Sunday, July 5, 2020

***ঘাসের গুণ***

এক ছিল একটি দেশ। সেই দেশে প্রচুর খাবার ছিল। কিন্তু একদিন সবাই ঘুম থেকে উঠে দেখল, সব খাবার উধাও। অনেক খোঁজাখুঁজি করে জানা গেল, পাশের দেশ তাদের সব খাবার নিয়ে গেছে। এখন তারা কি করবে? সবাই খাবার খুঁজতে লাগল। কোন উপায় না পেয়ে ভাবল, যত খাওয়ার যোগ্য প্রাণী আছে, সব প্রাণীকে মেরে মাংস খাওয়া যায় কিনা। কি আর করবে! না খেয়ে তো আর বেশিদিন থাকা যায় না। পাশের দেশকে অনেক বলা হয়েছে, কিন্তু তারা কিছু শোনেনি। শুধু সেই দেশ কেন, অন্য দেশের কাছে খাবার চাইলেও তারা দিচ্ছে না। ভাবছে, অন্যকে দিলে নিজেরটা কমে যাবে। তাই তারা উপায় না পেয়ে সকল পশুকে জবাই দিল। মাংস খেয়ে আর কতদিন। তারা নতুন কিছু খুঁজতে লাগল। একটি গরীব ঘরে ছিল একটি ছোট্ট মেয়ে। সে তার মাকে বলল, "মা! খাবার কেন দিচ্ছ না? খাবার না পেলে কি করে হবে? না খেয়ে কি থাকতে পারব?" তখন মা বলল, "খালি তোরই কি খেতে ইচ্ছে করে? আমাদের বুঝি করে না! শুধু বড়দের ভাবলে তো আর হবে না। তুই পারলে কিছু একটা বুদ্ধি বের কর ঘ্যান ঘ্যান না করে।" ছোট্ট মেয়েটি বলল, "আচ্ছা, মা! গাছে তো অনেক কিছুই থাকে। সেগুলো খেলে কেমন হয়?" তখন মা বলল, "আরে বোকা! গাছ থাকলে কি আর এত কষ্ট? গাছের খাবারও তো নিয়ে গেছে।" মেয়েটি বলল, "আচ্ছা, উদ্ভিদের মধ্যে আর কি কি আছে? এই মা! ঘাস খেলে কেমন হয়?" মা ধাবাড় (ধমক) দিয়ে বলল, "কী! শেষ পর্যন্ত ঘাসের বুদ্ধি এল তোর মাথায়? বুঝেছি, তোকে দিয়ে হবে না। আগে ঘাসটাকে খাবার যোগ্য করার উপায় বের কর, তারপর আমায় বলিস। যত্তসব!" মেয়েটি বলল, "খাবার আবার উপযোগী করে কিভাবে? রাঁধলেই হলো। আমি কালকে দেখেছি, তুমি কিভাবে রাঁধ। তুমি যাই বল, আজকে আমি ঘাস নিয়ে এসে রান্না করবই।" মেয়েটি দুপুর বেলা ঘাস আনতে গেল। বাবার ব্যবহৃত কাস্তেটা নিয়ে সে কচি দেখে কয়েক মুঠো ঘাস কেটে আনল। নিজেই সব ধুয়ে রাঁধতে বসল। রান্না শেষের দিকে সে চেখেই ওয়্যাক দিল। বলল, "এটা তো গিলতেই পারছি না। এত শক্ত কেন? পেয়েছি, আমার বইতে তো অনেক রকমের মসলার কথা লেখা আছে। একবার গিয়ে দেখি তো, নরম করার আর মজা করার মসলা আছে কিনা। সে বই ঘেঁটে ঘেঁটে একটা মসলা বের করল। তাতে নিজের মত করে আরো কিছু যোগ করল। সেই মসলা দিয়েই সে ঘাসটাকে রান্না করল। রান্না করার মাঝে তার মা এসে বলল, "এই, তোর কাজ নেই? একটা ভালো কিছু কর। সময় নষ্ট করিস না।" মেয়েটি মায়ের কথায় কান না দিয়ে রান্নায় মন দিল। সুস্বাদু ঘাস তৈরি হলো। সে একটা স্যুপের বাটি আর চামচের ভিতরে ঝোল সহ সুস্বাদু ঘাস রান্না পরিবেশন করল। মা-বাবাকে খেতে ডাকল। বলল, "মা, বাবা! আমি খেয়ে দেখেছি, আমার রান্না ঘাসটা তো দারুন খেতে হয়েছে! কতদিন আগে তুমি যে শাক রেঁধেছিলে, তার চেয়েও মজা।" মা রেগে গিয়ে বলল, "ফাজলামি করার আর জায়গা পাস না?" তখন মেয়েটি বলল, "তোমার খেতে না চাইলে খেও না। আমি আরো ভাগে বেশি পাব। আ-হা-! কী দারুন খেতে!" মেয়েটির বাবা মেয়েটির মায়ের এমন নাক ঘোঁচানি দেখে ভাবল, আমি যদি মেয়েকে এখন সাপোর্ট করি, ওর মা হয়তো আমাকে ঝাড়ু নিয়ে তেড়ে আসতে পারে। বলতে পারে যে, যেমন বাপ, তেমন বেটি। থাক, এখন না হয় ঘাস না-ই খাই। মেয়েটি বলল, "তোমরা কেউ খাবে না তো। আমি আমার বন্ধুদেরকে নিয়ে মজা করে ঘাসের পার্টি করব।" সে তার বন্ধুদেরকে ডেকে নিয়ে আসল। কিন্তু আগেই বলল না, এটা ঘাস। সে বলল, "দারুন একটা মজার খাবার রেঁধেছি! আয় আমার বাড়িতে, পার্টি করব। কি রেধেছি জিজ্ঞেস করতে না থেকে তাড়াতাড়ি আয়।" সবাই মিলে খেল। "মজা মজা" বলতে বলতে তারা আনন্দ করতে লাগল। একজন বলল, "কাল আমায় এরকম আরো রেঁধে দিস। বেশি করে, যাতে মা-বাবাকে নিয়ে খেতে পারি। আর অন্য বন্ধুদেরকেও দিয়ে দিস। সবাই মিলে মজা করে এটাই খাব।" তারপর সবাই বাড়ি ফিরল। পরের দিন ঘাস নেয়ার জন্য যখন বন্ধুরা এল, মেয়েটি জানতে পারল, তার এক বন্ধুর জণ্ডিস, আরেক বন্ধুর ক্যান্সার, আরেক বন্ধুর পেটে ব্যথা, আরেক বন্ধুর চুল পড়া, আরেক বন্ধুর দাঁতে ব্যথা ও আরেক বন্ধুর চর্মরোগ ভালো হয়ে গেল। সবাই খুব খুশি। বলল, "দে, দে! তোর কালকের ঐ খাবারটা যত আছে, ততই দে। অনেক উপকারী ও সুস্বাদু। তাছাড়া এই দুর্ভিক্ষে এটি আমাদের খাদ্যাভাব পূরণে কাজে লাগছে।" মেয়েটিও খুশি হয়ে দিয়ে দিল অনেক ঘাস রান্না। সবাই খুশি হয়ে চলে গেল। মা এসে বলল, "কি রে? ঘরে এত জন এসেছিল কেন? সব বন্ধুদের জুটিযেছিস? কি এমন আছে তোর কাছে?" মেয়েটি বলল, "খুব সুস্বাদু উপকারী খাবার। এই দুর্ভিক্ষের সময় খুব কাজে আসছে।" মা বলল, "তাই নাকি? আমাকে তো বলিসনি!" মেয়েটি বলল, "তোমাকে তো সবার আগে বললাম! ঐ যে, ঘাস রান্না। তুমি মনে করো না, খেতে খারাপ। আমি মশকরা করছি না। আমার বই থেকে একটা বিশেষ মসলা ব্যবহার করেছি। খেতে খুব নরম ও মজা। একটুখানি খেয়ে দেখো না!" মা বলল, "সেটা তো আগে বলবি। বিশেষ মসলা ব্যবহার করেছিস। তাহলে হয়তো স্বাদ পরিবর্তন হতে পারে। এখন কিন্তু দুষ্টামির সময় না। যদি খেয়ে দেখি তুই দুষ্টামি করছিস, তাহলে মার কিন্তু একটাও নিচে পড়বে না।" মেয়ে বলল, "খেয়ে দেখোই না। এই যে আমি একটু খেয়ে দেখাচ্ছি। দারুন খেতে!" মাও খেয়ে মজা বলল। মা রাগ হয়নি দেখে বাবাও খেল। বাবার গা চুলকানি ও মায়ের বাতের ব্যথাও সেরে গেল। তারপর দাদা-দাদী ও নানা-নানী সবাই খেল। তাদের বিভিন্ন রোগ ভালো হয়ে গেল। আস্তে আস্তে এই রান্না সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ল। দেশের অভাবের সাথে রোগ-ব্যাধিও দূর হলো। কারো খেতেও খারাপ লাগল না।
পাশের দেশ এটা দেখে আফসোস করতে লাগল। তারা বলল, "তোমরা কি করে রোগ সারাও? আমাদের সেই উপায়টা বলে দাও। আমরা তোমাদের খাবার যতটুকু নিয়েছি, সব ফিরিয়ে দিচ্ছি।" তখন ঐ দেশের রাজা বলল, "আমাদের দরকার নেই আর ওসব খাবার। ওসবের মধ্যে তো অস্বাস্থ্যকর খাবার আছে। শুধু শুধু অসুখ বাধিয়ে কি লাভ, যখন উপকারী ও স্বাস্থ্যকর খাবারটি খেতেও ভালো!" পাশের দেশটি আর কী করবে! মনে মনে ভাবতে লাগল, খাবার চুরি করে ভুলই করলাম। এখন থেকে ঐ দেশ সুখে-শান্তিতে বাস করতে লাগল।