খাবার প্রত্যেকদিন খান, সেই খাবারই ঘন ঘন খাবেন, আর সঙ্গে শুধু এইটুকু ওষুধ। এই মিলে হল দুটো ওষুধ। এতেই কাজ হবে। আমি আসি।"- বলে রাজবৈদ্য চলে গেল। রাণী বলল, "দেখলেন তো, মহারাজ? আপনাকে কত প্রশংসা করে গেল। এবার আপনি ওষুধটা খান। আর আমি এক্ষণি কটা ফলমূল আর শাকসবজি নিয়ে আসছি।" রাজা ওষুধ আর শাকসবজি খেয়ে আবার স্বাভাবিক হয়ে গেল। এখন থেকে অন্যান্য রাজাও রাজবৈদ্যের কাছ থেকে উপায় জেনে নিল। এখন আর কোন রাজারই অসুখ হয় না।