Tuesday, May 15, 2018

সবচেয়ে ধনী ও ভালো রাজা

এক ছিল এক রাজা। সে ছিল খুবই ধনী এবং ভালো। তোমরা নিশ্চয়ই ভাবছ যে, ধনী মানে অনেক হীরা-জহরত এবং সোনাদানা আছে। কিন্তু সে কতটা ধনী, গল্পটা পুরোপুরি পড়লেই বুঝতে পারবে। একদিন এক ভিক্ষুক রাজার কাছে গিয়ে বলল, "মহারাজ! আমি এখানে নতুন এসেছি। রাজ্য কেমন, রাজা কেমন, কিচ্ছু জানি না। তবে আমাকে কি একটা সাহায্য করা যাবে? আমার এখন কিচ্ছু নেই, আশ্রয়, খাবার, পানি কিচ্ছু না। আপনি কি সাহায্য করবেন?" রাজা বলল, "অবশ্যই! আমি কেমন রাজা, এক্ষুণি বুঝতে পারবে। প্রহরী! রাজ্যের পশ্চিম দিকের ঐ ছোট্ট ঘরটাতে এই ভিক্ষুককে থাকতে দাও। এক মাসের খাবার ঐ ছোট্ট ফ্রিজটাতে ভরে ফ্রিজটা তাকে দিয়ে দাও। ছ্টে একটা ওভেনও দিয়ে দাও। আর পড়ার জন্য মজার কোন বইও দিয়ে দাও। তাকে ভালো ভালো পোশাকও দাও। আর তার সাথে কয়েকদিনের মধ্যে যদি অন্য কোন ভিখারী আসে, তাহলে তাকেও ঐ ঘরেই থাকতে দেবে। এবং তাকে যে পরিমাণ জিনিস দিয়েছ, তার দ্বিগুণ জিনিস দিয়ে দেবে। তাহলে সে আরো একজন সঙ্গী পাবে। যাও, যা যা বললাম, তা তা কর।" তোমরা ভাবছ, শুধু ভিখারীর প্রতিই রাজা দয়া দেখিয়েছেন। প্রহরী যে রাজার এত কথা শুনবে, তার জন্য প্রহরীকে কিছু দেবে না, এটা ভাবছ? একদমই না। রাজা বলল, "আর প্রহরী! তুমি কাজগুলো করে আসার পর তুমি আমার ফ্রিজ থেকে তিনটা রসগোল্লা খেতে পার।" প্রহরীটা আবার মিষ্টি জিনিস খুব পছন্দ করত। সে তো শুনে ৫ মিনিটের মধ্যেই সব কাজ শেষ করে ভিখেরীকে ঐ বাড়িতে বসিয়ে দিয়ে চলে আসল। তারপর বলল, "আমার রসগোল্লাটা কি এখন নিতে পারি?" মহারাজ বলল, "এত তাড়াতাড়ি করলে যে! সব কাজ ঠিকমত করেছ তো? ও আচ্ছা, তাকে কি তুমি পানি দিয়েছ?" তখন প্রহরী "আ---!" বলল। রাজা বলল, "মিষ্টির লোভে কাজ ঠিকমত করছই না। যাও, তিন বোতল পানি দিয়ে এসো।" সে এক মিনিটের মধ্যে দৌড়ে এক চোটেই ছয় লিটারের তিনটা বড় বড় বোতল কাঁধে করে চলে গেল। আর ঐ ভিখারীকে দিয়ে এক দৌড়ে চলে আসল। এরপর বলল, "মহারাজ, আমার রসগোল্লা!" মহারাজ বলল, "মিষ্টি খাওয়ার জন্য এত তাড়াহুড়োর কি আছে? তাকে তুমি কয়েকটা ছোট ছোট পাখি দাও। আর এমন পাখি দিতে হবে, যেগুলো কথা বলতে পারে আর সবকিছু বোঝে। আর পাখিগুলোকে ধরে নিয়ে যাওয়ার মত করবে না। এমন ভাব দেখাতে হবে যে, আরেকটা নতুন বন্ধুর কাছে নিয়ে যাচ্ছ, তার কাছে থাকতে পারবে। যাও, ওরকম পাখি দিয়ে আস। যাতে ভিখারীটা্ একা বোধ না করে। প্রহরী এক দৌড়ে গিয়ে তাড়াতাড়ি ওরকম পাখি খুঁজে নিয়ে ভিখারীকে দিয়ে তাড়াতাড়ি এক দৌড়ে আবার ফিরে এল। রাজাকে বলল, "মহারাজ! এবার তো আমায় রসগোল্লাগুলো দিন!" রাজা বলল, "তার বাড়ির সামনে এক ঘন্টার মধ্যে একটা টিউবওয়েল বসিয়ে দাও।" তোমরা হয়তো ভাবছ, রাজা ওয়াদা ভঙ্গ করল। কিন্তু এটা প্রহরীর ভালোর জন্যই করল। কারণ, প্রহরী তাড়াতাড়ি কাজ করতেই পারত না। একদমই করত না। এক মিনিটের কাজ এক ঘন্টায়ই করত। আর এখন তার অভ্যাসও হচ্ছে। আর তাড়াতাড়ি যদি সে সব কাজ করে, তাহলে মাসের শেষে তার টাকাটাও সে অনেক বেশি পাবে। তাই রাজা এমন করছে। অবশেষে সব কাজ করার পর রাজা খুশি হয়ে প্রহরীকে চারটা রসগোল্লা দিয়ে দিল। প্রহরী খুব খুশী হলো। তারপরে চারটা রসগোল্লা একবারেই মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে দিল। আর একবারেই তা শেষ করে ফেলল। এরপর রাজা একদিন ভিক্ষুকের সাথে দেখা করতে গেল। সে বলল, "কেমন আছ? তোমাকে তো এক মাসের খাবার দেয়া হয়েছে। তো বিশ দিন তো চলেই গেল। দেখি তো, তুমি কতটুকু খাবার শেষ করেছ?" ভিক্ষুক রাজাকে ছোট ফ্রিজটা হাতে করে এনে দেখালো। রাজা বলল, "এ কি, তুমি তো অর্ধেকও শেষ করনি। এত কম খাও কেন?" ভিক্ষুকটি বলল, "আমার অভ্যাস নেই। তাও আমি অভ্যাসের অনেক বেশিই খেয়েছি।" রাজা তো খুব অবাক হয়ে গেল। একেই বলে অভ্যাসের বেশি? আর রাজাটি ছিল এই রকমই ধনী এবং এইরকমই ভালো। তবে এটা কাল্পনিক।

No comments:

Post a Comment