Sunday, July 1, 2018

সরলতার বিড়ম্বনা

এক ছিল একটি বাড়ি। সেই বাড়িতে একটি ছোট মেয়ে ছিল। ছোট বলতে দশ বছর বয়স। মেয়েটির নাম আয়েশা। কিন্তু সে ঐ ফ্যামিলির কেউ ছিল না। সেই বাড়িতে আবার একটি দয়ালু মহিলাও ছিল। কিন্তু এখন আর নেই। সে গরীব মেয়েটিকে দেখে বাড়িতে নিয়ে আসল। দয়ালু মহিলা ঐ ফ্যামিলির মেইন যে তার খুবই ভাল বন্ধু ছিল। সে ঐ মেয়েটিকে বাড়িতে নিয়ে এসেছিল, কিন্তু বাড়ির মালিক তাতে খুব বেশী খুশী ছিল না। কিন্তু ঐ মহিলা তার এত প্রিয় বন্ধু ছিল যে, সে তার কথা ফেলতে পারত না। আর তার কাজও নষ্ট করে দিতে পারত না। কিন্তু সেই মহিলা চলে যাওয়াতে মেয়েটিকে বাড়ি থেকে বের করে দিতে না পারলেও তাকে কাজের মেয়ের মতই রাখতে শুরু করল বাড়ির মালিক। একদিন বাড়িতে অনেক মেহমান আসল। বাড়ির মালিক আয়েশাকে হুকুম করল, "যাও, তিনজন মেহমান আসছে। তিনটা ডিম রান্না কর। তার সাথে দু'জন ছোট ছোট ছেলে-মেয়েও আসছে। তাদের জন্যও দুটো ডিম রান্না কর। আর তুমি আমার জন্যও কিন্তু রান্না করবে। আর বাড়ির বাকি সদস্যদের জন্যও তুমিই রান্না করবে। এইটুকু হেল্প যদি না কর, তাহলে আর শুধু শুধু বসে বসে খেতে দেব কেন? তার সাথে পোলাওটাও তুমিই করো। আর যদি কেউ পোলাও না খায়, তাহলে তুমি ভাত রান্না করবে। আর যদি কারো ভাতেও সমস্যা থাকে, তাহলে তুমিই তাদের জন্য রুটি বানিয়ে দেবে। আর তখনকার জন্য না ফেলে রেখে এখনি কাজগুলো করে ফেল। আর কারো যদি ডিমে সমস্যা থাকে, সেজন্য একটু রোস্টও করে দাও। মেয়ে হলে কি হবে? তোমাকেই বাজার করে আনতে হবে। যাও, অনেকগুলো ডিম কিনে নিয়ে আস, আর মুরগীও কিনে নিয়ে আস। মসলাপাতি কিছু কম পড়লে সেটাও তুমি কিনে এনো, তবে টাকা আমার কাছ থেকে নিও। টাকা যেমন লাগবে, তা আমি দেব। কিন্তু কাজ কিন্তু সব তোমাকেই করতে হবে। তারা যদি বাইরের জামাকাপড় পরে থাকতে অস্বস্তি বোধ করে, সেজন্য তুমিই তাদের জন্য ঘরের পোশাক কিনে আনবে। তাদের জন্য জুতোও নিয়ে আসবে। যদিও তারা এক বেলা খেয়েই চলে যাবে। এরপর তাদের জন্য ফলমূল এনে সালাদটাও তুমিই করে দিও। আর তার সাথে কেউ যদি এমন তেল-টেল সব খাবার না খেতে চায়, সেজন্য তেল ছাড়া সবজিটাও তুমিই রান্না করো। সামান্য এটুকু হেল্প তো তোমাকেই করতে হবে। আর সব কাজ কিন্তু দশ মিনিটের মধ্যে হওয়া চাই।
মেয়েটি তো শুনতে শুনতেই কাহিল হয়ে গেল, করবে কখন? সে বলল, "দশ মিনিটে এ কাজ আল্লাহ ছাড়া আর কেউ করতেই পারবে না। অন্তত আধা ঘন্টা তো দিন। আমি ঠিক সব করে নেব।" মেয়েটি মনে মনে ভাবল, "এ কী? ডিমের বেলায় তো সবার কথাই তো বলল। আমার কথাই তো বলল না। অথচ আমিই রান্না করব। আমার মাইন্ড করার কোন দরকার নেই। আমাকে কাজ করতে দেওয়া হয়েছে, আমি করি।" এরপর মেয়েটি একে একে কাজ করা শুরু করল। ৩০ মিনিটের বদলে ৩২ মিনিট লেগেছে বলে মালিক খুব রেগে গেল। মেয়েটিকে বলল, "এই আয়েশা! তোমার আক্কেলটা কি? মেহমান আসবে দুপুরে। তুমি দুই দুইটা মিনিট নষ্ট করলে? এত দেরি কর কেন কাজ করতে? দুই দুইটা মিনিট, কম কথা?" এরপর মেয়েটি বলল, "মেহমানরা তো এখনই এসে পড়বে। জামাগুলো কেমন হয়েছে, সেটা আপনি দেখুন। আমার পছন্দ তো আপনার পছন্দ নাও হতে পারে।" মহিলাটির আবার গাঢ় নীল খুবই পছন্দ ছিল। সে সবগুলো জামা গাঢ় নীল আনতে বলেছিল। একটা জামা একটু কম গাঢ় হবার কারণে মেয়েটিকে তাও কথা শুনালো। মেয়েটি তাও কিছু মনে করল না। মেহমান আসার পর সে কাপড়-চোপড়গুলো মেহমানদেরকে দিল। এরপর খাবার পরিবেশন করতে শুরু করল। কিন্তু মালিক তাকে বাধা দিল। "তুমি পরিবেশন করো না। আমরা কাকে কি দেব, সেটা তোমার ঠিক করার কথা নয়, তুমি বুঝবে না।" মেয়েটি মনে মনে বলল, "এত কিছুই যখন বুঝলাম, এটুকু আর বুঝব না? তাও যখন তার ইচ্ছা হচ্ছে, তখন সেই পরিবেশন করুক।" এই ভেবে মেয়েটি নিজের জায়গায় অর্থাৎ ছোট পাটিতে বসে পড়ল। সেই সবার প্লেট ধুয়ে টুয়ে গ্লাস ধুয়ে টুয়ে পানি পরিবেশন করেছিল। আর খাবারটুকু ঘরের মালিকই পরিবেশন করছিল। ঘরের মালিক বলল, "এই আয়শা, কিছু বোঝ না নাকি? আমি হলাম বাড়ির মালিক। তুমি নিজের খাবারটুকু নিলে না? ভাবো কি নিজেকে? আমি তোমার খাবারটাও কি বেড়ে দেব নাকি? তুমি এসে নিয়ে যাও। তবে আমিই বেড়ে দিচ্ছি, তুমি প্লেটটা নিয়ে এসো।" মেয়েটি বলল, "তার আবার কি দরকার?" মালিক রাগ হয়ে বলল, "আমার ইচ্ছে হয়েছে, তাই। তোমার খুব বেশি সমস্যা? আমার কথা অমান্য করছ কেন? প্লেটটা আগাও, ব্যস!" মেয়েটি প্লেট এগিয়ে দিল। আর মেয়েটিকে দেয়া হলো আধা চামচ ভাত। ভাত কিন্তু, পোলাও বা ভাতের সমস্যা হলে রুটি নয়। ভাত, তাও আবার আধা চামচ। আর এটুকু দিয়েই সে বলল, "তোমাকে তো খাবার দেয়া হয়ে গেছে। যাও, জায়গায় গিয়ে বস। আচ্ছা ঠিক আছে, যদি শুধু ভাত খেতে এতটাই সমস্যা হয়, তাহলে এক চা চামচ সবজি নাও।" এরপরও মেয়েটি মুখ বুজে এক চামচ সবজি নিয়েই জায়গায় গিয়ে বসল। অথচ সব খাবারই সে রান্না করেছে, সব কাজই সে করেছে। শুধু পরিবেশনটুকু মালিক করেছে। সবার পাতে সবার পছন্দমতো জিনিস দেওয়া হলো। মাংস দেওয়া হলো, যাদের মাংসে সমস্যা সবজি দেওয়া হলো, তার সাথে ডিম দেওয়া হলো। কিন্তু আয়েশা আবার ডিম খেতে এতটাই ভালোবাসতো যে, সে নিজের জন্য ভুলে একটা ডিম বেশি রেঁধে ফেলেছে। একটা ডিম বেশি দেখে মালিক একবার আয়েশার দিকে তাকালো, আবার চোখ সরিয়ে ওটা কেটে সবার জন্য আলাদা আলাদা ভাগ করে সবাইকে দিয়ে দিল। অথচ রান্নাই করেছে যে, তাকেই দেওয়া হলো না। এরপর সবাই খাওয়া-দাওয়া শেষ করল। এরপর সবাই আবার ম্যাংগো জুস খেতে চাইল। কিন্তু তখন তো আমের সিজনই ছিল না। ছো্ট্ট ছেলেটি বলল, "বাবা! আমি ম্যাংগো জুস খেতে চাই।" তার সাথে যে মেয়েটি এসেছিল, সেও ঐ একই বায়না জুড়ে দিল। তাদের থেকে শুনে বড়রাও ভাবল, ইস! কতদিন আমের কিছু খাই না। তারাও আবার ঐ জেদই শুরু করল। এখন মালিক কি করবে বুঝতেই পারছ। সে আবার আয়েশাকে বলল, "যাও না, গিয়ে একটু জুস কিনে নিয়ে এসো। এখন অরিজিনাল পাবে না সিওর, তাও কিনে নিয়ে এসো। এবার তুমি নিজের জন্যেও আনতে পার (অরিজিনাল নেই দেখে, কারণ আমের সিজন নয়)।" তখন আয়েশা আবার হালকা চালাকি করে বলল, "তার কোন প্রয়োজন নেই। আমি আপনাদের জন্যই এনে দিচ্ছি।"- এই বলে আয়েশা জুসটাও কিনে এনে দিল। অথচ ভাল ভাল জিনিসের বেলায় আয়েশাকে কিছুই দেয়া হলো না। সহজ-সরল হওয়া ভালো হলেও জীবনে অনেক অসুবিধা আসে।

No comments:

Post a Comment