Thursday, March 29, 2018

উইপোকা সমাচার

এক ছিল এক শহর। সেই শহরে থাকত একটি পরিবার। পরিবারে ভাই-বোন ও মা-বাবা ছিল। ভাই-বোন দু'জনের বয়সের মধ্যে বেশি একটা পার্থক্য নেই। ভাইয়ের ১০ বছর, বোনের সাড়ে ৮ বছর। তবে মাঝে মাঝেই ঝগড়া হয়। এমন কোন দিন নেই, যেদিন তাদের ঝগড়া হয়নি। মেয়েটির নাম ছিল শান্তা। আর ছেলেটির নাম ছিল হাসান। শান্তার আবার ছিল একটা ছোট্ট বাগান। সে সবসময় সেই বাগানেরই যত্ন নিত, আর খেলার সময় পুতুল দিয়েই শুধু খেলত। আর ছেলেটি শুধু শান্তাকে বলত, "এই শান্তা! সারাদিন শুধু বাগানের যত্ন নিস কেন? দেখ, আমি কেমন খেলি, মা আমাকে একটা বাক্স ৫০টি ছোট ছোট খেলনা সৈনিকসহ এনে দিয়েছে। তাদের মধ্যে আবার আলাদাও একজন আছে। খেলার মধ্যে আমি তাকে রাজা বানাই, কত কী করি! আর তুই সারাদিন বাগানের যত্ন নিস।" শান্তা বলল, "ভাইয়া! আমি শুধু বাগানের যত্ন নেই তোমাকে কে বলেছে? বাগানের যত্ন নেয়া শেষ হলে তো আমি একটুখানি খেলি। আর খেলা শেষ হলে আমি পড়তে যাই। রাতের খাবারের সময়ের আগ পর্যন্ত আমি পড়ি, আর বিকাল থেকে পড়া শুরু করি। তাই তো আমি সবসময় এ+ পাই। তুমি শুধু শুধু খেলনা নিয়ে খেল। খেলনার কি প্রাণ আছে? গাছ, ফুল এসবের প্রাণ আছে। আমি তাদের যত্ন নেই।" হাসান নাক ঘুঁচিয়ে ভ্রূ কুঁচকিয়ে বিদ্রূপের নাকি সুরে বলল, "ঊঁহ! ঢং কত! নিজে যখন পুতুলকে খাওয়ায় দাওয়ায় তার বেলা।" শান্তা বলল, "চুপ কর তো তুমি। আমি খেলি খুব অল্প সময়। এখন ঝগড়াটা থামাও। আমাকে গাছে পানি দিতে দাও।" রাত হলো। তারা ঘুম ঘুম চোখে। ঘুমিয়েই পড়বে একটু পর। শান্তার হাতে চুলকিয়ে উঠল। সে উঠে চিৎকার করল। হাসান তখন বলল, "কি হয়েছে, মা একটু শুয়েছে, চীৎকার করেছিস কেন?" শান্তা বলল, "পিছনে তাকিয়ে দেখ। পুরো ঘরটাতে কী হয়েছে!" হাসান পিছন ফিরে আবার চিৎকার দিয়ে উঠল। এরপর মাও পিছন ফিরে দেখল। মাও খুব আতঙ্কিত হয়ে উঠল। তাদের বাবা পিছন ফিরে দেখে বলল, "এ কী! এ যে উইপোকা। উইপোকার দল আমাদের বাড়িতে হামলা করেছে। কোথা থেকে আসল এই উইপোকা? উইপোকা নাকি সারা ঘরও খেয়ে ফেলতে পারবে।" পরের দিন তারা সকালে উঠে দেখল, বিছানা উইপোকার লাশে ভরে গেছে। শান্তা উঠে দৌড় দিল আর তাড়াতাড়ি ড্রেসিং রুমে গেল আর অন্য একটা জামা পড়ে আসল। সেই জামার মধ্যেও উইপোকার লাশ ছিল। আর শান্তার ভাই! সে তো এসব কিছু কেয়ারই করে না। সে তার বাবাকে বলল, "বাবা, বাবা! আমাদের তো একটা মশার র‍্যাকেট আছে। চল না, র‍্যাকেটটাই ব্যবহার করি উইপোকা মারতে।" বাবা রাগ হয়ে বলল, "চুপ কর! কেমন কেমন বুদ্ধি দেয়? কত বুদ্ধি! যেন কার্টুনের গোপাল ভাড়। মশার র‍্যাকেট দিয়ে উনি মারবে উইপোকা। র‍্যাকেটের সাথে যখন উইপোকার লাশ লেগে থাকবে, তখন কি হবে? তখন তো নিজেই ধরতে ঘৃণা পাবি।" তাদের আবার এক মামা ছিল। সেই মামাকে সবাই উইপোকা মামা বলে ডাকত। কারণ, সে উইপোকা তাড়াতে জানত। শান্তা যখন শুনেছিল যে, তার ভাইয়ের র‍্যাকেট দিয়ে মারার কথা; শান্তা বলল, "ভাইয়া! পুড়িয়ে মারতে হয় না। দরকার নেই তো। উইপোকা মামাকে ডেকে আনলেই তো হয়। উইপোকা মামা কত না জানি উইপোকা মারে।" এরপর উইপোকা মামা বাসায় এল। উইপোকা মামা দেখল, তাদের রান্নাঘরের চৌকাঠে উইপোকার বাসার মতন মাটি। সে উইপোকার ওষুধ দিয়ে দিল সেখানে। উইপোকারা কয়েকদিনের মধ্যেই মরে গেল। কারণ, উইপোকা মামা আরো অনেক কিছু করেছিল। এরপর উইপোকা মামা বাসায় ফিরে গেল। ওদের মা হাসান এবং শান্তাকে বলল, "শোন! তোদের বাসায় উইপোকা এসেছে কেন, জানিস? কারণ, তোরা সবসময় ঝগড়া করিস। তাই উইপোকা তোদের শাস্তি দেয়ার জন্য এই বাসায় এসেছে।" শান্তাকে ওর মা বলল, "তোমার গল্পের রূপকথার পরী এসে উইপোকা দিয়েছে, কারণ তোমরা ঝগড়া কর।" আর হাসানকে বলল, "তোমার খেলনা সৈনিকের দল তোমার ঐসব ভূতের মুভির ভূতদেরকে বলেছে উইপোকা দিতে। তাই বাসায় উইপোকা এসেছে।" তখন থেকে আর কেউ ঝগড়া করে না। এখানে গল্প শেষ।

Saturday, March 24, 2018

হালাল-হারামের বিড়ম্বনা

এক মুসলমান লোক অফিসের কাজে বিদেশ যাচ্ছিল। সে সবকিছুই গুছিয়ে নিয়েছিল। কিন্তু খাবারের কথা তার মাথায়ই ছিল না। সে ভেবেছিল, খাবার তো দোকান থেকে কিনেই ম্যানেজ করা যাবে। এই ভেবে সে খাবার ছাড়া অন্যান্য সব কিছু গুছিয়ে নিয়ে বিদেশে রওয়ানা হলো। বিদেশে পৌঁছে সে একটা হোটেলের রুম ভাড়া নিল। খাবার সময় কোথায়? এসেই বিদেশে তার অফিসের এক কলিগ তাকে ফোন দিয়ে বলল অমুক জায়গায় যেতে। আর সেখানে যাওয়ার সময় ল্যাপটপটা নিতে না ভুলতে। তখন দুপুরের খাবারের সময় ছিল। কিন্তু তার কলিগ বলেছিল আধ ঘন্টার মধ্যে পৌঁছে যেতে। যেতেই তো ২৫ মিনিট লাগে। তাই সে তাড়াতাড়ি না খেয়েই রওয়ানা দিল। তারপর পরের দিন সকালে সব রকম কাজ শেষ করে সে আবার হোটেলে ফিরে আসল। কিন্তু তাও পুরোপুরি সব কাজ শেষ হয়নি। পরের দিন আবার ঐ জায়গায় যেতে হবে। এরপর সে তাড়াতাড়ি গিয়ে হোটেলে খাবারের অর্ডার দিতে গেল। বলল, "কি কি খাবার পাওয়া যাবে এখানে?" হোটেলের লোকেরা খাবারের লিস্টটা দেখালো। লিস্টের মধ্যে যা লেখা ছিল, তা দেখে লোকটি তো চিন্তায় পড়ে গেল। কি খাবে সে? সবগুলোই তো হারাম। একটা ছিল বেকন (লবণে জারিত শুষ্ক শুয়োরের মাংস), আরেকটা ছিল চিকেন ফ্রাই। চিকেন ফ্রাই হালাল হলেও তারা তো জবাই দেয় না। তাই তাও খাওয়া গেল না। শেষ পর্যন্ত হালাল-হারামের মাঝামাঝি পাওয়া গেল কাঁকড়া। কিন্তু তাও লোকটি খেতে ঘৃণা লাগছিল। তাই সে সেটারও অর্ডার করতে চাইল না। সে বলল, "ভেজিট্যাবল নেই নাকি কোন?" তারপর ওখানকার বাবুর্চিরা বলল, "কেন পাওয়া যাবে না? তবে ভেজিট্যাবল আর পর্ক (শুয়োরের  মাংস) দিয়ে তৈরি একটি সালাদ আছে।" লোকটির তো মাথায় হাত। বলল, "শুধু ভেজিট্যাবল নেই? আচ্ছা, ভেজিটেবল না হয়, শুধু ফল তো থাকতে হবে!" বাবুর্চিরা বলল, "ফল? সে আমরা কিভাবে করব? ফল কি রান্না করার কিছু, যে হোটেলে থাকবে? সে তো কিনেই খেতে পারেন।" তখন লোকটি বলল, "ঠিক আছে, কোন প্রাণীর মাংস ছাড়া কি কিছু নেই নাকি?" বাবুর্চিরা বলে, "থাকবে না কেন, স্যার? একেবারে পিওর টাটকা শুয়োরের দুধ দিয়ে তৈরি মাখনের বাটারবন আছে।" লোকটি রাগ হয়ে বলল, "মুসলমানদের খাওয়ার মত কি কিছু আপনাদের হোটেলে পাওয়া যায় না নাকি? অন্তত একটা আইটেম তো থাকতে হবে!" শেষ পর্যন্ত তার ভাগ্যে বোধহয় খাবার জুটবে। কিন্তু তাও ফেলে ফেলে। সেখানে ডিম পোচ ছিল, কিন্তু ডিমের আশপাশ দিয়ে শুকরের গোশত কুচি কুচি করা ছিল। বাবুর্চিরা বলল, "এই আইটেমটা আপনি নিতে পারেন, শুধু বাইরের এই জিনিসগুলো সরিয়ে সরিয়ে শুধু ডিমটা খেতে পারেন। আমাদের বিদেশে আবার একটা নিয়ম আছে, সেটা হলো ঠিক করে দেয়া আইটেম ছাড়া এদিক ওদিক করা যাবে না। রেডিমেট আইটেমের মধ্য থেকেই খাবার বেছে নিতে হয়, অর্ডার মত কিছু তৈরি করা হয় না। তারপর যে খাবার সার্ভ করা হয়, সেগুলো থেকে কিছু খেতে ইচ্ছে না করলে সেগুলো নিজের হাতে সরিয়ে পরে যেটুকু খাওয়া যায় সেটুকু খেতে হবে। কিন্তু শুধু ডিম খাবেন বলে ডিমের দাম দেবেন না, পুরো আইটেমটার দামই কিন্তু দিতে হবে। তাহলে এটাই চুজ করলেন তো? তাছাড়া তো আপনার খাওয়ার মতন কিছু দেখছি না।" লোকটি নিরূপায় হয়ে তাই মেনে নিল। তারপর সার্ভ করার পর প্লেটটা হাতে নিল। সব বেকনগুলো ফেলে দিল। তবে ডিমের যেই জায়গাতে বেকনগুলো লেগে ছিল, সেই জায়গা থেকে কিছু ডিমও ছিঁড়ে ছিঁড়ে ফেলে দিল। সে যেটুকু খাবার পেয়েছে এর দাম তো দশ টাকাও নয়। সে মনে মনে বলতে লাগল, এর থেকে তো রাস্তার দুই টাকার ঝালমুড়িও ভালো। সে ওটুকুই খেল সেই দিনের মত। পরের দিন সে ভাবল, বিদেশে আসলাম, শুধু অফিসের কাজ করলেই কি হবে? অফিসের কাজ তো শেষ। এখন একটু ঘুরি। ঐদিকের হোটেলটাতে তো যাওয়াই হলো না। অথচ খুব কাছে। ঐ হোটেলে নাকি খাবার খেলে ক্যারাম খেলার চান্স পাওয়া যায়। আমি তো আবার ক্যারাম খেলতে খুব পছন্দ করি। যাই, ঐ হোটেলেই যাই। গিয়ে দেখল, সেই হোটেলে মুসলমানদের খাওয়ার মত অনেক কিছুই আছে। পাস্তা ছিল, নুডুলস ছিল, মাছ ভাজা ছিল, আর ভেজিটেবলও ছিল। লোকটি আফসোস করতে লাগল, প্রথমে যদি এই হোটেলটাতে এসেই উঠতাম, তাহলে তো কথাই ছিল না। এখন এই হোটেলে ভালোমত খেয়ে নেই। সে নুডুলস, পাস্তা এবং হালাল সব রকম খাবারই চুজ করে নিল। তারপর মজা করে খেল। আর আগের হোটেলের ড্রিংকস ছিল দুই রকম। একটা ছিল মরিচ ড্রিংকস, আরেকটা ছিল শুকরের দুধের ড্রিংকস। লোকটি আবার বেশি ঝাল খেতে পারত না। তাই মচিরের ড্রিংকসটাও চুজ করতে পারল না, আর অন্যটা তো খাওয়াই নিষেধ। আর এখানে অনেক রকম ড্রিংকস ও জুস আছে। আমের জুস, কমলার জুস, আপেলের  জুস, স্প্রাইট ইত্যাদি। সে যত পারল ততই অর্ডার করল আর ততই খেতে শুরু করল। খাওয়া শেষ করে ভাল করে হাত-মুখ ধুয়ে নিল আর মনে মনে ভাবতে লাগল, কেন যে ঐ হোটেলটাতে উঠতে গেলাম! শুধুই কলিগটার কথায় কান দিয়ে। কলিগ বলেছিল, এদেশের সব মানুষ নাকি ঐ হোটেল বেশি পছন্দ করে। তাই ঐ হোটেলে গিয়েছিলাম। আমি আরো কয়দিন থাকব, আর এই হোটেলেই থাকব। এরপর সে শুয়ে পড়ল। পরের দিন সকালবেলা উঠে সে ক্যারাম খেলল, আবার জিতেও নিল। এরপর সব শেষে সে আবার দেশে ফিরে আসল। তারপর তার বউ-বাচ্চা সবাইকে ঘটনা বলল। যত কষ্টেরই হোক, প্রথম দিকেরটা কিন্তু বেশি অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ ও অ্যাডভেঞ্চারপূর্ণ ছিল। আর সে লোকটি মনে মনে বলে নিল, এরপর অন্য কোথাও গেলে খাবার সঙ্গে করে নিয়ে যাবে, নয়তো খোঁজখবর নিয়ে নেবে ওখানে হালাল খাবার পাওয়া যায় কিনা।

Tuesday, March 20, 2018

দাতা জাতি

এই গল্পটি কাল্পনিক। এক দীপে বাস করত এক জাতি। সেই দীপের মানুষেরা সবাইকে দান করত। প্রয়োজনে নিজের কাজের জিনিসও দিয়ে দিত অন্যের সাহায্য করতে। তাই তাদের নাম ছিল দাতা জাতি। সেই দীপে দাতা জাতি থাকে বলে সেই দীপের নাম দাতা দ্বীপ। অনেক মানুষই দাতা দ্বীপে আগ্রহ করে দেখতে যায়। তারা যেইভাবে যায়, সেইভাবেই সুন্দরমত ফিরে আসতে পারে। দাতা জাতি সম্পর্কে কয়েকটা ইনফরমেশন জানতে চাও? দাতা জাতির প্রধান খাবার বনরুটি ও থানকুনি পাতার রস। তাদের দ্বীপে সব থেকে আকর্ষণীয় হলো, সেই দ্বীপে বনরুটিরও গাছ হয়। আর থানকুনি পাতার গাছ তো আছেই। তারা কিভাবে পানি খায়, জান? তাদের কাছে একজনের বালি দিয়ে পানি পরিস্কার করার পদ্ধতি জানা ছিল। আর তাদের প্রত্যেকের ঘরে ঘরেই সেই যন্ত্র ছিল। সেই দ্বীপটি সমুদ্রের ঠিক মাঝখানে অবস্থিত ছিল। দ্বীপটি বাংলাদেশের ঢাকা শহরের সমান। দাতা জাতিরা গাছের উপর ইয়া বড় বাসা বানিয়ে থাকত। তাদের কাছে সুই-সুতাও ছিল। তারা সেই দ্বীপের পাতা দিয়েই সুই-সুতা দিয়ে সেলাই করে পাতার পোশাক বানাতো।মেয়েরা পাতার শাড়ি এবং ছেলেরা পাতার লুঙ্গি পরত। একদিন দাতা জাতিরই একটা বাচ্চা কাঁদছিল। দাতা জাতিরই আরেকজন এসে তাকে জিজ্ঞেস করল, "কি হে! তুমি কাঁদছ কেন?" বাচ্চাটি বলল, "মা আমাকে থানকুনি পাতার রস এনে দিয়েছিল। আমার মা আবার আমার উপর একটু রাগী। থানকুনি পাতার রস খাওয়ার আগেই সেই পাত্রটি আমার হাতে লেগে মাটিতে পরে গেল। আর সব থানকুনি পাতার রস মাটিতে মিশে গেল। এখন মা এসে দেখলে কি বলবে? সেই চিন্তাতেই আমি কাঁদছি। আর মা যে থানকুনি পাতার রস এনেছিল, সেটা ছাড়া সকালের কোন নাস্তাই বানানো হয়নি। খাব কি?" লোকটি বলল, "আমি খাওয়ার পর থানকুনি পাতা বেঁচে গেছে। আর আমি এমনিতেও বনরুটি খেয়েছি। আমার এই সবটুকুই তুমি নাও। আর যেগুলো মাটিতে পরেছে আমি সেগুলো পরিস্কার করে দিচ্ছি।" বাচ্চাটি খুব খুশী হলো। আর সেই লোকের ভাগের খাবারটি খেয়ে ফেলল। মা এসে বলল, "সবটুকু খেয়েছিস? ঠিক আছে।" একবার বাংলাদেশের ঢাকা শহরে একটি বাচ্চা তার বাবাকে বলল, "বাবা! আমি গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে দাতা দ্বীপে যাব। সেখানে নাকি দাতা জাতিরা থাকে। তাদের প্রধান খাবার নাকি বনরুটি আর থানকুনি পাতার রস। বনরুটিরও গাছ আছে সেই দ্বীপে। সবাই সবাইকে সাহায্য করে। তারা পাতা ও সুই-সুতা দিয়ে পোশাক বানায়। কততো মজার মজার বিষয়! আজকের পেপারে দিয়েছে। আমি গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে সেখানেই যাব। তুমি না নিয়ে গেলে কিন্তু আমি স্কুলেই যাব না। কোন দিন স্কুলে যাব না। বই-খাতা সব ছিঁড়ে জানালা দিয়ে ফেলে দেব। তুমি খুব দুষ্টু। নিয়ে যাও আমাকে। তুমি না মানতে চাইলে আমি মাকে বলব।" বাবা বলল, "কী! আমি রাজি হলাম না, আর তোমার মা রাজি হবে! কী বল? দাতা দ্বীপে যেতে অনেক যুগ লাগে। তাও আবার প্লেনে গেলেই দুই যুগ লাগে।" আর মনে মনে বলল, "দুই যুগ, না দুই দিন, ছাই!" বাচ্চাটি বলল, "কী! পেপারটা আগে পুরো পরে দেখ। প্লেনে যেতে এক দিন লাগে। তুমি আমাকে বুঝ দিচ্ছ, না! আমি তোমার অফিসের ব্যাগটাই ফেলে দেব। নিয়ে যাও আমাকে। গ্রীষ্মকালীন ছুটি কিন্তু কয়েকদিন পর থেকেই শুরু হবে।" বাবা বলল, "ইস! এই পেপারটা যে কেন ওর হাতে দিলাম! পেপারে কেন ওরা গল্প দেয়? গল্প পড়তে পড়তেই তো এটা পেয়ে গেছে পরের পেজে।" বাবা বলল, "সেই দ্বীপে কিন্তু প্রচণ্ড গরম। ওখানে গেলে কিন্তু সবসময় বনরুটি আর থানকুনি পাতার রস খেতে হবে। ওখানে অন্য কিছু খেতে বসলে দাতা জাতিরাও হয়তো খেতে চাইবে।" বাবুটি বলল, "না! ওরা অন্যজনকে দান করে, অন্যজনের কাছ থেকে নেয় না। আর ওখানে যাওয়ার জন্য আমি সব খাব। আমি এই ব্যাগ গুছানো শুরু করলাম। তুমি মাকে রাজি কর, এটাই আমার শেষ কথা।" বাবা বলল, "দুষ্টু মেয়ে! তুমি তো আমাকে ফ্যাসাদে ফেলে দিলে। ঠিক আছে বাবা, যাব। তোমার মাকে আমি রাজি করাতে পারব না। তোমার শেষ কথা আছে, আর এটা আমার শেষ কথা।" বাচ্চাটি বলল, "তোমার কথাই মা বেশি শোনে। তুমি একদিন মাকে বলেছিলে, কালকে অফিসে যেতে পারব না, বাসায় কাজ আছে। আর মা রাজি হয়ে গেল। কিন্তু মাকে যখন বলি যে, আমি স্কুলে যাব না, বাসায় আমার গেম খেলা আমার একটু বাকি রয়ে গেছে, বাসায় বসে সেই কাজ করব, তখন তো মা ধমক দিয়ে 'না' বলে। তোমার কথাই মা শুনবে। আমি বললে ধাবাড় দিয়ে 'না' বলবে, আমি সিওর।" বাবা বলল, "আচ্ছা, ঠিক আছে। যদি সম্ভব হয়, তাহলে। দাতা দ্বীপে যাওয়াটা সম্ভব, কিন্তু তোমার মাকে রাজি করানোটা কিছুটা অসম্ভব।" বাবা তখন মায়ের কাছে গিয়ে বলল, "শোন, তোমার মেয়ে একটা বায়না করেছে। আগে বল, তুমি মানবে কি মানবে না। আগেই তোমাকে বলতে হবে, মানবে কি মানবে না, তারপর শুনতে হবে।" মা বলল, "তোমার মেয়ের আবদার! সে নিশ্চয়ই আজগুবি আবদার হবে। আমি না শুনে বাবা মানতে পারব না।" বাবা বলল, "(একটু বাড়িয়ে বলল) তোমার মেয়ে বলেছে, তুমি যদি আগে উত্তর না দাও, তাহলে সে ভাববে তুমি নাকি তাকে ভালোই বাস না।" তখন মা বলল, "ঠিক আছে, আমি মানব। এবার শুনি দেখি, কী আজগুবি আবদার?" বাবা বলল, "তোমার মেয়ে দাতা দ্বীপে যেতে চায়, দাতা জাতি দেখতে। পেপারটা দেখলেই বুঝতে পারবে।" মা পেপার পড়ে বলল, "কী! আমি তো ভেবেছি, ওর জন্য অনেকগুলো বই কিনব, আর সেই বইগুলো গ্রীষ্মের ছুটিতে পড়িয়ে লিখিয়ে শেষ করিয়ে দেব। ভেবেছিলাম, একটু পড়ালেখা করিয়ে এই ছুটিটা পার করব। কিন্তু মেয়ের কাণ্ডটা কী! শুধু আজগুবি আবদার! তাও আবার যে সে জায়গায় নয়। একেবারে সেই সমুদ্রের মাঝখানে দাতা দ্বীপ। পেপারে একটা জিনিস দেখলাম। সেটা তোমাকে আমার মেয়ে বলেনি। সেটা হলো, তারা শুধু প্রধান খাদ্যই কি খাবে নাকি? সাথে একটা ফলও খায়, নাস্তা হিসেবে। ফলটির নাম সপ্তবীজ। আর কারণটা খুবই হাস্যকর। সেই ফলের মধ্যে নাকি সাতটা বীচি থাকে। আর সেটা নাকি আপেলের মত কামড়ে কামড়ে খেতে হয়, আর বীচিও নাকি খাওয়া যায়- তরমুজের বীচির মত। না খেলেও হয়। ঠিক আছে, প্রথমে যখন বলেই ফেলেছি, তাহলে যাওয়া হোক। তবে আমি কিন্তু এক্সট্রা কোন কিছু সাথে নেব না। যেমন- খাবার। ওখানকার বনরুটি আর থানকুনি পাতার রস অথবা সেই ফল খেয়েই থাকতে হবে।" তারা জামাকাপড় গুছিয়ে নিল। শেষ পর্যন্ত গ্রীষ্মের ছুটির দ্বিতীয় দিনই তারা প্লেনে উঠল। পরের দিন তারা পৌঁছে গেল। তখন সেই দ্বীপের সবাই ঘুমাচ্ছিল। কোন মানুষের পায়ের আওয়াজ টের পেয়ে তারা সবাই জেগে উঠল। তাদের মধ্যে একজন সবাইকে ডেকে তুলল আর বলল, "আমাদের দ্বীপে মেহমান এসেছে। তাদেরকে খাবার দিতে হবে। চল, তাড়াতাড়ি থানকুনি পাতা, বনরুটি আর সপ্তবীজ ফল নিয়ে ওদের কাছে যাই। আর পুরস্কারস্বরূপ তাদের জন্য কয়েকটা জামাকাপড়ও দেই।" সবাই ঝটপট সবকিছু নিয়ে তাদের সামনে গিয়ে পৌঁছালো। দেখল, তারা সমুদ্রের পাড়ে অর্থাৎ দ্বীপের কিনারে দাঁড়িয়ে ছিল। বসতে চাইছিল, কিন্তু বসছিল না। দাতা জাতিরা বুঝতে পারল, পৃথিবীতে তো বেঞ্চ, চেয়ার এগুলোতেই বসেছে, তাই এখানে বসতে ঘৃণা লাগছে। তাই তারা পরস্পরকে বলল, "চল, আমরা পাতা দিয়ে তৈরি মাদুর কয়েকটা নিয়ে ওদের কাছে দেই।" সবাই মিলে মানুষগুলোকে স্বাগতম জানালো। মাদুরে বসতে দিল এবং খাবারগুলো সুন্দর করে সাজিয়ে দিল। মেহমানদের দেয়ার জন্য তাদের কাছে কাঠের কয়েকটা গ্লাস ছিল। সেই গ্লাস ধুয়ে বালু দিয়ে পানি পরিস্কার করে তাদেরকে খেতে দিল।" বাচ্চাটি বলল, "তোমরা কোন্‌ ভাষায় কথা বল?" এরপর ঘটল এক অদ্ভূত ব্যাপার। দেখা গেল, দাতা জাতিরা বাংলায়ই কথা বলে। খাওয়া-দাওয়ার পর মানুষগুলো উঠে বসল আর বাচ্চাটি জিজ্ঞেস করল, "তোমরা কি খেয়েছ?" দাতা জাতিরা বলল, "না, আমরা এখনো খাইনি। তোমাদের না খাইয়ে আমরা কিভাবে খাব?" বাচ্চাটি বলল, "কেন? একসাথেই তো খেতে পারতাম।" দাতা জাতিরা বলল, "একসাথে খেতে পারতাম, কিন্তু আমরা কি তা করতে পারি?" এরকম করে প্রত্যেকদিনই খাওয়া দাওয়া হলো, মজা হলো। দাতা জাতিদের ছবিও তুলল। এরপর সেই বাচ্চাটি সবাইকে বিদায় জানিয়ে চলে আসল, কিন্তু তার সেখানেই থাকতে ইচ্ছা করছিল। এসে দাতা জাতিদের ছবি প্রিন্ট করে স্কুলে নিয়ে গেল এবং টিচারদেরকে দেখালো। আর এটাই তার জীবনের বেস্ট এডভেঞ্চার।

Saturday, March 10, 2018

ধনী রাজা

এক ছিল এক রাজা। সেই রাজা অনেক অনেক ধনী ছিল। তার রাণীও অনেক অনেক ধনী ছিল। রাজা ধনী হলে রাণী তো ধনী হবেই। কিন্তু এখানে বোঝাচ্ছে, রাজার শ্বশুরবাড়িও খুব ধনী ছিল। এতই ধনী ছিল রাজার রাজ্য যে, রাজা ও রানী প্রাসাদের মধ্যেও ঘুরত পালকিতে চড়ে। আর তাদের খাইয়ে দেয়ার জন্যও দাস-দাসী ছিল।  কিন্তু যাতে যুদ্ধে হেরে না যায়, সেজন্য এক্সারসাইজ (শরীর চর্চা) করানোরও লোক ছিল। রাজার ছিল এক ছেলে এবং এক মেয়ে। ছেলেটা ছিল ভীতু, কিন্তু মেয়েটা ছিল সাহসী। উল্টো, তাই না? কিন্তু এটাই সত্যি। রাজা ঠিক করল, জঙ্গলে শিকারে যাবে। ছেলেটাকে সাধল, কিন্তু ছেলেটা যেতে চাইছে না। সে বলল, আমার ভয় করে। আমি যেতে পারব না তোমার সাথে। আমি মায়ের সাথে প্রাসাদেই থাকব। কিন্তু মেয়েটা নেচে উঠে বলল, "বাবা! আমি যাব। আমি যাবই যাব, তুমি যাই বল। ভাইয়া না গেলেও হবে, কিন্তু আমি যাব। আমি একা যেতেও রাজি আছি, কিন্তু আমি যাবই যাব।" রাজা রাগ হয়ে ধাবাড় দিয়ে বলল, "তুই চুপ কর তো! তুই মেয়ে হয়ে যাবি শিকারে? আজগুবি আবদার করবি না।" মেয়েটা বলল, "বাবা! তুমি আমাকে তুই বলছ কেন? আমি তো রাজকন্যা। আমি শিকারে যাবই যাব। আমাকে শিকারে নিয়ে যাও, আর নাহলে আমি কিন্তু মাঝরাতে একা একা জঙ্গলে চলে যাব। আমি জীবনেও শিকার করিনি। ভাল্লাগে না।" রাজা বলল, "ঠিক আছে, তুমি যাবে। কিন্তু ওখানে তো শাড়ি পরা যাবে না, ওখানে শিকার করার সময় খুব সাবধানে থাকতে হবে এবং দরকার পড়লেই দৌড়ে এক জায়গায় লুকিয়ে পড়তে হবে। শাড়ি পরে কি দৌড়াতে পারবি তুই? যত্তসব আজগুবি আবদার!" মেয়েটা বলল, "শাড়ি পরার দরকার আছে কোন? রাজকীয় শাড়ি না পরলেও চলবে। কিন্তু আমি শিকারে যাব, আর তুমি কিভাবে পশুপাখি শিকার কর, আমি তা দেখব।" রাজা বলল, "তাহলে তোমার দাসীকে বল শিকারে যাওয়ার জন্য তোমাকে একটা পোশাক এনে দিতে।" মেয়েটা বলল, "ঠিক আছে, বলছি। এই দাসী! যাও, আমার জন্য শিকারে যাওয়ার জন্য একটা পোশাক নিয়ে এসো।" দাসী তো শুনে অবাক। সে বলল, "আগে একটা কথা বলতে পারি? রাগ করবেন না তো?" রাজকন্যা বলল, "না, না। রাগ কেন করব? বল।" দাসী বলল, "ইয়ে মানে আপনি মেয়ে হয়ে শিকারে যাবেন?" রাজকন্যা রেগে গিয়ে বলল, "তাতে তোমার সমস্যা কি? যাও গিয়ে আমার পোশাকটা নিয়ে এসো।" সকাল বেলা রাজার মেয়ে রাজার সাথে শিকারে বের হল।রানী তো চিন্তা করছে। মেয়েটা একা সব পুরুষদের সাথে শিকারে গেল। কি জানি কি হয়, বাবা!" কয়েকদিন হয়ে গেল। রাজা ফিরে আসল। এবং তার সৈন্যদের কাঁধে বড় বড় বস্তা। সেই বস্তার ভিতর হরিণ। হরিণগুলোকে মেরে রাজা নিয়ে এসেছে। রাণী মেয়েকে জিজ্ঞেস করল, "কি, কেমন লাগল শিকার?" মেয়েটা বলল, "বেশি একটা ভালো লাগেনি। কারণ, আমি তো কিছু করলামই না। সৈন্যরা দূর থেকে তীর ছুঁড়ল, আর হরিণগুলো মারা পড়ল। আর বেশি ভালোও লাগেনি। জঙ্গলের মধ্যে হাঁটতে হাঁটতে পা-ই ব্যথা হয়ে যায়।" রাণী বলল, "জঙ্গলটা তো অত বেশি বড় না। পুরো জঙ্গল কি ঘুরেছিস নাকি?" রাজকন্যা বলল, "তা কেন হবে? অর্ধেক পর্যন্ত গিয়েই তো সব হরিণদের মারলাম।" রানী বলল, "আসলে প্রাসাদে তো আমার সঙ্গে পালকিতে চড়েই ঘুরিস! আর জঙ্গলে তো পালকি নেয়াই যাবে না। বাঘের গর্জন শুনে বেয়াড়ারাই তো দৌড়ে পালিয়ে যাবে।" রাজকন্যা বলল, "যা হওয়ার তো ভালোই হয়েছে। হরিণগুলো কি করব? খাব নাকি?" রানী বলল, "খাবি না তো কী? দাসীদেরকে এখনই ডাকি। কে কোথায় আছিস? এসে হরিণগুলোকে রান্নাঘরে নিয়ে যা। এমনভাবে নিবি, যাতে কোন রক্ত রাজপ্রাসাদের অন্য জায়গাতে না পড়ে।" দাসীরা বলল, "ঠিক আছে। তাই হলো।" কিন্তু রাজা তো অনেকগুলো হরিণই শিকার করেছে। শুধু রাজপ্রাসাদের মানুষরা খেয়ে তো হবে না। রাজা ঠিক করল, তার রাজ্যের সবাইকে একটু একটু করে হরিণের মাংস খাওয়াবে। সেরকম করেই একটা মেলা হলো। আর সেই মেলায় সবাইকে খাওয়ানো হলো। যাই হোক, সবাই খুব মজা করল। গল্প শেষ।

আমরা সবাই হব বিভিন্ন পেশার

আমরা সবাই হব ডাক্তার
চিকিৎসা করব সবার।
আমরা সবাই হব শিক্ষক
পড়াব আমরা 'ব' তে হয় বক।

আমরা সবাই হব দোকানদার
দোকানে রাখব খাবার মজার মজার;
আমরা সবাই হব বাবুর্চি
সবজি কাটব চাকু দিয়ে করে কুচি কুচি।

Friday, March 9, 2018

ধনী ও গরীবের ভোজ

এক ছিল এক বিল্ডিং। সে বিল্ডিংয়ে সবথেকে ধনী লোক ছিল ৬ তলার দুটি বাসা মিলিয়ে একটি বাসার মালিক। অনেক লোক আছে ধনী, কিন্তু খারাপ। কিন্তু এই লোক ভালো। সে ভাবল, আমার তো অনেক কিছু আছে। অনেক টাকা-পয়সা। তো আমি তো আবার চাকরি করে করে এই বছরে টাকা অনেক জমিয়েছি। কিন্তু এমনি এমনি তো আর জমাইনি। জমিয়েছি ভালো কিছু করার জন্য। এক কাজ করি। এই বিল্ডিংয়ের সব বাসাই তো অনেক অনেক ছোট। আমি তো দুটো বাসা একসাথে কিনে মাঝখানের দেয়াল ভেঙ্গে দিয়েছি। যারা এরকম ছোট ঘরে থাকে তাদের নিশ্চয়ই অনেক কষ্ট। তারা নিশ্চয়ই সুখী নয়। একটা ভালো দিন দেখে তাদের জন্য একটা ভোজের আয়োজন করলে কেমন হয়? তার অনেক লোক ছিল। রাঁধুনি, দাস-দাসী সব ছিল। আর তার আলাদা একটি হোটেলও ছিল। কিন্তু সেই হোটেল কেবলমাত্র ধনী লোকদেরই জন্য। তাই সেই হোটেলে সেই লোকদের খাওয়ানো যাবে না। সেই হোটেলেই তার দাস-দাসী এবং রাঁধুনিরা ছিল। এই খবর সে তার বাড়ির সবাইকে এবং তার হোটেলের সব কর্মচারীদের জানিয়ে দিল। সবাই একমতই হলো। ধনী লোকটি একটি ভালো দিন ঠিক করে ফেলল। তার সাথে একটি বড় মাঠও ঠিক করে ফেলল। আর বলল, কয়েকজন লোক লাগবে জায়গাটিকে সাজিয়ে তুলতে। বড় বড় পাটি কেনা হলো, বিছিয়ে দেয়া হলো। সে ভাবতে লাগলো, বিল্ডিংটিতে ৬০ থেকে ৭০ এর মধ্যে বাসা আছে। অনেক খাবার দরকার। সেই অনুযায়ী সে অনেক বড় বড় হাড়ি কিনল। আর তার সংখ্যাও অনেক। অনেক চালের বস্তা কেনা হলো। আর পাশে তো কলাবাগান আছেই। কলাপাতায় দিলেই হয়। ঠিক করল খিচুরি রান্না হবে। কিন্তু শুধু খিচুরি কিভাবে খাওয়াবে? এ কেমন কথা? তাই ১০০টি মুরগী আনা হলো। যদিও বাসা ৭০টি, তাও যদি টান পড়ে। কয়েকদিন পরেই সেই দিন আসল। সবাই রান্নাবাড়ি শুরু করে দিল। তার আগের দিনই সব রান্না শেষ হয়ে গেল। সেই বিল্ডিংয়ে বাসা যতই ছোট হোক, প্রত্যেক বাসার সঙ্গে একটা বড় ফ্রিজ লাগানো আছে। এবং সেটা কিনে লাগানো হয়নি। বাসা বানানোর সময় এমনিই লাগানো ছিল। এতক্ষণ ধরে যদি খাবার পচে যায়! সেজন্য সবার বাসায় বাসায় একটা করে পুটলী দিয়ে আসা হলো এবং বলা হলো, ফ্রিজে এটা রেখে একটু হেল্প করতে। ভোরবেলায় সবাই সবার বাসায় গিয়ে পুটলীগুলো কালেক্ট করে আনল। আর বের করে রাখা হলো। সব রেডি। এখন লোক পাঠানো হলো সব বাসায় খবর দিতে এবং এমন লোকজনদের নিয়ে আসতে, যাতে কেউ ভিড় না বাড়ায়। কয়েকজন কয়েকজন করে খাওয়ানো হচ্ছে। বেশি ভিড় লেগে গেলে ঝামেলা হবে। বসার জায়গা পাবে না। এমন করে দুপুর তিনটা বেজে গেল। সবার খাওয়া-দাওয়াই শেষ হয়ে এসেছে। আর সবার শেষে ধনী লোক খেতে বসল। সে ধনী হয়েও আগে গরীবদেরকে খাইয়েছে। এরপর দেখা গেল, ইয়া বড় বড় দুই হাড়ি খাবার আর ইয়া মোটা একটা হাড়িতে অনেক মাংস বেঁচে গিয়েছে। সেগুলো কী করা যায়? ঐ বিল্ডিংয়ের আশেপাশেই অনেক বেশি গরীবদের বাড়ি ছিল। তারা একদম গরীব। কিন্তু এই কথাটা ধনী লোকের মাথায়ই আসছে না। সে শুধু ভাবছে, খাবারগুলো কী করা যায়? কিছু লোক বলল, খাবারগুলো ফেলে দিতে। কিছু লোক বলল এই খাবারগুলো ফ্রিজে রেখে দিতে। আর কিছু লোক বলল বিক্রি করে দিতে। কিন্তু ধনী লোকের একটা কথাও পছন্দ হলো না। অবশেষে একটা ছো্ট্ট শিশু এসে বলল, "ঐ যে রাস্তার ঐ পাড়ে একটা বস্তিও আছে। সেই বস্তিতে অনেক মানুষ আছে। সেই মানুষেরা খুব গরীব। তারা মাঝেমাঝে খাবার পায় না। তাদের মধ্যে এগুলে দিয়ে দিলে কেমন হয়?" অন্য কারো প্রস্তাব পছন্দ না হলেও এই শিশুটির প্রস্তাব ধনী লোকটির পছন্দ হলো। তাই সেই ধনী লোক বাচ্চাটিকে আরো অতিরিক্ত খাবার দিল। বাচ্চাটিও খুশীমনে তার বাড়ি ফিরে গেল। এরপর সেই খাবারগুলো বস্তির লোকদের মধ্যে বিতরণ করে দেয়া হলো। বস্তির লোকেরা খুব খুশী। তারা কোন কোন দিন পোড়া রুটি পেত, আর কোন কোন দিন কিছুই পেত না। আর এখন তারা কত ভালো খাবার পাচ্ছে! সবাই খুব খুশী। আর সবাইকে খাওয়াতে পেরে ধনী লোকটিও খুব খুশী।

Friday, March 2, 2018

দুষ্টু ছেলে

নাম তার শেখর, সে ভারী দুষ্টু ছেলে
খারাপ ছেলেদের সাথে কতই না সে মেলে।
দুষ্টুমি করতে যায় নিয়ে দলবল,
শেখর সবাইকে বলে হাড়ি ভাঙবি চল।

সবাই মিলে ভেঙে ফেলে দাদীর দুটি হাড়ি
সবাই বলে দৌড়াই যত জোরে পারি।
পাড়ার সবাই অতিষ্ঠ এদের অত্যাচারে,
দুষ্টামি করে সদা যত তারা পারে।

জবল্যান্ড

এক শহরে ছিল এক বিল্ডিং। সেই বিল্ডিং অনেক উঁচু ছিল, অনেক তলা। সেই বিল্ডিংটির নাম ছিল জবল্যান্ড। কারণ, সেই বিল্ডিংটি একটি প্রতিষ্ঠান ছিল, আর সেই প্রতিষ্ঠানে সব রকম চাকুরি করারই লোক ছিল। সবচেয়ে উপরের দু' তলায় শপিং মল ছিল। তার নিচের দুটি তলায় কলেজ ছিল। তার নিচের তিনটি তলায় স্কুল ছিল। তার নিচে বিজ্ঞানীদের রুম ছিল। তার নিচে কম্পিউটার ও ফটোকপির দোকান ছিল। তার নিচে ওষুধের ফার্মেসি ছিল। তার নিচে ছাপাখানা ছিল। তার নিচে ছিল সবথেকে নিচের তলা। আর সেখানে গরীবদের জন্য এক ব্যবস্থা ছিল। একটি রুম ছিল, সেই রুমে প্রথমে দুই জন লোক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। সেই দুইজন ছিল দারোয়ান। সেই রুমের দুই পাশে সেই দুই জন লোক ছিল। এবং রুমটির ভিতরে অনেক বড় বড় ড্রাম রাখা ছিল। আর সেই ড্রাম ছিল ময়লা ফেলার ড্রাম। অনেক মাস্ক ছিল এবং অনেক মাছি মারার র‍্যাকেট ছিল। দুটি লোক বাদে আরো কয়েকজন লোক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল ঐ ড্রামের কাছে যে সব মাছি আসবে সেগুলো মারতে। দারোয়ানদের ডিউটি ছিল যারা ময়লা ফেলতে আসবে তাদেরকে একটা করে মাস্ক পরিয়ে দেওয়া আর ভিতরে ঢুকতে দেওয়া। ভিতরের লোকদের যারা ময়লা ফেলতে আসে তাদের মাছিওয়ালা পরিবেশ দেখানো নিষেধ ছিল। এই চাকুরিটি অনেকেই নিতে চেয়েছিল। কিন্তু এই চাকুরিরও পরীক্ষা আছে। এবং পরীক্ষাটিও আবার এক সপ্তাহ ধরে হয়। একেকদিন কয়েকজন কয়েকজন করে পরীক্ষা হয়। এক ঘন্টা ধরে একজনের পরীক্ষা হয়। একটা মাছিভর্তি রুমে নিয়ে যাওয়া হয় এবং একটা র‍্যাকেট হাতে দেওয়া হয়। আর বলা হয়, ১০০টার মধ্যে ৯৫টা মারতে হবে। ৮০ এর উপরে উঠলেই পাশ, কিন্তু ৯৫ এর উপরে হলে নিশ্চিত নিয়োগ। আর ৮০ এর নিচে যারা মাছি মারতে পারবে, তাদের কোন নিয়োগই দেওয়া হবে না। আর আরেকটি কাজ। সেটি হলো, কয়টি মাছি মারল তা গুনে রাখতে হবে। আর নাহলে বিচারকদের সমস্যা হবে। আর যদি সে ভুল গণনা করে, সেজন্য তার সাথে একজন করে লোকও দেওয়া হয়। সে মাছি মারার কাজে কোন হেল্প করতে পারবে না, কিন্তু গণনার কাজে হেল্প করতে পারবে। আর সেই লোক কাছের এবং চেনাজানা হয়। ৯৫ এর উপরে খুব কম মানুষই মারতে পারে মাছি। এবং যারা এই কাজে অভিজ্ঞ, তাদেরকেই নিয়োগ দেওয়া হয়। জবল্যান্ড নামটা আগে থেকে দেওয়া ছিল না, কিন্তু আশেপাশের মানুষরা বানিয়ে দিয়েছে। আর তাদের বেতন কিভাবে দেওয়া হয় শোন। যারা ময়লা ফেলতে আসবে, তারা ময়লা ফেলে এসে বলবে যে, ১০ এর মধ্যে তাদের কতটা পছন্দ হলো সেই অনুযায়ী তারা নম্বর দেবে, আর নম্বর অনুযায়ী কর্মচারীরা বেতন পাবে। এই নিয়ম-কানুন কলেজের ছাত্রছাত্রীরা এবং স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা এমনকি বাচ্চা যারা মা-বাবার সাথে উপরের তলায় কিছু না কিছু করতে যায় যেমন- ডাক্তারের কাছে বা বিজ্ঞানীদের জিনিস দেখতে, এরকম কাজ যে বাচ্চারা করতে যায় মা-বাবার সাথে তারাও ময়লা ফেলতে খুব আগ্রহী হয়। তাই তারা প্রত্যেকেই চকলেট নয়তো বিস্কুট নয়তো কেক সঙ্গে করে নিয়ে আসে আর খোসাটা ফেলে ঐ রুমে। সবাই খুব মজা পায়। আর ঐ ময়লা ফেলার কর্মচারীদের মনে হয় ময়লাওয়ালী হয়েও কত বেতন! এর থেকে তো বিজ্ঞানী আর বড় বড় প্রভাষক ও শিক্ষকদের থেকেও বেশি বেতন পায় তারা।