Saturday, March 10, 2018

ধনী রাজা

এক ছিল এক রাজা। সেই রাজা অনেক অনেক ধনী ছিল। তার রাণীও অনেক অনেক ধনী ছিল। রাজা ধনী হলে রাণী তো ধনী হবেই। কিন্তু এখানে বোঝাচ্ছে, রাজার শ্বশুরবাড়িও খুব ধনী ছিল। এতই ধনী ছিল রাজার রাজ্য যে, রাজা ও রানী প্রাসাদের মধ্যেও ঘুরত পালকিতে চড়ে। আর তাদের খাইয়ে দেয়ার জন্যও দাস-দাসী ছিল।  কিন্তু যাতে যুদ্ধে হেরে না যায়, সেজন্য এক্সারসাইজ (শরীর চর্চা) করানোরও লোক ছিল। রাজার ছিল এক ছেলে এবং এক মেয়ে। ছেলেটা ছিল ভীতু, কিন্তু মেয়েটা ছিল সাহসী। উল্টো, তাই না? কিন্তু এটাই সত্যি। রাজা ঠিক করল, জঙ্গলে শিকারে যাবে। ছেলেটাকে সাধল, কিন্তু ছেলেটা যেতে চাইছে না। সে বলল, আমার ভয় করে। আমি যেতে পারব না তোমার সাথে। আমি মায়ের সাথে প্রাসাদেই থাকব। কিন্তু মেয়েটা নেচে উঠে বলল, "বাবা! আমি যাব। আমি যাবই যাব, তুমি যাই বল। ভাইয়া না গেলেও হবে, কিন্তু আমি যাব। আমি একা যেতেও রাজি আছি, কিন্তু আমি যাবই যাব।" রাজা রাগ হয়ে ধাবাড় দিয়ে বলল, "তুই চুপ কর তো! তুই মেয়ে হয়ে যাবি শিকারে? আজগুবি আবদার করবি না।" মেয়েটা বলল, "বাবা! তুমি আমাকে তুই বলছ কেন? আমি তো রাজকন্যা। আমি শিকারে যাবই যাব। আমাকে শিকারে নিয়ে যাও, আর নাহলে আমি কিন্তু মাঝরাতে একা একা জঙ্গলে চলে যাব। আমি জীবনেও শিকার করিনি। ভাল্লাগে না।" রাজা বলল, "ঠিক আছে, তুমি যাবে। কিন্তু ওখানে তো শাড়ি পরা যাবে না, ওখানে শিকার করার সময় খুব সাবধানে থাকতে হবে এবং দরকার পড়লেই দৌড়ে এক জায়গায় লুকিয়ে পড়তে হবে। শাড়ি পরে কি দৌড়াতে পারবি তুই? যত্তসব আজগুবি আবদার!" মেয়েটা বলল, "শাড়ি পরার দরকার আছে কোন? রাজকীয় শাড়ি না পরলেও চলবে। কিন্তু আমি শিকারে যাব, আর তুমি কিভাবে পশুপাখি শিকার কর, আমি তা দেখব।" রাজা বলল, "তাহলে তোমার দাসীকে বল শিকারে যাওয়ার জন্য তোমাকে একটা পোশাক এনে দিতে।" মেয়েটা বলল, "ঠিক আছে, বলছি। এই দাসী! যাও, আমার জন্য শিকারে যাওয়ার জন্য একটা পোশাক নিয়ে এসো।" দাসী তো শুনে অবাক। সে বলল, "আগে একটা কথা বলতে পারি? রাগ করবেন না তো?" রাজকন্যা বলল, "না, না। রাগ কেন করব? বল।" দাসী বলল, "ইয়ে মানে আপনি মেয়ে হয়ে শিকারে যাবেন?" রাজকন্যা রেগে গিয়ে বলল, "তাতে তোমার সমস্যা কি? যাও গিয়ে আমার পোশাকটা নিয়ে এসো।" সকাল বেলা রাজার মেয়ে রাজার সাথে শিকারে বের হল।রানী তো চিন্তা করছে। মেয়েটা একা সব পুরুষদের সাথে শিকারে গেল। কি জানি কি হয়, বাবা!" কয়েকদিন হয়ে গেল। রাজা ফিরে আসল। এবং তার সৈন্যদের কাঁধে বড় বড় বস্তা। সেই বস্তার ভিতর হরিণ। হরিণগুলোকে মেরে রাজা নিয়ে এসেছে। রাণী মেয়েকে জিজ্ঞেস করল, "কি, কেমন লাগল শিকার?" মেয়েটা বলল, "বেশি একটা ভালো লাগেনি। কারণ, আমি তো কিছু করলামই না। সৈন্যরা দূর থেকে তীর ছুঁড়ল, আর হরিণগুলো মারা পড়ল। আর বেশি ভালোও লাগেনি। জঙ্গলের মধ্যে হাঁটতে হাঁটতে পা-ই ব্যথা হয়ে যায়।" রাণী বলল, "জঙ্গলটা তো অত বেশি বড় না। পুরো জঙ্গল কি ঘুরেছিস নাকি?" রাজকন্যা বলল, "তা কেন হবে? অর্ধেক পর্যন্ত গিয়েই তো সব হরিণদের মারলাম।" রানী বলল, "আসলে প্রাসাদে তো আমার সঙ্গে পালকিতে চড়েই ঘুরিস! আর জঙ্গলে তো পালকি নেয়াই যাবে না। বাঘের গর্জন শুনে বেয়াড়ারাই তো দৌড়ে পালিয়ে যাবে।" রাজকন্যা বলল, "যা হওয়ার তো ভালোই হয়েছে। হরিণগুলো কি করব? খাব নাকি?" রানী বলল, "খাবি না তো কী? দাসীদেরকে এখনই ডাকি। কে কোথায় আছিস? এসে হরিণগুলোকে রান্নাঘরে নিয়ে যা। এমনভাবে নিবি, যাতে কোন রক্ত রাজপ্রাসাদের অন্য জায়গাতে না পড়ে।" দাসীরা বলল, "ঠিক আছে। তাই হলো।" কিন্তু রাজা তো অনেকগুলো হরিণই শিকার করেছে। শুধু রাজপ্রাসাদের মানুষরা খেয়ে তো হবে না। রাজা ঠিক করল, তার রাজ্যের সবাইকে একটু একটু করে হরিণের মাংস খাওয়াবে। সেরকম করেই একটা মেলা হলো। আর সেই মেলায় সবাইকে খাওয়ানো হলো। যাই হোক, সবাই খুব মজা করল। গল্প শেষ।

No comments:

Post a Comment