Monday, April 9, 2018

ঘড়ি নিয়ে বিবাদ

এক ছিল এক স্কুল। স্কুলে অনেক অনেক  ছাত্র-ছাত্রী ছিল। একদিন একটা ক্লাসরুমে অনেক বাচ্চারাই ঘড়ি পরে আসল। আর এক জায়গায় দুইজন ঘড়ি পরা মেয়ে পাশাপাশি বসেছিল। তাদের একজনের নাম ছিল শিউলি আর আরেকজনের নাম ছিল বেলি। শিউলির ঘড়িতে ৮:৩৫ বাজে, আর বেলির ঘড়িতে ৮:৩৬ বাজে। বেলি বলল, "এই শিউলি! তোর ঘড়ি তো দেখছি ১ মিনিট স্লো।" শিউলি রাগ হয়ে বলল, "খবরদার, উল্টো পাল্টা কথা বলবি না। আমার ঘড়িটাই ঠিক আছে। তোরটাই এক মিনিট ফাস্ট। আমি আমার বাসার ঘড়ি দেখে দেখে ঠিক করেছি টাইম।" বেলি বলল, "তাতে কি? আমি আমার বাসার ঘড়ি দেখে ঠিক করেছি।" শিউলি বলল, "চুপ কর তুই! তোর বাসার ঘড়িটাই ফাস্ট।" তখন বেলি খুব রাগ হয়ে বলল, "মেজাজটা কিন্তু গরম হয়ে যাচ্ছে। তোর ঘড়িটা কিন্তু স্লো, আমি আগেই বলেছি। আমারটাকে কেন তুই ফাস্ট বলছিস?" শিউলি বলল, "তোর কথাই যে সত্যি হবে, এমন কি? আর তোর ঘড়িটাই যে ঠিক হবে, এমন কি?" বেলি বলল, "আর তোর কথাই কি সবসময় সত্যি হবে নাকি?" এই ঝগড়া আর কেউ থামাতে পারছে না। টিচার পড়াও পড়াতে পারছে না। এরা চিৎকার-চেচামেচি করে ক্লাসটা একেবারে মাছের বাজার করে দিয়েছে। টিচার খুব রাগ হয়ে প্রিন্সিপালের রুমে চলে গেল। সে এতই রাগ হয়ে গিয়েছিল যে, প্রিন্সিপালের সাথেও তার একটু উঁচু গলা ছিল। "আপা! আমি কি কিছু কথা বলতে পারি?" প্রিন্সিপাল বললেন, "বল।" টিচার বলল, "আপনার স্কুলে ভর্তি পরীক্ষার সময় বেলি আর শিউলি কি পাস করেছিল?" তখন প্রিন্সিপাল বললেন, "বেলি আর শিউলি? ঐ দুইটা মেয়ে? হ্যাঁ, করেছিল। তবে পরীক্ষা দেবার সময়ও ওরা একটু কথা বলছিল। তাও ছোট্ট দুইটা মেয়ে- পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছে, তাই ভর্তি নিলাম। কেন, কি হয়েছে? তারা কি করেছে?" টিচার বলল, "কি করেছে আর বলবেন না। কি করেনি, তাই বলেন। দু'জন দুইটা ঘড়ি পরে এসেছে; একজন বলে, তোরটা এক মিনিট স্লো। আরেকজন বলে, তোরটা এক মিনিস ফার্স্ট। এরকম করে ক্লাসটা একদম মাছের বাজার। আর এই ঝগড়ার কোন সমাধানই তো নেই। এদেরকে আপনি টিসিই দিয়ে দিন। একবারও ওয়ার্নিং লেটার দেওয়া লাগবে না।" প্রিন্সিপাল বললেন, "দাঁড়াও না, হুট করে কি আর টিসি দিয়ে দেওয়া যায়? আমার সাথে চল তোমার ক্লাসরুমে। আমি দেখি, কারা কেমন ঝগড়া করছে।" প্রিন্সিপাল ক্লাসে আসার সময় সবাই সালাম দিল, কিন্তু বেলি আর শিউলি সালামটাও দিতে পারল না, তারা ঘড়ি নিয়েই পড়ে থাকল সারাদিন।" প্রিন্সিপাল বললেন, "তোমাদের কিন্তু আমি ঘড়ি দুটোই নিয়ে নেব। কি হয়েছে, বেলি আর শিউলি? এমন করছ কেন ঘড়ি নিয়ে। ও! ওরটা এক মিনিট স্লো, আর তোমারটা এক মিনিট ফাস্ট?" বেলি বলল, "দেখুন তো, ও শুধু বলছে, আমারটা নাকি ফাস্ট। আসলে ওরটাই তো স্লো। আপনার ঘড়িতে কয়টা বাজে?" শিউলি বলল, "এই বেলি, রাখ তো। আসলে কিন্তু তুই একদম ভুল বলছিস। আমি যেটা বলেছি, সেটাই ঠিক।" প্রিন্সিপাল বললেন, "এমন করে করে তো তোমরা দশ মিনিট পার করেছ। শিউলির ঘড়িতে বাজে ৮:৪৫, আর বেলির ঘড়িতে বাজে ৮:৪৬। এ কি, আমার ঘড়িতে তো বাজে ৮:৪৭।" এখন খুব মজার একটা কাহিনী ঘটল। প্রিন্সিপালও ঝগড়ার মধ্যে জড়িয়ে গেলেন। তিনি বললেন, "তোমাদের দু'জনেরটাই তো স্লো। আসলে তো আমারটাই ঠিক।" তখন শিউলি বলল, "ধূত! মিস, আপনার ঘড়িটাই ফাস্ট। আর বেলি, তোর ঘড়িটাও ফাস্ট। শুধু আমার ঘড়িটাই ঠিক। আবার স্লো বলবেন না কিন্তু।" প্রিন্সিপাল বললেন, "এই শিউলি, এমনভাবে কেউ ঝগড়া করতে আসে? আমি না প্রিন্সিপাল! আমারটাই তো ঠিক হবে। আমি আমার বাসার ঘড়ি দেখে টাইম ঠিক করেছি।" শিউলি আর বেলি একসাথে বলল, "আমরাও তো আমাদের বাসার টাইম দেখে আমাদের ঘড়ির টাইম ঠিক করেছি। আর সবারটা তো ঠিক হবেই না।" এখন প্রিন্সিপালকে নয়, ক্লাস টিচারকে বেলি জিজ্ঞেস করল, "আপনার ঘড়িতে কয়টা বাজে?" ক্লাস টিচার বলল, "আমার ঘড়িতে তো ৮:৪৪ বাজে।" এই তো শুরু হলো আরেক মজা। ক্লাস টিচারও ঝগড়ায় জড়িয়ে পড়লেন। ক্লাস টিচার বললেন, "প্রিন্সিপাল আপা! একটা কথা বলতে পারি? আমিও তো আমার বাসার টাইম দেখে ঠিক করেছি। আমার ঘড়িটা দেখেই আমি সবকিছু করি। আমারটাই নিশ্চয়ই ঠিক হবে। আর বেলি আর শিউলি, তোমরাই শোন, আমারটাই আসলে ঠিক।" এত্ত বড় ঝগড়া তো কেউ সমাধান করতে পারছে না। একটু পর অংকের স্যার আসলেন। এখন শিউলি বলল, "স্যার! একটা কথা বলি। আপনার ঘড়িতে কয়টা বাজে?" স্যার বলল, "আমার ঘড়িতে তো ৮:৪৮ বাজে।" এরপর বেলি আর শিউলি বলল, "আমাদের ঘড়িতে আপনার থেকে আলাদা সময়।" প্রিন্সিপাল আর ক্লাস টিচারও বললেন, "আমাদের ঘড়ির সময়ও আপনার থেকে আলাদা।" এরপর শুরু হলো আরো এক মজা। অংকের স্যারও জড়িয়ে গেলেন এই ঝগড়ার সাথে। অংকের বইটা রেখে দিয়ে তিনি ঘড়ি নিয়ে বসলেন। অংকের স্যার বললেন, "আমারটাই আসলে ঠিক। প্রিন্সিপাল আপা আর ক্লাস টিচার আপা! আপনাদের ঘড়ি আমারটার থেকে স্লো। আর বেলি আর শিউলি! তোমাদের ঘড়িও আমারটার থেকে স্লো। আমারটাই ঠিক।" এত জোরে ঝগড়া শুরু হল, স্কুলের বাইরে থেকেও সব শোনা যাচ্ছে। স্কুলের পাশে একটা বিল্ডিং ছিল। বিল্ডিংয়ের সবাই ঝগড়ার চোটে বিল্ডিং থেকেই নেমে আসল। তারপর স্কুলে গিয়ে ঢুকল। আর জোরে জোরে বলল, "সমস্যা টা কি? কান ঝালাপালা করে দিচ্ছেন কেন। এ কি কোন খেলা, নাকি সত্যি সত্যি ঝগড়া? কি নিয়ে ঝগড়া, শুনি?" তারপর তারাও দেখল, ঘড়ি নিয়ে ঝগড়া হচ্ছে। তাদের মধ্যে আবার দুই জনের ঘড়ি ছিল। তাদের টাইমও আলাদা ছিল। ফলে তারাও জড়িয়ে পড়ল। শুরু হলো আরো এক মজা। সবাই মিলে ঝগড়ার মধ্যে জড়িয়েই যাচ্ছে, জড়িয়েই যাচ্ছে। যাদের যাদের ঘড়ি আছে, সবাই মিলে ঝগড়া করছে।
হঠাৎ স্কুলের এক সুইপার ঐ ক্লাসরুমটাতে ঢুকল। প্রিন্সিপাল আপাকে জিজ্ঞেস করল, "আপা! এখানে কি হচ্ছে? এত ঝগড়া কিসের, আপা?" যারা যারা ঝগড়া্য় নামেনি, যাদের ঘড়ি নেই, তারা তো হাসতে হাসতে মরে যায়। অথচ তাদের ঘড়ি থাকলে তারাও হয়তো জড়িয়ে যেত। সুইপার বলল, "এই সমস্যা! কম্পিউটার দেখে ঠিক করে নিলেই তো হয়।" প্রিন্সিপাল থামলেন না। আর যারা যারা ঝগড়ায় আছে, তারাও ভালোমত থামল না, ঝগড়া চালিয়েই যাচ্ছে। যারা যারা ঝগড়ায় নামেনি, তারা তারা সুইপারের সঙ্গে অফিস রুমে গেল। গিয়ে একজনের কম্পিউটারে টাইম দেখে নিল। আসলে টাইমটা ছিল ৮:৪৬। সুইপার দৌড়ে গিয়ে বলল, "আসলে টাইমটা ৮:৪৬।" সবাই তখন থেমে গেল। আর নিজ নিজ কাজে চলে গেল। আর ঝগড়া থামা হয়েছে গেল সেইদিন ছুটি দিয়ে দেওয়া হলো। আর সেই সুইপারকে প্রিন্সিপাল ১০০ টাকা পুরস্কার দিলেন। যারা যারা ঝগড়া করেনি ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে, তারা তারা 'ইয়ে' বলে দৌড়ে ক্লাস থেকে নেমে গেল আর যার যার বাসায় চলে গেল।

No comments:

Post a Comment