Friday, March 2, 2018

জবল্যান্ড

এক শহরে ছিল এক বিল্ডিং। সেই বিল্ডিং অনেক উঁচু ছিল, অনেক তলা। সেই বিল্ডিংটির নাম ছিল জবল্যান্ড। কারণ, সেই বিল্ডিংটি একটি প্রতিষ্ঠান ছিল, আর সেই প্রতিষ্ঠানে সব রকম চাকুরি করারই লোক ছিল। সবচেয়ে উপরের দু' তলায় শপিং মল ছিল। তার নিচের দুটি তলায় কলেজ ছিল। তার নিচের তিনটি তলায় স্কুল ছিল। তার নিচে বিজ্ঞানীদের রুম ছিল। তার নিচে কম্পিউটার ও ফটোকপির দোকান ছিল। তার নিচে ওষুধের ফার্মেসি ছিল। তার নিচে ছাপাখানা ছিল। তার নিচে ছিল সবথেকে নিচের তলা। আর সেখানে গরীবদের জন্য এক ব্যবস্থা ছিল। একটি রুম ছিল, সেই রুমে প্রথমে দুই জন লোক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। সেই দুইজন ছিল দারোয়ান। সেই রুমের দুই পাশে সেই দুই জন লোক ছিল। এবং রুমটির ভিতরে অনেক বড় বড় ড্রাম রাখা ছিল। আর সেই ড্রাম ছিল ময়লা ফেলার ড্রাম। অনেক মাস্ক ছিল এবং অনেক মাছি মারার র‍্যাকেট ছিল। দুটি লোক বাদে আরো কয়েকজন লোক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল ঐ ড্রামের কাছে যে সব মাছি আসবে সেগুলো মারতে। দারোয়ানদের ডিউটি ছিল যারা ময়লা ফেলতে আসবে তাদেরকে একটা করে মাস্ক পরিয়ে দেওয়া আর ভিতরে ঢুকতে দেওয়া। ভিতরের লোকদের যারা ময়লা ফেলতে আসে তাদের মাছিওয়ালা পরিবেশ দেখানো নিষেধ ছিল। এই চাকুরিটি অনেকেই নিতে চেয়েছিল। কিন্তু এই চাকুরিরও পরীক্ষা আছে। এবং পরীক্ষাটিও আবার এক সপ্তাহ ধরে হয়। একেকদিন কয়েকজন কয়েকজন করে পরীক্ষা হয়। এক ঘন্টা ধরে একজনের পরীক্ষা হয়। একটা মাছিভর্তি রুমে নিয়ে যাওয়া হয় এবং একটা র‍্যাকেট হাতে দেওয়া হয়। আর বলা হয়, ১০০টার মধ্যে ৯৫টা মারতে হবে। ৮০ এর উপরে উঠলেই পাশ, কিন্তু ৯৫ এর উপরে হলে নিশ্চিত নিয়োগ। আর ৮০ এর নিচে যারা মাছি মারতে পারবে, তাদের কোন নিয়োগই দেওয়া হবে না। আর আরেকটি কাজ। সেটি হলো, কয়টি মাছি মারল তা গুনে রাখতে হবে। আর নাহলে বিচারকদের সমস্যা হবে। আর যদি সে ভুল গণনা করে, সেজন্য তার সাথে একজন করে লোকও দেওয়া হয়। সে মাছি মারার কাজে কোন হেল্প করতে পারবে না, কিন্তু গণনার কাজে হেল্প করতে পারবে। আর সেই লোক কাছের এবং চেনাজানা হয়। ৯৫ এর উপরে খুব কম মানুষই মারতে পারে মাছি। এবং যারা এই কাজে অভিজ্ঞ, তাদেরকেই নিয়োগ দেওয়া হয়। জবল্যান্ড নামটা আগে থেকে দেওয়া ছিল না, কিন্তু আশেপাশের মানুষরা বানিয়ে দিয়েছে। আর তাদের বেতন কিভাবে দেওয়া হয় শোন। যারা ময়লা ফেলতে আসবে, তারা ময়লা ফেলে এসে বলবে যে, ১০ এর মধ্যে তাদের কতটা পছন্দ হলো সেই অনুযায়ী তারা নম্বর দেবে, আর নম্বর অনুযায়ী কর্মচারীরা বেতন পাবে। এই নিয়ম-কানুন কলেজের ছাত্রছাত্রীরা এবং স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা এমনকি বাচ্চা যারা মা-বাবার সাথে উপরের তলায় কিছু না কিছু করতে যায় যেমন- ডাক্তারের কাছে বা বিজ্ঞানীদের জিনিস দেখতে, এরকম কাজ যে বাচ্চারা করতে যায় মা-বাবার সাথে তারাও ময়লা ফেলতে খুব আগ্রহী হয়। তাই তারা প্রত্যেকেই চকলেট নয়তো বিস্কুট নয়তো কেক সঙ্গে করে নিয়ে আসে আর খোসাটা ফেলে ঐ রুমে। সবাই খুব মজা পায়। আর ঐ ময়লা ফেলার কর্মচারীদের মনে হয় ময়লাওয়ালী হয়েও কত বেতন! এর থেকে তো বিজ্ঞানী আর বড় বড় প্রভাষক ও শিক্ষকদের থেকেও বেশি বেতন পায় তারা।

No comments:

Post a Comment