Thursday, July 26, 2018

অহংকার ও ঢংয়ের ফল

এক ছিল একটি বালিকা বিদ্যালয়। সেই স্কুলে অনেক ছাত্রীই পড়ত। তার মধ্যে কয়েকজনের নাম হলো রেহেনা, তাশফিয়া, দিবানিশি এবং মাইশা। তাদের মধ্যে রেহেনাই ছিল বেশি ধনী। তার সাথে সে যেমন ধনী ছিল, তেমনই হিংসুটে ছিল। নিজের কিছু একটা থাকলে অন্যের সেটা না থাকলে অন্যকে সে চেতাতো (ক্ষেপাতো)। একদিন হলো কি, আজকে নতুন ক্লাসে সবার প্রথম ক্লাস। সবাই তৈরি হয়ে এসেছে। রেহেনা সবাইকে জিজ্ঞেস করল, "এই! তোরা সবাই টিফিনে কী এনেছিস? বল দেখি!" তাশফিয়া বলল, "আমার কি আর তোর মত সৌভাগ্য রে? আমরা তো গরীব। তাই কী আর আনব? তেমন কিছুই নয়। শুধু তিন টুকরো গাজর। যা পেড়েছিলাম আর কি।" এরপর দিবানিশি বলল, "তুই বুঝি খুব ভাল টিফিন এনছিস, রেহেনা? আমি তো কিছুই আনতে পারলাম না। দেখি, এখন কী করা যায়। তবে ছোট্ট একটা খেজুর আমার সাথেই আছে। এতেই আমার হয়ে যাবে।" শেষে মাইশা বলল, "আমি আর কী আনব? আমি তো কিছু আনতেই পারলাম না। শুধু একটা মাত্র মটরশুটি। যা আমাদের পাশের বাড়ির ফুপু দিয়ে গিয়েছে।" রেহেনা সবার কথা শুনে হাসতে লাগল আর তামাশা করতে লাগল। বলতে লাগল, "এ মা! তাশফিয়ার বুঝি তিন টুকরো গাজর খেয়েই পেট ভরে যাবে! ছি! তোরা আমার ধারেকাছেও নস। দিবানিশি! শোন্, তুই নাকি ঐ ছোট্ট একটা মাত্র খেজুর খেয়ে ৯ ঘন্টা থাকবি। আশ্চর্য তো? কিছু নেই, নাকি? এত গরীব জীবনে দেখিনি। আর মাইশা, তুই কী রে! পাশের বাড়ি থেকে ক'টা মটরশুটি দিল, তা থেকে মাত্র একটা কেন আনলি? আশ্চর্য তো! আমার তো ১০০ টা মটরশুটি খেলেও হবে না। ধূত! এত গরীবের বন্ধু কি করে হলাম?" তাশফিয়া বলল, "রেহেনা! এত অহংকার ভাল না। তুই কি এনেছিস, সেটা আগে শুনি দেখি। এত যখন কথা বলছিস! বল্ কি এনেছিস?" রেহেনা বলল, "কী রে বাবা! এটুক ধারণাও নেই? এনেছি তো ১০টা চিকেন রোল, ২ বাটি বিরিয়ানি, মাছের মাথা এবং মাছের ডিমসহ মাছের ভাল ভাল পিস, দুই টুকরো রোস্টও সাথে এনেছি। আরো একটা ডিম পোচ। ভাবছিস কি, মাত্র এইটুকু এনেছি? আরো কত যে বাকি রইল বলা। হোটেলের ভেজিটেবল এনেছি। তার সাথে এনেছি একটা বড় পিজা। আবার দুটো বার্গার, তিনটি হটডগ। আর এনেছি এক বোতল কোল্ড ড্রিংকস। তোদের কথা ভাবলেই আমার ঘৃণা করে। তোরা আমার সাথে পড়িস? কী একটা ছোট খেজুরের টুকরো, তা খেয়ে নাকি ৯ ঘন্টা থাকবে? আর হ্যাঁ, এক প্যাকেট মাশমেলোজও কিন্তু এনেছি।" দিবানিশি আবার গরীব হলেও একটু কথা জানত। সে বলল, "এই জন্যই তো বলি, ব্যাগ ভারি, এত বই-খাতা আনিস, তাও পরীক্ষায় বারবার ফেল করিস। ব্যাগ কেন এত ভারি, এখন বুঝলাম। তুই ব্যাগ ভরে শুধু টিফিন আনিস। আর বই-খাতা কোনরকম বটলি পাকিয়ে যত কম নেয়া যায়, তত চেষ্টা। দেখি তোর ব্যাগটা? এ মা, তোর ব্যাগে তো পাঁচটা পার্ট। চারটা পার্টই দেখি জমিয়ে খাবার ঢুকিয়েছিস। আর একটাতে কোল্ড ড্রিংস, আর পানির বোতল, আর ছোট্ট একটা খাতা, আর কুট্টি একটা পেন্সিল; আর কিছু তো না! তোর পেট সত্যি তোর পেট তো, নাকি কোন রাক্ষস এসে পেট বদলে দিয়ে গেছে?" রেহেনা রাগের চোটে বলল, "এখন আমি খাব, জ্বালাবি না। এনেছে কতটুক একটু টিফিন, আবার ঝগড়া বাধায়। বুঝিস না, আমার সাথে ঝগড়া করলে কি হতে পারে, জানিস? আমার বাবা কী, জানিস? আমার মা কি, তাও তো জানিস না। বাবা আদালতে কাজ করে, আর মাও আদালতে কাজ করে। আমার মা-বাবা কিন্তু টিপে ভর্তা করে দিতে পারে তোদের। এখন কথা বলিস না, যা, যা। আমি এখন সব টিফিন বের করব। আমার তিনটা বেঞ্চ লাগবে টিফিনগুলো রাখতে। তোরা উঠে তোদের সিট দিয়ে যা। গরীবের আবার বসে বসে খেতে হবে নাকি? এত যখন কষ্ট সহ্য করিস, এটুক করবি না? যত্তসব!" সবাই আর কী বলবে? তারাও জায়গা ছেড়ে দিল। তার খাবার ব্যাগ থেকে বের করে বেঞ্চে রাখতে রাখতেই তো আধা ঘণ্টার দশ মিনিট পেরিয়ে গেল। তো কি? সে দুই সেকেন্ডেই সব খাবার শেষ করে দিতে পারবে। তার যা চালু মুখ আর চালু পেট। সে সবার আগে মাশমেলোজের পুরো প্যাকেটটাই মুখের ভিতর ঢুকিয়ে দিল। দুই সেকেন্ড পর মুখ থেকে খালি প্যাকেট বের করে আনল। এরপর দু'মিনিটে গপাগপ করে মাছ, মাংস ও ডিম খেয়ে ফেলল। আর এক মিনিটে দুই বাটি বিরিয়ানিও শেষ করে ফেলল। তারপর গবগব করে সবগুলো চিকেন রোলই খেয়ে ফেলল। তারপর ভেজিটেবল খেল। তারপরও সে বলল, "খিদেটা তো কিছুতেই যাচ্ছে না। কি যে করি, এখনো তো অনেক খাবারই রয়ে গেছে, সে সবই খাই। সে কোল্ড ড্রিংস গবগব করে সবটা খেয়ে ফেলল। এরপর গোটা পিজাটা সে মুখের ভিতর ঢুকিয়ে দু' সেকেন্ডেই তাড়াতাড়ি চাবিয়ে গিলে ফেলল। এরপর সে আধা মিনিটে দুটো হটডগ খেয়ে ফেলল। সব খাবারই সে চেটেপুটে এরপর খেয়ে নিল। তারপর পানি খেয়ে রেখে তবেই উঠল। সে বলল, "ইস! কেন যে এত্ত কম খাবার দিল? ছিছিছিছি, মান-সম্মান আর কিছু থাকল না। আনার কথা ১০০ ভাগ। ১০০ ভাগের মাত্র দুই ভাগ দিয়েছে আজকে টিফিনে। আরো তো খেতে ইচ্ছে করছে, কী খাব? সে গেল। গিয়ে বলল, "তোদের প্রত্যেকের টিফিনের চার ভাগের তিন ভাগ আমায় দিয়ে দাও, দিয়ে দাও বলছি? নইলে আমার বাবা-মা কিন্তু আদালতে নিয়ে গিয়ে কঠিন শাস্তি দেবে। দাও, বলছি!" তখন সবাই বলল, "এহ! কি বলিস কি? তুই পেট ভরে খেতে থাকবি, আর আমরা বসে বসে দেখব? আমরা ততক্ষণে কবেও খাবার শেষ করেছি!" এরপর রেহেনা খুব রেগে গেল। বলল, "১০০ ভাগের ৫০ ভাগ অন্তত আমায় খেতে হবে। মা কত টিফিন আমায় দিতে হবে, তাও বোঝে না। কিনে তো দিয়েছে শুধু একটা লাগেজ ব্যাগ, সেই লাগেজ ব্যাগে করেই যতটুকু ভরে, ততটুকু টিফিন দেয়। উহ! এখন যে কী করি?" ভাবতে ভাবতে সে একটা বুদ্ধি পেল। টিচার তো একটা ব্যাগ তার হ্যান্ডব্যাগের সাথে পিনআপ করে রেখেছে। তার ব্যাগের মধ্যে ছিল অনেকগুলো টি-ব্যাগ। আর ছিল এক বড় প্যাকেট আইসিং সুগার। টিচার আবার একটু ঢঙ্গু ছিল। শুধু সুগার দিলে গলতে শুরু করে, এজন্য সে আইসিং সুগার ব্যবহার করে। রেহেনা গিয়ে চুপে চুপে তাড়াতাড়ি আইসিং সুগারের প্যাকেটটা নিয়ে নিল। সব আইসিং সুগার একবারে মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে নিল। তারপর বলল, "উহ, বাবা! ১০০% এর ২০% তো খাওয়া হলো। এবার বরং সিটে বই-খাতা নিয়ে বসি। অন্য বন্ধুরা তো খাওয়া শেষ করে লেখাও শেষ করে খাতা জমা দিয়ে দিয়েছে। আমি তো বোর্ডেরটাই শুরু করিনি, নিজে যেটা লিখতে হবে সেটা কখন লিখব? সে তাড়াতাড়ি করে খাতা বের করে লিখতে শুরু করল। ঘন্টা বাজল। কিন্তু লেখা শেষ হলো না রেহেনার। সে শুধু বারবার ঘুমিয়ে পড়ছিল। টিচার এসে এসে তাকে ডেকে দিচ্ছিল। সব বন্ধুরা তো রেহেনা যখন দেখছিল না, তখন তাকে দূর থেকে একটু ভেংচি কেটে চলে গিয়েছিল। রেহেনা তো লিখতেই পারছে না। অবশেষে এক ঘন্টা পর সে বোর্ডের লেখা শেষ করল। এখন নিজে বানিয়ে লেখার পালা। তখন সে টিচারকে বলল, "মিস! শোনেন, আপনি একটু দেখুন তো যে, পাশের ক্লাসে টিচার ঠিকমত ক্লাস নিচ্ছে কিনা! আমার তো মনে হচ্ছে না। কারণ, আগের ক্লাসে ছুটির পর আমি পাশের ক্লাসের বাচ্চাদের দেখেছিলাম। জিজ্ঞেস করেছিলাম পড়া, একটুকুও পারেনি। বোধহয় ঠিকমত পড়াচ্ছে না, গিয়ে দেখুন তো!" ক্লাসের মিস তা দেখতে চলে গেল। এই ফাকে রেহেনা টেবিলে গিয়ে অন্যদের রাখা খাতাগুলো দেখে নিল। সে একটা খাতা পট করে নিয়ে নিজের স্কার্টের ভিতর লুকিয়ে নিল। যখনই সে পারে না, তখনই সে স্কার্টটা একটু উঁচু করে দেখে আবার স্কার্টটা ঠিক করে দেয়। হঠাৎ তার লেখা শেষ হলো। সে নিজের খাতার নিচে আরেকজনের খাতাটা রেখে টিচার যখন খেয়াল করছিল না, তখন পট করে গিয়ে জমা দিল। টিচার তাকে ছুটি দিয়ে দিল। রেহেনা বাসায় ফিরে গেল। সেই যে সে পুরো এক প্যাকেট আইসিং সুগার খেয়েছিল, সেই জন্য হল তার ডায়াবেটিস। তার পুরো পরিবার ঢঙ্গু হবার কারণে সেই এলাকার সেরা ডাক্তার খোঁজা শুরু করল। তা খোঁজার জন্য লোক পাঠালো। সেইজন্য টাকা গেল। এই ক'টা দিনের জন্য তার মা-বাবাও কিছুটা সময় চাকরি ছেড়ে দিল বাচ্চার দেখাশুনা করার জন্য। সেরা ডাক্তার তো সাধারণ মানুষের ঘরে এসে রোগী দেখতে চাচ্ছে না। সেজন্য এক্সট্রা টাকা দিতে হলো। তার মা-বাবা ঢঙ্গু হবার কারণে অনেক টাকা খরচা গেল। মিষ্টি ওষুধ দিন, সুস্বাদু ওষুধ দিন যাতে খাওয়াতে কষ্ট না হয়, যাতে আগ্রহ করে খায়, আবার যাতে চুরি করেও না খেয়ে ফেলে। ইত্যাদি সুবিধা সব লাভ করতে গিয়ে বেশির ভাগ টাকাই গেল ফুরিয়ে। সেরা ডাক্তার যখন দেখল, মা-বাপ ঢঙ্গু, বেশি টাকা আদায় করা যাবে, তখন সেও আবার চালাকি শুরু করল। ২০০ টাকার কাজ ২০০০ টাকা চাইল। এখন সে তো একটাই ইস্যু দিতে পারব। সেটা হল সেরা ডাক্তারের সেরা চিকিৎসা দেবে, তাতে বেশি দাম দিতে হবে না? এই ইস্যু। এরপর অনেক অনেক টাকা খরচ গেল। এতদিন মা-বাবার আদর পেয়ে পেয়ে রেহেনা আবার খুব লাই পেয়ে গিয়েছিল। সে তখন খারাপ লাগার অভিনয় করতে লাগল, যদিও তার অসুখ সেরে গিয়েছিল, যাতে মা-বাবা চাকরি ছেড়ে তার কাছে সময় কাটায়। এইভাবে তারা গরীব হয়ে গেল। একই সাথে, অন্য বন্ধুরাও কাজ করে করে ধনী হয়ে গেল। আগে রেহানা ও তার বন্ধুদের সাথে যা ঘটেছে, তার পুরো উল্টোই হয়ে গেল। শুধুমাত্র এই ঢংয়ের জন্য আর রেহানার অহংকারের জন্য।

1 comment:

  1. This is a wonderful written and helpful blog site. It is best quality & information. and this was long guideDigital Marketing

    ReplyDelete