Wednesday, August 24, 2016

রাগী মিয়া

হ্যালো বন্ধুরা! তোমরা নিশ্চয়ই গরীব লোকের কত গল্প শুনেছ। কিন্তু সত গরীব লোকদের। তোমরা কি কখনো রাগী গরীবদের গল্প শুনেছ? যদি শুনতে চাও, তাহলে এই গল্পটি পড়। রাগী গরীব হলে কেমন হয়। তবে এখন শোন গল্পটি।

একদিন এক জায়গায় ছিল এক গরীব লোক। কিন্তু খুব রাগী। অনেক অনেক গরীব ছিল। একটা টাকা-পয়সাও নেই। কিন্তু খুবই রাগী ছিল। অনেক অন্য রকম। জোর করে কেউ টাকা-পয়সা চাইলে কেউ কি দেয়? তাকে ভাল করা দরকার। তার নাম ছিল রাগী মিয়া। সবাই তাকে রাগী মিয়া বলে ডাকত। তাই সে আরো রেগে যেত। গিয়ে গিয়ে মানুষের ঘরের ভিতর ঢুকে জোর করে পয়সা চাইত। বলত, "এই! দেখেন না, আমি গরীব মানুষ? গরীব মানুষকে দেখলে কিছু দিবেন না? টাকা-পয়সা দেন এক্ষণি। যেটুক দিতে পারেন ততটুকু দেন। টাকা-পয়সা দেন আমারে! যে কোন কিছু দেন। কিন্তু কিছু না নিয়ে আমি এইখান থেকে যামু না। কইয়া দিলাম, তাড়াতাড়ি দেন? কতবার কওয়া লাগে? বোঝেন না, কত কষ্ট কইরা গ্রাম থিকা ঢাকা আসছি টাকা ধার নিয়া। গ্রামে গিয়া আবার টাকা ফেরত দেওয়া লাগবে আনে। নাইলে আমায় বড়লোকের মেয়ে দেইখ্যা বিয়া দেন। নাইলে কিন্তু চোরের মতন সব লইয়া যামু।" যার কাছে চাইছে, সে বলল, "আপনি কেমন গরীব লোক? এইভাবে কেন কথা বলছেন? ও রাগী মিয়া!" রাগী মিয়া শুনে আবার রেগে গেল। বলল, "রাগী মিয়া কইয়া ডাকলে হাজার হাজার পয়সা লইয়া যামু। এর চেয়ে রাগী মিয়া না ডাইক্যা চল্লিশ-পঞ্চাশ টাকা দেন। নাইলে তিনটা জামা আর তিনটা লুঙ্গি কিন্যা দেন।" তারপর লোকটি (গৃহস্থ) গেল রেগে। ভড়াস করে দরজা লাগিয়ে দিল। এই তো শুরু হলো টাকাটাকি। বলল, "গরীব মানুষরে তাড়াইয়া দেন কেন? তারপর কিছু না কইয়া ভড়াস কইরা দরজা বন্ধ কইরা দেন? এই সময় আর ভাল লাগতাছে না। তাড়াতাড়ি পয়সা দেন। কিছু না দিলে কিন্তু ডাকাতের দলে চইলা গিয়ে ডাকাত হইয়া যামু। তাড়াতাড়ি কিছু দেন না!" বাড়ির লোক রেগে একেবারে আগুন হয়ে গেল। জোরে চিতকার দিয়ে বলল, "চলে যান এখান থেকে। নইলে পুলিশ ডাকব কিন্তু। তাড়াতাড়ি যান। এইভাবে কথা বললে কেউ কাউরে দেয়?"- এই বলে জানালা বন্ধ করে দিল। শুধু বন্ধই করে দিল না, ভিতর থেকে তালা মেরে দিল। রাগী মিয়া ভাবল, "এই লোকটার কাছে কিছু চাইয়া লাভ হইব না। যাইয়া দেহি অন্য কেউ দেয় নাহি। দেবেই দেবে। জোর কইরা চাইলেই দেবে।" রাগী মিয়া চলে গেল সেখান থেকে। আর সেই বাড়ির লোকটি মনে মনে বলল, "যাক, বাঁচা গেল। চলে গেছে। এতক্ষণে থামাতে পারলাম।"- এই ভেবে খুব খুশী হলো। রাগী মিয়া এখন যে কারো বাড়িতে কিছু চাইছে না। বড়লোক বাড়ির দিকে চাইছে, এবং নিজে সুন্দর করে সাজার চেষ্টা করছে। যাতে বড়লোক বাড়ির কোন মেয়েলোক তাকে দেখে বিয়ে করে। সে দেখল, কী যে করি! বড়লোক বাড়ি নিশ্চয়ই একটা আছে। কিন্তু কই যে যাই! কেউ তো কইবেও না। মাইনষেরে দেখলেই টাকার লোভে চাইতে শুরু করি। তহন বিয়ার কথা আবার মনে থাকবো নানে। দেখি, কত দূর যাইয়া পারি। সে আল্লাহর কাছে সবসময় ভালো থাকত। আল্লাহর সঙ্গে ভালভাবে কথা বলত। কিন্তু আল্লাহর অন্যান্য বান্দাদের কথা ভাবত না। তাই সে আল্লাহর কাছে বলল, "আল্লাহ! বলে দাও না, কোথায় একটা বড়লোক বাড়ি পাব?" তখন আল্লাহ তার মনের মধ্যে গিয়ে বললেন, "আমি কেন বলে দেব? তুমি আমার বান্দাদের সঙ্গে এমন ব্যবহার কর! তোমায় আমি বলে দেব না। কিচ্ছু বলে দেব না। তুমি এখন কাজ করতে পার। সেই কাজও করছ না। শুধু আমার বান্দাদেরকে জ্বালাতন করছ। তুমি এখন নিজে কাজ খুঁজবে, নয়তো যা খুঁজছ তাই খোঁজ, কিন্তু আমরা তোমাকে সাহায্য করব না- এটাই তোমার শাস্তি।" তখন রাগী মিয়া মনে মনে বলল, "আল্লাহ, একটু বল না! আমি আর তোমার বান্দাদেরকে জ্বালাতন করব না। কিন্তু একটা বড়লোক বাড়ি দেইখ্যা আমারে একটু চিনাইয়া দাও না।" তখন আল্লাহ বললেন, "না! তুমি সত্যি করে বলছ? তোমার কথা এখন কে শুনবে? তুমি তো বিয়ে করে যার সঙ্গে বিয়ে করবে তাকেও তো নিশ্চয়ই তুমি জ্বালাবে।" তারপর রাগী মিয়া আর আল্লাহর সঙ্গে কথা বলল না। খুঁজতে গেল বউ। কত এক ঘন্টা ধরে হাঁটল। কিচ্ছু পেল না। দুই ঘন্টা ধরে হাঁটল। তাও পেল না। তিন ঘন্টা ধরে হাঁটতে হাঁটতে অবশেষে আধা ধনী লোক পেল। সেই বাড়িতে চলে গেল। কিন্তু সেই বাড়ির মেয়েটি ছিল খুব সত। রাগী মিয়া দেখল, এর সঙ্গে একবার ভাল কথা বলেই দেখি, কী হয়। ভুলানো না গেলে জোর করব। "বাড়িতে কেউ আছেন নি? একটু খোলেন! আমি গরীব মানুষ। একটু খোলেন!" দরজা খুলে দিল সেই মেয়েটি। সেই মেয়েটির নাম ছিল অমিতা। দরজা খুলে দিল। বলল, "কে আপনি? এভাবে কেন এসেছেন? আপনি কে? আপনার পরিচয় দিন।" রাগী মিয়ার রাগী মিয়া নাম পছন্দ ছিল না। তাই সে নিজের আরেকটা নাম বানালো। রাগী মিয়া বলল, "আমার নাম গনী মিয়া। আমি অনেক দূর থেকে এসেছি। আমি খুব গরীব।" তখন অমিতা বলল, "আপনার নাম গনী মিয়া। কিন্তু আপনি গরীব কেন?" তখন রাগী মিয়া বলল, "নাম আর আসল জিনিস কি এক হয়? আমি নিজেই আমার নাম রেখেছি। কারণ, আমার মা-বাবা আমাকে 'এই ছেলে' বলে ডাকত।" অমিতা বলল, "আমি আপনাকে আরেকটা নাম দিচ্ছি। আপনার নাম সনি মিয়া। আপনার নামে গনী মিয়া মানায় না। এবার ঘরে আসুন।" তখন সনি মিয়া মনে মনে বলল, "যাক, বাবা! এবার ঘরে ঢুকতে পেরেছি, যাই।" তখন দুইজনই ঘরে গেল। অমিতার মা বলল, "কে তুমি? তুমি কোথায় থাক?" তখন সনি মিয়া বলল, "আমার নাম ছিল গনী মিয়া। কিন্তু আপনার মেয়ে আমার নাম দিয়েছে সনি মিয়া। গনি মিয়া মানায় না তা দেখে। আমার নাম এখন সনি মিয়া। আমি অনেক দূরে থাকতাম। অনেকক্ষণ ধরে এখানে এসেছি।" অমিতার বাবা বলল, "তোমার নাম সনি মিয়া। তোমার নতুন নাম? অমিতা, তুমি ওর নাম রেখেছ কেন? গনী মিয়া নাম তো সুন্দর লাগছিল।" অমিতা বলল, "সনি মিয়াই তো ভাল।" তখন সনি মিয়া বলল, "আমি যে গরীব, তাই আমাকে গনী মিয়া নাম রাখেনি। সনি মিয়া নাম আমারও পছন্দ।" মা বলল, "সত্যি! নামটা ভাল না লাগলে আমাদের বলো। আমরা আবার পাল্টে দেব।" বাবা বলল, "হ্যাঁ, হ্যাঁ, ঠিক। তুমি এত দূর থেকে এসেছ। কিছু খাও। ঘরে রুটি আছে। আমরা ভাত খেয়েছি, ভাত শেষ। রুটি খাবে তুমি? এক্ষুণি এনে দিচ্ছি।"- এই বলে রুটি ও সবজি নিয়ে এল। তখন সনি মিয়া মনে মনে বলল, "এই তো। এমনই তো চাই।" তারপর সে বসে বসে খেল। পানিও দিল। সব খাওয়া-দাওয়া শেষ হল। এবার আস্তে আস্তে এক মাসের মধ্যে বিয়ের আলোচনা শুরু হলো। তখন অমিতা বলল, "অসম্ভব! আপনার কোন বাড়িই নেই। আর বিয়ের পর আপনি আমাকে নিয়ে কই যাবেন? আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারব না।"- এই বলে সে মায়ের কাছে সব ঘটনা খুলে বলল। বলল, "মা! আমি সনি মিয়াকে বিয়ে করতে পারব না। ওর কোন বাড়ি নেই। ও আমাকে নিয়ে কই যাবে? আমি কী করব? ওকে বিয়ে করব না আমি! আমি যে অনেকদিন আগে একটি ছেলেকে দেখেছিলাম। ঐ ছেলেটাকে আমি বিয়ে করব।" তখন মা বলল, "না মা! তার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। তুমি বরং সনি মিয়াকে বিয়ে কর। ওকে বিয়ে কর।" বাবা সনি মিয়াকে বলল, " শোন! আমার মেয়েকে নিয়ে তুমি কই যাবে?" তখন সনি মিয়া বলল, " কুটির বানাবো।" "আমার মেয়ে কুটিরে থাকবে না।" "বেশ! নিয়ম পালটাইয়া যাক। বর থাকবে শশুর বাড়ি, বউ থাকবে বাপের বাড়ি। ভালো হলো না?" ''হ্যা! কুটিরে থাকার চেয়ে ভালো" তারপর তাদের বিয়ে হয়ে গেল। বিয়ের আনন্দে সেই লোকটি ভাল হয়ে গেল। এই গল্পটি তোমরা শুনেছ কখনো? গরীব কিন্তু সত এর গল্প হয়তো অনেক অনেক শুনেছ। এমন গল্প তো একটাও শোননি। তাই আমি তোমাদেরকে এই গল্পটি বললাম। 

No comments:

Post a Comment