Sunday, July 15, 2018

মায়ের চালাকি

এক ছিল একটি মেয়ে। তার নাম নুরাইদা। নুরাইদা একদিন মাকে জিজ্ঞেস করল, "মা! আমার টিচার বলেছে মায়ের কাছে ধর্ম পড়তে। ধর্মের মূল বিষয় কি?" মা বলল, "কি রে বাবা, এটাও জানিস না?" তখন মেয়েটি বলল, "তুমি আমাকে কবে শিখিয়েছ যে, আমার মনে থাকবে? তুমি কিছু জানই না, কিভাবে বাচ্চাদের পড়াতে হয়। তুমি বুঝতেই পার না। বাচ্চাকে শুধু তুই তুই করে বলে। তানিয়ার আম্মু কেমন ওকে তুমি বলে ডাকে। চকলেট দেয়। রং করতে দেয়। খেলার সময় দেয়। তুমি কিছুই দাও না। আর তুমি কেন বলছ যে, আমি প্রশ্ন করেছি কেন? তুমি জান না বুঝি? ধর্মের ক্লাস নতুন শুরু হল এ বছর। আমাকে এটুকু বলবেও না? ঠিক আছে, আমি পরীক্ষায় ফেল করব। এক সাবজেক্টে ফেল করলে আজকাল টিচাররা সব সাবজেক্টে ফেল দেয়। দিয়ে রেজাল্টটাই ফেল করে দেয়। আশ্চর্য ব্যাপার।" মা বলল, "এসব পাকা পাকা কথা তোমাকে কে শিখায়? তানিয়া তো ভাল করে দাঁত মাজে, তাই ওর মা চকলেট দেয়। পড়া শেষ করে রং করার পর নখ পরিষ্কার করে, তাই তাকে ওসব করতে দেয়। তুমি তো কিছুই কর না, তাই বললাম আর কি। তবে এখন আসল কথায় আসা যাক। নাও, ধর্মের মূল বিষয় হচ্ছে .......। কথা শেষ হতে না হতেই মেয়েটি বলল, "মা! তুমি তো বড্ড স্বার্থপর। সেলফিশ কোথাকার! কিচ্ছু বোঝ না, নাকি? এটা কোন পড়ার সময় হলো? নিজেই বলে, যখন যেই কাজের সময়, তখন সেই কাজ করতে হয়। এখন সে আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে আমি যাতে না ডিস্টার্ব করি সেজন্য আরাম করে খেয়ে নিয়েছে। খেয়েদেয়ে পেটটা ভরিয়ে ফেরেছে একেবারে। আমাকে খাবার দিয়েছ বুঝি? কেমন মা তুমি? একদম ভাল লাগে না। জ্ঞান-ট্যান কিছু নেই নাকি? খালি পেটে পড়াতে বসেছে। ঢং দেখে আর বাঁচি না।" মা বলল, "থাপ্পড় দিয়ে গালটা কিন্তু ফাটিয়ে দেব। ভাত দাও বললেই হয়, কততো কথা! শুধু শুধু তর্ক বাড়ায়। আশ্চর্য ব্যাপার, তুই কিছু বুঝিস না? দাঁড়া, আমি ভাত আনছি।" মেয়েটি বলল, "আমি দেখেছি, আজকে তুমি মুরগীর পা রান্না করেছ। কিন্তু তুমি একটাই কেন রান্না করলে? আবার তুমি গিলাও রান্না করেছ। আমি দেখেছি। তুমি আবার বড্ড স্বার্থপর। বোঝ না কিছু। আবার ঝালও দিয়েছ এক গাদি, যাতে তোমার মজা লাগে। আমি কি করব, শুনি? আমি কি মাংস খাব না? মাংসও কত অল্প রান্না করেছ।" মা মেয়ের কথা শুনে চুপ হয়ে গেল। কারণ, আসলে হয়েছে কি, সে গিলা, পা ও সবটুকু মাংস চেটেপুটে খেয়ে নিয়েছে। এখন সে কী করবে? সে বলল, "শোন্‌ বাবা! তুই এখন মাংস খাস না। তাহলে রাতে যখন তোর অপছন্দের পেপে ভর্তা দেব, তখন তুই তা খেতে পারবি না। রাতে তুই চেটেপুটে মাংস খাস। এখন তুই পেপে ভর্তা খা।" মেয়েটা আবার ভীষণ বুদ্ধিমতী ছিল। সে বলল, "মা, তোমার মুখটা চোরের মত লাগছে কেন? কিছু লুকাচ্ছ নাকি? এই সত্যি করে বলতো, তুমি আবার মাংস খেয়ে ফেলনি তো?" মা তো তো করে বলল, "না, বাবা! আমি তোর খাবার খেতে যাব কেন? আমি মা না? নে, তোকে আমি পেপে ভর্তা দিচ্ছি, ভালোর জন্যই বলছি। রাতে তোকে মাংস দেবনে।" তখন মা  পেপেভর্তা দিয়ে ভাত মাখিয়ে আনল। বাবুটি খেয়ে ওয়াক দিল। "ছিছিছিছি, পেপেভর্তায় একটু লবণও দাওনি নাকি? কোন পেপেভর্তা হল? একদম মজা না। ছি, আমি এটা খাবই না। তুমি আমাকে মাংস দাও, নাহলে আমি পরীক্ষায় ফেল করব।" মা তো বড্ড মুশকিলে পড়ে গেল। সে এখন কী করবে? তার ইচ্ছে করছে, বমি করে সবটুকু উগড়ে দিয়ে বাচ্চাকে খাওয়াতে। কেন যে সে এই ভুলটা করল? সে তখন হোটেল থেকে কিনে নিয়ে আসল। এরপর সেইটা বাচ্চাকে খাওয়ালো। মেয়েটা বলল, "এ কি? কি বেস্বাদ! একটু নুন-মরিচ কিচ্ছু দেয়নি? তোমার রান্না কোনদিন এমন হয়? জীবনেও না। এ খাবার তো তুমি মুখেই তুলতে পার না। তাহলে তুমি এ খাবার রান্নাই করবে না। তুমি বুঝি মজা না দেখে নিজে না খেয়ে আমার উপর গচাচ্ছ? নাকি আরো কিছু! আর তুমি বাইরের পোশাক পড়লে কেন, অ্যাঁ? আমি দেখেছি, তুমি বাইরের পোশাক নিয়ে ড্রেসিং রুমে গেলে। যত্তসব।" মা তখন আবার তো তো করতে শুরু করল। বলল, "দাঁড়া, আমি একটু আসছি।" সে কটা গুড়ো মরিচের গুড়া ও সব মসলাপাতি হাতের মুঠোয় করে চুপটি করে সেটা মাখিয়ে দিল। ভাবল, এবার বুঝি মজা হবে। বাচ্চা বলল, "ঠিক আছে, আমি আরো একটু টেস্ট করে দেখি।" বাচ্চা তো এটা খেয়ে বমিই করে দিল। "ছিছিছিছি! কাঁচা সব মসলা দিয়ে এনেছে! কী সব রান্না করেছ তুমি, মা? ছি!, অখাদ্য। আমাদের যে টিচারটা মাঝেমাঝে তোমার রান্না খেতে আসে, তাকে তুমি কালকেই বলে দেব, তোমার রান্না কেমন বেস্বাদ। একটুখানি মাংস আমি কালকেই নিয়ে যাব।" এই বলে সে দৌড়ে একটা ছোট কৌটা এনে তার মধ্যে একটু মাংস ভরল। সেটা ব্যাগে ঢুকিয়ে দিল। যাতে মিস ওটা খেয়ে আর জীবনেও তার মায়ের রান্না খেতে না আসে। মা তো বড্ড ফ্যাসাদে পড়ে গেল। মেয়েটি বলল, "আমি এবার পরীক্ষায় ফেল করবই করব। তুমি তো সেটা হাড়ে হাড়েই চাও দেখছি।" মা বলল, "না, ফেল করিসনে মা! আমি তোকে চিপস, চকলেট সব এনে দেব। তুই এটাই খা। আজকে আমার মাথাটা ঘুরাচ্ছিল তো, তাই ভুলে এরকম করে রান্না করেছি।" তারপর মেয়েটি বলল, "তুমি তো এত কম রান্না কর না। বাকিটুক তুমিই খেয়েছ। আমি এটা আর খাব না। সবটুকুই তুমি খাও।" এই বলে মেয়েটি জোর করে সেটা তার মায়ের মুখে ঢুকিয়ে দিল। মা তো অজ্ঞান হয়ে গেল। এই হচ্ছে বুদ্ধিমান বাচ্চার সাথে মায়ের চালাকির ফল। তবে বাচ্চাটি কিন্তু সব বুঝেশুনেই করেছে। সে আগে সব জানত, কিন্তু সে মুখে কিছু বলছিল না। কারণ, তার কাছে কোন প্রমাণ নেই। তাই এইভাবে সে মাকে শিক্ষা দিল।

No comments:

Post a Comment