Tuesday, July 10, 2018

ছোট্ট শিশুর উপার্জনের বুদ্ধি (Business Idea of a Kid)

এক ছিল এক গরীব পরিবার। এমন গরীব, এক পয়সাও ছিল না। কিচ্ছুই ছিল না। আর পরিবার বলতেও কিছু ছিল না। ছিল শুধু দুই ভাই-বোন। ভাইয়ের নাম নাসির, আর বোনের নাম নাফিসা। তারা তো একদিন একটু খাবার পেলে অর্ধেকের অর্ধেকও খায় না, জমিয়ে রাখে। অন্যদিন খাবার না পেলে সেদিন সেটা খায়। একসময় দেখা গেল, কোন খাবারও পাওয়া যায়নি, জমিয়ে রাখা খাবারও শেষ। তারা অবশ্য কখনো ধার করতো না। কারণ, ধার করলে যদি তা শোধ করতে না পারে, তখন কী হবে? সেই ভয়। একদিন নাফিসার একটা বুদ্ধি এল। সে তার ভাইকে বলল, "শোন, আমার মাথায় একটা বুদ্ধি এসেছে। কিন্তু আমার মনে হয় তুমি এটা করতে চাইবে না। কারণ, এ বুদ্ধিটা হচ্ছে ধার করারই একটা বুদ্ধি, যা আমরা পরে শোধ করতে পারব।" নাসির বলল, "একদম না! কী বলছিস তুই? ধার? একদম ধার করা চলবে না। পরে যদি শোধ করতে না পারি!" বোন বলল, "তুমি সব সময়ই এমন কর। আগে তো শোন ব্যাপারটা। কিভাবে ধার করব আগে না জেনেই এমন বলছ কেন? আমরা একটা গ্লুয়ের মেশিন ধার করব। যাকে ইংরেজিতে বলে Glue Gun। কারণ, সেটা দিয়ে বন্দুকের মতই গ্লু বের হয়। সেটা আমি চাই। রঙিন গ্লু গান। আর একটা পেন্সিল চাই। আর কিছু চাই না। এতেই কাজ হয়ে যাবে।" নাসির বলল, "মানে, এগুলো দিয়ে কি হবে?" নাফিসা বলল, "ও তুমি বুঝবে না। তাও বলি, টেলিফোনের তার যেরকম আঁকাবাঁকা থাকে, সেইরকম করে গ্লু গুলো আমি পেন্সিলের উপর লাগিয়ে দেব। পুরো পেন্সিল এমন করা হয়ে গেলে শুকোতে রেখে দেব। শুকানো হয়ে গেলে পেন্সিলটা গ্লু য়ের ভিতর থেকে টান দেব। দেখব যে, গ্লুটা টেলিফোনের তারের মত হয়ে গেছে। এরপর সেটাকে গোল করে চুরির মতো করে গ্লু দিয়েই লাগিয়ে দেব। এরপর সেটা একটা রাবার ব্যান্ডের মত হবে। এরকম যদি আমরা অনেক বানাই, তাহলে সেগুলো বিক্রি করলে অনেক টাকা হবে। আজকে না খেলেও হবে। আজকে ধার টার করে নিয়ে আসি। কাল থেকে কাজ শুরু করব। আর যে কয়টা বিক্রি হবে, সে কয়টার টাকা দিয়ে খাবার কিনে খাব।" নাসির তাও বেশি কিছু বুঝল না। সে ভাবল, এইটুকু একটা মেয়ের বুদ্ধিতে কী-ই বা হবে? কিন্তু নাফিসার অনেক বুদ্ধি ছিল। পরের দিন নাফিসা খুব সকালে উঠেই একটা দোকানে গেল। আঠার দোকান। এখানে গিয়ে বলল, "ভাই, আমাকে একটা আঠার মেশিন দিন তো! ধার করতে চাই। এক সপ্তাহ পর ঠিক দাম পরিশোধ করে দেব। দুই-তিন দিন দেরি হলে কি খুব বেশি সমস্যা হবে? হবে না তো। তাহলে আমি কি ধার করতে পারি?" দোকানদারটা আবার ভাল ছিল। সে ভাবল, "ছোট্ট একটা গরীব মেয়ে। ধার করে শোধ করতে পারুক বা না পারুক, চেয়েছে যখন, দেই। শোধ করতে চাইলে ভাল, না পারলেও কোন সমস্যা নেই।" এরপর নাফিসা গ্লু গান নিয়ে একটা পেন্সিলের দোকানে গেল। দুই টাকার একটা পেন্সিলও ধার করল। সে ভাবল, "শুধু শোধ না করে পেন্সিলের দামটা তো আমি সুদে-আসলেও পরিশোধ করতে পারতে পারি। তাহলে এবার জিনিসগুলো নিয়ে আমি বাড়ি চলে যাই।" নাসির ওঠার আগেই সে সব কিনে নিয়ে আসল। সে প্রথমে একবার জিনিসটা ট্রাই করল। শুকানোর পর গ্লুটা বের করে দুই কোনা একসাথে আঠালো গ্লু দিয়ে লাগিয়ে দিল। এরপর সে দেখল, সত্যি চুলের রাবারের মত হয়েছে। এরপর সে আরো বানাতে লাগল। নাসির উঠে দেখল, তিনটা বানানো শেষ। সে জিজ্ঞেস করল, "তুই এগুলো কি করছিস? কোন কাজ হলো? এগুলো দিয়ে কি হবে?" নাফিসা বলল, "খাবার যোগাড় হবে। এগুলো বিক্রি করে আমি যা টাকা আয় করব, তা দিয়েই তো কিছু খাবার কেনা যাবে। খাবার না হয় কম দামেই খেলাম, বাকিটুকুর অর্ধেক দিয়ে এগুলোর মূল্য পরিশোধ করা যাবে, আর বাকি অর্ধেক যতটুকু থাকবে তা দিয়ে আবার কাঁচামাল কেনা যাবে।" এই ভেবে সে আরো বানাতে লাগল। বানাতে বানাতে বিকেল হয়ে গেল। তাও মেয়েটি বানানো থামাল না। ভাই তো তাও পাত্তা দিল না। বলল, "এগুলো দিয়ে আর কত টাকাই বা হবে?" কিন্তু আজকাল সবাই ঐ জিনিস পছন্দ করে কেনে। বিকেল পর্যন্ত নাফিসা শুধু এই কাজই করে গেল। ভাই তো বুঝতেই পারছিল না যে, এ দিয়ে আর কী টাকা হবে? নাফিসা বানানো শেষ করে নাসিরকে বলল, "তুমি এগুলো একটু বিক্রি করে আসবে?" নাসির বলল, "আমার আর কাজ নেই নাকি? এটা কোন কাজ হলো? আমি বাবা ওসব বিক্রি করতে পারব না।" নাফিসা ভাবল, "ভাবলাম, ভাইটা বানাতে সহায়তা না করুক, বিক্রিতে অন্তত সহায়তা করবে। কিন্তু তাও তো করল না! আমি ছোট মেয়ে হলেও আমিই বিক্রি করব এইগুলো।" সে একটা ঝুড়িতে করে সব রাবার ব্যান্ড নিয়ে নিউ মার্কেটে  চলে গেল। দেখল, সব রাবার ব্যান্ডের দোকানেই খুব ভিড়। কিছু কিছু মানুষ ভিড়ের ঠেলায় রাবার ব্যান্ড কিনতেই পারছে না। সেও গিয়ে তার পাশে বসল। দুই সেকেন্ড না যেতেই তার দোকানেও হুড়মুড় করে মানুষ বাড়তে লাগল। একজন বলল, "আমাকে দুটো দিন তো।" আরেকজন বলল, "আমাকে তিনটি দিন তো।" আবার বলল, "একটু ছোট সাইজেরটা দেখান তো।" এই করে ভিড় বাড়তে লাগল। সে তো আর ভিড়ই সামলাতে পারছে না। মেয়ে মানুষ, তাও আবার কতটুক! এত ভিড় সামলাবে কি করে? নাসির আবার তাকে খুঁজতে বেরিয়ে গেল। নিউ মার্কেটে গিয়ে দেখল, সব দোকানেই অনেক ভিড়। হঠাৎ সে তার বোনকে দেখতে পেল। সে দৌড়ে তার বোনের কাছে গেল। বলল, "তুই এখানে কি করছিস? ওসব বিক্রি করছিস নাকি? ওসব বিক্রি করে কি হবে?" তখন নাফিসা বলল, "আমার থলেটার দিক তাকাও।" এত টাকা দেখে তার ভাই তো খুব অবাক হয়ে গেল। বলল, "এত ভিড় কিসের? তোর এই রাবার ব্যান্ড কেনার জন্য এত ভিড়? এত টাকা তুই এসব বেচে পেয়েছিস? অসম্ভব!" নাফিসা বলল, "অসম্ভবই যখন, তখন কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাক। দেখবে, ভিড়ের ঠেলায় তুমিই পড়ে যাবে।" একটু পর নাফিসার কথাই সত্যি হতে চলল। সবাই হুড়মুড় করে কিনছে আর কিনছে। "ওটা দিন, এটা দিন।" ভিড় বেড়েই চলেছে। টাকাও বাড়তেই চলেছে। ছোট একটু জিনিস, কেউ দরদামও করছে না। আবার এত ভিড়ের মধ্যে দরদাম করলে নিজেদেরই বিপদ। ভিড়ের ঠেলায় পড়েই যাওয়ার মত অবস্থা। তার ভাই দেখে তো খুব অবাক হয়ে গেল। তারপর সে নাফিসাকে বলল, "তোর বুদ্ধি তো সত্যিই খুব কাজের। তাহলে আমি ভিড় সামলাতে তোকে সাহায্য করি।" এবার ভাইও তার সাথে কাজে লেগে গেল। রাত হয়ে আসল, বিক্রি থামল না। সবাই এসেই চলেছে। কিনেই চলেছে, আর এক সময় দেখা গেল শেষই হয়ে গেল রাবার ব্যান্ড। তাও অনেক লোক নিতে না পেরে আফসোস করতে লাগল। নাফিসা ভাবল, এটা দিয়েই তাহলে আমরা ব্যবসা করব। এই থেকে শুরু হলো নাফিসা আর নাসিরের ব্যবসা। টাকা দিয়ে তারা ভাল ভাল খাবার খায়, দামও দিয়ে দিল। তার সাথে কাঁচামালও কিনতে লাগল, আবার একটা নতুন বাড়িও বানিয়ে ফেলল। ধীরে ধীরে ব্যবসা বাড়তে থাকল। একটা বড় রাবার ব্যান্ডের দোকানও বানানো হলো। আর এবার যেন তেন দোকান নয়, একেবারে দামি দামি শপিং মলের ভিতরে দোকান। সেখানে আরো ভিড়। এই করে করে তাদের জীবন চলতে লগাল। এক পর্যায়ে এসে তারা রাবার ব্যান্ডের ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে পোশাকের ব্যবসা শুরু করে দিল। তারা সুন্দর সুন্দর জামা কিনে এনে কোনটা কম সুন্দর হলে তা এডিটও করত। এভাবে তাদের ব্যবসা উঠতে উঠতে একেবারে সোনার ব্যবসায় চলে গেল। শেষ পর্যায়ে এসে তারা হীরার ব্যবসা করতে শুরু করল। এরপর থেকে তাদের তো আর সুখের শেষ নেই। তবে আমার গল্পের শেষ আছে। আর তা এখানে।

শিক্ষা: ছোট বলে কাউকে অবজ্ঞা করতে নেই।

No comments:

Post a Comment