Friday, March 9, 2018

ধনী ও গরীবের ভোজ

এক ছিল এক বিল্ডিং। সে বিল্ডিংয়ে সবথেকে ধনী লোক ছিল ৬ তলার দুটি বাসা মিলিয়ে একটি বাসার মালিক। অনেক লোক আছে ধনী, কিন্তু খারাপ। কিন্তু এই লোক ভালো। সে ভাবল, আমার তো অনেক কিছু আছে। অনেক টাকা-পয়সা। তো আমি তো আবার চাকরি করে করে এই বছরে টাকা অনেক জমিয়েছি। কিন্তু এমনি এমনি তো আর জমাইনি। জমিয়েছি ভালো কিছু করার জন্য। এক কাজ করি। এই বিল্ডিংয়ের সব বাসাই তো অনেক অনেক ছোট। আমি তো দুটো বাসা একসাথে কিনে মাঝখানের দেয়াল ভেঙ্গে দিয়েছি। যারা এরকম ছোট ঘরে থাকে তাদের নিশ্চয়ই অনেক কষ্ট। তারা নিশ্চয়ই সুখী নয়। একটা ভালো দিন দেখে তাদের জন্য একটা ভোজের আয়োজন করলে কেমন হয়? তার অনেক লোক ছিল। রাঁধুনি, দাস-দাসী সব ছিল। আর তার আলাদা একটি হোটেলও ছিল। কিন্তু সেই হোটেল কেবলমাত্র ধনী লোকদেরই জন্য। তাই সেই হোটেলে সেই লোকদের খাওয়ানো যাবে না। সেই হোটেলেই তার দাস-দাসী এবং রাঁধুনিরা ছিল। এই খবর সে তার বাড়ির সবাইকে এবং তার হোটেলের সব কর্মচারীদের জানিয়ে দিল। সবাই একমতই হলো। ধনী লোকটি একটি ভালো দিন ঠিক করে ফেলল। তার সাথে একটি বড় মাঠও ঠিক করে ফেলল। আর বলল, কয়েকজন লোক লাগবে জায়গাটিকে সাজিয়ে তুলতে। বড় বড় পাটি কেনা হলো, বিছিয়ে দেয়া হলো। সে ভাবতে লাগলো, বিল্ডিংটিতে ৬০ থেকে ৭০ এর মধ্যে বাসা আছে। অনেক খাবার দরকার। সেই অনুযায়ী সে অনেক বড় বড় হাড়ি কিনল। আর তার সংখ্যাও অনেক। অনেক চালের বস্তা কেনা হলো। আর পাশে তো কলাবাগান আছেই। কলাপাতায় দিলেই হয়। ঠিক করল খিচুরি রান্না হবে। কিন্তু শুধু খিচুরি কিভাবে খাওয়াবে? এ কেমন কথা? তাই ১০০টি মুরগী আনা হলো। যদিও বাসা ৭০টি, তাও যদি টান পড়ে। কয়েকদিন পরেই সেই দিন আসল। সবাই রান্নাবাড়ি শুরু করে দিল। তার আগের দিনই সব রান্না শেষ হয়ে গেল। সেই বিল্ডিংয়ে বাসা যতই ছোট হোক, প্রত্যেক বাসার সঙ্গে একটা বড় ফ্রিজ লাগানো আছে। এবং সেটা কিনে লাগানো হয়নি। বাসা বানানোর সময় এমনিই লাগানো ছিল। এতক্ষণ ধরে যদি খাবার পচে যায়! সেজন্য সবার বাসায় বাসায় একটা করে পুটলী দিয়ে আসা হলো এবং বলা হলো, ফ্রিজে এটা রেখে একটু হেল্প করতে। ভোরবেলায় সবাই সবার বাসায় গিয়ে পুটলীগুলো কালেক্ট করে আনল। আর বের করে রাখা হলো। সব রেডি। এখন লোক পাঠানো হলো সব বাসায় খবর দিতে এবং এমন লোকজনদের নিয়ে আসতে, যাতে কেউ ভিড় না বাড়ায়। কয়েকজন কয়েকজন করে খাওয়ানো হচ্ছে। বেশি ভিড় লেগে গেলে ঝামেলা হবে। বসার জায়গা পাবে না। এমন করে দুপুর তিনটা বেজে গেল। সবার খাওয়া-দাওয়াই শেষ হয়ে এসেছে। আর সবার শেষে ধনী লোক খেতে বসল। সে ধনী হয়েও আগে গরীবদেরকে খাইয়েছে। এরপর দেখা গেল, ইয়া বড় বড় দুই হাড়ি খাবার আর ইয়া মোটা একটা হাড়িতে অনেক মাংস বেঁচে গিয়েছে। সেগুলো কী করা যায়? ঐ বিল্ডিংয়ের আশেপাশেই অনেক বেশি গরীবদের বাড়ি ছিল। তারা একদম গরীব। কিন্তু এই কথাটা ধনী লোকের মাথায়ই আসছে না। সে শুধু ভাবছে, খাবারগুলো কী করা যায়? কিছু লোক বলল, খাবারগুলো ফেলে দিতে। কিছু লোক বলল এই খাবারগুলো ফ্রিজে রেখে দিতে। আর কিছু লোক বলল বিক্রি করে দিতে। কিন্তু ধনী লোকের একটা কথাও পছন্দ হলো না। অবশেষে একটা ছো্ট্ট শিশু এসে বলল, "ঐ যে রাস্তার ঐ পাড়ে একটা বস্তিও আছে। সেই বস্তিতে অনেক মানুষ আছে। সেই মানুষেরা খুব গরীব। তারা মাঝেমাঝে খাবার পায় না। তাদের মধ্যে এগুলে দিয়ে দিলে কেমন হয়?" অন্য কারো প্রস্তাব পছন্দ না হলেও এই শিশুটির প্রস্তাব ধনী লোকটির পছন্দ হলো। তাই সেই ধনী লোক বাচ্চাটিকে আরো অতিরিক্ত খাবার দিল। বাচ্চাটিও খুশীমনে তার বাড়ি ফিরে গেল। এরপর সেই খাবারগুলো বস্তির লোকদের মধ্যে বিতরণ করে দেয়া হলো। বস্তির লোকেরা খুব খুশী। তারা কোন কোন দিন পোড়া রুটি পেত, আর কোন কোন দিন কিছুই পেত না। আর এখন তারা কত ভালো খাবার পাচ্ছে! সবাই খুব খুশী। আর সবাইকে খাওয়াতে পেরে ধনী লোকটিও খুব খুশী।

No comments:

Post a Comment