Saturday, March 24, 2018

হালাল-হারামের বিড়ম্বনা

এক মুসলমান লোক অফিসের কাজে বিদেশ যাচ্ছিল। সে সবকিছুই গুছিয়ে নিয়েছিল। কিন্তু খাবারের কথা তার মাথায়ই ছিল না। সে ভেবেছিল, খাবার তো দোকান থেকে কিনেই ম্যানেজ করা যাবে। এই ভেবে সে খাবার ছাড়া অন্যান্য সব কিছু গুছিয়ে নিয়ে বিদেশে রওয়ানা হলো। বিদেশে পৌঁছে সে একটা হোটেলের রুম ভাড়া নিল। খাবার সময় কোথায়? এসেই বিদেশে তার অফিসের এক কলিগ তাকে ফোন দিয়ে বলল অমুক জায়গায় যেতে। আর সেখানে যাওয়ার সময় ল্যাপটপটা নিতে না ভুলতে। তখন দুপুরের খাবারের সময় ছিল। কিন্তু তার কলিগ বলেছিল আধ ঘন্টার মধ্যে পৌঁছে যেতে। যেতেই তো ২৫ মিনিট লাগে। তাই সে তাড়াতাড়ি না খেয়েই রওয়ানা দিল। তারপর পরের দিন সকালে সব রকম কাজ শেষ করে সে আবার হোটেলে ফিরে আসল। কিন্তু তাও পুরোপুরি সব কাজ শেষ হয়নি। পরের দিন আবার ঐ জায়গায় যেতে হবে। এরপর সে তাড়াতাড়ি গিয়ে হোটেলে খাবারের অর্ডার দিতে গেল। বলল, "কি কি খাবার পাওয়া যাবে এখানে?" হোটেলের লোকেরা খাবারের লিস্টটা দেখালো। লিস্টের মধ্যে যা লেখা ছিল, তা দেখে লোকটি তো চিন্তায় পড়ে গেল। কি খাবে সে? সবগুলোই তো হারাম। একটা ছিল বেকন (লবণে জারিত শুষ্ক শুয়োরের মাংস), আরেকটা ছিল চিকেন ফ্রাই। চিকেন ফ্রাই হালাল হলেও তারা তো জবাই দেয় না। তাই তাও খাওয়া গেল না। শেষ পর্যন্ত হালাল-হারামের মাঝামাঝি পাওয়া গেল কাঁকড়া। কিন্তু তাও লোকটি খেতে ঘৃণা লাগছিল। তাই সে সেটারও অর্ডার করতে চাইল না। সে বলল, "ভেজিট্যাবল নেই নাকি কোন?" তারপর ওখানকার বাবুর্চিরা বলল, "কেন পাওয়া যাবে না? তবে ভেজিট্যাবল আর পর্ক (শুয়োরের  মাংস) দিয়ে তৈরি একটি সালাদ আছে।" লোকটির তো মাথায় হাত। বলল, "শুধু ভেজিট্যাবল নেই? আচ্ছা, ভেজিটেবল না হয়, শুধু ফল তো থাকতে হবে!" বাবুর্চিরা বলল, "ফল? সে আমরা কিভাবে করব? ফল কি রান্না করার কিছু, যে হোটেলে থাকবে? সে তো কিনেই খেতে পারেন।" তখন লোকটি বলল, "ঠিক আছে, কোন প্রাণীর মাংস ছাড়া কি কিছু নেই নাকি?" বাবুর্চিরা বলে, "থাকবে না কেন, স্যার? একেবারে পিওর টাটকা শুয়োরের দুধ দিয়ে তৈরি মাখনের বাটারবন আছে।" লোকটি রাগ হয়ে বলল, "মুসলমানদের খাওয়ার মত কি কিছু আপনাদের হোটেলে পাওয়া যায় না নাকি? অন্তত একটা আইটেম তো থাকতে হবে!" শেষ পর্যন্ত তার ভাগ্যে বোধহয় খাবার জুটবে। কিন্তু তাও ফেলে ফেলে। সেখানে ডিম পোচ ছিল, কিন্তু ডিমের আশপাশ দিয়ে শুকরের গোশত কুচি কুচি করা ছিল। বাবুর্চিরা বলল, "এই আইটেমটা আপনি নিতে পারেন, শুধু বাইরের এই জিনিসগুলো সরিয়ে সরিয়ে শুধু ডিমটা খেতে পারেন। আমাদের বিদেশে আবার একটা নিয়ম আছে, সেটা হলো ঠিক করে দেয়া আইটেম ছাড়া এদিক ওদিক করা যাবে না। রেডিমেট আইটেমের মধ্য থেকেই খাবার বেছে নিতে হয়, অর্ডার মত কিছু তৈরি করা হয় না। তারপর যে খাবার সার্ভ করা হয়, সেগুলো থেকে কিছু খেতে ইচ্ছে না করলে সেগুলো নিজের হাতে সরিয়ে পরে যেটুকু খাওয়া যায় সেটুকু খেতে হবে। কিন্তু শুধু ডিম খাবেন বলে ডিমের দাম দেবেন না, পুরো আইটেমটার দামই কিন্তু দিতে হবে। তাহলে এটাই চুজ করলেন তো? তাছাড়া তো আপনার খাওয়ার মতন কিছু দেখছি না।" লোকটি নিরূপায় হয়ে তাই মেনে নিল। তারপর সার্ভ করার পর প্লেটটা হাতে নিল। সব বেকনগুলো ফেলে দিল। তবে ডিমের যেই জায়গাতে বেকনগুলো লেগে ছিল, সেই জায়গা থেকে কিছু ডিমও ছিঁড়ে ছিঁড়ে ফেলে দিল। সে যেটুকু খাবার পেয়েছে এর দাম তো দশ টাকাও নয়। সে মনে মনে বলতে লাগল, এর থেকে তো রাস্তার দুই টাকার ঝালমুড়িও ভালো। সে ওটুকুই খেল সেই দিনের মত। পরের দিন সে ভাবল, বিদেশে আসলাম, শুধু অফিসের কাজ করলেই কি হবে? অফিসের কাজ তো শেষ। এখন একটু ঘুরি। ঐদিকের হোটেলটাতে তো যাওয়াই হলো না। অথচ খুব কাছে। ঐ হোটেলে নাকি খাবার খেলে ক্যারাম খেলার চান্স পাওয়া যায়। আমি তো আবার ক্যারাম খেলতে খুব পছন্দ করি। যাই, ঐ হোটেলেই যাই। গিয়ে দেখল, সেই হোটেলে মুসলমানদের খাওয়ার মত অনেক কিছুই আছে। পাস্তা ছিল, নুডুলস ছিল, মাছ ভাজা ছিল, আর ভেজিটেবলও ছিল। লোকটি আফসোস করতে লাগল, প্রথমে যদি এই হোটেলটাতে এসেই উঠতাম, তাহলে তো কথাই ছিল না। এখন এই হোটেলে ভালোমত খেয়ে নেই। সে নুডুলস, পাস্তা এবং হালাল সব রকম খাবারই চুজ করে নিল। তারপর মজা করে খেল। আর আগের হোটেলের ড্রিংকস ছিল দুই রকম। একটা ছিল মরিচ ড্রিংকস, আরেকটা ছিল শুকরের দুধের ড্রিংকস। লোকটি আবার বেশি ঝাল খেতে পারত না। তাই মচিরের ড্রিংকসটাও চুজ করতে পারল না, আর অন্যটা তো খাওয়াই নিষেধ। আর এখানে অনেক রকম ড্রিংকস ও জুস আছে। আমের জুস, কমলার জুস, আপেলের  জুস, স্প্রাইট ইত্যাদি। সে যত পারল ততই অর্ডার করল আর ততই খেতে শুরু করল। খাওয়া শেষ করে ভাল করে হাত-মুখ ধুয়ে নিল আর মনে মনে ভাবতে লাগল, কেন যে ঐ হোটেলটাতে উঠতে গেলাম! শুধুই কলিগটার কথায় কান দিয়ে। কলিগ বলেছিল, এদেশের সব মানুষ নাকি ঐ হোটেল বেশি পছন্দ করে। তাই ঐ হোটেলে গিয়েছিলাম। আমি আরো কয়দিন থাকব, আর এই হোটেলেই থাকব। এরপর সে শুয়ে পড়ল। পরের দিন সকালবেলা উঠে সে ক্যারাম খেলল, আবার জিতেও নিল। এরপর সব শেষে সে আবার দেশে ফিরে আসল। তারপর তার বউ-বাচ্চা সবাইকে ঘটনা বলল। যত কষ্টেরই হোক, প্রথম দিকেরটা কিন্তু বেশি অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ ও অ্যাডভেঞ্চারপূর্ণ ছিল। আর সে লোকটি মনে মনে বলে নিল, এরপর অন্য কোথাও গেলে খাবার সঙ্গে করে নিয়ে যাবে, নয়তো খোঁজখবর নিয়ে নেবে ওখানে হালাল খাবার পাওয়া যায় কিনা।

No comments:

Post a Comment