Wednesday, August 24, 2016

রাগী মিয়া

হ্যালো বন্ধুরা! তোমরা নিশ্চয়ই গরীব লোকের কত গল্প শুনেছ। কিন্তু সত গরীব লোকদের। তোমরা কি কখনো রাগী গরীবদের গল্প শুনেছ? যদি শুনতে চাও, তাহলে এই গল্পটি পড়। রাগী গরীব হলে কেমন হয়। তবে এখন শোন গল্পটি।

একদিন এক জায়গায় ছিল এক গরীব লোক। কিন্তু খুব রাগী। অনেক অনেক গরীব ছিল। একটা টাকা-পয়সাও নেই। কিন্তু খুবই রাগী ছিল। অনেক অন্য রকম। জোর করে কেউ টাকা-পয়সা চাইলে কেউ কি দেয়? তাকে ভাল করা দরকার। তার নাম ছিল রাগী মিয়া। সবাই তাকে রাগী মিয়া বলে ডাকত। তাই সে আরো রেগে যেত। গিয়ে গিয়ে মানুষের ঘরের ভিতর ঢুকে জোর করে পয়সা চাইত। বলত, "এই! দেখেন না, আমি গরীব মানুষ? গরীব মানুষকে দেখলে কিছু দিবেন না? টাকা-পয়সা দেন এক্ষণি। যেটুক দিতে পারেন ততটুকু দেন। টাকা-পয়সা দেন আমারে! যে কোন কিছু দেন। কিন্তু কিছু না নিয়ে আমি এইখান থেকে যামু না। কইয়া দিলাম, তাড়াতাড়ি দেন? কতবার কওয়া লাগে? বোঝেন না, কত কষ্ট কইরা গ্রাম থিকা ঢাকা আসছি টাকা ধার নিয়া। গ্রামে গিয়া আবার টাকা ফেরত দেওয়া লাগবে আনে। নাইলে আমায় বড়লোকের মেয়ে দেইখ্যা বিয়া দেন। নাইলে কিন্তু চোরের মতন সব লইয়া যামু।" যার কাছে চাইছে, সে বলল, "আপনি কেমন গরীব লোক? এইভাবে কেন কথা বলছেন? ও রাগী মিয়া!" রাগী মিয়া শুনে আবার রেগে গেল। বলল, "রাগী মিয়া কইয়া ডাকলে হাজার হাজার পয়সা লইয়া যামু। এর চেয়ে রাগী মিয়া না ডাইক্যা চল্লিশ-পঞ্চাশ টাকা দেন। নাইলে তিনটা জামা আর তিনটা লুঙ্গি কিন্যা দেন।" তারপর লোকটি (গৃহস্থ) গেল রেগে। ভড়াস করে দরজা লাগিয়ে দিল। এই তো শুরু হলো টাকাটাকি। বলল, "গরীব মানুষরে তাড়াইয়া দেন কেন? তারপর কিছু না কইয়া ভড়াস কইরা দরজা বন্ধ কইরা দেন? এই সময় আর ভাল লাগতাছে না। তাড়াতাড়ি পয়সা দেন। কিছু না দিলে কিন্তু ডাকাতের দলে চইলা গিয়ে ডাকাত হইয়া যামু। তাড়াতাড়ি কিছু দেন না!" বাড়ির লোক রেগে একেবারে আগুন হয়ে গেল। জোরে চিতকার দিয়ে বলল, "চলে যান এখান থেকে। নইলে পুলিশ ডাকব কিন্তু। তাড়াতাড়ি যান। এইভাবে কথা বললে কেউ কাউরে দেয়?"- এই বলে জানালা বন্ধ করে দিল। শুধু বন্ধই করে দিল না, ভিতর থেকে তালা মেরে দিল। রাগী মিয়া ভাবল, "এই লোকটার কাছে কিছু চাইয়া লাভ হইব না। যাইয়া দেহি অন্য কেউ দেয় নাহি। দেবেই দেবে। জোর কইরা চাইলেই দেবে।" রাগী মিয়া চলে গেল সেখান থেকে। আর সেই বাড়ির লোকটি মনে মনে বলল, "যাক, বাঁচা গেল। চলে গেছে। এতক্ষণে থামাতে পারলাম।"- এই ভেবে খুব খুশী হলো। রাগী মিয়া এখন যে কারো বাড়িতে কিছু চাইছে না। বড়লোক বাড়ির দিকে চাইছে, এবং নিজে সুন্দর করে সাজার চেষ্টা করছে। যাতে বড়লোক বাড়ির কোন মেয়েলোক তাকে দেখে বিয়ে করে। সে দেখল, কী যে করি! বড়লোক বাড়ি নিশ্চয়ই একটা আছে। কিন্তু কই যে যাই! কেউ তো কইবেও না। মাইনষেরে দেখলেই টাকার লোভে চাইতে শুরু করি। তহন বিয়ার কথা আবার মনে থাকবো নানে। দেখি, কত দূর যাইয়া পারি। সে আল্লাহর কাছে সবসময় ভালো থাকত। আল্লাহর সঙ্গে ভালভাবে কথা বলত। কিন্তু আল্লাহর অন্যান্য বান্দাদের কথা ভাবত না। তাই সে আল্লাহর কাছে বলল, "আল্লাহ! বলে দাও না, কোথায় একটা বড়লোক বাড়ি পাব?" তখন আল্লাহ তার মনের মধ্যে গিয়ে বললেন, "আমি কেন বলে দেব? তুমি আমার বান্দাদের সঙ্গে এমন ব্যবহার কর! তোমায় আমি বলে দেব না। কিচ্ছু বলে দেব না। তুমি এখন কাজ করতে পার। সেই কাজও করছ না। শুধু আমার বান্দাদেরকে জ্বালাতন করছ। তুমি এখন নিজে কাজ খুঁজবে, নয়তো যা খুঁজছ তাই খোঁজ, কিন্তু আমরা তোমাকে সাহায্য করব না- এটাই তোমার শাস্তি।" তখন রাগী মিয়া মনে মনে বলল, "আল্লাহ, একটু বল না! আমি আর তোমার বান্দাদেরকে জ্বালাতন করব না। কিন্তু একটা বড়লোক বাড়ি দেইখ্যা আমারে একটু চিনাইয়া দাও না।" তখন আল্লাহ বললেন, "না! তুমি সত্যি করে বলছ? তোমার কথা এখন কে শুনবে? তুমি তো বিয়ে করে যার সঙ্গে বিয়ে করবে তাকেও তো নিশ্চয়ই তুমি জ্বালাবে।" তারপর রাগী মিয়া আর আল্লাহর সঙ্গে কথা বলল না। খুঁজতে গেল বউ। কত এক ঘন্টা ধরে হাঁটল। কিচ্ছু পেল না। দুই ঘন্টা ধরে হাঁটল। তাও পেল না। তিন ঘন্টা ধরে হাঁটতে হাঁটতে অবশেষে আধা ধনী লোক পেল। সেই বাড়িতে চলে গেল। কিন্তু সেই বাড়ির মেয়েটি ছিল খুব সত। রাগী মিয়া দেখল, এর সঙ্গে একবার ভাল কথা বলেই দেখি, কী হয়। ভুলানো না গেলে জোর করব। "বাড়িতে কেউ আছেন নি? একটু খোলেন! আমি গরীব মানুষ। একটু খোলেন!" দরজা খুলে দিল সেই মেয়েটি। সেই মেয়েটির নাম ছিল অমিতা। দরজা খুলে দিল। বলল, "কে আপনি? এভাবে কেন এসেছেন? আপনি কে? আপনার পরিচয় দিন।" রাগী মিয়ার রাগী মিয়া নাম পছন্দ ছিল না। তাই সে নিজের আরেকটা নাম বানালো। রাগী মিয়া বলল, "আমার নাম গনী মিয়া। আমি অনেক দূর থেকে এসেছি। আমি খুব গরীব।" তখন অমিতা বলল, "আপনার নাম গনী মিয়া। কিন্তু আপনি গরীব কেন?" তখন রাগী মিয়া বলল, "নাম আর আসল জিনিস কি এক হয়? আমি নিজেই আমার নাম রেখেছি। কারণ, আমার মা-বাবা আমাকে 'এই ছেলে' বলে ডাকত।" অমিতা বলল, "আমি আপনাকে আরেকটা নাম দিচ্ছি। আপনার নাম সনি মিয়া। আপনার নামে গনী মিয়া মানায় না। এবার ঘরে আসুন।" তখন সনি মিয়া মনে মনে বলল, "যাক, বাবা! এবার ঘরে ঢুকতে পেরেছি, যাই।" তখন দুইজনই ঘরে গেল। অমিতার মা বলল, "কে তুমি? তুমি কোথায় থাক?" তখন সনি মিয়া বলল, "আমার নাম ছিল গনী মিয়া। কিন্তু আপনার মেয়ে আমার নাম দিয়েছে সনি মিয়া। গনি মিয়া মানায় না তা দেখে। আমার নাম এখন সনি মিয়া। আমি অনেক দূরে থাকতাম। অনেকক্ষণ ধরে এখানে এসেছি।" অমিতার বাবা বলল, "তোমার নাম সনি মিয়া। তোমার নতুন নাম? অমিতা, তুমি ওর নাম রেখেছ কেন? গনী মিয়া নাম তো সুন্দর লাগছিল।" অমিতা বলল, "সনি মিয়াই তো ভাল।" তখন সনি মিয়া বলল, "আমি যে গরীব, তাই আমাকে গনী মিয়া নাম রাখেনি। সনি মিয়া নাম আমারও পছন্দ।" মা বলল, "সত্যি! নামটা ভাল না লাগলে আমাদের বলো। আমরা আবার পাল্টে দেব।" বাবা বলল, "হ্যাঁ, হ্যাঁ, ঠিক। তুমি এত দূর থেকে এসেছ। কিছু খাও। ঘরে রুটি আছে। আমরা ভাত খেয়েছি, ভাত শেষ। রুটি খাবে তুমি? এক্ষুণি এনে দিচ্ছি।"- এই বলে রুটি ও সবজি নিয়ে এল। তখন সনি মিয়া মনে মনে বলল, "এই তো। এমনই তো চাই।" তারপর সে বসে বসে খেল। পানিও দিল। সব খাওয়া-দাওয়া শেষ হল। এবার আস্তে আস্তে এক মাসের মধ্যে বিয়ের আলোচনা শুরু হলো। তখন অমিতা বলল, "অসম্ভব! আপনার কোন বাড়িই নেই। আর বিয়ের পর আপনি আমাকে নিয়ে কই যাবেন? আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারব না।"- এই বলে সে মায়ের কাছে সব ঘটনা খুলে বলল। বলল, "মা! আমি সনি মিয়াকে বিয়ে করতে পারব না। ওর কোন বাড়ি নেই। ও আমাকে নিয়ে কই যাবে? আমি কী করব? ওকে বিয়ে করব না আমি! আমি যে অনেকদিন আগে একটি ছেলেকে দেখেছিলাম। ঐ ছেলেটাকে আমি বিয়ে করব।" তখন মা বলল, "না মা! তার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। তুমি বরং সনি মিয়াকে বিয়ে কর। ওকে বিয়ে কর।" বাবা সনি মিয়াকে বলল, " শোন! আমার মেয়েকে নিয়ে তুমি কই যাবে?" তখন সনি মিয়া বলল, " কুটির বানাবো।" "আমার মেয়ে কুটিরে থাকবে না।" "বেশ! নিয়ম পালটাইয়া যাক। বর থাকবে শশুর বাড়ি, বউ থাকবে বাপের বাড়ি। ভালো হলো না?" ''হ্যা! কুটিরে থাকার চেয়ে ভালো" তারপর তাদের বিয়ে হয়ে গেল। বিয়ের আনন্দে সেই লোকটি ভাল হয়ে গেল। এই গল্পটি তোমরা শুনেছ কখনো? গরীব কিন্তু সত এর গল্প হয়তো অনেক অনেক শুনেছ। এমন গল্প তো একটাও শোননি। তাই আমি তোমাদেরকে এই গল্পটি বললাম। 

Monday, August 22, 2016

ঋতুর দেশ

এক ছিল একটি দেশ। সেই দেশের রাজা ছিল বসন্ত। সেই দেশের রানী ছিল বর্ষা। সেই দেশের সেনাপ্রতি ছিল শরত। সেই দেশের মন্ত্রী ছিল হেমন্ত। রাজপুত্র ছিল গ্রীষ্ম। রাজকণ্যা ছিল শীতমণি।রাজ্যের প্রজারা ছিল বৈশাখ, জৈষ্ঠ্য ইত্যাদি।একদিন ফাল্গুন বলল, রাজপুত্র মশাই! গ্রীষ্ম কাল এসে যাচ্ছে। আপনি কি প্রস্তুত চারিপাশে ছড়িয়ে পড়ার জন্য? আজ আগুন পোহায়ে গা গরম করে নিন। গ্রীস্ম কাল এলে সেই গরম ছড়িয়ে দিবেন। রাজপুত্র বর্ষা রানীকে গিয়ে বলল, "মা আগুনের ব্যাবস্থা কর।" বর্ষা বলল, "কেন? আমি নিজের কাজে ব্যস্থ। এক ঋতু পর বর্ষা আসবে। তখন আমাকে মেঘ হতে হবে। তোর আবার আগুনের জেদ উঠলো কেন?" "মা এক ঋতু পর বর্ষা। কিন্তু আগের ঋতু কি তা তোমার মনে নেই।" "ওহহও......ভুলেই গিয়েছিলাম। নাও  আগুন জ্বালিয়ে দিচ্ছি।" এই বলে আগুন জ্বালিয়ে দিল। গ্রীস্ম ঋতু শেষ হলো। বর্ষা মেঘের রূপ ধরে বৃষ্টি হয়ে নামল। বর্ষা ঋতু গেল। শরত ঋতু আসলো। শরত সেনাপতির দশটি কপি হয়ে গেল। প্রথম জন নবান্ন উতসবের জন্য সবাইকে ডাক দিল।দ্বিতীয় জন রোস্ট হয়ে গেল।তৃতীয় জন পানি হয়ে গেল।চর্তুথ জন বোরহানি হয়ে গেল। পঞ্চম জন পিঠাপুলি পায়েস হয়ে গেল। ষষ্ঠজন পোলাও হয়ে গেল। সপ্তম জন ভাজা মাছ হয়ে গেল। অস্টম জন ডিম হয়ে গেল। নবম জন মশলা হয়ে গেল।দশম জন শিউলি ফুল হয়ে চার পাশে গন্ধ ছড়িয়ে  দিল। ঐ বছরে হেমন্তকালের নবান্ন উতসব শরতকালেই করে ফেলেছিল। উতসবের কথা শুনে লোভ সামলাতে পারেনি কেউ। এবার হেমন্তকাল এসে গেল। মন্ত্রী বাইরে বের হলো। ঘাসের ডগায় শিশির জমিয়ে দিল। মাঠে এক সেকেন্ডের মধ্যে সুন্দর ধানক্ষেত বানিয়ে দিল। সবার ঘরে পায়েস ও পিঠে পাঠিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করে দিল। শেষের দিকে একটু একটু ঠাণ্ডা পরিয়ে দিল। হেমন্তকাল চলে গেল। রাজকন্যা শীতমনি ভাবল, এর পরের ঋতুটা তো আমার ঋতু। মাকে বলতে হবে। এই বলেই মার কাছে চলে গেল। "মা, মা! শোন। এর পরের ঋতুটি না শীত ঋতু। শীত ঋতুর সব দায়িত্ব না আমার। তুমি আমার হাত-পা বরফ দিয়ে ডলে ঠাণ্ডা করে দাও না।" রাণী বর্ষা বলল, "ঠিক আছে। চল, আমি আমার মেঘ থেকে শিলার বরফ নিয়ে আসি।"- এই বলে শিলা নিয়ে আসল। শিলা দিয়েই আজকে রাজকন্যাকে স্নান করালো। শীতঋতু আসার পর রাজকন্যা ম্যাজিক করল। হাজার হাজার সোয়েটার আর উলের সব কাপড়-চোপড় নিয়ে আসল। ঘরে ঘরে সেগুলো পাঠিয়ে দিল। জানান দিল, শীত আসছে। এই দেশের রাজকন্যা আসছে। শীত আসল। সবাই উলের কাপড় পরল। সবার গলায় উলের রুমাল। ঘুমানোর সময় সবাই কাঁথা গায়ে দেয়। শীতে পিঠা-কুলি খাওয়ার ধূম পড়িয়ে দিল। পিঠা বানানোরও দরকার হয়নি। হাজার হাজার পাটিশাপটা, ভাপা পিঠা আরো নানা রকমের পিঠা হাজির হয়ে গেল। সবার ঘরে ৫টি ৫টি করে পিঠা দিয়ে দিল। শীতকালে অনেক ঠাণ্ডা দিয়ে দিল। সারা গাছ শিশিরে ভরে উঠল। শীতকাল গেল। বসন্তকালেই তো আসল সমস্যা। শ্রাবণ বলল, "মহারাজ! আপনার প্রকৃতিতে ছড়িয়ে পড়ার সময় এসেছে। এই সুন্দর ঋতুটির জন্যই আমরা অপেক্ষা করছিলাম। দয়া করে প্রকৃতিতে ছড়িয়ে পড়ুন। আমরা গাছে গাছে ফুল, শাখায় শাখায় পাখি, ফুল-ফল ভরা নদী ভরা পানি- এই সুন্দর প্রকৃতি দেখতে চাই। কী সুন্দর আবহাওয়া হবে। এই প্রকৃতিটা আমরা দেখতে চাই, দেখতে চাই, দেখতে চাই।"- বলে মিছিল করা শুরু করল। বসন্ত বলল, "থাম, থাম, থাম। আমি ছড়িয়ে পড়তে পারব না। রাজ্য শাসন করবে কে? রানীর হাতে আমি রাজ্য ছেড়ে দেব না। বর্ষা যদি রাজ্য ভিজিয়ে দেয় আমি না থাকলে।" বর্ষা বলল, "কী হয়েছে, মহারাজ? আমি নাকি রাজ্য ভিজিয়ে দেব। আপনি নিশ্চিন্তে যান। আমি ভিজাব কেন?" রাজামশাই ভাবল, বর্ষা রাজ্য ভিজিয়ে দেবে। তখন রাজা বলল, "তাহলে বর্ষাও আমার সাথে যাবে। কিন্তু বর্ষা, মনে রেখো, তুমি যদি বৃষ্টি বানিয়ে দাও, তাহলে আমি কিন্তু তোমার ঘরের ভেতর মজার গাছপালা ভরে দেব না।" বর্ষা বলল, "ঠিক আছে, আমি যাচ্ছি আপনার সাথে।" সারা প্রকৃতি নতুন রূপে সাজল। শুধু প্রকৃতিই নয়। মানুষও সাজল। এই ভাবে এই বছরটি কেটে গেল। ওই দেশে এই বছরটি অন্য বছরের চেয়ে সবচেয়ে সুন্দর বছর।

Thursday, August 18, 2016

রূপার বায়না

এক ছিল এক কন্যা। সে খুবই ছোট। মনে কর পাঁচ-ছয় বছর হতে পারে। সব মা-বাবারাই পাঁচ-ছয় বছর বয়সী বাচ্চাদের সব কথা শোনে, যা চায় তাই দেয়। এই মেয়েটির নাম রূপা। ভালো নাম হলো রুপোঝিলমিল। তার মা তাকে রূপা বলেই ডাকত। শুধু তার বাবা রূপো বলে ডাকত, তাও পুরো ভালো নাম বলত না। তার মা-বাবারা তার কথা প্রায়ই শোনে। কিন্তু একদিন তার মা-বাবা বিরক্ত হয়ে তার কোন কথা শুনছিল না। এক সপ্তাহ ধরে যা চায় তা-ই দিতে হলো। এইজন্য এক সপ্তাহ পর মা-বাবা ক্লান্ত হয়ে গেল, তাই রাগ হয়ে গেল। রবিবারে মেয়েটি চেয়েছিল, পাঁচটি লজেন্স। সোমবারে চেয়েছিল দুই সেট চুরি। মঙ্গলবারে চেয়েছিল কানের দুল আর লাল গলার মালা। বুধবারে চেয়েছিল সুন্দর পুতুল। বৃহস্পতিবার চেয়েছিল পায়ের নুপুর। শুক্রবার চেয়েছিল মাথার ক্লিপ আর আংটি। শনিবার চেয়েছিল লাল গোলাপী ফুটফুটে সুন্দর ব্যাগ। তাই তার মা-বাবার অনেক টাকা খরচ হয়ে গেল। প্রায় তিন হাজার খরচ হয়েছে। শুধু তাই নয়, শুক্রবার তো ছুটির দিন। তাই সে তার মা-বাবার কাছে মেকআপ বক্স, কাজল, লিপস্টিক, মাথার ব্যান্ড, পায়ের আলতা, হাতে নেলপালিশ- এ ধরনের নানা রকমের সাজার জিনিস চেয়েছিল। আরেকটি ফ্যাশন টুপি। এতকিছু যদি কিনতে হয়, তাহলে দুই হাজার টাকা তো খরচ হবেই, তাই না? এমনকি সবচেয়ে ভালো সোনার চুরি দিয়েছে। পাঁচ-ছয় বছরের মানুষ সোনার চুরি পরে? তারপর মা-বাবা তো রেগে শুয়ে পড়ল। তখন রূপা মাকে বলল, "মা, আজকে আমার একটা ফুল আর প্রজাপতি ডিজাইনের জামা লাগবে। আর আরেকটা গোলাপী ডিজাইনের খাতাও লাগবে।" মা তো আরো রেগে গেল। উঠে দাঁড়িয়ে পড়ল। আর বকাবকি শুরু করল এই বলে, "এমন মেয়ে আমি জীবনেও দেখিনি। তুমি আমার কাছে এত জিনিস চাচ্ছ কেন? তুমি আমার জন্য কিছু কিনেছ যে, আমি তোমার দশ হাজার জিনিস কিনে দেব? আর চাই না আমি তোমার গিফট। এখন তুমি আমার কাছে কিচ্ছু চাইবে না, সরে যাও তাড়াতাড়ি। কত কিছু কিনেছ, টাকার হিসাব তো তুমি একদম বোঝই না। তুমি শুধু জিনিসের দাম বোঝ। শুধু বোঝ, দুই একটা পয়সা দেয়, আর একটা জিনিস নিয়ে নেয়। তাড়াতাড়ি চলে যাও।" তখন রূপা বাবার কাছে গেল। বাবাকে বলল, "বাবা, মাকে গিয়ে একটু মার না। মা আমাকে বকা দিয়েছে। আর আমাকে একটা ফুল আর প্রজাপতি ডিজাইনের জামা কিনে দেবে? মা আমাকে দেয়নি। মা আমাকে গোলাপী ডিজাইনের খাতাও দেয়নি।" বাবা বকল না। কারণ, বাবা একটু আহলাদু। তাই বলল, "আরে রূপো, শোন না, একটু এসব বাদ দাও না, মা। পড়ালেখায় মন দাও। এত জিনিস কিনতে পারব না। আর খাতা তো তুমি ছবি আঁকার জন্য কিনবে, পড়ালেখার জন্য তো না। আর মাকে এত মারা, বকা, এসব একটু বাদ দাও না। আর মা তো ঠিকই বলেছে। তুমি সারা সপ্তাহ ধরে কত কিছু কিনেছ। আজকে তোমার খাতা আর জামাও লাগবে? এত কিছু কি কিনে দেয়া যায়, মা? আমাদের টাকা তো সব শেষ হয়ে যাচ্ছে। ও রূপোমনি, আজ অন্তত আমাদের একটু শান্তিতে থাকতে দাও না! আর রূপো, তুমি কবে একটু থামবে, বল না। আজ অন্তত একটু থাম। এই একদিন টুকু থাম। আর আমি কালকে রাতে যা বলেছি, তা তোমার মনে আছে?" রূপা বলল, "হ্যাঁ, মনে আছে। তুমি যদি মাকে না বক, আর জামা ও খাতা না কিনে দাও, তাহলে কিন্তু আমি তোমার রাতের কথা একদম শুনব না। তুমি তো বলেছ, যে আজ বিকেলে তোমার অফিসে ডিউটি আছে। বাচ্চাদের ঢুকানো, সিট গোনা, আর বাচ্চাদের সিট চিনিয়ে দেয়া, আর বাচ্চাদেরকে পরীক্ষার খাতা দেয়া। তুমি বলেছ আমাকে সিট গুনতে, আর বাচ্চাদেরকে সিট চিনিয়ে দিতে। আমি ওসব করতে পারব না, যদি তুমি আমাকে ওগুলো কিনে না দাও।" বাবা মহাজ্বালায় পড়ে গেল। বলল, "থাক না, মা। তুমি আজ অন্তত একটু থাম। আমি তো অনেকবার বলেছি এ কথা। আজ একটু সাহায্য কর আমাকে। আমি তোমাকে কত কিছু কিনে দিয়েছি। আর তুমি এটুকু করতে পারবে না?" তখন বাবা জ্বালার চোটে মাকে গিয়ে বলল, "এই, তুমি কি আমার রূপোমনিকে বকেছ?" "হ্যাঁ, বকেছি। তো কী হয়েছে? বকলে কি ও রাগে থড়থড় করে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেবে? কী এমন হবে একটুখানি বকলে?" বাবা বলল, "একটুখানি বকলে কিছু হবে নাকি মানে? তো আমার রূপোমনি যে বলল, "মা আমাকে বেশি বকে, সেই কথা কি তুমি বোঝ না, নাকি?" "হ্যাঁ, বুঝি। অবশ্যই বুঝি। এখন ঝগড়া না করে চলে যাও তো।" "কী, ঝগড়া আমি করেছি? না তুমি করেছ? তুমি রূপোকে বকেছ, তাই তো এ ঝগড়াটা হলো।" "আমি সাধে বকেছি? সারাটা সপ্তাহ একটার পর একটা জিনিস চেয়েই যাচ্ছে, আর আমি ওকে বকব না? আর আজ দেখ, আজও চেয়েছে, জামা চেয়েছে, খাতা চেয়েছে, পরে আবার কত কী চাবে?" বাবা বলল, "তুমি sure যে, পরে ও আবার চাইবে?" "হ্যাঁ, আমি sure, খুব আমি sure, কারণ ও এতদিন একটার পর একটা জিনিস চেয়েছে, আবারও চাইবে, এটাই আমার বিশ্বাস। তোমার রাগ হয় না, বল? আমার মনে হয়, যেন ওকে ছেড়ে চলেই যাই। ওকে তুমি না থামিয়ে আমার বকা থামাতে এসেছ কেন?" "আমি থামাইনি? দশ হাজারবার বলেছি। তোমার মেয়ে এমন কেন, তা তুমিই জান। তুমিই ওকে জন্ম দিয়েছ, আর তুমি ওর কথা বোঝ না?" মা বলল, "আমার মাথাটা গরম করে দিও না। কখন থেকে বলছি চলে যাও। তুমি না ওকে বেশি আদর কর। তাহলে ও যা  চায়, তা কিনে দাও না কেন?" তখন বাবা রাগ হয়ে নিজের মেয়ের উপর একটু মাথা গরম করল। মেয়েকে গিয়ে বলল, "এই মেয়ে! তুই এমন করিস কেন? আজ কিচ্ছু কিনে দিতে পারব না। শুধু তুই আমার স্কুলের কাজটুকু করে দিবি, ব্যাস। শোন, তাড়াতাড়ি ঘুমাও। কাল দুপুর, বিকাল, রাত কিছুতেই নয়; সকালে যেতে হবে আমাদের।" রূপাই তখন রাগ হয়ে গেল। রূপা বলল, "কেন শুনব আমি তোমার কথা? আমি এখন ঘুমাব না। রাতের বেলায় লাইট নিয়ে গিয়ে মাঠে খেলব। আমি তোমার কাজ করে দেব কেন? রাতের বেলা মাঠে খেলতে খুব মজা লাগে। আমি সকালে উঠবও না, রাত্রে তাড়াতাড়ি ঘুমাবও না, আমি তোমার অফিসের কাজও করে দেব না; তোমরা আমাকে কিছু দাও না, তোমরা আমার কথা না শুনলে আমি কেন তোমাদের কথা শুনব, তোমরা আস্তে আস্তে পচা হয়ে যাচ্ছ।" বাবা বলল, "এই মেয়ে! তোমার কথা শুনি না কে বলে? এই রূপো! এক সপ্তাহ ধরে কত জিনিস কিনেছি তোর জন্যে! তুমি কেন এমন কর? তুমি আমার একটা কথা শুনলে আমি তোমাকে ফুল আর প্রজাপতি ডিজাইনের জামা ও গোলাপী ডিজাইনের খাতা কিনে দেব। বাসায় কত খাতা আছে। সবুজ খাতা আছে, নীল খাতা আছে, সাদা খাতা আছে, কালো খাতা আছে, কফি কালারের খাতা আছে, আরো কত কী আছে!" তখন রূপা বলল, "আমার ঐ সব রঙের খাতা পছন্দ না। আমার লাল আর গোলাপী পছন্দ। আমার গোলাপী রঙের খাতা নাই।" বাবা বলল, "ঝগড়া করো না। তুমি আজ এই রুমেই শোবে। আমি অন্য রুমে শোব। এটাই তোমার শাস্তি। দেখি তুমি কি কর। আমি চলে যাই।" এই বলে বাবা তাড়াতাড়ি রুম থেকে বের হয়ে গেল। অন্য একটি রুমে ঢুকে দরজা লক করে দিল।" মা রুপার রুমে দরজায় উঁকি দিয়ে বলল, "রূপা! তোমার জন্যেই আমরা কিন্তু অন্য রুমে ঘুমাচ্ছি। তুমি কিন্তু আজকে এ রুমে শোবে, আমি বলে দিয়েছি। বাবা একটি ভালো শাস্তি দিয়েছে। প্রতিদিন ঘুমানোর সময় ঝগড়া কর। একদিন বল, পরীর গল্পের বই কিনে এনে পড়ে শোনাও। আরেকদিন বল, রাজকন্যার গল্পের বই কিনে এনে পড়ে শোনাও। একবার বল, রাজপুত্রের গল্প; আরেকবার বল, মিকি মাউসের গল্প; আরেকবার বল, টম এন্ড জেরির গল্প; আরেকবার বল, বারবি আর ফ্রোজেনের গল্প; আরেকবার বল, মরুভূমির রাজকন্যার গল্প শোনাও। আর কিন্তু এসব করা যাবে না। এসব করলে আমি কিন্তু আর কিচ্ছুই কিনে দেব না। আর এমন করলে আমি এই বাসায়ই ঘুমাব না, বাইরে গিয়ে ঘুমাব। দেখি, তুমি কি কর। রাতে পানি পিপাসা লাগলে তোমার নিজেরই উঠে পানি খেতে হবে। তোমার তো আবার রাতেই মাথা চুলকায়, রাতেই শ্যাম্পু করতে হয় আবার। দেখি, তুমি একা একা কিভাবে কাজ কর। অন্ধকারের মধ্যে বের হয়ে লাইট জ্বালাও কি করে।" "আমি আসি"- এই বলে মাও বের হয়ে গেল। ওদিকে বাবা বলল, "আমি শুনেছি, তুমি রূপোকে এমন এমন কথা কেন বলেছ? ও তো ছোট। আমি শুধু শাস্তি দিয়েছি যে, পানি খেতে চাইলে, মাথা চুলকালে আমি এসে সব ঠিক করে দেব, কিন্তু তারপর আবার আমি অন্য রুমে চলে যাব। কিন্তু তুমি আবার আগ বাড়িয়ে এত অতিরিক্ত শাস্তি দিতে যাচ্ছ কেন? ও এতসব করতে পারে? আমি ওর নানুর কাছে শুনেছি, তুমি নাকি ছোটবেলায় ওর মতই সারারাত শুধু গল্প শুনতে, মা-বাবাকে ঘুমাতে দিতে না?" তখন মা গেল রেগে। বলল, "আমার ছোটবেলা নিয়ে তোমাকে কে গবেষণা করতে বলেছে? আমি কিন্তু মাকে ফোন দিব।" "ফোন দেয়ার সুযোগ নেই! অনেক রাত হয়ে গেছে! তোমার মা-বাবা এখন ঘুমোচ্ছে। ঘুমের মধ্যে ডিস্টার্ব করলে তোমারই দোষ হবে। আমি গেলাম আমার রুমে!" মা রাগ হয়ে বলল, "Disgusting! অসহ্য! আমি আর থাকবই না এখানে। চলে যাব আমি।" বাবা বলল, "তোমাকে চেতিয়েছি! এবার আমি গেলাম আমার রুমে। বাচ্চাকে এতো শাস্তি দিয়ো না।" এই বলে বাবা চলে গেল রুমে। অনেক রাত হল। সবাই ঘুমিয়ে পড়ল। বাবু মোবাইলে এর্লাম দিলো। ভোর চারটায় ঘুম থেকে উঠলো। বাবার পকেট থেকে গাড়ির জন্য টাকা নিলো। একটি গাড়িতে উঠে পড়ল। ব্যাংকে চলে গেল। হেটে যেতে বিশ মিনিট লাগত। গাড়িতে যেতে দশ মিনিট লাগত। দশ মিনিটে পৌঁছে গেল। একশত টাকা নিয়ে বাড়ি এল। বাবা দরজা লক করে রেখেছে। রূপা দরজায় টোকা দিল। বাবা দরজা খুলে দিলো। মা বলল, "দরজা খুলতে হবে না। খাকুক না বাইরে। ভাল করে একটু শিক্ষা দিতে হবে। দশ দিনে এক লক্ষ টাকা খরচ করেছে আমার।"কিন্তু বাবা দরজা খুলল। রূপা বলল,"বাবা দেখো তোমার জন্য একশত টাকা এনেছি ব্যাংক থেকে। বাবা বলল,"যাক বাবা যেতে হলো না ব্যাংকে।" রূপা বলল,"কিন্তু বাবা এই টাকা নিয়ে মার্কেটে যেতে হবে। খাতা আর জামা কিনে দাও।

Monday, August 1, 2016

না সাজার শাস্তি

ভোজে যাব মাদ্রাসাতে
ভুলেছে মিনা সেজে যেতে-
মিস ভেবেছে, দেবে ভালো সাজ,
মিস রেগেছে, ভাবছি দেবে কাজ।

মিস বলে, নেইকো ছুটি,
মিনা বলে, মাথায় ঝুটি।
মাথায় ঝুটি দিলেই কি আর সাজ হয়?
চোখে কাজল, হাতে মেন্দি দিলেই তো সাজ হয়।

চললাম আমি বাড়ি- বলে মিনা।
ভাবছে, মিস যেতে দেবে কিনা।
মিস বলল, বাসায় গিয়ে সাজতে-
মিস বলেছিল, দাঁতও মাজতে।

পরেছে নুপুর, পায়ে আলতা-
হাতে চুরি, মেন্দি মাখা।
গলায় মালা, কী যে সাজ!
আমরা খাব, মুড়ি ভাজ।