Thursday, March 29, 2018

উইপোকা সমাচার

এক ছিল এক শহর। সেই শহরে থাকত একটি পরিবার। পরিবারে ভাই-বোন ও মা-বাবা ছিল। ভাই-বোন দু'জনের বয়সের মধ্যে বেশি একটা পার্থক্য নেই। ভাইয়ের ১০ বছর, বোনের সাড়ে ৮ বছর। তবে মাঝে মাঝেই ঝগড়া হয়। এমন কোন দিন নেই, যেদিন তাদের ঝগড়া হয়নি। মেয়েটির নাম ছিল শান্তা। আর ছেলেটির নাম ছিল হাসান। শান্তার আবার ছিল একটা ছোট্ট বাগান। সে সবসময় সেই বাগানেরই যত্ন নিত, আর খেলার সময় পুতুল দিয়েই শুধু খেলত। আর ছেলেটি শুধু শান্তাকে বলত, "এই শান্তা! সারাদিন শুধু বাগানের যত্ন নিস কেন? দেখ, আমি কেমন খেলি, মা আমাকে একটা বাক্স ৫০টি ছোট ছোট খেলনা সৈনিকসহ এনে দিয়েছে। তাদের মধ্যে আবার আলাদাও একজন আছে। খেলার মধ্যে আমি তাকে রাজা বানাই, কত কী করি! আর তুই সারাদিন বাগানের যত্ন নিস।" শান্তা বলল, "ভাইয়া! আমি শুধু বাগানের যত্ন নেই তোমাকে কে বলেছে? বাগানের যত্ন নেয়া শেষ হলে তো আমি একটুখানি খেলি। আর খেলা শেষ হলে আমি পড়তে যাই। রাতের খাবারের সময়ের আগ পর্যন্ত আমি পড়ি, আর বিকাল থেকে পড়া শুরু করি। তাই তো আমি সবসময় এ+ পাই। তুমি শুধু শুধু খেলনা নিয়ে খেল। খেলনার কি প্রাণ আছে? গাছ, ফুল এসবের প্রাণ আছে। আমি তাদের যত্ন নেই।" হাসান নাক ঘুঁচিয়ে ভ্রূ কুঁচকিয়ে বিদ্রূপের নাকি সুরে বলল, "ঊঁহ! ঢং কত! নিজে যখন পুতুলকে খাওয়ায় দাওয়ায় তার বেলা।" শান্তা বলল, "চুপ কর তো তুমি। আমি খেলি খুব অল্প সময়। এখন ঝগড়াটা থামাও। আমাকে গাছে পানি দিতে দাও।" রাত হলো। তারা ঘুম ঘুম চোখে। ঘুমিয়েই পড়বে একটু পর। শান্তার হাতে চুলকিয়ে উঠল। সে উঠে চিৎকার করল। হাসান তখন বলল, "কি হয়েছে, মা একটু শুয়েছে, চীৎকার করেছিস কেন?" শান্তা বলল, "পিছনে তাকিয়ে দেখ। পুরো ঘরটাতে কী হয়েছে!" হাসান পিছন ফিরে আবার চিৎকার দিয়ে উঠল। এরপর মাও পিছন ফিরে দেখল। মাও খুব আতঙ্কিত হয়ে উঠল। তাদের বাবা পিছন ফিরে দেখে বলল, "এ কী! এ যে উইপোকা। উইপোকার দল আমাদের বাড়িতে হামলা করেছে। কোথা থেকে আসল এই উইপোকা? উইপোকা নাকি সারা ঘরও খেয়ে ফেলতে পারবে।" পরের দিন তারা সকালে উঠে দেখল, বিছানা উইপোকার লাশে ভরে গেছে। শান্তা উঠে দৌড় দিল আর তাড়াতাড়ি ড্রেসিং রুমে গেল আর অন্য একটা জামা পড়ে আসল। সেই জামার মধ্যেও উইপোকার লাশ ছিল। আর শান্তার ভাই! সে তো এসব কিছু কেয়ারই করে না। সে তার বাবাকে বলল, "বাবা, বাবা! আমাদের তো একটা মশার র‍্যাকেট আছে। চল না, র‍্যাকেটটাই ব্যবহার করি উইপোকা মারতে।" বাবা রাগ হয়ে বলল, "চুপ কর! কেমন কেমন বুদ্ধি দেয়? কত বুদ্ধি! যেন কার্টুনের গোপাল ভাড়। মশার র‍্যাকেট দিয়ে উনি মারবে উইপোকা। র‍্যাকেটের সাথে যখন উইপোকার লাশ লেগে থাকবে, তখন কি হবে? তখন তো নিজেই ধরতে ঘৃণা পাবি।" তাদের আবার এক মামা ছিল। সেই মামাকে সবাই উইপোকা মামা বলে ডাকত। কারণ, সে উইপোকা তাড়াতে জানত। শান্তা যখন শুনেছিল যে, তার ভাইয়ের র‍্যাকেট দিয়ে মারার কথা; শান্তা বলল, "ভাইয়া! পুড়িয়ে মারতে হয় না। দরকার নেই তো। উইপোকা মামাকে ডেকে আনলেই তো হয়। উইপোকা মামা কত না জানি উইপোকা মারে।" এরপর উইপোকা মামা বাসায় এল। উইপোকা মামা দেখল, তাদের রান্নাঘরের চৌকাঠে উইপোকার বাসার মতন মাটি। সে উইপোকার ওষুধ দিয়ে দিল সেখানে। উইপোকারা কয়েকদিনের মধ্যেই মরে গেল। কারণ, উইপোকা মামা আরো অনেক কিছু করেছিল। এরপর উইপোকা মামা বাসায় ফিরে গেল। ওদের মা হাসান এবং শান্তাকে বলল, "শোন! তোদের বাসায় উইপোকা এসেছে কেন, জানিস? কারণ, তোরা সবসময় ঝগড়া করিস। তাই উইপোকা তোদের শাস্তি দেয়ার জন্য এই বাসায় এসেছে।" শান্তাকে ওর মা বলল, "তোমার গল্পের রূপকথার পরী এসে উইপোকা দিয়েছে, কারণ তোমরা ঝগড়া কর।" আর হাসানকে বলল, "তোমার খেলনা সৈনিকের দল তোমার ঐসব ভূতের মুভির ভূতদেরকে বলেছে উইপোকা দিতে। তাই বাসায় উইপোকা এসেছে।" তখন থেকে আর কেউ ঝগড়া করে না। এখানে গল্প শেষ।

No comments:

Post a Comment