Friday, August 10, 2018

মোটকা ছেলে আর শুটকি ছেলে

এক ছিল এক লোক। তার ছিল দুই ছেলে। তবে দুইজন খুবই আলাদা। একজন সুইয়ের মতন শুটকি, আবার আরেকজন ঢোলের মতন মোটকা। মোটকার তো নড়তে চড়তে সময় লাগে, এটা হলো তার সমস্যা। আর সে শুটকির গায়ের উপর পড়লে শুটকি হেরে যায়, এটা শুটকির সমস্যা। তবে শুটকি হেরে গেলে সেটা আবার মোটকা পছন্দ করে। আবার শুটকি নিজেও শুটকি, তার নখও শুটকি আর ধারালো। মোটকার সাথে যখন সে পারে না, তখন নখ দিয়ে একটা খোঁচা দিয়ে দেয়। তখন মোটকা আবার হেরে যায়। এই নিয়ে লোকটির ভীষণ সমস্যা। তার ছেলেরা ২৪ ঘন্টা মারামারি করে। খেতে বসলেও একজন আরেকজনকে গুঁতা দেয়। মোটকা তো খাওয়ার সময় শুটকিকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে চায়, আর শুটকি শুধু নখ দিয়ে মোটকাকে গুঁতাতে চায়। ঘুমাতে গেলেও শুটকি নখ দিয়ে মোটকাকে খোঁচায়, আর মোটকা শুধু শুটকিকে চেপে ধরতে চায়। সেইজন্য লোকটি সবসময় মাঝখানে শোয়। যাইহোক, ছেলেরা বাবার কাছে আবার ভদ্র। বাবার সাথে আর কিছুই করতে পারে না। তবে বাবার মাথার উপর দিয়ে মাঝেমধ্যে দু'জনেই মুখ উঠিয়ে চোখ রাঙিয়ে একে অপরের দিকে তাকায়। বাবার এই এক সমস্যা। স্কুলে পাঠালেও সবসময় স্কুল থেকে বের করে দেয়। দু'জন মিলে সবসময় গুঁতাগুঁতি করে, এটা টিচারের সহ্য হয় না। আবার মোটকা যখন শুটকির মত অন্য কাউকে দেখে, তখন সে ভুল করে তার দিকে হাত বাড়িয়ে চেপে ধরতে নেয়। আর শুটকিও মাঝে মাঝে মোটকার মত অন্যদের নখ দিয়ে অন্যদের খোঁচা দিতে নেয়। কিন্তু সত্যি সত্যি দেয় না। এজন্য টিচার শুধু তাদের বের করে দেয়। তাদের বাবা তো মহা সমস্যায় পড়ল। কী করবে? হঠাৎ সে একটা বুদ্ধি পেল। সে বলল, "যে করেই হোক, দু'জনকে সেইম সাইজের করতে হবে। কিন্তু কিভাবে করব?" এরপর সে একটা বই পেল। বইতে লেখা, "বেশি মোটা হওয়া ভাল নয়, এজন্য কেউ বেশি মোটা হয়ে গেলে খাওয়া কমাতে হবে আস্তে আস্তে। আর বেশি শুটকি হওয়াও ভাল নয়, সেজন্য বেশি বেশি খেতে হবে।" তাদের বাবা এই বইটা পেয়ে অনেক খুশি হলো। সে এক কাজ করল। দু'জনের থালা বদলে দিল। শুটকির কম খাবার দিয়ে দিল মোটকার পাতে, আর মোটকার বেশি খাবার দিয়ে দিল শুটকির পাতে। যাই হোক, তারা তাদের বাবার কথা অমান্য করতে পারবে না, কিন্তু "দু'জন ঝগড়া বা মারামারি করো না"- এই কথাটা সবসময় অমান্য করে, যেহেতু এটা তাদের অভ্যাস। তারপর মোটকা ছেলেটি বাবাকে জিজ্ঞেস করল, "এ কি? শুটকির থালা আমায় আর আমার থালা শুটকিকে, ব্যাপারটা কি? এত কম খাবার খেয়ে আমি থাকব কি করে, শুনি?" তখন তার বাবা যাতে তার ছেলেরা খায়, এজন্য একটি মিথ্যে কথা বলল। সে বলল, "কম খেলে নাকি বেশি মোটা হওয়া যায়। যাতে তুমি শুটকিকে আরো বেশি করে হারিয়ে দিতে পার। আর শুটকি যদি এখন থেকে বেশি খাবার খায়, তাহলে সে আরো বেশি শুটকি হয়ে যাবে, একেবারে মাইক্রোস্কোপ দিয়েও দেখতে পাবে না। আর অত যদি ছোট হয়, তাহলে ওর গুঁতা তুমি পাবে কি করে? খেয়ে নাও।" মোটকা ছেলেটি তো খুশি হয়ে বাবাকে বলল, "ঠিক আছে, আমার পাত থেকে আরো ক'টা খাবার নিয়ে শুটকিকে দিয়ে দাও।" বাবা খুশি হয়ে তাই করল। শুটকি আবার বলল, "এহ! কী বল? আমি নাকি মাইক্রোস্কোপ দিয়েও দেখার যোগ্য হব না, না? আমার পাত থেকে ওকে উঠিয়ে দাও।" তখন বাবা বলল, "আচ্ছা, ঠিক আছে।" এই বলে বাবা সবাইকে সমান দিল। তবে শুটকির থালায় ২% বেশি আর মোটকার থালায় ২% কম। তবে বাবা দুইজনের কানে কানে গিয়েই এখন থেকে বলে যে, "বেশি খেলে শক্তিশালী হবে, আবার কম খেলেও শক্তিশালী হবে।" দুইজনকে দুই রকম কথা বলে। এরকম করতে করতে তার ছেলেরা এক পর্যায়ে সমান হয়ে গেল। এখন তারা আর ঝগড়াঝাটি করতে পারে না। একজন আরেকজনকে গুঁতালে আরেকজন একই শক্তিতে গুঁতায়। কেউ চ্যাপ্টাও হয় না, আবার কেটেও যায় না।

No comments:

Post a Comment