Sunday, April 29, 2018

বেল রহস্য

এক ছিল এক বাবু। সে কোনদিন বেল দেখেনি। আর লোকে বলে, নাড়ু বেল। এই নাড়ু বেল কথাটা শুনতে শুনতে বেলের প্রতি তার অভক্তিই এসে গিয়েছে। একদিন তার বাবা গ্রামে ঘুরতে গিয়েছিল আর একটা বেল নিয়ে এসেছিল। বাবা বলল, "মামনি! এই যে একটা বেল নিয়ে এসেছি, যা তুমি কোনদিনও দেখনি।" বাবুটা বলল, "কী! নাড়ু বেল? এটা দিয়ে কী করে?" বাবা বলল, "আরে না, এটা নাড়ুবেল হতে যাবে কোন দু:খে? এটা খাওয়ার বেল।" বাবুটি বলল, "না, না, না। আমি বেল খাবই না।" কোনভাবেই মা-বাবা তাকে বেল খাওয়াতে পারছে না। সে কোনমতেই বেল খাবে না। তার মা বেলের শরবত বানাচ্ছিল। বেলের শরবতের মধ্যে গুড় আর দুধও দিয়েছিল। খুবই মজার ছিল সেটা। কিন্তু এক গ্লাস তো বাবুটার জন্য রেখে দেয়া হয়েছে। কিন্তু বাবুটা কিছুতেই তা খাবে না। তার দাদার আবার এক দোকানদার বন্ধু ছিল। সেই বন্ধু খাবার বিক্রি করত। দাদা তার বন্ধুর কাছে একদিন গেল। গিয়ে বলল, "তোমার কাছে কি খালি ফ্রুট জুসের বোতল আছে? যেটা দেখতে একদম বাচ্চাদের জুসের বোতালের মত।" তখন দোকানদার বলল, "অবশ্যই, এই যে একটা ফ্রুট জুসের বোতল আছে। কিন্তু কেন, ব্যাপারটা কি জানাবেন?" দাদা বলল, "পরে আরেকদিন। এখন বেলের শরবতটা যে জুড়িয়ে একেবারে পান্তা ভাত হয়ে যাবে। ধন্যবাদ, এবার আসি।" এই বলে দাদা বাড়ি ফিরে আসল। তারপর ঐ বোতলটা ভালমত পরিস্কার করে তার মধ্যে বেলের শরবত ঢেলে দিল। তারপর বাবুটার কাছে দাদা গিয়ে বলল, "এই যে আমার সোনা! দেখ, তোমার জন্য কী এনেছি। ফ্রুট জুস এনেছি। এই নাও, মজা করে খেয়ে ফেল।" বাবুটা মনে মনে ভাবল, "দাদা কি বলছে? দাদা তো ফ্রুট জুস খাওয়া পছন্দই করে না। আজকে সে নিজের হাতে আমাকে ফ্রুট জুস এনে দিচ্ছে! কি করে সম্ভব? অন্য কিছু কেন হতে যাবে, দাদা তো একটু আগে বাইরেই গিয়েছিল। বাইরে থেকে নিশ্চয়ই এনেছে। খেয়েই দেখি।" বাবুটা বলল, "দাও দাদা, এক্ষুণি খেয়ে ফেলি।" এক ঢোক খেয়ে বাবুটি বলল, "দাদা! এটা তো অসাধারণ। এমন ফ্রুট জুস কোথায় পেলে তুমি?" দাদা বলল, "কেন, তুমি বুঝি জান না, আমার দোকানদার বন্ধু দিয়েছে?" এরপর বাবুটি বলল, "প্রত্যেক দিন আমাকে এমন ফ্রুট জুস এনে দেবে। না দিলে কিন্তু হবে না। ছুটির দিন আবার দুই বোতল দিতে হবে। অনেক সুস্বাদু।" দাদা বলল, "অবশ্যই দেব। দেব না কেন?" বাবুটা একটু অবাক হল। যেই দাদা কোনদিনও তাকে ফ্রুট জুস এনে দেয় না, এমনকি ফ্রুট জুস দেখলেই নাক ঘোচায়, সে কিনা প্রত্যেক দিন ফ্রুট জুস এনে দেবে। তাও আবার ছুটির দিনে দুই বোতল। তাও বাবুটা সন্দেহ করল না, কারণ বেলের শরবত তার খুবই মজা লেগেছিল। প্রত্যেকদিন দাদা বেল নিয়ে আসে, বোতলে শরবত বানিয়ে ভরে বাচ্চাকে দেয়। কিন্তু তার দাদা অন্য কাউকেও জানায়নি, এমনকি বাবুর মা-বাবাকেও জানায়নি। দাদু একদিন দাদাকে বলল, "এই! এত টাকা যায় কোথায়? আর বাসায় না তুমি প্রত্যেক দিন শুধু বেল আন। সেই বেল যায় কোথায়? আমরা তো কেউ খাই না। দাঁড়াও।" এই বলে দাদু গিয়ে বাচ্চাটাকে জিজ্ঞেস করল, "তুমি কি বেলের শরবত খাও নাকি?" তখন বাচ্চাটি বলল, "জীবনেও না। কিভাবে সম্ভব?" দাদু তো ভাবল, "দাদা হয়তো তার অন্য কাজে লাগিয়েছে। কিন্তু তাই বলে বেল কেন প্রত্যেকদিন আসবে আবার উধাও হয়ে যাবে? হয়তো দাদা কিনে এনে নিজেই খায়।" বাচ্চাটি একদিন দাদাকে এসে বলল, "আচ্ছা দাদা, এই জুসটা একদম অন্যরকম। আমি তো খেয়ালই করিনি। কালকে আমার বন্ধু আমাকে এক বোতল ফ্রুট জুস দিয়েছে, সেটা তো একদম ১০০% আলাদা। খেয়ে খেয়ে পুরো অভ্যস্তই হয়ে যায় বাবুটি। এমন কোন দিন নেই, যেই দিন সে ঐ শরবত খায় না। এতদিন খেলে তো অভক্তি হয়ে যাবার কথা, কিন্তু তাও তার অভক্তি হয় না। একদিন সে দাদার কাছে যাচ্ছিল। তবে সেই সময়টার ১০ মিনিট পরই প্রত্যেকদিন দাদা তাকে ফ্রুট জুস এনে দিত। গিয়ে বাবুটি যা দেখল তা দেখে সে অবাক হয়ে গেল। কারণ, তখন দাদা বেলের শরবত বোতলে ভরছিল। বাবুটা দৌড়ে গিয়ে দাদার কাছে বলল, "দাদা, তুমি কি করছ?" দাদা আবার খুবই চালাক ছিল। তার ভাব দেখে মনেই হচ্ছিল না, ফেঁসে গেছে, তাই অন্য কিছু বলছে। সে সাথে সাথেই কিছু একটা ভেবে ফেলতে পারত। সে বলল, "বোতলে আজকে জুস বিক্রি করেনি। দোকানে মেশিনে জুস বানাচ্ছিল, তা আমি বড় পাত্রে করে এনেছি, আর এখন তা ছোট পাত্রে ঢালছি।" কিন্তু বাবুটিও সাংঘাতিক চালাক। সে বলল, "তাহলে তোমার পাশে কাটা বেল কেন? আর চিনিই বা কেন, আর বটিই বা কেন? বল আমাকে।" দাদা তো খুব ফেঁসে গেল। অবশ্য এখন লুকিয়ে কোন কাজ নেই। আর বাচ্চাটাকে তো বোঝাতেই হবে যে, এটা যে সে বেলের শরবতই খেয়েছে, আর বেলের স্বাদ এই।" তখন দাদা আর কিছু বলতে না পেরে আসল কথাটা বলেই দিল আর স্বীকার করল যে, এতদিন সে খাওয়ানোর জন্য মিথ্যা বলেছে। বাবুটি খুব অবাক হয়ে গেল। বাবুটির তো বিশ্বাসই হয় না। বাবুটি বলল, "নাড়ু বেল, শুনতেই কেমন লাগে। এইটার স্বাদ এরকম হয়, আমি জীবনেও বিশ্বাস করব না।" তখন দাদা বলল, "বিশ্বাস না করার কি আছে, কালকে তুমি দেখো, আমি কিভাবে বানাই, আর কী স্বাদটা হয়।" পরের দিন বাবুটি খেয়ে দেখল, সত্যি বেলের শরবতটা খুব মজার।

No comments:

Post a Comment