Wednesday, December 12, 2018

এক লোক ও কুমির

একদিন এক লোক নদীতে গোসল করছিল। হঠাৎ এক কুমির তাকে ধাওয়া করলো। সে বুঝতে পারছিল না যে, কী করবে। এরপর সে তার সামনে একটি লম্বা দড়ি দেখতে পেল। সে প্রায় নদীর তীরে পৌঁছে গিয়েছিল। সে ভালো ঘাট থেকে নেমেছিল। কিন্তু এখন কাছাকাছি কাদা মাখানো ঘাট ছাড়া কিছুই নেই। তাই সে সহজে উঠতে পারছিল না। নদীর তীরে এক মূর্তি বিক্রেতা বসে ছিল। সে খুব স্বার্থপর ছিল বলে সে নিজের প্রাণ হাতে নিয়ে কিছুতেই লোকটিকে কুমির থেকে বাঁচালো না। লোকটি সামনে থাকা দড়িটি মূর্তি বিক্রেতার সবচেয়ে বড় মূর্তির দিকে ছুঁড়ে মারল। ফলে ঐ মূর্তিটি এসে কুমিরের উপরে পড়ল। কুমিরটির উঠে যেতে অনেক সময় লাগবে। ততক্ষণে লোকটি উঠে যাবে। কিন্তু একা সেই কাজ করা কঠিন। সে মূর্তি বিক্রেতাকে সাহায্য করতে অনুরোধ করলো। কিন্তু ভয়ে মূর্তি বিক্রেতা সাহায্য করলো না। ভাগ্য ভালো সেখান দিয়ে এক ভালো মানুষ যাচ্ছিলেন। ভালো মানুষটি দৌড়ে গিয়ে সাহায্য করলেন। শেষে লোকটি উঠে আসলো। তারপর থেকে সবাই ঐ ভালো মানুষটিকে হিরো বলতো। আর ঐ মূর্তি বিক্রেতা আফসোস করতে লাগল যে, তখন যদি লোকটিকে বাঁচানোর জন্য যেতাম, তো হিরো হতে পারতাম! এখন আমার মূর্তিও নেই। মূর্তি যদি ফেরত চাই তো তারা বলবে, "তুমি লোকটিকে বাঁচাওনি, অথচ তুমি সবার আগে দেখেছ। দ্বিতীয় বার কিছুটা সুরক্ষিত হওয়ার পরেও তুমি সাহায্য করনি। এখন আবার মূর্তি চাও, ছি!"

Thursday, November 1, 2018

কাঠুরের ছেলে ও সাধুবাবা

এক ছিল এক কাঠুরে। তার ছিল এক ছেলে। কাঠুরে রোজ রোজ ভালোমতনই কাঠ পেত। তার ছেলেকে সে অনেকবার বলেছে কাঠ কাটা শিখতে, কিন্তু তার ছেলে কাঠ কাটতে কিছুতেই চায় না। একদিন ছেলেটি বাইরে খেলছিল। হঠাৎ বৃষ্টি নামল। তার বন্ধুদের বাড়ি মাঠ থেকে খুবই কাছে ছিল। তাই তার বন্ধুরা দৌড়ে বাড়ি চলে গেল। কিন্তু ঐ ছেলেটি দৌড় দিতে না দিতেই তার দেখা হলো এক সাধুবাবার সাথে। সে বলল, "এই! আমাকে তোমার বাড়িতে এই বৃষ্টি না যাওয়া পর্যন্ত কিছুক্ষণ আশ্রয় দিলে আমি তোমায় কিছু উপকারী উপদেশ দেব।" ছেলেটি সাধুবাবাকে ঘরে নিয়ে গেল। আর সাধুবাবা বলল, "শোন! আমি যেই কথাগুলো বলব, সেগুলো খুব উপকারী। সেগুলো মেনে চললে একদিন তুমি সুখী হবে। শোন তবে। তুমি বাবার সাথে কাঠ কাটা শেখ। নইলে তুমি পরে বিপদে পড়বে।" একটু পর বৃষ্টি থামল। সাধুবাবা চলে গেল। কিন্তু ছেলেটি সাধুবাবার কথায় দামই দিল না। বাবা যতই তাকে বলে, সে কাঠ কাটতে যায় না। হঠাৎ একদিন তার বাবা মারা গেল। তার মা তাকে খুব বকল। বলল, "এখন কে কাঠ এনে দেবে? কত করে বললাম, বাবার সাথে কাঠ কাটা শেখ্, তা তো শুনলিই না। এমন করে বলে উড়িয়ে দিস না যে, কাঠ কাঠতে কে না পারে! কাঠ কাটারও কৌশল আছে। কোনমতে কাঠ কাটলে কি আর সংসার ভালমত চলে?" এভাবে মা তাকে বকতেই থাকল। ছেলেটির কান ঝালাপালা হয়ে গেলে সে মাঠে খেলতে চলে গেল। আগের বারের মতই এবারও একই ঘটনা ঘটল। বৃষ্টি নামল, সাধুবাবার সাথে দেখা হলো, সাধুবাবা ঘরে আশ্র্রয় চাইল। ছেলেটি আগের মতই সাধুবাবাকে ঘরে নিয়ে এল। সাধুবাবাকে দেখে মায়ের পকপক করা কিছুটা থামল। সাধুবাবা ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করল, "তুমি কি আমার উপদেশ মেনেছ? এখন কিন্তু বিপদে পড়বে।" ছেলেটি বলল, "না। আমি তা করিনি। কারণ, আমার তা করতে ভালো লাগে না। এখন বুঝতে পারছি যে, ভুল করেছি। কিন্তু এখন কি করব?" সাধুবাবা বলল, "শোননি তো! তাহলে এখনকার উপদেশগুলো শোন, আর কথামত কাজ কর। তুমি যেমন পার, সেভাবে কাঠ কাটতেই থাক, কাটতেই থাক। একদিন না একদিন দেখবে, ভালো কিছু একটা ঘটবেই। ছোটখাটো ভালো জিনিস নয়, দারুন জিনিস ঘটবে। ঐ তো বৃষ্টি থেমে গেছে। উপদেশগুলো শুনো কিন্তু। আমি যাচ্ছি।" এই বলে সাধুবাবা চলে গেল। কিন্তু এবার আর ছেলেটি আগের ভুল করল না। সে কাঠ কাটতেই থাকল। এক বছর হয়ে গেল কাঠ কাটতে কাটতে, কিন্তু কিছুই হলো না। ছেলেটি অধৈর্য্য হয়ে গিয়ে বলল, "কাল আমি কাঠ কাটতে যাব না। ধুত, ছাই! আমি কাঠ কাটতেই পারি না, কোনমতে কাঠ কেটে পান্তাভাত খেয়ে দিন কাটাই, ভাল্লাগে না। ভালো জিনিসটা কবে হবে? কাল আমি যাবই না।" এই বলে সে পরের দিনটা গেল না। তার পরের দিন সে খবর পেল, আর একজন লোক গাছ কাটতে গিয়ে গাছের মধ্যে এক পুটলি সোনার মোহর অর্থাৎ একশ স্বর্ণমুদ্রার একটা পুটলি পেল। ছেলেটি বলল, "হায়রে কপাল! কেন যে সেদিন গেলাম না? এখন থেকে প্রত্যেকদিনই আমি গাছ কাটব।" পরের বছর সে ভাবল, "এবার আর আগের ভুল করা যাবে না। দেখি, কিছু পাই কিনা।" কিন্তু সে কিছুই পেল না। পরের বছর সে এইজন্য আবার আগের ভুলটাই করল। আর সে সময়ও একই ভাবে আরেকজন লোক মোহর পেল। তিন বার একই ঘটনা ঘটল। বৃষ্টি হলো, ছেলেটি আর দৌড়াদৌড়ি খেলতে মাঠে যায় না। তাই তাদের ঘরেই সাধুবাবা এল। এসে সে আশ্রয় চাইল। সাধুবাবাকে তারা আশ্রয় দিল। সাধুবাবা বলল, "তুমি অনেকবার মিস করেছ। কেন এমন কর? আমার নির্দেশ মান না জন্যই তো এরকম হয়। এবার থেকে বলছি, কোন বছরই একটা দিনের জন্যও তুমি কাঠ কাটা বাদ দেবে না। আর যদি মোহর পাও, তাহলে সাথে সাথেই তা খেয়ে উড়িয়ে দেবে না। ভবিষ্যতের জন্য জমিয়ে রাখবে। তারপর একদিন দেখবে, সেই টাকা দিয়ে তুমি অনেক কিছু করতে পারছ।" এবারও বৃষ্টি থামল উপদেশ দেয়ার পরপর। সাধুবাবা চলে গেল। এখন থেকে ছেলেটি প্রত্যেকদিন কাঠ কাটে। আর প্রতি বছর একশ মোহর পায়। জমিয়ে রাখতে রাখতে একদিন সে দেখল, অনেক টাকা হয়েছে। প্রায় পাঁচশত মোহর, যা বর্তমান বাংলাদেশী মুদ্রায় পাঁচ কোটি টাকার সমান। এবার তারা বড় একটা বাড়ি বানালো। আর ছেলেটি  বড় চাকুরির পরীক্ষায় পাস করে চাকুরি পেল।যার মাসিক বেতনই ৩০ হাজার আর এক্সট্রা ডিউটির জন্য ৫ হাজার টাকা। যদিও ছেলেটি অনেক কিছু মিস করেছে, সাধুবাবার শেষ কথা মানার জন্য এখন সে সুখী।

Thursday, October 11, 2018

Re-Use

এক ছিল একটি মেয়ে। তার বাবা বিদেশে ব্যবসা করত। তার মা আর সে একটি ছোট বাড়িতে থাকত। বাবা বছরের শেষে অনেক টাকা নিয়ে আসত। কিন্তু পুরোটা দিত না। কারণ, একবার দিয়ে সে দেখেছে, পুরো টাকাই উধাও হয়ে গিয়েছে আজেবাজে খরচে। সেজন্য এখন আর পুরোটা দেয় না। এই বছরে বাবা ফিরে এল। টাকা দিয়ে খাবার-দাবার কিনে ভালমতই খাওয়া-দাওয়া করল। মেয়ের পড়াশুনার জন্য বাবা কিছু টাকা দিয়ে গেল। প্রতি মাসের বেতন আলাদা ভাগে আর বই-খাতা কেনার খরচ আরেক ভাগে করে দুই ভাগে টাকা ভাগ করল। আর সেগুলো ধরিয়ে দিয়ে গেল। তার সাথে খাওয়ার খরচও দিয়ে গেল। এবার বাবা তাদের বিদায় জানিয়ে বিদেশে আবার ব্যবসায় ফিরে গেল। কিন্তু বই-খাতা কেনার টাকা যথেষ্ট ছিল না। বাবাকে আরও টাকা দিতে বলায় সে খাতাগুলো reuse করতে বলল। মেয়েটি স্কুলে যাওয়া পরের বছর থেকে শুরু করল। ছয় মাস যাওয়ার পর সব খাতায় লেখা শেষ হয়ে গেল। কেউ ওর মত চিপিয়ে না লিখলে এক মাসেই সব খাতা শেষ হয়ে যেত। কিন্তু বছরের তো আরো ছয় মাস বাকি আছে। তাতে কিভাবে লেখা হবে? সে বুঝতেই পারছিল না। সে এক কাজ করল। সবথেকে পুরনো খাতার পৃষ্ঠাগুলো ছিঁড়ল। ছিঁড়ে কভার ছাড়া সেগুলো স্টাপলার করল। সেই যে কভার পেয়েছিল, অন্য বন্ধুর কাছ থেকে কিছু পৃষ্ঠা নিয়ে ঐ কভারের সাথে স্টাপলার করে দিল। এইভাবে আরো পাঁচ মাস চলে গেল। সব খাতাই এভাবে সে পুন:ব্যবহার করতে লাগল। কিন্তু সবথেকে শেষের মাসে পরীক্ষা। স্কুল থেকে খাতা দেবে না ছাই! স্কুল থেকে বলল, খাতা কিনে সেটাতে পরীক্ষা দিতে হবে। মেয়েটি তো মনে মনে শুধু বলে, "ধূত ছাই, আর ভাল লাগে না। শুধু নতুন নতুন খাতা কিনতে বলে।" সে এখন কি করবে? টিচার বলল, বাংলা লাইনের খাতায় পরীক্ষা দিতে হবে, কিন্তু দোকানে শুধু ইংলিশ লাইনের পরীক্ষার খাতাই পাওয়া যাচ্ছে। তার বন্ধুরা তাকে বলল, "তোমাকে আমরা অনেক পৃষ্ঠা দিয়েছি। এবার তুমি আমাদের খাতাগুলো বানিয়ে দাও। আমার অত পরিশ্রম করতে ভাল লাগে না বাপু! তোমার পাঁচ টাকা দিয়ে দেব। ইংলিশ পৃষ্ঠাগুলো ছিঁড়ে এই যে আমরা বাংলা পৃষ্ঠা দিচ্ছি, সেগুলো এটার সাথে স্টাপলার করে দিও। প্রত্যেকে পাঁচ টাকা করে দিয়ে দেব।" মেয়েটি পরিশ্রম করতে ভালই বাসত। সে সবার খাতা নিয়ে ভাল করে তৈরি করে দিল। ওরা সবাই খুশি হয়ে গেল। তার বন্ধুরা বলল, "কিন্তু এখান থেকে যে ইংরেজি পৃষ্ঠাগুলো ছিঁড়েছ, সেগুলো আর দিতে হবে না। অত পৃষ্ঠা দিয়ে আমি কি করব? আমার তো টাকার অভাব নই। বাবা প্রতি মাসে মাসেই বিদেশ থেকে আসে। আর তোমার তো বছরের শেষেই কেবল একবার আসে। তুমি ইংলিশ পৃষ্ঠাগুলো রেখে দাও। স্টাপলার করে কভার লাগিয়ে নিজের খাতা বানিও। আর পাঁচ টাকা নিয়ে নাও।" কিন্তু এখন তো বছরের শেষ। এখনো পৃষ্ঠা দিয়ে কি করবে? কিন্তু তাও সে পৃষ্ঠাগুলো কভার সহ স্টাপলার করে রাখল। পরের বছর বাবার টাকা দিয়ে চালানোর অপেক্ষায় থাকল না। পরের বছর যাতে ইংরেজি খাতা কেনার টাকা খরচ করতে না হয়, সেই বুদ্ধি বের করে সে আগে থেকেই খাতাগুলো বানিয়ে নিল। শেষে বাবা বিদেশ থেকে ফিরল। বাবা বলল, "মা ফোন দিয়ে বলেছে, তোমার পড়াশোনার খাতা নাকি তুমি বারবার রি-ইউজ করছ।" "হ্যাঁ, করছি।" "এটা ভাল বুদ্ধি, তবে এতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। তাই আজ থেকে ঠিক করেছি, প্রতি বছর বেশি করে টাকা তোমাদের হাতে তুলে দিয়ে যাব, কিন্তু তোমরা সাবধানে ব্যবহার করো।" মেয়েটি বলল, "দেখ বাবা, আমার অনেক বন্ধু আছে। সবাই অলস। আমাকে দিয়ে ওদের খাতা বানিয়ে নিয়েছে। তার সাথে আমায় যে ৫ টাকা করে করে দিয়েছে, তাতে ১০০ টাকা আমি নিজেই আয় করে নিয়েছি, দেখো।" বাবা বলল, "বাহ! ভালোই করেছ। এই ১০০ টাকা তোমার যা ইচ্ছা তা কিনতে পার। তবে এখন থেকে আমি বেশি টাকাই দিয়ে যাব। যেগুলো রি-ইউজ করার জন্য তুমি বানিয়ে রেখেছ, সেগুলো শেষ হয়ে গেলে এই টাকাগুলো দিয়ে নতুন নতুন খাতাপত্র, কলম-টলম সব কিনবে।" এরপর থেকে মেয়েটির লেখাপড়ার পুরোপুরি ঝামেলা মিটে গেল। কিন্তু অনেকের এরকম ঝামেলা মেটে না। তাই তাদের উপায় হলো রি-ইউজ করা।

Thursday, September 20, 2018

গরীবের মেয়ের জেদ

এক ছিল গরীব মা ও মেয়ে। তারা খুবই গরীব ছিল। থাকত ছোট্ট একটি কুঁড়েঘরে। মা এতেই শুকরিয়া আদায় করত। কিন্তু তার মেয়ে এতে খুশি ছিল না। সে সবসময় ধনী হতে চাইতো। একদিন তার আশা পূর্ণ হয়ে গেল। সে ঘুমোচ্ছিল। সকালে উঠে দেখল, সে একটি সুন্দর বিছানায় শুয়ে আছে এবং তাদের বাড়িটি দোতলা সুন্দর জমিদারের বাড়ির মত হয়ে গেছে। মেয়েটি তো খুব খুশী। খুশীতে আর বাঁচেই না। কিন্তু এখন তার কাজ করে খেতে ভাল লাগে না। মা-ই তার জন্য খাবার যোগাড় করে, আর মেয়ে বসে বসে খায়। সবসময় বাড়ির ভিতর আরাম-আয়েশেই থাকে। এমন সময় বর্ষাকাল এল। মেয়েটি তখন সকাল বেলা বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। হঠাৎ নামল বৃষ্টি। মেয়েটি একটি দোলনায় বসেছিল। সে দোলনা থামাতে থামাতেই মুষলধারে বৃষ্টি নেমে গেল। সে বৃষ্টিকে ধমক দিয়ে বলল, "কেমন বৃষ্টি তুই? দেখছিস, দোলনায় বসে আছি, একটু আরাম করছি; মধ্যে এসে নামলি মুষলধারে?" মেয়েটির বাড়ি পর্যন্ত ঢুকতে ঢুকতেই সে ভিজে জবজবা হয়ে গেল। মা তাকে বলল, "বৃষ্টিতে ভিজে গেছিস? আচ্ছা, ঠিক আছে। জামাকাপড় বদলে আয়।" মেয়ে বলল, "আশ্চর্য তো! আমরা এখন ধনী। ধনী মায়েরা কি বলে, তা জান না? বৃষ্টি হলো, আর তোমার মেয়ে তাতে ভিজে গেল। তুমি কোথায় বকে শেষ পাবে না, অথচ তুমি ঠিক আছে বলে উড়িয়ে দিচ্ছ। আমরা এখন ধনী এটা তুমি বুঝতেই পারছ না। ধুত!" এই বলে মেয়েটি কাপড় বদলে এল। দুপুরের খাবার পর মেয়েটির প্রচণ্ড জ্বর এল। মা এসে বলল, "কিরে, জ্বর হলো নাকি? বৃষ্টিতে ভিজলে তো তোর জ্বর হয় না।" জ্বরের মধ্যেও মেয়েটি মাকে ধমক দিয়ে বলল, "উহ, মা! আমরা এখন ধনী। বৃষ্টিতে ভিজলে তো জ্বর হবেই।" মা বলল, "ঠিক আছে, ঠিক আছে। এই নাও।" এই বলে মা একটা ভেজা মোজা ওর মেয়ের মাথার উপর দিয়ে দিল।" মেয়েটি রাগ হয়ে মোজাটি ছুঁড়ে ফেলে দিল। বলল, "উহ, মা! আমরা ধনী কয় হাজারবার বলতে হবে তোমাকে?  কেমন মাথায় মোজা দিয়ে চলে যাচ্ছ?  আমরা কি গরীব? যাও, ওষুধ, সাপোজিটরি, থার্মোমিটার সবকিছু কিনে নিয়ে আস।" মা বলল, "এ মা! তুমি মোজাটা ছুঁড়ে ফেলে দিলে? আচ্ছা, ঠিক আছে। এই নাও তোমার ডিক্টুরে জিনিসপত্র।" মেয়েটি ধমক দিয়ে বলল, "উহ, মা! আমরা গরীব নই। একটু ইংরেজিও তো জানতে হবে। তুমি কি বললে, ওটা তো আসলে ডাক্তারী। ওহ! আর পারি না।" এভাবে সাতদিন পর জ্বর থামল। এবার আবার শুরু হল খরা। মেয়েটি বাইরে বের হল। তার দামী খেলনা দিয়ে খেলতে। হঠাৎ এমন রোদ বের হল, যে তার মাথাই ফেটে যায়। সে রোদকে ধমক দিয়ে বলল, ইস! কেমন রোদ? একটু খেলতে বসেছি, এখন মাথা ফাটিয়ে দিচ্ছে। যা! কিন্তু রোদ গেল না। মেয়েটি ভীষণ রেগে গিয়ে খেলনা নিয়ে বাড়িতে চলে গেল। মাকে বলল, "শোন মা, রোদ না খুব বাজে। মাথাই পুড়িয়ে দিল।" এ বলে মেয়েটি দামী বাথটবের মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়ল। আর কল ছেড়ে দিল। মা বলল, "করিস কি, করিস কি? ওভাবে ঘেমে এসে কেউ গোসল করতে যায়?" কিন্তু মেয়েটি কথা শুনল না। এরপর তার ঠাণ্ডা লাগল। সেটাও বেশ কিছুদিন পরে থামল। এরকমই আরো নানারকম অসুবিধা হতে লাগল। এরপর সে মাকে বলল, "উহ! মা! ধনী হয়েও শান্তি পাচ্ছি না। একটু খেলতে বেরোলেই রোদ আসে। বৃষ্টি নামে। একদম ভাল লাগে না।" মা মুচকি হেসে বলল, "কিরে, মা! এখন তুমিই বলছ যে, ধনী হলে সমস্যা? তাহলে কি আবার গরীব হতে চাও? রোদ-বৃষ্টি এগুলো তো আসবেই। ঋতু পরিবর্তন কি হবে না? সব কি তোমার কথা শুনবে? তুমি 'যা' বললে রোদ-বৃষ্টি যাবে, আর 'আয়' বললে আসবে; রোদ-বৃষ্টি কি তোমার চাকর নাকি? শুধু গরীব হলে এগুলোতে তোমার কষ্ট হয় না। ধনী হয়েছ, তাই এগুলোতে তোমার কষ্ট হচ্ছে।" মেয়ে মায়ের এত বকবকানি শুনে অস্থির হয়ে গেল। সে মাকে বলল, "উফ, মা! এত জ্ঞান দিও না তো! এত্থেকে গরীব হলেই বেশি ভাল।" এরপর থেকে মেয়েটি গরীব হতেই চায়। একদিন ঘুম থেকে উঠে দেখল, তারা আবার গরীব হয়ে গেছে। প্রথমে তো মেয়েটি বলল, "বাহ! বাঁচা গেল।" এবার সে কয়েকদিন রোদ-বৃষ্টির মধ্যে খেলল, কিন্তু কিছু হলো না। কিন্তু তার আবার গরীবদের খাবার খেতে ভাল লাগে না। নোংরা কুঁড়েঘরে থাকতেও আর ভাল লাগে না। সে আবার ধনী হতে চাইল। ধনী হবার পর আবার গরীব হতে চাইল। এরকম করে কাহিল হয়ে গেল। তার মা বলল, "এমন করছ কেন? সবকিছুতেই কিছু না কিছু সমস্যা আছে। বারবার ধনী-গরীব করে আমাকে আর ক্লান্ত করো না। নিজে তো ক্লান্ত হচ্ছই, আমাকেও ক্লান্ত করছ। চুপচাপ ধনী হবে নাকি গরীব হবে বেছে নাও। নয়তো মানুষকে শুধু জ্বালাতনই করে যাও। যত্তসব!"

Sunday, September 9, 2018

লোভ ও অলসতার ফল

এক ছিল একটি মেয়ে। আর গল্পটি খুব আজব। মেয়েটি একটি বাড়িতে থাকত। তার বাড়ির কাছে একটি পরীর বাড়ি ছিল। পরীকে কিছু দিলে তার বিনিময়ে পরী কিছু একটা দেয়। সবসময় দেয় না। যদি প্রাণ বাঁচানোর মত বড় কোন উপকার কেউ করে, তবেই তাকে পরী সাহায্য করে। কিন্তু মেয়েটি তার বন্ধু হওয়ায় মেয়েটি তার জন্য অল্প উপকার করলেও সে মেয়েটিকে সাহায্য করে। মেয়েটির নাম ছিল নেলী। নেলী ছিল খুব গরীব। সবসময় পান্তা ভাতই তার কলাপাতার (প্লেট) মধ্যে থাকত। সে একদিন পরীর বাড়ি গেল। গিয়ে বলল, "আমার আর গরীব থাকতে ভালো লাগছে না। সবসময় পান্তা ভাতই জোটে। মাঝেমধ্যে কিছুই জোটে না। কেন গো? আচ্ছা, তোমার কি কোন সাহায্য লাগবে? তাহলে কিন্তু আমায় পান্তা ভাত খাইয়ে আর রাখা যাবে না।" পরী বলল, "ঠিক আছে। অনেকদিন হয়ে গেল আমি কোথাও বেড়াতে যাই না। ইচ্ছে করছে এক্ষণি অদৃশ্য হয়ে আধুনিক মানুষের শহরে চলে যাই। গিয়ে দেখি, অনেক দিন আগে গিয়ে যে দেখেছিলাম হাতে ধরা মোবাইল না কি জানি তৈরি করা হয়েছে। না জানি কত কি তৈরি হয়ে গেল। আমার এসব দেখতে খুবই ভালো লাগে। কিন্তু আমার যে একটা ছোট ছাগলের বাচ্চা আছে। ওকে তো নিয়মিত খাবার খাওয়াতে হয়। ওকে মাঠে ছেড়ে দিতে হয়, খাবার নিয়েও আসতে হয়। নদীতেও নিয়ে যেতে হয় গোসল করার জন্য। এসব করবে কে? তুমি যদি এসব কাজ করে দাও এক সপ্তাহের জন্য, তাহলে আমি তোমার ইচ্ছা পূরণ করব।" পরী এরপর শহরে গেল। গিয়ে ঘরে ঘরে কম্পিউটার, স্মার্টফোন এবং ইন্টারনেট দেখতে পেল। আনন্দের সাথেই ৭ দিন কেটে গেল। ওদিকে নেলীও ছাগলের বাচ্চার খেয়াল রাখল। পরী তার সুন্দর ছাগলের বাচ্চাকে দেখতে পেয়ে খুব খুশী হয়ে গেল। সে বলল, "অনেক ধন্যবাদ। আমার ছাগলের বাচ্চাটাকে তুমি অনেক্ষণ দেখে রেখেছ। এবার বলতো, তুমি কি চেয়েছিলে? আগে আগে বললে আমার শুনতে অসুবিধা হয়। এখন তুমি যা বলবে, তাই শুনব।" নেলী বলল, "শোন পরী, আমি খুব গরীব। প্রতিদিন পান্তা ভাত জোটে। সেটা বন্ধ করতে হবে। অন্তত একটু ভালো খাবার তো দাও।" পরী বলল, "শুধু খাবারই কি চাই? তুমি আমার বন্ধু। তাই গিয়ে দেখো, তুমি যা চাচ্ছ তা পেয়ে গেছ।" নেলী ঘরে গেল। গিয়ে দেখল, "তার ঘর ভাঙ্গা কুঁড়েঘর নেই। যত ভাঙ্গা ছিল, সব ঠিক হয়ে গেছে। ঘরের চাল টিনের চাল হয়ে গেছে। আর পুরনো জিনিসপত্র সব নতুন হয়ে গেছে। সে যে পান্তা ভাত রেখে এসেছিল, সেটা ভাত, মাছ-মাংস এবং ডিম হয়ে গেছে।" নেলী সেদিন খুব খুশী হলো। কিন্তু এক সপ্তাহ পেরোনোর পর সে আবার গেল পরীর কাছে। বলল, "আমার না এরকম ভালো লাগছে না। শুধু ভাত, মাছ, মাংস বোরিং হয়ে গেছে। আর তোমার মত ভালো পরীর বন্ধু আমি। আমি গরীব থাকলে কেমন দেখায়? দাও না আমায় আরেকটু ধনী করে।" পরী বলল, "ঠিক আছে, তাহলে আমাকে কিছু পিঠে ভেজে দাও। কারণ, খুব বেশী দূরে নয় সেখানে আমার এক অসুস্থ বন্ধু আছে। সুস্থদের কাছ থেকে আমি কোনকিছুর বিনিময়ে সাহায্য করি। কিন্তু অসুস্থদের তো এমনি এমনিই সাহায্য করতে হবে, তাই না? পিঠেগুলো আমি আমার অসুস্থ বন্ধুর কাছে নিয়ে যাব।" নেলী পিঠেগুলো ভেজে দিল। এবার বাড়ি গিয়ে সে দেখল, তার একটা দোতলা বিল্ডিং হয়েছে। টাইলস দিয়ে বানানো। অনেক সুন্দর বড় বড় বারান্দা। সুন্দর বেডরুম। বিছানাও আছে। আর খাবারের জায়গায় গিয়ে দেখল, রোস্ট আর পোলাও রাখা আছে। সাথে দুধও রাখা আছে। সে খুবই খুশী হয়ে গেল। এভাবে দু'সপ্তাহ কাটল। এবার নেলীর আবার এরকম থাকতে বোরিং লাগা শুরু হলো। সে আবার পরীর কাছে গেল। বলল, "আমার এমনি এমনি ভালো লাগছে না। আমার জন্য একটা কথা বলার টিয়ে পাখি দিতে পারবে? আরেকটা বাগানও দিয়ে দাও। তবেই আমার খুব ভালো লাগবে। জীবনটাই সুন্দর হয়ে যাবে। দাও না গো! কিন্তু তার বদলে কি চাও?" পরী বলল, "ঠিক আছে, আমার বেশি একটা ভালো লাগছে না। তুমি এক কাজ কর। আমার ছাগলটিকে একটু দুধ খাওয়াও। আর আমার বাগানে একটু পানি দিয়ে আস। দেখবে, তুমিও পোষা প্রাণী এবং বাগান পেয়েছ।" সব ঠিকমতই হলো। নেলী বাড়ি গিয়ে দেখল, সুন্দর একটা ফুলেরর বাগান এবং কথা বলা একটা টিয়া পাখি তার বাড়ির সামনেই আছে। কথা বলা টিয়ে পাখি বলল, "তুমি কি আমার নতুন মালিক? তোমার নাম কি নেলী? আমায় কোন শিখাতে হবে না, এমনিতেই সব পারি।" নেলী খুব খুশী হলো। বাগান এবং কথা বলা তোতাপাখি নিয়ে সে আনন্দেই চলল। কিন্তু একদিন তার তাও খারাপ লাগতে শুরু করল। সে আবার পরীর কাছে গেল। গিয়ে বলল, "আমার বাগানের ফুল দিয়ে দুটো মালা বানিয়ে এনেছি। একটা তুমি পর, একটা তোমার ছাগলকে পরাও। কিন্তু আমাকে আরো কিছু দাও, দয়া কর।" পরী বলল, "এতেও মন ভরল না? আচ্ছা ঠিক আছে, গিয়ে দেখ তুমি প্রাসাদ পেয়েছ।" সে প্রাসাদই পেল। অনেক রকম ফুল পেল। এটা তার খুবই ভালো লেগেছিল। তাও এক মাস পর তার এটা আর ভালো লাগে না। সে আবার গেল পরীর কাছে। বলল, "আমাকে আরো অনেক ধনী করে দাও, যাতে আমি বাড়ির মধ্যেও পালকিতে চড়ে ঘুরতে পারি। আমায় এত এত সুখী করে দাও, যাতে আর আমার কোন কাজই করার দরকার পড়ে না। অনেক অনেক সুখী করে দাও।" পরী বলল, "তোমার জেদ তো কম নয়। বন্ধু বলে এত জেদ তো রাখা যায় না। শোন না, তুমি আমার কাছে আর এসো না তো! এসে কেমন আছ, কি করছ- গল্প-টল্প না করে শুধু বলছ, ধনী করে দাও। এসব আর ভাল লাগছে না। আচ্ছা ঠিক আছে, শোন তবে। তুমি তো অনেক কঠিন কঠিন জিনিস চাচ্ছ। কিন্তু বিনিময়ে তো সহজ সহজ জিনিসই তুমি দিচ্ছ। এবার একটু কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে। যদি তুমি আমার কথা শোন, আমি বিনিময়ে যা চাইব তা দিতে পার, তাহলে তোমাকে আমি তুমি যা চাও তা দেব। আর যদি তা না পার, তাহলে কি হবে তা পরেই দেখতে পাবে। শোন তবে। পরীক্ষাটা কি, সেটাই তো বললাম না। পরীক্ষাটা হলো, আমার ছাগলের দুটো পাখা গজিয়ে দাও, যাতে সেও আমার সাথে বেড়াতে পারে। আমার এই জেদটা তোমাকে পূরণ করতে হবে।" এরপর নেলী বলল, "আমি তো আর তোমার মত পরী নই। এটা তো আর আমি করতে পারব না। অন্য কিছু করতে বল।" এবার পরী বলল, "ঠিক আছে, তুমি তো ধনী হতে চাও। আমি তোমায় ধনী করে দেই। কিন্তু তুমি যে বললে, তোমার কোন কাজ করার দরকার হবে না এরকম ধনী করে দেই, তাহলে আমিও বলতে পারি, আমাকে এমন ধনী করে দাও, যাতে আমার পোশাকটুকু পর্যন্ত সোনার হয়। দাও ধনী করে। মানুষের পক্ষে তো কাজটা সম্ভব, কিন্তু টাকায় কুলাতে হবে।" তখন নেলী বলল, "না না না, এটাও যে পারব না। আমি করতে পারব এরকম কিছু দাও।" পরী বলল, "ঠিক আছে, আমি তোমায় আরেকটা কাজ দেব। কিন্তু কাজটা দেব তুমি যা চাইছ তা আমি দেয়ার এক মাস পরে।" তাই হলো। কাজ না করে করে নেলী খুবই অলস হয়ে পড়েছিল। কোন কাজই সে আর করতে চায় না। এবার পরী এসে হাজির হলো। বলল, "আমার কাজের কথা মনে আছে? কাজটা হলো, এই পুরো বাড়িটা একনাগাড়ে দৌড়ে আমাকে দেখাও। থামবে না কিন্তু। তুমি যখন আগে অনেক গরীব ছিলে, তখন এটা তো তোমার কাছে পানির মত সোজা লাগত। এখন দেখাও আমাকে এ কাজটা করে।" নেলী বলল, "ঠিক আছে, আগে তো এ আমার বাম হাতের কাজ ছিল। কিন্তু এখন কেন পারব না? এক্ষুণি দেখাচ্ছি।" সে তখন শুয়ে ছিল। সে দুই হাত জাগিয়ে আড়মোড়া দিয়ে উঠল। সে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়াতে দাঁড়াতেই সে বলল, "পরী! আমি যদি পালকিতে উঠি, আর দাসীরা যদি আমায় দৌড়ে পালকিটা চালিয়ে চক্কর দিয়ে আনে, তাহলে হবে তো?" পরী বলল, "সে কী! আমি যা বলছি, তা করতে হবে। এক-দুই-তিন বলার সাথে সাথে দৌড় দেয়া শুরু করতে হবে। খেয়ে খেয়ে মোটাও তো কম হওনি। এবার দৌড়াও- এক, দুই, তিন।" কিন্তু নেলী দৌড়ানো শুরু করতে পারছিল না। সে দৌড়ানোর জন্য এক ধাপ দিল, কিন্তু তার শরীর ঘুমে ঢলতে থাকল। চোখে শুধু ঘুম আর ঘুম। মোটা হওয়ার কারণে একটু বেশি চেষ্টা করাতে সে মাটিতে পড়ে গেল। তখন পরী বলল, "শোন নেলী! তোমার সব খাবার আমি বন্ধ করে দিলাম, যতক্ষণ না তুমি দৌড়ে দৌড়ে চিকন হয়ে যাচ্ছ। শুধু পানিটুকুই আমি দিয়ে যাচ্ছি।" এই বলে পরী উড়াল দিয়ে চলে গেল। নেলী বলল, "দাঁড়াও।" কিন্তু পরী দাঁড়ালো না। অমনি নেলীর খিদে পেয়ে গেল। সে দাসীকে ডাকল। "দাসী! যাও তো! এক বাটি ফল নিয়ে এসো।" দাসী বলল, "বাটিতে যা ফল ছিল, তা তো এক্ষণি দেখছিলাম। হঠাৎ দেখি ফলগুলো নেই। ফ্রিজও খালি। শুধু পানির বোতলগুলিই রয়ে গেছে।" নেলী বুঝতে পারল, সে কত ভুল করেছে। সে আবার পরীকে ডাকল। "পরী! আমি তোমার বন্ধু। একবার এসো। শুনে যাও। আর কিছু চাইব না। শুধু শুনে যাও।" পরী বুঝল যে, নেলী কি বলতে পারে। পরী উড়াল দিয়ে নেলীর ঘরে গেল। সে বলল, "কি হলো, নেলী? আমায় ডাকছ কেন? এখনো তো দৌড় শুরুই করলে না! তাড়াতাড়ি দৌড় শুরু কর।" নেলী বলল, "না গো না, আর এ অবস্থায় দৌড়াতে পারব না। তোমার বন্ধু হয়ে চাচ্ছি যে, আমাকে চিকন করে দাও।" পরী বলল, "উহ! আর কত কি চাইবে? ঠিক আছে।" পরী রেগে গিয়ে আগে যেরকম পান্তা ভাত খেয়ে কাটাতে হতো, চিকন ছিল, সেরকম নেলীকে করে দিল। সব দাস-দাসী উধাও হয়ে গেল। সে খুবই চিকন হয়ে গেছে। ঘর-বাড়িও ভাঙ্গা চোরা সেই আগের মত হয়ে গেছে। আর কলাপাতার উপর পান্তাভাতই রাখা আছে। নেলী এখন পরীকে বলল, "আমি তোমার কাছে আর কিছু চাইব না। তোমার প্রাসাদ তো তুমি নিয়েই নিলে। তোমার পাখি এবং বাগান- তাও তো নিয়ে নিলে। কিন্তু এবার আমাকে এরকমও করে দিলে। ভালোই করেছ! বন্ধু হয়েও এখন আমাকে আবার গরীব করে দিলে? কি করলে?" পরী বলল, "তোমার সাথে আমার আর কোন বন্ধুত্ব নেই এখন। তুমি দ্বিতীয়বার যেরকম বাড়িতে ছিলে, টিনের চাল আর ভাত-মাছ-মাংস, সেরকমই হয়ে যাও। আর বেশি চাইবে না। তোমার সাথে আমার বন্ধুত্বও শেষ, পুরোপুরি গরীব বা পুরোপুরি ধনী হওয়াও শেষ।" এই বলে পরী নেলীকে দ্বিতীয়বার যেরকম ছিল সেরকম করে দিল। আর পরী উড়াল দিয়ে চলে গেল। তবে এটা নেলীর জীবনে বড় একটা শিক্ষাও ছিল।

Friday, August 31, 2018

পঙ্ক্ষীরাজ গরু ও জোনাকির মালা

এক ছিল এক সুখী পরিবার। সেই পরিবারে থাকত মা, বাবা ও ভাই-বোন। কিন্তু একদিন একটা বড় ঝড় এল। এমন ঝড় এল, যে বাড়িও উড়াল না, মা-বাবাকেও উড়াল না। কিন্তু শুধু ভাই-বোনকে উড়িয়ে নিয়ে গেল। ভাইয়ের নাম ছিল রবি, আর বোনের নাম ছিল ছবি। রবি আর ছবি গিয়ে পড়ল এক আজব জায়গায়। তারা সবকিছু ভুলেও গেল, কিন্তু একে অপরকে চিনত। সেই জায়গায় শুধুমাত্র ছিল একটি কলাগাছ, একটি গরু ও একটি নদী। নদীর পানি ছিল খুব পরিস্কার। খাওয়ার উপযোগী। তাদের মাথায় বুদ্ধি ছিল খুব। তারা ঠিক করল, কলা, দুধ এবং পানি খাবে। এবার এসব খেতে খেতে এক মাস পেরিয়ে গেল। আরো এক মাস পেরিয়ে গেল। এরকম করতে করতে খাবারগুলো তাদের কাছে বোরিং (একঘেয়ে) হয়ে গেল। তাদের আর শুধু এরকম খেতে ভাল লাগে না। তারা কি খাবে? কিন্তু তাদের মাথায় বুদ্ধি ছিল আগেই বলেছি। তাই তারা লাকড়ি যোগাড় করল। মাটি দিয়ে একটি পাত্রও বানালো। পাথরের সাথে পাথর ঘষে এবার আগুন জ্বালালো। তারপর পাত্র আগুনের উপর বসালো। আর পাত্রের মধ্যে দিল কলার থোড়। তৈরি হল সুস্বাদু সবজি। আরো এক মাস এই সবজি খেয়েই কেটে গেল। তারপর তাদের মনে হলো, স্বাদটা ভালো লাগছে না। রবি ছবিকে বলল, "শোন! তোমার কি এটা খেতে ভাল লাগছে? আমার তো আর ভালই লাগছে না।" ছবি বলল, "নতুন একটা রেসিপি তৈরি করা যাক। দুধ আর কলার ভর্তা বানালে কেমন হয়?" রবি বলল, "তাহলে তো দারুনই হয়। খেয়ে দেখে যদি মজা লাগে, তাহলেই তো হয়।" এরপর তারা শুরু করল এবং কলা ও দুধের ভর্তা বানালো। কলা ও দুধের ভর্তা বানিয়ে তারা খেল। এভাবে বদল করে করে অনেকদিন কেটে গেল। একদিন তাদের মনে পড়ে গেল তাদের বাড়ির কথা। ছবি বলল, "এই রবি! তোমার মনে আছে, একটা ঝড় আসল, আর কি জানি একটা হলো? তারপর থেকেই দেখি আমরা এখানে।" তখন রবি বলল, "তাই তো? কি হবে এখন? ভুলেই তো গিয়েছিলাম। এতদিন কিছুই মনে পড়েনি। ভেবেছিলাম, এখানেই জন্ম আমাদের।" এরপর হঠাৎ আকাশ থেকে একটি সুতা পড়ল। আর সুতার সাথে একটা কাগজ বাঁধা। সেই কাগজে লেখা: "এই সুতো দিয়ে কলাপাতা গরুর গায়ে বেঁধে দাও। গরুটা তখন উড়তে পারবে, পঙ্ক্ষীরাজের মতই কাজ করবে। কিন্তু মনে রেখো, সেটা হলো, সেই গরু এমন পথ দিয়ে যাবে, যেই পথ মন্ত্রপুত এবং সেই পথে গেলেই খিদে পায়। সেজন্য খাবার নিয়ে যেতে হবে। আর তখন এমন কিছু নিয়ে যেতে হবে, যেটা কোনদিন খাওয়া হয়নি। সব পরিচিত খাবারই যদি কেউ খায়, তাহলে গরু ওড়া বন্ধ করে দেবে। গরুটা যদি নদীর উপর দিয়েও যেতে থাকে, তাহলেও গরুটা নদীর মধ্যে গিয়েই পড়বে। সবগুলো ধাপ ঠিকমত মেনে চললে তবেই তোমরা বাড়ি পৌঁছাতে পারবে এবং মা-বাবাকে দেখতে পাবে। যত তাড়াতাড়ি চাও, তত তাড়াতাড়ি গোছগাছ শুরু করে দাও।" রবি ও ছবি দুজনেই কাগজটা ভাল করে পড়ল। একে অপরের দিকে তাকালো। তারপর রবি বলল, "প্রথম কাজটা তো খুবই সহজ, সুতো দিয়ে কলাপাতা গরুর গায়ে বেঁধে দিতে হবে। কিন্তু নতুন খাবার আর কি আছে। আসলে আমরা খাবার বদলে বদলে ভুল করে ফেলেছি। এখন তাহলে কি করা যায়?" তখন ছবির মাথায় একটা বুদ্ধি আসল। সে বলল, "এত তাড়াতাড়ি হাল ছেড়ে দিচ্ছ কেন? নিশ্চয়ই আশেপাশে কিছু একটা আছে।" তারপর হাঁটতে হাঁটতে দেখল, দূরে অনেক মাছি ওড়াওড়ি করছে। ছবি দেখতে গেল। গিয়ে দেখল, একটা ছোট্ট গাছ। সেই গাছে আঙ্গুরের মত দেখতে কিন্তু বাদামের মত শক্ত একটা ফল। আর কয়েকটা নিচে পড়ে গেছে, আর গন্ধটাও খুব সুস্বাদু। আর ওগুলোর চারপাশ দিয়েই মাছি শুধু ঘোরাঘুরি করছে। ছবি কিছু কিছু ফল নিয়ে নিল। রবিকে সব ঘটনা বলল। রবিও গিয়ে কিছু ফল তুলে আনল। কলাপাতা বাঁধার পর দু'জনেই গরুর পিঠে উঠে বসল। আর গরুটি উড়তে শুরু করল। তারা উড়তে থাকল, কিন্তু তাদের খিদেই পাচ্ছিল না। এক জায়গায় এসে হুট করে অনেক খিদে পেয়ে গেল। তারা ফলগুলো খেতে শুরু করল। কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি তা শেষ হয়ে গেল। এখন তাদের তরল কিছু খেতে ইচ্ছে করছে। কি খাবে? ভেবেই পাচ্ছে না? এমন সময় তারা দেখতে পেল, একটা মৌচাক। মৌচাক থেকে টুপ টুপ মধু পড়ছে। অমনি তারা গরুটি নিচে নামিয়ে মৌচাকের কাছে হা করে বসল। আর কয়েকটা ফোঁটা তাদের মুখে পড়তে না পড়তেই গরুর কলাপাতাগুলো ছিড়ে গেল। এরপর তারা নিচেই বসে রইল। তাও ভাল, একটু নিচে এসে পড়ল। নাহলে তো মরেই যেত। এখন একে অপরকে বলাবলি করল, "ইস! কেন যে মধুটা খেতে গেলাম? তুমি আমাকে মনে করিয়ে দিলে না?" "আরে, আমি কি মনে করাব, তুমিই তো মনে করালে!" এরকম করে ঝগড়াই করতে লাগল। অবশেষে ঝগড়া থামল। এখন তারা কি করবে? ভেবেই পাচ্ছিল না। হঠাৎ তাদের মাথায় একটা বুদ্ধি এল। সামনেই এক নদী। আর নদী পেরোনো যাবে চারপাশের কাঠ দিয়ে নৌকা বানালে। তারা তাই করল। নদী পার হয়ে গেল। তারপর তারা আবার একটা গুহা দেখল। সেই গুহার মধ্যে তারা ঢোকার চেষ্টা করল, কিন্তু পারল না। গুহা পুরো খোলা, তাও ঢুকতে পারছে না। বোধহয় কোন অদৃশ্য দরজা। হঠাৎ টাকাটাকি করতে করতে ভিতর থেকে আওয়াজ আসল। কে যেন বলে উঠল, "কে রে আমার গুহায় ঢুকতে চাচ্ছে? কে আমার গুহায় ঢুকতে চাচ্ছে, নামটা বল শুনি? ভয় পেয়ো না, কিছু বলব না। কিন্তু নামটা বল। টাকাটাকি করছ কেন? শুধু নামটা বল, টাকাটাকি করো না।" ওরা জবাব দিল, "আমরা দু'জন রবি আর ছবি। কিন্তু তুমি কে?" অদৃশ্য দরজা খুলে গেল। রাক্ষসের মত একজন মানুষ এসে দাঁড়ালো। সে বলল, "আমায় দেখে ভয় পেয়ো না কিন্তু। কি হয়েছে, আমাকে বল। আর দাসী, তুমি বাইরে চলে এসো। এরা কি করতে এসেছে, তা জিজ্ঞাসা কর।" একটু পর একটা পরী আসল। সে বলল, "কি গো? কিছু বুঝতে পারলে তোমরা দুজন রবি আর ছবি? আমার চুল দেখেও কিছু বুঝতে পারলে না? আসলে এই দৈত্যই তো আমাকে পাঠিয়েছিল তোমাদেরকে সাহায্য করার জন্য। কিন্তু তোমরা এটাও চিনতে পারলে না? যে রশিটা কাগজের সাধে বেঁধেছিলাম, সেটা আমারই চুল। কিন্তু তোমরা ভুল কাজ করেছ। মধুটা খেলে কেন? এবার আমি কি করব? চলে যাও এখান থেকে। বিরক্ত করো না। আর এদিকে এসো না। যেখানে খুশী যাও। সাহায্য করতে চেয়েছি, সবকিছূ তো মানলেও না।" এই বলে আর অদৃশ্য দরজা নয়, বরং দৃশ্যমান দরজাই পরী বন্ধ করে দিল। রবি আর ছবি কি করবে? এমন সময় একটা জোনাকি পোকা আসল। জোনাকি পোকা এই রূপকথার রাজ্য ছেড়ে মর্ডার্ন রাজ্যে গিয়েছিল। অর্থাৎ, আমাদের এই সমাজে। সেখানে গিয়ে সে বিজ্ঞানীদের কাছ থেকে একটা Animal Talking Converter নিয়ে আসল। এরপর রবি ও ছবির সাথে কথা বলা শুরু করল। সে বলল, "শোন রবি ও ছবি! আমি তোমাদের সাহায্য করতে চাই। কি চাও তোমরা, বল? কিন্তু সেজন্য আমার একটা কাজ করে দিতে হবে। করবে নাকি আগে বল।" তখন রবি বলল, "ঠিক আছে! যদি আমরা কাজটা করতে পারি, আমাদের বাড়ির পথ দেখিয়ে দিও।" জোনাকি পোকা বলল, "শোন তবে। আমার অনেকদিনের শখ, গলায় একটা মালা পরব, কিন্তু আমার সাইজের মালা কোথাও নেই। তাই তা তোমাদের বানিয়ে দিতে হবে। তাহলে আমি তোমাদের বাড়ির পথ দেখাব।" রবি ও ছবি হেসে ফেলল। জোনাকি বলল, "হাসার কি হলো? আমার কি শখ-আহলাদ থাকতে নেই? এই তো ছবি একটা মালা পরে আছে। কী সুন্দর! আর আমার সাইজের মালা কেউ বানায় না! একদম হাসবে না। হাসলে কিন্তু পথই দেখাবো না। দাও, আমায় আমার সাইজের মালা দাও।" ছবি রবিকে বলল, "এ তো আমার বাম হাতের কাজ। আমি এক্ষণি বানিয়ে দিচ্ছি। তুমি দেখ, জোনাকি পোকা কোথাও হারিয়ে না যায়।" এই বলে ছবি একটা শিউলি ফুল নিল। পাঁপড়িগুলোকেও ছোট ছোট ভাগ করল। এরপর একটু একটু করে মালাটা গেঁথে শেষ করল। জোনাকি পোকাকে বলল, "এই নাও, তোমার মালা। তুমি এখন সেজেগুজে আমাদের পথ দেখিয়ে দাও। নাহলে কিন্তু আবার তোমার ঐ মালা ছিড়ে দেব, আর বানিয়ে দেব।" জোনাকি পোকা বলল, "আমি কি কথার খেলাপ করি নাকি? চল, আমার পিছ পিছ আস। কিন্তু অন্য কোথাও মনোযোগ দিও না। আমি কিন্তু খুব দ্রুত উড়ি। একটুতেই কিন্তু হারিয়ে যেতে পারি। না দৌড়ালে আমার সাথে তাল মেলাতে পারবে না। তাহলে দৌড় দাও।" এই বলে জোনাকি ওড়া শুরু করল। ছবি ও রবি পিছ পিছ দৌড়াতে শুরু করল। এরপর তারা খুবই সাবধান ছিল। আগে যেমন ঠিক ঠাক কাজ করেনি, এবার তা করলে চলবে না। অবশেষে তারা বাড়িতে পৌঁছালো। মা-বাবা তাদের পেয়ে বলল, "কোথায় ছিলি এতদিন? কোথায় গিয়েছিলি? কেন গিয়েছিলি? রাতে তো ঝড় এল। তার পরদিন থেকেই তোরা নিখোঁজ। তোদের পাওয়াই যায় না। কত খুঁজেছি তোদের? কোথায় গিয়েছিলি তোরা?" রবি ও ছবি একটু বিশ্রাম নিয়ে পুরো ঘটনাটা মা-বাবাকে বলল। এরপর মা-বাবা বলল, "ভাগ্য ভাল তোরা ফিরে আসতে পেরেছিস। তাও ভাল জোনাকির কথা মেনেছিস। কিন্তু জোনাকির মালার কথাটা কিন্তু খুব মজার ছিল। তোরা ফিরে এসেছিস, এটাই আমাদের সান্ত্বনা।"

Saturday, August 11, 2018

কলমি শাক আবিস্কার

এক ছিল এক গ্রাম। সেই গ্রামে জলাশয়ের কোন অভাব ছিল না। কিন্তু সেই দেশের লোকেরা একটা জিনিসে বিরক্ত হতো। কারণ বেশির ভাগ জলাশয়েই জঙ্গল হতো। আসলে সেগুলো কলমি শাক ছিল। সেই দেশের মানুষ তাকে খাদ্যই মনে করত না। এটা নিয়ে তারা কখনো ভাবেইনি। তারা ভেবেছে এসব হয়তো জঙ্গলী গাছ। পাশের দেশে আবার খাদ্যের খুব আভাব। অনেকে না খেয়ে মরে যাচ্ছে। তাদের খাবার খোঁজারও শক্তি ছিল না। না খেয়ে অনেক কাহিল ছিল। সবারই অসুখ খাবারের অভাবে।একজন ছিল খুব শক্তিশালী। সে ভাবল, আমার ভাই বোনদের আর মরতে দেয়া চলে না। এই ভেবে সে সবার বাড়ি গেল। বলল,"তোমাদের চার ভাগ খাবারের এক ভাগ কি আমায় দেয়া যায়।ভায়েরা, তোমাদেরই লাভ। আমার শক্তি হলে তোমাদের সবার জন্যই খাবার আনব। তখন পেট ভরে খেয়ো।চার দানা ভাতের এক দানা আমায় দাও।" সবাই তাকে চার ভাগের এক ভাগ খাবার দিল। কেউ খুশি হয়ে দুই ভাগও দিল। লোকটি সব খাবার খেয়ে একটু তরতাজা হলো। তারপর সে পাশের দেশে খবর নিতে গেল। সে এত্‌তো জলাশয় দেখে খুব খুশি হল। তবে আসল খুশি হলো কলমি শাক দেখে। কিন্তু সে ভাবতে লাগল, ইস! এরা কি এসব নেয়ার অনুমতি দেবে? টাকা ছাড়া? এটা ভাবতে ভাবতেই একজন লোক আসল। হয়ে গেল মেঘ না চাইতেই জল। সে বলল, "ভাই! দেখুন তো, আমার তিনটে জলাশয়। তিনটে জলাশয়ের মধ্যেই এসব জঙ্গল বেরিয়েছে। আপনি মেহেরবানি করে আমার এ জলাশয় তিনটি একটু পরিস্কার করে দিতে পারেন? আমি আপনাকে এর জন্য টাকাও দেব।" লোকটি খুশীর চোটে আত্মহারা হয়ে গেল। কিন্তু সে ভালো লোকও ছিল। তবে চালাকও ছিল। সে আগে বলল, "ঠিক আছে।" এই বলে সে সব জঙ্গল সাফ করল। সে তো খুশীই হলো যে, কলমি শাক খেয়ে না জানি কত্‌তো খুশি হবে সবাই! আর বাকি যে টাকা, তা দিয়ে চাল কিনব। ভাত দিয়ে কলমি শাক খাবে সবাই। বেশ মজা হবে।" সে জঙ্গল পরিস্কার করার পর টাকা নিয়ে মনের আনন্দে নিজের দেশে ফিরে গেল। সবাইকে খাবার খাওয়ালো। সবাই খুব খুশি হলো। কিন্তু লোকটি ভালো লোক হওয়াতে সে আবার ঐ দেশে গেল। সে বলল, "ভাইসব! তোমরা একটা কথা শুনবে? এমন কোন পুকুর কি তোমাদের কাছে আছে, যাতে সবসময় তোমরা যেটাকে জঙ্গল বল সেটা হয়?" তখন একজন বলল, "উত্তর দিকে অনেক এরকম জলাশয় আছে।" তখন লোকটি বলল, "ঠিক আছে। এর অর্ধেক সংখ্যক জলাশয় আমার কাছে বিক্রি করে দিতে হবে। তাহলে তোমাদেরকে আমি এক নতুন খাবারের সন্ধান দেব। এতে তোমাদের জলাশয়ও পরিস্কার থাকবে, আবার পেটও ভরবে। বুঝতে পেরেছ নিশ্চয়ই? নাকি আরো সহজ ভাষায় বলে দেব?" সবাই বুঝে গেল। সেই দেশের মানুষ আবার সৎ ছিল। সে অর্ধেক সংখ্যক জলাশয় তার কাছে বিক্রি করে দিল। আর বাকি জলাশয় থেকে শাক উঠিয়ে উঠিয়ে প্রথমবারের মত রান্না করে খেল। তারপর বলল, "ভাই! তুমি একটা বড় উপকার করলে। তোমাদের দেশের মতনই মাঝেমধ্যে আমাদের দেশেও খাবারের আকাল পড়ে। আমরা আসলে ভাবতাম, জঙ্গল না হয়ে যদি কোন খাদ্য হতো! আসলে এগুলোই দেখি খাদ্য। কেন যে আগে বললে না!" তারপর লোকটি অর্ধেক সংখ্যক জলাশয় কিনে নিয়ে মনের সুখে দেশে ফিরে গেল। আর সে ঐ জলাশয় থেকেই সবাইকে একটু একটু করে সবাইকে সবসময় শাক দেয়। কারো দরকার হলেই একটুখানি দিয়ে দেয়। আর যেই দেশের লোকেরা এটা খাওয়া জানত না, তারাও এখন এসব খেতে পারে, আর খাবারের আকাল পড়লেও কলমি শাক খেয়ে বাঁচে।

Friday, August 10, 2018

মোটকা ছেলে আর শুটকি ছেলে

এক ছিল এক লোক। তার ছিল দুই ছেলে। তবে দুইজন খুবই আলাদা। একজন সুইয়ের মতন শুটকি, আবার আরেকজন ঢোলের মতন মোটকা। মোটকার তো নড়তে চড়তে সময় লাগে, এটা হলো তার সমস্যা। আর সে শুটকির গায়ের উপর পড়লে শুটকি হেরে যায়, এটা শুটকির সমস্যা। তবে শুটকি হেরে গেলে সেটা আবার মোটকা পছন্দ করে। আবার শুটকি নিজেও শুটকি, তার নখও শুটকি আর ধারালো। মোটকার সাথে যখন সে পারে না, তখন নখ দিয়ে একটা খোঁচা দিয়ে দেয়। তখন মোটকা আবার হেরে যায়। এই নিয়ে লোকটির ভীষণ সমস্যা। তার ছেলেরা ২৪ ঘন্টা মারামারি করে। খেতে বসলেও একজন আরেকজনকে গুঁতা দেয়। মোটকা তো খাওয়ার সময় শুটকিকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে চায়, আর শুটকি শুধু নখ দিয়ে মোটকাকে গুঁতাতে চায়। ঘুমাতে গেলেও শুটকি নখ দিয়ে মোটকাকে খোঁচায়, আর মোটকা শুধু শুটকিকে চেপে ধরতে চায়। সেইজন্য লোকটি সবসময় মাঝখানে শোয়। যাইহোক, ছেলেরা বাবার কাছে আবার ভদ্র। বাবার সাথে আর কিছুই করতে পারে না। তবে বাবার মাথার উপর দিয়ে মাঝেমধ্যে দু'জনেই মুখ উঠিয়ে চোখ রাঙিয়ে একে অপরের দিকে তাকায়। বাবার এই এক সমস্যা। স্কুলে পাঠালেও সবসময় স্কুল থেকে বের করে দেয়। দু'জন মিলে সবসময় গুঁতাগুঁতি করে, এটা টিচারের সহ্য হয় না। আবার মোটকা যখন শুটকির মত অন্য কাউকে দেখে, তখন সে ভুল করে তার দিকে হাত বাড়িয়ে চেপে ধরতে নেয়। আর শুটকিও মাঝে মাঝে মোটকার মত অন্যদের নখ দিয়ে অন্যদের খোঁচা দিতে নেয়। কিন্তু সত্যি সত্যি দেয় না। এজন্য টিচার শুধু তাদের বের করে দেয়। তাদের বাবা তো মহা সমস্যায় পড়ল। কী করবে? হঠাৎ সে একটা বুদ্ধি পেল। সে বলল, "যে করেই হোক, দু'জনকে সেইম সাইজের করতে হবে। কিন্তু কিভাবে করব?" এরপর সে একটা বই পেল। বইতে লেখা, "বেশি মোটা হওয়া ভাল নয়, এজন্য কেউ বেশি মোটা হয়ে গেলে খাওয়া কমাতে হবে আস্তে আস্তে। আর বেশি শুটকি হওয়াও ভাল নয়, সেজন্য বেশি বেশি খেতে হবে।" তাদের বাবা এই বইটা পেয়ে অনেক খুশি হলো। সে এক কাজ করল। দু'জনের থালা বদলে দিল। শুটকির কম খাবার দিয়ে দিল মোটকার পাতে, আর মোটকার বেশি খাবার দিয়ে দিল শুটকির পাতে। যাই হোক, তারা তাদের বাবার কথা অমান্য করতে পারবে না, কিন্তু "দু'জন ঝগড়া বা মারামারি করো না"- এই কথাটা সবসময় অমান্য করে, যেহেতু এটা তাদের অভ্যাস। তারপর মোটকা ছেলেটি বাবাকে জিজ্ঞেস করল, "এ কি? শুটকির থালা আমায় আর আমার থালা শুটকিকে, ব্যাপারটা কি? এত কম খাবার খেয়ে আমি থাকব কি করে, শুনি?" তখন তার বাবা যাতে তার ছেলেরা খায়, এজন্য একটি মিথ্যে কথা বলল। সে বলল, "কম খেলে নাকি বেশি মোটা হওয়া যায়। যাতে তুমি শুটকিকে আরো বেশি করে হারিয়ে দিতে পার। আর শুটকি যদি এখন থেকে বেশি খাবার খায়, তাহলে সে আরো বেশি শুটকি হয়ে যাবে, একেবারে মাইক্রোস্কোপ দিয়েও দেখতে পাবে না। আর অত যদি ছোট হয়, তাহলে ওর গুঁতা তুমি পাবে কি করে? খেয়ে নাও।" মোটকা ছেলেটি তো খুশি হয়ে বাবাকে বলল, "ঠিক আছে, আমার পাত থেকে আরো ক'টা খাবার নিয়ে শুটকিকে দিয়ে দাও।" বাবা খুশি হয়ে তাই করল। শুটকি আবার বলল, "এহ! কী বল? আমি নাকি মাইক্রোস্কোপ দিয়েও দেখার যোগ্য হব না, না? আমার পাত থেকে ওকে উঠিয়ে দাও।" তখন বাবা বলল, "আচ্ছা, ঠিক আছে।" এই বলে বাবা সবাইকে সমান দিল। তবে শুটকির থালায় ২% বেশি আর মোটকার থালায় ২% কম। তবে বাবা দুইজনের কানে কানে গিয়েই এখন থেকে বলে যে, "বেশি খেলে শক্তিশালী হবে, আবার কম খেলেও শক্তিশালী হবে।" দুইজনকে দুই রকম কথা বলে। এরকম করতে করতে তার ছেলেরা এক পর্যায়ে সমান হয়ে গেল। এখন তারা আর ঝগড়াঝাটি করতে পারে না। একজন আরেকজনকে গুঁতালে আরেকজন একই শক্তিতে গুঁতায়। কেউ চ্যাপ্টাও হয় না, আবার কেটেও যায় না।

Thursday, July 26, 2018

অহংকার ও ঢংয়ের ফল

এক ছিল একটি বালিকা বিদ্যালয়। সেই স্কুলে অনেক ছাত্রীই পড়ত। তার মধ্যে কয়েকজনের নাম হলো রেহেনা, তাশফিয়া, দিবানিশি এবং মাইশা। তাদের মধ্যে রেহেনাই ছিল বেশি ধনী। তার সাথে সে যেমন ধনী ছিল, তেমনই হিংসুটে ছিল। নিজের কিছু একটা থাকলে অন্যের সেটা না থাকলে অন্যকে সে চেতাতো (ক্ষেপাতো)। একদিন হলো কি, আজকে নতুন ক্লাসে সবার প্রথম ক্লাস। সবাই তৈরি হয়ে এসেছে। রেহেনা সবাইকে জিজ্ঞেস করল, "এই! তোরা সবাই টিফিনে কী এনেছিস? বল দেখি!" তাশফিয়া বলল, "আমার কি আর তোর মত সৌভাগ্য রে? আমরা তো গরীব। তাই কী আর আনব? তেমন কিছুই নয়। শুধু তিন টুকরো গাজর। যা পেড়েছিলাম আর কি।" এরপর দিবানিশি বলল, "তুই বুঝি খুব ভাল টিফিন এনছিস, রেহেনা? আমি তো কিছুই আনতে পারলাম না। দেখি, এখন কী করা যায়। তবে ছোট্ট একটা খেজুর আমার সাথেই আছে। এতেই আমার হয়ে যাবে।" শেষে মাইশা বলল, "আমি আর কী আনব? আমি তো কিছু আনতেই পারলাম না। শুধু একটা মাত্র মটরশুটি। যা আমাদের পাশের বাড়ির ফুপু দিয়ে গিয়েছে।" রেহেনা সবার কথা শুনে হাসতে লাগল আর তামাশা করতে লাগল। বলতে লাগল, "এ মা! তাশফিয়ার বুঝি তিন টুকরো গাজর খেয়েই পেট ভরে যাবে! ছি! তোরা আমার ধারেকাছেও নস। দিবানিশি! শোন্, তুই নাকি ঐ ছোট্ট একটা মাত্র খেজুর খেয়ে ৯ ঘন্টা থাকবি। আশ্চর্য তো? কিছু নেই, নাকি? এত গরীব জীবনে দেখিনি। আর মাইশা, তুই কী রে! পাশের বাড়ি থেকে ক'টা মটরশুটি দিল, তা থেকে মাত্র একটা কেন আনলি? আশ্চর্য তো! আমার তো ১০০ টা মটরশুটি খেলেও হবে না। ধূত! এত গরীবের বন্ধু কি করে হলাম?" তাশফিয়া বলল, "রেহেনা! এত অহংকার ভাল না। তুই কি এনেছিস, সেটা আগে শুনি দেখি। এত যখন কথা বলছিস! বল্ কি এনেছিস?" রেহেনা বলল, "কী রে বাবা! এটুক ধারণাও নেই? এনেছি তো ১০টা চিকেন রোল, ২ বাটি বিরিয়ানি, মাছের মাথা এবং মাছের ডিমসহ মাছের ভাল ভাল পিস, দুই টুকরো রোস্টও সাথে এনেছি। আরো একটা ডিম পোচ। ভাবছিস কি, মাত্র এইটুকু এনেছি? আরো কত যে বাকি রইল বলা। হোটেলের ভেজিটেবল এনেছি। তার সাথে এনেছি একটা বড় পিজা। আবার দুটো বার্গার, তিনটি হটডগ। আর এনেছি এক বোতল কোল্ড ড্রিংকস। তোদের কথা ভাবলেই আমার ঘৃণা করে। তোরা আমার সাথে পড়িস? কী একটা ছোট খেজুরের টুকরো, তা খেয়ে নাকি ৯ ঘন্টা থাকবে? আর হ্যাঁ, এক প্যাকেট মাশমেলোজও কিন্তু এনেছি।" দিবানিশি আবার গরীব হলেও একটু কথা জানত। সে বলল, "এই জন্যই তো বলি, ব্যাগ ভারি, এত বই-খাতা আনিস, তাও পরীক্ষায় বারবার ফেল করিস। ব্যাগ কেন এত ভারি, এখন বুঝলাম। তুই ব্যাগ ভরে শুধু টিফিন আনিস। আর বই-খাতা কোনরকম বটলি পাকিয়ে যত কম নেয়া যায়, তত চেষ্টা। দেখি তোর ব্যাগটা? এ মা, তোর ব্যাগে তো পাঁচটা পার্ট। চারটা পার্টই দেখি জমিয়ে খাবার ঢুকিয়েছিস। আর একটাতে কোল্ড ড্রিংস, আর পানির বোতল, আর ছোট্ট একটা খাতা, আর কুট্টি একটা পেন্সিল; আর কিছু তো না! তোর পেট সত্যি তোর পেট তো, নাকি কোন রাক্ষস এসে পেট বদলে দিয়ে গেছে?" রেহেনা রাগের চোটে বলল, "এখন আমি খাব, জ্বালাবি না। এনেছে কতটুক একটু টিফিন, আবার ঝগড়া বাধায়। বুঝিস না, আমার সাথে ঝগড়া করলে কি হতে পারে, জানিস? আমার বাবা কী, জানিস? আমার মা কি, তাও তো জানিস না। বাবা আদালতে কাজ করে, আর মাও আদালতে কাজ করে। আমার মা-বাবা কিন্তু টিপে ভর্তা করে দিতে পারে তোদের। এখন কথা বলিস না, যা, যা। আমি এখন সব টিফিন বের করব। আমার তিনটা বেঞ্চ লাগবে টিফিনগুলো রাখতে। তোরা উঠে তোদের সিট দিয়ে যা। গরীবের আবার বসে বসে খেতে হবে নাকি? এত যখন কষ্ট সহ্য করিস, এটুক করবি না? যত্তসব!" সবাই আর কী বলবে? তারাও জায়গা ছেড়ে দিল। তার খাবার ব্যাগ থেকে বের করে বেঞ্চে রাখতে রাখতেই তো আধা ঘণ্টার দশ মিনিট পেরিয়ে গেল। তো কি? সে দুই সেকেন্ডেই সব খাবার শেষ করে দিতে পারবে। তার যা চালু মুখ আর চালু পেট। সে সবার আগে মাশমেলোজের পুরো প্যাকেটটাই মুখের ভিতর ঢুকিয়ে দিল। দুই সেকেন্ড পর মুখ থেকে খালি প্যাকেট বের করে আনল। এরপর দু'মিনিটে গপাগপ করে মাছ, মাংস ও ডিম খেয়ে ফেলল। আর এক মিনিটে দুই বাটি বিরিয়ানিও শেষ করে ফেলল। তারপর গবগব করে সবগুলো চিকেন রোলই খেয়ে ফেলল। তারপর ভেজিটেবল খেল। তারপরও সে বলল, "খিদেটা তো কিছুতেই যাচ্ছে না। কি যে করি, এখনো তো অনেক খাবারই রয়ে গেছে, সে সবই খাই। সে কোল্ড ড্রিংস গবগব করে সবটা খেয়ে ফেলল। এরপর গোটা পিজাটা সে মুখের ভিতর ঢুকিয়ে দু' সেকেন্ডেই তাড়াতাড়ি চাবিয়ে গিলে ফেলল। এরপর সে আধা মিনিটে দুটো হটডগ খেয়ে ফেলল। সব খাবারই সে চেটেপুটে এরপর খেয়ে নিল। তারপর পানি খেয়ে রেখে তবেই উঠল। সে বলল, "ইস! কেন যে এত্ত কম খাবার দিল? ছিছিছিছি, মান-সম্মান আর কিছু থাকল না। আনার কথা ১০০ ভাগ। ১০০ ভাগের মাত্র দুই ভাগ দিয়েছে আজকে টিফিনে। আরো তো খেতে ইচ্ছে করছে, কী খাব? সে গেল। গিয়ে বলল, "তোদের প্রত্যেকের টিফিনের চার ভাগের তিন ভাগ আমায় দিয়ে দাও, দিয়ে দাও বলছি? নইলে আমার বাবা-মা কিন্তু আদালতে নিয়ে গিয়ে কঠিন শাস্তি দেবে। দাও, বলছি!" তখন সবাই বলল, "এহ! কি বলিস কি? তুই পেট ভরে খেতে থাকবি, আর আমরা বসে বসে দেখব? আমরা ততক্ষণে কবেও খাবার শেষ করেছি!" এরপর রেহেনা খুব রেগে গেল। বলল, "১০০ ভাগের ৫০ ভাগ অন্তত আমায় খেতে হবে। মা কত টিফিন আমায় দিতে হবে, তাও বোঝে না। কিনে তো দিয়েছে শুধু একটা লাগেজ ব্যাগ, সেই লাগেজ ব্যাগে করেই যতটুকু ভরে, ততটুকু টিফিন দেয়। উহ! এখন যে কী করি?" ভাবতে ভাবতে সে একটা বুদ্ধি পেল। টিচার তো একটা ব্যাগ তার হ্যান্ডব্যাগের সাথে পিনআপ করে রেখেছে। তার ব্যাগের মধ্যে ছিল অনেকগুলো টি-ব্যাগ। আর ছিল এক বড় প্যাকেট আইসিং সুগার। টিচার আবার একটু ঢঙ্গু ছিল। শুধু সুগার দিলে গলতে শুরু করে, এজন্য সে আইসিং সুগার ব্যবহার করে। রেহেনা গিয়ে চুপে চুপে তাড়াতাড়ি আইসিং সুগারের প্যাকেটটা নিয়ে নিল। সব আইসিং সুগার একবারে মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে নিল। তারপর বলল, "উহ, বাবা! ১০০% এর ২০% তো খাওয়া হলো। এবার বরং সিটে বই-খাতা নিয়ে বসি। অন্য বন্ধুরা তো খাওয়া শেষ করে লেখাও শেষ করে খাতা জমা দিয়ে দিয়েছে। আমি তো বোর্ডেরটাই শুরু করিনি, নিজে যেটা লিখতে হবে সেটা কখন লিখব? সে তাড়াতাড়ি করে খাতা বের করে লিখতে শুরু করল। ঘন্টা বাজল। কিন্তু লেখা শেষ হলো না রেহেনার। সে শুধু বারবার ঘুমিয়ে পড়ছিল। টিচার এসে এসে তাকে ডেকে দিচ্ছিল। সব বন্ধুরা তো রেহেনা যখন দেখছিল না, তখন তাকে দূর থেকে একটু ভেংচি কেটে চলে গিয়েছিল। রেহেনা তো লিখতেই পারছে না। অবশেষে এক ঘন্টা পর সে বোর্ডের লেখা শেষ করল। এখন নিজে বানিয়ে লেখার পালা। তখন সে টিচারকে বলল, "মিস! শোনেন, আপনি একটু দেখুন তো যে, পাশের ক্লাসে টিচার ঠিকমত ক্লাস নিচ্ছে কিনা! আমার তো মনে হচ্ছে না। কারণ, আগের ক্লাসে ছুটির পর আমি পাশের ক্লাসের বাচ্চাদের দেখেছিলাম। জিজ্ঞেস করেছিলাম পড়া, একটুকুও পারেনি। বোধহয় ঠিকমত পড়াচ্ছে না, গিয়ে দেখুন তো!" ক্লাসের মিস তা দেখতে চলে গেল। এই ফাকে রেহেনা টেবিলে গিয়ে অন্যদের রাখা খাতাগুলো দেখে নিল। সে একটা খাতা পট করে নিয়ে নিজের স্কার্টের ভিতর লুকিয়ে নিল। যখনই সে পারে না, তখনই সে স্কার্টটা একটু উঁচু করে দেখে আবার স্কার্টটা ঠিক করে দেয়। হঠাৎ তার লেখা শেষ হলো। সে নিজের খাতার নিচে আরেকজনের খাতাটা রেখে টিচার যখন খেয়াল করছিল না, তখন পট করে গিয়ে জমা দিল। টিচার তাকে ছুটি দিয়ে দিল। রেহেনা বাসায় ফিরে গেল। সেই যে সে পুরো এক প্যাকেট আইসিং সুগার খেয়েছিল, সেই জন্য হল তার ডায়াবেটিস। তার পুরো পরিবার ঢঙ্গু হবার কারণে সেই এলাকার সেরা ডাক্তার খোঁজা শুরু করল। তা খোঁজার জন্য লোক পাঠালো। সেইজন্য টাকা গেল। এই ক'টা দিনের জন্য তার মা-বাবাও কিছুটা সময় চাকরি ছেড়ে দিল বাচ্চার দেখাশুনা করার জন্য। সেরা ডাক্তার তো সাধারণ মানুষের ঘরে এসে রোগী দেখতে চাচ্ছে না। সেজন্য এক্সট্রা টাকা দিতে হলো। তার মা-বাবা ঢঙ্গু হবার কারণে অনেক টাকা খরচা গেল। মিষ্টি ওষুধ দিন, সুস্বাদু ওষুধ দিন যাতে খাওয়াতে কষ্ট না হয়, যাতে আগ্রহ করে খায়, আবার যাতে চুরি করেও না খেয়ে ফেলে। ইত্যাদি সুবিধা সব লাভ করতে গিয়ে বেশির ভাগ টাকাই গেল ফুরিয়ে। সেরা ডাক্তার যখন দেখল, মা-বাপ ঢঙ্গু, বেশি টাকা আদায় করা যাবে, তখন সেও আবার চালাকি শুরু করল। ২০০ টাকার কাজ ২০০০ টাকা চাইল। এখন সে তো একটাই ইস্যু দিতে পারব। সেটা হল সেরা ডাক্তারের সেরা চিকিৎসা দেবে, তাতে বেশি দাম দিতে হবে না? এই ইস্যু। এরপর অনেক অনেক টাকা খরচ গেল। এতদিন মা-বাবার আদর পেয়ে পেয়ে রেহেনা আবার খুব লাই পেয়ে গিয়েছিল। সে তখন খারাপ লাগার অভিনয় করতে লাগল, যদিও তার অসুখ সেরে গিয়েছিল, যাতে মা-বাবা চাকরি ছেড়ে তার কাছে সময় কাটায়। এইভাবে তারা গরীব হয়ে গেল। একই সাথে, অন্য বন্ধুরাও কাজ করে করে ধনী হয়ে গেল। আগে রেহানা ও তার বন্ধুদের সাথে যা ঘটেছে, তার পুরো উল্টোই হয়ে গেল। শুধুমাত্র এই ঢংয়ের জন্য আর রেহানার অহংকারের জন্য।

Thursday, July 19, 2018

আল্লাহর দয়া

এক ছিল একটি মেয়ে। তার নাম ছিল নিশি। নিশি তার মাকে জিজ্ঞেস করল, "মা! আল্লাহর উপর আমরা কিভাবে খাবারের জন্য ভরসা করি, বলতো?" মা তো প্রথমে ভাবল, এমনি পারে না তাই বলেছে। শেষের 'বলতো' কথাটি শুনে মা বলল, "তুমি কি আমি পারি কিনা সেটা দেখছ? নাকি জানতে চাইছ?" নিশি বলল, "মানে? বল না। বলতে বলেছি, বল।" মা বলল, "আল্লাহর উপর খাবারের ভরসা করব না তো কার উপর করব? খাবার খেয়ে যে বাঁচা যায়, এই সিস্টেমটাই তো আল্লাহ তৈরি করেছেন। একটা খাবার ভালো না লাগলে আমরা অন্য খাবার খেতে পারি। হাজার হাজার খাবার আল্লাহ বানিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহর বানানো খাবার থেকে মানুষ আরো পাঁচমিশালী করে ভিন্ন জাতের খাবার তৈরি করছে। এমন কোন খাবার কি আছে, যা প্রাণী বা গাছ থেকে আসে না? ডিম, দুধ এসবই তো প্রাণী থেকে আসে। মাংস, মাছ এগুলোও প্রাণী থেকে আমরা পাই। গাছ থেকে আমরা ফসল, ফলমূল এসব পাই, সবজিও পাই। আর মানুষে পাঁচমিশালী করে তৈরি করেছে এরকম একটি খাবার বললাম কাস্টার্ড। কাস্টার্ড বানাতে ফলমূল লাগে, দুধও লাগে। ফলমূল গাছ থেকে আসে এবং দুধ প্রাণী থেকে আসে। প্রাণী আর গাছ কে তৈরি করেছে? এ তো খুবই সোজা। কারণ, আমাদেরকেই তো তৈরি করেছেন আল্লাহ। তাহলে আমাদের জন্য সবকিছু তো তিনিই সৃষ্টি করেছেন। এভাবেই তো আমরা খাবারের জন্য আল্লাহর উপর ভরসা করি। তোমার কি মনে হয়? আল্লাহর কাছে শুধু খাবারের জন্যই ভরসা করি? বেঁচে থাকার জন্যও আল্লাহর উপরই ভরসা রাখতে হয়। কারণ, আল্লাহ চাইলে এক্ষনি সব মানুষকে ধ্বংস করে দিতে পারেন, কিন্তু আল্লাহ তা করছেন না। কারণ, তিনি পরম দয়ালু। তিনি চাইলে মৃতকেও জ্যান্ত করতে পারেন। হিংসুটে ধনীকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য তিনি তাকে ফকির করে দেন, আবার শিক্ষা পাওয়ার পর তাকে ভালো জায়গায় নিয়ে আসেন। দু:খী ফকিরকে ধনী করে দেন। এমনি এমনি ধনী করলে তো হিংসুটে হয়ে যাবে, খারাপ হয়ে যাবে। সেজন্য তিনি গরীবদের মাথায় বুদ্ধি দিয়ে দেন। উপার্জনের বুদ্ধি। মানুষ যে এত বড় বড় বিল্ডিং বানাচ্ছে। আল্লাহ তো চাইলেই অনেক জোরে ভূমিকম্প দিয়ে এসব ধ্বংস করে দিতে পারেন। কিন্তু করেন না। তিনি সবকিছুই ধ্বংস করে দিতে পারেন, কিন্তু করেন না। এটাই হচ্ছে গিয়ে আসল কথা। কারণ, তিনি পরম দয়ালু।" নিশি বলল, "আচ্ছা, আল্লাহ যতটা দয়ালু, ততটা দয়ালু কি কেউ হতে পারে? আমাদের সবার ক্লাসের টিচাররা তো একেবারেই উল্টা। সবগুলোতে A+ পেয়ে একটাতে A গ্রেড পেলে সবগুলোতেই A দিয়ে দেবে। আল্লাহ যদি এরকম করতেন, তাহলে শেষে ক'জন মানুষই বা টিকে থাকত? একজন মানুষ যদি অনেক ভালো কাজ করে একটু দোষ করে, তাহলে কি আল্লাহ তাকে জাহান্নামে দিয়ে দেন? বড় কোন দোষ হলে তিনি বাধ্য হলে তখনই একমাত্র তিনি তাকে জাহান্নামে দেন। তাহলে মানুষ একরম কেন? বুঝি না, বাপু।" মা এই প্রশ্নের কোন জবাবই দিতে পারল না। কারণ, এটাই সত্যি।

Tuesday, July 17, 2018

'দিও' এবং 'দাও' এর পার্থক্য

এক ছিল একটি মেয়ে। নাম তার সুমাত্রা। সে আবার বোকা ছিল। সে তার বন্ধু লায়লার বাড়িতে লায়লার জন্মদিনে গিয়েছিল। সে একটা গিফট নিয়ে গেল। লায়লা বলল, "ওয়াও! গিফটটা তো অনেক সুন্দর।" তখন সুমাত্রা বলল, "শোন, পরের বার তোমাকে কি গিফট দেব?" তখন লায়লা বলল, "একটা বাইসাইকেল দিও।" তারপর সুমাত্রা বাড়ি ফিরল। আরেকদিন সে এমনিতেই লায়লার বাড়িতে বেড়াতে গেল। সে বলল, "তুমি কি দিয়ে যেন তোমাকে সাহায্য করার কথা বলেছিলে? (ভুলে সাহায্য করার কথা বলেছে, আসলে বার্থডের গিফটের কথা।)" লায়লা বলল, "এখন তুমি আমাকে টিস্যু দাও।" অমনি সুমাত্রার বাবা ডাক দিল, "চলে এসো মা, আমাদের বাড়ি ফিরতে হবে। লায়লাকে বিদায় জানিয়ে চলে আস।" সুমাত্রা লায়লাকে বলল, "লায়লা, শোন! তুমি একটু আগে যা চাইলে, তোমার জন্মদিনে আমি তাই গিফট দিব। আমার মনে হয় না তুমি আগে এটা বলেছিলে। কিন্তু তাও আমি বুঝতে পারছি যে, তুমি তোমার মত বদলেছ। কারণ, তোমার যে জিনিস চাওয়ার কথা ছিল সেটা তুমি না চেয়ে বোধ হয় অন্য জিনিস চেয়েছ, কারণ তোমার সে জিনিস কম পছন্দ। ওকে, বাই, আমি আসি।" লায়লা কিছুই বুঝতে পারল না। পরে দেখা গেল, লায়লার জন্মদিনের দিন সুমাত্রা লায়লার গিফট হিসেবে একটা টিস্যু নিয়ে আসল। এরপর লায়লা বলল, "হায় হায়! তোমার না বাইসাইকেল আনার কথা ছিল। তুমি কি এনেছ? এটা কিছু গিফট দেয়ার জিনিস হলো? আর তুমি সেদিন কি বললে, আমি তো কিছু বুঝলাম না। আমি যে গিফট চাইব, সেটা বলার আগেই তুমি চলে গেলে।" তখন সুমাত্রা বলল, "ওমা! আমি জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কি চাও? তুমি বললে, টিসু। আবার বললে, জিনিসটা না দিয়েই চলে যাচ্ছ কেন? বার্থডের জিনিস মানুষ সেদিন দেয়? আশ্চর্য তো। তুমিই তো গিফটটা আমার কাছে চেয়েছ। আবার বলছ যে তুমি বাইসাইকেল চেয়েছিলে? আমি তো ভাবলাম, তুমি মত বদলে টিসু চেয়েছ।" তখন আসল জিনিসটা ধরা পড়ল যে, সুমাত্রা আসলে 'দিও' কথার অর্থ আর 'দাও' কথার অর্থ গুলিয়ে ফেলেছে। যা এই গল্পের মধ্যে বোল্ড করে দেয়া আছে। তোমরা আবার এই দুটো গুলিয়ে ফেলো না।

Sunday, July 15, 2018

মায়ের চালাকি

এক ছিল একটি মেয়ে। তার নাম নুরাইদা। নুরাইদা একদিন মাকে জিজ্ঞেস করল, "মা! আমার টিচার বলেছে মায়ের কাছে ধর্ম পড়তে। ধর্মের মূল বিষয় কি?" মা বলল, "কি রে বাবা, এটাও জানিস না?" তখন মেয়েটি বলল, "তুমি আমাকে কবে শিখিয়েছ যে, আমার মনে থাকবে? তুমি কিছু জানই না, কিভাবে বাচ্চাদের পড়াতে হয়। তুমি বুঝতেই পার না। বাচ্চাকে শুধু তুই তুই করে বলে। তানিয়ার আম্মু কেমন ওকে তুমি বলে ডাকে। চকলেট দেয়। রং করতে দেয়। খেলার সময় দেয়। তুমি কিছুই দাও না। আর তুমি কেন বলছ যে, আমি প্রশ্ন করেছি কেন? তুমি জান না বুঝি? ধর্মের ক্লাস নতুন শুরু হল এ বছর। আমাকে এটুকু বলবেও না? ঠিক আছে, আমি পরীক্ষায় ফেল করব। এক সাবজেক্টে ফেল করলে আজকাল টিচাররা সব সাবজেক্টে ফেল দেয়। দিয়ে রেজাল্টটাই ফেল করে দেয়। আশ্চর্য ব্যাপার।" মা বলল, "এসব পাকা পাকা কথা তোমাকে কে শিখায়? তানিয়া তো ভাল করে দাঁত মাজে, তাই ওর মা চকলেট দেয়। পড়া শেষ করে রং করার পর নখ পরিষ্কার করে, তাই তাকে ওসব করতে দেয়। তুমি তো কিছুই কর না, তাই বললাম আর কি। তবে এখন আসল কথায় আসা যাক। নাও, ধর্মের মূল বিষয় হচ্ছে .......। কথা শেষ হতে না হতেই মেয়েটি বলল, "মা! তুমি তো বড্ড স্বার্থপর। সেলফিশ কোথাকার! কিচ্ছু বোঝ না, নাকি? এটা কোন পড়ার সময় হলো? নিজেই বলে, যখন যেই কাজের সময়, তখন সেই কাজ করতে হয়। এখন সে আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে আমি যাতে না ডিস্টার্ব করি সেজন্য আরাম করে খেয়ে নিয়েছে। খেয়েদেয়ে পেটটা ভরিয়ে ফেরেছে একেবারে। আমাকে খাবার দিয়েছ বুঝি? কেমন মা তুমি? একদম ভাল লাগে না। জ্ঞান-ট্যান কিছু নেই নাকি? খালি পেটে পড়াতে বসেছে। ঢং দেখে আর বাঁচি না।" মা বলল, "থাপ্পড় দিয়ে গালটা কিন্তু ফাটিয়ে দেব। ভাত দাও বললেই হয়, কততো কথা! শুধু শুধু তর্ক বাড়ায়। আশ্চর্য ব্যাপার, তুই কিছু বুঝিস না? দাঁড়া, আমি ভাত আনছি।" মেয়েটি বলল, "আমি দেখেছি, আজকে তুমি মুরগীর পা রান্না করেছ। কিন্তু তুমি একটাই কেন রান্না করলে? আবার তুমি গিলাও রান্না করেছ। আমি দেখেছি। তুমি আবার বড্ড স্বার্থপর। বোঝ না কিছু। আবার ঝালও দিয়েছ এক গাদি, যাতে তোমার মজা লাগে। আমি কি করব, শুনি? আমি কি মাংস খাব না? মাংসও কত অল্প রান্না করেছ।" মা মেয়ের কথা শুনে চুপ হয়ে গেল। কারণ, আসলে হয়েছে কি, সে গিলা, পা ও সবটুকু মাংস চেটেপুটে খেয়ে নিয়েছে। এখন সে কী করবে? সে বলল, "শোন্‌ বাবা! তুই এখন মাংস খাস না। তাহলে রাতে যখন তোর অপছন্দের পেপে ভর্তা দেব, তখন তুই তা খেতে পারবি না। রাতে তুই চেটেপুটে মাংস খাস। এখন তুই পেপে ভর্তা খা।" মেয়েটা আবার ভীষণ বুদ্ধিমতী ছিল। সে বলল, "মা, তোমার মুখটা চোরের মত লাগছে কেন? কিছু লুকাচ্ছ নাকি? এই সত্যি করে বলতো, তুমি আবার মাংস খেয়ে ফেলনি তো?" মা তো তো করে বলল, "না, বাবা! আমি তোর খাবার খেতে যাব কেন? আমি মা না? নে, তোকে আমি পেপে ভর্তা দিচ্ছি, ভালোর জন্যই বলছি। রাতে তোকে মাংস দেবনে।" তখন মা  পেপেভর্তা দিয়ে ভাত মাখিয়ে আনল। বাবুটি খেয়ে ওয়াক দিল। "ছিছিছিছি, পেপেভর্তায় একটু লবণও দাওনি নাকি? কোন পেপেভর্তা হল? একদম মজা না। ছি, আমি এটা খাবই না। তুমি আমাকে মাংস দাও, নাহলে আমি পরীক্ষায় ফেল করব।" মা তো বড্ড মুশকিলে পড়ে গেল। সে এখন কী করবে? তার ইচ্ছে করছে, বমি করে সবটুকু উগড়ে দিয়ে বাচ্চাকে খাওয়াতে। কেন যে সে এই ভুলটা করল? সে তখন হোটেল থেকে কিনে নিয়ে আসল। এরপর সেইটা বাচ্চাকে খাওয়ালো। মেয়েটা বলল, "এ কি? কি বেস্বাদ! একটু নুন-মরিচ কিচ্ছু দেয়নি? তোমার রান্না কোনদিন এমন হয়? জীবনেও না। এ খাবার তো তুমি মুখেই তুলতে পার না। তাহলে তুমি এ খাবার রান্নাই করবে না। তুমি বুঝি মজা না দেখে নিজে না খেয়ে আমার উপর গচাচ্ছ? নাকি আরো কিছু! আর তুমি বাইরের পোশাক পড়লে কেন, অ্যাঁ? আমি দেখেছি, তুমি বাইরের পোশাক নিয়ে ড্রেসিং রুমে গেলে। যত্তসব।" মা তখন আবার তো তো করতে শুরু করল। বলল, "দাঁড়া, আমি একটু আসছি।" সে কটা গুড়ো মরিচের গুড়া ও সব মসলাপাতি হাতের মুঠোয় করে চুপটি করে সেটা মাখিয়ে দিল। ভাবল, এবার বুঝি মজা হবে। বাচ্চা বলল, "ঠিক আছে, আমি আরো একটু টেস্ট করে দেখি।" বাচ্চা তো এটা খেয়ে বমিই করে দিল। "ছিছিছিছি! কাঁচা সব মসলা দিয়ে এনেছে! কী সব রান্না করেছ তুমি, মা? ছি!, অখাদ্য। আমাদের যে টিচারটা মাঝেমাঝে তোমার রান্না খেতে আসে, তাকে তুমি কালকেই বলে দেব, তোমার রান্না কেমন বেস্বাদ। একটুখানি মাংস আমি কালকেই নিয়ে যাব।" এই বলে সে দৌড়ে একটা ছোট কৌটা এনে তার মধ্যে একটু মাংস ভরল। সেটা ব্যাগে ঢুকিয়ে দিল। যাতে মিস ওটা খেয়ে আর জীবনেও তার মায়ের রান্না খেতে না আসে। মা তো বড্ড ফ্যাসাদে পড়ে গেল। মেয়েটি বলল, "আমি এবার পরীক্ষায় ফেল করবই করব। তুমি তো সেটা হাড়ে হাড়েই চাও দেখছি।" মা বলল, "না, ফেল করিসনে মা! আমি তোকে চিপস, চকলেট সব এনে দেব। তুই এটাই খা। আজকে আমার মাথাটা ঘুরাচ্ছিল তো, তাই ভুলে এরকম করে রান্না করেছি।" তারপর মেয়েটি বলল, "তুমি তো এত কম রান্না কর না। বাকিটুক তুমিই খেয়েছ। আমি এটা আর খাব না। সবটুকুই তুমি খাও।" এই বলে মেয়েটি জোর করে সেটা তার মায়ের মুখে ঢুকিয়ে দিল। মা তো অজ্ঞান হয়ে গেল। এই হচ্ছে বুদ্ধিমান বাচ্চার সাথে মায়ের চালাকির ফল। তবে বাচ্চাটি কিন্তু সব বুঝেশুনেই করেছে। সে আগে সব জানত, কিন্তু সে মুখে কিছু বলছিল না। কারণ, তার কাছে কোন প্রমাণ নেই। তাই এইভাবে সে মাকে শিক্ষা দিল।

Friday, July 13, 2018

রাজকন্যার সুমতি

এক ছিল এক রাজার প্রাসাদ। সেই প্রাসাদে রাজা, রানী ও রাজকন্যা থাকত। একসময় ঝড়ে উড়িয়ে নিয়ে গেল তাদের প্রাসাদ। শুধু মানুষগুলোই রয়ে গেল। কারণ, মানুষগুলো জানালা দিয়ে আকাশটা দেখছিল এত মেঘলা হয়ে উঠেছে কেন। তাদের জানালা আবার নিচু ছিল। তাই যেই তারা ঝড়ের আভাস দেখছিল, অমনি জানালা দিয়ে লাফ দিল। মা-বাবা আবার স্বার্থপর ছিল। বিপদে পড়লে রাজা-রাণী সত্যিই খুব স্বার্থপর ছিল। তারা বাচ্চাকে ফেলে রেখে দৌড়ে পালিয়ে গেল। এখন রাজকন্যা তো একা। তবে রাজকন্যারও আবার বদভ্যাস ছিল। যা চাইত, তাই পেত। তাই সে জেদীও ছিল। যা চাবে, তা তো চাবেই। নাহলে আর কিছুই করবে না। খাবে না, ঘুমোবে না ইত্যাদি। আর দুষ্টুমি করবে। তখন সবাই জেদ পূরণ করতে বাধ্য হয়ে যাবে। এ সময়ও সে জেদ করতে শুরু করল। ঝড় থামার পর তাও মা-বাবা ভয়ে আর ফিরে এল না। অন্য কোথাও আশ্রয় নিল। রাজকন্যা দৌড়ে এদিক ওদিক কোন আশ্রয়ের খোঁজ করতে শুরু করল। সে এক বৃদ্ধ মহিলার বাড়িতে গিয়ে পৌঁছল। তবে সেই বৃদ্ধ মহিলা খুবই গরীব। সে গিয়ে বৃদ্ধ মহিলার দরজায় গিয়ে বলল, "বুড়ি মা! দরজাটা একটু খুলুন তো।" বৃদ্ধ মহিলা বলল, "কে তুমি? কি চাই?" এরপর মেয়েটি বলল, "আশ্রয় ও খাবার চাই একটু। দেয়া যাবে? আশ্রয় না হয় নাই দিলেন, একটু খাবার কি দেবেন? কারণ, আমি কুঁড়েঘরে থাকতে অভ্যস্ত নই। তাই আমি এখানে থাকতে পারব না। এর থেকে মাঝে মাঝে যেই অ্যাডভেঞ্চার করি, সেগুলোর মতই গাছের কোটরে থাকব। এখানে একটা অ্যাডভেঞ্চারের মত একটা ভাব আসে, কিন্তু কুঁড়েঘরে থাকলে সবসময়ই গরীব গরীব লাগে।" বৃদ্ধ মহিলাটি ভাবল, রাজপরিবারের মেয়েই হবে, আমি নিশ্চিত। নইলে কুঁড়েঘরে থাকার কথা উঠত না। কিন্তু যদি কুঁড়েঘরে না থাকতে পারে, তাহলে খাবার কি করে খাবে? বৃদ্ধ মহিলা দরজা খুলে বলল, "দাঁড়াও, আমার কাছে যা আছে, সেই সব খাবারই তোমাকে দেব। সবটুকুই দেব। তুমি খেলে খাও।" বৃদ্ধ মহিলা একটু তেনানো মুড়ি আর ক'টা বাসি ভাত এনে দিল। বলল, "আমার কাছে এই ছিল। খাবে নাকি? দেখে তো মনে হচ্ছে না, তুমি এগুলো খেতে পারবে। খাবে? খাও তো দেখি।" মেয়েটি বলল, "একদম নয়, এগুলো কি? পচা মুড়ি, পচা ভাত, এগুলো মানুষে খায়? এমনিতেই আমি মুড়ি আর ভাত পছন্দ করি না। তাও আবার বাসি? ছি-ছি-ছি! জীবনেও খাব না।" বুড়ি বলল, "তুমি যদি এটা না খাও, তোমার জীবন কি থাকবে? জীবনে আর খাবে কিভাবে?" তখন মেয়েটি বলল, "দরকার নেই। আমি উপোষ করেই থাকব, আর গাছের কোটরেই থাকব।" এই বলে মেয়েটি গাছের কোটরেই থাকতে শুরু করল। এরপর পরের দিন সে আবার বুড়ির কাছে এসে বলল, "বুড়ি মা, কিছু খাবার দেবে?" একই খাবার বুড়ি নিয়ে আসল। মেয়েটি নাক ঘুঁচিয়ে আবার কোটরে ফিরে গেল। দুই দিন এমন হওয়ার পর তৃতীয় দিন মেয়েটি গেল। গিয়ে কাতর কণ্ঠে বলল, "বুড়ি মা, কিছু খাবার দেবে?" বুড়ি বলল, "এই নাও। সেই তিন দিন আগের একই বাসি ভাত আর মুড়ি। তুমি কি এগুলো খাবে? খাওয়ার তো প্রয়োজন নেই। প্রশ্নই ওঠে না, তুমি নাকি এগুলো জীবনেও খাবে না। তাহলে আমি দরজাটা আটকে দেই, আর তুমি ঐ দু'দিনের মত একই কাজ কর।" মেয়েটি বলল, "না, না। আমি এগুলোই খাব। এইটাই আমি খাব। নাহলে তো আমি মরেই যাব।" এই বলে মেয়েটি মুখ বুজে ঐ খাবারই খেয়ে নিল। আর সেই খাবারই সে খেয়ে বলল, "কী মজা! কতদিন পর অনেক মজার খাবার খেলাম। বুড়ি মা, তুমি গরীব হলেও তোমার ভাগ্যটা খুবই ভাল, তুমি কী সুন্দর সুন্দর মজার খাবার খেতে পার। এইবার আমাকে একটু পানি দাও দেখি। রোদের খুব তাপ।" তখন বুড়ি মা নদীর পানি এনে দিল। এটা দেখে মেয়েটি বলল, "এটা কি ফুটানো? না না, ফুটানো হলেও হবে না। এটা কি ফিল্টার করা তো?" বুড়ি বলল, "গরীব মানুষ কি আর ফিল্টার করা পানি খেতে পারে? নদীর পানি খেয়েই জীবন কাটাই। তাই আমার কাছে যা ছিল, তাই দিয়েছি। খেতে হলে খাও, নাহলে যাও।" মেয়েটি নাক ঘুঁচিয়ে আবার চলে গেল। কিন্তু দু'তিন ঘন্টা পর আবার ফিরে এল। বলল, "বুড়ি মা, যাই হোক, তোমার ঐ পানিই আমাকে দাও।" তখন বুড়ি ঐ নদীর পানিই এনে দিল। আর সেটাই সে আপন মনে ঢক ঢক করে খেয়ে ফেলল। বলল, "বুড়ি মা, সত্যিই তোমার ভাগ্যটা ভাল। এমন মজার পানিও তুমি খাও। বাহ! অপূর্ব!" এরপর মেয়েটি আবার গাছের কোটরে গিয়ে ঢুকল। দুই সপ্তাহ পর মেয়েটি আবার অস্থির হয়ে পড়ল। সে বুড়ি মায়ের কাছে গিয়ে বলল, "বুড়ি মা, আমি আর গাছের কোটরে থাকতে পারব না। আমার ভাল লাগে না। সারাদিন শুধু গরম আর গরম। একদম ভাল লাগে না। আমি তোমার কুঁড়েঘরেই থাকব।" বুড়িমা বলল, "ঠিক আছে। পারলে এসো। মনে হয় না তো তুমি পারবে।" কিন্তু মেয়েটি বলল, "না, না, বুড়ি মা। আমি অবশ্যই পারব।" বুড়িমার বাড়িতে দুই মিনিট থাকার পর সে বলল, "বুড়ি মা, বাহ! তোমার ভাগ্যটা আসলেই দারুন। কী সুন্দর শীতল কুঁড়েঘরে তুমি থাক। কী সুন্দর ছায়া! মাটির হলে কি হবে? জানালা তো আছে। বন্ধ করাও যায়, খোলাও যায়। শীত লাগলে বন্ধ করে দেব, গরম লাগলে খুলে দেব। রোদ লাগলেও বন্ধ করে দেব। বাহ! অপূর্ব সিস্টেম। আমাদের রাজপ্রাসাদের এসি রুমের চেয়েও অপূর্ব। খুব সুন্দর।" একটু পর মেয়েটির গরম লাগতে শুরু করল। সে জানালা খুলে দিল, তাও বাতাস আসছে না। তখন বাতাস ছিল না। বুড়ি মাকে বলল, "বুড়ি মা! বলছি কি, আমার খুব গরম লাগছে। জানালা দিয়ে বাতাস আসছে না। এসি চালিয়ে দেবেন?" তখন বুড়ি মা বলল, "তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে? কুড়েঘরে কোনদিন একটা পাখাই পাওয়া যায় না, আর তুমি বলছ এসি?" মেয়েটি বলল, "ঠিক আছে, কিন্তু বাতাস খাওয়ার অন্য কোন ব্যবস্থা কি নেই?" এরপর বুড়ি মা একটা কাগজের টুকরা এনে বলল, "এটা দিয়ে বাতাস কর। দেখবে, এটাতেই তোমার আরাম লাগবে।" মেয়েটি প্রথমে ভাবল, "ইস! পাখাও নয়, একেবারে কাগজের টুকরো। এতে আর কী আরাম লাগবে?" এই বলে সে বাতাস করতে শুরু করল। এরপর সে বলল, "আহ! কী সুন্দর বাতাস! এসি রুমের চেয়েও বেশি বাতাস। সুপার এসি রুমের চেয়েও বেশি বাতাস। এমনকি বরফের দেশের চেয়েও বেশি ঠাণ্ডা। বুড়িমা, তোমার ভাগ্যটা সত্যিই খুব ভাল। ধন্যবাদ।" এরপর থেকে এরকমই চলতে লাগল। মেয়েটি আর জেদ করত না। কারণ, প্রয়োজনের সময় সেই জিনিস তুচ্ছ হলেও তা ভাল লাগে।

Tuesday, July 10, 2018

ছোট্ট শিশুর উপার্জনের বুদ্ধি (Business Idea of a Kid)

এক ছিল এক গরীব পরিবার। এমন গরীব, এক পয়সাও ছিল না। কিচ্ছুই ছিল না। আর পরিবার বলতেও কিছু ছিল না। ছিল শুধু দুই ভাই-বোন। ভাইয়ের নাম নাসির, আর বোনের নাম নাফিসা। তারা তো একদিন একটু খাবার পেলে অর্ধেকের অর্ধেকও খায় না, জমিয়ে রাখে। অন্যদিন খাবার না পেলে সেদিন সেটা খায়। একসময় দেখা গেল, কোন খাবারও পাওয়া যায়নি, জমিয়ে রাখা খাবারও শেষ। তারা অবশ্য কখনো ধার করতো না। কারণ, ধার করলে যদি তা শোধ করতে না পারে, তখন কী হবে? সেই ভয়। একদিন নাফিসার একটা বুদ্ধি এল। সে তার ভাইকে বলল, "শোন, আমার মাথায় একটা বুদ্ধি এসেছে। কিন্তু আমার মনে হয় তুমি এটা করতে চাইবে না। কারণ, এ বুদ্ধিটা হচ্ছে ধার করারই একটা বুদ্ধি, যা আমরা পরে শোধ করতে পারব।" নাসির বলল, "একদম না! কী বলছিস তুই? ধার? একদম ধার করা চলবে না। পরে যদি শোধ করতে না পারি!" বোন বলল, "তুমি সব সময়ই এমন কর। আগে তো শোন ব্যাপারটা। কিভাবে ধার করব আগে না জেনেই এমন বলছ কেন? আমরা একটা গ্লুয়ের মেশিন ধার করব। যাকে ইংরেজিতে বলে Glue Gun। কারণ, সেটা দিয়ে বন্দুকের মতই গ্লু বের হয়। সেটা আমি চাই। রঙিন গ্লু গান। আর একটা পেন্সিল চাই। আর কিছু চাই না। এতেই কাজ হয়ে যাবে।" নাসির বলল, "মানে, এগুলো দিয়ে কি হবে?" নাফিসা বলল, "ও তুমি বুঝবে না। তাও বলি, টেলিফোনের তার যেরকম আঁকাবাঁকা থাকে, সেইরকম করে গ্লু গুলো আমি পেন্সিলের উপর লাগিয়ে দেব। পুরো পেন্সিল এমন করা হয়ে গেলে শুকোতে রেখে দেব। শুকানো হয়ে গেলে পেন্সিলটা গ্লু য়ের ভিতর থেকে টান দেব। দেখব যে, গ্লুটা টেলিফোনের তারের মত হয়ে গেছে। এরপর সেটাকে গোল করে চুরির মতো করে গ্লু দিয়েই লাগিয়ে দেব। এরপর সেটা একটা রাবার ব্যান্ডের মত হবে। এরকম যদি আমরা অনেক বানাই, তাহলে সেগুলো বিক্রি করলে অনেক টাকা হবে। আজকে না খেলেও হবে। আজকে ধার টার করে নিয়ে আসি। কাল থেকে কাজ শুরু করব। আর যে কয়টা বিক্রি হবে, সে কয়টার টাকা দিয়ে খাবার কিনে খাব।" নাসির তাও বেশি কিছু বুঝল না। সে ভাবল, এইটুকু একটা মেয়ের বুদ্ধিতে কী-ই বা হবে? কিন্তু নাফিসার অনেক বুদ্ধি ছিল। পরের দিন নাফিসা খুব সকালে উঠেই একটা দোকানে গেল। আঠার দোকান। এখানে গিয়ে বলল, "ভাই, আমাকে একটা আঠার মেশিন দিন তো! ধার করতে চাই। এক সপ্তাহ পর ঠিক দাম পরিশোধ করে দেব। দুই-তিন দিন দেরি হলে কি খুব বেশি সমস্যা হবে? হবে না তো। তাহলে আমি কি ধার করতে পারি?" দোকানদারটা আবার ভাল ছিল। সে ভাবল, "ছোট্ট একটা গরীব মেয়ে। ধার করে শোধ করতে পারুক বা না পারুক, চেয়েছে যখন, দেই। শোধ করতে চাইলে ভাল, না পারলেও কোন সমস্যা নেই।" এরপর নাফিসা গ্লু গান নিয়ে একটা পেন্সিলের দোকানে গেল। দুই টাকার একটা পেন্সিলও ধার করল। সে ভাবল, "শুধু শোধ না করে পেন্সিলের দামটা তো আমি সুদে-আসলেও পরিশোধ করতে পারতে পারি। তাহলে এবার জিনিসগুলো নিয়ে আমি বাড়ি চলে যাই।" নাসির ওঠার আগেই সে সব কিনে নিয়ে আসল। সে প্রথমে একবার জিনিসটা ট্রাই করল। শুকানোর পর গ্লুটা বের করে দুই কোনা একসাথে আঠালো গ্লু দিয়ে লাগিয়ে দিল। এরপর সে দেখল, সত্যি চুলের রাবারের মত হয়েছে। এরপর সে আরো বানাতে লাগল। নাসির উঠে দেখল, তিনটা বানানো শেষ। সে জিজ্ঞেস করল, "তুই এগুলো কি করছিস? কোন কাজ হলো? এগুলো দিয়ে কি হবে?" নাফিসা বলল, "খাবার যোগাড় হবে। এগুলো বিক্রি করে আমি যা টাকা আয় করব, তা দিয়েই তো কিছু খাবার কেনা যাবে। খাবার না হয় কম দামেই খেলাম, বাকিটুকুর অর্ধেক দিয়ে এগুলোর মূল্য পরিশোধ করা যাবে, আর বাকি অর্ধেক যতটুকু থাকবে তা দিয়ে আবার কাঁচামাল কেনা যাবে।" এই ভেবে সে আরো বানাতে লাগল। বানাতে বানাতে বিকেল হয়ে গেল। তাও মেয়েটি বানানো থামাল না। ভাই তো তাও পাত্তা দিল না। বলল, "এগুলো দিয়ে আর কত টাকাই বা হবে?" কিন্তু আজকাল সবাই ঐ জিনিস পছন্দ করে কেনে। বিকেল পর্যন্ত নাফিসা শুধু এই কাজই করে গেল। ভাই তো বুঝতেই পারছিল না যে, এ দিয়ে আর কী টাকা হবে? নাফিসা বানানো শেষ করে নাসিরকে বলল, "তুমি এগুলো একটু বিক্রি করে আসবে?" নাসির বলল, "আমার আর কাজ নেই নাকি? এটা কোন কাজ হলো? আমি বাবা ওসব বিক্রি করতে পারব না।" নাফিসা ভাবল, "ভাবলাম, ভাইটা বানাতে সহায়তা না করুক, বিক্রিতে অন্তত সহায়তা করবে। কিন্তু তাও তো করল না! আমি ছোট মেয়ে হলেও আমিই বিক্রি করব এইগুলো।" সে একটা ঝুড়িতে করে সব রাবার ব্যান্ড নিয়ে নিউ মার্কেটে  চলে গেল। দেখল, সব রাবার ব্যান্ডের দোকানেই খুব ভিড়। কিছু কিছু মানুষ ভিড়ের ঠেলায় রাবার ব্যান্ড কিনতেই পারছে না। সেও গিয়ে তার পাশে বসল। দুই সেকেন্ড না যেতেই তার দোকানেও হুড়মুড় করে মানুষ বাড়তে লাগল। একজন বলল, "আমাকে দুটো দিন তো।" আরেকজন বলল, "আমাকে তিনটি দিন তো।" আবার বলল, "একটু ছোট সাইজেরটা দেখান তো।" এই করে ভিড় বাড়তে লাগল। সে তো আর ভিড়ই সামলাতে পারছে না। মেয়ে মানুষ, তাও আবার কতটুক! এত ভিড় সামলাবে কি করে? নাসির আবার তাকে খুঁজতে বেরিয়ে গেল। নিউ মার্কেটে গিয়ে দেখল, সব দোকানেই অনেক ভিড়। হঠাৎ সে তার বোনকে দেখতে পেল। সে দৌড়ে তার বোনের কাছে গেল। বলল, "তুই এখানে কি করছিস? ওসব বিক্রি করছিস নাকি? ওসব বিক্রি করে কি হবে?" তখন নাফিসা বলল, "আমার থলেটার দিক তাকাও।" এত টাকা দেখে তার ভাই তো খুব অবাক হয়ে গেল। বলল, "এত ভিড় কিসের? তোর এই রাবার ব্যান্ড কেনার জন্য এত ভিড়? এত টাকা তুই এসব বেচে পেয়েছিস? অসম্ভব!" নাফিসা বলল, "অসম্ভবই যখন, তখন কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাক। দেখবে, ভিড়ের ঠেলায় তুমিই পড়ে যাবে।" একটু পর নাফিসার কথাই সত্যি হতে চলল। সবাই হুড়মুড় করে কিনছে আর কিনছে। "ওটা দিন, এটা দিন।" ভিড় বেড়েই চলেছে। টাকাও বাড়তেই চলেছে। ছোট একটু জিনিস, কেউ দরদামও করছে না। আবার এত ভিড়ের মধ্যে দরদাম করলে নিজেদেরই বিপদ। ভিড়ের ঠেলায় পড়েই যাওয়ার মত অবস্থা। তার ভাই দেখে তো খুব অবাক হয়ে গেল। তারপর সে নাফিসাকে বলল, "তোর বুদ্ধি তো সত্যিই খুব কাজের। তাহলে আমি ভিড় সামলাতে তোকে সাহায্য করি।" এবার ভাইও তার সাথে কাজে লেগে গেল। রাত হয়ে আসল, বিক্রি থামল না। সবাই এসেই চলেছে। কিনেই চলেছে, আর এক সময় দেখা গেল শেষই হয়ে গেল রাবার ব্যান্ড। তাও অনেক লোক নিতে না পেরে আফসোস করতে লাগল। নাফিসা ভাবল, এটা দিয়েই তাহলে আমরা ব্যবসা করব। এই থেকে শুরু হলো নাফিসা আর নাসিরের ব্যবসা। টাকা দিয়ে তারা ভাল ভাল খাবার খায়, দামও দিয়ে দিল। তার সাথে কাঁচামালও কিনতে লাগল, আবার একটা নতুন বাড়িও বানিয়ে ফেলল। ধীরে ধীরে ব্যবসা বাড়তে থাকল। একটা বড় রাবার ব্যান্ডের দোকানও বানানো হলো। আর এবার যেন তেন দোকান নয়, একেবারে দামি দামি শপিং মলের ভিতরে দোকান। সেখানে আরো ভিড়। এই করে করে তাদের জীবন চলতে লগাল। এক পর্যায়ে এসে তারা রাবার ব্যান্ডের ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে পোশাকের ব্যবসা শুরু করে দিল। তারা সুন্দর সুন্দর জামা কিনে এনে কোনটা কম সুন্দর হলে তা এডিটও করত। এভাবে তাদের ব্যবসা উঠতে উঠতে একেবারে সোনার ব্যবসায় চলে গেল। শেষ পর্যায়ে এসে তারা হীরার ব্যবসা করতে শুরু করল। এরপর থেকে তাদের তো আর সুখের শেষ নেই। তবে আমার গল্পের শেষ আছে। আর তা এখানে।

শিক্ষা: ছোট বলে কাউকে অবজ্ঞা করতে নেই।

Sunday, July 1, 2018

সরলতার বিড়ম্বনা

এক ছিল একটি বাড়ি। সেই বাড়িতে একটি ছোট মেয়ে ছিল। ছোট বলতে দশ বছর বয়স। মেয়েটির নাম আয়েশা। কিন্তু সে ঐ ফ্যামিলির কেউ ছিল না। সেই বাড়িতে আবার একটি দয়ালু মহিলাও ছিল। কিন্তু এখন আর নেই। সে গরীব মেয়েটিকে দেখে বাড়িতে নিয়ে আসল। দয়ালু মহিলা ঐ ফ্যামিলির মেইন যে তার খুবই ভাল বন্ধু ছিল। সে ঐ মেয়েটিকে বাড়িতে নিয়ে এসেছিল, কিন্তু বাড়ির মালিক তাতে খুব বেশী খুশী ছিল না। কিন্তু ঐ মহিলা তার এত প্রিয় বন্ধু ছিল যে, সে তার কথা ফেলতে পারত না। আর তার কাজও নষ্ট করে দিতে পারত না। কিন্তু সেই মহিলা চলে যাওয়াতে মেয়েটিকে বাড়ি থেকে বের করে দিতে না পারলেও তাকে কাজের মেয়ের মতই রাখতে শুরু করল বাড়ির মালিক। একদিন বাড়িতে অনেক মেহমান আসল। বাড়ির মালিক আয়েশাকে হুকুম করল, "যাও, তিনজন মেহমান আসছে। তিনটা ডিম রান্না কর। তার সাথে দু'জন ছোট ছোট ছেলে-মেয়েও আসছে। তাদের জন্যও দুটো ডিম রান্না কর। আর তুমি আমার জন্যও কিন্তু রান্না করবে। আর বাড়ির বাকি সদস্যদের জন্যও তুমিই রান্না করবে। এইটুকু হেল্প যদি না কর, তাহলে আর শুধু শুধু বসে বসে খেতে দেব কেন? তার সাথে পোলাওটাও তুমিই করো। আর যদি কেউ পোলাও না খায়, তাহলে তুমি ভাত রান্না করবে। আর যদি কারো ভাতেও সমস্যা থাকে, তাহলে তুমিই তাদের জন্য রুটি বানিয়ে দেবে। আর তখনকার জন্য না ফেলে রেখে এখনি কাজগুলো করে ফেল। আর কারো যদি ডিমে সমস্যা থাকে, সেজন্য একটু রোস্টও করে দাও। মেয়ে হলে কি হবে? তোমাকেই বাজার করে আনতে হবে। যাও, অনেকগুলো ডিম কিনে নিয়ে আস, আর মুরগীও কিনে নিয়ে আস। মসলাপাতি কিছু কম পড়লে সেটাও তুমি কিনে এনো, তবে টাকা আমার কাছ থেকে নিও। টাকা যেমন লাগবে, তা আমি দেব। কিন্তু কাজ কিন্তু সব তোমাকেই করতে হবে। তারা যদি বাইরের জামাকাপড় পরে থাকতে অস্বস্তি বোধ করে, সেজন্য তুমিই তাদের জন্য ঘরের পোশাক কিনে আনবে। তাদের জন্য জুতোও নিয়ে আসবে। যদিও তারা এক বেলা খেয়েই চলে যাবে। এরপর তাদের জন্য ফলমূল এনে সালাদটাও তুমিই করে দিও। আর তার সাথে কেউ যদি এমন তেল-টেল সব খাবার না খেতে চায়, সেজন্য তেল ছাড়া সবজিটাও তুমিই রান্না করো। সামান্য এটুকু হেল্প তো তোমাকেই করতে হবে। আর সব কাজ কিন্তু দশ মিনিটের মধ্যে হওয়া চাই।
মেয়েটি তো শুনতে শুনতেই কাহিল হয়ে গেল, করবে কখন? সে বলল, "দশ মিনিটে এ কাজ আল্লাহ ছাড়া আর কেউ করতেই পারবে না। অন্তত আধা ঘন্টা তো দিন। আমি ঠিক সব করে নেব।" মেয়েটি মনে মনে ভাবল, "এ কী? ডিমের বেলায় তো সবার কথাই তো বলল। আমার কথাই তো বলল না। অথচ আমিই রান্না করব। আমার মাইন্ড করার কোন দরকার নেই। আমাকে কাজ করতে দেওয়া হয়েছে, আমি করি।" এরপর মেয়েটি একে একে কাজ করা শুরু করল। ৩০ মিনিটের বদলে ৩২ মিনিট লেগেছে বলে মালিক খুব রেগে গেল। মেয়েটিকে বলল, "এই আয়েশা! তোমার আক্কেলটা কি? মেহমান আসবে দুপুরে। তুমি দুই দুইটা মিনিট নষ্ট করলে? এত দেরি কর কেন কাজ করতে? দুই দুইটা মিনিট, কম কথা?" এরপর মেয়েটি বলল, "মেহমানরা তো এখনই এসে পড়বে। জামাগুলো কেমন হয়েছে, সেটা আপনি দেখুন। আমার পছন্দ তো আপনার পছন্দ নাও হতে পারে।" মহিলাটির আবার গাঢ় নীল খুবই পছন্দ ছিল। সে সবগুলো জামা গাঢ় নীল আনতে বলেছিল। একটা জামা একটু কম গাঢ় হবার কারণে মেয়েটিকে তাও কথা শুনালো। মেয়েটি তাও কিছু মনে করল না। মেহমান আসার পর সে কাপড়-চোপড়গুলো মেহমানদেরকে দিল। এরপর খাবার পরিবেশন করতে শুরু করল। কিন্তু মালিক তাকে বাধা দিল। "তুমি পরিবেশন করো না। আমরা কাকে কি দেব, সেটা তোমার ঠিক করার কথা নয়, তুমি বুঝবে না।" মেয়েটি মনে মনে বলল, "এত কিছুই যখন বুঝলাম, এটুকু আর বুঝব না? তাও যখন তার ইচ্ছা হচ্ছে, তখন সেই পরিবেশন করুক।" এই ভেবে মেয়েটি নিজের জায়গায় অর্থাৎ ছোট পাটিতে বসে পড়ল। সেই সবার প্লেট ধুয়ে টুয়ে গ্লাস ধুয়ে টুয়ে পানি পরিবেশন করেছিল। আর খাবারটুকু ঘরের মালিকই পরিবেশন করছিল। ঘরের মালিক বলল, "এই আয়শা, কিছু বোঝ না নাকি? আমি হলাম বাড়ির মালিক। তুমি নিজের খাবারটুকু নিলে না? ভাবো কি নিজেকে? আমি তোমার খাবারটাও কি বেড়ে দেব নাকি? তুমি এসে নিয়ে যাও। তবে আমিই বেড়ে দিচ্ছি, তুমি প্লেটটা নিয়ে এসো।" মেয়েটি বলল, "তার আবার কি দরকার?" মালিক রাগ হয়ে বলল, "আমার ইচ্ছে হয়েছে, তাই। তোমার খুব বেশি সমস্যা? আমার কথা অমান্য করছ কেন? প্লেটটা আগাও, ব্যস!" মেয়েটি প্লেট এগিয়ে দিল। আর মেয়েটিকে দেয়া হলো আধা চামচ ভাত। ভাত কিন্তু, পোলাও বা ভাতের সমস্যা হলে রুটি নয়। ভাত, তাও আবার আধা চামচ। আর এটুকু দিয়েই সে বলল, "তোমাকে তো খাবার দেয়া হয়ে গেছে। যাও, জায়গায় গিয়ে বস। আচ্ছা ঠিক আছে, যদি শুধু ভাত খেতে এতটাই সমস্যা হয়, তাহলে এক চা চামচ সবজি নাও।" এরপরও মেয়েটি মুখ বুজে এক চামচ সবজি নিয়েই জায়গায় গিয়ে বসল। অথচ সব খাবারই সে রান্না করেছে, সব কাজই সে করেছে। শুধু পরিবেশনটুকু মালিক করেছে। সবার পাতে সবার পছন্দমতো জিনিস দেওয়া হলো। মাংস দেওয়া হলো, যাদের মাংসে সমস্যা সবজি দেওয়া হলো, তার সাথে ডিম দেওয়া হলো। কিন্তু আয়েশা আবার ডিম খেতে এতটাই ভালোবাসতো যে, সে নিজের জন্য ভুলে একটা ডিম বেশি রেঁধে ফেলেছে। একটা ডিম বেশি দেখে মালিক একবার আয়েশার দিকে তাকালো, আবার চোখ সরিয়ে ওটা কেটে সবার জন্য আলাদা আলাদা ভাগ করে সবাইকে দিয়ে দিল। অথচ রান্নাই করেছে যে, তাকেই দেওয়া হলো না। এরপর সবাই খাওয়া-দাওয়া শেষ করল। এরপর সবাই আবার ম্যাংগো জুস খেতে চাইল। কিন্তু তখন তো আমের সিজনই ছিল না। ছো্ট্ট ছেলেটি বলল, "বাবা! আমি ম্যাংগো জুস খেতে চাই।" তার সাথে যে মেয়েটি এসেছিল, সেও ঐ একই বায়না জুড়ে দিল। তাদের থেকে শুনে বড়রাও ভাবল, ইস! কতদিন আমের কিছু খাই না। তারাও আবার ঐ জেদই শুরু করল। এখন মালিক কি করবে বুঝতেই পারছ। সে আবার আয়েশাকে বলল, "যাও না, গিয়ে একটু জুস কিনে নিয়ে এসো। এখন অরিজিনাল পাবে না সিওর, তাও কিনে নিয়ে এসো। এবার তুমি নিজের জন্যেও আনতে পার (অরিজিনাল নেই দেখে, কারণ আমের সিজন নয়)।" তখন আয়েশা আবার হালকা চালাকি করে বলল, "তার কোন প্রয়োজন নেই। আমি আপনাদের জন্যই এনে দিচ্ছি।"- এই বলে আয়েশা জুসটাও কিনে এনে দিল। অথচ ভাল ভাল জিনিসের বেলায় আয়েশাকে কিছুই দেয়া হলো না। সহজ-সরল হওয়া ভালো হলেও জীবনে অনেক অসুবিধা আসে।

Monday, June 25, 2018

সঞ্চয়ী বউ

এক ছিল এক লোক। তার ছিল এক বউ। তার আবার একটি টাকার ড্রয়ার ছিল। ড্রয়ারে ছিল তিনটি তাক। একটাতে অনেক টাকা কিন্তু সে টাকা ব্যবহার করে না। দ্বিতীয় তাকটিতে ছিল ইমার্জেন্সির জন্য টাকা। আর সবথেকে নিচের তাকটিতে ছিল রেগুলারলি যে টাকা ইউজ করতে হয় সেই টাকা। তবে তার বর টাকা ইনকাম করত। তার অর্ধেক দিত বউকে, আর বাকি অর্ধেক লাগাতো নিজের কাজে। প্রথম ড্রয়ারে শুধু টাকা রেখেই দিয়েছে। কোনদিন ড্রয়ারটা খোলেও না, শুধু শুধু টাকা ভরে রেখেছে। আস্তে আস্তে তো অনেক দিন পার হচ্ছে। রেগুলার টাকা তো অনেকই শেষ হয়। আর ইমার্জেন্সি মানে সিরিয়াস জ্বর বা কোন অসুখ। আবার যখন রেগুলার টাকা শেষ হয়ে যায় আর মাসিক বেতনও তার বর পায় না, সেই সময় ইমার্জেন্সি ড্রয়ার থেকেই টাকা নেয়া হয়। দিন তো চলেই যাচ্ছে। একসময় দেখা গেল, তার বরের অফিসে খুব সমস্যা হয়েছে। তাই এক বছরের জন্য অফিস আর চালানো যাবে না। এই কথা শুনে লোকটি ভেঙ্গে পড়ল। এরপর সে তার বউকে বলল, "তোমার এমার্জেন্সি ড্রয়ার থেকে টাকা দাও তো!" তার বউ গিয়ে দেখল, বেশিরভাগ টাকাই খরচ হয়ে গেছে। ২০ টা ১০ টাকার নোট আছে, তার মানে ২০০ টাকা মাত্র। ২০০ টাকাই সে আপাতত বরকে দিল। তখন তার বর বলল, "আমাকে কি ৩০০ টাকা দেয়া যায়?" বউটি বলল, "কেন গো, তুমি কি করবে এত টাকা দিয়ে?" বরটা আমতা আমতা করে বলল, "আমার প্যান্টের পকেট ছিঁড়ে গেছে। আবার শার্টের বোতামও খুলে গেছে। সেগুলো আমি একটু মেরামত করব।" বউটি বলল, "তুমি কিভাবে মেরামত করবে?" বরটি রাগ হয়ে বলল, "ধূর! আমি মেরামত করব নাকি? মেরামত করাব।" এই বলে সে বারবার ৩০০ টাকা চাইতে লাগল। কিন্তু বউটি বলল, "আমার কাছে ৩০০ টাকা নেই। রেগুলার ড্রয়ার তো ফাঁকা। আর ইমার্জেন্সি ড্রয়ারে কেবল ২০০ টাকাই বেঁচে ছিল।" লোকটি বলল, "উপরের ড্রয়ার তো একদিনও খোল না। ঐ ড্রয়ারে টাকা আছে? অবশ্যই থাকবে। তোমাকে তো একদিনও দেখি না ঐ ড্রয়ার খুলতে। ঐ ড্রয়ার থেকে কি ১০০ টাকা আমাকে দেওয়া যায় না, নাকি?" বউ বলল, "আচ্ছা, তোমার কি আর শার্ট-প্যান্ট নেই? অন্যগুলো পর। হঠাৎ উপরের ড্রয়ার খুলতে যাব কেন? অনেকদিনই তো খুলি না। তাই এবারও না খুললেই হয়।" তারপর বরটি চলে গেল। এবার বউ উপরের ড্রয়ার থেকে কিছু টাকা দ্বিতীয় ড্রাজে রাখল। তারপর বর আসলে তাকে সেই দ্বিতীয় ড্রয়ার খুলেই প্রয়োজনীয় টাকা দিল। উপরের ড্রয়ারের সম্পদের হদিস বরের কাছ থেকে আড়ালেই রেখে দিল। কারণ, বর জানলে খরচ করে ফেলবে। এক সপ্তাহ পর একটি সুখবর হলো। বরের অফিস আবার চালু হয়েছে। কোনমতে সমস্যা মিটে গেছে। এরপর থেকে আগের মতই জীবন চলতে থাকল তাদের।

Friday, June 22, 2018

অন্যরকম দৈত্যের দেশ

এমন এক জায়গা আছে, যেখানে কোন মানুষ যেতে পারে না। কোন মানুষ সেই জায়গার কথা জানেও না। কিন্তু এটা আসলে কাল্পনিক। সেই জায়গায় একরকম দৈত্যরা বাস করে। তারা খুব বেশি হিংস্র নয়। তারা মূলত: মানুষের খাবারই খায়, তবে অনেক বেশি পরিমাণে। সেখানে আবার একদম উল্টো। সেটা হলো, ছেলেরা খাবার বানিয়ে বানিয়ে মেয়েদেরকে খাওয়ায়। আর মেয়েদেরই সেবা করে। একদিন একটা ছেলে দৈত্য মেয়ে দৈত্যকে খাওয়াচ্ছিল। সে প্রথমে বলল, "এই নাও তোমার দুধ-ভাতের থালা আর সবজি-ভাতের থালা। এরপর নাও তোমার মাংস-ভাতের থালা আর মাছ-ভাতের থালা।" তাদের আবার দিনে বেশি ডিম খেলেও শরীরের তাপমাত্রা ঠিকই থাকে। ছেলে দৈত্যটি বলল, "তার সাথে আছে তোমার এই তিন রকম ডিমের থালা- ভাজা, পোচ এবং সিদ্ধ। তার সাথে আছে মিষ্টান্নের থালা। এর ভিতরে পায়েস আছে, সেমাই আছে এবং কিছু ছোট ছোট মিষ্টি আছে। তুমি চাইলে দইও আনতে পারি। এবং এরপর তোমার জন্য আমি ফলের থালা নিয়ে এসেছি। দুইটা গোটা তরমুজ কেটেকুটে নিয়ে এসেছি। তার সাথে গোটা একটা কাঠালেরও ভাল ভাল গোল্লাগুলো নিয়ে এসেছি। এরপর ৫০০টা আঙ্গুর আর ৫০০টা কালো জামও আছে। তুমি তো আবার আম খেতে খুব একটা পছন্দ কর না। আর এখন আমি অদৃশ্য ও অস্পৃশ্য হয়ে মানুষের দেশে গিয়েছিলাম। কিন্তু কোথাও আমি একটা পাকা আম পাইনি। তাই আর আজকে আম দিলাম না। তুমি আবার কাঁচা আম খেয়ে ছ্যাঁ ছ্যাঁ করবে। শোন, তারপর তোমাকে যে আমি কাঁঠাল দিয়েছি না, কাঁঠালের মধ্যে তো বীচি আছে। কাল আমি মানুষের দেশে অদৃশ্য ও অস্পৃশ্য হয়ে গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখি, ছোট্ট একটি বাচ্চা বইতে পড়ছে, "কাঁঠাল খাওয়া যায়, কাঁঠালের সাথে তার বীচিও রান্না করে খাওয়া যায়। তাই আমি বীচিও রান্না করে এনেছি। খেয়ে দেখ তো নতুন পদটা।" এক মিনিটের মধ্যেই গবগব করে সব খাবার শেষ করে ফেলল মেয়ে রাক্ষসটি। এরপর বলল, "আমার পানি কোথায়? পানি আননি? কেন আননি? আজ খুবই অল্প। মানুষ যতটুকু পানি খায়, ঠিক ততটুকু। আরো অতটুকু পানি তুমি আমাকে দেবে। আর সাথে শুনেছি, মানুষেরা নাকি জুস খায়। জুসের খোঁজ করো তো তুমি।" ছেলে দৈত্যটি বলল, "ঠিক আছে। কিন্তু জুস যে অনেক রকম হয়। কিসের জুস খাবে তুমি? দাঁড়াও, তুমি তো আবার কাঁঠাল খুব ভালবাস। তাহলে কাঁঠালের জুস কি ভালবাসবে? নিশ্চয়ই বাসবে। আমি বরং মানুষের রূপ নিয়ে মানুষের দেশে যাই। গিয়ে দোকান থেকে কাঁঠালের জুস কিনে আনব। আর আমি তো প্রয়োজন ছাড়া কিছু করি না। এখন তো শুনলাম, মানুষের দেশে আবার টোকা না কিসের বিনিময়ে জানি দোকান থেকে কিনতে হয়।" মেয়ে দৈত্যটি আবার টাকার ব্যাপারে জানত। সে বলল, "টাকা গো, টাকা। তবে সেটা এমন একটা জিনিস, যা উপার্জন করতে হয়। আর তা পাওয়া যায় ব্যাংকে। ব্যাংকে জমাও রাখা যায়। তুমি বরং সুন্দর কোন একটা ফল ফল বিক্রি কর। দেখবে, মানুষ তোমাকে টাকা দেবে। তারপর সেই টাকা দিয়ে তুমি আমার জন্য কাঁঠালের জুস কিনে আন। এক ঘন্টার মধ্যে আমার কিন্তু কাঁঠালের জুস চাই। ছেলে দৈত্যটি দৌড়ে গিয়ে মানুষ সাজল। এরপর মানুষের দেশে চলে গেল। কয়েকটা পেয়ারা নিয়ে এসে বিক্রি করতে বসল। মানুষেরা কিনল, আর টাকা দিয়ে গেল। আর সেই টাকা দিয়েই দৈত্যটি কাঁঠালের জুস কিনে নিয়ে মেয়ে দৈত্যটির কাছে গেল। আর ছেলে দৈত্যরা নিজেদের খাবার নিজেরা যোগাড় করে নিজেরাই খায়। আর অত রকম পদ নিজেরা খেতে চায় না। যা বেশি পায়, তাই খায়। নিজের জন্য আর অত কষ্ট করতে যাব কেন?

Tuesday, May 29, 2018

মজার ক্লাস

এক ছিল এক স্কুল। সে স্কুলে একদিন এক মজার শিক্ষিকা এলো। সে আবার বাচ্চাদের ৩০% পড়িয়ে ৬০% মজা দিত। আর ১০% তাদেরকে ইচ্ছামত কথা বলা ও খেলার সুযোগ দিত। এতে বাচ্চারা তার ভক্ত হয়ে যেত, আর পরীক্ষার আগে ৪০% পড়িয়ে ৬০% মজা দিত, আর ইচ্ছেমত কথা বলা ও খেলার সুযোগ টিফিন টাইমে উপভোগ করতে বলত। একদিন ক্লাসে সে পড়ানো শেষ করে বাচ্চাদের সাথে মজা করার পালা। আজকে একটু অন্যরকম হবে মজার জিনিসটা। শিক্ষিকাটি বলল, "বাচ্চারা! আজকে আমি তোমাদেরকে একটা ধাঁধা বলব। আমার নিজের বানানো ধাঁধা। বলতো, এমন কি জিনিস আছে, যা ধনী মানুষেরাও মজা দিয়ে খায় আবার গরীব মানুষদেরও পিপাসা মেটানো আর মজার খাবার খাওয়ার অসুবিধা মিটে যায়?" বাবুরা একেকজন একেক জিনিস বলতে থাকল। কারোটাই সঠিক হলো না। কারণ, সেদিন সবথেকে বুদ্ধিমান বাবুটি অনুপস্থিত ছিল। তবে তার বেস্ট ফ্রেন্ড তার কাছ থেকে বুদ্ধিমান হওয়ার চেষ্টা করেছিল। তার কাছে প্রত্যেকদিন বুদ্ধির ক্লাস করত। কিন্তু তাতে কি আর ১০০% বুদ্ধি পাওয়া যায়? ৩০%ই না হয় পাওয়া গেল। বুদ্ধিমান বাবুটির বেস্ট ফ্রেন্ড হাত জাগিয়ে বলল, "নারকেল হতে পারে?" শিক্ষিকা বললো, "কিছুটা হলেও পুরোটা হয়নি। কারণ, নারকেল তো শক্ত থাকে। শুধু পানিটাই খুব মজা দিয়ে খাওয়া যায়। বাকিটা তো সবার কাছে মজা নাও লাগতে পারে। আমার উত্তরের থেকে এটার দাম কিন্তু বেশি হয়ে যাচ্ছে।" স্কুলটির পাশের বিল্ডিংয়েই ছিল সবথেকে বুদ্ধিমান বাবুর বাড়ি। তাদের বারান্দা থেকে তার স্কুল দেখা যেত। বাবুটি তখন বারান্দায় বসে ছিল। সে বেখেয়াল হয়েছিল, কিন্তু হঠাৎ সে দেখল, সবাই খুব চেঁচামেচি করছে ক্লাসে। সে তার বেস্ট ফ্রেন্ডকে জোরে ডাক দিয়ে বলল, "তানিশা! শোন্ না। সকাল বেলা মাথাব্যথা করছিল, তাই আজ স্কুলে আসিনি। এত চিৎকার চেচামেচি করছিস কেন তোরা?" তানিশা বলল, "তোর মাথা ব্যথা ছিল? আমরা চেচামেচি করছি; কারণ মিস আমাদেরকে একটি ধাঁধা দিয়েছে। আমার উত্তরটা না সঠিক হয়নি।" বুদ্ধিমান বাবুটি বলল, "হ্যাঁ, হ্যাঁ! কি বললি? ধাঁধা? I Love ধাঁধা! বল্ না রে, কি ধাঁধা? আমিও তোদের সাথে একটু মজা করি। তুই তো আমার বেস্ট ফ্রেন্ড, হিংসা করবি না যে, আমরা পড়ার পর মজা করছি, আর তুই না পড়েই মজা করছিস।" তানিশা বলল, "শোন, ধাঁধাটা হচ্ছে, এমন কি জিনিস আছে, যা ধনী মানুষেরাও মজা দিয়ে খায় আবার গরীব মানুষদেরও পিপাসা মেটানো আর মজার খাবার খাওয়ার অসুবিধা মিটে যায়? এই ধাঁধাটির উত্তর আমি নারকেল বলেছিলাম, কিন্তু হয়নি; কারণ, দাম নাকি খুব বেশি, আর নারকেল নাকি খুব শক্ত। সবার পছন্দ নাও হতে পারে। তুই নিশ্চয়ই পারবি। বল্ না রে।" বুদ্ধিমান বাবুটি বলল, "এটাও এখনো পারলি না? এটা তো পানিতাল!" বুদ্ধিমান বাবুটি খুব জোরে চিৎকার দিয়ে ডাকল, "ম্যাম! আমি নিশা। উত্তরটা পানিতাল। ঠিক হলে পরের ক্লাসে জানিয়ে দিবেন। এখন আমার মা ডাকছে, বাই!" এই বলে সে দৌড়ে মা'র কাছে চলে গেল। শিক্ষিকা তানিশাকে বলল, "এ কি তানিশা? নিশাকে তো জ্বলজ্যান্ত দেখছি। ও আজকে আসল না কেন?" তানিশা বলল, "ম্যাম, ওর নাকি মাথাব্যথা। উত্তরটা কি ঠিক হয়েছে?" ম্যাম বলল, "১০০% ঠিক। ওকে আমি কালকে একটা লজেন্স দেব। মাথাব্যথা দিয়ে ধাঁধার উত্তর এত সহজেই দিয়ে দিল? ঠিক আছে। আমি যাচ্ছি। বাই, বাই, স্টুডেন্ট! তোমরা যা ইচ্ছা তাই কর। আমি একটু বেলুন নিয়ে আসছি। বেলুন নিয়ে এসে আজকে আমরা সবাই মিলে মজা করব। ফাটাবো, আজকে প্রত্যেকের জন্য দুটা দুটা করে বেলুন এনেছি। আসলে তিনটা করে দেব। কিন্তু দুটো ক্লাসে মজা করবে, আর একটা বাড়িতে নিয়ে যাবে। আর যাদের ভাই-বোন আছে, আর বেশি দরদী, তারা যাদের কোন ভাই-বোন নেই আর বাসায় খেলতেও চায় না, তাদের থেকে শেয়ার করতে পারবে। চল, আমরা মজা করি।" তারা অনেক মজা করল। পাশে যে একটা বিল্ডিং আছে, আর অসংখ্য বুড়ো-বুড়ি আছে, তা তারা মনেই রাখল না। এমন সময় প্রিন্সিপাল মিস ক্লাস ভিজিট করার জন্য আসলেন। ক্লাসে এসে তো তিনি রেগে গেলেন। কারণ, একজন দরজার দিকে একটা বেলুন ছুঁড়ে মারছিল, আর সেই মুহুর্তে প্রিন্সিপাল মিস এসে প্রিন্সিপালের মাথায় বেলুনটা লাগল। প্রিন্সিপাল তো রেগে গড়গড় করা শুরু করল। বলল, "সেলিনা! এইসব কি? এসবের জন্য কি তোমাকে নিয়োগ দিয়েছি? এটা কি ক্লাস পার্টি নাকি? কি হচ্ছে এইসব? আরেকদিন ক্লাস ভিজিট করতে এসেছিলাম, তখন দেখেছি সবাই মিলে দাবা খেলছে। যাদের দাবা পছন্দ নয়, লুডু খেলছে। আর যাদের কোনটাই পছন্দ নয়, তারা প্লেন উড়াচ্ছে। সেদিনও একটা প্লেন এসে আমার মাথায় পড়েছিল, আর এখন আবার একটা বেলুন এসে পড়ল। তোমায় আমি আজকেই বরখাস্ত করব।" শিক্ষিকা বলল, "আরে আর আপা! কি সব বলছেন? কিসের সাথে কি, পান্তা ভাতে ঘি! আজকে সব স্টুডেন্টরা আমার দেয়া ছোট্ট টেস্টে সক্কলে এমনকি বোকা স্টুডেন্টরাও ১০০ তে ১০০ পেয়েছে, আর যারা একদম ভাল করেছে, ১০০-এর ও ভাল, তাদেরকে আমি আর কিছু করতে পারিনি, ১০১ দিতে বাধ্য হলাম।" তখন আবার বুদ্ধিমান বাবুটি এসব শুনছিল। তার আবার তিন সেকেন্ডে পাঁচ পৃষ্ঠা লিখে ফেলার অভ্যাস ছিল। সে তাড়াতাড়ি একই প্রশ্ন বারবার অনেক ভালোমত সাজিয়ে ঝটপট করে এক মিনিটের মধ্যে ৬০টি কাগজ বানিয়ে ফেলল। সাথে ১০০ তে ১০০ নম্বরও লিখে দিল। আর একজনেরটা খুব ভালো দিল। আরো দু'জন বন্ধুকেও খুব ভালো করে লিখে দিল। আর তাদের ১০০ তে ১০০ না দিয়ে ১০০ তে ১০১ দিয়ে দিল। এরপর তাড়াতাড়ি পৃষ্ঠাগুলো ভাঁজ করে তানিশার দিকে নিক্ষেপ করল। দু'জনই আবার ভালো thrower ও catcher ছিল। নিশা আস্তে আস্তে তানিশাকে বলল, "শোন! আমি তো জানি যে, তোরা খুব তাড়াতাড়ি অনেক কিছু মুখস্থ করে ফেলতে পারিস। এমনকি ১০ সেকেন্ডের মধ্যেও করে পারিস আশপাশে ঢাকঢোলের শব্দ থাকলেও। তাড়াতাড়ি এগুলো সবাইকে একজন একজন করে পাস করে দে। তাড়াতাড়ি কর। খুউব তাড়াতাড়ি। এই নে তাড়াতাড়ি।" তানিশা বলল, "ধন্যবাদ, নিশা। অনেক ধন্যবাদ।" এই বলে তানিশা খুব তাড়াতাড়ি সবাইকে পাস করে দিল, আর কিছু করতে হবে না, শুধু মুখস্থ কর। আর প্রিন্সিপাল মিস খাতা দেখতে চাইলে এই কাগজটা উপরে জাগিয়ে তুলবে। আর আমি খুব তাড়াতাড়ি চোখ টিপ মারতে পারি। আমি মিসকে চোখ টিপ মারব। তুই এটা তাড়াতাড়ি তোর সামনের জনকে পাস করে দে, আর তাকেও বল সামনের জনকে পাস করে দিতে। এমন করতে করতে চলতে থাক, আর একদম সামনের বেঞ্চে চলে গেলে খুব জলদি করে পাশের বেঞ্চে পাস করে দিবি। এরকম করতে করতে এক মিনিটের মধ্যে যেন খুব তাড়াতড়ি সব ঠিকমত হয়। আর এই এক মিনিট কি করতে হবে, তা আমার জানাই আছে।" এই বলে তানিশা হাত তুলল। তানিশা প্রিন্সিপাল মিসকে বলল, "ম্যাম! আপনার তো সোনালী রং খুব পছন্দ। ঐ দেখুন, সোনালী গ্লিটারস সহ এই বেলুনটা আপনার জন্য। ঐ হার্ড বেলুনগুলোও আপনার জন্য। দেখুন, আমরা তো আপনার স্কুলের সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্যই ক্লাসরুমটাকে কততো সুন্দর করে সাজিয়েছি! আরো সাজাবো ভেবে বেলুন নিয়ে এসেছি। বেলুনগুলো দিয়ে প্রথমে না হয় বাচ্চারা একটু খেলতেই পারে। একটু পর এসে আপনি দেখবেন, আপনার ক্লাসটা একদম রাজপ্রাসাদ হয়ে গেছে। আপনার স্কুলের নাম হোক, এটা কি আপনি চান না? তাহলে এই বেলুনটা নিয়ে গিয়ে বাইরে জাগিয়ে তুলে বলুন, আমার স্কুলের মত সুন্দর স্কুল আর হয় না, দেখুন বাচ্চাগুলোও কি ভালো, নিজেদের বেলুনও আমার জন্য উৎসর্গ করছে! এই কথা বলুন আপনি, আর দেখুন আপনার স্কুলের খুব নামও হতে পারে। এ কাজটা আপনি করে দেখুন না! আপনার কি মনে হয়, এটা একটা ফালতু আইডিয়া? তাই যদি মনে হয়, তাহলে আপনার স্কুলের নাম তো জীবনেও হবে না। আপনি এক্ষুণি ওদিকে গিয়ে কাজটা সেরে ফেলুন।" এই বলে তানিশা চুপ করে বসে পড়ল। প্রিন্সিপাল বলল, "ওহ! Brilliant Student! তুমি খুব বুদ্ধিমতী। শোন, তুমি এখন চুপটি করে বসে থাক, আমি এক্ষুণি এটা জাগিয়ে তুলে কাজটা সেরে আসছি।" এই বলে প্রিন্সিপাল মিস চলে গেল গ্লিটারের বেলুনটা নিয়ে। তারপর তানিশা দৌড়ে গিয়ে মিসের কাছে গেল। "ম্যাম! বুদ্ধিটা নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন! আর চলবে না। প্রিন্সিপাল মিস নিশ্চয়ই অনেক সময় ধরে এ কাজ করবেন। তিনি চান, তার স্কুলের নাম হোক। আপনি এই ফাঁকে আপনার signature গুলো করে ফেলুন। তবে আপনার সিগনেচার যা সহজ, আপনি একজনকে করে দিন, আমরা ঝটপট করে কপি করে ফেলি। শুধু আরিয়ান আর সামিয়াকে রিয়ালটা দিতে হবে। তারা আবার কপি করায় খুব একটা পারদর্শী নয়।" মিস বলল, "আরে পাগল নাকি? দাও, তাড়াতাড়ি করে ফেলি।" Signature করা শেষ হতে না হতেই প্রিন্সিপাল মিস এসে হাজির। বলল, "তা তো আমি করেছি। এখন দেখি স্কুলের নাম হয় কিনা। তোমরা যে বলছ, তোমাদের টেস্ট হয়েছে, তার প্রমাণ কি?" সবাই তাদের শিট জাগিয়ে তুলল। কারোটাই ৯৯.৯৯ ই পেল না। সবাই ১০০। কেউ কেউ ১০১। প্রিন্সিপাল বলল, "বাহ! কিন্তু ১০১ যে কি করে তোমরা পেয়েছ, তা তো দেখতে হবে। আর নকল করেছ নাকি, তা তো দেখতেই হবে।" সে বেশির ভাগ স্টুডেন্টেরই পড়া নিল। সবাই খুব জলদি উত্তর দিয়ে দিল। এরপর প্রিন্সিপাল মিস চলে গেল। এরপর মিস 'নিশা' বলে জোরে ডাক দিল জানালার কাছে। "নিশা! এদিক এসো। তুমি আমাকে বাঁচালে। তোমার এত বুদ্ধি আমি আগে ভাবতে পারিনি। তবে এখন বুদ্ধি নয়, গুণও লেগেছে। আর শুধু তোমার বুদ্ধি আর গুণই নয়, তোমাদের সবার গুণ। আর তানিশার বুদ্ধি। সবাই খুব ভালো কাজ করেছ। নিশা, তোমাকে আগামীকাল আমি পাঁচটা লজেন্স এনে দেব। আর তোমার এক মাসের বেতন আমিই দিয়ে দেব। তুমি শুধু Fees Book টা আমার কাছে দিয়ে দিও। আর তোমাদের সবাইকে একটা করে ছোট চকলেট দেব। কিছু মনে করো না, যে নিশা absent থেকেই এত কিছু করে ফেলল। তবে শুধু নিশা থাকলে কিন্তু কিছুতেই আমায় উদ্ধার করতে পারত না। আর নিশা যদি present থাকত, তাহলেও তো হতো না। ঘটনাটা কি সুন্দর একের পর এক সিরিয়ালি ঘটে গেল!" এইভাবেই তারা বুদ্ধির জোরে মিসকে বাঁচিয়ে দিল।

পচা মেয়ে

এক ছিল এক মেয়ে। সে খুবই দুষ্টু ও পচা ছিল। তার দাদু তাকে বলেছিল, 'বিসমিল্লাহ' না বলে খেলে নাকি খাবারটা শয়তান খেয়ে ফেলে। সে (মেয়েটির দাদু) আবার বাড়িয়েও কিছু কথা বলত। সে বলেছিল, 'বিসমিল্লাহ' প্রথমে না বলে পরে যদি কেউ বলে, তাহলে শয়তান আবার বমি করে তা প্লেটের মধ্যে ফেলে দেয়। আসল কথাটা হলো, মাঝখানেও বলা যায়, তবে প্রথমেই বলা উচিত। আর কেউ যদি নাই বলে, তাহলে তো পুরো খাবারটাই শয়তান চেটেপুটে খেয়ে নেয়। বাবুটি আবার খুব জেদী আর পচা ছিল। একদিন তার মা একটা সুন্দর জেলির কেক তৈরি করেছিল। দেখেই সে দৌড়ে এসে সবার আগে গবগব করে অর্ধেকটা খেয়ে নিল। তখন তার বাবা আবার অফিস থেকে কাচা আম নিয়ে আসল। বাবুটি কিন্তু জেলির কেক খাওয়ার সময় 'বিসমিল্লাহ' বলেছিল। আর বলেছিল, এত সুস্বাদু জেলি কেক আমি শয়তানকে দেব নাকি? বাবা যেই এসে বলল, "মামুনি, দেখ তোমার জন্য কাঁচা আম নিয়ে এসেছি। টক হলেও খুব ভালো।" বাবুটি আবার টক খুব ঘৃণা করত। এক ফোঁটা টক কিছু দিলেই সে 'ওয়াক' বলে ফেলে দিত। দাদু আবার এমন ভাবে বলল, যাতে সে না খাওয়ার কোন চান্সই না পায়। আর যাতে না খাওয়ার কথা বললে সে খারাপ প্রমাণিত হয়। দাদু বলল, "আরে, আরে! টক আম এনেছ? আমার দাদুমনিটা তো অনেক সুন্দর করে টক আমটা খেয়ে নেবে! কোন কথা বলবে না। লক্ষ্মী হয়ে গেছে না? আর যদি না খায়, তাহলে তো আমার সোনা দাদুটা আবার পচা হয়ে যাবে। খুব পচা হয়ে যাবে। আর সেটা কি আর আমার দাদুমনি কখনো করবে নাকি? আমার দাদুমনিটা তো খুব লক্ষ্মী!" মেয়েটা বেকায়দায় পড়ে গেল। সে আবার বেশ পাকাও ছিল। তাই সে বলল, "ঠিক আছে, আমি না হয় খেয়েই নেব।" এই বলে সে নাক ভেঁচকিয়ে বিরক্তির মত শব্দ করল। এরপর আমটা খাওয়ার সময় তার 'বিসমিল্লাহ' এর কথা একদম ভালোমত মনে থাকলেও সে মনে মনে বলল, "ইস! টক আম? একদম বাজে লাগে আমার খেতে। এই টক আম আমি খেতে যাব কোন্‌ দু:খে শয়তান থাকতে? আমি বিসমিল্লাহ বলবই না। যাতে আমার আর বেস্বাদ খাবার না খেতে হয়। শয়তানই আমার কাজটা করে দেবে। মাও আমায় বকবে না, আমার খাওয়াও লাগবে না। আর দাদুও আমাকে পচা বলে প্রমাণিত করতে পারবে না।" তার বিসমিল্লাহর কথা একদম মনে থাকলেও সে 'বিসমিল্লাহ' বলল না। কাজটা কি সে ঠিক করল? যতই বুদ্ধি কাজে লাগাক না কেন, বিসমিল্লাহর কথা মনে না থাকলেও একটা কথা, তার জলজ্ব্যান্ত বিসমিল্লাহর কথা মনে থাকলেও সে একটুও বলল না; সে আরো ভাবল, শয়তানই বুঝি তারটা খেয়ে নেবে।" আসলে তো শয়তান আর তার বদলে আমটা পুরো খেয়ে নেবে না। বরং ভাগ বসাবে, আর মেয়েটারও খাওয়া থেকে অব্যাহতি মিলবে না, বরং তাকে যে প্রকারান্তরে শয়তানের লালাই খেতে হলো! এভাবে অতি চালাকি করতে গিয়ে সে লাভবান হবার পরিবর্তে ক্ষতিগ্রস্তই হলো।

Friday, May 25, 2018

মেলার ছড়া

সেই যে বসেছে মেলা
আজকে দুপুর বেলা-
দুই বোনের এক নীলা
আরেকজন শীলা।
চল্‌ না গিয়ে দেখে আসি মেলা,
নইলে তুই মিস করবি খেলা।
দাঁড়াও ভাই আসছি আমি
শেষ করে নেই কলা।

Tuesday, May 22, 2018

গরীবদের স্কুল

এক ছিল এক ধনী লোক। সে সবাইকে সমানভাবে দেখত। নিজে যা খেত, নিজের পরিবার থেকে শুরু করে ভিক্ষুককেও তাই খাওয়াতো। একদিন সে দেখল, একটি গরীব ছেলে তার মাকে বলছে, "মা! আমিও স্কুলে যেতে চাই।"
আর মা কষ্ট পাচ্ছে। পরদিন সে দেখল, একটি গরীব মেয়ে ধনী বাচ্চাদের স্কুলে যেতে দেখে কান্না করছে। লোকটি ভাবল, 'ওই  বাচ্চারাও তো বাচ্চা। ওদের জন্যও তো কিছু করা উচিত। তাদেরও শিক্ষার অধিকার আছে। আমার চোখে ২জন ধরা পরলেও এমন বাচ্চা আছে অনেক। কেউ ওদের কথা না ভাবলেও আমি ভাবব। তাই প্রথমে ওই ২জন বাচ্চাকে ডাকতে হবে।' এই ভেবে সে ওই ২জন বাচ্চাদের কাছে গিয়ে বলল, "তোরা কি লেখাপড়া করতে চাস? স্কুলে যেতে চাস? তবে ওই মাঠে আমার ছোট ঘর যাতে কেউ থাকে না সেখানে তোদের বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে আয়।" গরীব বাচ্চারা এক কথায় রাজি হয়ে গেল। ওই মাঠে লোকটির যে ছোট ঘর ছিল সেটি স্কুল হিসেবে ধরা হল। সব গরীব ছেলেমেয়েরা এসে হাজির হলো ঐ ঘরে। তারপর লোকটি বলল, "আমি এখন জরুরী কিছু কথা বলল। আর এগুলো শোনার পর তোমরা এখানে পড়াশুনা করতে পারবে। তবে আমার বলা নিয়মগুলো মেনে চলবে। ভেবো না যে, খুব কঠিন। তবে শুরু করছি। প্রথম তিন মাস আমি তোমাদের ফ্রি পড়াবো। এরপর মাসের বেতন হবে ৩০ টাকা। আর বেতন দেয়ার উপায়ও বলে দিচ্ছি। তিন মাস তোমাদের এমনভাবে পড়াব, যাতে নিজেরা তো বুঝবেই, অন্যদেরকেও ভালভাবে বুঝাতে পারবে। এরপর তোমরা তোমাদের মা-বাবাকে শেখাবে, আর তাদের বলবে অন্য কোন জায়গায় টিচিং করে টাকা আয় করে আনতে।" একজন বাচ্চা হাত তুলে বলল, "টিচিং মানে কি? এরকম কথা বলছেন কেন? পাঠশালায় তো একদিনও পড়িনি। ইংরেজি শব্দ জানব কিভাবে?" লোকটি বলল, "ঠিক আছে, ঠিক আছে। টিচিং করা মানে শেখানো। তোমাদের মা-বাবা টিচিং করে যে টাকা পাবে, সেই টাকা থেকেই প্রতি মাসে ৩০ টাকা আমাকে দেবে। আর তোমরা তো লেখাপড়া করে টায়ার্ড হয়ে যাবে। সরি, টায়ার্ড নয়, ক্লান্ত। সেজন্য খাবারও দেয়া হবে। তোমাদের নিশ্চয়ই খাবারের অভাব। তবে একটু কষ্ট করে তোমাদের মা-বাবাদেরকে তাদের নিজেদের খাবার যোগাড় করতে হবে। তবে তোমাদের খাবার যোগাড় করতে হবে না। আমি তোমাদের খাবার দেব। খাবারেরও আবার মান আছে। এখানে এখন মানুষ হয়েছে ৩০ জন। ৫ টা ডিম আনা হবে একদিনে। তিনটা আম আনা হবে। আর ৩০টা স্ট্রবেরী আনা হবে। একেক দিন একেক জনের ভাগে একেক খাবার পড়বে। কেউ ঝগড়াঝাটি করবে না, আর এমনও করবে না আমি ভাল খাবার পেয়েছি, তুই পাসনি! আর কারো যদি পাঠশালায় এসে ক্লান্তি ক্লান্তি বা অস্বস্তির ভাব লাগে, তাহলে তাকে ভাল খাবার দেয়া হবে। আর তোমাদের মধ্যে যাদের যাদের খারাপ স্বভাব আছে, তাদের স্বভাব এমনিতেই ভাল হয়ে যাবে। কারণ, প্রথম এক মাস আমি সবার থেকে বেশি স্পেশাল করে তোমাদের পড়াব। সবাই নিয়মগুলো বুঝেছ? কাল থেকে তোমাদের আমি পড়াব। আর পানির ফিল্টারও থাকবে। আর একটি গ্লাস থাকবে। প্রত্যেকে একটু একটু করে ধুয়ে পানি খেয়ে তারপর বাড়ি যাবে। কেউ ডিম পেলে অর্ধেক ডিম পাবে। আমগুলোকে অনেক ভাগ করা হবে, যাতে ১০ জন পায়। আর স্ট্রবেরী পেলে তিনটা তিনটা করে পাবে। সবাই নিয়মগুলো বুঝেছ তো? দুষ্টুমি করলে কিন্তু আর পড়তে দেব না। দেখবে, আস্তে আস্তে এখানে পড়তে পড়তে তোমরা অনেক বড় হয়ে যাবে এবং তোমাদের জীবনও ধনীদের জীবনের মত হয়ে উঠতে পারে। আমি সবাইকে কিন্তু একইভাবে দেখব। কাউকে বেশি পছন্দ, কাউকে কম পছন্দ- এরকম করবো না। কিংবা কারো দিকে একটু বেশি নজর দেব না। কোন ভিক্ষুক এসে যদি একটু খাবার চায়, তাহলে নিজেদের টিফিন থেকে ছয় ভাগের এক ভাগ তাকে দিয়ে দিতে হবে কিন্তু। নইলে কিন্তু হবে না। আর যদি কোন ধনী ব্যক্তি এসে বলে, আজকে আমার ফ্রিজের খাবার শেষ হয়ে গেছে, কিনতে যেতে পারব না, তাহলে তাকেও কিছু দিতে হবে, তবে তাকে বলে দিতে হবে, বেশি অলসতা কখনো করবেন না। অলসতা করলে কোন না কোন দিন খারাপ ফলই হবে। এবার সবাই বাড়ি যাও, আর খুশীর খবরটা মা-বাবাকে জানিয়ে দাও যে, তোমরাও স্কুলে পড়তে পারবে। আর যদি তোমাদের পোশাকের দরকার হয়, তাহলে মাসে ৩০ টাকার সাথে ৫ টাকা যোগ করে ৩৫ টাকা দিতে হবে। একটা ড্রেস দিয়ে দেব। আর তোমার মা-বাবাকে পড়াতে ভুলো না। এরপর নতুন স্কুলটিতে ছাত্র-ছাত্রী বাড়তে থাকল। এরপর গরীব বাচ্চারাও একদিন খুব জ্ঞানী হয়ে উঠল। এভাবেই লোকটি অনেক বছর স্কুল চালিয়ে যাচ্ছিল। এরপর দেখা গেল, তার দেখাদেখি অন্য কিছু মানুষেরাও এরকম স্কুল খুলছে। এরপর সে স্কুলগুলো দেখেও তার কাজ বন্ধ করল না। সেও তার কাজ চালিয়ে গেল, আর অন্য স্কুলগুলোও তাদের কাজ চালিয়ে গেল। আর এখন থেকে গরীব বাচ্চাদেরও পড়াশুনার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হলো।

Tuesday, May 15, 2018

সবচেয়ে ধনী ও ভালো রাজা

এক ছিল এক রাজা। সে ছিল খুবই ধনী এবং ভালো। তোমরা নিশ্চয়ই ভাবছ যে, ধনী মানে অনেক হীরা-জহরত এবং সোনাদানা আছে। কিন্তু সে কতটা ধনী, গল্পটা পুরোপুরি পড়লেই বুঝতে পারবে। একদিন এক ভিক্ষুক রাজার কাছে গিয়ে বলল, "মহারাজ! আমি এখানে নতুন এসেছি। রাজ্য কেমন, রাজা কেমন, কিচ্ছু জানি না। তবে আমাকে কি একটা সাহায্য করা যাবে? আমার এখন কিচ্ছু নেই, আশ্রয়, খাবার, পানি কিচ্ছু না। আপনি কি সাহায্য করবেন?" রাজা বলল, "অবশ্যই! আমি কেমন রাজা, এক্ষুণি বুঝতে পারবে। প্রহরী! রাজ্যের পশ্চিম দিকের ঐ ছোট্ট ঘরটাতে এই ভিক্ষুককে থাকতে দাও। এক মাসের খাবার ঐ ছোট্ট ফ্রিজটাতে ভরে ফ্রিজটা তাকে দিয়ে দাও। ছ্টে একটা ওভেনও দিয়ে দাও। আর পড়ার জন্য মজার কোন বইও দিয়ে দাও। তাকে ভালো ভালো পোশাকও দাও। আর তার সাথে কয়েকদিনের মধ্যে যদি অন্য কোন ভিখারী আসে, তাহলে তাকেও ঐ ঘরেই থাকতে দেবে। এবং তাকে যে পরিমাণ জিনিস দিয়েছ, তার দ্বিগুণ জিনিস দিয়ে দেবে। তাহলে সে আরো একজন সঙ্গী পাবে। যাও, যা যা বললাম, তা তা কর।" তোমরা ভাবছ, শুধু ভিখারীর প্রতিই রাজা দয়া দেখিয়েছেন। প্রহরী যে রাজার এত কথা শুনবে, তার জন্য প্রহরীকে কিছু দেবে না, এটা ভাবছ? একদমই না। রাজা বলল, "আর প্রহরী! তুমি কাজগুলো করে আসার পর তুমি আমার ফ্রিজ থেকে তিনটা রসগোল্লা খেতে পার।" প্রহরীটা আবার মিষ্টি জিনিস খুব পছন্দ করত। সে তো শুনে ৫ মিনিটের মধ্যেই সব কাজ শেষ করে ভিখেরীকে ঐ বাড়িতে বসিয়ে দিয়ে চলে আসল। তারপর বলল, "আমার রসগোল্লাটা কি এখন নিতে পারি?" মহারাজ বলল, "এত তাড়াতাড়ি করলে যে! সব কাজ ঠিকমত করেছ তো? ও আচ্ছা, তাকে কি তুমি পানি দিয়েছ?" তখন প্রহরী "আ---!" বলল। রাজা বলল, "মিষ্টির লোভে কাজ ঠিকমত করছই না। যাও, তিন বোতল পানি দিয়ে এসো।" সে এক মিনিটের মধ্যে দৌড়ে এক চোটেই ছয় লিটারের তিনটা বড় বড় বোতল কাঁধে করে চলে গেল। আর ঐ ভিখারীকে দিয়ে এক দৌড়ে চলে আসল। এরপর বলল, "মহারাজ, আমার রসগোল্লা!" মহারাজ বলল, "মিষ্টি খাওয়ার জন্য এত তাড়াহুড়োর কি আছে? তাকে তুমি কয়েকটা ছোট ছোট পাখি দাও। আর এমন পাখি দিতে হবে, যেগুলো কথা বলতে পারে আর সবকিছু বোঝে। আর পাখিগুলোকে ধরে নিয়ে যাওয়ার মত করবে না। এমন ভাব দেখাতে হবে যে, আরেকটা নতুন বন্ধুর কাছে নিয়ে যাচ্ছ, তার কাছে থাকতে পারবে। যাও, ওরকম পাখি দিয়ে আস। যাতে ভিখারীটা্ একা বোধ না করে। প্রহরী এক দৌড়ে গিয়ে তাড়াতাড়ি ওরকম পাখি খুঁজে নিয়ে ভিখারীকে দিয়ে তাড়াতাড়ি এক দৌড়ে আবার ফিরে এল। রাজাকে বলল, "মহারাজ! এবার তো আমায় রসগোল্লাগুলো দিন!" রাজা বলল, "তার বাড়ির সামনে এক ঘন্টার মধ্যে একটা টিউবওয়েল বসিয়ে দাও।" তোমরা হয়তো ভাবছ, রাজা ওয়াদা ভঙ্গ করল। কিন্তু এটা প্রহরীর ভালোর জন্যই করল। কারণ, প্রহরী তাড়াতাড়ি কাজ করতেই পারত না। একদমই করত না। এক মিনিটের কাজ এক ঘন্টায়ই করত। আর এখন তার অভ্যাসও হচ্ছে। আর তাড়াতাড়ি যদি সে সব কাজ করে, তাহলে মাসের শেষে তার টাকাটাও সে অনেক বেশি পাবে। তাই রাজা এমন করছে। অবশেষে সব কাজ করার পর রাজা খুশি হয়ে প্রহরীকে চারটা রসগোল্লা দিয়ে দিল। প্রহরী খুব খুশী হলো। তারপরে চারটা রসগোল্লা একবারেই মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে দিল। আর একবারেই তা শেষ করে ফেলল। এরপর রাজা একদিন ভিক্ষুকের সাথে দেখা করতে গেল। সে বলল, "কেমন আছ? তোমাকে তো এক মাসের খাবার দেয়া হয়েছে। তো বিশ দিন তো চলেই গেল। দেখি তো, তুমি কতটুকু খাবার শেষ করেছ?" ভিক্ষুক রাজাকে ছোট ফ্রিজটা হাতে করে এনে দেখালো। রাজা বলল, "এ কি, তুমি তো অর্ধেকও শেষ করনি। এত কম খাও কেন?" ভিক্ষুকটি বলল, "আমার অভ্যাস নেই। তাও আমি অভ্যাসের অনেক বেশিই খেয়েছি।" রাজা তো খুব অবাক হয়ে গেল। একেই বলে অভ্যাসের বেশি? আর রাজাটি ছিল এই রকমই ধনী এবং এইরকমই ভালো। তবে এটা কাল্পনিক।

Monday, May 7, 2018

স্বাস্থ্য-রহস্য

এক ছিল এক লোক। সে খুবই স্বাস্থ্যবান ছিল। একদিন সে তার বন্ধুদের সাথে একটা মাঠে দেখা করতে গিয়েছিল। তার বন্ধুদের মধ্যে একজন তাকে জিজ্ঞেস করল, "এই, তুই সবসময় এত স্বাস্থ্যবান থাকিস কি করে? কয়দিন আগে আমার মেয়েটার জ্বর হয়েছে। দু' সপ্তাহ আগে তো আমারও জ্বর জ্বর ভাব এসেছিল। তুই কি করে এত স্বাস্থ্যবান থাকিস?" আরেকজন বলল, "এই দেখ, আমি তো আমার সাথে রুমালই নিয়ে এসেছি। কারণ, এখন আমার ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা ভাব আছে। কিন্তু তুই কি করে সবসময় স্বাস্থ্যবান থাকিস? আজকে সেটা নিয়েই গল্প বল।" আরেকজন বুদ্ধিমান বন্ধু বলল, "তোর ডেইলি রুটিনটাই না হয় বল। তারপর তো বুঝেই যাব।" লোকটি বলল, "ঠিক আছে, শোন। আমি সকাল ৫ টায় ঘুম থেকে উঠি। ফজরের নামাজ পড়ে বাইরে হাঁটতে যাই। হেঁটে এসে আরো এক্সারসাইজ করি। ৬টা বাজলে দিনটার জন্য ভালো করে রেডি হই। আর খাবার জোগাড় করি। ৭টা বাজলে নাস্তা করি।" তখন আরেক বন্ধু বলল, "কি নাস্তা কর? সেটাই তো আসল।" লোকটি বলল, "আমি একটা ডিম পোস, একটা রুটি আর এক বোতল মাঠা নাস্তায় খাই। তারপর খাওয়া শেষ থেকে ১০টা পর্যন্ত বই পড়ি। আর ১০টা থেকে ১১টা আবার কিছুক্ষণ ব্যায়াম করি। তারপর হালকা পাতলা কিছু নাস্তা খেয়ে নেই; যেমন- বিস্কুট। এরপর গোসল করতে যাই। আর গোসল থেকে বের হয়ে দুপুরের খাবার যোগাড় করি। আর সাড়ে বারোটায় দুপুরের খাবার খাই। তোমরা নিশ্চয়ই ১টা ২টার সময় দুপুরের খাবার খাও। কিন্তু আগে আগে খাবার খাওয়াই ভালো। এরপর থেকে বিকাল পর্যন্ত খেলাধুলার কাজ করি। তারপর আবার বিকালের নাস্তা খাই। আর সন্ধ্যায় এক কাপ দুধ খাই। আবার কিছুক্ষণ বই পড়ি। আর রাতে খাবারের যোগাড় দেই। আর রাত ৭টা বাজলেই রাতের খাবার খেয়ে ফেলি। তোমরা নিশ্চয়ই এটা শুনে অবাক হচ্ছ, কিন্তু এটাই ঠিক। এরপর আমি দাঁত ব্রাশ করে নাইট ড্রেস পরে ঘুমাতে যাই। এটাই হলো আমার ডেইলি রুটিন।" তার অন্যান্য বন্ধুরা বলল, "আমরা তো এর পুরোটাই উল্টো করি। এইভাবে তুমি সুস্থ থাক? এখন থেকে আমরাও সেটাই ফলো করব।" এই হলো ঐ লোকটির ডেইলি রুটিন আর এই হলো গল্পের শেষ।

Saturday, May 5, 2018

চালাক কাজের লোক

এক ছিল এক অফিসার। সে অনেক ইনকাম করত। তার বাসায় ছিল এক কাজের লোক। তার (অফিসারের) একটি মেয়েও ছিল। অফিসার একদিন মেয়ের জন্য কাজের লোককে বলল, "তুমি ৬০০ টাকা দিয়ে আমার মেয়ের জন্য গলার গয়না নিয়ে আসবে। ৬০০ টাকায় কেমন হয়, তা তো জানই। সিটি গোল্ড হয়।" কাজের লোকটি আবার ছিল খুব চালাক চতুর। সে বলল, "বাঁচলে ফেরত আনব না? সে কথাটা বললেন না যে!" অফিসারটি বলল, "অত বলার দরকার নেই। তুমি তো জানই।" চালাক কাজের লোক "ঠিক আছে" বলে বেরিয়ে পড়ল। সেই কাজের লোকটি ৬০০ টাকা দিয়ে গলার চেইন কিনতে গেল। দেখল, দাম ৫৮০ টাকা। সে খুশীমনে ৫৮০ টাকা দিয়েই কিনে নিল, আর বাঁচল ২০ টাকা। সে আবার টাকা মারতে পছন্দ করতো। যাতে কেউ সন্দেহ না করে, সেজন্য সে ১৫ টাকা নিজের কাছে রেখে ৫ টাকা ফেরত দিল। আবার কেউ যাতে একদমই সন্দেহ না করে, সেজন্য ক্লান্তি ক্লান্তি ভাব নিয়ে বলল, "উফ! আপনার মেয়েকে যে কত ভালবাসি! তার চেইনের জন্য আমি অনেক দরদাম করেছি। দরদাম করতে করতে হয়রান হয়ে গিয়েছি। শেষে কথার প্যাঁচে দোকানদারকে ৫৯৫ টাকা দিয়ে এটা দিতে বাধ্য করলাম। তারপর অফিসারটি তো দারুন খুশী। বলল, "তোমার মাসের বেতনের সাথে আরো কিছু টাকা যোগ করে দিলাম। আহারে, আমার মেয়ের জন্য কতই না দরদাম করেছ!" আর কাজের লোকটি তো মনে মনে হাসতে থাকল। একদিন অফিসারের মেয়ে বায়না ধরল, লাচ্ছি খাবে। তার বাবা তো লাচ্ছি এনে দিতে চাচ্ছে না। যদি কোন বিষাক্ত কিছু থাকে! কারণ, কয়েকদিন আগে সে ইউটিউবে বাইরের জিনিসের বিষের খবর দেখেছে। এমনিতেই এসবের প্রতি এখন তার ভয়। কিন্তু তার মেয়ে আবার ঘরে বানানো লাচ্ছি কিছুতেই খাবে না। বাবা কত করে বলল, "ইউটিউব থেকে একটি রেসিপি বের করে তা দিয়ে বানিয়ে দেই।" কিন্তু কে শোনে কার কথা? বাবুটি একদমই ছাড়বে না। দোকানের লাচ্ছি কিনে দিতেই হবে। অবশেষে অফিসারটি কাজের লোককে বলল, "যাও, দোকানের লাচ্ছি নিয়ে আস। কিন্তু এক ফোঁটাও যেন বিষ না থাকে। অথবা, আমি তো শুনেছি তোমার বাবুর্চি বন্ধু আছে। তাই তার কাছ থেকে বিষ ছাড়া লাচ্ছি রান্না করিয়ে আন। কিন্তু এনে ভুলেও বলো না যে, ওটা রান্না করা। বলতে হবে, দোকান থেকে কেনা।" চালাক কাজের লোকটি আবারও "ঠিক আছে" বলে চলে গেল। সে গিয়ে মিষ্টি মাঠা কিনে এনে বলল, লাচ্ছি এনেছি। আর বোতলটা বদলাতেও ভুলল না।

Sunday, April 29, 2018

বেল রহস্য

এক ছিল এক বাবু। সে কোনদিন বেল দেখেনি। আর লোকে বলে, নাড়ু বেল। এই নাড়ু বেল কথাটা শুনতে শুনতে বেলের প্রতি তার অভক্তিই এসে গিয়েছে। একদিন তার বাবা গ্রামে ঘুরতে গিয়েছিল আর একটা বেল নিয়ে এসেছিল। বাবা বলল, "মামনি! এই যে একটা বেল নিয়ে এসেছি, যা তুমি কোনদিনও দেখনি।" বাবুটা বলল, "কী! নাড়ু বেল? এটা দিয়ে কী করে?" বাবা বলল, "আরে না, এটা নাড়ুবেল হতে যাবে কোন দু:খে? এটা খাওয়ার বেল।" বাবুটি বলল, "না, না, না। আমি বেল খাবই না।" কোনভাবেই মা-বাবা তাকে বেল খাওয়াতে পারছে না। সে কোনমতেই বেল খাবে না। তার মা বেলের শরবত বানাচ্ছিল। বেলের শরবতের মধ্যে গুড় আর দুধও দিয়েছিল। খুবই মজার ছিল সেটা। কিন্তু এক গ্লাস তো বাবুটার জন্য রেখে দেয়া হয়েছে। কিন্তু বাবুটা কিছুতেই তা খাবে না। তার দাদার আবার এক দোকানদার বন্ধু ছিল। সেই বন্ধু খাবার বিক্রি করত। দাদা তার বন্ধুর কাছে একদিন গেল। গিয়ে বলল, "তোমার কাছে কি খালি ফ্রুট জুসের বোতল আছে? যেটা দেখতে একদম বাচ্চাদের জুসের বোতালের মত।" তখন দোকানদার বলল, "অবশ্যই, এই যে একটা ফ্রুট জুসের বোতল আছে। কিন্তু কেন, ব্যাপারটা কি জানাবেন?" দাদা বলল, "পরে আরেকদিন। এখন বেলের শরবতটা যে জুড়িয়ে একেবারে পান্তা ভাত হয়ে যাবে। ধন্যবাদ, এবার আসি।" এই বলে দাদা বাড়ি ফিরে আসল। তারপর ঐ বোতলটা ভালমত পরিস্কার করে তার মধ্যে বেলের শরবত ঢেলে দিল। তারপর বাবুটার কাছে দাদা গিয়ে বলল, "এই যে আমার সোনা! দেখ, তোমার জন্য কী এনেছি। ফ্রুট জুস এনেছি। এই নাও, মজা করে খেয়ে ফেল।" বাবুটা মনে মনে ভাবল, "দাদা কি বলছে? দাদা তো ফ্রুট জুস খাওয়া পছন্দই করে না। আজকে সে নিজের হাতে আমাকে ফ্রুট জুস এনে দিচ্ছে! কি করে সম্ভব? অন্য কিছু কেন হতে যাবে, দাদা তো একটু আগে বাইরেই গিয়েছিল। বাইরে থেকে নিশ্চয়ই এনেছে। খেয়েই দেখি।" বাবুটা বলল, "দাও দাদা, এক্ষুণি খেয়ে ফেলি।" এক ঢোক খেয়ে বাবুটি বলল, "দাদা! এটা তো অসাধারণ। এমন ফ্রুট জুস কোথায় পেলে তুমি?" দাদা বলল, "কেন, তুমি বুঝি জান না, আমার দোকানদার বন্ধু দিয়েছে?" এরপর বাবুটি বলল, "প্রত্যেক দিন আমাকে এমন ফ্রুট জুস এনে দেবে। না দিলে কিন্তু হবে না। ছুটির দিন আবার দুই বোতল দিতে হবে। অনেক সুস্বাদু।" দাদা বলল, "অবশ্যই দেব। দেব না কেন?" বাবুটা একটু অবাক হল। যেই দাদা কোনদিনও তাকে ফ্রুট জুস এনে দেয় না, এমনকি ফ্রুট জুস দেখলেই নাক ঘোচায়, সে কিনা প্রত্যেক দিন ফ্রুট জুস এনে দেবে। তাও আবার ছুটির দিনে দুই বোতল। তাও বাবুটা সন্দেহ করল না, কারণ বেলের শরবত তার খুবই মজা লেগেছিল। প্রত্যেকদিন দাদা বেল নিয়ে আসে, বোতলে শরবত বানিয়ে ভরে বাচ্চাকে দেয়। কিন্তু তার দাদা অন্য কাউকেও জানায়নি, এমনকি বাবুর মা-বাবাকেও জানায়নি। দাদু একদিন দাদাকে বলল, "এই! এত টাকা যায় কোথায়? আর বাসায় না তুমি প্রত্যেক দিন শুধু বেল আন। সেই বেল যায় কোথায়? আমরা তো কেউ খাই না। দাঁড়াও।" এই বলে দাদু গিয়ে বাচ্চাটাকে জিজ্ঞেস করল, "তুমি কি বেলের শরবত খাও নাকি?" তখন বাচ্চাটি বলল, "জীবনেও না। কিভাবে সম্ভব?" দাদু তো ভাবল, "দাদা হয়তো তার অন্য কাজে লাগিয়েছে। কিন্তু তাই বলে বেল কেন প্রত্যেকদিন আসবে আবার উধাও হয়ে যাবে? হয়তো দাদা কিনে এনে নিজেই খায়।" বাচ্চাটি একদিন দাদাকে এসে বলল, "আচ্ছা দাদা, এই জুসটা একদম অন্যরকম। আমি তো খেয়ালই করিনি। কালকে আমার বন্ধু আমাকে এক বোতল ফ্রুট জুস দিয়েছে, সেটা তো একদম ১০০% আলাদা। খেয়ে খেয়ে পুরো অভ্যস্তই হয়ে যায় বাবুটি। এমন কোন দিন নেই, যেই দিন সে ঐ শরবত খায় না। এতদিন খেলে তো অভক্তি হয়ে যাবার কথা, কিন্তু তাও তার অভক্তি হয় না। একদিন সে দাদার কাছে যাচ্ছিল। তবে সেই সময়টার ১০ মিনিট পরই প্রত্যেকদিন দাদা তাকে ফ্রুট জুস এনে দিত। গিয়ে বাবুটি যা দেখল তা দেখে সে অবাক হয়ে গেল। কারণ, তখন দাদা বেলের শরবত বোতলে ভরছিল। বাবুটা দৌড়ে গিয়ে দাদার কাছে বলল, "দাদা, তুমি কি করছ?" দাদা আবার খুবই চালাক ছিল। তার ভাব দেখে মনেই হচ্ছিল না, ফেঁসে গেছে, তাই অন্য কিছু বলছে। সে সাথে সাথেই কিছু একটা ভেবে ফেলতে পারত। সে বলল, "বোতলে আজকে জুস বিক্রি করেনি। দোকানে মেশিনে জুস বানাচ্ছিল, তা আমি বড় পাত্রে করে এনেছি, আর এখন তা ছোট পাত্রে ঢালছি।" কিন্তু বাবুটিও সাংঘাতিক চালাক। সে বলল, "তাহলে তোমার পাশে কাটা বেল কেন? আর চিনিই বা কেন, আর বটিই বা কেন? বল আমাকে।" দাদা তো খুব ফেঁসে গেল। অবশ্য এখন লুকিয়ে কোন কাজ নেই। আর বাচ্চাটাকে তো বোঝাতেই হবে যে, এটা যে সে বেলের শরবতই খেয়েছে, আর বেলের স্বাদ এই।" তখন দাদা আর কিছু বলতে না পেরে আসল কথাটা বলেই দিল আর স্বীকার করল যে, এতদিন সে খাওয়ানোর জন্য মিথ্যা বলেছে। বাবুটি খুব অবাক হয়ে গেল। বাবুটির তো বিশ্বাসই হয় না। বাবুটি বলল, "নাড়ু বেল, শুনতেই কেমন লাগে। এইটার স্বাদ এরকম হয়, আমি জীবনেও বিশ্বাস করব না।" তখন দাদা বলল, "বিশ্বাস না করার কি আছে, কালকে তুমি দেখো, আমি কিভাবে বানাই, আর কী স্বাদটা হয়।" পরের দিন বাবুটি খেয়ে দেখল, সত্যি বেলের শরবতটা খুব মজার।

Wednesday, April 18, 2018

পুষ্পবৃষ্টি

এক ছিল এক দেশ। সেই দেশটি পৃথিবীতে কিনা, তা আমি জানি না। সেই দেশটি কেউ খুঁজে পায়নি। তবে আমি সেটা জানি। সেই দেশটির নাম পুষ্পষ্টি। আসলে পুরো ফরমটা হচ্ছে পুষ্পবৃষ্টি। কারণ, সেই দেশে তিনটি ঋতু ছিল এবং বর্ষাকালে পুষ্পের বৃষ্টি হতো দিনরাত। ফুলে ফুলে রাস্তাটাই ভরে যেত। দূর দূরান্ত থেকে যেই যেই ভালো মানুষ এদেশের কথা কোনভাবে জানতে পেরেছে, তারা গরীবদেরকে এই দেশের কথা বলেছে এবং তারা নিজেরাও গিয়েছে। খারাপ যারা এটা দেখেছে, তারা তো আর অন্যের উপকার করতে যাবে না। তারা নিজেরা গিয়ে নিজেরাই মজা উপভোগ করে চলে আসে। বর্ষাকালে ঐ দেশে অনেক মানুষ জমা হয়। অন্যান্য দুইটি ঋতুর নামগুলো হলো ধূলাকাল আর স্বর্ণকাল। ধূলাকালে পুরো দেশটির মাটি ধূলায় পরিণত হয়। আর স্বর্ণকালে পুরো দেশের গাছগুলো সোনায় পরিণত হয়। এবং স্বর্ণকালে প্রায় সব মানুষই এদেশে চলে আসতে চায়। তবে বেশি মানুষের আগমনের কারণে সেখানে ঐ সময় বাঘ-সিংহেরও সমাগম ঘটে। তাই মানুষ খুব কম আসে। যারা শিকারী এবং অনেক বেশি সাহসী, তারাই একমাত্র আসে। তবে এ কারণে এই কালটি আর বিখ্যাত রইল না। পুষ্পষ্টি দেশে এখন বর্ষাকালই বেশি বিখ্যাত। আর বর্ষাকালে জন্তু-জানোয়ার আসলেও তারা ফুলের গন্ধেই মাতোয়ারা হয়ে থাকে, মানুষের দিকে মনোযোগ দেবার সময়ই পায় না। আর বর্ষাকাল এমন একটি ঋতু, যেই ঋতুতে গরীবরাও ধনী লোকদের সমান সমান আনন্দ করতে পারে। কারণ, ঐ ফুল গরীবরাও গিয়ে নিতে পারে, কেউ বাধা দেয় না। 

Saturday, April 14, 2018

পহেলা বৈশাখের ছড়া

আজ খুশীর দিন,
আজ পহেলা বৈশাখ;
মারামারি করো না গো,
সব বাজাবাজি থাক।

চারিদিকে কাপড় হলো-
লাল আর সাদা;
সাদা রঙের ফতুয়া
পড়েছে আমার দাদা।

বৈশাখী মেলা হবে
অনেক জায়গাতে;
সবাই এবার খাওয়া সারবে
ইলিশ পান্তাভাতে।

Monday, April 9, 2018

ঘড়ি নিয়ে বিবাদ

এক ছিল এক স্কুল। স্কুলে অনেক অনেক  ছাত্র-ছাত্রী ছিল। একদিন একটা ক্লাসরুমে অনেক বাচ্চারাই ঘড়ি পরে আসল। আর এক জায়গায় দুইজন ঘড়ি পরা মেয়ে পাশাপাশি বসেছিল। তাদের একজনের নাম ছিল শিউলি আর আরেকজনের নাম ছিল বেলি। শিউলির ঘড়িতে ৮:৩৫ বাজে, আর বেলির ঘড়িতে ৮:৩৬ বাজে। বেলি বলল, "এই শিউলি! তোর ঘড়ি তো দেখছি ১ মিনিট স্লো।" শিউলি রাগ হয়ে বলল, "খবরদার, উল্টো পাল্টা কথা বলবি না। আমার ঘড়িটাই ঠিক আছে। তোরটাই এক মিনিট ফাস্ট। আমি আমার বাসার ঘড়ি দেখে দেখে ঠিক করেছি টাইম।" বেলি বলল, "তাতে কি? আমি আমার বাসার ঘড়ি দেখে ঠিক করেছি।" শিউলি বলল, "চুপ কর তুই! তোর বাসার ঘড়িটাই ফাস্ট।" তখন বেলি খুব রাগ হয়ে বলল, "মেজাজটা কিন্তু গরম হয়ে যাচ্ছে। তোর ঘড়িটা কিন্তু স্লো, আমি আগেই বলেছি। আমারটাকে কেন তুই ফাস্ট বলছিস?" শিউলি বলল, "তোর কথাই যে সত্যি হবে, এমন কি? আর তোর ঘড়িটাই যে ঠিক হবে, এমন কি?" বেলি বলল, "আর তোর কথাই কি সবসময় সত্যি হবে নাকি?" এই ঝগড়া আর কেউ থামাতে পারছে না। টিচার পড়াও পড়াতে পারছে না। এরা চিৎকার-চেচামেচি করে ক্লাসটা একেবারে মাছের বাজার করে দিয়েছে। টিচার খুব রাগ হয়ে প্রিন্সিপালের রুমে চলে গেল। সে এতই রাগ হয়ে গিয়েছিল যে, প্রিন্সিপালের সাথেও তার একটু উঁচু গলা ছিল। "আপা! আমি কি কিছু কথা বলতে পারি?" প্রিন্সিপাল বললেন, "বল।" টিচার বলল, "আপনার স্কুলে ভর্তি পরীক্ষার সময় বেলি আর শিউলি কি পাস করেছিল?" তখন প্রিন্সিপাল বললেন, "বেলি আর শিউলি? ঐ দুইটা মেয়ে? হ্যাঁ, করেছিল। তবে পরীক্ষা দেবার সময়ও ওরা একটু কথা বলছিল। তাও ছোট্ট দুইটা মেয়ে- পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছে, তাই ভর্তি নিলাম। কেন, কি হয়েছে? তারা কি করেছে?" টিচার বলল, "কি করেছে আর বলবেন না। কি করেনি, তাই বলেন। দু'জন দুইটা ঘড়ি পরে এসেছে; একজন বলে, তোরটা এক মিনিট স্লো। আরেকজন বলে, তোরটা এক মিনিস ফার্স্ট। এরকম করে ক্লাসটা একদম মাছের বাজার। আর এই ঝগড়ার কোন সমাধানই তো নেই। এদেরকে আপনি টিসিই দিয়ে দিন। একবারও ওয়ার্নিং লেটার দেওয়া লাগবে না।" প্রিন্সিপাল বললেন, "দাঁড়াও না, হুট করে কি আর টিসি দিয়ে দেওয়া যায়? আমার সাথে চল তোমার ক্লাসরুমে। আমি দেখি, কারা কেমন ঝগড়া করছে।" প্রিন্সিপাল ক্লাসে আসার সময় সবাই সালাম দিল, কিন্তু বেলি আর শিউলি সালামটাও দিতে পারল না, তারা ঘড়ি নিয়েই পড়ে থাকল সারাদিন।" প্রিন্সিপাল বললেন, "তোমাদের কিন্তু আমি ঘড়ি দুটোই নিয়ে নেব। কি হয়েছে, বেলি আর শিউলি? এমন করছ কেন ঘড়ি নিয়ে। ও! ওরটা এক মিনিট স্লো, আর তোমারটা এক মিনিট ফাস্ট?" বেলি বলল, "দেখুন তো, ও শুধু বলছে, আমারটা নাকি ফাস্ট। আসলে ওরটাই তো স্লো। আপনার ঘড়িতে কয়টা বাজে?" শিউলি বলল, "এই বেলি, রাখ তো। আসলে কিন্তু তুই একদম ভুল বলছিস। আমি যেটা বলেছি, সেটাই ঠিক।" প্রিন্সিপাল বললেন, "এমন করে করে তো তোমরা দশ মিনিট পার করেছ। শিউলির ঘড়িতে বাজে ৮:৪৫, আর বেলির ঘড়িতে বাজে ৮:৪৬। এ কি, আমার ঘড়িতে তো বাজে ৮:৪৭।" এখন খুব মজার একটা কাহিনী ঘটল। প্রিন্সিপালও ঝগড়ার মধ্যে জড়িয়ে গেলেন। তিনি বললেন, "তোমাদের দু'জনেরটাই তো স্লো। আসলে তো আমারটাই ঠিক।" তখন শিউলি বলল, "ধূত! মিস, আপনার ঘড়িটাই ফাস্ট। আর বেলি, তোর ঘড়িটাও ফাস্ট। শুধু আমার ঘড়িটাই ঠিক। আবার স্লো বলবেন না কিন্তু।" প্রিন্সিপাল বললেন, "এই শিউলি, এমনভাবে কেউ ঝগড়া করতে আসে? আমি না প্রিন্সিপাল! আমারটাই তো ঠিক হবে। আমি আমার বাসার ঘড়ি দেখে টাইম ঠিক করেছি।" শিউলি আর বেলি একসাথে বলল, "আমরাও তো আমাদের বাসার টাইম দেখে আমাদের ঘড়ির টাইম ঠিক করেছি। আর সবারটা তো ঠিক হবেই না।" এখন প্রিন্সিপালকে নয়, ক্লাস টিচারকে বেলি জিজ্ঞেস করল, "আপনার ঘড়িতে কয়টা বাজে?" ক্লাস টিচার বলল, "আমার ঘড়িতে তো ৮:৪৪ বাজে।" এই তো শুরু হলো আরেক মজা। ক্লাস টিচারও ঝগড়ায় জড়িয়ে পড়লেন। ক্লাস টিচার বললেন, "প্রিন্সিপাল আপা! একটা কথা বলতে পারি? আমিও তো আমার বাসার টাইম দেখে ঠিক করেছি। আমার ঘড়িটা দেখেই আমি সবকিছু করি। আমারটাই নিশ্চয়ই ঠিক হবে। আর বেলি আর শিউলি, তোমরাই শোন, আমারটাই আসলে ঠিক।" এত্ত বড় ঝগড়া তো কেউ সমাধান করতে পারছে না। একটু পর অংকের স্যার আসলেন। এখন শিউলি বলল, "স্যার! একটা কথা বলি। আপনার ঘড়িতে কয়টা বাজে?" স্যার বলল, "আমার ঘড়িতে তো ৮:৪৮ বাজে।" এরপর বেলি আর শিউলি বলল, "আমাদের ঘড়িতে আপনার থেকে আলাদা সময়।" প্রিন্সিপাল আর ক্লাস টিচারও বললেন, "আমাদের ঘড়ির সময়ও আপনার থেকে আলাদা।" এরপর শুরু হলো আরো এক মজা। অংকের স্যারও জড়িয়ে গেলেন এই ঝগড়ার সাথে। অংকের বইটা রেখে দিয়ে তিনি ঘড়ি নিয়ে বসলেন। অংকের স্যার বললেন, "আমারটাই আসলে ঠিক। প্রিন্সিপাল আপা আর ক্লাস টিচার আপা! আপনাদের ঘড়ি আমারটার থেকে স্লো। আর বেলি আর শিউলি! তোমাদের ঘড়িও আমারটার থেকে স্লো। আমারটাই ঠিক।" এত জোরে ঝগড়া শুরু হল, স্কুলের বাইরে থেকেও সব শোনা যাচ্ছে। স্কুলের পাশে একটা বিল্ডিং ছিল। বিল্ডিংয়ের সবাই ঝগড়ার চোটে বিল্ডিং থেকেই নেমে আসল। তারপর স্কুলে গিয়ে ঢুকল। আর জোরে জোরে বলল, "সমস্যা টা কি? কান ঝালাপালা করে দিচ্ছেন কেন। এ কি কোন খেলা, নাকি সত্যি সত্যি ঝগড়া? কি নিয়ে ঝগড়া, শুনি?" তারপর তারাও দেখল, ঘড়ি নিয়ে ঝগড়া হচ্ছে। তাদের মধ্যে আবার দুই জনের ঘড়ি ছিল। তাদের টাইমও আলাদা ছিল। ফলে তারাও জড়িয়ে পড়ল। শুরু হলো আরো এক মজা। সবাই মিলে ঝগড়ার মধ্যে জড়িয়েই যাচ্ছে, জড়িয়েই যাচ্ছে। যাদের যাদের ঘড়ি আছে, সবাই মিলে ঝগড়া করছে।
হঠাৎ স্কুলের এক সুইপার ঐ ক্লাসরুমটাতে ঢুকল। প্রিন্সিপাল আপাকে জিজ্ঞেস করল, "আপা! এখানে কি হচ্ছে? এত ঝগড়া কিসের, আপা?" যারা যারা ঝগড়া্য় নামেনি, যাদের ঘড়ি নেই, তারা তো হাসতে হাসতে মরে যায়। অথচ তাদের ঘড়ি থাকলে তারাও হয়তো জড়িয়ে যেত। সুইপার বলল, "এই সমস্যা! কম্পিউটার দেখে ঠিক করে নিলেই তো হয়।" প্রিন্সিপাল থামলেন না। আর যারা যারা ঝগড়ায় আছে, তারাও ভালোমত থামল না, ঝগড়া চালিয়েই যাচ্ছে। যারা যারা ঝগড়ায় নামেনি, তারা তারা সুইপারের সঙ্গে অফিস রুমে গেল। গিয়ে একজনের কম্পিউটারে টাইম দেখে নিল। আসলে টাইমটা ছিল ৮:৪৬। সুইপার দৌড়ে গিয়ে বলল, "আসলে টাইমটা ৮:৪৬।" সবাই তখন থেমে গেল। আর নিজ নিজ কাজে চলে গেল। আর ঝগড়া থামা হয়েছে গেল সেইদিন ছুটি দিয়ে দেওয়া হলো। আর সেই সুইপারকে প্রিন্সিপাল ১০০ টাকা পুরস্কার দিলেন। যারা যারা ঝগড়া করেনি ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে, তারা তারা 'ইয়ে' বলে দৌড়ে ক্লাস থেকে নেমে গেল আর যার যার বাসায় চলে গেল।

Thursday, March 29, 2018

উইপোকা সমাচার

এক ছিল এক শহর। সেই শহরে থাকত একটি পরিবার। পরিবারে ভাই-বোন ও মা-বাবা ছিল। ভাই-বোন দু'জনের বয়সের মধ্যে বেশি একটা পার্থক্য নেই। ভাইয়ের ১০ বছর, বোনের সাড়ে ৮ বছর। তবে মাঝে মাঝেই ঝগড়া হয়। এমন কোন দিন নেই, যেদিন তাদের ঝগড়া হয়নি। মেয়েটির নাম ছিল শান্তা। আর ছেলেটির নাম ছিল হাসান। শান্তার আবার ছিল একটা ছোট্ট বাগান। সে সবসময় সেই বাগানেরই যত্ন নিত, আর খেলার সময় পুতুল দিয়েই শুধু খেলত। আর ছেলেটি শুধু শান্তাকে বলত, "এই শান্তা! সারাদিন শুধু বাগানের যত্ন নিস কেন? দেখ, আমি কেমন খেলি, মা আমাকে একটা বাক্স ৫০টি ছোট ছোট খেলনা সৈনিকসহ এনে দিয়েছে। তাদের মধ্যে আবার আলাদাও একজন আছে। খেলার মধ্যে আমি তাকে রাজা বানাই, কত কী করি! আর তুই সারাদিন বাগানের যত্ন নিস।" শান্তা বলল, "ভাইয়া! আমি শুধু বাগানের যত্ন নেই তোমাকে কে বলেছে? বাগানের যত্ন নেয়া শেষ হলে তো আমি একটুখানি খেলি। আর খেলা শেষ হলে আমি পড়তে যাই। রাতের খাবারের সময়ের আগ পর্যন্ত আমি পড়ি, আর বিকাল থেকে পড়া শুরু করি। তাই তো আমি সবসময় এ+ পাই। তুমি শুধু শুধু খেলনা নিয়ে খেল। খেলনার কি প্রাণ আছে? গাছ, ফুল এসবের প্রাণ আছে। আমি তাদের যত্ন নেই।" হাসান নাক ঘুঁচিয়ে ভ্রূ কুঁচকিয়ে বিদ্রূপের নাকি সুরে বলল, "ঊঁহ! ঢং কত! নিজে যখন পুতুলকে খাওয়ায় দাওয়ায় তার বেলা।" শান্তা বলল, "চুপ কর তো তুমি। আমি খেলি খুব অল্প সময়। এখন ঝগড়াটা থামাও। আমাকে গাছে পানি দিতে দাও।" রাত হলো। তারা ঘুম ঘুম চোখে। ঘুমিয়েই পড়বে একটু পর। শান্তার হাতে চুলকিয়ে উঠল। সে উঠে চিৎকার করল। হাসান তখন বলল, "কি হয়েছে, মা একটু শুয়েছে, চীৎকার করেছিস কেন?" শান্তা বলল, "পিছনে তাকিয়ে দেখ। পুরো ঘরটাতে কী হয়েছে!" হাসান পিছন ফিরে আবার চিৎকার দিয়ে উঠল। এরপর মাও পিছন ফিরে দেখল। মাও খুব আতঙ্কিত হয়ে উঠল। তাদের বাবা পিছন ফিরে দেখে বলল, "এ কী! এ যে উইপোকা। উইপোকার দল আমাদের বাড়িতে হামলা করেছে। কোথা থেকে আসল এই উইপোকা? উইপোকা নাকি সারা ঘরও খেয়ে ফেলতে পারবে।" পরের দিন তারা সকালে উঠে দেখল, বিছানা উইপোকার লাশে ভরে গেছে। শান্তা উঠে দৌড় দিল আর তাড়াতাড়ি ড্রেসিং রুমে গেল আর অন্য একটা জামা পড়ে আসল। সেই জামার মধ্যেও উইপোকার লাশ ছিল। আর শান্তার ভাই! সে তো এসব কিছু কেয়ারই করে না। সে তার বাবাকে বলল, "বাবা, বাবা! আমাদের তো একটা মশার র‍্যাকেট আছে। চল না, র‍্যাকেটটাই ব্যবহার করি উইপোকা মারতে।" বাবা রাগ হয়ে বলল, "চুপ কর! কেমন কেমন বুদ্ধি দেয়? কত বুদ্ধি! যেন কার্টুনের গোপাল ভাড়। মশার র‍্যাকেট দিয়ে উনি মারবে উইপোকা। র‍্যাকেটের সাথে যখন উইপোকার লাশ লেগে থাকবে, তখন কি হবে? তখন তো নিজেই ধরতে ঘৃণা পাবি।" তাদের আবার এক মামা ছিল। সেই মামাকে সবাই উইপোকা মামা বলে ডাকত। কারণ, সে উইপোকা তাড়াতে জানত। শান্তা যখন শুনেছিল যে, তার ভাইয়ের র‍্যাকেট দিয়ে মারার কথা; শান্তা বলল, "ভাইয়া! পুড়িয়ে মারতে হয় না। দরকার নেই তো। উইপোকা মামাকে ডেকে আনলেই তো হয়। উইপোকা মামা কত না জানি উইপোকা মারে।" এরপর উইপোকা মামা বাসায় এল। উইপোকা মামা দেখল, তাদের রান্নাঘরের চৌকাঠে উইপোকার বাসার মতন মাটি। সে উইপোকার ওষুধ দিয়ে দিল সেখানে। উইপোকারা কয়েকদিনের মধ্যেই মরে গেল। কারণ, উইপোকা মামা আরো অনেক কিছু করেছিল। এরপর উইপোকা মামা বাসায় ফিরে গেল। ওদের মা হাসান এবং শান্তাকে বলল, "শোন! তোদের বাসায় উইপোকা এসেছে কেন, জানিস? কারণ, তোরা সবসময় ঝগড়া করিস। তাই উইপোকা তোদের শাস্তি দেয়ার জন্য এই বাসায় এসেছে।" শান্তাকে ওর মা বলল, "তোমার গল্পের রূপকথার পরী এসে উইপোকা দিয়েছে, কারণ তোমরা ঝগড়া কর।" আর হাসানকে বলল, "তোমার খেলনা সৈনিকের দল তোমার ঐসব ভূতের মুভির ভূতদেরকে বলেছে উইপোকা দিতে। তাই বাসায় উইপোকা এসেছে।" তখন থেকে আর কেউ ঝগড়া করে না। এখানে গল্প শেষ।