Wednesday, August 16, 2017

উপকারের প্রতিদান

তোমরা নিশ্চই ইঁদুর সিংহকে মুক্ত করার গল্পটি শুনেছ। তাহলে একই শিক্ষার আরেকটি গল্প শোন।

এক ছিল দুই বন্ধু। ধনী বন্ধু আর গরীব বন্ধু। একদিন তারা ঠিক করল যে, তারা এক বড় জঙ্গল ঘুরে দেখবে। তাই তারা সেইজন্য রওয়ানা হলো। ঐ জঙ্গলের ভিতর অবশ্য দোকানপাটও ছিল। তবে বেশি কিছু ছিল না দোকানে, শুধু একটু খাবার আর পানি ছিল। ধনী বন্ধু তো পিজা আর বার্গার খেয়ে এসেছিল। সঙ্গে কোল্ড ড্রিংস আর পানীয় খেয়ে এসেছিল। কিন্তু গরীব বন্ধু তো কিছুই খেয়ে আসেনি। কারণ, তার বাড়িতেই কিছু বাকি ছিল না। পথের মধ্যে গরীব বন্ধু তার অন্য বন্ধুকে বলল, "একটু পানি দাও না!" তখন বন্ধু বলল, "আমার বোতলে তো আর কোন পানি অবশিষ্ট নেই। তবে আমার কাছে কিছু টাকা আছে।"- এই বলে সে একটি ঠান্ডা পানি কিনে আনল ছোট্ট দোকান থেকে। গরীব বন্ধুকে একদম নীরব লাগছিল। পানি খেয়ে সে তার বন্ধুকে বলল, "ধন্যবাদ।"- এই বলে তারা আবার হাঁটতে লাগল। তারা খুব মুগ্ধ হয়ে সুন্দর জঙ্গলটা দেখছিল। কোন হিংস্র পশুও ছিল না। শুধু পাখি আর জলাশয়ে মাছ ছিল। পথের মধ্যে গরীব বন্ধু বলে উঠল, "আমাকে একটু খাবার দাও না!" তখন বন্ধু বলল যে, "আমার দইয়ের হাঁড়িটাও তো ফাঁকা হয়ে গেছে। মানে পথে খেয়ে ফেলেছি। আর কোন খাবার অবশিষ্ট নেই। তবে আমার কাছে অনেক টাকা অবশিষ্ট আছে। দাঁড়াও।"- বলে সে দোকানে গেল। ছোট্ট দোকান থেকে একটা ছানার মিষ্টি কিনে এনে দিল। গরীব বন্ধুটি খেল। তারপর অবশিষ্ট পানির অর্ধেক সে পান করল। তারপর তারা আবার হাঁটতে লাগল। তারা খুব ঘুরফিরে জঙ্গল দেখে হাসিমুখেই ধনী বন্ধুটি তার বড় ভবনে ফিরল আর গরীব বন্ধুটি তার কুটিরে ফিরল। একদিন দুই বন্ধু মিলে ঠিক করল, অনেক দূরে এক ধরনের ফুল আছে। ঐ ফুল খুব দামী। শুধু ঐ জায়গায়ই পাওয়া যায়। ওরা চাইল, দুটো ফুল নিয়ে সে বিক্রি করবে আর কিছু টাকা পাবে। আর তা ভাগ করে নেবে। সেইদিন গরীব বন্ধুটির জালে অনেক অনেক মাছ উঠল। সেই মাছ বিক্রি করে সেদিন সে খুব ভালমত পেট ভরে খেল আর আরাম করে একটু ঠাণ্ডা পানি খেয়ে নিল। সেইদিন আবার ধনী বন্ধুটির ভবনে এক বড় অনুষ্ঠান হচ্ছিল। সেই অনুষ্ঠানে দাওয়াতের বাইরেও ২০০ জন লোক এসেছিল। তাই খাবারই প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছিল। খুব টানাটানি পড়ে গেল খাবার নিয়ে। সেটা ছিল দূর দূরান্তের গরীব লোকদের জন্য। দেখা গেল, অনেক ধনী লোকও এসেছে। অনেক কষ্টে ধনী লোকদের ফিরিয়ে দেয়ার পর হালকা খাবার রয়ে গেল। এ দিয়ে যারা দাওয়াত করেছে তারা একটু করে খেতে পারল। কিন্তু ধনী বন্ধুটি মাত্র এক লোকমা খাবার খেল। তার বেশি কেউই ভাগে পেল না। আর অনুষ্ঠানের অতিথিরা পেট ভরে খেয়ে চলে গেল। তারপর দুই বন্ধু পরের দিন বের হল ফুল আনতে। যেইদিন তারা জঙ্গলে গিয়েছিল, তখন গরীব বন্ধু বলেছিল, "আমিও তোমার একদিন উপকার করব। আর ধনী বন্ধু বলেছিল যে, তুমি আর কি করবে? তুমি তো খুবই গরীব।"- এই বলেছিল। সেইদিন গরীব বন্ধুর ঘরে এত এত খাবার হয়েছিল যে, এক বাটি ভরে সে সেই খাবার তার সঙ্গে নিল। আর এক বড় বোতলে পানিও নিল। তারপর তারা হাঁটতে শুরু করল। ধনী বন্ধুটি তো কোনমতে একটু খেয়ে এসেছে, আর সাথে নেবে কি? সাথে নিতে গেলে সবাই চিল্লাপাল্লা করবে আর বলবে, "আমাদের ভাগের খাবার এত এত কম কেন?" তাই সে কিছুই আনতে পারল না। পথে একটা বড় জলাশয় ছিল। যাওয়ার পথ ছিল খুব কাদা। ধনী বন্ধুর এমন কিছুর অভ্যাস নেই। তাই সে জলাশয় দেখতে পেয়ে বলল, "আমি গিয়ে ওখানে পা-টা ধুয়ে আসি।" তারপর সে পা ধুতে গিয়ে জলাশয়ের ভিতরে পড়ে গেল। তখন সে চিৎকার করতে লাগল। আর বলতে লাগল, "বন্ধু, তুমি কোথায়? এসে আমাকে বাঁচাও! আমি এই জলাশয়ের ভিতরে পড়েই গিয়েছি।" তখন গরীব বন্ধু শুনতে পেয়ে বলল, "কি করে পড়লে? দাঁড়াও, আমি আসছি।" সে একটা সুতার গাছ দেখতে পেল। সে ওখান থেকে কিছু সুতা নিল। সে আবার দর্জির কাজ করতে খুব ভাল পারত। আর সে তো মাছ ধরত। তাই সে জালও খুব ভাল বানাতে পারত। সে সেই সুতা দিয়ে একটা জাল বানাল। তারপর সেই জালটা সে জলাশয়ের ভিতর ফেলল। ধনী বন্ধু সেই জালটিতে আটকিয়ে উঠে এল। তখন গরীব বন্ধুটি বলল, "তুমি খুবই ক্লান্ত। ঐ ইটটার উপর বসে নাও।"- বলে সে তার সঙ্গে আনা খাবার ধনী বন্ধুকে দিয়ে দিল। তখন ধনী বন্ধুটি বলল, "আসলে আমি ভুলই ভেবেছিলাম। আমি ভেবেছিলাম, তুমি তো খুবই গরীব। আমি ভেবেছিলাম, শুধু ধনীরাই বুঝি সাহায্য করে, আর কেউ বুঝি সাহায্য করতেই পারে না। এখন দেখলাম, তুমি সাহায্য করতে পার। ধন্যবাদ।"- বলে তারা আবার যার যার ঘরে ফিরে গেল।

শিক্ষা: উপকার করলে উপকার পাওয়া যায়। আর দৃশ্যত ক্ষুদ্র বা দরিদ্র হলেও মনটা বড় হলে সাহায্য করার নসীব হয়।

Monday, August 14, 2017

তিন বোন ও ভিক্ষুক

এক শহরে বাস করত এক পরিবার। সেখানে ৩ বোন ও তাদের বাবা বাস করত। বড় বোন সোমা ছিল খুব নিষ্ঠুর, ঝগড়াটে ও সবাইকে মারধর করত ছোট কারণেই। মেঝ বোন লিলি ছিল খুব ঝগড়াটে, তর্ক করত, কিন্তু মারধর বেশি করত না। আর ছোট বোন মনি চিল খুব মিষ্টি ও সাহায্যকারী। একদিন তাদের বাবা তাদের ডেকে বললেন, "শোন, এই বাড়িতে তোমরা থাকলে ঝগড়া বাঁধে। আমি তোমাদের ছোট ছোট আলাদা ঘর বানিয়ে দিতে চাই। করব না, করেই ফেলেছি। বাইরে তাকিয়ে দেখ ছোট তিনটি ঘর।" এরপর ওরা আলাদা থাকতে লাগল। একদিন এক ক্ষুধার্ত ভিক্ষুক ঐ বাড়িগুলোর দিকে গেল। সে প্রথমে সোমার দরজায় ডাকল, "মা, দুটি অন্ন দাও না!" সোমা বেরিয়ে এল। বলল, "এই! তুই কে? নিশ্চয়ই বুঝেছিস, আমার বাড়িতে আজ রোস্ট-পোলাও রান্না হচ্ছে! তাই ভালো-মন্দ খেতে এসেছিস। দূর হ!"— বলে সে তাকে ধাক্কা দিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল। ভিক্ষুক মনে মনে বলল, এমন নিষ্ঠুর আর নেই। সে গেল লিলির বাড়ি। বলল, "এই গরিবকে দুটি খাবার দাও, মা।" লিলি দোর খুলে বলল, "টের পেয়েছিস নাকি, আমার বাড়ি কোরমা হচ্ছে? এখান থেকে যা!"— এই বলে দরজা বন্ধ করে দিল। মনে মনে ভিক্ষুক ভাবল, এমন ঝগড়ুটে আর নেই। শেষে সে গেল মনির বাড়ি খাবারের জন্য। বলল, "মা, দুটি অন্ন দাও না।" মনি এসে বলল, "নিশ্চয়ই! ঘরের ভিতরে এসো।" মনি তাকে সোফায় বসতে দিল। সে বলল, "আজ আমার বাড়িতে খিচুরি-আচার আছে।"— বলে খাবার নিয়ে এলো। ভিক্ষুকটি খেল। মনি তাকে টাকা ও পোশাকও দিল। ভিক্ষুক বলল, "ধন্যবাদ। তুমি খুব ভালো, মা!" তারপর সে চলে গেল। একদিন প্রত্যেকে স্বপ্ন দেখল। সোমা স্বপ্বে দেখল, কেউ তাকে ধরে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিচ্ছে, আবার খুব ধমক দিচ্ছে। তার ওপর ছিল তার তীব্র ক্ষুধা। এরপর লিলি স্বপ্নে দেখল, তার খুব খিদে পেয়েছে। কেউ তাকে খাবার দিচ্ছে না, খুব বকছে। আর মনি স্বপ্নে দেখল— তার প্রিয় ভিক্ষুক এসে তাকে আদর করে বুকে জড়াচ্ছে। এতে সে শান্তিতে মিশে যাচ্ছে। সবাই স্বপ্ন দেখল। বড় দুই বোন স্বপ্নে ভিক্ষুকের অনুভূতিটা বুঝতে পারল। তারপর থেকে ওরা আর ঝগড়া করল না। ওরা বাবাকে বলল, "আমরা আর ঝগড়াঝাটি করব না, একসাথে মিলেমিশে থাকব।" এরপর ওরা মিলেমিশে সুখে থাকল।