Tuesday, March 20, 2018

দাতা জাতি

এই গল্পটি কাল্পনিক। এক দীপে বাস করত এক জাতি। সেই দীপের মানুষেরা সবাইকে দান করত। প্রয়োজনে নিজের কাজের জিনিসও দিয়ে দিত অন্যের সাহায্য করতে। তাই তাদের নাম ছিল দাতা জাতি। সেই দীপে দাতা জাতি থাকে বলে সেই দীপের নাম দাতা দ্বীপ। অনেক মানুষই দাতা দ্বীপে আগ্রহ করে দেখতে যায়। তারা যেইভাবে যায়, সেইভাবেই সুন্দরমত ফিরে আসতে পারে। দাতা জাতি সম্পর্কে কয়েকটা ইনফরমেশন জানতে চাও? দাতা জাতির প্রধান খাবার বনরুটি ও থানকুনি পাতার রস। তাদের দ্বীপে সব থেকে আকর্ষণীয় হলো, সেই দ্বীপে বনরুটিরও গাছ হয়। আর থানকুনি পাতার গাছ তো আছেই। তারা কিভাবে পানি খায়, জান? তাদের কাছে একজনের বালি দিয়ে পানি পরিস্কার করার পদ্ধতি জানা ছিল। আর তাদের প্রত্যেকের ঘরে ঘরেই সেই যন্ত্র ছিল। সেই দ্বীপটি সমুদ্রের ঠিক মাঝখানে অবস্থিত ছিল। দ্বীপটি বাংলাদেশের ঢাকা শহরের সমান। দাতা জাতিরা গাছের উপর ইয়া বড় বাসা বানিয়ে থাকত। তাদের কাছে সুই-সুতাও ছিল। তারা সেই দ্বীপের পাতা দিয়েই সুই-সুতা দিয়ে সেলাই করে পাতার পোশাক বানাতো।মেয়েরা পাতার শাড়ি এবং ছেলেরা পাতার লুঙ্গি পরত। একদিন দাতা জাতিরই একটা বাচ্চা কাঁদছিল। দাতা জাতিরই আরেকজন এসে তাকে জিজ্ঞেস করল, "কি হে! তুমি কাঁদছ কেন?" বাচ্চাটি বলল, "মা আমাকে থানকুনি পাতার রস এনে দিয়েছিল। আমার মা আবার আমার উপর একটু রাগী। থানকুনি পাতার রস খাওয়ার আগেই সেই পাত্রটি আমার হাতে লেগে মাটিতে পরে গেল। আর সব থানকুনি পাতার রস মাটিতে মিশে গেল। এখন মা এসে দেখলে কি বলবে? সেই চিন্তাতেই আমি কাঁদছি। আর মা যে থানকুনি পাতার রস এনেছিল, সেটা ছাড়া সকালের কোন নাস্তাই বানানো হয়নি। খাব কি?" লোকটি বলল, "আমি খাওয়ার পর থানকুনি পাতা বেঁচে গেছে। আর আমি এমনিতেও বনরুটি খেয়েছি। আমার এই সবটুকুই তুমি নাও। আর যেগুলো মাটিতে পরেছে আমি সেগুলো পরিস্কার করে দিচ্ছি।" বাচ্চাটি খুব খুশী হলো। আর সেই লোকের ভাগের খাবারটি খেয়ে ফেলল। মা এসে বলল, "সবটুকু খেয়েছিস? ঠিক আছে।" একবার বাংলাদেশের ঢাকা শহরে একটি বাচ্চা তার বাবাকে বলল, "বাবা! আমি গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে দাতা দ্বীপে যাব। সেখানে নাকি দাতা জাতিরা থাকে। তাদের প্রধান খাবার নাকি বনরুটি আর থানকুনি পাতার রস। বনরুটিরও গাছ আছে সেই দ্বীপে। সবাই সবাইকে সাহায্য করে। তারা পাতা ও সুই-সুতা দিয়ে পোশাক বানায়। কততো মজার মজার বিষয়! আজকের পেপারে দিয়েছে। আমি গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে সেখানেই যাব। তুমি না নিয়ে গেলে কিন্তু আমি স্কুলেই যাব না। কোন দিন স্কুলে যাব না। বই-খাতা সব ছিঁড়ে জানালা দিয়ে ফেলে দেব। তুমি খুব দুষ্টু। নিয়ে যাও আমাকে। তুমি না মানতে চাইলে আমি মাকে বলব।" বাবা বলল, "কী! আমি রাজি হলাম না, আর তোমার মা রাজি হবে! কী বল? দাতা দ্বীপে যেতে অনেক যুগ লাগে। তাও আবার প্লেনে গেলেই দুই যুগ লাগে।" আর মনে মনে বলল, "দুই যুগ, না দুই দিন, ছাই!" বাচ্চাটি বলল, "কী! পেপারটা আগে পুরো পরে দেখ। প্লেনে যেতে এক দিন লাগে। তুমি আমাকে বুঝ দিচ্ছ, না! আমি তোমার অফিসের ব্যাগটাই ফেলে দেব। নিয়ে যাও আমাকে। গ্রীষ্মকালীন ছুটি কিন্তু কয়েকদিন পর থেকেই শুরু হবে।" বাবা বলল, "ইস! এই পেপারটা যে কেন ওর হাতে দিলাম! পেপারে কেন ওরা গল্প দেয়? গল্প পড়তে পড়তেই তো এটা পেয়ে গেছে পরের পেজে।" বাবা বলল, "সেই দ্বীপে কিন্তু প্রচণ্ড গরম। ওখানে গেলে কিন্তু সবসময় বনরুটি আর থানকুনি পাতার রস খেতে হবে। ওখানে অন্য কিছু খেতে বসলে দাতা জাতিরাও হয়তো খেতে চাইবে।" বাবুটি বলল, "না! ওরা অন্যজনকে দান করে, অন্যজনের কাছ থেকে নেয় না। আর ওখানে যাওয়ার জন্য আমি সব খাব। আমি এই ব্যাগ গুছানো শুরু করলাম। তুমি মাকে রাজি কর, এটাই আমার শেষ কথা।" বাবা বলল, "দুষ্টু মেয়ে! তুমি তো আমাকে ফ্যাসাদে ফেলে দিলে। ঠিক আছে বাবা, যাব। তোমার মাকে আমি রাজি করাতে পারব না। তোমার শেষ কথা আছে, আর এটা আমার শেষ কথা।" বাচ্চাটি বলল, "তোমার কথাই মা বেশি শোনে। তুমি একদিন মাকে বলেছিলে, কালকে অফিসে যেতে পারব না, বাসায় কাজ আছে। আর মা রাজি হয়ে গেল। কিন্তু মাকে যখন বলি যে, আমি স্কুলে যাব না, বাসায় আমার গেম খেলা আমার একটু বাকি রয়ে গেছে, বাসায় বসে সেই কাজ করব, তখন তো মা ধমক দিয়ে 'না' বলে। তোমার কথাই মা শুনবে। আমি বললে ধাবাড় দিয়ে 'না' বলবে, আমি সিওর।" বাবা বলল, "আচ্ছা, ঠিক আছে। যদি সম্ভব হয়, তাহলে। দাতা দ্বীপে যাওয়াটা সম্ভব, কিন্তু তোমার মাকে রাজি করানোটা কিছুটা অসম্ভব।" বাবা তখন মায়ের কাছে গিয়ে বলল, "শোন, তোমার মেয়ে একটা বায়না করেছে। আগে বল, তুমি মানবে কি মানবে না। আগেই তোমাকে বলতে হবে, মানবে কি মানবে না, তারপর শুনতে হবে।" মা বলল, "তোমার মেয়ের আবদার! সে নিশ্চয়ই আজগুবি আবদার হবে। আমি না শুনে বাবা মানতে পারব না।" বাবা বলল, "(একটু বাড়িয়ে বলল) তোমার মেয়ে বলেছে, তুমি যদি আগে উত্তর না দাও, তাহলে সে ভাববে তুমি নাকি তাকে ভালোই বাস না।" তখন মা বলল, "ঠিক আছে, আমি মানব। এবার শুনি দেখি, কী আজগুবি আবদার?" বাবা বলল, "তোমার মেয়ে দাতা দ্বীপে যেতে চায়, দাতা জাতি দেখতে। পেপারটা দেখলেই বুঝতে পারবে।" মা পেপার পড়ে বলল, "কী! আমি তো ভেবেছি, ওর জন্য অনেকগুলো বই কিনব, আর সেই বইগুলো গ্রীষ্মের ছুটিতে পড়িয়ে লিখিয়ে শেষ করিয়ে দেব। ভেবেছিলাম, একটু পড়ালেখা করিয়ে এই ছুটিটা পার করব। কিন্তু মেয়ের কাণ্ডটা কী! শুধু আজগুবি আবদার! তাও আবার যে সে জায়গায় নয়। একেবারে সেই সমুদ্রের মাঝখানে দাতা দ্বীপ। পেপারে একটা জিনিস দেখলাম। সেটা তোমাকে আমার মেয়ে বলেনি। সেটা হলো, তারা শুধু প্রধান খাদ্যই কি খাবে নাকি? সাথে একটা ফলও খায়, নাস্তা হিসেবে। ফলটির নাম সপ্তবীজ। আর কারণটা খুবই হাস্যকর। সেই ফলের মধ্যে নাকি সাতটা বীচি থাকে। আর সেটা নাকি আপেলের মত কামড়ে কামড়ে খেতে হয়, আর বীচিও নাকি খাওয়া যায়- তরমুজের বীচির মত। না খেলেও হয়। ঠিক আছে, প্রথমে যখন বলেই ফেলেছি, তাহলে যাওয়া হোক। তবে আমি কিন্তু এক্সট্রা কোন কিছু সাথে নেব না। যেমন- খাবার। ওখানকার বনরুটি আর থানকুনি পাতার রস অথবা সেই ফল খেয়েই থাকতে হবে।" তারা জামাকাপড় গুছিয়ে নিল। শেষ পর্যন্ত গ্রীষ্মের ছুটির দ্বিতীয় দিনই তারা প্লেনে উঠল। পরের দিন তারা পৌঁছে গেল। তখন সেই দ্বীপের সবাই ঘুমাচ্ছিল। কোন মানুষের পায়ের আওয়াজ টের পেয়ে তারা সবাই জেগে উঠল। তাদের মধ্যে একজন সবাইকে ডেকে তুলল আর বলল, "আমাদের দ্বীপে মেহমান এসেছে। তাদেরকে খাবার দিতে হবে। চল, তাড়াতাড়ি থানকুনি পাতা, বনরুটি আর সপ্তবীজ ফল নিয়ে ওদের কাছে যাই। আর পুরস্কারস্বরূপ তাদের জন্য কয়েকটা জামাকাপড়ও দেই।" সবাই ঝটপট সবকিছু নিয়ে তাদের সামনে গিয়ে পৌঁছালো। দেখল, তারা সমুদ্রের পাড়ে অর্থাৎ দ্বীপের কিনারে দাঁড়িয়ে ছিল। বসতে চাইছিল, কিন্তু বসছিল না। দাতা জাতিরা বুঝতে পারল, পৃথিবীতে তো বেঞ্চ, চেয়ার এগুলোতেই বসেছে, তাই এখানে বসতে ঘৃণা লাগছে। তাই তারা পরস্পরকে বলল, "চল, আমরা পাতা দিয়ে তৈরি মাদুর কয়েকটা নিয়ে ওদের কাছে দেই।" সবাই মিলে মানুষগুলোকে স্বাগতম জানালো। মাদুরে বসতে দিল এবং খাবারগুলো সুন্দর করে সাজিয়ে দিল। মেহমানদের দেয়ার জন্য তাদের কাছে কাঠের কয়েকটা গ্লাস ছিল। সেই গ্লাস ধুয়ে বালু দিয়ে পানি পরিস্কার করে তাদেরকে খেতে দিল।" বাচ্চাটি বলল, "তোমরা কোন্‌ ভাষায় কথা বল?" এরপর ঘটল এক অদ্ভূত ব্যাপার। দেখা গেল, দাতা জাতিরা বাংলায়ই কথা বলে। খাওয়া-দাওয়ার পর মানুষগুলো উঠে বসল আর বাচ্চাটি জিজ্ঞেস করল, "তোমরা কি খেয়েছ?" দাতা জাতিরা বলল, "না, আমরা এখনো খাইনি। তোমাদের না খাইয়ে আমরা কিভাবে খাব?" বাচ্চাটি বলল, "কেন? একসাথেই তো খেতে পারতাম।" দাতা জাতিরা বলল, "একসাথে খেতে পারতাম, কিন্তু আমরা কি তা করতে পারি?" এরকম করে প্রত্যেকদিনই খাওয়া দাওয়া হলো, মজা হলো। দাতা জাতিদের ছবিও তুলল। এরপর সেই বাচ্চাটি সবাইকে বিদায় জানিয়ে চলে আসল, কিন্তু তার সেখানেই থাকতে ইচ্ছা করছিল। এসে দাতা জাতিদের ছবি প্রিন্ট করে স্কুলে নিয়ে গেল এবং টিচারদেরকে দেখালো। আর এটাই তার জীবনের বেস্ট এডভেঞ্চার।

No comments:

Post a Comment